মেল রবিন্সের ৫ সেকেন্ড রুল
পৃষ্ঠা ০১ থেকে ১০
পৃষ্ঠা:০১
(১) আপনার জীবন বদলে দেয়া ৫ সেকেন্ড সময় আপনি কি এমন কাউকে খুঁজছেন যে আপনার জীবন বদলে দিতে পারে? তাহলে আরনায় দেখুন।
আপনি এখানে এমন কিছু শিখতে চলেছেন যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এটা মাত্র ৫ সেকেন্ড সময় যা আপনার জীবন বদলে দেবে। উদ্ভট শোনাচ্ছে, তাই নয় কি? মোটেও তা নয়। এটা বিজ্ঞান। আমি আপনাকে প্রমাণ করে দেব। একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্তে আপনি বদলে নেবেন আপনার জীবন। বস্তুতঃ এটাই একমাত্র উপায় যা আপনাকে বদলাতে পারে। এটা হলো ফাইভ সেকেন্ড রুল (৫ সেকেন্ড সময় বিধি) সংক্রান্ত সত্যি গল্প। এটা কী, কেন এবং কেমন করে মাত্র ৫ সেকেন্ড সময়ে এর ব্যবহারের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ তাদের জীবন বদলে নিতে পারে, আমরা সেটাই দেখব। এটা শেখা অত্যন্ত সহজ কিন্তু এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর। যে কোনো কিছুকে বদলে দেবার এটা হলো গোপন সূত্র। তাৎক্ষণিকভাবে আপনি এর ব্যবহার শুরু করতে পারেন ঠিক যেই মুহূর্তে আপনি রুল’টি শিখে যাবেন। এটি প্রত্যহ আপনাকে আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করতে, ভালোবাসতে এবং কথা বলতে সাহায্য করবে। একটিবার এর ব্যবহার করুন অতঃপর দেখুন সারাজীবন যখনই আপনার প্রয়োজন হবে, এটি আপনার কাজে লাগবে। ফাইভ সেকেন্ড রুল ‘টি আমি আমার জীবনের এমন একটি সময়ে প্রণয়ন করি যখন আমার চারদিকে সবকিছু ভেঙে পড়ছিল। সবকিছু বলতে আমি
পৃষ্ঠা:০২
বোঝাতে চাইছি সবকিছুই। আমার বিবাহ, অর্থ, পেশা এবং আত্মমর্যাদা। সবকিছুই গর্তে পড়ে গিয়েছিল। আমার সমস্যাগুলো নিজের কাছে এত বড় মনে হতে লাগলো যে প্রতিদিন ভোরবেলা বিছানা থেকে উঠতে আমাকে নিজের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হতো। ঠিক এখান থেকেই শুরু। আমি আমার অভ্যাসগুলো এবং আলসেমির তালা ভাঙতে উদ্ভাবন করলাম ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’। জীবনে প্রথমবার আমি যখন এই রুল’টি প্রয়োগ করেছিলাম, এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল যেন বোকামি করছি। তখন কি আর আমি জানতাম যে উদ্ভাবন করে ফেলেছি এমন একটি শক্তিশালী আত্মবিনির্মাণ পদ্ধতি যা আমার জীবন, কর্ম এবং মানসিকতা সম্পূর্ণ বদলে দেবে? ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ আমি যখন আবিষ্কার করলাম, আমি দেখতে পেলাম এর শক্তি অবিশ্বাস্য। আমি শুধু উঠেই দাঁড়ালাম না, বরং এটা আমার। গোটা জীবনকে একটা ঝাঁকুনি দিল। আমি আমার টাকা-পয়সা, বিবাহ, পেশা, অভিভাবকত্বসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের জন্য আত্মবিশ্বাসের সহিত এই রুল’টি প্রয়োগ করেছিলাম। ব্যাংক থেকে চেক ফেরত আসাসহ আমার বিবাহের বিশ বর্ষপূর্তি উদ্যাপন নিয়ে পর্যন্ত আমাকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। নিজেকে দুঃশ্চিন্তামুক্ত করতে আমি আমার নিজহাতে গড়া দুটি ক্ষুদ্র ব্যবসা বিক্রি করে দিয়েছিলাম। অতঃপর আমি সি-এন-এন ও ‘সাকসেস ম্যাগাজিন’- এর সহিত যুক্ত হই এবং বর্তমানে আমি সারা পৃথিবীতে পরিচিতি একজন সফল প্রেরণাদানকারী বক্তা। আমি এখন অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। সুখী এবং মুক্ত। ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ ব্যতীত এর কোনো কিছুই আমার পক্ষে করা সম্ভবপর ছিল না। ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ আমার সবকিছু বদলে দিয়েছিল এটা শেখানোর মাধ্যমে যে কেমন করে বদলে যেতে হয়। এই রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আমি যে কোনো ছোট কাজ করার ব্যাপারে আমার পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অতিরিক্ত চিন্তা করার প্রবণতা ছাড়তে পেরেছিলাম। আত্ম- তদারকি এবং অধিক উৎপাদনক্ষম হবার লক্ষ্যে আমি রুল’টি প্রয়োগ করি। এটা আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছিল যে, কেমন করে সন্দেহ করা বন্ধ করতে হয় এবং নিজের উপর, নিজের ধারণা ও সক্ষমতার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। এবং এই রুল’টি অন্যের জন্য নয় বরং আমার নিজের জন্য, আমাকে অধিক উন্নত এবং সুখী মানুষ হতে ভেতর থেকে আমাকে শক্তি জুগিয়েছে।’দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ আপনার জন্য একইভাবে কার্যকর হতে পারে। আর তাই আমি এটি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে উত্তেজনা বোধ করছি। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আপনি এই রুল’টির পেছনের গল্প জানতে পারবেন। আপনি আবিষ্কার করবেন যে, কেমন করে আপনার প্রাত্যহিক মনোবল এবং একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত আপনার গোটা জীবনকে বদলে দিচ্ছে। অবশেষে আপনি জেনে যাবেন কেমন করে সর্বশেষ গবেষণালব্ধ কৌশলের সাহায্যে ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ ব্যবহার করে আপনি হতে পারেন অধিক স্বাস্থ্যবান, সুখী, উৎপাদনক্ষম এবং কার্যক্ষেত্রে সফল। এর ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আরো জানতে পারবেন যে, কেমন করে দুঃশ্চিন্তামুক্ত হওয়া, উৎকণ্ঠা নিয়ন্ত্রণ, ভয়কে জয় এবং জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়। এবং এটাই সব নয়। আপনি অসংখ্য প্রমাণ দেখতে পাবেন। এই রুল’টি আপনাকে সঠিক সময়ে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটা যা করবে তা হলো আপনার ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিজ্ঞ, নেতা, সঙ্গীতশিল্পী, ক্রীড়াবিদ, অঙ্কন শিল্পী, এবং আপনার পরিবর্তিত প্রতিনিধিত্ব সমূহকে জাগিয়ে তুলবে। প্রথম যখন আপনি রুলটি শিখবেন, আপনি আপনার লক্ষ্যে স্থির থাকার জন্য এর ব্যবহার শুরু করতে পারেন। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো নিজেকে সামনের দিকে ঠেলে দেওয়া যখন আপনি দেখবেন কোনো কাজ শুরু করার ব্যাপারে আপনার ভেতরে এক ধরনের অনীহা তৈরি হচ্ছে। অথবা আপনি হয়তো আপনার কর্মক্ষেত্রে আরো অধিক প্রভাবশালী হতে চাইছেন। ঠিক এভাবে ‘মালযাক্সেহ’ নামক এক ব্যক্তি প্রথমবার তার জীবনে এই রুল’টি প্রয়োগ করেছিলেন যা তাকে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পেশাগত লক্ষ্যস্থিরসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসার সাহস ও মনোবল জুগিয়েছিল। (এটা এমন কিছু যার ব্যাপারে আমাদের অনেকের ভেতর এক ধরনের ভয় কাজ করে)। ধন্যবাদ ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’। এটা সত্যিই অসাধারণ। এই রুল’টির আরেকটি অদ্বিতীয় ব্যাপার হলো আমি হয়তো এটি উদ্ভাবন করেছি কিন্তু এটা শুধুই আমার গল্প নয়। এই বইটিতে আপনি পৃথিবীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের গল্প জানতে পারবেন যারা ছোট-বড় যে কোনোভাবে তাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করার জন্য এই রুল’টি ব্যবহার
পৃষ্ঠা:০৩
করেছেন। তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা আপনাকে এটা বুঝাতে সাহায্য করবে যে এই রুল’টি ব্যবহারের ফলাফল কতটা ব্যাপক এবং ফলপ্রসূ। আপনি নিজে অধিক উৎপাদনক্ষম হওয়ার জন্য রুল’টি ব্যবহার করতে পারেন। ‘সরা’ নামক একজন মহিলা রুল’টি ব্যবহার করার পূর্বে তার প্রাত্যহিক কার্যতালিকা প্রস্তুত এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রতিনিয়তঃ নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতেন। এখন তার জীবনে আলসেমির আর কোনো জায়গা নেই- এখন শুধুই অ্যাকশন। লরা তার অর্থপ্রবাহ মাসিক চার হাজার ডলারে উন্নীত করেছেন, স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন, চার হাজার ফুট পর্যন্ত পাহাড় ডিঙ্গানো শেষ করে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন একটি ম্যারাথন দৌড়ে অংশগ্রহণ করার। এর সবই তিনি সম্পন্ন করেছেন ‘না ফাইভ সেকেন্ড রুল’ অনুসরণ করার মাধ্যমে। আপনি আপনার নিরাপদ এলাকার বাইরে পা রাখতে এবং আরো অধিক যোগাযোগ স্থাপন করতে রুল’টি ব্যবহার করতে পারেন। নিম্নে উল্লিখিত ব্যক্তিরা রুল’টি তাদের জীবনে প্রয়োগ করার মাধ্যমে সফলতা লাভ করেছেন ঠিক প্রথম যখন তারা রুল’টি সম্পর্কে অবগত হন- (১) কেইন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর ‘মুভারস অ্যান্ড শেকারস’-এ অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে (২) ম্যাথিও সি-লেভেল নির্বাহীদের সৌজন্য ‘কল’ করার মাধ্যমে উত্তর পাওয়ার ক্ষেত্রে (৩) এলান ‘পিজিএ ট্যুর ইভেন্ট’-এ এক ডজনের উপর মানুষের সাক্ষাৎকার নেবার ক্ষেত্রেআত্ম-তদারকি ও আপনার আবেগসমূহ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে এই রুল’টি আপনি ব্যবহার করতেপারেন।জেনা’ নামক একজন মহিলা মা হিসেবে তার সন্তানদের সাথে রূঢ় আচরণ না করে বরং ধৈর্যশীল হওয়ার ক্ষেত্রে এই রুল’টি প্রয়োগ করেছিলাম। রুল’টি তাকে মনোবল জুগিয়েছিল এবং অহেতুক ভাবনা- চিন্তা বন্ধ রেখে ব্যবসার কাজে মনোনিবেশ করতে তাকে উৎসাহ জুগিয়েছিল। পৃথিবীর নাম করা কিছু পণ্যের বিক্রয় নির্বাহীবৃন্দ তাদের ব্যবস্থাপনা, বিক্রনা কার্য, দলবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং উদ্বাবনী শক্তি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে এই রুল’টি ব্যবহার করছেন। যেমন ধরা যাক ইউ-এস-এ’র ‘মি. ক্রিস্টাল’, যার পুরো বিক্রয় প্রতিনিধি দলটি ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ ব্যবহার করার মাধ্যমে তাদের নির্ধারিত এলাকার বিক্রনাসীমা অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্থান লাভ করেছিলেন। মি. ক্রিস্টাল’-এর ভাষায় রুল’টি শেখা খুবই সহজ এবং আত্মবিশ্বাস তৈরির ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক যা এই মুহূর্তে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবস্থাপকগণ তাদের কর্মীবাহিনীকে শিখিয়ে চলেছেন। আপনি সেইসব লোকদের গল্প শুনে আরো উৎসাহিত হবেন যারা অহেতুক চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে তাদের ধারণাসমূহ বাস্তবে প্রয়োগ করার মাধ্যমে নিজেদের মনোবল ফিরে পেয়েছিলেন। মার্ক’ নামক একজন যিনি শহরের বাচ্চাদের জন্য একটি অলাভজনক ‘আইস হকি লীগ’ শুরু করার ক্ষেত্রে দশকব্যাপী চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে শেষ পর্যন্ত তার ধারণাটিকে বাস্তবে রূপদান করতে পেরেছিলেন ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে। তিনি এখন ক্যাম্প, ক্লিনিক এবং লীগ আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রাক্তন অলিম্পিয়ানস্ ও ‘ন্যাশনাল হকি লীগ অ্যালামনাই’-এর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন। আসক্তি ও বিষণ্ণতামুক্তির সংগ্রামেও ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ একটি শক্তিশালী যন্ত্র। ‘বিল’ নামক এক ব্যক্তি রুল’টি সম্পর্কে জানতে পারেন যা তার কাছে ছিল সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে একটি সঠিক তথ্য জানার মতো ব্যাপার। তিনি ক্ষণ গণনার এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করেছিলেন মদ্যপান ছেড়ে দেবার জন্য এবং এটি অসাধারণভাবে তার ক্ষেত্রে কাজ করেছিল। ‘বিল’ একজন সম্পূর্ণ ভদ্র মানুষরূপে তার ৪০তম জন্মবার্ষিকীটি উদ্দ্যাপন করেছিলেন। এটা এমনকি আপনার জীবন রক্ষা করতে সক্ষম। সম্প্রতি আমার একজন সহকর্মী ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ সংক্রান্ত একটি মর্মস্পর্শী গল্প আমার সাথে শেয়ার করেছেন। স্বামী স্ত্রীতে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর সে গভীর বিষণ্ণতায় ডুবে গিয়েছিল। জেনে খারাপ লেগেছিল যে এ সময় সে আত্মহত্যা করার চিন্তা-ভাবনা পর্যন্ত করেছিল। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তৃতীয় কারো সাহায্য তাকে গ্রহণ করতে হবে। ৫-৪-৩- ২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে সে তার মনোবল ফিরে পেয়েছিল এবং তৎক্ষণাৎ নিজেকে রক্ষা করতে সাহায্য প্রার্থনা করেছিল, যা তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
পৃষ্ঠা:০৪
‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিগত সাত বৎসরের অধিক সময় ধরে আমি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করছি এবং আমি এটা অনুভব করতে পারছি যে, আমরা প্রতিনিয়তঃ কঠিন, অনিশ্চিত এবং ভীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি। এমতাবস্থায় যা প্রয়োজন তা হলো আপনার মনোবল। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার মনোবল আপনি আবিষ্কার করতে পারেন ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে।
কেমন করে একটি সহজ যন্ত্র শক্তিশালী উপায়ে বিভিন্নভাবে কাজ করে?
‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ হলো এমন কিছু যা একটি বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর। আর তা হলো আপনি নিজে। আপনার আছে মহত্ত্ব। এমনকি আপনি যখন ভেঙে পড়েছেন, তখনও এটি আপনার ভেতরেই আছে। এই রুল’টি আপনাকে আপনার সেই মহত্ত্বের কথা শুনতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে মনোবল জোগাবে।রুল’টি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমি লক্ষ্য করেছি যে, কোনো কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে আমি বছরব্যাপী চিন্তা-ভাবনা এবং অজুহাত খুঁজে বেড়িয়েছি। শুধুমাত্র কাজ শুরু করে দেবার মাধ্যমে আমি আমার অন্তর্গত শক্তিকে জাগাতে পেরেছিলাম এবং তাই হতে পেরেছি যা হতে চেয়েছিলাম। টেলিভিশানে, অনলাইনে এবং মঞ্চে আমি আমার সেই আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করতে পেরেছি যা হলো সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস। আমি নিজের ভেতর সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে পেরেছিলাম নিজের অনুভূতিগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে যেন সেগুলো বাস্তবে রূপ নিতে পারে। সম্মান’ শব্দটি ব্যবহার করছি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে। এটা আপনাকে রুল’টি ব্যবহার করার সময় প্রয়োগ করতে হবে। নিজের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আপনি প্রকৃত অর্থে নিজের ধারণাগুলোকে বিজয়ী হতে সাহায্য করবেন। এবং প্রতিবার এর মাধ্যমে আপনি এক এক কদম তার কাছাকাছি যেতে থাকবেন যে রকম আপনি হতে চেয়েছেন।আমি আমার নিজের ধারণাগুলোকে আত্মবিশ্বাসের সহিত শেয়ার করা,তার উপর কাজ করা এবং তাদের পেছনে ক্রমাগত ছুটে চলার মতো মনোবল সম্পন্ন ব্যক্তিত্বে নিজেকে পরিবর্তন করেছিলাম। আপনার ভেতরেও ঠিক এই রূপান্তরটি ঘটতে পারে যদি আপনি আপনার নিজের অনুভূতিগুলোকে সবসময় সম্মান দেখাতে পারেন এবং এই রুল’টি ব্যবহারের মাধ্যমে তার উপর কাজ করতে পারেন।’মালো’ নামক একজন ভদ্রমহিলা এটা আবিষ্কার করেছিলেন যে, রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করা কতটা সহজ। এই রুল’টি শেখার কিছু দিনের মধ্যে ‘মালো’ দুটি কোর্স সম্পন্ন করার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন যা তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিন্তা করছিলেন এবং না করার বিভিন্ন অজুহাত খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। ‘মালো’ বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা একটি অসাধারণ ও উৎসাহব্যঞ্জক বিষয় যা করা খুবই সহজ যখন আপনি অহেতুক ভাবনা-চিন্তা বন্ধ করে নিজেকে শুধু একটু সামনে ঠেলে দেবেন।সে ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। যখনই আপনি নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে এই রুল’টি ব্যবহার করবেন, আপনি দেখে আশ্চর্য হবেন যে একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত কি করে সবকিছু বদলে দিচ্ছে। আমি যেমন আমার জীবনে এই রুল’টি অধিক থেকে অধিকতর ব্যবহার করেছি। আমি লক্ষ্য করছিলাম যে আমি দিনভর শুধু ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছি যা আমাকে পিছু টেনে ধরে রাখছে। এমতাবস্থায় আমি নিজেকে ৫ সেকেন্ড সময়ের জন্য সম্পূর্ণ চুপ করিয়েছি, অপেক্ষা করেছি এবং কোনো প্রকার ঝুঁকি নেয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি। আমার ভেতরে একটি বোধ কাজ করতো যা ঐ সকল সন্দেহ, দুঃশ্চিন্তা, অজুহাত অথবা ভয়কে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সমস্যাটা ছিল আমি নিজেই এবং এর সমাধান নিহিত ছিল ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে নিজেকে শুধু সামনের দিকে একটু ঠেলে দেওয়ার মধ্যে। নিজেকে বদলাবার এই গোপন সূত্রটি পুরোটা সময় ধরে আমার চোখের সামনেই ছিল।২০০৫ সালে ‘কেনইয়ন কলেজ’-এর উদ্বোধনী বক্তৃতায় ‘ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস’ প্রদত্ত বক্তব্য কি আপনি শুনেছেন? না শুনে থাকলে ইউটিউবে খুঁজে দেখতে পারেন। যা শুনতে আপনার সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় লাগতে পারে। কিন্তু এটা আপনার অনেক কাজে লাগবে। ‘মি. ওয়ালেস’ এই কৌতুকটি বলে তার বক্তব্য শুরু করেছিলেন-
পৃষ্ঠা:০৫
“দুটি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী মাছ পাশাপাশি সাঁতার কাটছিল এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল অপরদিক থেকে আসা একটি বয়স্ক মাছের সাথে সাক্ষাৎ করা। দেখা হওয়া মাত্র বয়স্ক মাছটি কম বয়সী মাছ দুটির দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলল ছেলেরা শুভ সকাল, তা পানি কেমন বুঝতে পারছো? অল্প বয়সী মাছ দুটি একটু দূরে সরে এসে একজন আরেক জনকে জিজ্ঞেস করলো- বুঝলাম না, পানি মানে কি?” আপনি ভিডিওটি দেখার এই পর্যায়ে দর্শকদের হাসির রোল গুনতে পাবেন। অতঃপর ‘মি. ওয়ালেস’ মাছেদের এই গল্পের ব্যাখ্যায় বলেছেন “এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যিক বাস্তবতা যে, যা দেখা কঠিন, সেই সম্পর্কে কথা বলাও অত্যন্ত কঠিন।” আমার জন্য কঠিন বিষয় ছিল পরিবর্তনের প্রকৃতি দেখা এবং সেই সম্পর্কে কথা বলা। আমি অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে, আমার পেশাগত উন্নতি, সম্পর্কের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নের জন্য যা করা উচিত ছিল তা করতে আমার সমস্যা হচ্ছে। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’ আবিষ্কারের মাধ্যমে আমি কোটি টাকা মূল্যের জবাবটি জানতে পেরেছিলাম। জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসে মনোবল যা একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে প্রতিদিনই আপনার প্রয়োজন।
একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবন থেকে আপনি একটি সিদ্ধান্তের দূরত্বে অবস্থান করছেন
পরিবর্তন এবং প্রাত্যহিক মনোবল সম্পর্কে আমি যা শিখেছি তা এই বইটিতে আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চলেছি। আপনি যা শিখতে যাচ্ছেন তা অবশ্যই আপনার ভালো লাগবে বলে আমি মনে করি। এর সবচাইতে ভালো অংশটি হবে, যখন আপনি রুল’টি ব্যবহার করতে শুরু করবেন এবং আপনার জন্য এটি কি ফলাফল বয়ে আনছে তা দেখতে শুরু করবেন। আপনি শুধু জেগেই উঠবেন না বরং আপনি নিজেকে এতদিন কতটা পেছনের দিকে ধরে রেখেছিলেন তাও বুঝতে পারবেন। আপনি আপনার অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করবেন।বইটির গল্পগুলো আপনি যখন পড়বেন, আপনার মনে হবে ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আপনি এর আগে নিজেও ব্যবহার করেছেন। আপনি যদিআপনার ফেলে আসা জীবনের দিকে ফিরে তাকান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো স্মরণ করেন তাহলে আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে, আপনি দেখতে পাবেন আপনার সহজাত প্রবৃত্তি দ্বারা জীবন বদলে দেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত আপনি গ্রহন করেছিলেন। ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আপনি গ্রহণ করেছিলেন, আমি যাকে বলবো হৃদয় উৎসরিত সিদ্ধান্ত। আপনি ভয়কে উপেক্ষা করে আপনার সাহস ও আত্মবিশ্বাসকে আপনার পক্ষে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলেন। খেয়াল করুন, ৫ সেকেন্ড সময়ের মনোবলটুকুই সব পার্থক্য তৈরি করে দেয়।আপনি ‘ক্যাথরিন’-কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। প্রথমবার যখন তিনি কোম্পানির নির্বাহী নেতৃত্বের ‘অফসাইট’ থেকে রুল’টি সম্পর্কে জানতে পারেন, তখনই তার উপলব্ধি হয় যে রুলটি ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি পূর্বেই নিয়েছিলেন। সেই সময়ে যা তিনি বুঝতে পারেননি। ১৯৯০ সালে তার বোন ‘ট্রেসি’ মারা যায় এবং ‘ক্যাথরিন’ তার পরিবারকে সাহায্য করতে বাড়ি ফিরে আসে। সেই সময় একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত কেবল তার নিজের জীবনই বদলে দেয়নি বরং তার সাথে আরো অনেকের জীবন বদলে দিয়েছিল। ‘ক্যাথরিন’ তার মৃত বোনের ছোট দুটি বাচ্চা লালন-পালন করার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।এটা দেখে আমার ভালো লেগেছিল যে, ‘ক্যাথরিন’ তার এই সিদ্ধান্তটি আমার কাছে বর্ণনা করতে গিয়ে একে মস্তিষ্ক বহির্ভূত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন- কারণ আপনাকে এটা মনে রাখতে হবে যে, আপনি যখন কোনো কাজ করতে গিয়ে আপনার মনোবল শক্তির ব্যবহার করবেন, আপনার মস্তিষ্ক সেখানে কাজ করবে না। আপনি শুনতে পাবেন আপনার হৃদয় কথা বলছে। কেমন করে, সেটাই আপনাকে শেখাবে ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’। প্রশ্ন হলো- এটা কি আপনার ভেতরকার শক্তিকে আবিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ নেবে? হ্যাঁ, নেবে। কিন্তু ‘মালো’ ইতিপূর্বে এটাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিল- এটি খুবই বিস্ময়কর এবং অবিশ্বাস্য, কারণ আপনি যখন কোনো কিছু শুরু করে দেবেন কথন তা কত সহজ হয়েই না ধরা দেয়।নিজের জীবনকে উন্নত করার জন্য কোনো কিছু করা সহজ, আপনি এটা করতে পারেন এবং আপনি এটা করতে চান। কারণ এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা হলো সেই কাজ যার দ্বারা আপনি নিজেকে ভালোবাসা ও বিশ্বাস
পৃষ্ঠা:০৬
করার মাধ্যমে আপনার জীবন, কর্ম এবং সম্পর্কগুলোর মধ্যকার জাদু ও আনন্দের বিচ্ছুরণ সম্পর্কে জানতে পারবেন। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার পর আপনার জীবনে কি কি পরিবর্তন ঘটবে তা জানতে আমি খুবই উজ্জীব। কিন্তু আমি এর গল্পটি সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এই রুল’টি ব্যবহারের সব উত্তেজনাপূর্ণ উপায়গুলো বর্ণনা করার পূর্বে আমি আপনাকে ২০০৯ সালে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই যেখান থেকে সবকিছুর শুনল।
মনোবল বলতে আমরা কি বুঝি?
* কোনো কিছু করার সক্ষমতা যা আপাতঃদৃষ্টিতে কঠিন বা ভয়ঙ্কর* আপনার নিরাপদ এলাকার বাইরে পা রাখা* আপনার ধারণাগুলো শেয়ার করা, কথা বলা অথবা প্রদর্শন করা* আপনার বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ব্যাপারে দৃঢ় থাকা এবং একদিন… বিছানা ছেড়ে উঠে পড়া
(২) কেমন করে ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’টি আবিষ্কার করলাম “মনোবল অসম্ভাব্য জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়।” – জে. আর. আর. টলকিন
এর শুরু ২০০৯ সালে। আমার বয়স তখন ছিল ৪১ বৎসর এবং আমি টাকা-পয়সা, কাজ এবং আমার বিবাহসংক্রান্ত কিছু বড় সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পরপরই আমি এক ধরনের ভীতি অনুভব করতাম। আপনি কি কখনো এরকম অনুভব করেছেন? এটা খুব খারাপ অনুভূতি। ঘড়িতে ‘অ্যালার্ম’ বাজছে অথচ আপনি বিছানা থেকে উঠে সামনের দিনটির মুখোমুখি হতে চাইছেন না। অথবা রাতের বেলা আপনি হয়তো আপনার সমস্ত সমস্যাগুলো মাথায় নিয়ে শুধু শুধু জেগে থাকছেন।আমার অবস্থা ঠিক এরকমই ছিল। মাসকয়েক ধরে আমার সমস্যা এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম এবং ভোরবেলা বিছানা ছেড়ে প্রায় উঠতেই পারতাম না। ঘড়িতে যখন ভোর ৬টার ‘অ্যালার্ম’ বাজতো, আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে সামনের দিনটির কথা, আমার ঘর, আমার নেতিবাচক ব্যাংক হিসাব এবং আমার স্বামী আমার উপর কতটুকু বিরক্ত এসব নিয়ে ভাবতে থাকতাম এবং একটা সময় আমি আবার ঘুমের ঘোরে তলিয়ে যেতাম। একবার নয়, এটা বারবার আমার সাথে ঘটে চলছিল।শুরুতে এটাকে আমার খুব বড় কোনো সমস্যা মনে হতো না। কিন্তুসময়ের সাথে সাথে যখন এটাই একটা খারাপ অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলতখন সারাদিনের জন্য আরো বড় একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিল। শেষ পর্যন্তআমি যখন বিছানা থেকে নেমে আসতাম, ইতিমধ্যে আমার বাচ্চারা তাদেরস্কুলবাস মিস করেছে আর আমার নিজের কাছে মনে হচ্ছে জীবনটাই মুখিব্যর্থ। বেশিরভাগ দিনই আমি ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, দেরি করতাম এবং নিজেকে
পৃষ্ঠা:০৭
বিধ্বস্ত মনে হতো। আমি জানিনা এটা কিভাবে শুরু হয়েছিল শুধু মনে করতে পারি নিজেকে পরাজিত মনে হতো। আমার পেশাগত জীবন আক্ষরিক অর্থে গর্তে পড়ে গিয়েছিল। বিগত ১২ বৎসর যাবৎ আমি এতবার আমার পেশা বদল করেছি যে, আমার ভেতরে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিসত্ত্বা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আইন বিষয়ে স্নাতক অর্জন করার পর আমি নিউইয়র্ক শহরে অপরাধীদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিরক্ষা সোসাইটির একজন ‘পাবলিক ডিফেন্ডার’ হিসেবে আমার কর্মজীবন শুরু করেছিলাম।এরপর আমার বর্তমান স্বামী ‘ক্রীস’-এর সাথে আমার দেখা হয়। আমরা বিয়ে করি এবং ‘বোস্টন’ শহরে চলে আসি যাতে করে ‘ক্রীস’ তার এম-বি-এ শুআ করতে পারে। ‘বোস্টন’ শহরে একটি বড় ‘ল ফার্মে আমি প্রতিদিন লম্বা সময় ধরে পাগলের মতো কাজ করতাম। নিজেকে সবসময় আমার দুর্দশাগ্রস্ত মনে হতো। আমার কন্যার জন্মের সময়ে একটি নতুন চাকরি খোঁজার জন্য আমি আমার প্রসূতিকালীন ছুটি ব্যবহার করেছিলাম এবং এটা ছিল বোস্টন শহরে আমার শুরুর দিককার দৃশ্যপট। আমি ঐ বছরগুলোতে বিভিন্ন কারিগরি কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম। এটা ছিল মাজার অভিজ্ঞতা এবং এখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছিলাম বটে কিন্তু আমার কখনোই মনে হয়নি এটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য সঠিক ছিল।আমি একজন প্রশিক্ষকের স্মরণাপন্ন হয়েছিলাম যে আমাকে জীবনে কিকরা উচিৎ সেই সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছিল। একজন প্রশিক্ষকের সাথে। কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে তাই হতে সহায়তা করেছিল যা আমি হতে চেয়েছিলাম। সুতরাং, আমি আরো অনেকের মতো কাজ করতে শুরু করি, বাড়ি ফেরার পর বাচ্চাদের দিকে নজর দিতে শুরু করি এবং রাতের বেলা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকি যাতে করে আমি আমার প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট’টি অর্জন করতে পারি। অবশেষে, আমি একটি প্রশিক্ষণ ব্যবসা চালু করি যা আমার খুব প্রিয় ছিল এবং সম্ভবত এখন পর্যন্ত আমি এই ব্যবসাটিই চালিয়ে যেতাম যদিনা মিডিয়া আমাকে ডেকে নিতো।আমার মিডিয়া জগতে প্রবেশ ছিল একটু অদ্ভুত। ‘ইনক ম্যাগাজিন’ আমার প্রশিক্ষণ ব্যবসার উপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল যা সিএনবিসি’র একজন নির্বাহীর নজরে পড়ে এবং ফলশ্রুতিতে তিনি আমাকে ডাকেন। সেই একটি ডাকের সূত্র ধরে আরো অনেকের সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। বেশ কয়েক মাস চেষ্টার পর এবিসি রেডিও’র সাথে একটি অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে আমিচুক্তিবদ্ধ হই। অভিনব শোনাচ্ছে কি? কিন্তু এটা তা ছিল না। আমি খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম এটা দেখে যে, এ ধরনের কর্মসূচি থেকে প্রায় কিছুই উপার্জন হতো না। রেডিও এমনকি আরো অনেক কম প্রদান করতো। বাস্তবে আমি নিউইয়র্ক শহরে তিনটি বাচ্চাকে নিয়ে গাড়ি চালাতাম, বন্ধুদের বাড়ির কাউচে ঘুমাতাম, ক্লায়েন্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতাম, কি করে বাচ্চাদের দেখাশোনা করার মাঝখানে শূন্যতাগুলো পুরণ করা যায় তা বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে শিখে নিতে চেষ্টা করতাম এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতাম যাতে বিষয়গুলো আমার কাজে লাগে।মিডিয়া জগতে বেশ কয়েক বছর এদিক-সেদিক করার পর আমি একটা বড় সুযোগ পেলাম। ফক্স টেলিভিশন’-এ একটি ‘রিয়েলিটি শো’ উপস্থাপনা করার জন্য আমি নির্বাচিত হলাম। একজন ‘টেলিভিশন স্টার’ হওয়ার মাধ্যমে আমার সব আর্থিক সমস্যাগুলোর জাদুকরী সমাধানের ব্যাপারে আমার একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। যাই হোক, আমরা কয়েকটি পর্বের দৃশ্যধারণ করি যার শিরোনাম ছিল- ‘কেউ একজনকে যেতে হবে’ এবং তারপর তা প্রদর্শন করার জন্য উপস্থাপন করি। একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমার মিডিয়া পেশা প্রায় শেষ হতে চলেছিল। আমি লক্ষ্য করেছিলাম যখন দৃশ্য ধারণ করার কাজ চলতো, তখনই শুধু আমার পারিশ্রমিক প্রদান করা হতো। নিজেকে আমার বেকার মনে হলো এবং মিডিয়াতে আবার একটি নতুন কাজ খোঁজা রুখতে আমি দশমাসের একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করলাম।ইতিমধ্যে ‘ক্রীস’ তার এম-বি-এ সম্পন্ন করে ‘বোস্টন’ শহরে তার একজন প্রিয় বন্ধুকে সাথে নিয়ে একটি ‘পিৎজা রেস্টুরেন্ট’ শুরু করলো যা প্রথমদিকে খুব ভালো চলেছিল। তাদের প্রথম ঠিকানাটি ছিল একটি বাড়ি এবং তাদের প্রতিষ্ঠানটি ‘বোস্টন’ এলাকার একটি সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃতও হয়েছিল। সঙ্গে ছিল আরো কিছু আঞ্চলিক স্বীকৃতি এবং তাদের তৈরি পিৎজা ছিল সত্যিই অসাধারণ। শিগগিরই তারা তাদের দ্বিতীয় রেস্টুরেন্ট চালু করা, একটি বড় মুদি দোকান এবং পরবর্তী পর্যায়ে পাইকারি ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করছিল। বাইরে থেকে দেখে মনে হতো তাদের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠছে কিন্তু আর্থিক হিসাব বিবরণী দেখে বোঝা যাচ্ছিল প্রকৃত প্রস্তাবে ব্যবসার ঢাকা বন্ধ হতে শুরু করেছে। তারা তাদের ব্যবসা খুব দ্রুতগতিতে বাড়াচ্ছিল। দ্বিতীয় রেস্টুরেন্টটি চালু করার পর তা ঠিকমতো দাঁড়ালো না এবং পাইকারি ব্যবসাটি পরিচালনার জন্য আরো অধিক নগদ অর্থের প্রয়োজন পড়লো।
পৃষ্ঠা:০৮
অবস্থা খুব দ্রুত ভীতিকর পরিস্থিতির রূপ নিল।আরো অনেক ব্যবসা মালিকদের মতো আমরাও আমাদের বাড়ির ‘স্টক শেয়ার’ এবং ভবিষ্যতের সঞ্চয়গুলো রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলাম যা চোখের সামনে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের আর কোনো সঞ্চয় অবশিষ্ট ছিল না এবং বাড়ির স্টক শেয়ারের অংশটি আটকা পড়ে গিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে ‘ক্রীস’-এর উপার্জন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঋণের বোঝা আমাদের বাড়িটিকে আঘাত করে বসলো। আমার পেশাগত সমস্যা, ক্রীসের ব্যবসা নিয়ে সংগ্রাম, পাহাড়সম আর্থিক চাপ, অ্যাটর্নিদের কাছ থেকে ভীতিকর চিঠি এবং ক্রমাগত ব্যাংক থেকে ঢেক ফেরত আসতে লাগলো। এতো নিরলসভাবে পাওনাদারদের তাগাদা আসতে লাগলো যে আমরা আমাদের ফোনের সংযোগটি খুলে রাখতে বাধ্য হলাম। আমার বাবা যখন আমাকে মর্টগেজের কিস্তি পরিশোধ করার জন্য টাকা পাঠালো, আমি যুগপৎ কৃতজ্ঞতা ও লজ্জিতবোধ করলাম। আমরা চেষ্টা করছিলাম মানুষজনদের মাঝে উপস্থিত থাকার, কারণ আমাদের অনেক বন্ধু ও আত্মীয় পরিজন আমাদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু এতে করে কেবল উল্টো চাপই সৃষ্টি হচ্ছিল। ‘ক্রীস’ ও তার বন্ধু ব্যবসাটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল। আমি চেষ্টা করতাম নিজের মুখ বন্ধ রাখতে কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমি বিব্রত, বিপর্যন্ত এবং ভীত হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের আর্থিক সমস্যাগুলো আমাদের মাঝখানে দূরত্ব তৈরি করছিল। আমি তাকে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার জন্য এবং সে আমাকে মিডিয়া পেশার জন্য দায়ী করতে শুরু করলো। আমরা সত্যি বলতে কি, উভয় উভয়ের প্রতি দোষারোপ করে যাচ্ছিলাম।আপনি চাইলে আপনার জীবন প্রকৃত অর্থে যতটা খারাপ একে তার চাইতে আরো অনেক বেশি খারাপ করে তুলতে পারেন। আমিও করেছিলাম। আমি অতিরিক্ত মদ্যপান শুরু করি। আমি আমার সেই সব বন্ধুদের ঈর্ষা করতে শুরু করি যাদের কোনো কাজ করতে হতো না। আমি বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে উঠছিলাম এবং সহজেই কোনো বিষয়ের উপর রায় দিয়ে দিতাম। সমস্যাগুলো আমার কাছে এত বড় মনে হতে লাগলো যে নিজেকে আমি এই বলে বোঝালাম এখানে আমার কিছুই করার নেই। অন্যদিকে মানুষজনদের মাঝখানে আমি এমন ভাব দেখাতে লাগলাম যেন কিছুই হয়নি।গোপনে আমি এটা দেখতে পাচ্ছিলাম যে, আয়নায় নিজেকে দেখা ও নিজেকে তুলে দাঁড় করানোর চাইতে নিজের জন্য দুঃখবোধ করা এবং ‘ক্রীস’ ও তার ব্যবসা নিয়ে করা সংগ্রামকে দোষারোপ করাটা অনেক বেশি সহজ। আমার প্রকৃত অবস্থা বোঝানোর সর্বোত্তম উপায় ছিল এটা বলা যে আমি আটকা পড়ে গেছি। মনে হচ্ছিলো নিজের জীবন ও সিদ্ধান্তগুলোর মাঝে আমি আটকা পড়ে গেছি। আমাদের আর্থিক সমস্যাগুলোর মাঝে আমি আটকা পড়ে গেছি। এবং আমার মনে হচ্ছিলো আমার সঙ্গে আমার হতাশাজনক সংগ্রামও আটকা পড়ে গেছে। আমি জানতাম সর্বকিছু ঠিক করার জন্য আমাকে কি করতে হবে কিংবা কি করা উচিত। কিন্তু জিনিসগুলো করার জন্য নিজেকে আমি ঠিক তৈরি করতে পারছিলাম না। বিষয়গুলো ছিল ছোট ছোট। যেমন- সময়মতো বিছানা ছেড়ে ওঠা, ‘ক্রীস’-এর প্রতি মনোযোগী হওয়া, বন্ধুদের সমর্থন আদায় করা, মদ্যপান কমিয়ে আনা এবং নিজের প্রতি আরো একটু বেশি যত্নবান হওয়া।শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করার ব্যাপারে আমার চিন্তা করা দরকারছিল, কিন্তু আমি তা করতে পারছিলাম না। কথা বলার জন্য বন্ধুদের ‘কল’ করা উচিত ছিল, কিন্তু আমি করিনি। আমি জানতাম যে মিডিয়া জগতের বাইরে একটি কাজের জন্য আমি যদি চেষ্টা করি তাহলে সেটা হয়তো আমাকে সাহায্য করবে, কিন্তু নিজেকে উৎসাহিত করতে আমি ব্যর্থ হই। আমি পুনরায় প্রশিক্ষণ ব্যবসায় ফিরে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম না কারণ নিজেকে আমার ব্যর্থ মানুষ মনে হচ্ছিলো। আমি জানতাম কি করা প্রয়োজন কিন্তু বাস্তবে তা করার জন্য নিজেকে আমি প্রস্তুত করতে পারছিলাম না। আর এটাই কোনো পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তোলে। কোনো কিছু পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে তাই করতে হবে যা আপনার কাছে মনে হবে কঠিন ও ভয়ঙ্কর। পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন মনোবল ও আত্মবিশ্বাস এবং আমি এই দু’টির বাইরে চলে গিয়েছিলাম।আমি চিন্তা ভাবনার পেছনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতাম। অধিক চিন্তা সবকিছু খারাপের দিকে নিয়ে যায়। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম সে সম্পর্কে আমি যতই ভেবেছি ততই ভীত হয়েছি। আপনার মস্তিষ্ক ঠিক এই কাজটিই করবে যখন আপনি কোন সমস্যা নিয়ে অধিক চিন্তা-ভাবনা করবেন। এটা আপনার সমস্যাগুলোকে আরো বড় করে তুলবে। আমি যত বেশি চিন্তা করছিলাম ঠিক ততবেশি অনিশ্চিত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিলাম, ততবেশি
পৃষ্ঠা:০৯
অনুভব করছিলাম। প্রতি রাতে প্রচুর মদ্যপান করে পাড় মাতাল হয়ে আমি বিছানায় যেতাম এবং চোখ বোজামাত্র একটি ভিন্ন জীবনের স্বপ্ন দেখতাম যেখানে আমার কোনো কাজ করার নেই এবং আমাদের সমস্যাগুলো জাদুমন্ত্রের মতো অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। এবং যে মুহূর্তে আমার ঘুম ভেঙে যেত, আমাকে মুখোমুখি হতে হতো কঠিন বাস্তবতার। মনে হতো যেন আমার জীবনটাই একটা দুঃস্বপ্ন। এখানেই দেখা দিত ‘ঘুমিয়ে পড়’ নামক বোতামটি যা প্রতিদিন ভোরে আমি দু-তিনবার কখনোবা চারবার পর্যন্ত টিপে দিতাম। ‘ঘুমিয়ে পড়’ নামক বোতামটি টিপে দেবার পর এক মুহূর্তের জন্য মনে হতো সবকিছু আমার নিয়ন্ত্রণেই আছে। এটা ছিল নিজেকে উল্টোপাল্টা বলার মতো”ঠিক আছে, জীবন তুমি জাহান্নামে যাও। আমি উঠছি না। আমি এখন আবার ঘুমুতে চলেছি। আবার সেখানে।”শেষ পর্যন্ত আমি যখন জেগে উঠি, ইতিমধ্যে ‘ক্রীস’ রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেছে, বাচ্চারা স্কুলের পোশাক নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় আছে এবং তাদের স্কুলবাস অনেক আগেই ছেড়ে চলে গেছে। বলতে গেলে সকালগুলো ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ যা আরো কিছুটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যেতো। আমি সবসময় দেরি করতাম। যেহেতু খুব দ্রুত আমাকে বের হতে হবে, তা করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত। আমি দুপুরের খাবার, আমার ব্যাগ, জিমব্যাগ এবং কর্মস্থলে প্রবেশের অনুমতিপত্র সঙ্গে নিতে ভুলে যেতাম। আমার নিজের কাছেই খুব লজ্জা লাগতো। মনে হতো নিজেকে আমি কোনো প্রান্তরেখার দিকে ঠেলে দিচ্ছি।এই হলো বিষয়। সঠিকভাবে একটি দিন শুরু করতে কি কি করা প্রয়োজন তা আমার জানা ছিল। আমাকে ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে, নাশতা তৈরি করতে হবে এবং ঠিক সময়ে বাচ্চাদের স্কুলবাসে তুলে দিতে হবে। অতঃপর আমাকে একটি নতুন কাজের খোঁজ করতে হবে। এগুলো এভারেস্ট পর্বতে চূড়ার মতো কোনো বড় ব্যাপার ছিল না। এটা ছিল সহজ বিষয়গুলোকে অকারণে জটিল করে তোলা। আমার কাছে এমন কোনো যুৎসই অজুহাত ছিল না যাতে করে আমি নিজেকে বোঝাতে পারি, ঠিক কি কারণেকাজগুলো আমি করতে পারছিলাম না। আমার আত্মবিশ্বাস সর্পিল গতি লাভ করেছিল। এটা (আমার আত্মবিশ্বাস) এমনকি সঠিক সময়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিল না। কেমন করে এটা তাহলে আমার ভেতরে বিশ্বাস তৈরি করবে যে আমার আর্থিক সমস্যাগুলো এবং ‘ক্রীস’-এর সাথে আমার বৈবাহিক সমস্যাগুলো আমি সমাধান করতে পারি?আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন ছোট বিষয়গুলো কেমন করে এতটা কঠিন মনে হয়? অনেকের কাছ থেকে শুনে আমার এটা মনে হয়েছে যে, এই ব্যাপারে আমি একা নই। এই ছোট অথচ কঠিন বিষয়গুলোর তালিকা সারা পৃথিবীতে আশ্চর্যজনকভাবে একই। যেমন:”মিটিং-এ কথা বলা”ইতিবাচক থাকা “সিদ্ধান্ত গ্রহণ “নিজেরসময় ব্যয় করা *প্রতিক্রিয়াজানার চেষ্টা করাহাত তোলা উঠে দাঁড়ানো “নিজের প্রতিসন্দেহের অবসান আত্মোন্নয়নই-মেইলগুলো পাঠিয়ে দেওয়া*নিজেরপরিকল্পনায় স্থির থাকা *ঘর থেকে বেরহওয়া *স্বেচ্ছাসেবী হওয়া *পূর্ণর্মিলনীতেহওয়া*”না” বলাসাহায্যপ্রার্থনাযোগ দেওয়া*কোনোপ্রাক্তনকে সামাজিক মাধ্যমে ‘ব্লক’ করা”নিজেকে পাহারাকরাদেওয়া*আকর্ষণীয় কারো সাথে কথা বলাআনন্দ উচ্ছ্বাসে যোগ দেওয়া*নিজেরপ্রকাশ করাকাজ*”জিমনেসিয়াম’যাওয়া*আহারে সংযমী*ভুল স্বীকার করা *শোনাআমার ক্ষেত্রে এমন হয়েছিল যে প্রতিরাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করছি আগামীকালই আমি নিজেকে পরিবর্তন করবো। আমার প্রতিজ্ঞাগুলোএমন হতো যে-“আমি বদলে যাবো। ভোরে ঠিক সময়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়বো।
পৃষ্ঠা:১০
আগামীকাল আমি ভালো ব্যবহার করব এবং একটু কঠিন চেষ্টা করবো। ‘জিমনেসিয়াম’ যাবো। স্বামীর প্রতি দৃষ্টি দেবো। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাব। অতিরিক্ত মদ্যপান ছেড়ে দেবো। আগামীকাল আমি ‘ভবিষ্যতের আমি’ হবো।”এই দৃষ্টিভঙ্গি এবং আশা-পূর্ণ হৃদয় নিয়ে আমি ভোর ৬টায় আমার গড়ির ‘অ্যালার্ম সেট’ করে ঘুমুতে যেতাম। এবং প্রাকৃতিক নিয়মে আবার সেই পুরনো চক্রে আমার দিন শুরু হতো। ভোরবেলা যখন আমার ঘড়ির ‘অ্যালার্ম’ বেজে উঠতো, আমি ভবিষ্যতের আমাকে অনুভব করতাম না। বরং মনে হতো আমি সেই একই আছি যে কিনা আবার ঘুমিয়ে পড়তে চায়।হ্যাঁ, আমি উঠে পড়ার কথা ভেবেছি এবং তারপর আবার দ্বিধান্বিত হয়েছি। একদিকে ঘড়ির ‘অ্যালাম” এবং অন্যদিকে ‘ঘুমিয়ে পড়’ নামক বোতাম। নিজেকে এর বাইরে বের করে আনতে আমার মাত্র ৫ সেকেন্ড সময় লেগেছিল। বিছানা থেকে আমার উঠতে না পারার কারণটি ছিল খুবই সহজ। আমি শুধু এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে আমি জানতে পেরেছিলাম, এটা ছিল গবেষকরা যাকে বলে থাকেন ‘অভ্যাসের বৃত্তে আটকা পরা’। ‘ঘুমিয়ে পড়’ নামক বোতামটি ভোরবেলা আমি এতবার টিপেছি যে একটা সময় এটা আমার মস্তিকে প্রাত্যহিক নিয়ম হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে গিয়েছিল।অতঃপর, একরাতে সবকিছু বদলে যায়। আমি যেই মাত্র টেলিভিশনটি বন্ধ করে বিছানায় যাওয়ার কথা ভাবছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার দৃষ্টি টেলিভিশনের পর্দায় আটকে যায়। পর্দায় তখন ‘রকেট’-এ করে একটি মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। আমি শেষ ৫ সেকেন্ড সময় গণনা শুনতে পেলাম ৫-৪-৩-২-১, অতঃপর আগুন ও ধোঁয়ায় টেলিভিশন পর্দাটি ভরে উঠলো এবং সঙ্গে সঙ্গে ‘রকেট’-টির উৎক্ষেপণ।মনে মনে ভাবলাম ঠিক আছে, আগামীকাল ভোরে ঠিক এইভাবে আমি নিজেকে বিছানা থেকে তুলে দেব। একটি ‘রকেট’ উৎক্ষেপণের মতো। আমি খুব দ্রুত কাজটি করব যাতে করে নিজের সঙ্গে কথা বলার সময় না পাওয়াযায়। এটা ছিল আমার একটি বোধ যা আমি সহজেই আবার বাতিল করে দিতে পারতাম। সৌভাগ্যক্রমে আমি দেইনি। আমি এর উপর কাজ করেছিলাম।আসলে আমি আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে চেয়েছিলাম। আমি আমার বৈবাহিক সম্পর্কটি ধ্বংস হয়ে যাক তা দেখতে চাইনি কিংবা নিজেকে একজন খারাপ মা হিসেবেও দেখতে চাইনি। আমি আর্থিক নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। আমি নিজেকে নিয়ে সুখী ও গর্ববোধ করতে চেয়েছিলাম।পরিবর্তিত হওয়ার জন্য আমি বেপরোয়া ছিলাম। শুধু জানতাম না কেমন করে।এটা আমার গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘পয়েন্ট’। বিছানা থেকে নিজেকে তুলে আনার এই প্রবৃত্তিটি ছিল আমার ভেতর থেকে কারো কথা বলা। এটা শোনা ছিল আমার প্রান্তিক ‘পয়েন্ট’। এবং এর নির্দেশনা অনুসরণ করা ছিল জীবন বদলে দেওয়ার মতো। আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক আপনাকে উঠে দাঁড়াতে এবং মনোযোগ দিতে সংকেত পাঠাবে। কিছু সময়ের জন্য আপনার মনে হতে পারে আপনার এই বোধগুলো অর্থহীন, কিন্তু আপনি যখন এদের প্রতি সম্মান দেখাতে শুরু করবেন, দেখতে পাবেন আপনার জীবন বদলে যেতে শুরু করেছে।এখানে আপনার প্রবৃত্তিগুলোর উপর কাজ করার চাইতে আরো বেশি কিছু রয়েছে যাকে বলা যায় নিজের অন্তরকে বিশ্বাস করা। ‘অ্যারিজোনা’ বিশ্ববিদালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপনার মস্তিষ্ক এবং প্রবৃত্তিগুলোর মাঝে একটি শক্তিশালী যোগাযোগ রয়েছে যা অত্যন্ত ক্রীয়াশীল। আপনি যখন একটি লক্ষ্য স্থির করেন, আপনার মস্তিষ্ক একটি কার্যতালিকা প্রস্তুত করে। যখনই আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌছুবেন, আপনার মস্তিষ্ক আপনার প্রবৃত্তিগুলোকে লক্ষ্য পূরণের জন্য তাগাদা দেবে।ধরা যাক আপনি আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতিকল্পে একটি লক্ষ্যস্থির করেছেন। এখন আপনি যদি আপনার শোবার ঘরে পায়চারি করেন, তাতে করে কোনো লাভ হবে না। কিন্তু আপনি যদি ‘জিমনেসিয়াম’-এর পথে হাঁটেন, তাহলে আপনি লক্ষ্যপূরণের কাছাকাছি যেতে শুরু করবেন। আপনি যখন
পৃষ্ঠা ১১ থেকে ২০
পৃষ্ঠা:১১
‘জিমনেসিয়াম’ গিয়ে পৌছুবেন, আপনার মনে হতে থাকবে ব্যায়াম শুরু করা উচিত। এটা হলো প্রবৃত্তি যা আপনাকে আপনার লক্ষ্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এটাকে আপনি অন্তর্গত জ্ঞানও বলতে পারেন এবং এর প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি, আপনার প্রবৃত্তিটি ছোট কিংবা অর্থহীন যাই মনে হোক না কেন।অবচেতনভাবে আমার মস্তিষ্ক টেলিভিশনে ‘রকেট’ উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াটির প্রতি মনোযোগী হতে আমাকে সংকেত দিচ্ছিল। নির্দিষ্ট সেই ৫ সেকেন্ড সময়ে আমার মস্তিষ্ক আমাকে কিছু পরিষ্কার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিল-“মেল, ‘রকেট’ উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াটির প্রতি মনোযোগী হও। মেল, ধারণাটি আত্মস্থ কর এবং কাজ কর। থেমো না এবং চিন্তা করো না। এ ব্যাপারে নিজের সঙ্গে বেশি কথা বলতে যেয়ো না। মেল, আগামীকাল ভোরে ঠিক এভাবেই নিজেকে বিছানা থেকে তুলে দিও।”এটা হলো সেই একটি ব্যাপার যা আমি ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহারের মাধ্যমে শিখেছিলাম। যখন এটা আপনার লক্ষ্য, স্বপ্ন এবং জীবন বদলে দেবে, আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার অন্তর্গত জ্ঞান একটি প্রতিভা। আপনার লক্ষ্য সম্পর্কিত তাড়না, আকাঙ্ক্ষা এবং প্রবৃত্তিগুলো আপনাকে পথ দেখাবে। আপনাকে নিজের উপর বাজি ধরা শিখতে হবে। ইতিহাস প্রমাণ করে যে, আপনি যখন নিজের উপর যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্বাস রাখবেন এবং তার উপর কাজ করবেন, তখন আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আপনার সর্বশ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণাটি কখন কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং তা আপনাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।পৃথিবীর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কিছু উদ্ভাবন এভাবেই আবিষ্কৃত হয়েছিল। ১৮২৬ সালে ‘জন ওয়াকার’ কাঠি দিয়ে রাসায়নিক মিশ্রিত একটি পাত্রে নাড়তে নাড়তে দেখতে পান কাঠিটির অগ্রভাগে আঠালো পদার্থের একটি দলা তৈরি হয়েছে এবং তা জ্বলজ্বল করছে। আর এখান থেকেই আবিষ্কৃত হয়েছিল ম্যাচবাতি/ম্যাচকারি। ‘জন ওয়াকার’ তার প্রবৃত্তি অনুসরণ করে সফল হয়েছিলেন। ১৮৪১ সালে ‘জর্জ দ্য মেস্ট্রাল’ ‘ভেলক্রো’ আবিষ্কার করেছিলেন যখন তার নজরে আসে যে কতটা সহজে তার কুকুরের পশমের সাথে শামুকের খোল লেগে থাকে। ১৯৭৪ সালে ‘আর্ট ফ্রাই’ তার ‘পোস্ট ইট নোট’-এর ধারণাটি পান, কারণ স্তবগ্রন্থের পৃষ্ঠায় রবিবার গির্জাসেবা শুরু হওয়া পর্যন্তএকটি বুকমার্ক রাখার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বুকমার্কটি সরিয়ে নেবার সময় যেন পৃষ্ঠাটির কোনো ক্ষতি না হয় তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল। দেখা যাক কিভাবে জন্ম হয়েছিল ফ্রাপুঞ্জিনিও’। ১৯৯২ সালে ‘সান্তা মনিকো’তে অবস্থিত ‘স্টারবাকস’-এর ম্যানেজার লক্ষ্য করলেন, যখনি বাইরে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় তাদের বিক্রি পড়ে যায়। তার প্রবৃত্তি তাকে একটি হিমায়িত পানীয় তৈরি করতে বলছিল এবং তিনি তা অনুসরণ করেছিলেন। তিনি একটি ‘ব্রেন্ডার’ চাইলেন, রেসিপি তৈরি করলেন এবং তার ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট’-কে একটি নমুনা পাঠালেন। পরের বছর তার দোকানে বিক্রি শুরু হলো ‘ফ্রাপুঞ্জিনিও’।এটি যখন পরিবর্তন, লক্ষ্য ও স্বপ্নবিষয়ক কোনো কিছু হবে, আপনাকে তখন নিজের উপর বাজি ধরতে হবে। প্রবৃত্তিগুলোর কথা শোনা এবং তার উপর কাজ করার মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন করাই হবে নিজেকে নিয়ে বাজি ধরার শুরু। আমি কৃতজ্ঞতাবোধ করছি এই ভেবে যে নিজেকে বিছানা থেকে তুলে দাঁড় করাতে ‘রকেট’ উৎক্ষেপণের ধারণাটিকে আমি গুরুত্ব দিয়েছিলাম যা আমার জীবনের সবকিছু বদলে দিয়েছিল। এবং তারপর যা ঘটেছিল-পরদিন ভোর ৬টায় আমার ঘড়ির ‘অ্যালার্ম বেজে ওঠার পর প্রথম যা আমি অনুভব করেছিলাম, তার নাম ভীতি। এটা হলো অন্ধকার, শীতল। ‘বোস্টন’-এর এক শীতের সকাল ছিল এটা এবং আমি উঠতে চাইছিলাম না। তৎক্ষণাৎ আমি ‘রকেট’ উৎক্ষেপণের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করি এবং অনুভব করি- কী নির্বোধের মতোই না আমি ভাবছি। অতঃপর আমি যা করলাম, ইতিপূর্বে আমি তা কখনো করিনি। আমি আমার ভাবনাগুলোকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলাম। আমি আর বেশি কিছু চিন্তা করিনি। তাই করেছিলাম ঠিক যা করা আমার প্রয়োজন ছিল।’ঘুমিয়ে পড়’ বোতামে চাপ দেওয়ার পরিবর্তে আমি উল্টো করে ক্ষণ গণনা শুরু করেছিলাম ৫-৪-৩-২-১এবং তারপর আমি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছিলাম। এটাই ছিল সেই মুহূর্ত যখন আমি আবিষ্কার করি ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’।
পৃষ্ঠা:১২
যে মুহূর্তে আপনার কোনো প্রবৃত্তি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে চাইবে, আপনাকে ক্ষণ গণনা শুরু করতে হবে ৫-৪-৩-২-১ এবং আপনাকে শারীরিকভাবে সচল হতে হবে, তা না হলে আপনার সস্তিক আপনাকে থামিয়ে দিতে পারে। (৩) এর ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি কি আশা করতে পারেন? “মানুষ হিসেবে জন্ম নেয়াটা কোনো বিষয় নয়, মানুষ কি হতে চার সেটা গুরুত্বপূর্ণ।” – জে. কে. রাওলিং
প্রথমদিন সকালে আমি যখন রুল’টি ব্যবহার করেছিলাম, অন্যদের মতো আমিও দেখে অবাক হয়েছিলাম যে নির্বোধের মতো কিছু একটা কাজ করছে। উল্টো গণনা? ৫-৪-৩-২-১। সত্যি? আমি জানিনা কেন এটা কাজ করেছিল। শুধু জানি করেছিল। সময় মতো বিছানা ছেড়ে উঠতে আমি মাসের পর মাস চেষ্টা চালিয়েছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করে ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ খুব সহজেই আমার অভ্যাসটি বদলে দেয়।পরবর্তী পর্যায়ে আমরা জানব যে, আপনি যখন উল্টো ক্ষণ গণনা করবেন তখন মানসিকভাবে আপনি আসলে আপনার গিয়ার পরিবর্তন করবেন। আপনি আপনার স্বাভাবিক চিন্তা-ভাবনা বন্ধ রেখে যা করে দেখাবেন তা হলো মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘নিয়ন্ত্রিত দৃঢ়তা’। এটা হলো নিজের মস্তিষ্ককে নতুন পথে চালিত করার কৌশল হিসেবে অজুহাতগুলোকে বিভ্রান্ত করা এবং মনোঃসংযোগ করা। যখনি আপনি চিন্তা করা বন্ধ রেখে শারীরিকভাবে সচল হবেন, আপনার মনস্তত্ত্ব পরিবর্তিত হয়ে একটি রেখায় এসে দাঁড়াবে।এই বইটির গবেষণায় আমি আবিষ্কার করেছি যে রুল’টি হলো (অভ্যাস সংক্রান্ত গবেষণার ভাষায়) একটি ‘প্রারম্ভিক প্রক্রিয়া’ যা আপনার আচরণ পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’-কে সচল করবে।’প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ হলো আপনার মস্তিষ্কের সেই অংশ যা আপনি মনোঃসংযোগ, পরিবর্তন এবং ইচ্ছাকৃত কোনো কাজ সম্পন্ন করতে ব্যবহার করে থাকেন। আমি জানতাম ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ কি। কিন্তু খুব শীঘ্রই আমি মৌলিক নার্ভগ্রন্থি বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে অভ্যাসচক্র, শক্তি সক্রিয়করণ, নমনীয় আচরণ, জানীয় পক্ষপাত, অগ্রগতি নীতি এবং নিয়ন্ত্রণ অবস্থান
পৃষ্ঠা:১৩
আমি পরদিন ভোরে রুলটি ব্যবহার করেছিলাম এবং এটা আবারো কাজ করেছিল। আমি ৫ সেকেন্ড সময়ের মুহূর্তগুলো দিনব্যাপী দেখতে শুরু করলাম, ঠিক যেমন ঘুম থেকে জেগে ওঠার ব্যাপারে আমার সংগ্রাম এবং দিনব্যাপী তার প্রতিক্রিয়াসমূহ দেখেছিলাম। নিজের মস্তিষ্ক আমাকে থামিয়ে দেয়ার পূর্বে আমার অজুহাতগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে এই রুল’টি ৫ সেকেন্ডের চাইতেও কম সময় নিয়েছিল।আপনি যখন রুল’টি ব্যবহার করবেন, তখন দেখতে পাবেন যে আপনার প্রাথমিক প্রবৃত্তি কাজ করা এবং মস্তিষ্ক আপনাকে থামিয়ে দেওয়ার মাঝখানে একটি জানালা রয়েছে। আমি দেখেছি ঐ ৫ সেকেন্ড সময়ের জানালাটি আমার সবকিছু বদলে দিয়েছিল। সমস্যাটি ছিল খুব স্পষ্ট। আর তা হলো আমি নিজে। ৫ সেকেন্ড সময় ধরে আমি আমার নিজেকেই পেছনে টেনে বরে রাখতাম।সুতরাং নিজের কাছে আমি একটি সাধারণ প্রতিজ্ঞা করলাম। আমি যদি দেখি নিজের ভালোর জন্য আমার কিছু করা উচিত, তাহলে রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেকে আমি তা করতে সামনে ঠেলে দেব। আমার যাই মনে হোক না কেন। নিজের ওপর জোর খাটাতে আমি রুল’টির ব্যবহার শুরু করেছিলাম শুধুমাত্র ভোরবেলা বিছানা ছেড়ে ওঠার জন্যই নয় বরং যাতে করে আমি ‘জিমনেসিয়াম’ যেতে পারি, নতুন কাজ গোঁজা শুরু করতে পারি, মদ্যপান কমিয়ে আনতে পারি এবং একজন ভালো স্ত্রী ও মা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।• নিজেকে যদি ‘ক্রীস’-এর প্রতি খুব বিদ্বেষপূর্ণ মনে হয়, তাহলে আমাকে যা করতে হবে-৫-৪-৩-২-১ এবং নিজের স্বর সংশোধন করে আরো বিনয়ী হওয়া।• নিজের ভেতরে আমার যদি খুব বেশি গড়িমসি ভাব চলে আসে, তাহলে আমাকে যা করতে হবে-৫-৪-৩-২-১ এবং জীবন বৃত্তান্তের উপর কাজ শুরু করতে বসে যাওয়া।আমি যা আবিষ্কার করেছিলাম তা ছিল শক্তিশালী। সহজ কর্মকাণ্ডে নিজেকে একটু ঠেলে দেওয়ার মাধ্যমে আস্থা ও উৎপাদনশীলতার মধ্যে একপ্রকার শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। জীবনকে আগে বাড়াতে, নিজেকে একটু সামনে ঠেলে দেওয়ার মাধ্যমে আপনি যে মুহূর্তের সৃষ্টি করবেন এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার যে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন তা ভাষায় বর্ণনা করা একটু কঠিন। ‘র্যাচেল’ যেমন সঠিক সময়ে উঠে পরার একটি সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে দেখেছিলেন অনেকগুলো ঘটনার সূত্রপাত, যেমন নিজের ৩০ পাউন্ড ওজন কমা, প্রথম বাড়ি কেনা এবং তার বৈবাহিক সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন।’র্যাচেল’ পুনরুজ্জীবন শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন এবং ‘দ্য ফাইন্ড সেকেন্ড রুল’ ঠিক এই কাজটিই করে থাকে। ‘রেবেকা’ নামক একজন ভদ্রমহিলার এই একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। রুল’টি ব্যবহার করে নিজেকে একটু সামনে ঠেলে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি মানসিক কারাগার ভেঙে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। পক্ষপাতদুষ্ট বিশ্লেষণ দ্বারা বন্দি থাকা আর নয়, ‘রেবেকা’ তাঁর ৪৭ বৎসর বয়সে প্রথমবার অনুভব করেছিলেন যে তিনি স্বাধীন।
প্রক্রিয়াগুলো ছিল:
- আমি যদি ব্যায়াম করতে খুব বেশি পরিশ্রান্ত অনুভব করি, তাহলে আমাকে যা করতে হবে-৫-৪-৩-২-১ এবং দৌড়ের জন্য নিজেকে দরজার বাইরে ঠেলে দেওয়া।• আমি যদি আমার গ্লাসে বেশি পরিমাণ পানীয় ঢেলে দিই যা পান করা উচিত নয়, তাহলে আমাকে যা করতে হবে-১৯৫৪ সালে ‘জুলিয়ান রোটর’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মনস্তান্ত্রিক ধারণা দিয়েছিলেন। এটিকে বলা হয় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। আপনি যতটা বিশ্বাস করবেন যে আপনার জীবন, কর্ম এবং ভবিষ্যৎ আপনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আপনি ততটাই সুখী এবং সফল হবেন। আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ-অনুভূতি বৃদ্ধির একটি নিশ্চিত উপায় রয়েছে, আর তা হলো কাজের প্রতি আপনার পক্ষপাত।
পৃষ্ঠা:১৪
এটি একটি পৌরাণিক ঘটনা। আপনি যখন নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য। সম্ভাব্য সবকিছু আপনার ধারণার মধ্যে জড়ো করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে আগ্রহ অথবা প্রেরণা অনুভব করতে হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। এটা নিজেকে সোজাসুজি বলবার মুহূর্ত। আপনি প্রেরণা অনুভব করবেন না। সত্যি বলতে কি, আপনি কোনো কিছু করছেন বলেই অনুভব করবেন না। আপনাকে যেটা করতে হবে তা হলো নিজের পশ্চাৎভাগ উঠিয়ে নিজেই নিজের পাছায় লাথি মারা। আমি যাকে বলি ধাক্কার শক্তি।’ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি শক্তিশালী হওয়ার এটা একটা অন্যতম কারণ, কেননা এটা আপনাকে এমন এক ব্যক্তিত্বে রূপান্তর করবে যে কিনা পক্ষপাতমূলক কার্য দ্বারা পরিচালিত। আর আপনার যদি প্রতি পদক্ষেপে অতি- চিন্তার ঝোক থেকে থাকে তাহলে আপনি দেখতে পাবেন চিন্তাশক্তি বন্ধ করে দেওয়া এমনকি অচল করে দেওয়া উদ্যম ও আস্থার প্রকাশ। রুল’টি ব্যবহার করে আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে আপনি নিজের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা অর্জন করবেন।’জেনী’ শেষ পর্যন্ত তার স্বাস্থ্যের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যখনই ডিনারে কৌটাভর্তি রাভিওলি, ব্যাগভর্তি চিপস এবং প্রচুর সোডা গ্রহণ করবেন, তার ওজন বেড়ে যাবার নিশ্চিত অভিযোগ উঠবে। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে তিনি তার ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে হতাশ করেছিলেন। ‘জেনী’ রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজের পশ্চাৎদেশে লাথি মারতে সক্ষম হয়েছিলেন যা তার প্রয়োজন ছিল।‘ডোনা’ প্রথম যখন ‘আভেদা ইনস্টিটিউট কনফারেন্স’-এ রুল’টি সম্পর্কে জানতে পারেন, তার মনে হয়েছিল রুল’টি সে ব্যবহার করে দেখবে কিন্তু এতে তার জীবন বদলে যাবে না। রুল’টি সম্পর্কে আমিও ঠিক এভাবেই ভেবেছিলাম আমি হয়তো ‘ঘুমিয়ে পড়’ অ্যালার্মটিকে পরাজিত করার একটি কৌশল হিসেবে এর ব্যবহার করছি। কিন্তু এটি ছিল আমার ভুল চিন্তা। ডোনারও তাই। এটা তার জীবন ও ব্যবসাসংক্রান্ত সবকিছুই বদলে দিয়েছিল। ‘ডোনা’ বুঝতে পেরেছিল আমরা শুধু আমাদের নিজেদেরকে পেছনে টেনে ধরে রাখি। এটা দেখা আশ্চর্যজনক যে, আমি কতটা ভয়ংকরভাবেই না নিজেকে ভয়ের কাছে জিম্মি করে রেখেছিলাম, আর আজ আমি কোথায় আছি।আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সামনের বছরগুলোতে আমি কোথায় থাকবো সেটাও দেখতে পাচ্ছি।আপনি এই রুল’টি যত বেশি ব্যবহার করবেন ততবেশি নিজের ভেতর মনোবল, আত্মবিশ্বাস, গর্ব ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অনুভব করবেন। আমি প্রায়ই মানুষকে বলি রুল’টি ব্যবহারের একটি পরিণতি হলো এটি আপনাকে তাড়া করে ফিরবে। ভালো অর্থেই বলছি। এবং আমি ঠিকই বলছি। আপনি ‘ডেরিল’-কে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। আপনি বুঝতে পারবেন ঘুমের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে আপনি হাঁটছেন। এটা কখনো সহজ, সাধারণ ও কার্যকর, কখনোবা সংক্রামক। ‘ডেরিল’ যেমন বর্ণনা করেছেন ‘দা ফাইভ সেকেন্ড রুল’ আমাকে তাড়া করে ফিরছে, প্রত্যহ, ভালোভাবেই, আর তাই আমার জীবন সামনে এগিয়ে চলেছে।রুল’টি সম্পর্কে আমি প্রথম যাকে বলি সে হলো আমার স্বামী। ‘ক্রাস’ আমার পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করেছিল, বিশেষ করে আমার জঘন্য আচরণের পরিবর্তন। মানসিকভাবে সে যে একটি গোপন অস্ত্র ব্যতীত জীবন-যাপন করছিল তাকে সেটা বোঝাতে আমার বিশেষ কোনো বেগ পেতে হয়নি।’ক্রীস’ রুল’টি তার নিজের কিছু পরিবর্তনের জন্য আত্মস্থ করেছিল এবং ব্যবহার করেছিল। রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে সে মদ্যপান ছেড়ে দিয়েছিল, প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম শুরু করেছিল এবং প্রত্যহ ভোরে শারীরিক ব্যায়াম করাও শুরু করে দিয়েছিল। ঋণদাতাদের তাগাদা ও দেউলিয়াত্বের চিঠি উপেক্ষা করার বদলে তাদের মুখোমুখি হতে আমরা ক্ষণ গণনা করেছিলাম ৫- ৪-৩-২-১। আমি আমার পুরনো প্রশিক্ষণ ‘ক্লায়েন্ট’দের সাথে যোগাযোগ করতে, যাতে করে আমার পুরনো প্রক্রিয়াটি সচল থাকে, নিজেকে ধাক্কা দিতে ক্ষণ গণনা করেছিলাম ৫-৪-৩-২-১। ‘ফক্স’ টেলিভিশনের সাথে চুক্তিসংক্রান্ত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমি ‘রেডিও’তে উপস্থাপনা করার চাকরি পেতে সাক্ষাৎকারের জন্য নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে ক্ষণ গণনা করেছিলাম ৫-৪-৩- ২-১। একসাথে আমরা আমাদের হিসাবরক্ষক ও আর্থিক উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ এবং নিজেদের খনন করা গর্তে মুখোমুখি হওয়ার বিরক্তিকর কাজ এবং ধীরে ধীরে তা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসার মাধ্যমে জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ক্ষণ গণনা করেছিলাম ৫-৪-৩-২-১।
পৃষ্ঠা:১৫
‘ক্রীস’, ভয়, অপরাধ ও অনিশ্চয়তার মাঝে নিজেকে একটু সামনে ঠেলে দেওয়ার জন্য তার ব্যবসায় রুলটি প্রয়োগ করেছিল। সে এবং তার পার্টনার কয়েক ডজন উপদেষ্টার সাথে মিলিত হয়েছিল, তাদের আর্থিক নকশাগুলো ভেঙে দিয়েছিল, পাইকারি ব্যবসাটি বন্ধ না করা পর্যন্ত দিনরাত খেটেছিল এবং তাদের খুচরো ব্যবসাটিকে বড় করেছিল নির্বাচিত কিছু শাখা বিক্রি করে দেওয়ার মাধ্যমে যাতে করে যত বেশি সম্ভব বিনিয়োদকারী ও পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করে দেওয়া যায়। ‘ক্রীস’ এবং ‘জোনাথন’ যা করেছিল তা ছিল সাহস, উদ্যম এবং প্রতিশ্রুতির সমন্বয় এবং যা ছিল সত্যিই অসাধারণ। তারা নিজেদের একটু একটু এবং আরো একটু করে সামনে ঠেলে দিয়েছিল।আজ যখন ‘ক্রীস’ রেস্টুরেন্ট ব্যবসার দিনগুলোর কথা মনে করে, কখনো কখনো তার মনে ব্যর্থতার অনুভূতি হয়। তবে যখনই সে নিজেকে নেতিবাচক চিন্তা শুরু করতে দেখে তখনই ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে সে তার নিজের মনকে ভিন্ন পথে চালিত করে এবং ভাবে তারা কি সৃষ্টি করেছিল- সাতটি রেস্টুরেন্ট, একটি অবিশ্বাস্য কর্মী সংস্কৃতি, কোটি টাকার রাজস্ব আয় এবং একটি অসাধারণ ‘ব্র্যান্ড’।এটা কি সেইরকম সমাপ্তি ছিল যা সে কল্পনা করেছিল? না, ছিল না। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে সে ব্যবসা, অংশীদারিত্ব এবং তার নিজের সম্পর্কে যা শিখেছিল তা টাকা দিয়ে কেনার চাইতে অনেক বেশি মূল্যবান ছিল। আস্থার অনুভূতি ও গর্বের চাইতে অধিক শক্তিশালী আর কিছু নেই বিশেষ করে যখন আপনি ক্লান্তিকরভাবে সামনে এগিয়ে চলেছেন, জীবনের দ্বন্দ্বযুদ্ধে মুখোমুখি হচ্ছেন এবং উন্নতির আশায় নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য একটু সামনে ঠেলে দিচ্ছেন। ‘ক্রীস’ বলে যে রুল’টি আমাকে বিভিন্ন স্তরে সফলতা এবং ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা প্রদান করেছিল। অবশেষে এই সচেতনতা আমাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিন্তাগুলো নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি জুগিয়েছিল।আমরা যখন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করি তখন প্রায়ই রুল’টি চলে আসে। আপনিও সেটা দেখতে পাবেন। ‘জেনিফার’ রুল’টি সম্পর্কে জেনে তার সেবিকাকে তা জানিয়েছিলেন। তার (সেবিকার) প্রতিক্রিয়া কি ছিল? “আপনার কোনো ধারণা নেই দিনে কতবার এটা আমাকে ব্যবহার করতে হবে !”রুল’টি যারা ব্যবহার করেছে তাদের ভেতরে শক্তিশালী কিছু একটা জ্বলে উঠতে দেখা গেছে। আমার এক বন্ধুর মাঝে দেখেছিলাম ডিভোর্স চাইবার মতো দুঃসাহস এবং অন্য এক বন্ধু অধিক ভ্রমণ করার প্রয়োজন পড়ে না এমন একটি কাজের জন্য তার পরামর্শ প্রদান করার চাকুরিটি ছেড়ে দিয়েছিল। একজন সহকর্মীকে দেখেছিলাম ৭৩ পাউন্ড ওজন কমাতে এবং আমার চাচা অনেকদিন ধরে যে ধূমপান ছেড়ে দেবার কথা ভাবছিল, শেষ পর্যন্ত ধূমপান ত্যাগ করতে পেরেছিল। ‘ক্রাস’-এর একজন বন্ধু ‘মাইনি’-তে (আমেরিকার একটি উত্তর-পূর্ব অঙ্গরাজ্য) ফিরে গিয়েছিল এবং চমৎকার একটি কাজ খুঁজেপেতে রুল’টি ব্যবহার করেছিল।’দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ সবাইকে তাই দিয়েছিল যা দিয়েছিল আমাকে। একটি কাঠামো, মনোবল এবং কি করে নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য ধাক্কা দিতে হয়, সেই পদ্ধতি।২০১১ সালে ‘টেডএক্স টক’-এর সময় সর্বপ্রথম আমি সবার সাথে রুল’টি শেয়ার করি যার (আলোচনার) নাম ছিল ‘কি করে নিজের ক্ষতি করা বন্ধ করা যায়’। মজার ব্যাপার হলো, আলোচনাটি ছিল ‘রেডিও’তে আমার একজন নামকরা উপস্থাপিকা হওয়ার স্বপ্ন এবং মানুষকে তাদের কাঙ্কিত জীবন পেতে সাহায্য করার চেষ্টা বাস্তবায়নের একটি পদক্ষেপ মাত্র। বক্তৃতার একেবারে শেষ পর্যায়ে আমি রুল’টি সম্পর্কে বলি এবং খুব সামান্যই ব্যাখ্যা করি। অনুষ্ঠানটি ‘ভাইরাল’ হয়ে গিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি ‘অনলাইন’-এ দেখেছিল এবং শুধু তাই নয়, এটা নিয়ে তারা লিখতে শুরু করল।প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন মানুষের কথা শুনতে লাগলাম যারা রুল’টি ব্যবহার করছিল। যেমন ‘মার্ক’। ‘মার্ক’ তার কিছু পরিবর্তনের আশায় রুল’টি ব্যবহার করেছিল। ৬ মাসের ভেতর তার ব্যবসা দ্বিগুণ হয়েছিল, বাণিজ্যিক বিক্রয়ের উপর সে একটি বই লিখেছিল, তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি ঘনিষ্ট হতে পেরেছিল এবং বিশ্বভ্রমণে বের হওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছিল।আনন্দের বিষয় এই যে, আজ পর্যন্ত ৮০টি দেশের এক লক্ষ বা তার চাইতে বেশি মানুষ আমাকে রুল’টি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা জানিয়ে লিখেছেন। আরো অধিক মানুষ যখন আমাকে আরো বেশি তথ্যের জন্য অনুরোধ এবং
পৃষ্ঠা:১৬
প্রশ্ন করে লিখতে শুরু করলো, আমি তথন আরো গভীর গবেষণা শুরু করলাম যাতে করে বিভিন্ন উপায়ে রুল’টি ব্যাখ্যা করতে পারি এবং প্রমাণ করতে পারি কেন রুল’টি এতটা কার্যকর। পেশায় আমি ছিলাম একজন আইনজীবী। আর তাই গবেষণার ব্যাপারে আমি ছিলাম কঠোর। আমি উদাহরণ, প্রমাণ এবং নির্দেশনা খুঁজে বের করেছিলাম যাতে করে জুরিদের সামনে ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ সংক্রান্ত আমার মামলাটি প্রমাণ করতে পারি।এতে আমার প্রায় ৩ বৎসর লেগেছিল। আমি সবকিছু পড়ে দেখেছিলাম। পরিবর্তন, সুখ, অভ্যাস, অনুপ্রেরণা এবং মানুষের আচরণ সম্পর্কে আমি জানার চেষ্টা করেছি। সমাজবিজ্ঞান গবেষণা, সুখ গবেষণা, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণার উপর আমি পড়াশোনা করেছি। আমি আমার গবেষণা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখিনি। আমি প্রত্যেকের কাছেই প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছিলাম যারা রুল’টি ব্যবহার করেছিল। অতঃপর ফোন, স্কাইপে এবং গুগল চ্যাটের মাধ্যমে তাদের উত্তরগুলো জানার চেষ্টা করি এবং পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে যারা বিভিন্ন মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছিল তাদের অভিজ্ঞতা সমূহ ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করে দেখি।আমি যথন পরিবর্তনের মুহূর্তগুলো বিশ্লেষণ করছিলাম তখন সবার ভেতর উদ্ভট কিছুর উপস্থিতি উন্মোচন করেছিলাম। ঠিক যেমন আমরা কোনো কাজ করার পূর্বে কঠিন, ভীতি অথবা অনিশ্চিত বোধ করি এবং দ্বিধাগ্রস্ত হই। দ্বিধা হলো অনেকটা মৃত্যুকে চুম্বন করার মতো। আপনি হয়তো এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ পরিমাণ সময় দ্বিধা করতে পারেন কিন্তু এটা ওইটুকু সময়ই নেবে। ঐ এক মুহূর্তের দ্বিধা আপনার মানসিক প্রক্রিয়াকে অচল করে দেবার জন্য যথেষ্ট।কখনো কি খেয়াল করেছেন আপনি কতটা দ্রুত ভয় এবং সন্দেহের কাছে আপনার মাথা নত করছেন এবং কোনো কাজ করার ব্যাপারে নিজেকে চুপ করিয়ে রাখতে অজুহাত তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিদিন আমরা ক্ষুদ্র জাগতিক মুহূর্তগুলোতে নিজেদেরকে পেছনে টেনে ধরে রাখি এবং এর প্রভাব পড়ে সর্বত্র। আপনি যদি এই অভ্যাস ও দ্বিধাগুলো ভাঙতে পারেন তাহলে আপনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার মতো মনোবল খুঁজে পাবেন, যা আশ্চর্যজনকভাবে অতি দ্রুত আপনার জীবনকে বদলে দেবে। ‘ক্বীর্ঘ’, যা ‘বি- ম্যাক্স কনভেনশন’-এ রুলটি সম্পর্কে আবিষ্কার করেছিলেন।’কীথ’ এর ভাষায় “আমি আপনাকে ২০১৫ সালে প্রথম জানতে পারি। আপনি আমাকে অবিশ্বাস্য কাজ করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। আমার শুধু নিজের পদ্ধতি ছেড়ে বেরিয়ে আসার দরকার ছিল। আপনার রুল’টি অনুসরণ করার মাধ্যমে মাত্র দেড় বৎসর সময়ে আমি তিনটি অফিস খুলতে এবং ‘আরাকানসাস’ অঞ্চলে ৫০ জনেরও অধিক প্রতিনিধি নিয়োগে সক্ষম হয়েছিলাম। কোনো দ্বিধা নয়, কোনো আলসেমি নয়। আমি শুধু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম যা আমাকে আমার লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করেছিল। অনেক বড় কাজ হঠাৎ করেই আমার কাছে নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে মনে হতে লাগলো। কঠিন অংশটি ছিল শুরু করা। আপনাকে ধন্যবাদ রুল’টি শেয়ার করার জন্য এবং আমাদের সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ হতে অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য।”খেয়াল করুন, এটা আমাদের জীবনের বড় কোনো পদক্ষেপ নয়। বরং ক্ষুদ্রতম। ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে কাজটি শুরু না করে আপনি চিন্তা-ভাবনা করছেন এবং সেই ক্ষুদ্রতম বিষয়গুলোর উপর কাজ না করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। সময়ের সাথে সাথে সেই ছোট সিদ্ধান্তগুলো ভূপিকৃত হতে থাকে। দ্বিধা, উদ্বেগ আর নিজেকে সন্দেহ করার এই ধরনটি আমরা খুব বেশি মাত্রায় পুনরাবৃত্তি করি যা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয় এবং একই সাথে মস্তিস্কে গেঁথে যায়।প্রকৃতপক্ষে দ্বিধা, যা আপনাকে পেছনে টেনে ধরে রাখে এবং অতি-চিন্তা যা আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, এগুলো কোনো ব্যাপার নয়। খারাপ অভ্যাসগুলো ছেড়ে দেওয়া বা প্রতিস্থাপন করার খুব সহজ ও প্রমাণিত পন্থা রয়েছে, আর তা হলো ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’। একবার যখন আপনি আপনার অভ্যাসচক্রটি পড়ে ফেলবেন, আপনার কার্যপ্রক্রিয়া শুরু করবেন, শক্তিকে সচল করবেন এবং আপনার সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে ভূমিকা পালন করবেন আপনি আসলে ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির বিশালত্বের প্রশংসা করবেন। আপনি যখন রুল’টি ব্যবহার করবেন, দেখতে পাবেন যে পরিবর্তন কেমন করে ৫ সেকেন্ডের সিদ্ধান্তগুলোকে কব্জা করছে এবং আপনি কত সহজেই না আপনার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাচ্ছেন।আপনি প্রতিবার যখনই রুল’টি ব্যবহার করবেন, এটি কাজ করবে। কিন্তু
পৃষ্ঠা:১৭
আপনাকে এর ব্যবহার করতে হবে। এটি একটি হাতিয়ার। আপনি যদি এর ব্যবহার বন্ধ করে দেন, ভয় ও অনিশ্চয়তা ফিরে আসবে এবং আপনার সিদ্ধান্তগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে। এমনটি যদি ঘটেই যায়, তাহলে পুনরায় রুল টির ব্যবহার শুরু করে দিন।আপনি যখন সময়ের সাথে সাথে রুল’টি ব্যবহার করবেন, নিজের ভেতরে একটি স্থানান্তরের অভিজ্ঞতা অর্জন করাবেন যা খুবই গভীর। একটি রূপান্তর দেখতে পাবেন যা আপনার আত্মবিশ্বাস ও অন্তর্গত শক্তির উপর প্রভাব ফেলবে। আপনি আপনার অজুহাত, অভ্যাস, অনুভূতি, অনিরাপত্তাবোধ এবং ভয়ের মুখোমুখি দাঁড়াবেন, যেগুলো আপনাকে বছরের পর বছর ধরে তাড়া করে ফিরেছে। আপনি দেখতে পাবেন প্রতিদিন আপনি নিজেকে কি পরিমাণ আবর্জনার মধ্যে ফেলেছেন এবং কিছু জিনিস পরিবর্তিত হওয়ার অপেক্ষায় কি পরিমাণ মূল্যবান সময়ের অপচয় করেছেন।রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার সেই অপেক্ষার অবসান হবে। আপনি এটা দেখে সত্যিই বিস্মিত হবেন যে, ‘রবিন’ নামে একজন ভদ্রমহিলা ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কি পরিমাণ আনন্দ ও স্বাধীনতা অনুভব করেছিলেন। স্বাধীনতা হলো ঠিক তাই যা ‘রবিন’ রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন। তার ভাষায় “সিদ্ধান্ত কার্যকর করার মাঝেই আছে স্বাধীনতা। পরিবর্তনের জন্য আমার আকাঙ্ক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অনেক বড় কিন্তু কখনো কখনো আত্মবিশ্বাস পিছিয়ে পড়ে। এটি যখন ঘটে, আমি যখন দ্বিধান্বিত হই ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করি।”এবং আমিও ঠিক এটাই অর্জন করেছিলাম জীবন বদলে দেয়া স্বাধীনতা। সাত বৎসর পূর্বে আমি যা ছিলাম… এখন তা নেই। এটি একটি ভালো জিনিস। জীবন ও পেশার প্রতিটি স্তরে একজন ভিন্ন আপনাকে প্রয়োজন। রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে জীবনের পরবর্তী স্তরে আপনি সেই ব্যক্তিত্বে পরিণত হবেন ঠিক যা হওয়ার দরকার।সুতরাং, আপনি কি একমত? আমরা কি রুল’টির মূল ভিত্তিগুলো অনুসন্ধান করব যাতে করে আপনি এর ব্যবহার শুরু করতে পারেন?
(৪) কেন এই (বিধি) রুল’টি কাজ করে “আপনি মনোবল অথবা স্বস্তি যে কোনোটি বেছে নিতে পারেন, কিন্তু দুটি একসাথে নয়।” – ব্রেনে ব্রাউন
বছরব্যাপী আমি ফাইভ সেকেন্ড রুল’টি সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন পেয়েছি। রুল’টি ব্যবহারে আপনার ভূমিকা বর্ণনা করতে চাই এই অসাধারণ হাতিয়ারটি সম্পর্কে আমাকে প্রায়ই করা কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মাধ্যমে।
ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আসলে কি? ঃ
রুল’টি একটি সাধারণ, গবেষণা সমর্থিত, কারো চিন্তাপদ্ধতি বুঝবার হাতিয়ার যা তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী পরিবর্তন সৃষ্টি করে। প্রসঙ্গক্রমে, এটা হলো কোন পদ্ধতি নামকরণের জন্য একটি অভিনব শব্দ যা আপনাকে বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার মস্তিষ্ককে হারানোর অনুমোদন দেয়।
রুল’টি কেমন করে ব্যবহার করবেন?ঃ
রুল’টি ব্যবহার করার নিয়ম খুব সহজ। যখনি আপনি অনুভব করবেন আপনার প্রবৃত্তি কোনো লক্ষ্য অথবা প্রতিশ্রুতি পূরণ অথবা আপনার অবশ্যই করা উচিত এমন কিছু করা থেকে বিরত রাখতে দ্বিধার সৃষ্টি করছে, রুল’টি ব্যবহার করুন।পেছনের দিকে ক্ষণ গণনা শুরু করুন ৫-৪-৩-২-১। ক্ষণ গণনা আপনাকে আপনার লক্ষ্য অথবা প্রতিশ্রুতির উপর দৃষ্টি স্থির রাখতে এবং আপনার উদ্বেগ, চিন্তা-ভাবনা ও ভীতিগুলোকে বিভ্রান্ত করতে সাহায্য করবে। যখনি আপনি ‘১’ এ পৌঁছে যাবেন, কাজ হয়ে যাবে। খুব সহজ, কিন্তু আমি আরো একবার এই জায়গাটি ব্যাখ্যা করতে চাই। যখনি দেখবেন আপনার কিছু করা উচিত অথচ আপনি অনিশ্চয়তা, ভয় বা আচ্ছন্নতা অনুভব করছেন,
পৃষ্ঠা:১৮
৫-৪-৩-২ উল্টো গণনার মাধ্যমে আপনি নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে নিন, যা আপনার মনকে শান্ত করবে। অতঃপর, যখনি আপনি ‘১’-এ পৌঁছে গিয়েছেন সামনে এগিয়ে চলুন।গণনা এবং সামনে চলা হলো প্রক্রিয়া। নিজেকে প্রক্রিয়া শেখানোর মাধ্যমে আপনি অসাধারণ পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারেন, যেসব ক্ষেত্রে সাধারণতঃ আপনি চিন্তা করতে করতে নিজেকে থামিয়ে দেন। উল্টো ক্ষণ গণনা কিছু কাজ সমান্তরালভাবে করে থাকে এটি আপনার উদ্বেগগুলোকে বিভ্রান্ত করে, আপনার যা করা প্রয়োজন তার উপর দৃষ্টি রাখে, আপনাকে কাজ করতে পথ দেখায় এবং দ্বিধান্বিত হওয়ার অভ্যাসগুলো, অতিচিন্তা এবং নিজেকে পেছনে টেনে ধরে রাখার চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে।আপনি যদি চিন্তা করে থাকেন উল্টো গণনার [৫-৪-৩-২-১) পরিবর্তে সম্মুখ গণনায় [১-২-৩-৪-৫] কাজ হবে কিনা, তাহলে উত্তর হলো না, হবে না। ‘ট্রেন্ট’-কে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। ‘ট্রেন্ট’ ঠিক যেমনটি আবিষ্কার করেছিলেন- আপনি যদি সম্মুখগণনা করেন তাহলে বিরতিহীন গণনা করে যেতে পারেন। কিন্তু যখন উল্টো গণনা করবেন, তখন ‘১’-এ পৌঁছে যাবার পর আপনার আর গণনা করার কিছু থাকবে না। সুতরাং, এটা আপনাকে কাজ শুরু করতে বলবে।
এটাকে কেন ফাইভ সেকেন্ড রুল” নামে ডাকা হয়?
আমি এই প্রশ্নটি অনেকবার পেয়েছি এবং আশা করি একটি যুতসই উত্তর দিতে পারব। আমি এটাকে ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ নামকরণ করেছিলাম কারণ প্রথম দিন ভোরে আমি যখন এর ব্যবহার করেছিলাম, আমার মাথায় ঠিক এই নামটিই এসেছিল এবং গেঁথে গিয়েছিল। মনে আছে, তার আগের রাতে আমি একটি ‘রকেট’ উৎক্ষেপণ দৃশ্য দেখেছিলাম এবং চিন্তা করেছিলাম নিজেকে আমি এইভাবে একটি ‘রকেট’-এর মতো বিছানা থেকে উৎক্ষেপণ করবো। পরদিন ভোরে আমি উল্টো গণনা করেছিলাম ৫-৪-৩-২-১ কারণ ‘নাসা’ তাদের মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণ করার সময় ঠিক এই কাজটিই করে থাকে। ৫ থেকে গণনা করার বিশেষ কোন কারণ ছিল না। আমার শুধু মনে হয়েছিল নিজেকে আমার ঐটুকু সময় দেয়া উচিত।আমি এটা জানতে পেরেছিলাম যে পৃথিবীতে আরো অনেকগুলো ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’ আছে যেমন ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে মেঝের উপর খাবার খাওয়া, বাস্কেটবল খেলায় ৫ সেকেন্ড ‘শর্ট ক্লক রুল’, অ্যালেন ডি’জেনারস তার টকশো’তে যে খেলাটি খেলে থাকেন এবং একটি পার্শ্বপথের উপরকার অংশ আপনার কুকুরটির হেঁটে যাবার জন্য খুব গরম কিনা তা পরীক্ষা করার ৫ সেকেন্ডের একটি খেলা।আমি যদি আগেই জানতে পারতাম আমার রুল’টি এরকম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাবে, তাহলে হয়তো কোনো মৌলিক নাম নির্বাচন করতাম। প্রকৃত প্রস্তাবে এইসব ৫ সেকেন্ড রুল’গুলোর একটি সর্বস্বীকৃত ব্যাপার রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই আপনাকে একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের জানালা দিয়ে শারীরিকভাবে স্থানান্তরিত হতে হবে (‘মুভ’ করতে হবে)।আমার রুল’টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শারীরিকভাবে নড়া বা মুভ করা কারণ আপনি যখন নড়বেন, আপনার শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হবে এবং আপনার মন তা অনুসরণ করবে। সম্ভবত নামটি শুধু সংশ্লিষ্টই নয় বরং অনেক নিখুঁত, কারণ এটা জীবনের অন্যান্য ৫ সেকেন্ডের জানালাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এটাই রুল’ টিকে অনেক বেশি পরিচিতি দিতে, বৈশ্বিক ও সত্য হিসেবে অনুভব করতে সাহায্য করে।
রুল’টি শুনতে নাইকি’র ট্যাপলাইনের মতো “শুধু কাজটি করুন”
“শুধু কাজটি করুন” এবং ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির মধ্যকার পার্থক্যটি খুব সহজ। “শুধু কাজটি করুন” হলো একটি ধারণা এটা হলো যা আপনাকে করতে হবে। ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ হলো একটি হাতিয়ার এটা হলো কাজটি করতে আপনি নিজেকে কেমন করে তৈরি করেছেন। “শুধু কাজটি করুন” বিশ্বের সবচাইতে বিখ্যাত ‘ট্যাগলাইন’ হওয়ার কারণ হলো এটা পৃথিবীর সব সংস্কৃতিকেই অনুরণিত করে। আপনি কি জানেন এই ‘ট্যাগলাইন ‘টিকে কে শক্তিশালী করে? সেটি হলো একটি শব্দ ‘শুধু’।”শুধু কাজটি করুন” স্বীকার করে যে, আমরা ভালো হতে, ভালো কিছু করতে এবং নিজেদেরকে একটু সামনে ঠেলে দিতে সংগ্রাম করছি। ঝাঁপিয়ে
পৃষ্ঠা:১৯
পড়ার আগে আমরা সকলেই দ্বিধাবোধ করি এবং আমাদের অনুভূতিগুলোর সাথে লড়াই করি। ‘শুধু’ শব্দটি আমাদের এই কথা বলে যে আমরা একা নই, সকলের ভেতরই এই সমস্ত ছোট ছোট দ্বিধা রয়েছে। এটা অনেকটা সেই মুহূর্ত যখন কোনো চলমান খেলায় অংশগ্রহণ করার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আপনি প্রশ্ন করা শুরু করেন অথবা যে মুহূর্তে আপনি চিন্তা করেন তৃতীয় প্রন্থ খ্যাতি অর্জন করার জন্য কাজ করবেন কিনা অথবা আপনি যখন প্রশ্ন করেন যে বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ানোর জন্য দরজা খুলে বের হবেন কিনা।’ট্যাগলাইন ‘টি স্বীকার করে যে আপনার ভেতরে অজুহাত ও ভয় দুটিই রয়েছে এবং ‘নাইকি’ আপনাকে এগুলোর চাইতে অনেক বড় হতে অনুপ্রাণিত করে। চলুন, এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। শুধু কাজটি করুন। আমি জানি আপনি ক্লান্ত শুধু কাজটি করুন। আমি জানি আপনি ভীত শুধু কাজটি করুন।’নাইকি’র ‘ট্যাগলাইন’ আপনাকে সন্দেহের বাইরে যেতে এবং খেলায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে থাকে। নাইকি জানে আপনার ভেতরে রয়েছে মহত এবং এটা আপনার অজুহাতের অন্য একটি দিক। এটা গভীরভাবে আমাদেরকে অনুরণিত করে কারণ আমাদের সকলেরই এমনকি একজন অলিম্পিক ক্রীড়াবিদেরও একটি ধাক্কার প্রয়োজন পড়ে। এখানেই ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি চলে আসে। এটি হলো আপনি নিজেকে কেমন করে ধাক্কা মারছেন যখন আপনাকে ধাক্কা মারার জন্য নেই কোনো প্রশিক্ষক, প্রতিদ্বন্দ্বী, অভিভাবক, সমর্থক বা দলের কোনো খেলোয়াড়। শুধু রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি ক্ষণ গণনা করবেন ৫-৪-৩-২-১।
সবার জন্যই কি পাঁচ সেকেন্ড সময় সংক্রান্ত সুযোগের জানালা রয়েছে?
হ্যাঁ, পরিবর্তনের জন্য আপনার প্রবৃত্তি এবং আপনার মন সেই প্রবৃত্তিটিকে মেরে ফেলার মাঝখানে একটি জানালা রয়েছে। যখন সেকেন্ডের ভগ্নাংশ পরিমাণ সময়ের মধ্যে আপনার মস্তিষ্ক আপনার বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে, তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হয় আপনার চিন্তা এবং অজুহাতগুলোপূর্ণোদ্যমে সচল হচ্ছে না এবং আপনাকে থামিয়ে দিতে পারছে না। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে ৫ সেকেন্ডের জানালাটি সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।ব্যক্তিগতভাবে আমি লক্ষ্য করেছি যে, যত দীর্ঘ সময় আমি আমার প্রাথমিক আবেগগুলো কাজ করা এবং শারীরিকভাবে সচল হওয়ার মধ্যে অবস্থান করি, আমার অজুহাতগুলো ততটাই উচ্চকিত হতে থাকে এবং নিজেকে সচল করা তখন আরো অনেক বেশী কঠিন হয়ে পড়ে। ‘অ্যানজেলা” যেমন খুঁজে পেয়েছিলেন যে, তার ভয় যখন গভীরতর পর্যায়ে ছিল তখন ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্তগুলোই ৫০ সেকেন্ড এবং তারপর ৫০০ সেকেন্ডে পরিণত হয়েছিল। এখন তিনি রুল’টির সঙ্গে এমন আচরণ করেন, যেমন তার চিন্তাশক্তি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে শূন্যের কোঠায় চলে আসলে তিনি করবেন। জানালাটি খর্ব কিংবা দীর্ঘ করার জন্য এবং যাতে করে এটি আপনার জন্য কাজ করে তা নিশ্চিত করার জন্য আপনি রুল’টিকে ব্যক্তিগত (পারসোনালাইজড) করুন।’ম্যাট’, যে আমার ও আমার স্বামীর একজন ভালো বন্ধু, তার প্রথম শ্রমসাধ্য ও কর্দমাক্ত একটি দৌড়ের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। সে নিউজার্সিতে বসবাস করত এবং ভয়ঙ্কর ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে সে আমার স্বামীকে একটি বার্তা পাঠিয়েছিল। সে জানালাটি ৩ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে সংকুচিত করেছিল কারণ সে লক্ষ্য করেছিল কতটা দ্রুত তার মস্তিষ্ক তাকে থামিয়ে দিতে পারে। বার্তাটি ছিল:”তোমার বান্ধবী ‘মেল’কে বল যে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি এখানে কাজ করছে। আমি এটাকে ৩ সেকেন্ডে নামিয়ে এনেছি। যখন আমি ৩ সেকেন্ড পরই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারছি তখন শুধু শুধু কেন জীবনের জটিলতাগুলোকে নিয়ে ভাবা। ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আমি অন্তত দুটি অজুহাত তৈরি করে ফেলতে পারি। আজ ভোরে আমি যখন উঠি, ভুলক্রমে থার্মোমিটারটি পরীক্ষা করেছিলাম যা আমার ২ সেকেন্ড সময় নিয়েছিল, কিন্তু ৩য় সেকেন্ডেই আমি জুতা পায়ে দিতে শুরু করে দিয়েছিলাম।”এভাবেই রুল’টি আপনার মস্তিষ্কে কাজ করে থাকে। যত বেশি সময় ধরে আপনি কোন বিষয়ের উপর চিন্তা-ভাবনা করবেন, কাজটি করার ইচ্ছা আপনার
পৃষ্ঠা:২০
ততটাই কমতে থাকবে। আমরা যেখানে রয়েছি ঠিক সেখানেই নিজেদেরকে স্থির রাখতে কি আশ্চর্যজনকভাবেই না নিজেদের আমরা বোকা বানাই। যত দ্রুত আপনার অনুভূতিটি সচল হতে থাকে, আপনি এটিকে যুক্তিযুক্ত করা থেকে ততটাই সরে যেতে থাকেন। আর তাই আপনাকে খুব দ্রুত ‘মুক্ত’ করতে হবে যাতে করে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে ফাঁদে ফেলার আগেই আপনি অজুহাতমুক্ত হতে পারেন।
কিসের জন্য আমি রুল’টি ব্যবহার করব?
বছরব্যাপী আমি হাজার হাজার উদাহরণ শুনেছি কেমন করে মানুষজন তাদের জীবন, সম্পর্ক, সুখ ও কাজের উন্নতির জন্য রুল’টির ব্যবহার করছেন। কিন্তু প্রতিটি উদাহরণ তিনটি স্বতন্ত্র ধারার কোনো একটির মধ্যে পড়ে যায়।
আপনার আচরণ পরিবর্তন করার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন
নতুন অভ্যাস সৃষ্টির লক্ষ্যে নিজেকে একটু ধাক্কা দিতে আপনি রুল’টি ব্যবহার করতে পারেন। ধ্বংসাত্মক অভ্যাস থেকে নিজেকে টেনে সরিয়ে আনতে, এবং আত্মত্মতদারকি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ দক্ষতার প্রভুত্ব করতে রুল’টি ব্যবহার করতে পারেন যাতে করে আপনি আপনার নিজের ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিক আগ্রহী এবং কার্যকর হতে পারেন।
প্রাত্যহিক মনোবলের সহিত কাজ করার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন
নতুন, ভীতিকর অথবা অনিশ্চিত কিছু করতে প্রয়োজনীয় মনোবল খুঁজে পেতে আপনি রুল’টি ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার সন্দেহগুলোকে চুপ করিয়ে দিতে এবং আপনার ভালোলাগার পেছনে তাড়া করার জন্য নিজেকে সামনে ঠেলে দিতে, কার্যক্ষেত্রে নিজের ধারণাগুলো শেয়ার করতে, বিভিন্ন প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে, আপনাকে প্রসারিত করতে, নিজের শিল্প সৃষ্টি করতে এবং একজন ভালো নেতা হতে আত্মবিশ্বাস তৈরি করবে।
আপনার মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন
নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা এবং আপনাকে নিচে নামিয়ে দেয়া সীমাহীন দুঃশ্চিন্তার বাঁধ ভেঙে দিতে রুল’টির ব্যবহার করতে পারেন। আপনি উদ্বিগ্ন হওয়ার অভ্যাস এবং যে কোনো ভীতি দূর করতে পারেন যখন আপনি আপনার মনের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করবেন এবং নেতিবাচক বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে সেইসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করবেন যা আপনার জন্য আনন্দ বয়ে আনে। আর এটাই আমার মতে, রুলটি ব্যবহার করার শক্তিশালী উপায়।
কিছু জিনিস কেন এত সহজে কাজ করে?
রুল’টি কাজ করার কারণ, এটি খুবই সহজ। আপনার মস্তিষ্কের কাছে আপনার কাজের স্পৃহাকে মেরে ফেলার সব ধরনের কৌশলগত উপায় রয়েছে। আমার কিছু প্রিয় গবেষক, অধ্যাপক ও চিন্তাবিদ বেশকিছু বেস্টসেলার বই লিখে এবং “টেড টক” আলোচনায় বিশদ ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন যে, কেমন করে আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের নিজের সাথে পক্ষপাত, পছন্দের বৈপরীত্য, মনস্তাত্ত্বিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ‘স্পটলাইট’ প্রভাব দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে। এইসব মহান গবেষকরা আমাকে শিখিয়েছেন যেই মুহূর্তে আপনি পরিবর্তিত হতে, অভ্যাসচক্র ভাঙতে অথবা কঠিন ও ভীতিকর কিছু করতে চাইবেন, আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে থামিয়ে দিতে কাজ শুরু করবে। মূলতঃ মস্তিষ্ক আপনার চিন্তাপ্রবাহের মাকেই আপনার সঙ্গে চালাকি করে থাকে। যে মুহূর্তে আপনি নিজের সঙ্গে এরকম চালাকি করতে দেখবেন, নিজেকে আপনি আপনার চিন্ত্য দ্বারা নিজেই আটকে ফেলুন। আপনার মস্তিষ্কের আছে আপনার সঙ্গে কাজের বাইরে কথা বলার অসংখ্য উপায়। আর এটাই এর পরিবর্তিত না হওয়ার স্নায়ুতাক্লিক কারণ। অধ্যায় ১’-এ আমি যেমন উল্লেখ করেছি, পরিবর্তনের জন্য আপনাকে তাই করতে হবে যা অনিশ্চিত, ভীতিকর অথবা নতুন। আপনার বুদ্ধিমত্তা নকশা অনুযায়ী আপনাকে তা করতে দেবে না। আপনার মস্তিষ্ক যা করতে অনিশ্চিত, ভীতি অথবা নতুনত্ব অনুভব করে, তা করতে ভয় পায়। সুতরাং এটা আপনাকে ঐ সকল কাজ
পৃষ্ঠা ২১ থেকে ৩০
পৃষ্ঠা:২১
থেকে বিরত রাখতে আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য যা করা দরকার তাই করবে। এটা আপনার হার্ডওয়্যারের অংশ। এই দ্বিধাগুলো সত্যিই খুব দ্রুত ঘটে থাকে, আর তাই একে পরাস্ত করতে হলে আপনাকে আরো দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।রুল’টির উদ্দেশ্য সাধনের শক্তি এবং শক্তিশালী ও পরীক্ষিত কিছু মূলনীতির আধুনিক মনোবৈজ্ঞানিক উদাহরণ হলো কাজের প্রতি পক্ষপাত, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণস্থল, আচরণগত নমনীয়তা, অগ্রগতি নীতি, শুরু করার প্রথা, অভ্যাসের স্বর্ণালী রীতি, বিশুদ্ধ গর্ব, ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ, ‘যদি-তারপর পরিকল্পনা’ এবং শক্তি সক্রিয়করণ। এই বইটি জুড়ে আপনি এই মূলনীতিগুলোর বিষয়ে যতবেশি বিস্তারিত পড়বেন ততবেশি জানতে পারবেন, বিশেষ করে আপনার জীবনের সুনির্দিষ্ট এলাকায় কি করে রুল’টি ব্যবহার করতে হবে সেই সংক্রান্ত আলোচনা।
কি করে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে একটি রুল কাজ করে?
‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আসলে একটি ক্ষেত্রেই কাজ করে, আর তা হলো ‘আপনি’। প্রত্যেকবার ঠিক একই রকমভাবে দ্বিধান্বিত হওয়ার মাধ্যমে আপনি নিজেকে পরিবর্তিত হওয়া থেকে বিরত রাখেন। তারপর আপনি শুরু করেন অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা এবং একটা সময় নিজেকে দেখতে পান মানসিক কারাগারে।দ্বিধা করার মুহূর্তটি একটি ঘাতক। দ্বিধা আপনার মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টিকারী সংকেত পাঠায়। এটা একটা লাল পতাকা যা সংকেত দেয় কিছু একটা ভুল হচ্ছে এবং আপনার মস্তিষ তখন স্ব-সুরক্ষা প্রক্রিয়ায় চলে যায়। আর এভাবেই আমরা ব্যর্থতার সাথে সংযুক্ত হয়ে যাই। এক মুহূর্ত এটা নিয়ে একটু ভাবুন।আপনি সবসময় হয়তো দ্বিধা করেন না। উদাহরণস্বরূপ সকালবেলা একটি কাপে কফি ঢালার সময় আপনি দ্বিধা করবেন না। আপনি আপনার প্যান্টটি পরার সময় দ্বিধা করবেন না। টেলিভিশন চালু করার সময়ও আপনি দ্বিধা করবেন না। আপনি আপনার প্রিয় বন্ধুকে ফোন করার সময় দ্বিধা করবেন না। আপনি চিন্তাই করবেন না। আপনার প্রবৃত্তি যখনই বলবে, আপনি ফোনটিহাতে নেবেন এবং ‘কল’ করবেন। কিন্তু আপনি যখন একটি পণ্য বিক্রয়ের জন্য ‘কল’ করতে বা ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে যাবেন, আপনার মস্তিষ্ক চিন্তা করা শুরু করবে যে কিছু একটা অবশ্যই ভুল আছে। আপনি যত দীর্ঘ সময় ধরে এই বিক্রয় ‘কল’টি নিয়ে চিন্তা করবেন ততবেশি সম্ভাবনা থাকবে শেষ পর্যন্ত ‘কল’টি না করার। আমাদের মধ্যে অনেকেই বুঝতে পারেন না কতটা ঘনঘন আমরা দ্বিধাবোধ করি কারণ এটি আমরা প্রায়শঃই করি এবং একপর্যায়ে এটি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। রুলটি ব্যবহার করার পর ‘ডিম’ যেভাবে এটা বর্ণনা করেছেন:“সত্যিই আমি মনে করি যে রুল টি শক্তিশালী, কারণ এটি আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলোর উপর নজর রাখে যা প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন দেয় এবং আপনাকে উপেক্ষার ওপরে ঔজ্জ্বল্য প্রদান করে থাকে। আমি যেমন বলতে থাকি যে কি মুশকিল, আমি এটার মধ্যেই পড়ে আছি। সুতরাং, এটিকে শক্তিশালী বলাই যায় কারণ আপনি বলার পূর্বেই বুনন করা চিন্তাপদ্ধতি ভাঙতে এটি আপনাকে সাহায্য করবে যা আপনাকে কাজ করতে অনুমোদন দেবে (আমাকে সবসময় দিয়েছে) এবং নিরাপদে এগিয়ে যেতে বলবে। চিন্তার বিষয়, এখন আমি যা করছি তা করতে কি আমি ভয় পেয়েছিলাম? তবে এটা কখনোই এমন ছিলনা যে, কোনো কিছু আমি করেছি বা করিনি তা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিচ্ছিল।”কিন্তু শীঘ্রই আপনি শিখতে পারবেন যে, দ্বিধা করার মুহূর্তটি আপনি আপনার সুবিধার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিবার আপনি যখন নিজেকে দ্বিধান্বিত অবস্থায় দেখতে পাবেন তা আসলে একটি ধাক্কা দেবার মুহূর্ত। ৫ সেকেন্ডের জানালাটি খোলা আছে এবং নিজেকে সামনে ঠেলে দেওয়ার জন্য ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করার এটাই সময় যা আপনাকে আপনার অজুহাতগুলোর চাইতে অনেক বড় করে তুলবে। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনাটি পরিবেশিত হতে পারে রুল’টি এবং এর গুরুত্ববহনকারী একটি প্রাণবন্ত স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে।রুল’টি কি আচরণের স্থায়ী পরিবর্তনও করতে পারে?এই রুল’টি মুহূর্তের প্রতিরোধে আপনাকে আপনার মস্তিষ্কের পরিচালনা পদ্ধতিকে হারাতে সাহায্য করবে। কিন্তু আপনি কি জানেন এটি আর কি কি করতে পারে? সময়ের সাথে সাথে রুল’টি পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে আপনি
পৃষ্ঠা:২২
একসাথে সেই পদ্ধতিটি ঋাংস করে দিতে পারেন। আমাদের বেশিরভাগই একটি জিনিস উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই যে দুঃশ্চিন্তা, সন্দেহ এবং ভয়ের মতো চিন্তাধারাগুলো আসলে শুধুই অভ্যাস এবং আপনি এমনকি না বুঝেই এগুলো পুনরাবৃত্তি করে থাকেন। আপনি যদি নিজের সুখ ধ্বংস করতেই সবকিছু করে থাকেন যা করা আপনার অভ্যাস, তাহলে নিম্নোল্লিখিত অভ্যাসগুলো ভাঙতে আপনি সর্বশেষ গবেষণা অনুসরণ করতে পারেন-অপেক্ষা,পেছনে আটকে থাকা,নীরব থাকা,এড়িয়ে যাওয়া,দুঃস্টিভা,অভ্যাসের স্বর্ণালী রীতি বলে একটি বিষয় রয়েছে এবং এটি খুব সহজ বিষয়। যে কোনো খারাপ অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য আপনাকে অবশ্যই আচরণের ধারাটি যা আপনি পুনরাবৃত্তি করে থাকেন তা প্রতিস্থাপন করতে হবে। অধ্যায় ৪-এ আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করব। আমি আপনাকে শেখাব কেমন করে দুঃশ্চিন্তা, আতঙ্ক এবং ভয়ের মতো মানসিক অভ্যাসগুলো সর্বশেষ গবেষণা ও ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’টির সমন্বয়ে দূর করা সম্ভব।এই মুহূর্তে আপনার যা জানা প্রয়োজন তা হলো ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’টি এবং ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা যা আপনার নতুন আচরণ পদ্ধতি হয়ে যাবে। পেছনে টেনে ধরে রাখার পরিবর্তে নিজেকে সামনে ঠেলে দিতে আপনি ক্ষণ গণনা করবেন। এই গণনাকে গবেষকরা ‘শুরুর আনুষ্ঠানিকতা’ নামেও ঢেকে থাকেন। ‘শুরুর আনুষ্ঠানিকতা’ আপনার খারাপ ধরনটির পরিবর্তে নতুন, ইতিবাচক ধারার সূত্রপাত ঘটাবে।আপনি যদি রুল’টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে পুনর্বিন্যাস করতে সক্ষম হবেন। আপনি প্রথাগত দুঃশ্চিন্তা, দ্বিধা এবং ভয়ের পরিবর্তে নিজেকে নতুন আচরণধারাশেখাতে পারবেন। আপনি দেখতে পাবেন যে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনোবলের সহিত আপনি কাজ করে চলেছেন। সময়ের সাথে সাথে আপনি যতই সামনে এগিয়ে যাবেন, নিজের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস ও গর্ব। যখন আপনি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও ছোট ছোট অর্জনগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করবেন, তখনই আসবে আপনার বিশুদ্ধ ধরন।আপনি যদি মনে করে থাকেন, আপনার অভ্যাস, মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বের মতো সবকিছুই পাথরে খোদাই করা থাকবে, তাহলে জানা প্রয়োজন এগুলো খুবই নমনীয় বিষয়। আপনার জীবনের জন্য রুল’টির প্রয়োগ সত্যিই রোমাঞ্চকর। আপনি যখন ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা শুরু করবেন, তখন একই সাথে আপনি আপনার সনাতন মানসিকতা ও অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে সক্ষম হবেন। ঐ ছোট ছোট সিদ্ধান্তগুলোই বড় পরিবর্তনের সঙ্গে যোগ হবে এবং আপনাকে দেখাতে সহায়তা করবে যে- আপনি কে, আপনি কি অনুভব করেন এবং আপনি কেমন জীবনযাপন করেন।আপনার সিদ্ধান্ত বদলান আপনার জীবন বদলে যাবে। আপনার সিদ্ধান্তগুলো এর চাইতে বড় আর কি পরিবর্তন করতে পারে? মনোবল। আপনার যদি শুরু করার সাহস থেকে থাকে, তাহলে সফল হওয়ার মনোবলও রয়েছে।
পৃষ্ঠা:২৩
(৫) প্রাত্যহিক মনোবল
“আনি বহু বছর ধরে শিখেছি যে কারো মন যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় তখন ভয় কমে যায়; যা অবশ্যই করতে হবে তাকে জানা, ভয়কে দূরে নিয়ে যায়।” – রোসা পার্কস
‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আবিষ্কার করার পূর্বে আপনি যদি আমার কাছে মনোবলের উদাহরণ সম্পর্কে জানতে চাইতেন তাহলে আমি হয়তো আপনাকে ইতিহাস সৃষ্টিকারী কিছু মানুষের তালিকা দিতাম। আমি হয়তো কখনোই বলতাম না যে মনোবল হলো আপনার বিছানা ছেড়ে উঠে আসা, বসের সঙ্গে কথা বলা, ফোনটি হাতে তুলে নেয়া অথবা ওজন মাপা যন্ত্রের ওপর উঠে পড়া। আমি হয়তো আপনাকে এটা বলতাম যে মনোবল হলো একটি শব্দ যা বিশাল ও সাহসিক কাজগুলোকে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।আমার দৃষ্টিতে সাহসী মানুষ হলো নোবেল পুরস্কার জয়ী মালালা ইউসুফজাই, লেইমা গব্বি, দালাইলামা, অং সান সু চি, নেলসন ম্যান্ডেলা ও এলি ওয়াইসেল। আমি হয়তো আরো ভাবতাম উইনস্টন চার্চিল’কে নাসি জার্মানির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করার জন্য, রোসা পার্কস’কে বাসে তার আসন রক্ষা করার জন্য এবং রুখে দাঁড়ানোর জন্য, মুহাম্মদ আলী’কে তার ধর্মীয় বিশ্বাসে অনঢ় থাকার জন্য এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার জন্য। আমি হয়তো স্মরণ করতাম হেলেন কেলার’কে যিনি তার নিজের অক্ষমতার উপর জয়লাভ করেছিলেন অন্যদের অধিকার আদায়ের জন্য, স্যার আর্নেস্ট শ্যাকেলটন’কে যিনি ‘অ্যান্ড্রুরেন্স’ জাহাজের ক্রুদের বাঁচাতেঅবিশ্বাস্য ও অদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন, অথবা গ্যালিলিও’কে- যিনি সনাতন গির্জাগুলোকে অগ্রগামী বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন।কিন্তু সাত বৎসর যাবৎ রুল’টির ব্যবহার ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষের কথা শোনার পর আমি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে শিখেছি। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন ভীতিকর, অনিশ্চয়তাপূর্ণ এবং কঠিন মুহূর্ত দ্বারা পরিপূর্ণ। এই মুহূর্তগুলোর মুখোমুখি হতে এবং জীবনের সুযোগ, জাদু ও আনন্দগুলোকে অর্গলমুক্ত করতে প্রয়োজন অসাধারণ মনোবল।মনোবল হলো ঠিক তাই, ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ যা আপনাকে দেয়। রুল’টি ‘হোসে’কে নিজের মূল্য সম্পর্কে বিশ্বাস করার মনোবল জুগিয়েছিল যা তাকে তার বসের কাছে মজুরি বৃদ্ধির কথা বলতে সাহসী করেছিল। যখন সে একটি বৃদ্ধির কথা বলেছিল, সেটা সে পেয়েছিল এবং পরবর্তী মজুরি গ্রহণের দিন তার জন্য আরো বড় একটি বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। না চাইতেই তাকে ঘন্টাপ্রতি আরো এক ডলার মজুরি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।’ব্রাইস’কে একটি রান্নার বই লেখার জন্য দুই বৎসর প্রচেষ্টা চালানোর মনোবল জুগিয়েছিল এই রুল’টি। এবং সে এখানেই থেমে থাকেনি। একটি বইয়ের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য সে পেয়েছিল ‘বার্নস অ্যান্ড নোবেল’ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানকে। ‘ব্রাইস’-এর ভাষায় “আপনি যে বিষয়ে উৎসাহী এবং যা কিছুর জন্য কাজ করতে আগ্রহী, তার সবকিছুই আপনি অর্জন করতে পারেন”।মজার বিষয়, ব্রাইস’-এর বয়স যখন মাত্র ১৫ বৎসর, রুল’টি ‘মার্টিন’-কে নয় বৎসর যাবৎ একের পর এক অজুহাত তৈরির ভেতর দিয়ে সামনে ঠেলে দিতে, অজুহাতগুলোকে ধাক্কা মেরে গুঁড়িয়ে দিয়ে স্কুলে ফিরে যেতে, পরবর্তীতে তার কর্মজীবনকে পরিপূর্ণতা দিতে এবং দ্বিতীয় স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছিল।‘জুনিতা’ তার ভেতরের ‘জ্ঞান’-এর কথা শুনতে শিখেছিল। একটি চাকরি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে চিন্তা করা বাদ দিয়ে তার এক বন্ধুর সুপারিশক্রমে ফোনটি হাতে তুলে নিয়েছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে ‘কল’ করেছিল। অনুমান করতে পারেন সে কি পেয়েছিল? ঠিক তাই, যার জন্য সে নিজেকে ধাক্কা মেরেছিল,
পৃষ্ঠা:২৪
এমন একটি কাজ যার স্বপ্ন দেখেছিল সে।গ্যাবে’র জন্য ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি সম্পর্কে জানা ছিল একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট”। “আমিই আমার জীবনের সব ঘটনার জন্য দায়ী” এই বোধটি আসার পর ‘গ্যাবে’ তার জীবন বদলে দিতে রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজের অন্তর্জালিক বাস্তবিক প্রতিষ্ঠান (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কোম্পানি) চালু করতে পেরেছিলেন। আজ তিনি তার স্বপ্নের কর্মজীবন নির্মাণ করে চলেছেন।ক্রিস্টিন’-এর জীবন চিরতরে বদলে গেছে কারণ তার প্রেমিক ড্রাগ আসক্তি থেকে এখন মুক্ত। যখনি তিনি (প্রেমিক) অনুভব করেছেন ঐসব আসক্তি থেকে তার বেরিয়ে আসা উচিত, নিজের মনস্তত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ করে আসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি তিনি ব্যবহার করেছেন। তিনি তার আচরণ পরিবর্তন করতে উল্টো ক্ষণ গণনা ৫-৪-৩-২-১ করেছিলেন যা তার মানসিকতা সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছিল এবং তিনি ফিরে পেয়েছিলেন তার নিজস্ব সময়।মনোবল আমার কাছে তাই যা বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে আমার প্রয়োজন। বিছানা ছেড়ে উঠে আসাটা আমার জন্য ভীতিকর ছিল কারণ এরপরই আমাকে আমার সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হতো। আয়নায় নিজেকে দেখা আমার জন্য কঠিন ছিল এবং এটা স্বীকার করা যে আমি এখন ৪১ এবং আমার কর্মজীবন বিশ্রী আকার ধারণ করেছে। আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করা দুঃসাধ্য এটা স্বীকার করে নেয়াটাও আমার জন্য ছিল কষ্টকর।মনোবল হলো, ইতিহাস ক্লাসে আমার কন্যার কলমটি নামিয়ে রেখে তার হাত উঁচিয়ে ধরা। এটা হলো আপনার প্রতি আপনার দলের মনোযোগ প্রদানের প্রয়োজন এবং আপনার বাচ্চাদের আপনাকে বলার প্রয়োজন যে আসলে কি ঘটতে চলেছে। ‘ডেটিং সাইট’-এ আপনার ‘অনলাইন প্রোফাইল’ স্থাপন অথবা আপনার ফোনে কোনো প্রাক্তনকে ‘ব্লক’ করা হলো একটি সাহসী পদক্ষেপ। মনোবল হলো- আপনার ব্যবসায় নতুন প্রযুক্তির আত্মীকরণ অথবা একগ্লাস মধ্যপান করা বা টেলিভিশনের সামনে বসে থাকার পরিবর্তে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি দাঁড়ানো।আমি যখন এই বইটি লিখতে শুরু করি এবং বিশ্বব্যাপী যারা রুল’টিব্যবহার করেছেন তাদের গল্প সংগ্রহ করতে শুরু করি, এটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে যে কোনো সিদ্ধান্তের ভেতরেই রয়েছে একটি ৫ সেকেন্ড-এর মনোবল যা আমাদের জীবনের সবকিছু বদলে দিতে সক্ষম।মনোবল শব্দটি যতবার এসেছে এটি আমাকে তার চাইতে বেশি আগ্রহী করে তুলেছে এমন কোনো ঐতিহাসিক মুহূর্তের মুখোমুখি হতে যা আমাকে আরো ভালোভাবে মনোবলের প্রকৃতি’টি বুঝতে সাহায্য করেছিল। প্রথম ব্যক্তি যার কথা আমার মাথায় এসেছিল সে হলো রোসা পার্কস। আপনি হয়তো তার গল্পটি জানেন যে, কেমন করে তিনি ডিসেম্বর, ১৯৫৫ সালের এক শীতের সন্ধ্যায় আধুনিক আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করেছিলেন যখন তিনি বাসে একজন সাদা চামড়ার যাত্রীকে নিজের আসনটি ছেড়ে দিতে নীরবে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।তার সাহসীকতার মুহূর্তটি আমাদের শিখিয়েছিল যে সবকিছু বদলে দিতে খুব বড় কোনো পদক্ষেপ নয় বরং আমাদের জীবনের ক্ষুদ্রতম একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। সেই সন্ধ্যায় তিনি যা করেছিলেন তার জন্য কোনো পূর্ব পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। মিসেস পার্কস নিজেকে বর্ণনা করেছেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে যে নিজেকে সব রকমের ঝামেলা থেকে দূরে রাখতে সবসময় সতর্ক থাকেন। একটি দীর্ঘ কর্মব্যস্ত দিনের শেষে সন্ধ্যায় তার একমাত্র পরিকল্পনা থাকে বাড়ি ফেরা এবং স্বামীর সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়া। এটা ছিল আর সব সন্ধ্যার মতোই একটি সন্ধ্যা, যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি সিদ্ধান্ত সবকিছু বদলে দিয়েছিল।আমি ‘মিসেস পার্কস’-এর ওপর গবেষণা করতে জাতীয় সংগ্রহশালা, আত্মজীবনী, বেতার সাক্ষাৎকার ও সংবাদপত্রের নিবন্ধগুলো পড়ে দেখেছিলাম। যা পেয়েছিলাম তা ছিল অবিশ্বাস্য। গ্রেফতার হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর তিনি ‘সিডনি রজার্স’কে পেসিফিকা বেতারে একটি সাক্ষাৎকার দেন যা ‘জাতীয় সংগ্রহশালা ওয়েবসাইট’ শব্দ ধারণ করে রাখে। তার নিজের ভাষায় সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের বর্ণনাটি লিপিবদ্ধ করা হলো:”বাসটি শহরের বাইরের দিকে বেরিয়ে যাবার পথে তৃতীয় স্টপেজে ছিল এবং এর সামনের অংশ সাদা চামড়ার যাত্রী দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। আমি যখন বাসটিতে উঠি, এর পেছনের অংশ বিভিন্ন গাত্রবর্ণের যাত্রী দ্বারা ভবে গিয়েছিল। t এবং তারা দাঁড়িয়ে যেতে শুরু করেছিল। আমি যে আসনটি দখল করেছিলাম
পৃষ্ঠা:২৫
তা ছিল কালো চামড়ার যাত্রীরা যেখানে বসে তার প্রথমটি, হ্যাঁ, এই পথের এটাই ছিল স্বাভাবিক নিয়ম। বাসের চালক লক্ষ্য করল যে বালের সামনের অংশ সাদা যাত্রীদের দ্বারা পূর্ণ এবং দু’তিনজন যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে আমরা কালো যাত্রীরা যে আসলগুলোতে বসেছিলাম তা ছেড়ে দিতে বললেন। অন্য যাত্রীরা অত্যন্ত নিরুৎসাহের সঙ্গে কাজটি করছিল কিন্তু আমি তা করতে অস্বীকৃতি জানাই। চালক আমাকে বলে যে, আমি যদি আসনটি ছেড়ে না দিই তবে তিনি পুলিশ ডাকবেন। আমি তাকে বলি- ঠিক আছে পুলিশ ডাকুন।”এরপর বেতার উপস্থাপক তাকে কোটি টাকা মূল্যের প্রশ্নটি করেন।”জিম ক্রো এবং বিচ্ছিন্নতার সেই সব বছরগুলো পেরিয়ে কখন আপনি এমন ব্যক্তিত্ব হতে এবং সেই বিশেষ মুহূর্তে বাসের আসনটি ধরে রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন?”মিসেস পার্কস খুব সহজভাবে জবাব দিলেন:”আমি অনুভব করেছিলাম যে আমার সাথে একজন যাত্রী হিসেবে সঠিক আচরণ করা হয়নি এবং আমার অধিকার আছে বাসের একজন যাত্রী হিসেবে আসনটি ধরে রাখার।”উপস্থাপক আবার তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন “বছরের পর বছর ধরে তো আপনি এভাবেই নির্যাতিতহয়েছেন, তাহলে ঠিক ঐ মুহূর্তে কেন আপনি সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন?” একটি দ্বিতীয় উত্তরের জন্য তাকে বলা হলো এবং তার জবাব ছিল:”যখন সময় এসেছে, আমি নিজেকে ধাক্কা মেরে দাঁড় করাতে যতটুকু প্রয়োজন ধাক্কা মেরেছি, আমার মনে হয়।”উপস্থাপক প্রশ্ন করলেন- “আপনার পূর্ব পরিকল্পনা ছিল?” উত্তর:”ঠিক, এটা ছিল একটি হঠাৎ করে সংঘটিত ঘটনা।”এটি ছিল একটি সমালোচনামূলক ঘটনার বর্ণনা। ‘রোসা পার্কস’ দ্বিধা করেননি অথবা কি ঘটবে চিন্তা করেননি। তিনি শুধু তার প্রবৃত্তির কথা শুনেছিলেন যা তাকে বলেছিল “তোমার সাথে সঠিক আচরণ করা হচ্ছে না” এবং তিনি নিজেকে তা অনুসরণ করতে ধাক্কা মেরেছিলেন।যেহেতু তিনি দ্বিধা করেননি, এ ব্যাপারে নিজের সঙ্গে কথা বলার সময় তার ছিল না।কাকতালীয়ভাবে, চারদিন পর, ডিসেম্বর ৫, ১৯৫৫ সালে একই শহর। ‘এলাবামা’র মন্টেগোমেরি’তে ৫ সেকেন্ডের ইতিহাস বদলে দেয়া একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। মিসেস পার্কস’-এর গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়ায় ‘মন্টেগোমেরি উন্নয়ন সমিতি’ গঠিত হয়েছিল এবং একজন ২৬ বৎসর বয়স্ক কালো ধর্মপ্রচারককে তার সহকর্মীরা ভোট দিয়ে মনোনীত করেছিল সেই সময় সংঘটিত ৩৮১ দিনের বাস বয়কট কর্মসূচির নেতৃত্ব দেয়ার জন্য।সেই রাতে বয়কট কর্মসূচি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মনোনীত হওয়ার পর যুবক ধর্মপ্রচারক পরবর্তীতে লিখেছিলেন।”এটা এত দ্রুত ঘটেছিল যে এ ব্যাপারে আমার চিন্তা করার কোনো সময় ছিল না। যদি থাকতো, সম্ভবত, আমি মনোনয়নটি প্রত্যাখ্যান করতাম।”ধন্যবাদ যে তিনি বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেননি। তিনি সর্বকালের মহান নাগরিক অধিকার আন্দোলন নেতাদের একজন হতে পেরেছিলেন। তিনি হলেন- ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।’ড. কিং’ তার সহকর্মীদের ধাক্কা খেয়ে প্রচার আলোয় এসেছিলেন। ‘রোসা’ তার নিজেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। তারা দু’জনেই একটি ধাক্কার ক্ষমতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। এটি এমন একটি মুহূর্ত যখন আপনার প্রবৃত্তি, মূল্যবোধ ও লক্ষ্য এক বিন্দুতে এসে দাঁড়াবে এবং আপনি এত দ্রুত ‘মুভ’ করবেন যে আপনার কাছে সময় বা বৈধ কোনো কারণ থাকবে নাউপস্থাপক জানতে চাইলেন “এটা কি তবে হঠাৎ ঘটেছিল?” উত্তর:
পৃষ্ঠা:২৬
নিজেকে থামানোর।আপনার হৃদয় যখন কথা বলবে তখন চিন্তা করবেন না, শুধু আপনার হৃদয় কি করতে বলছে শুনুন। মহত্ত্ব কোনো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য নয়। এটি আমাদের সকলের মধ্যেই রয়েছে এবং কখনো কখনো এর দেখা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। ‘মিসেস পার্কস’ যার বর্ণনা করেছিলেন তিনি ছিলেন শান্ত এবং লাজুক, আর ‘ড. কিং’ তার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের শুরুর সময়ে সংগ্রাম করেছিলেন তার সন্দেহ আর ভয়কে সঙ্গে নিয়ে।১৯৫৬ সালে এক বেতার সাক্ষাৎকারে মিসেস পার্কস’ বলেছিলেন- “আমি ভাবিনি যে আমি সেই ব্যক্তি যাকে এটা করতে হবে, এটা আমার সাথে ঘটেনি।” সম্ভবত আপনার সাথেও ঘটবে না যদি আপনি না জানেন কর্মক্ষেত্রে বা জীবদ্দশায় আপনি মহান কি অর্জন করতে সক্ষম। তার উদাহরণ আমাদের এটা দেখায় যে, যখন মুহূর্তটি একটি বিশেষ কিছু, আমরা আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করার মনোবল খুঁজে পেতে সক্ষম।এটা সত্যি, ‘রোসা’ যেমন তার ১৯৫৬ সালের বেতার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, একটি বৈষম্যের পদ্ধতি বারা নিজেকে দাঁড় করাতে যতটুকু ধাক্কা দেবার প্রয়োজন ছিল তিনি তা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ একক মুহূর্তটিতে তিনি নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে আরো শক্তিশালী কিছুর সাহায্যে ধাক্কা মেরেছিলেন।এটাই হলো মনোবল। একটি বাক্কা। যে ধাক্কা আমরা নিজেদের দিই যখন আমাদের প্রয়োজন হয় উঠে দাঁড়াতে, কথা বলতে, প্রদর্শন করতে, প্রথমে যেতে, হাত তুলতে অথবা যা কিছু কঠিন, ভীতিকর অথবা অনিশ্চিত মনে হয় তা করতে। ইতিহাস, ব্যবসা, শিল্প ও সঙ্গীতে আমাদের যারা নায়ক তাদের দিকে তাকানো কিংবা অনুমান করার প্রয়োজন নেই যে তারা আপনার চেয়ে আলাদা। এটা সত্য নয়।মনোবল একটি জন্মস্বত্ব। এটা আমাদের সকলের মধ্যেই বিরাজমান। আপনি এটা সঙ্গে করেই জন্মান এবং যখনই চাইবেন আপনি একে স্পর্শ করতে পারবেন। এটা আত্মবিশ্বাস, শিক্ষা, অবস্থান, ব্যক্তিত্ব বা পেশা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নয়। সহজ ভাষায় এটা হলো কেমন করে প্রয়োজনের মুহূর্তেএকে পাওয়া যাবে তা জানা। এবং যখন আপনার একে প্রয়োজন হবে, সম্ভবত আপনি থাকবেন একা।এটা ঘটবে হঠাৎ করে, আপনি যখন কর্মস্থলে একটি সভায় অংশ নিয়েছেন, নিজের রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছেন, সাবওয়েতে প্রবেশ করেছেন, আপনার ফোনটির দিকে তাকিয়ে আছেন, আপনার কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে আছেন অথব্য কোনোকিছু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। কিছু একটা নেমে যাবে এবং আপনার প্রবৃত্তি জীবন ফিরে পাবে। কাজ করার ব্যাপারে আপনার ভেতরে প্রবল আগ্রহ তৈরি হবে। কি করা উচিত তা আপনাকে আপনার মূল্যবোধ ও প্রবৃত্তি জানাবে। এবং আপনার অনুভূতিগুলো চিৎকার করে উঠবে ‘না’। এটাই হলো ধাক্কা দেওয়ার সময়। আপনার কাছে সবকিছুর উপরে থাকা জরুরি নয়। আপনাকে শুধু পরবর্তী ৫ সেকেন্ডের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।’ভ্যান’, একা একা তার কম্পিউটারের সামনে বসে ভাবছিল গ্রীষ্মকালীন ক্লাসগুলোর জন্য সে নিবন্ধন করবে কিনা। ৪৪ বৎসর বয়সে সে তার কলেজ ডিগ্রিটি অর্জন করতে চায়, কিন্তু নতুন করে শুরু করার এই ধারণাটি ভয়ঙ্কর কিছুর চাইতে কম ছিল না।’ক্রিস্টিন’-এর প্রয়োজন ছিল মনোবল, যখন তিনি ‘টেক্সাস’-এ তার কর্মস্থলে একটি বিক্রয় সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে চেয়েছিলেন কিন্তু একইসাথে ভাবছিলেন- আবার বোকামি হয়ে যাচ্ছে না তো?উম’ শিকাগো শহরের একটি শুঁড়িখানায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। যে মুহূর্তে একজন সুন্দরী তরুণীর দিকে তার দৃষ্টি পড়ে, তিনি আর চোখ ফেরাতে পারছিলেন না। তার সামনে বেছে নেয়ার সুযোগ ছিল হয় বন্ধুদের দিকে ফিরে ফুটবল নিয়ে তাদের আলোচনায় অংশগ্রহণ করা, না হয় সুন্দরী তরুণীটির দিকে হেঁটে যাওয়ার মনোবল খুঁজে পাওয়া।’ন্যাশভিল’-এ একটি আর্থিক সফট্ওয়্যার প্রতিষ্ঠানের গোটা বিক্রয় বিভাগ নিরুৎসাহিত বোধ করছিল। তারা পরপর তিন বৎসর তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছিল কিন্তু তারপরও আবার তাদের কোটা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
পৃষ্ঠা:২৭
‘ইংল্যান্ড’-এ ‘এলিস’-এর নিজেকে একটু ধাক্কা দেবার প্রয়োজন ছিল দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দৌড় শুরু করার জন্য। তিনি ‘ফেসবুক’-এ তার এক বন্ধুর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কিন্তু নিরুৎসাহিত বোধ করছিলেন এই ভেবে যে কতদিন আগে তিনি শেষ অনুশীলন করেছিলেন মনে পড়ছে না।অর্ধেক পৃথিবী দূরে ‘প্যাটেল’ তার এক বন্ধুর ব্যাপারে চিন্তা করা বন্ধ করতে পারছেন না যার ছেলে সম্প্রতি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না বন্ধুকে কি বলবেন, এবং নিজের সন্তানকে হারানোর দুর্ভাবনাও তাকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল। তিনি নিজেকে এই বলে বোঝাচ্ছিলেন যে- “যদি আর ক’টা দিন অপেক্ষা করি, এটা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে”। ফোনটি। তুলে তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার আকুলতা ভেতর থেকে কেউ থামিয়ে দিচ্ছিল যাতে তা করতে বিলম্বিত হয়।চীনে ‘সাই’ নামক এক ভদ্রমহিলা ত্বকের যত্নের কিছু সামগ্রী বিক্রয়ের জন্য পরিবেশক হিসেবে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি অন্তত এক ডজন মানুষকে ‘ফোন’ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ফোনটির দিকে তাকিয়ে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে চিন্তা করছিলেন “যদি তারা ভাবে আমি জোর করে বিক্রি করতে চাইছি, তাহলে কি হবে?”অস্ট্রেলিয়া’র ‘কুইন্সল্যান্ড’-এ ‘টড’ জানে তার জীবনের সাথে ঠিক কি করতে হবে এবং তা আইন বিষয়ে পড়াশোনা নয় বরং শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে পড়াশোনা। কিন্তু ‘উদ্ভ’কে তার ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পূর্বে তার বাবা-মা’র মুখোমুখি হতে হবে। হতাশাজনক।এবং ‘মার্ক’, ‘অকল্যান্ড’, নিউজিল্যান্ড-এ তার বিছানায় শুয়ে আছেন যেখানে এখন রাত ১০টা ৩০ মিনিট। তিনি ঘুরে স্ত্রীর দিকে তাকালেন, যে এই মুহূর্তে একটি বই পড়ছে। তিনি চাইছেন স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ কিছু সময় কাটাতে কিন্তু মনে হচ্ছে তার স্ত্রীর ‘মুভ’ নেই। তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে এবং তার কাঁধে চুমু খেতে চাইলেন কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ও পাচ্ছিলেন। ইতিপূর্বে তার স্ত্রীকে রুমমেট হিসেবে দীর্ঘদিন অনুভব করার মতো ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যতার এখন প্রয়োজন মনোবল।’সেথ গোডিন’ একবার লিখেছিলেন “আমাদের মস্তিষ্কের একটি পৃথক অংশ তখনই সচল হয় যখন আমরা কি প্রয়োজন তা চিন্তা করার পরিবর্তে কি সম্ভব তা নিয়ে ভাবি।” আমি বিশ্বাস করি এটা সত্যি, যখন আমরা আমাদের থামিয়ে দেয়া ভয়ের উপর আলোকপাত করার চাইতে সাহসী হওয়া নিয়ে বেশি ভাবি। এটা হলো সমস্যার ওপর আলোকপাত করার পরিবর্তে সমাধানের ওপর আলোকপাত করার মধ্যকার পার্থক্য।আমার বিছানা ছেড়ে উঠে আসার সংগ্রামকে একটি শক্তিশালী কাঠামো দেওয়া, ‘প্যাটেল’-এর তার বন্ধুকে ফোন করার জন্য সংগ্রাম, বিক্রয় প্রতিষ্ঠানটিকে আরো উচ্চতর বিক্রয় লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম এবং ‘এলিস’-এর অনুশীলন নিয়ে সংগ্রামগুলো হচ্ছে প্রাত্যহিক মনোবল সংক্রান্ত এক একটি উদাহরণ।দিন শেষে, মনোবল হলো একটি ধাক্কা মাত্র।আপনি যখন নিজেকে ধাক্কা মারবেন, পৃথিবী, আইন অথবা নাগরিক অধিকার আন্দোলন হয়তো বদলে যাবে না, কিন্তু নিশ্চয়তা দিচ্ছি আপনি একই ধরনের কিছু একটা বদলে দিতে সক্ষম হবেন আপনি নিজেকে বদলে দেবেন।আপনি নিজে কিন্তু একজনই। এবং আপনার মতো আর একজন কোনোদিনই আসবে না। এটাই আপনার শক্তি।
পৃষ্ঠা:২৮
(৬) অপেক্ষা কিসের?“যা সঠিক, তা করার সঠিক সময় সবসময় এটাই।”• ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
শিকাগো শহর কেন্দ্রের ‘হায়াত রিজেন্সি হোটেল’-এর অভ্যন্তরে ‘স্টেটসঙ্গ স্টেকহাউস’-এ ‘টম’ তার বন্ধুদের সাথে একটি নতুন ব্যবসা উদযাপন করছিলেন। এ বৎসর তিনি তার পরিচালিত এলাকার জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করে ফেলেছেন যা তার এলাকাটিকে দলপতিদের তালিকায় নিশ্চিতভাবে এগিয়ে রাখবে। চার মাস আগে, তার স্ত্রী চলে যাবার পর তিনি একটি আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। এটা ছিল একটা চমৎকার ব্যাত্যয় কেননা তিনি তখন তার ব্যক্তিগত জীবনের টুকরোগুলোকে আবার জোড়া লাগাতে চাইছিলেন। একটা সময় তিনি ‘বারটেন্ডার’-এর দিকে ফিরলেন আরেক গ্রন্থ পানীয় ‘অর্ডার’ করার জন্য এবং ঠিক এই সময় তিনি তাকে দেখলেন।সুন্দরী তরুণীটি গুঁড়িখানার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে ছিলেন আর তার বন্ধুদের সাথে হাসি ঠাট্টা করছিলেন। তার মধ্যে কিছু একটা ব্যাপার ছিল। ‘টম’ তা ধরতে পারছিলেন না। তিনি এগিয়ে গিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইছিলেন কিন্তু দ্বিধাবোধও করছিলেন। তার কাছে মনে হচ্ছিল এটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তিনি অনিশ্চিত বোধ করলেন। ভাবলেন এমন একজন সুন্দরী মহিলা কি আমার মতো একজন দুই বাচ্চার বাবার সঙ্গে যায়?
‘টম’কে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা করতে হবে পরবর্তী ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে।
এক মুহূর্তের মধ্যে ‘টম’ যদি তরুণীটির দিকে হাঁটা শুরু করতে পারেন তাহলে হয়তো জীবনটাকে তিনি পুনগুনির্মাণ করতে পারবেন। একটি কর্মিসভায় হাত তুলতে এক মুহূর্ত সময় মাত্র প্রয়োজন হয় যা কার্যক্ষেত্রে আপনার উপলব্ধি বদলে দিতে পারে। আর আপনি যদি তা না করেন, মুহূর্তটি। চলে যাবে যা ‘ব্ল্যাক’-এর ক্ষেত্রে ঘটেছিল, আর সেই জন্য এখন তিনি নিজেকেলাথি মারতে চাইছেন।আপনি যে কারণেই নিজেকে পেছনে টেনে ধরে রাখেন না কেন তা ভুল। এ ব্যাপারে নীরব থাকা নিরাপদ নয়। এখানে শান্তি বজায় রাখা ভালো নয়। এই চেষ্টা (নীরব না থাকা) নিরর্থক নয়। এটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আপনি ভুল এবং আপনার অজুহাত ও যুক্তিসমূহ ভুল। আপনার জীবনে উন্নতি করার জন্য সঠিক সময় বলে কিছু নেই। যখনি সামনে এগোবেন, আপনি আপনার শক্তিমত্তা আবিষ্কার করবেন। এটাই সত্যিকার আপনাকে বের করে নিয়ে আসার উপায় আপনার মস্তিষ্ক থেকে ধাক্কা মেরে বের করে আপনাকে বাস্তবে নিয়ে আসা। এবং এটা করার সর্বোত্তম সময় এখনই যখন আপনার হৃদয় আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে বলছে।আলোচনা করার জন্য, মূল্য বাড়ানোর জন্য, উপস্থাপনার জন্য অথবা শুরু করার জন্য অপেক্ষা করে করে আমরা জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে থাকি। এটা আমাকে মহান ‘ওয়েইন গ্রেটজিকি’র উক্তিটি স্মরণ করিয়ে দেয় “আপনি যে শটগুলো নেয়া থেকে বিরত থাকেন সেগুলো আপনি ১০০% মিস করেন।” বিষয়টি হলো আপনার নেয়া শটগুলো নিয়ে কখনোই আপনার অনুশোচনা হবে না কিন্তু যে ক্ষেত্রে নিজেকে আপনি পেছনে টেনে ধরে রাখেন, সে সব ক্ষেত্রে অবশ্যই পরে অনুশোচনা হবে। ‘এন্থনি’ এটা কঠিনভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।”আজ রাতে কাউকে আমার নাম্বারটি দেওয়ার সুযোগ এসেছিল কিন্তু আমি দিইনি আর এজন্য সারাজীবন আমাকে অনুশোচনা করতে হবে। হায়, জীবন কেন এত কঠিন?!”জীবন সত্যিই কঠিন, কিন্তু আমরা যখন ভয়ের কথা শুনে নিজেদেরকে অপেক্ষা করতে বলি এবং আমাদের শ্রেষ্ঠত্বকে পেছনে টেনে ধরে রাখি, জীবনকে আমরা তখন আরো কঠিনতর করে তুলি। এটা আমরা সবাই করি। আমরা কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে বা আমাদের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে নিজেদের পেছনে টেনে ধরে রাখি। প্রশ্ন হলো কেন আমরা এটা করি? উত্তরটি খুবই রূড়। আপনি এটাকে বলতে পারেন প্রত্যাখ্যান, ব্যর্থতা অথবা খারাপ লাগার ভয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করি কারণ আমরা চেষ্টা করে দেখতেও ভয় পাই।
পৃষ্ঠা:২৯
কয়েক মাস আগে আমার কন্যা ‘কেন্ডাল’-এর সাথে আমার একটি কথোপকথন হয়েছিল যা আমাকে স্পষ্ট করেছিল আমাদের স্বপ্নের কাছে এই ধরনের অপেক্ষার খেলা কতটা মারাত্মক হতে পারে। আপনাদের প্রথমে একটু পটভূমি জানাতে চাই। ‘কেন্দ্রাল’-এর বয়স ১৫ এবং সে খুব প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী। সকালবেলা বিছানা ছেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে বিছানায় ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সে গান গাইতে থাকে। সম্প্রতি তার একজন পরামর্শদাতা তাকে নিউইয়র্ক শহরের একজন সঙ্গীত পরিচালকের কাছে ‘অভিশন’ দেওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছে। এই সঙ্গীত পরিচালক ‘লা মিজারেবল’, ‘মেরী পপিনস’ ও ‘মাটিল্ডা’ মঞ্চনাটকগুলো নিয়ে তার ভ্রমণ পরিকল্পনায় শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করছিলেন। পরামর্শদাতার মনে হয়েছিল যে ‘কেন্ডাল’-এর কোনো একটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার এখানে একটি ভালো সুযোগ রয়েছে।দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, সে (কেন্ডাল) ‘অডিশন’ দিতে চেয়েছিল কিন্তু তা জানিয়ে পরামর্শদাতাকে কখনো কিছু লেখেনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন সে অপেক্ষা করছে। এটা জানা আমার জন্য আকর্ষণীয় ও হৃদয়বিদারক ছিল যে, কেমন করে তার ভাবনা ও অনুভূতিগুলো তাকে ফাঁদে ফেলেছিল। মজার বিষয় হলো সে ‘অডিশন’ দেওয়ার ব্যাপারে ভীত ছিল না। অন্তত যখন সে এটা নিয়ে ভেবেছিল তখন তো নয়ই। এটা ছিল ‘অডিশন’ দেওয়ার পর কি ঘটতে পারে তা নিয়ে দুর্ভাবনা।সে আমাকে বলে “আমি চেষ্টা করে দেখতে চাইনি কারণ যদি আমি ব্যর্থ হই তাহলে কি হবে মা? কি হবে যদি দেখতে পাই নিজেকে নিয়ে যা ভাবি আমি তা নই? আমি যদি অডিশন না দিই, অন্তত নিজেকে বলতে পারব যে আমি অসাধারণ। যা চাই তা পেতে আমি শুধু একটু অলস, এই যা।এ পর্যায়ে আমরা কোথাও এসে পৌঁছলাম। পর্যাপ্ত ভালো না হওয়ার অথবা ব্যর্থতার অনুভূতির মতো বাস্তবতার মুখোমুখি হতে আমরা কেউই চাই না। সুতরাং, মরণঘাতী কোনো রোগের মতো আমরা এগুলো এড়িয়ে চলি। আমরা আসলে অনুশীলনের সাথে এটা করে থাকি। আমরা কল্পনা করি যতক্ষণ এগুলো এড়িয়ে চলব ততক্ষণ খুব সুন্দর থাকতে পারব। যে মুহূর্তে আমি জিমনেসিয়াম যাব, আমাকে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। আর বাস্তবতা হলো- মিনিট দু’য়েক ‘ট্রেডমিল’-এর উপর দৌড়ানোর পর আমাকে বাথরুমে যেতে হবে, আমার নিঃশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেবে। মনে হবে আমিমোটেই আর সুন্দর অবস্থায় নেই। আমাকে এখন অনেক কাজ করতে হবে। আর এজন্যই নিজেদের অহঙ্কার রক্ষা করতে এমনকি এটা যদি হয় আমরা যা পেতে চাই তা পাবার সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে হলেও আমরা ‘চ্যালেঞ্জ গুলোকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি।আমি ‘কেন্ডাল’-এর যথেষ্ট পরিমাণে ভালো না হওয়ার ভয় সম্পর্কে শুনে তাকে একটি সহজ প্রশ্ন করেছিলাম।
তোমার যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে?
এটি একটি শক্তিশালী প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নটি আমরা যথেষ্ট পরিমাণে করি না। তোমার যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে? কি হবে যদি তুমি অডিশনে ভালো কর এবং সবাই যেমন বলে থাকে তুমি আসলে তেমনই ভালো। কি হবে যদি তোমার ধারণাটি আসলে একটি ভবিষ্যতের কোটি টাকা মূল্যের ব্যবসা? কি হবে যদি তুমি শুধু এ বছরের কোটাই পূর্ণ করলে না বরং তা অতিক্রম করে গেলে? কি হবে যদি দেখ এটা থাকা ততটা ভীতিকর নয় যতটা তুমি ভেবেছিলে এবং তোমার সত্যিকারের সঙ্গীটির আবির্ভাব খুব সন্নিকটে?তুমি কি দুঃশ্চিন্তাগুলোকে তোমার শ্রেষ্ঠতর হওয়ার এবং ভালোবাসার জীবন পাওয়ার প্রশ্নে তোমাকে থামিয়ে দিতে দেবে? অবশ্যই দেবে না। এমনকি যদি তুমি নিঃশেষ হয়ে যাও নিজেকে তুমি আরেকটি কথা বলতে পার:
তাহলে কি?
আসুন আমরা দেখি তারপর আসলে কি? সুতরাং, কি হবে যদি আপনি নিঃশেষ হয়ে যান? অন্তত ক্লান্ত। আমি এ ব্যাপারে যতটা উদ্বিগ্ন ভূমিকা গ্রহণ করছি বিষয়টি ঠিক ততটাই অপ্রাসঙ্গিক। যেমন অপ্রাসঙ্গিক ছিল ওড়িখানায় ‘টম’-এর দৃষ্টি তরুণীটির উপর পড়া। একমাত্র প্রাসঙ্গিক বিষয় হলো আপনি নিজে। আপনার ভেতরে আছে শক্তি। আপনি সেই শক্তির নাগাল পেতে নিজেকে একটু ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আপনি আপনার শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে পারেন ‘অডিশনে’, শুঁড়িখানায়, হাত তুলে অথবা কর্মক্ষেত্রে কন্ঠস্বরের মাধ্যমে।
পৃষ্ঠা:৩০
আপনি কখনোই কোনো কিছুর ব্যাপারে চিন্তা করা বন্ধ করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি দুঃশ্চিন্তার প্রদর্শনী বন্ধ করতে পারেন যা আপনার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারে। আপনি নিজেকে শক্তিশালী কিছুর ব্যাপারে চিন্তা করার জন্য বলতে অথবা ধাক্কা দিতে পারেন। আপনি বর্তমানে ফিরে যান এবং ফিরে যান যা আপনি চান তা পেতে। আর আপনি এটি করতে পারেন ঠিক ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে।আমরা সবাই কোনো না কোনো কাজে জড়িয়ে পড়ার চিন্তা করার জন্য অপরাধী কিন্তু কাজটি আমরা করছি না। আমরা সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। এটা সম্পূর্ণ বোকামি। একটি সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, ৮৫% পেশাদার সেবাকর্মী স্বীকার করেছেন যে, তারা তাদের বসদের কাছে সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। কেন? আপনি ইতিমধ্যে উত্তরটি জেনে গেছেন তারা সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। এটা আপনার ছেলেমেয়ে, পোষ্য, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের ক্ষেত্রেও সত্যি।এভাবে আমরা সবাই একে অপরের সাথে সংযুক্ত। ‘এডাম গ্রান্ট’-এর অসাধারণ বই ‘অরিজিনালস’-এ একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ছিল কিভাবে বিরুদ্ধবাদীরা পৃথিবীকে শাসন করেছিল যখন আমাদের কিছু মহানায়করা ঠিক আমাদের মতোই দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, নিজেদের সন্দেহ করেছেন এবং জীবনের সুযোগগুলো প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলেন কারণ তারা নিজেদের প্রস্তুত মনে করেননি। আমি এটা বিশ্বাস করি যে, আমরা যাদের পছন্দ করি তাদেরও ভয়, অজুহাত ও অনুভূতির ভেতর দিয়ে যেতে নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার দরকার আছে ঠিক আমার আপনার মতোই।আপনি কি ‘মাইকেল এঞ্জেলোকে’কে জানেন যিনি রোমে ‘সিস্টেইন চ্যাপেল’ এঁকেছিলেন? এর একটি পেছনের গল্প হয়তো আপনি জানেন না। ‘গ্রান্ট’-এর মতে ১৫০৬ সালে ‘পোপ’ যখন ‘মাইকেল এঞ্জেলো’কে ‘সিস্টেইন চ্যাপেল’ আঁকতে বলেছিলেন, ‘মাইকেল’ এতটাই দ্বিধা ও ভীতিবোধ করেছিলেন যে তিনি শুধু অপেক্ষাই করতে চাইলেন না বরং ‘ফ্লোরেন্স’-এ পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রইলেন। ‘পোপ’-এর দুই বৎসর সময় লেগেছিল ‘মাইকেল’কে ছবিটি আঁকতে রাজি করাতে।আরেকটি গল্প শুনতে চান? ‘অ্যাপল’ সম্পর্কি হলে কেমন হয়? ১৯৭৭ সালে একজন বিনিয়োগকারী যখন ‘স্টিভ জবস’ ও ‘স্টিভ ওজনিয়াক’কে‘অ্যাপল’ চালু করতে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন, ‘ওজনিয়াক’ এতটাই ভীত ও অনিশ্চিত বোধ করেছিলেন যে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে এবং নিজের চাকরিটি ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে একটু অপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তার নিজেকে প্রস্তুত মনে হয়নি। প্রকল্পটি শুরু করতে তাকে তার একাধিক বন্ধু, অভিভাবক ও ‘স্টিভ জবস’ ধাক্কা দিয়েছিলেন।’ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র’ সম্পর্কে গত অধ্যায়ের গল্পটি নিশ্চয় মনে আছে, যেখানে তিনি স্বীকার করেছিলেন ‘মন্টেগোমেরি উন্নয়ন সমিতি’কে নেতৃত্ব দানের মনোনয়নটি হয়তো তিনি প্রত্যাখ্যান করতেন যদি এটা নিয়ে চিন্তা করার মতো সময় থাকত। অথবা ‘রোসা পার্কস’ যেমন স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি কখনোই ভাবেননি এই কাজটি তাকেই করতে হবে। নির্দিষ্ট মুহূর্তে, তাদের কেউই চিন্তা করে সময় ক্ষেপণ করেননি। তারা প্রস্তুত বোধ করার জন্য অপেক্ষা করেননি। আমাদের সকলের ঠিক এটাই করতে হবে। আমরা সবাই মহৎ কিছু করতে সক্ষম। আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের অনুভব ও ভীতিগুলো আমাদের এই বলে বোঝায় এটা সঠিক সময় নয়, আর এভাবেই আমাদেরকে মহত্ত্ব অর্জন করা থেকে বিরত রাখে।’গ্রান্ট’ অতঃপর তার বইতে এই লাইনটি লিখেছিলেন “আমরা কেবল কল্পনা করতে পারি কতজন ‘ওজনিয়াকি’, ‘মাইকেল এঞ্জেলো’ কিংবা রাজা’কে তাদের মূল ধারণাগুলো প্রচার আলোয় টেনে আনা বা নিক্ষেপ করার জন্য তাদের পেছনে ছোটা, প্রচার বা প্রসার করতে হয়নি।”এরপর আপনার নিজেকে যে প্রশ্নটি করতে হবে, তা হলো:
অপেক্ষা কিসের?
আপনি কি অপেক্ষা করছেন যে কেউ এসে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, টেনে নিয়ে যাবে অথবা প্রচারের আলোয় ছুড়ে দেবে সেই জন্য নাকি আপনি নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মনোবল খুঁজে পেতে ইচ্ছুক? আপনি কি প্রস্তুত বোধ করার জন্য অপেক্ষা করছেন? সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন? আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য অপেক্ষা করছেন? অনুভব করার জন্য অপেক্ষা করছেন? যোগ্য বোধ করার জন্য অপেক্ষা করছেন। আরো অধিক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অপেক্ষা করছেন?
পৃষ্ঠা ৩১ থেকে ৪০
পৃষ্ঠা:৩১
কখনো কখনো পরবর্তী সময় বলে কিছু থাকে না। দ্বিতীয় আরেকটি সুযোগ কিংবা বিরতিও না। অপেক্ষা করা ছাড়ুন। এটা হয় এখন না হয় কখনোই নয়। যখন আপনি অপেক্ষা করেন, তখন শুধুমাত্র গড়িমসিই করছেন না বরং তার চাইতেও ভয়ঙ্কর কিছু করছেন। আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে বোঝাচ্ছেন যে এটা সঠিক সময় নয়। আপনি সক্রিয়ভাবে নিজের স্বপ্নগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করছেন।’পলা’ নিজেকে বোঝাতে পারতেন যে একটি দুর্দান্ত কাজের সুযোগের জন্য তিনি কখনোই যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন না। এটা করলে তিনি চরম ভুল করতেন। তার ভাষায়:”আমি একটি চাকরির আবেদন করেছিলাম। ভাবিনি নির্বাচিত হব কিনা কারণ আমি শুধু চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিলাম। আমি আমার দুর্বলতাগুলোর উপর দৃষ্টি না দিয়ে গুণাবলিগুলোর উপর জোর দিয়েছিলাম এবং চাকরিটি পেয়েছিলাম। আগে হলে আমি হয়তো ৫ সেকেন্ড পরেই এটা ভুলে যেতাম এবং চেষ্টা পর্যন্ত করতাম না।”দুর্বলতার পরিবর্তে গুণাবলির উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে ‘পলা’ তার ভয়গুলোকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চাকরিটি পেতে সক্ষম হয়েছিলেন।আপনি মনে করতে পারেন যে কারো বিচার, প্রত্যাখ্যান অথবা বিপর্যয় থেকে নিজেকে আপনি রক্ষা করছেন। কিন্তু আপনি যখন অজুহাত তৈরি করেন এবং নিজেকে অপেক্ষা করতে বলেন, তখন আসলে নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার যোগ্যতাকে আপনি সীমাবদ্ধ করে ফেলেন। আমি এই ভেবে অবাক হই যে সঠিক সময়ের অপেক্ষায় কী পরিমাণ সময় আমি অপচয় করেছি। অপেক্ষা করেছি নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত, অপেক্ষা করেছি আমার কাজটি নিখুঁত ভাবা পর্যন্ত অথবা কাজটিতে অনুভব করা পর্যন্ত।আপনি হয়তো নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভীত যেমনটি আমার কন্যা ছিল। তাহলে বলি, নিঃশেষ হয়ে যাওয়া আসলে কি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনুশোচনা করা যে আপনি কখনো চেষ্টা করে দেখেননি, ৩০ বৎসর বয়সের পর অনুধাবন করা যে আপনার বন্ধুরা কে কি ভাববে এই ভয়ে তরুণ বয়সেনিজেকে অনেক কিছু থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। বন্ধুরা, এই ফাঁকে বলি, যে কথা আপনি আরকখনো বলতে চান না ৫৬ বছর বয়সে আপনি অনুধাবন করেছেন যে আপনার পোষ্য (স্বামী/স্ত্রী)-কে আরো ১০ বৎসর আগেই ডিভোর্স করা উচিত ছিল, ৪৫ বৎসর বয়সের পর আশা করছেন কর্মস্থলে একটি প্রকল্প গ্রহণ করার মতো সাহস যদি আপনার থাকতো যা আপনার পেশাজীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে, অথবা একটি ডিগ্রি অর্জন করে বাবা-মাকে খুশি করতে কলেজের শ্রেণিকক্ষে বসে আছেন যখন আপনি জানেন যে জীবনে অন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন আপনি।সঠিক সময় বলে এখানে কিছু নেই। আছে শুধু ‘এখন’। আপনি একটি জীবন পেয়েছেন, এটাই সব। এবং এটা আবার নতুন করে শুরু হবে না। আপনার উপর নির্ভর করছে এ থেকে সর্বোচ্চটা পেতে নিজেকে আপনি কেমন করে ধাক্কা দেবেন, আর সেটা করার এখনই সময়।
আপনি আপনার ধারণাগুলোর পেছনে তাড়া করার মাধ্যমে তাদের যাচাই করুন
এটা অনেকের কাছ থেকে শোনাটা হৃদয়বিদারক যে, নিজেদের উদ্ভাবনী ধারণা ও পণ্য যাচাই করতে আপনাদেরকে তৃতীয় কারো মুখাপেক্ষী হতে হয়। এটা সত্যিই দুঃখজনক কারণ, যাচাই করার অপেক্ষা আপনার স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাতে পারে। আপনার যদি একটি অনুষ্ঠান তৈরির ধারণা থেকে থাকে অথবা একটি বইয়ের এবং আপনি অপেক্ষা করছেন কখন একটি টেলিভিশন সংস্থা বা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এসে আপনাকে তুলে নেবে, নিশ্চিতভাবেই আপনি সব হারাবেন। এটা অনেকটা ‘টম’-এর আশা করার মতো যে, তার হৃদয়সঙ্গী তার দিকে হেঁটে আসবে এবং তাকে হৃদয়ে তুলে নেবে অথবা আমার মতো যে বিছানা ছেড়ে উঠে আসার অনুপ্রেরণা অনুভব করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে। আপনার প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা দ্বারা কিছুই ঘটবে না। পৃথিবী এভাবে কাজ করে না।পৃথিবী সেইসব মানুষকে পুরস্কৃত করে যারা স্বপ্ন দেখে নিজেকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখার এবং সেই লক্ষ্যে কারো জন্য অপেক্ষা না করে কাজ শুরু করে দেয়। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আপনারা যারা আশা করে আছেন যে, কোনো একজন টেলিভিশন নির্বাহী এসে
পৃষ্ঠা:৩২
আপনাকে আবিষ্কার করবে, তারা ইউটিউবের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন সেইসব মানুষজন যারা অপেক্ষা করেনি। যাদের নিজেদেরকে এবং নিজেদের ধারণাগুলোকে এখানে সৃষ্টি ও প্রদর্শন করার মতো মনোবল রয়েছে আর শেষপর্যন্ত তারাই জয়লাভ করবে।আপনার একটি উপন্যাস লেখার ধারণা এবং ব্রিটিশ লেখক ‘ই.এল.জেমস’ (যিনি বহুল বিক্রিত ‘ফিফটি শেডস অব গ্রে’ ট্রিলজি লিখেছিলেন, যেটি প্রায় সব মহিলা কর্তৃক আদৃত হয়েছিল এবং প্রকাশের চার দিনের মধ্যে যার লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল) এর ধারণার মধ্যকার পার্থক্য হলো তিনি কারো অনুমতি, কোনো সঠিক সময় অথবা প্রস্তুত অনুভব করার জন্য অপেক্ষা করেননি। তিনি কোনো প্রকাশনা চুক্তির জন্য অপেক্ষা করেননি। আসলে তিনি ‘টোয়াইলাইট’ থিমযুক্ত একটি ব্লগ-এ ‘ইরোটিকা’ লিখতে শুরু করেছিলেন। তিনি ছোটভাবে শুরু করার মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন এবং সেই ব্লগ-এ ক্রমাগত লিখে গেছেন একটি উপন্যাস লেখার আত্মত্মবিশ্বাস তৈরি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।’ফিফটি শেডস অব গ্রে’ ছিল সেই উপন্যাস। এটি একজন কর্মজীবী মায়ের দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল যিনি নিজে অবসর সময়ে লিখতেন। হ্যাঁ, সত্যি তাই।যাই হোক, এভাবেই অবশ্য গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী সঙ্গীতশিল্পী ‘এড শিরান’ আবিষ্কৃত হয়েছিলেন। ১৫ বৎসর বয়সে তিনি ‘ইংল্যান্ড’-এর একটি পার্কে গান গাইতেন যেখানে তার কোনো অনুমতি ছিল না এবং এই নিশ্চয়তাও ছিল না যে কেউ তাকে দেখে ফেলবে না। আপনি যেভাবে এটা করবেন নিজেকে প্রথমে ধাক্কা দিয়ে আপনার আরামদায়ক এলাকা থেকে বের করে দেবেন এবং শুরু করবেন। এখানে অন্য কোনো উপায় নেই। এভাবেই পুরস্কার জয়ী ‘ব্রড সিটি’ অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় ‘কমেডি সেন্ট্রাল’ মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিল। তারা সাহসিক কাজ করেছিল। প্রথমে তারা আই-ফোনে ৩ মিনিটের একটি দৃশ্যধারণ করত এবং তা পরে ‘ইউটিউব’-এ পোস্ট করে দিত।এবং প্রত্যেক ইউটিউব তারকা, টাইলার ওকলি’ থেকে ‘রূপচর্চা শিক্ষাক্লাস’, অসম্ভব গুণসম্পন্ন ‘মিশেল ফান’ থেকে ‘আমার মাতল রান্নাঘর’-এর উপস্থাপন ‘হান্নাহ হার্ট’, ‘স্ট্যামপি ক্যাট’-এর কাব্যিক শিল্পকুশলী বর্ণনাদাতা পর্যন্ত বলবে যে, তারা যদি প্রস্তুত বোধ করার জন্য অপেক্ষা করে কিংবা একজন পৃষ্ঠপোষক পাবার আশায় অপেক্ষা করে নিজেদের পেছনে টেনে ধরে রাখতেন, তাহলে হয়তো আজ পর্যন্ত তাদের স্বপ্নের জীবন নির্মাণ এবং হাসতে হাসতে ব্যাংকে যাওয়ার বদলে পূর্বের সেই বিরক্তিকর জীবনই যাপন করতে হতো।অপেক্ষা করা, চিন্তা করা বা ‘প্রায় করে ফেলা’ গণনাযোগ্য নয়। ‘কাইরা’ যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কোনো পরিবর্তনের জন্য আপনাকে আসলে কাজটি করতে হবে। ‘প্রায় করে ফেলা’ বিবেচ্য নয়।যারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে আর আমরা যারা পারিনা, তাদের মধ্যে পার্থক্য একটাই শুরু করা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে এগিয়ে চলা। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি দৃশ্যপট বদলে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন কারণ, ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা আপনাকে আপনার মাথা থেকে বের করে নিয়ে আসবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।এবং এটা আমাদেরকে শিকাগো শহরের ‘হায়াত রিজেন্সি হোটেল’-এর শুঁড়িখানায় ‘টম’-এর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে এনেছে। সে কি এখন তরুণীটির দিকে হেঁটে যাবে নাকি অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেবে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। নির্ভর করছে কে ‘টম’-এর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তটি নেবে। এটা কি তার হৃদয় নাকি মস্তিষ্ক? কে জয়ী হবে ‘টম’-এর স্বপ্ন নাকি ভয়? ঠিক এই ধরনের মুহূর্তের জন্য ‘রোসা পার্কস’ কিছু অসাধারণ উপদেশ দিয়েছেন। উম’-কে ঠিক তাই করতে হবে যা করা আবশ্যক। ‘টম’-এর হৃদয় জানে কি করা আবশ্যক। তাকে পুনরুজ্জীবিত হতে হবে। অপেক্ষা করা কাজে দেবে না। অপেক্ষা শুধু কোন বিষয়কে আরো খারাপ করে তুলতে পারে। আপনি যখন ভয় ও অনিশ্চয়তা নিয়ে বসে থাকবেন, আপনার মস্তিষ্ক এগুলোকে আরো বাড়তে দেবে। এর নাম ‘দ্য স্পট লাইট ইফেক্ট’ (প্রচার আলোর প্রভাব) এবং এটা হলো আপনাকে ‘নিরাপদ’ রাখতে আপনার মস্তিষ্কের অনেকগুলো কৌশলের একটি। ‘টম’-এর ভয়টি বাস্তব। অনিশ্চয়তা ভীতিকর ব্যাপার। নিজেকে সন্দেহ করা অ-সমর্থন যোগ্য। কেউই প্রত্যাখ্যাত বা বোকা হতে চায় না। কেউই নিজেকে নিঃশেষিত অবস্থায়
পৃষ্ঠা:৩৩
দেখতে চায় না। একারণেই মুহূর্তটি আপনার সামনে দিয়ে একটি আন্তঃযোগাযোগ সভা, একটি ‘পার্টি’, একটি সাক্ষাৎকার, একটি ‘ক্যাফেটোরিয়া’ অথবা আপনার যাকে আকর্ষণীয় মনে হয় তার দিকে হাঁটা শুরু করে দেয়। এটা আপনার কাছে ভীতিকর মনে হতে পারে। কি ভুল হতে পারে অথবা কতটা অস্বস্তিকর বোধ হতে পারে তা নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি, যদি সব সম্ভাবনা থাকার পরও কেউ আমাদের স্বাগত না জানায়।কিন্তু ‘টম’ নিরাপত্তা চায় না। টম’ তার জীবনকে পুনর্নির্মাণ করতে এবং আবারো ভালোবাসা পেতে চায়, যা করতে হলে প্রয়োজন মনোবল। শুঁড়িখানার অন্য প্রান্তের দিকে হেঁটে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপটি যতই ভীতিকরা হোক না কেন, যে মুহূর্তে ‘টম’ তা করবে, সে জীবনের সকল জাদু, আশ্চর্য এবং আনন্দ আবিষ্কার করতে শুরু করবে।আপনি সমান্তরালভাবে কিছু কাজ করতে পারেন যেমন আপনি অনিশ্চিত বোধ করতে এবং প্রস্তুত হতে পারেন। আপনি ভীতিবোধ করতে এবং যে কোনো ভাবে কাজটি করতে পারেন। আপনি প্রত্যাখ্যানের ভয় পেতে এবং তারপরও চেষ্টা চালাতে পারেন।
৫ সেকেন্ড-এর মনোবল বদলে দের সবকিছু
‘টম’ ক্ষণ গণনা শুরু করেন ৫-৪-৩ এবং এ পর্যায়ে যখন ‘২’ এ পৌঁছান, তিনি তার জায়গা থেকে হাঁটতে শুরু করে দেন। তার কোনো ধারণা ছিলনা কি বলবেন। তার হৃৎযন্ত্র অস্থির ছিল কিন্তু দীর্ঘদিন পর এই প্রথমবারের মতো নিজেকে তার অসাড় মনে হলো না। তিনি প্রাণ অনুভব করলেন। তিনি যতই তরুণীটির দিকে এগোচ্ছিলেন, তার বুক ততই লাফাচ্ছিল। যখন তিনি পৌছুলেন, তরুণীটি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। তারপর কি হলো সেটা অপ্রাসঙ্গিক।কি হয়েছিল তা কোনো ব্যাপার নয় কারণ তিনি হয়তো তার হৃদয়সঙ্গী হবেন অথবা হবেন না। গল্পের শেষ অংশটি অপ্রাসঙ্গিক। একমাত্র যে বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো গল্পের শুরু, যেখানে ‘টম’ আবার জীবন শুরু করা পছন্দ করেছেন। এভাবেই আপনার হৃদয়ের কথা শুনতে হয়। যখন আপনি নতুন করে ‘ডেট’ করা শুরু করতে চান, একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চানঅথবা একটি ‘ইউটিউব চ্যানেল’ শুরু করতে চান আপনাকে প্রথমে শুরু করার মনোবল খুঁজে পেতেহবে।লক্ষ্য করুন, আমরা কেমন মরিয়া হয়ে একটি নিশ্চয়তা চেয়েছি যেন ‘উম’ তরুণীটিকে পায়। এটি হয়তো একটি ভালো সিনেমার গল্প তৈরি করেছে কিন্তু তরুণীটিকে পাওয়া এখানে মূল বিষয় নয়। জীবন ‘নিকোলাস স্পার্কস’-এর কোন উপন্যাস নয়। জীবন ধুলোময় ও কঠিন এবং পাশাপাশি হঠাৎ করেই এটা উজ্জ্বল ও অসাধারণ। তরুণীটি কারো সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে, সমকামী হতে পারে কিংবা হতে পারে সত্যিকারের দুশ্চরিত্র। এমনকি সে যদি অসাধারণ হয় এবং এর সমাপ্তি ঘটে উদ্দাম যৌনতা ও বিবাহপর্বের মাধ্যমে, তারপরও তরুণীটি এই গল্পের শক্তির উৎস নয়। এটা হলো ‘টম’।আপনার জীবনের মহামূল্য সম্পদ আপনার ভেতরেই সমাহিত অবস্থায় আছে। এটা অন্য কারো কাছে জমা করা নেই। টম’ তার নিজের জীবনের শক্তির উৎস, আর আপনার জীবনের শক্তির উৎস আপনি নিজে। আপনি আপনার প্রবৃত্তির কথা যখন শোনেন তখন এই শক্তি বন্ধনমুক্ত হয়, আর ৫-৪- ৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে আপনি একে সম্মানিত করেন। আপনি যখন আপনার ভেতরকার প্রকৃত আপনাকে আবিষ্কার করবেন, এটা হবে আপনার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপহার।জিন-ব্যাপটিস্ট’ও এটা দেখেছিলেন। তিনি আমাকে লিখেছিলেন “এটা বুঝতে পেরেছি যে, আমি যে জীবনযাপন করতে চাই তা কেউ এসে আমাকে দিয়ে যাবে না। এই পৃথিবীতে আমার নিজে স্থান তৈরি করার একমাত্র উপায় হলো কাজ শুরু করে দেওয়া।জিন-ব্যাপটিস্ট’ যেমনটি বলেছেন, আমিও ঠিক তাই বিশ্বাস করি- “আমরা যে পৃথিবীতে বসবাস করি সেখানে প্রত্যেকেই কিছু নতুন ও মৌলিক জিনিস যোগ করতে পারি। আমাদের সকলের ভেতরেই আছে বৃহত্তর মহত্ত্বের সম্ভাবনা।প্রত্যহ নিজেকে সামনে ঠেলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মনোবল খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার শক্তিকে সক্রিয় করে থাকেন। আপনি যখন আপনার প্রবৃত্তির কথা শুনবেন “মেল, উঠে পড় এবং দিনটির মুখোমুখি হও,
পৃষ্ঠা:৩৪
টম, চিন্তা করা বাদ দাও এবং হাঁটা শুরু কর, ক্যাথরিন, তোমার বোনের সন্তানদের যত্ন নাও, রোসা, তোমার আসনটি ছেড়ে দিও না,” তখন এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে আপনাকে অবশ্যই কি করতে হবে। আপনি যখন আপনার হৃদয়কে অনুসরণ করবেন তখন এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি সিদ্ধান্তই কেবল আপনার মাথার ভেতরকার অহেতুক কিচির-মিচিরগুলো’কে থামাতে পারে। বইয়ের শুরুতে আমি যেমন বলেছিলাম আপনি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবন থেকে শুধুমাত্র একটি সিদ্ধান্তের দূরত্বে অবস্থান করছেন।আমরা অনিশ্চয়তার ব্যাপারে এতটাই ভীত যে কখনো কখনো এমনকি চেষ্টা করে দেখার আগেই আমরা নিশ্চয়তা চাই। আমরা প্রমাণ দেখতে চাই যে, যদি আমরা ঝুঁকি নেই তাহলে ‘মেয়েটিকে পাব’। এমনকি উম’ যদি মেয়েটিকে পেয়ে থাকে তবে তা প্রমাণ করে না যে আপনিও আপনার কাঙ্ক্ষিত নারী/পুরুষ’টিকে পাবেন। যে কোন খেলায়, আপনাকে প্রথমে শুরু করতে হবে। জয়ী হওয়ার জন্য তা চালিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি আপনার স্বপ্নকে সত্যি করতে চান, তাহলে লম্বা সময় ধরে খেলা চালিয়ে যেতে প্রস্তুতি নিন। জীবন কোন ‘ধরো এবং মারো’ ধরনের চুক্তি নয়। আপনি যা চান তার জন্য আপনাকে কাজ করতে হবে। আপনি কি ‘এ্যাংরি বার্ড’ খেলাটি সম্পর্কে জানেন? এই খেলাটি বাজারে ছাড়ার আগে তারা ৫১টি খেলায় ব্যর্থ হয়েছিল। ‘এভেঞ্জার্স’ তারকা ‘মার্ক রুফালো’ সম্পর্কে শুনেছেন কি? আপনি কি জানেন তার প্রথম চরিত্রটি পাওয়ার আগে ঠিক কতবার তাকে ‘অডিশন’ দিতে হয়েছিল? প্রায় ৬০০ বার! এমনকি ‘বাব রুথ’ও ১.৩৩০ বার ‘অডিশন’ দিয়েছিলেন।আমার প্রিয় ‘ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’ হলো ‘ডায়সন’। মেশিনটির ধুলোবালি শোষণ করার ক্ষমতা দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ‘জেমস্ ডায়াসন’ ইতিপূর্বে একই ধরনের ৫.১২৭টি মেশিন তৈরি করেছিলেন। এই শেষ সংস্করণটি আপনার মাথা ঘুরিয়ে দিতে যথেষ্ট। ‘পিকাসো’ তার জীবদ্দশায় প্রায় ১০০টির মতো সেরা শিল্পকর্ম (মাস্টারপিস) তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ যেটা জানেন না তা হলো ‘পিকাসো’ ৫০,০০০টির চাইতেও বেশি শিল্পকর্ম তার সারা জীবনের শিল্পচর্চায় সৃষ্টি করেছিলেন।আপনি কি শেষ সংখ্যাটি লক্ষ্য করেছেন? ৫০,০০০! এর মানে হলো প্রতিদিন ২টি করে শিল্পকর্ম। সফলতা একটি সংখ্যার খেলা। এবং আপনি এটা কখনোই জিততে পারবেন না যদি নিজেকে ক্রমাগত অপেক্ষা করতে বলেন। যত দ্রুত আপনি সাহস সঞ্চয় করবেন, সফলতার সম্ভাবনা আপনার তত বেশি।আপনি যখন নিজেকে সামনে ঠেলে দিতে ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করবেন, আপনার জীবনে আপনি জানু আবিষ্কার করবেন এবং নিজেকে পৃথিবীর সামনে, সুযোগ ও সম্ভাবনার সামনে মেলে ধরতে সক্ষম হবেন। আপনি হয়তো মেয়েটিকে পাবেন না, আপনার অংশ পাবেন না অথবা যে প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলেন তা পাবেন না, কিন্তু এটা মূল কথা নয়। দিন শেষে আপনি হয়তো আরো অসাধারণ কিছু পেয়ে যাবেন আপনি আপনার অন্তর্গত শক্তিকে আবিষ্কার করবেন। এক মিনিট, এটা নিয়ে আমাকে একটু ভাবতে দিন।
পৃষ্ঠা:৩৫
(৭) নতুন অনুভব
“বেড়ে ওঠার জন্য এবং আপনি সত্যি ঠিক যা, তাই হওয়ার জন্য চাই মনোবল।” – ই. ই. ফিউমিংস
প্লানো, ‘টেক্সাস’-এর এক গ্রীষ্মের বিকেল বেলা। ‘ক্রিস্টিন’ নামে এক অদ্রমহিলা তার কর্মস্থলে এক কর্মীসভায় বসে আছেন। তার বস কোম্পানির একটি বিশাল পরামর্শ প্রদানকারী ব্যবস্থা (কনসাল্টিং বিজনেস) প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে সকলের মতামত ও ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য সভাটি ডেকেছেন। এটি এখন দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপার আর সিদ্ধান্তটি নেয়া হবে আগামী সপ্তাহে। ‘ক্রিস্টিন’ শুনছিল এবং নোট করছিল, হঠাৎ করেই একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের চিন্তা তার মাথায় আসে। তিনি বলেন:”আমরা যদি একটি ‘স্ন্যাপচ্যাট জিও ফিল্টার’ তৈরি করে তা সম্ভাব্য অফিস ভবনগুলোতে যুক্ত করে দিই তাহলে ঐ সব ভবনে সবাই যারা ‘ফ্ল্যাপচ্যাট’ ব্যবহার করছে তারা এটি দেখবে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এটি একটি সংকেত দেবে।”এ সময় তার মস্তিষ্ক অবিশ্বাস্য সব বিষয় নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিল, সহকর্মীদের সঙ্গে তার আলোচনা বন্ধ হয়ে গেল এবং বাণিজ্য উন্নয়ন উপ- প্রধান বললেন- “এটা একটা অসাধারণ পরামর্শ, আর কেউ?”
ক্রিস্টিস কে এখন এফটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা পরবর্তী ৫ নেকেভ সমজের নন্টে।
তিনি জানেন তাকে আলোচনায় নেমে পড়তে হবে কিন্তু প্রথমে তিনি চিন্তা করা বন্ধ করলেন। এটা কি পাগলামি হয়ে যাচ্ছে? অন্য কেউ এর ধারে- কাছেও কিছু পরামর্শ দেয়নি। সে তার চেয়ারে বসল। আর কেউ ‘স্ন্যাপচ্যাট’- এর বিষয়টি উল্লেখ করেনি, এর কি কোনো বিশেষ কারণ আছে? এখন তারমনে হতে লাগলো এই ধারণাটি শেয়ার করা তার আদৌ উচিত হয়েছে কিনা।পরবর্তী ৫ সেকেন্ড ‘ক্রিস্টিন’ হয় চুপ থাকবে যা কর্মস্থলে অভ্যাসের একটি ধরন হয়ে দাঁড়িয়েছে, না হয় তাকে কথা বলার সাহস খুঁজে পেতে হবে। সাথে ক্রিস্টিন’-এর একটি লক্ষ্যও রয়েছে। তিনি কর্মস্থলে উন্নতি করতে চান এবং আরো জ্যেষ্ঠ পদবীর জন্য নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে তার উদ্বেগ রয়েছে যদি না তিনি তার নির্বাহী উপস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। তিনি এ ব্যাপারে কি করা উচিত তা খুঁজে বের করতে প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন এবং আমাকেও লিখেছিলেন, কারণ এটা করার জন্য নিজের সক্ষমতার সাথে তিনি সংগ্রাম করছিলেন। আত্মবিশ্বাস নেমে যাচ্ছিল।তিনি ‘লান ইউ’, ‘ট্রাইবস’, ‘ডেয়ারিং গ্রেটলি’ এবং ‘দ্য কনডিফেন্স কোড’- এর মতো বইগুলো পড়ে ফেলেছিলেন। তিনি মহিলা সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন, পরামর্শদাতার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং বাড়িতে আয়নার সামনে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো অনুশীলন করেছেন। এই সকল গবেষনা ও পড়াশোনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। ‘ক্রিস্টিন’ এখন জানে তাকে কি করতে হবে (কৌশলগত ধারণা শেয়ার করা, সক্রিয়া হওয়া, স্বাস্থ্যের উন্নতি করা, আরো দৃশ্যমান হওয়া এবং যে প্রকল্পগুলো তাকে প্রসারিত করবে তাতে স্বোচ্ছাসেবক হওয়া) এবং কেন করতে হবে।আপনি সম্ভবত ভাবছেন, কেন ‘ক্রিস্টিন’ কথা বলেনি যেখানে তার সুযোগ ছিল কথা বলার। দারুন প্রশ্ন। উত্তরটি কিন্তু খুব সহজ। তিনি অনুভূতিগুলোর সাথে তার যুদ্ধে হেরে যাচ্ছিলেন। ‘ক্রিস্টিন’-এর কথা বলার ব্যাপারে কোনো সমস্যা ছিল না। তিনি আত্ম-সন্দেহের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। একটি সভায় কিভাবে কথা বলতে হয়, ‘ক্রিস্টিন’ অবশ্যই তা জানেন। যা জানেন না তা হলো কিভাবে অনুভূতিগুলোকে পরাজিত করতে হয়,যেগুলো তাকে থামিয়ে দিচ্ছিল।আপনি যদি কখনো এটা জেনে বিস্মিত হয়ে থাকেন যে, কেন এমন জিনিসগুলো করা কঠিন যা আপনার সমস্যাগুলোর সমাধান ও জীবনমানের উন্নতি করবে, তাহলে এর উত্তরটি খুব সহজ।
পৃষ্ঠা:৩৬
এটা আপনার অনুভূতি। আমরা কেউ এটা বুঝতে পারি না, কিন্তু আমরা প্রায় সব সিদ্ধান্তই আমাদের যুক্তি দিয়ে, হৃদয় দিয়ে, আমাদের লক্ষ্য ও স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে গ্রহণ করি না গ্রহণ করি আমাদের অনুভূতি দিয়ে। কিন্তু আমাদের অনুভূতিগুলো প্রায়শঃই যা আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো, তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। উদাহরণ হিসেবে ‘ক্রিস্টিন’-কে নিতে পারেন। তিনি জানেন তার জন্য সবচেয়ে ভালো কি, কর্মীসভায় কথা বলা, কিন্তু তার অনুভূতি তাঁকে দ্বিতীয় কিছু অনুমান করতে প্রলুব্ধ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে- হৃদয় থেকে আমরা জানি যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জন্য ভালো করবে তার চাইতে বরং এই মুহূর্তে যা আমাদের কাছে ভালো বা সহজ মনে হয়, আমরা তাই বেছে নেই।যে মুহূর্তে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার অনুভূতিগুলোই আপনার সমস্যা, আপনি এটাও জেনে যাবেন এদের পরাজিত করার ক্ষমতা আপনার ভেতরে রয়েছে। খেয়াল করে দেখুন প্লানো, ‘টেক্সাস’-এর কর্মীসভায় কত দ্রুত ‘ক্রিস্টিন’-এর অনুভূতিগুলো ডালপালা মেলে দিয়েছিল। পাঁচ সেকেন্ডেরও কম সময়ে তার মন সন্দেহে পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল। এটা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। একবার যখন আপনি বুঝতে পারবেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আপনার অনুভূতিগুলোর ভূমিকা কি, আপনি তাদের পরাজিত করতে পারবেন।
আপনার সিদ্ধান্তগুলো অনুভূতির উপর ভিত্তি করে নেওয়া
আমরা এটা ভাবতে পছন্দ করি যে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো যুক্তি বা লক্ষ্যনির্ভর, কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। স্নায়ুবিজ্ঞানী ‘এন্টোনিও সামাসিও’র মতো ৯৫% ক্ষেত্রে আমাদের অনুভূতিগুলোই আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়। আপনি চিন্তা করার পূর্বে অনুভব করেন। আপনি কাজ করার পূর্বে অনুভব করেন। ‘দোমাসিও’ যেমনটি মনে করেন “মানুষ হলো অনুভূতির যন্ত্র যে চিন্তা করে, চিন্তা করার যন্ত্র নয় যে অনুভব করে”। এবং এভাবেই আসলে আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, আপনার অনুভূতির উপর ভিত্তি করে। ‘দোমাসিও’ সেইসব মানুষদের পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যাদের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যারা কোনো আবেগ অনুভব করতে অক্ষম, আর তিনি যা আবিষ্কার করেছিলেন তা ছিল খুবই চিত্তাকর্ষক। যাদের তিনি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তাদের কেউই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। তারা যৌক্তিকভাবে কি করা উচিত বাএকটি পছন্দের সুবিধা-অসুবিধাগুলো বর্ণনা করতে পেরেছিল কিন্তু সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করতে পারেনি। “আমি কি খেতে চাই” জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও তারা ছিল অসাড়।’দোমাসিও’ যা আবিষ্কার করেছিলেন আপনাকে তা সর্বাগ্রে অনুধাবন করতে হবে। প্রত্যেকবার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় অবচেতন মনে আমরা আমাদের পছন্দটির সুবিধা অসুবিধাগুলো বিচার বিবেচনা করি এবং তারপর যেভাবে আমরা অনুভব করি তার উপর ভিত্তি করে একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। এটি এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যে ঘটে থাকে, আর এজন্যই আমাদের কেউ এটা করতে পারে না।উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন নিজেকে প্রশ্ন করেন “আমি কি খেতে চাই?” তখন আপনি আসলে নিজের কাছে জানতে চাইছেন আমার ইচ্ছে করছে?” একইভাবে, আমি জিজ্ঞেস করিনি যে “কি খেতে “আমার কি ওঠা উচিত?” আমি আসলে নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম “আমি কি উঠে পড়তে পছন্দ করব?” ‘টম’ জিজ্ঞেস করেনি “আমি কি তার কাছে হেঁটে যেতে চাই?” অবচেতন মনে তিনি আসলেজিজ্ঞেস করেছিলেন “আমি কি তার দিকে হেঁটে যাওয়ার ব্যাপারে অনুভব করছি?” “‘ক্রিস্টিন’ তার কর্মক্ষেত্রে ঠিক এটাই করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেননি “আমি কি আমার ধারণা শেয়ার করব?” তিনি অবচেতন মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন “আমি কি আমার ধারণা শেয়ার করার মতো কিছু অনুভব করছি?”বিশাল পার্থক্য। আর এটা ব্যাখ্যা করে কেন পরিবর্তন এত কঠিন। যৌক্তিকভাবে, আমরা জানি আমাদের কি করা উচিত, কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের অনুভূতিগুলোই আমাদের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। আপনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আপনার অনুভূতিগুলো এটা করে ফেলবে। ঐ মুহূর্তে আপনি যেভাবে অনুভব করে থাকেন তা কখনোই আপনার লক্ষ্য এবং স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আপনি যা চান তা কখনোই পাবেন না যদি আপনি শুধুমাত্র আপনার তাৎক্ষণিক অনুভূতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে থাকেন।আপনি যে কাজগুলো করে থাকেন তা থেকে আপনার অনুভূতিগুলোকে আলাদা করা শিখতে হবে।
পৃষ্ঠা:৩৭
যে মুহূর্তে আপনি খুব ক্লান্তি বোধ করেন, আপনি না দৌড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি দৌড় শুরু করে দিতে পারেন।• আপনি যদি আপনার টেবিলের কার্যতালিকা অনুসরণ করার ব্যাপারে উৎসাহ বোধ না করে থাকেন, আপনি কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু ৫-৪- ৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি তা করতে নিজের উপর জোর খাটাতে পারেন।• আপনি যদি নিজেকে যোগ্য মনে না করেন, আপনি বিশেষ কাউকে কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি বলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।আপনি যদি আপনার কার্যকলাপ থেকে অনুভূতিগুলোকে আলাদা করতে না শেখেন, আপনি আপনার সত্যিকারের সম্ভাবনাগুলোকে কখনোই বন্ধনমুক্ত করতে পারবেন না।এভাবেই আপনার অনুভূতিগুলো পরিবর্তন থেকে আপনাকে সরিয়ে রাখে। আপনি কিভাবে অনুভব করছেন তা যখন বিবেচনা করা বন্ধ রাখেন, আপনি আসলে লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া বন্ধ করে দেন। একবার যখন আপনি দ্বিধা করেন, আপনি চিন্তা করা শুরু করেন। কি করা প্রয়োজন, কি ভালো কি মন্দ। যা করা প্রয়োজন সেই সম্পর্কে কিভাবে আপনি অনুভব করছেন তা বিবেচনা করেন এবং আপনি কাজটি করার বাইরে অন্য বিষয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন।আমি এটা আগেও বলেছি এবং আবারও বলব, কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট ‘ডায়েট’ অনুসরণ করতে, একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে, একটি ভেঙ্গে যাওয়া বৈবাহিক সম্পর্ক মেরামত করে জীবন পুনর্নিমাণ করতে, আপনার বিক্রয় লক্ষ্য অর্জন করতে অথবা একজন খারাপ ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে আপনি আপনার সক্ষমতা নিয়ে লড়াই করছেন না, আপনি আসলে এটা করতে আপনার অনুভূতিগুলোর জন্য লড়াই করছেন। আপনি অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও ভালোর জন্য যে কোনো পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে অনেক বেশী সক্ষম।
আপনি কিভাবে অনুভব করবেন তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিন্তু কিভাবে কাজ করবেন তা সবসময় নির্বাচন করতে পারেন।
এটা সবসময় আশ্চর্যজনক যে কি করে পেশাদার ক্রিড়াবিদরা এতসব অর্জন করেন? এর একটি অংশ প্রতিভা ও অনুশীলন, কিন্তু অন্য একটি মূল উপাদান দক্ষতা যা আমার আপনার সবার জীবনে প্রয়োজন আমাদের আবেগ থেকে বাস্তবতা আলাদা করার দক্ষতা এবং শরীর ও মুখকে নাড়ানোর জন্য ধাক্কা দেওয়া। যখন ফুটবল চতুর্থ অর্ধে প্রবেশ করে, তারা হয়তো ক্লান্তি অনুভব করেন কিন্তু তা তারা প্রদর্শন করেন না। অনুভূতিগুলো নিছকই পরামর্শ যখন কোনো শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ বা দল তা উপেক্ষা করে। পরিবর্তনের জন্য আপনাকেও একই কাজ করতে হবে। আপনি অবশ্যই উপেক্ষা করবেন ঠিক যেভাবে অনুভব করবেন, ‘নাইকি’ যেমন বলে থাকে যেভাবে হোক কাজটি করুন।প্রত্যেক মানুষই আত্ম-সন্দেহ বোধের সাথে লড়াই করে। ‘লিন-ম্যানুয়েল মিরান্ডা’-কে জিজ্ঞেস করুন যিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘হ্যামিল্টন’-এর স্রষ্টা যা ২০১৬ সালে ১১টি উনি অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল। তার ছয় বৎসর সময় লেগেছিল ‘হ্যামিল্টন’ লিখতে। আপনি হয়তো পরবর্তী ‘হ্যামিল্টন’ লেখার স্বপ্ন দেখছেন। শুধু তুলে যাবেন না, মিরান্ডার ৬ বৎসর লেগেছিল এবং এর প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে আত্ম-সন্দেহ বোধের সাথে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। তিনি সম্প্রতি তার ট্যুইটার পৃষ্ঠায় একটি ‘পোস্ট’ অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এটি ‘মিরান্ডা’ ও তার স্ত্রী ‘ভেনেসা’র মধ্যকার কথোপকথনের উপর একটি ‘পোস্ট’। তিন বৎসর আগে ‘হ্যামিল্টন’ যখন সর্বসাধারণের সামনে প্রথম আবির্ভূত হয় এবং এক হাজার ডলার মূল্যের টিকিট বিক্রি করা শুরু করে, ‘মিরান্ডা’ তখনো এই মিউজিক্যালটি লিখছিলেন এবং তার আত্ম-সন্দেহ বোধের সাথে লড়াই করছিলেন। তার ভাষায়:”আমি যত দ্রুত এটা শেষ করতে চাচ্ছিলাম তত দ্রুত হচ্ছিল না এবং এটা শেষ করার জন্য অপেক্ষা করে আমি সময় নষ্ট করতে চাইছিলাম না। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতে আমাকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল।”
পৃষ্ঠা:৩৮
‘মিরান্ডা’ কি করলেন? তিনি নিজেকে ধাক্কা মারলেন এবং লিখতে থাকলেন। এজন্য তিনি তার ট্যুইটার পৃষ্ঠায় ‘পোস্ট’ করেছিলেন “এটা মনে করিয়ে দিতে চাই যে আমরা প্রত্যেকে একই রকম। আমরা সবাই নিজেকে পরাজিত করার একই রকম অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করছি এবং এ থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করা এবং নিজের কাজে ফিরে যাওয়া”।তার স্ত্রী যা বলেছিলেন তা আমার পছন্দ হয়েছিল। “প্রত্যেকেরই এই সমস্যাটি হয়, সবসময়।” তিনি ঠিকই বলেছেন। এটাই সত্যি। আপনি সবচেয়ে বড় ভুলটি করতে পারেন যখন আপনার অনুভূতিগুলোর কথা শুনে। কোনো কিছু করতে যাবেন। কোনো কিছুর জন্য অনুভব করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন এবং আপনার কাজে ফিরে যান।চলুন ফিরে যাই প্লানো, ‘টেক্সাস’-এ, যেখানে ‘ক্রিস্টিন’-কে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পূর্বে, যখনই তিনি অনিশ্চিত বোধ করেছেন, তিনি হয়তো কিছু না বলে নিজের ‘নোটপ্যাড’-এর দিকে তাকিয়ে থেকেছেন, আর ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে মুহূর্তটি হয়তো কেটে গেছে। আর যদি তার কোনো সহকর্মী একই ধারণা উত্থাপন করে থাকে (যা সহকর্মীরা প্রায়ই করে থাকে) তাহলে সারা বিকেলজুড়ে তিনি হয়তো কথা না বলে চুপ থাকার জন্য নিজেকেই দায়ী করতে থাকবেন।কিন্তু, আজ ‘ক্রিস্টিন’ ভিন্ন কিছু করলেন। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন এবং অনুভব করছিলেন ৫ সেকেন্ড-এর জানালাটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারণ তার মস্তিষ্ক তার সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। তিনি যখন রুল’টি প্রয়োগ করলেন, তার পেটের ভেতর গিট লেগে গেল।তিনি তার সন্দেহগুলোকে চুপ করিয়ে দিতে এবং মস্তিষ্কের গিয়ারগুলোকে চালু করতে নীরবে উল্টো গণনা শুরু করলেন-৫…৪…৩…২০১এই গণনাটি তার আচরণের স্বাভাবিক ধারাকে ব্যাহত করল, ভয় পাওয়া থেকে তাকে বিরত রাখল এবং ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ গ্রহণের একটি মুহূর্ত সৃষ্টিকরল। ঐ মুহূর্তটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার মাধ্যমে তিনি তার প্রিফ্রন্টাল করটেক্স’-কে সজিনা করলেন যাতে করে চিন্তা-ভাবনাগুলো পরিচালনা ও কার্যপ্রক্রিয়া শুরু করা যায়। অতঃপর তিনি মুখ খুললেন এবং বললেন “আমার কাছে একটি ধারণা আছে।”সবাই তার দিকে ঘুরে তাকাল এবং ‘ক্রিস্টিন’-এর মনে হলো তিনি সেখানেই মারা যাবেন। সামনে এগোতে নিজের উপর জোর খাটালেন তিনি। একটু উঁচু হয়ে বসলেন, একটু বেশি জায়গা নিয়ে টেবিলের দু’পাশে তার কনুই দুটি ছড়িয়ে দিলেন (শক্তিশালী অঙ্গপ্রদর্শন যেমন পরামর্শ দিয়ে থাকে) এবং কথা বলা শুরু করলেন “সুতরাং, আমার ধারণা, আপনারা পরিসংখ্যানগত ভাবে জানেন কিভাবে অজস্র মানুষ একটি প্রচার মাধ্যমহিসেবে ‘স্ন্যাপচ্যাট’ ব্যবহার করছে…”সবাই তার ধারণাটি শুনলেন, কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন এবং তারপর তার বল বললেন “ধন্যবাদ’ক্রিস্টিন’, অত্যন্ত আকর্ষণীয় পরামর্শ, আর কেউ?” বাইরের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো কিছু ঘটল না কিন্তু ভেতরে জীবন বদলে দেয়ার মতো কিছু একটা ঘটে গেল। ‘ক্রিস্টিন’ নিজের ভেতরে সেই মনোবল আবিষ্কার করলেন যা কর্মক্ষেত্রে তিনি যা হতে চেয়েছিলেন (একজন রকস্টার) তার জন্য প্রয়োজন ছিল।’ক্রিস্টিন’ যা বলেছিলেন তা মুখ্য বিষয় নয়। বিষয়টি হলো তিনি যা কিছু বলেছিলেন তা ঐ মুহূর্তটিকে শক্তিশালী করেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারাভিযানের উদ্দেশ্যে তার ধারণা শেয়ার করা ছিল একটি প্রতিষ্ঠানের বিপণন কৌশলের চাইতেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা ক্রিস্টিন’-কে পরিবর্তন করে দিল। এটা শুধু তিনি কেমন আচরণ করেন তাই পরিবর্তন করল না বরং নিজেকে তিনি কিভাবে দেখেছিলেন তাও পরিবর্তন করে দিল। এটা এমনকি তার মনস্তত্ত্ব পরিবর্তন করে দিল। এটাই হলো যেভাবে আপনার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের পদক্ষেপ দ্বারা। তিনি একটু মনোবল খুঁজে পেতে নিজের ভেতর গভীরে পৌঁছানোর জন্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’টি ব্যবহার করেছিলেন। এবং কথা বলার মাধ্যমে (যখন সাধারণতঃ নিজেকে তিনি পেছনে টেনে ধরে রাখতেন) প্লানো, ‘টেক্সাস’-এর এক বিকেল বেলায় সম্মেলন কক্ষে বসে তিনি নিজের কাছে প্রমাণ করেছিলেন
পৃষ্ঠা:৩৯
যে, কর্মক্ষেত্রে ধারণা শেয়ার করে অবদান রাখার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট পরিমাণে ভালো এবং করিতকর্মা।এটি ছিল একটি ছোট কিন্তু বিস্ময়কর পদক্ষেপ। এবং এর জন্য প্রয়োজন হয় মনোবল। রুল’টি ছিল কেমন করে তিনি একটি ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং পরামর্শটি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন সেই সংক্রান্ত, যা আমরা সবাই জানি কাজ করে থাকে। এটি ছিল কেমন করে ‘শেরিল স্ট্যান্ডবার্গ’ অনুরোধ করেছিলেন, ‘সেথ গোডিন’ টিকটিকি মস্তিষ্ককে বোকা বানাতে চেয়েছিলেন, ‘আন্ট’ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মৌলিক কাজ দেখাতে চেয়েছিলেন এবং ‘ব্রেনে ব্রাউন’ মহা-সাহসিকতার সাথে আমাদের ক্ষমতায়িত করতে চেয়েছিলেন।ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, রুল’টি এমন একটি হাতিয়ার যা তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম। ঠিক এভাবেই ‘ক্রিস্টিন’ রুল’টি ব্যবহার করেছিলেন। আপনিও তাই করবেন। স্বোচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে। ‘ক্রিস্টিন’ তার অনুভূতিগুলোকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যা তাকে থামিয়ে দিত এবং কর্মজীবনে অধিক প্রভাব বিস্তার করত। তিনি তার ধারণাগুলো প্রকাশ করার জন্য যত বেশি করে রুলটি ব্যবহার করবেন, ততবেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।আত্মবিশ্বাস একপ্রকার দক্ষতা যা আপনি কাজের মাধ্যমে অর্জন করে থাকেন। সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ‘টিমোথি উইলসন’ ‘অ্যারিস্টটল’-কে মানসিক হস্তক্ষেপ সম্পর্কে লিখেছিলেন “ভালো করুন, ভালো হোন।” এর সূচনা প্রথমতঃ মানুষের আচরণগত পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে, যা তাদের কাজের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ব্যক্তিত্বের আত্ম-উপলব্ধি বদলে দেয়।’ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আপনার সঙ্গী হওয়ার এটাই সঠিক কারণ। এটি কাজ ও আচরণ পরিবর্তনের সাথে আপনার লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি চিন্তা করার হাতিয়ার নয় এবং দিনের শেষে আপনি যদি জীবনকে পরিবর্তন করতে চান তাহলে চিন্তা করার চাইতে আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে।এ ব্যাপারে ‘উইলসন’ পরিষ্কারভাবে সম্মত। তিনি বলেন “আমাদের মস্তিষ্ক বোকা নয়। এটা এমন নয় যে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে বলবেন’ইতিবাচক চিন্তা করা’ আর তা জেগে উঠবে।” আমি বিশ্বাস করি আপনাকে এর চাইতে বেশি কিছু করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই আপনার অভ্যাসগুলো যা আপনাকে থামিয়ে দেয়, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে হবে। আপনাকে অভ্যাসগুলো ভাঙতে হবে যা আপনাকে পেছনে টেনে ধরে রাখে। অতঃপর আপনার প্রত্যেকটি ধ্বংসাত্মক অভ্যাস এক একটি সাহসী অভ্যাস দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে। পরবর্তী সভায় ‘ক্রিস্টিন’-কে প্রাত্যহিক মনোবল অনুশীলন করতে হবে। তাকে কিছু বলতে হবে এবং তিনি অনিশ্চিত ও অস্বস্তিবোধ করবেন। যখন তিনি তার ধারণাগুলো শেয়ার করতে যাবেন, নিজের প্রতি তার সন্দেহ জাগবে এবং দ্বিধাবোধ করবেন। তিনি প্রতিহত অনুভব করবেন। এটাই ধাক্কা দেওয়ার প্রকৃত সময়। এটা সেই মুহূর্ত যখন আপনার মূল্যবোধ ও লক্ষ্য একটি রেখায় এসে দাঁড়াবে কিন্তু আপনার অনুভূতি আপনাকে ‘না’ বলবে। কথা বলার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিতে ‘ক্রিস্টিন’-এর ‘ফাইন্ড সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে।রুল’টি তিনি যত বেশি ব্যবহার করবেন, কর্মী সভায় তার চুপ করে থাকার অভ্যাসটি তত বদলাবে এবং মনোবল নামক নতুন একটি অভ্যাস প্রতিস্থাপিত হবে। ‘ক্রিস্টিন’ যত বেশি তার নিজেকে প্রকাশ করতে ও অন্তর্গত ধারণাগুলোকে বাইরে নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন, ততবেশি প্রাণবন্ত, সংযুক্ত ও ক্ষমতায়িত হতে থাকবেন।’ন্যাট’ জানেন এটি ঠিক কতটা ক্ষমতায়নজনিত অনুভূতি। তিনি এখন ব্যবসার প্রবৃদ্ধির জন্য নিজের ধাক্কা দিতে প্রতিদিনই রুল’টি ব্যবহার করছেন। তার ভাষায়-“হ্যাঁ, রুলটি এখন আমি প্রতিদিনই ব্যবহার করছি। আজকে যেমন করলাম। আমি যে হাসপাতালে কাজ করি সেখানে একজন অদ্রমহিলা রোগী হিসেবে অপেক্ষা করছিলেন এবং আমি সেখানে একটি সম্ভাব্য বাজার দেখতে পেলাম। আমি শুদ্রমহিলার কাছে একটি প্রস্তাব পেশ করলাম, একটু আন্তরিক হলাম এবং তার কাছ থেকে যোগাযোগের তথ্যাদি সংগ্রহ করলাম যাতে করে আমরা সংযুক্ত থাকতে পারি এবং পরবর্তী কোনো সময়ে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারি।”রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে ‘ক্যারল’ একটি পেশাদার সম্মেলনে তার সেবিকা সহকর্মীদের সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করার মতো মনোবল খুঁজে
পৃষ্ঠা:৪০
পেয়েছিলেন যা ছিল তার নিজেকে ধাক্কা দিয়ে নিজের আরামদায়ক এলাকা থেকে বাইরে বের করে এনে জীবনের একটি লক্ষ্য অর্জন করার মতো।’আলেকজান্ডার’-কে যখন তার কর্মস্থলে একটি উপস্থাপনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলো, তার মাথায় এসে অসংখ্য অজুহাত ভর করল। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে তিনি সবকিছু বদলে দেয়া একটি মুহূর্তের সন্ধান পান যা তাকে একটি স্নাতকোত্তর ক্লাসে শিক্ষা দেওয়ার মতো আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল।’ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির ব্যবহার এত স্বাধীন হওয়ার কারণ হলো আপনি এতে শুধু একটি মুহূর্তকেই জব্দ করছেন না বরং আপনার জীবনের মালিকানা ভার গ্রহণ করছেন। আপনি ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’গুলোকে বদলে দিচ্ছেন। ‘জিম’ যেমনটি বলেছেন “আপনার নিজের ক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করবেন না।” তিনি ‘বিশ্লেষণ অসাড়তা’-কে পরাস্ত করতে রুল’টি ব্যবহার করেছিলেন, আর পেয়েছিলেন একটি অবিশ্বাস্য বছর।’উলসন’ বলেছিলেন “ভালো করুন, ভালো হোন”। সর্বপ্রথম আপনার আচরণ বদলান কারণ আপনি যখন তা করবেন নিজেকে উপলব্ধি করার ধরনও বদলে যাবে। ঠিক এটাই রুল’টি ব্যবহার করার সময় ‘এ্যানা ক্যাট’ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একজন পেশাদার বিপণন কর্মী যিনি শান্ত থাকা পছন্দ করতেন বিশেষ করে সবাই যখন তাকে লক্ষ্য করছে। তার দুশ্চিন্তা ছিল সহকর্মীরা হয়তো তাকে বোকা ও অনভিজ্ঞ ভাবছে। আমাকে লেখা ‘এ্যানা ক্যাট’-এর চিঠি:আমি বিপণনে আছি তাই সবসময় নতুন নতুন ধারণার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। প্রত্যেকটি নতুন ধারণা পুরনোটিকে সরিয়ে দিতে পারে এবং একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রচারণার উন্নয়ন ঘটাতে এবং আমাদের ভোক্তাদের জন্য বিশেষ ফলাফল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। হ্যা, ছোট্ট একটি ধারণা। সব একত্রিত করে রাখার জন্য আমি যেখানেই যাই না কেন, আমার ব্যাগে একটি ছোট নোটবই বহন করি এবং তা জরুরি কাজগুলো লিখে রাখার জন্য ব্যবহার করি কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি আমার ধারণাগুলোই লিখে রাখি।আমি মনে করি না ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আমার ধারণাগুলোকে দীর্ঘায়ু করে এবং অনুমোদনের আশায় আমি সেগুলো কোথাও পাঠাইও না। শুধুমাত্র পরবর্তীতে ব্যবহার করার জন্য ধারণাগুলো রেখে দিই। আমি শুধু চাই এগুলো কাগজে লেখা থাকুক। পরে, এগুলোকে আমি আবার দেখি এবং সময় নিয়ে মূল্যায়ন করি যাতে করে এ থেকে কোনো অসাধারণ কৌশল উদ্ভাবন করা যায়।ধারণা শেয়ার করার সময় অথবা তা লিখে রাখার সময় আমি মেনিমুখো একজন হয়ে যেতাম। মানুষ কি চিন্তা করবে অথবা যদি তারা আমাকে মূর্খ ও অনভিজ্ঞ মনে করে, এই ভেবে আমি সচেতন এবং চিন্তিত হয়ে পড়তাম। ‘ভয়ঙ্কর বিড়াল উপসর্গ দূর হয়ে যাওয়ার পর আমার সৃজনশীলতার উন্মেষ ঘটেছিল। এখন আমি আর মনে করতে পারিনা যে, কেন আমি আগে এতটা উদ্বিগ্ন ছিলাম।”প্রিয় মেল,এই হলোআমার’ফাইভ সেকেন্ড রুল’ সংক্রান্ত গল্প।আমি যখন সকাল ৭টা ৩০ মিনিটের আগেই আমার সকালের কাজগুলো শেষ করার জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে বিছানা থেকে (৫ সেকেন্ডের মধ্যে) টেনে তুলেছিলাম, আমার পেশাজীবন ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।’ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির জন্য ধন্যবাদ।পুনশ্চ: আমার দল এখন আমার ধারণাগুলো নিয়ে গবেষণা করছে।- এ্যানা ক্যাট।”আপনি নিজেকে ‘ভয়ঙ্কর বিড়াল’ মনে করতে পারেন কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনিও মহৎ কাজ করতে পারেন। আপনার কাছে যা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ তা করতে, বলতে অথবা অনুসরণ করতে ৫ সেকেন্ডের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। এ কারণেই মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের মধ্যকার
পৃষ্ঠা ৪১ থেকে ৫০
পৃষ্ঠা:৪১
বন্ধন এত অচ্ছেদ্য। প্রতিবার আপনি যখন সন্দেহের মুখোমুখি হবেন, ৫-৪- ৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে তা পার হয়ে যান এবং নিজেকে সক্ষম প্রমাণ করুন।প্রতিবার আপনি যখন ভয়কে প্রতিহত করবেন, ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন এবং কাজটি যেভাবেই হোক সম্পন্ন করুন যাতে করে আপনার অন্তর্গত শক্তির প্রদর্শন হয়। প্রতিবার আপনি যখন অজুহাতগুলোকে ধ্বংস করবেন, ৫- ৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন এবং কথা বলুন যাতে করে আপনার মহত্ত্বকে সম্মানিত করা যায়। এভাবেই বেড়ে উঠবে আত্মবিশ্বাস একটি ছোট ও সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে।
(৮) কেমন করে শুরু করতে হবে“আপনি পারেন কিংবা পারেন না যাই চিন্তা করেন না কেন, তাই ঠিক।” – হেনরি ফোর্ড
‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি প্রয়োগ করার দ্রুততম উপায় হলো আমি যেভাবে করেছিলাম ঠিক সেভাবে প্রয়োগ করা। আগামীকাল ভোরে উঠে পড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আপনি রুল’টির ব্যবহার শুরু করতে পারেন। স্বাভাবিক সময়ের ৩০ মিনিট আগে আপনার ‘অ্যালাম’টি সেট করুন, রিং বাজার সাথে সাথে ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং নিজেকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে তুলে দিন।
পরিবর্তন খুব সাধারণ কিন্তু সহজ নয়
কেন এই ‘চ্যালেঞ্জ’টি গুরুত্বপূর্ণ তার কিছু কারণ রয়েছে-(এক) এখানে আন্দোলিত হওয়ার কোনো জায়গা নেই। ‘চ্যালেঞ্জ’টি সহজবোধ্য। এটা শুধু আপনি, অ্যালার্ম ঘড়ি আর ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা। আপনি বার্থ হলে তার কারণ ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’টিকে ব্যর্থ করে দেওয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত আপনি হয়তো গ্রহণ করেছেন।(দুই)- আপনি যদি আপনার সকালের কর্মসূচি পরিবর্তন করতে পারেন, তবে সবকিছুই পরিবর্তন করতে পারবেন। পরিবর্তনের জন্য আপনার অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে হবে। আপনি যদি জীবনের একটি ক্ষেত্রে এটা করতে পারেন, তাহলে জীবনের যে সব ক্ষেত্রে আপনি উন্নতি করতে চাইছেন, সেসব ক্ষেত্রেও করতে পারবেন।(তিন)- আমি চাই আপনি ‘সক্রিয়করণ শক্তি’ ধারণাটির অভিজ্ঞতা অর্জন। করুন এবং অনুভব করুন সাধারণ কিছু করতে নিজেকে ধাক্কা দেওয়া কতটা কঠিন। রসায়নশাস্ত্র মতে ‘সক্রিয়করণ শক্তি’ হলো একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন পরিমাণ শক্তি। রসায়নবিদরা লক্ষ্য করেছেন, এই প্রাথমিক শক্তির পরিমাণটি রাসায়নিক বিক্রিয়াকে চলমান রাখার
পৃষ্ঠা:৪২
জন্য প্রয়োজনীয় গড় শক্তির চাইতে অনেক বেশি। কি আছে এর ভেতরে? অনেক কিছু। নিজেকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে তুলে আনতে যে পরিমাণ প্রাথমিক শক্তি লাগে তা আপনার উঠে পড়া ও চলমানতা অব্যাহত রাখার জন্য ব্যবহৃত শক্তির চাইতে অনেক অনেক বেশি।কিংবদন্তিতুল্য মনোবিজ্ঞানী ‘মিহালী সিসাইজেন্টমিহালী’ এই ধারণাটি মানবিক আচরণের উপর প্রয়োগ করেছিলেন এবং আবিষ্কার করেছিলেন ‘সক্রিয়করণ শক্তি’ হলো একটি বড় কারণ যার জন্য কোনো পরিবর্তন এত কঠিন। তিনি এর সংজ্ঞা নিরূপণ করতে গিয়ে বলেছেন “এটা হলো পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক শক্তির ধাক্কা যা থেমে থাকা একটি গাড়িকে নাড়াতে কিংবা ভোরবেলা উষ্ণ বিছানা থেকে আপনাকে তুলে দিতে কাজ করে”।ফিলিপাইন থেকে ‘জেরোমি’ লিখেছেন।”এটাকে অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে কারণ আমার দেহ ও মন এই ধরনের শাসনের জন্য প্রস্তুত নয়। কিন্তু আমি এটা অনুশীলন করতে চাই।”‘সক্রিয়করণ শক্তি’র প্রথম পর্যায়টি খুব অস্বস্তিকর, কিন্তু আমি চাই আপনি সেই প্রতিরোধটি অনুভব করুন যাতে করে শিখতে পারেন নিজেকে ধাক্কা দেওয়াটা আসলে কি রকম।আপনি যদি নিজেকে সেই বিশাল ধাক্কা দিতে না পারেন (যেমন ছোটবেলা আপনার মা টেলিভিশনটি বন্ধ করে দিয়ে বলেছেন কি সুন্দর একটি দিন, বাইরে যাও এবং কিছু একটা কর) তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে কিছুই না করার পথে চালিয়ে নিয়ে যাবে। আপনি যখন ৫- ৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা শুরু করেন তখন একটি শৃঙ্খলিত প্রতিক্রিয়া শুরু হয় যা শুধু আপনার প্রিফ্রন্টাল করটেক্স’কেই জাগিয়ে তোলে না বরং পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক ‘প্রাথমিক বিশাল ধাক্কা’ দিতে আপনাকে প্রস্তুত করে।আপনি যখন ঘড়িতে ‘অ্যালার্ম’ বাজার মুহূর্তে উঠে পড়েন, এটি আপনাকেব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রদান করে। উঠে পড়ার এই ছোট্ট কাজটি আপনারভেতরকার শক্তিকে প্রদর্শন করে। ‘এমা’ যেমনটি আবিষ্কার করেছেন “এটি আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে অধিক পরিমাণে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে”।’ট্রেসি’ ঠিক একই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ভোর পাঁচটার মধ্যে ঘুম থেকে জেগে রুল’টি ব্যবহার করে বিছানা থেকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে তুলে ‘জিমনেসিয়াম’ পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ‘ট্রেসি’ একটি ইতিবাচক দিন শুরু করতে পেরেছিলেন।আপনি যদি বিছানা থেকে নিজেকে তুলে আনতে না পারেন তাহলে আপনার জীবনে আর যে পরিবর্তনগুলো আপনি আনতে চান তা কখনোই আসবে না। আর আপনি যদি সকালগুলোর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করার জন্য সেই ছোট্ট পদক্ষেপটি গ্রহণ করতে পারেন, তবে তা শৃঙ্খলাবদ্ধ ঘটনার অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে যা আপনার জীবনের সর্বত্র পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
সাফল্যের জন্য নিজেকে কিভাবে তৈরি করবেন?
(১) বিছানায় যাওয়ার আগে আপনার ‘অ্যালার্ম’ ঘড়িটি অন্য একটি কক্ষে রাখুন এবং সচরাচর আপনার যে সময়ে ঘুম ভাঙে তার চাইতে ৩০ মিনিট আগে সময় ‘সেট’ করুন। যদিও বিছানা থেকে খুব ভোরে উঠে পড়াটা সহজ কাজ নয়। ‘প্যাটি’ যেমনটি বর্ণনা করেছেন “চ্যালেঞ্জটি সম্পূর্ণ করতে হলে অবশ্যই আপনার নিজেকে ধাক্কা দিতে হবে”। আপনি হয়তো ভেবে অবাক হচ্ছেন কেন আমি চাইছি এই অনুশীলনটি শুরু করার জন্য ৩০ মিনিট আগে আপনার ঘড়ির ‘অ্যালার্ম’টি ‘সেট’ করুন। সহজ কারণ। আমি চাই এটা আপনার কাছে কঠিন মনে হোক, আপনার যদি আক্ষরিক অর্থে সেভাবেই নিজেকে বিছানা থেকে টেনে তুলতে হয়।(২) আগামীকাল ভোরে যখন ‘অ্যালার্ম বাজবে চোখ খুলুন এবং উল্টো ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১, গায়ের চাদর/কম্বল ছুড়ে ফেলুন, উঠে দাঁড়ান, শোবার ঘর ছেড়ে বাইরে হেঁটে যান এবং আপনার দিনটি শুরু করুন, দেরি না করেই। মাথার উপর কোনো বালিশ নয়। প্রলম্বিত করা নয়। আবার ঘুমিয়ে পড়া নয় কিংবা বিছানায় ফিরে যাওয়া নয়।
পৃষ্ঠা:৪৩
এখানে যা ঘটতে পারে তা হলো, ‘অ্যালার্ম বন্ধ হওয়ার পর আপনি উঠে পড়ার ব্যাপারে কেমন বোধ করছেন তা নিয়ে চিন্তা শুরু করবেন। আপনার মনে হবে উঠে পড়ার এই ‘চ্যালেঞ্জ’টি বেকুব ধরনের। আপনি ক্লান্ত বোধ করবেন। নিজেকে আপনি এই বলে বোঝাতে চেষ্টা করবেন “আগামীকাল শুরু করা যাবে”। “‘টিম’-এর মতোই আপনি হয়তো উঠতে চান না। কিন্তু ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আপনাকে আপনার অনুভূতিগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করতে এমন কিছু হাতিয়ার দেবে যা আপনাকে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তে সাহায্য করবে।একবার যখন “টিম’-এর মাথায় ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ঢুকে পড়েছিল, তিনি অবিলম্বে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তে এবং ‘জিমনেসিয়াম’ যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমাদের অনেকের মাঝেই ‘কিছু ভালো লাগছে না’ জাতীয় আচরণ লক্ষ্য করা যায়। ঐ মুহূর্তগুলোতে রুল’টি আপনাকে ‘জেসিকা’র মতো কাজ করতে সহায়তা করবে। “জেসিকা’-র ভাষ্যমতে।আমি দেখেছি যে আমার ভেতরে যখন ‘কিছু ভালো লাগছে না’ জাতীয় আচরণ প্রতিদিন হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ায়, তখন রুল’টি আমাকে সাহায্য করে। আর তাই, আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।”এই ‘কিছু ভালো লাগছে না’ আচরণটি আপনার সারাদিনের নিয়ন্ত্রণভার নিয়ে নিতে পারে, আর তাই ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির ব্যবহার এত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বাকি জীবনে এর একটি অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে। ‘স্টিফেন’কে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন যিনি উঠে পড়ার চ্যালেঞ্জটি প্রথমবার চেষ্টা করে দেখার আগে আমাকে লিখেছিলেন।আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘সকালে উঠে পড়া’ কেমন ছিল? তিনি বলেছিলেন, যখন তিনি প্রথমবার চেষ্টাটি করেছিলেন এটি ছিল গাধার মতো’। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি তার জীবনে বিশাল একটি পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছিল। তার মানসিকতা কয়েক মিনিটের মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই বদলে গিয়েছিল। এবং যখন তিনি উঠে পড়া চ্যালেঞ্জ’টি অনুশীলন করা শুরু করলেন, তিনি একটি নতুন চাকরি পেলেন যা তাকে নতুন করে জীবন শুরু করার অনুমতি দেয়।”‘স্টিফেন’-এর জন্য ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতামটি ভেঙে গিয়েছিল এবং *স্বয়ংক্রিয় চালক’ বলে তার জন্য আর কিছু রইল না। এটাই সব পার্থক্য গড়ে দেয়। স্টিফেন’ শুধুমাত্র সকালে উঠে পড়লেন না, তিনি ‘সবসময় একই রকম ও কদাচিৎ নিজের ভালোলাগার পেছনে ছোটা’ জাতীয় ব্যক্তিত্ব থেকে একটি পাঁচ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্তে নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়া ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। এবং এর সবকিছুই শুরু হয়েছিল ঠিক যখন ‘অ্যালার্ম’টি বেজেছিল।আপনি যদি ঠিক সময়ে উঠে পড়তে পারেন, দিনটি শক্তভাবে শুরু করুন, এগিয়ে যাবার পরিকল্পনা করুন, নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে ভাবুন এবং নিজের উপর দৃষ্টিবদ্ধ করুন। এই সব কিছুই করুন আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে ডুবে যাওয়ার আগেই। তারপর আপনি খুব সহজে আরো অনেক কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণের এটা হলো প্রথম পদক্ষেপ।মনে রাখবেন, রুল’টি আমি তৈরি করেছিলাম বিছানা ছেড়ে উঠে পরার জন্য কিন্তু এটি তার চাইতেও বেশি কিছু। এটি আপনার শক্তিকে জাগ্রত করবে। জীবনকে ঝাঁকুনি দিতে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। ‘উঠে পড়া চ্যালেঞ্জ’টি চেষ্টা করে দেখার পর ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি নিজের সম্পর্কে কি আবিষ্কার করলেন তা জানিয়ে আমাকে লিখুন। আপনি হয়তো দেখতে পাবেন, “স্টিফেন’ যেমনটি বলেছিলেন- ‘এটি ছিল গাধার মতো’, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, একটি ছোট্ট পরিবর্তন বিশাল পার্থক্য তৈরি করে দেবে। এখন আপনি জানেন কেমন করে শুরু করতে হবে, মৌলিক স্তরে। পরবর্তী তিন অধ্যায়ে আমরা আরো গভীরে প্রবেশ করব এটা দেখার জন্য যে, রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে কি করে আপনি ক্রমবর্ধমান উৎপাদনশীলতা অনি, ভয়কে জয়, সুখী বোধ ও সম্পর্কগুলোকে সমৃদ্ধ করাসহ নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
পৃষ্ঠা:৪৪
সবচাইতে উৎপাদনশীল ব্যক্তিত্ব হওয়ার উপায়
ফাইভ সেকেন্ড রুল টিকে আমি “অ-জ্ঞানবাদী পরিবর্তন’ বলতে চাই। যে কোনো আচরণগত পরিবর্তন, আপনি যা আনতে চাইছেন, সেসব ক্ষেত্রে রুল’টি কাজ করবে। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির প্রয়োগ আপনার কল্পনার দ্বারা সীমাবদ্ধ। আপনি যদি কোনো ইতিবাচক নতুন অভ্যাস আত্মীকরণ করতে চান, তাহলে রুল’টি ব্যবহার করুন এবং নিজেকে ধাক্কা দিন।আপনি রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেকে ধ্বংসাত্মক আচরণ যেমন – জুয়া, মদ্যপান, ড্রাগ এবং আবেগতাড়িত আচরণ যেমন নিজ দলের ক্ষুদ্রতম ব্যবস্থাপনা, হতাশায় হাত কামড়ানো বা অতিরিক্ত টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন। বিধ্বংসী আচরণ থেকে আপনার দৃষ্টি সরাতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে শুধুমাত্র ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন। তারপর ঘুরে দাঁড়ান এবং এর থেকে দূরে সরে যান। অন্যসব ‘চ্যালেঞ্জ’-এর মতোই এটি খুব সাধারণ কিন্তু সহজ কিছু নয় এবং রুল’টি আপনাকে তা সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে।তিনটি আচরণগত পরিবর্তন, যে সম্পর্কে আমি ক্রমাগত ই-মেইল পেয়েছি স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা ওদীর্ঘসূত্রতা, বইটির এই অংশে আমি তাদের উল্লেখ করব। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণালব্ধ কৌশলের সঙ্গে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি ধাপে ধাপে জানতে পারবেন। আপনার জীবনের এই তিনটি প্রধান এলাকার উন্নয়ন কি করে করতে হবে।প্রথমত- আপনি আপনার স্বাস্থ্য উন্নয়নের গোপনীয়তা জানতে পারবেন। এটি আপনার পছন্দ হবে না কিন্তু কাজ করবে এবং বিশ্বজুড়ে সামাজিকমাধ্যমগুলোতে আপনি বিভিন্ন মানুষের পোস্ট দেখতে পাবেন যারা নিজেদের জন্য অসাধারণ কিছু করতে রুল’টি ব্যবহার করছেন।বিভীন্নত ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কি করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং আরো জানতে পারবেন দৃষ্টিপাত, উৎপাদন ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক সাম্প্রতিক গবেষণা সম্পর্কে। ঘুমিয়ে পড়’ বোতামটির বিষয়ে এখানে একটি বিশেষ তথ্য রয়েছে এবং এটি আপনার উৎপাদনশীলতার উপর কি প্রভাব বিস্তার করে তা জেনে সত্যিই অবাক হবেন।তৃতীয়ত- আপনি একটি বিষয়ে এখানে বিশদভাবে জানতে পারবেন যা আমাদের সবাইকে ভীষণ উৎপাত করে থাকে দীর্ঘসূত্রতা। এর দুটি রূপ সম্পর্কে এবং ১৯ বৎসরের গবেষণার সাথে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে কি পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে দীর্ঘসূত্রতাকে একবার এবং চিরতরে পরাস্ত করা যায় তা জানতে পারবেন।যা কিছুই আপনি শিখতে চলেছেন তার সবই তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োগযোগ্য এবং বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত। আপনার সম্ভাব্যতায় পৌছানোর জন্য নিজেকে অবশ্যই ধাক্কা দিতে হবে অন্য কোনো উপায় নেই। হয় আপনি দিনটিকে চালাবেন, না হয় দিনটি আপনাকে চালাবে।
পৃষ্ঠা:৪৫
(৯) স্বাস্থ্যের উন্নতি“মনোবল হলো সাফল্যের নিশ্চয়তা ছাড়াই শুরু করার অঙ্গীকার।” – ইয়োহান উলল্যান্ড ভন গ্যেটে
আমি যাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বার্তা পেয়েছি তাদের প্রায় অর্ধেকের মতো মানুষ স্বাস্থ্যের উন্নতি চান, আপনার আমার মতোই। পাতলা হওয়া, মোটা হওয়া, ওজন কমানো, কোলেস্টেরল কমানো, রোগমুক্তি, স্বাস্থ্যকর খাওয়া কিংবা শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধিসহ যাই হোক না কেন, আপনি এর জন্য ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করতে পারেন।আসলে স্বাস্থ্যবান হওয়ার চিন্তা আপনাকে স্বাস্থ্যবান করবে না। এমনকি ধ্যান, যা একটি মানসিক ব্যায়াম, তা সত্ত্বেও আপনাকে কাজটি করতে হবে। এর আশপাশে অন্য কিছু নেই। আপনাকে পদক্ষেপ নিতে হবে।বিষয়টি হলো, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার মতো আমাদের জীবনের আর কোনো এলাকার উপর এত পরিমাণ তথ্য, সহায়তা, গবেষণা, বিকল্প অথবা বিনামূল্য উপাদান নেই। আপনি ‘ডায়েট’ লিখে গুগল সার্চ দিতে পারেন, ২০টি প্রধান অনুসন্ধান ফলাফল ডাউনলোড করতে পারেন, মুদ্রণ ‘প্রিন্ট’ করে নিতে পারেন, তালিকাটি একটি ‘ডার্টবোর্ড’-এর উপর বসাতে পারেন এবং তারপর আপনি যে কোনো একটি ‘ডায়েট’ অনুসরণ করতে পারেন যেটিকে আপনার ডার্ট/ফলাটি আঘাত করবে। আপনি সত্যি যদি অনুসরণ করেন, এটি কাজ করবে। ‘ডায়েট’ বা খাদ্যটি কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো ‘ভায়েট’-এর ব্যাপারে আপনার অনুভূতিগুলো। এটি ব্যায়াম বা শারীরিক কসরতের ব্যাপারেও সত্যি।’এনা’র মতে “আমরা শারীরিক কসরত করার ব্যাপারটি কখনোই অনুভব করি না এবং স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠার পথে এই অনুভূতিগুলোকে প্রতিবন্ধক হিসেবে প্রবেশ করতে দিই”। ‘এনা’ ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে রুলটি ব্যবহার করে নিজেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন এবং ‘জিমনেসিয়াম’- এর সাইকেলে চড়ে বসেছিলেন। হ্যাঁ, আপনি হয়তো সাইকেলে প্যাডেলমারার সাথে সাথে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যাবেন, কিন্তু কি আসে যায়। এটা অন্তত ঘরে বসে অজুহাত তৈরি করার চাইতে অনেক ভালো।প্রতিটি খাবার, শারীরিক কসরত, ‘জিমনেসিয়াম’ পরিক্রমা, শরীরচর্চা ক্লাস, শারীরিক চিকিৎসা বিধি, আড়াআড়ি প্রশিক্ষণসূচি, ধ্যান কর্মসূচি এবং ক্রমাগত যোগব্যায়াম আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে। কিন্তু বিষয়টি হলো- আপনাকে এটি করতে হবে। এবং বিশ্বাস করুন, শারীরিক কসরত আমার খুবই অপছন্দ, বিশেষ করে বাইরে যখন বৃষ্টি হচ্ছে কিংবা খুব ঠাজ। আমি এটা ঘৃণা করি যেমন করি খুব ভোরে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়া। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির সাহায্য ব্যতীত আমি হয়তো কখনোই এটা করতে পারতাম না।স্বাস্থ্যবান হওয়া কেন এত কঠিন? ইতিমধ্যে আপনি উত্তরটি জেনে গেছেন – আপনার অনুভূতি। আপনিযদি রুটি খাওয়া ছেড়ে দিতে চান। তাহলে মুটিনমুক্ত খাদ্যভ্যাসের সাথে আপনার আর থাকা হবে না। আপনি যদি চিন্তা করেন যে পরবর্তী ১১৩ দিন কেমন করে সালাদ খেয়ে থাকবেন, তাহলে নিজেকে আপনি এটা ‘না’ করতে উদ্বুদ্ধ করবেন। আপনি যখন দিনের বিশদ শরীরচর্চা সূচিটি বিবেচনা করবেন, দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে আপনি উৎসাহ বোধ করবেন না।কোনো একটি খাদ্যভ্যাসের সাথে আটকে থাকা কি আপনাকে সুখী হতে সাহায্য করে? অবশ্যই। আপনার বন্ধুদের শারীরিক কসরত করতে দেখা কি আপনাকে সুখী করে? আপনি বিশ্বাস করুন, এটা করে। ‘মেলানি’কে জিজ্ঞেস করুন, যিনি রুলটি খুঁজে পাবার আগে বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। এবং একবার যখন চলতে শুরু করলেন, ‘মেলানি’ স্বাধীনতা ও বাঁধভাঙার অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন যা আমরা সবাই পেতে চাই।যে মুহূর্তে আপনি এই সত্যকে গ্রহণ করবেন যে আমরা শুধু এমন কিছু করতে চাই যা সহজ বলে মনে হয়, আপনি বুঝতে পারবেন সুস্থ হওয়ার গোপন সূত্রটিও খুব সহজ আপনি কখনোই এটি অনুভব করবেন না। শুধু ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং এগিয়ে যান।’জিমনেসিয়াম’ যাওয়া বন্ধ করা, চলার পথে বার্গারের জন্য প্রবেশ করা এবং ‘ফেসবুক’-এ সময় অপচয় করা খাদ্য তালিকা থেকে মিষ্টি বাদ দেওয়ান
পৃষ্ঠা:৪৬
চাইতে অনেক সহজ। আপনি যদি ওজন কমাতে চান, একটি খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। আপনাকে অবশ্যই একটি জিনিস করতে হবে অনুভূতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বন্ধ করা। আপনার অনুভূতি বিবেচ্য বিষয় নয়। আপনি যা করবেন তাই শুধু বিবেচা।’এরিকা’ এটা বুঝতে পেরেছিলেন। ওজন কমানোর যাত্রা শুরু করার পরও তিনি শরীরচর্চা করার অনুপ্রেরণা হারাচ্ছিলেন এবং ‘জিমনেসিয়াম’-এ না যাওয়ার একটি অজুহাত সবসময়ই তার প্রস্তুত থাকত। একবার যখন বুঝতে পারলেন যে শরীরচর্চা করতে যাওয়ার জন্য তিনি অনুভব করছেন না, ৫ সেকেন্ড জানালার সুযোগটি তিনি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তারপর নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য তা ব্যবহার করেছিলেন। অনুশীলনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মানসিক। আপনার মস্তিষ্ক ধাক্কা না দিলে আপনার শরীর কখনোই সচল হবে না। আর তাই ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আপনার স্বাস্থ্য বদলের একটি চমৎকার উপায়।রুলটি কেমন করে ব্যবহার করবেন:• ৫-৪-৩-২-১- এগিয়ে যান এবং ‘জিমনেসিয়াম’-এ ঢুকে পড়ুন।• ৫-৪-৩-২-১ এগিয়ে যান এবং ডোনাট’টি নামিয়ে রেখে একটি গ্রিল করা মুরগির টুকরো খান।• ৫-৪-৩-২-১ এগিয়ে যান এবং বেকারি থেকে সটকে পড়ুন, এমনকি যদি রুটি ও মিষ্টি আপনাকে কুহকিনীর মতো আকর্ষণ করে থাকে, তারপরও।সারা পৃথিবীজুড়ে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা আপনার চাইতে অনেক বেশি মোটা, অলস ও বেঢপ। যারা নিজেদের শরীর, মানসিকতা ও জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিতে রুল’টি ব্যবহার করেছেন। যেমন ‘চার্লি’। এই মানুষটি প্রথম যখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তার ওজন ছিল ৩৮৩ পাউন্ড এবং কোমড় ৫৪ ইঞ্চি। কল্পনা করুন তার ভয়ানক অবস্থা। আর এখন যদি আপনি তাকে দেখেন, বুঝতে পারবেন তিনি জীবনকে উদ্যাপন করছেন। আক্ষরিক অর্থেই তিনি এখন একজন ভিন্ন মানুষ। কেমন করে সম্ভব হলো? পানীয় পান করার মাধ্যমে, যার স্বাদ ছিল ঘাসের মতো। আপনি হয়তো বলবেন ওয়াক্ থু। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাকে এটাই করতে হয়েছিল। আজ তিনি ‘শক্তিশালী রস পান’ নামক একটি ব্যবসা পরিচালনা করছেন যা মানুষকে তাদের স্বাস্থ্যবান সংস্করণ হতে সাহায্য করছে।৫২৯ দিন যাবত এই লোকটি নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিয়েছেন। কেন? এই জন্য নয় যে তিনি এটা অনুভব করেছিলেন, এই জন্য যে তিনি বলেছিলেন এটা করবেন। কল্পনা করুন, ‘চার্লি’ বিগত ৫২৯ দিন যাবত পছন্দের পানীয় পান না করে ১৭৬ পাউন্ড ওজন কমানোর কথা চিন্তা করছেন।’আলেকজান্দ্রা’ও পানীয় পানের অভ্যাস দ্বারা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা খুঁজে পেয়েছিলেন। ‘চার্লি’ ও ‘আলেকজান্দ্রা’ বুঝতে পেরেছিলেন যে, আপনি যখন আপনার প্রবৃত্তিকে অনুসরণ করবেন যা আপনাকে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে একটি সুস্থ জীবনধারার দিকে পরিচালিত করে, আপনার জীবনে তখন পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।কোনো কিছু শুরু করতে প্রয়োজন মনোবল। এর সাথে লেগে থাকতেএবং পৃথিবীর সাথে একে শেয়ার করতে অবশ্যই প্রয়োজন হবে মনোবলের। এটাই ‘প্যাকিনাম’ আমাকে বলেছিলেন। মনোবল হলো যা আপনার ওজন কমাতে প্রয়োজন কারণ কখনো কখনো ‘প্যাকিনাম’ যেমনটি লিখেছেন “যেখানে আপনি আছেন এবং যেখানে আপনি যেতে চান, এই দুইয়ের মধ্যকার পার্থক্য এত বিশাল মনে হয়, যার জন্য, যে পরিমাণ কাজ আমাদেরকে করতে হবে আমরা এমনকি তার মুখোমুখিও হতে পারি না”। ‘প্যাকিনাম’ লিখেছিলেন:”হাই মেল,জীবনভর আমি অতিরিক্ত ওজন বহন করেছি। এখন আমি আমার জীবনে প্রথমবারের মতো ডায়েটিং করার চেষ্টা করছি। মনে হচ্ছে আমি হারিয়ে গেছি অথবা আটকা পড়েছি, কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার ভেতরে একটি
পৃষ্ঠা:৪৭
বিশাল নিরাপঞ্জহীনতা ও অরক্ষিত বোধ রয়েছে। আপনি কি দয়া করে এর ব্যাখ্যা দিতে পারেন?”সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো- আপনি এই মুহূর্তে যা এবং ভবিষ্যতে যা হতে চান, এই দুইয়ের মধ্যকার পার্থক্য এত বড় মনে হতে পারে যে ফাঁকটি অতিক্রম করা আপনার কাছে অসম্ভব মনে হবে। এভাবে অনুভব করাটাই স্বাভাবিক, তবে অনুভূতিগুলোকে আপনার মনের উপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ করে দেওয়ার অর্থ হবে নিজেকে অবমাননা করা।এজন্যই আমি ‘চার্লি’কে ভালোবাসি। যে কেউ ধাক্কা দিয়ে স্কেল/মানদণ্ডের সংখ্যাটিকে বদলে দিতে পারে। আজ কিছু শুরু করতে চাইলে ‘চালি’ আপনার। জন্য একটি উদাহরণ হতেপারে। এবং এর সাথে লেগে থাকার জন্য তার কাজের ফলাফল আপনাকে উৎসাহিত করবে।আমার কাছে অন্য কেউ একজন আছেন যার সাথে আমি চাই আপনি দেখা করুন। ‘মার্ক’, নিজেকে দায়বন্ধ রাখার জন্য তার ‘ইনস্টাগ্রাম’ বন্ধুদের ব্যবহার করেছেন। মাসে ৫,০০০ বুকডন? রক্ষা করুন। আমি প্রতিদিন খুব বেশি হলে ৫টি দিতে পারি। নিয়মিত শরীরচর্চা এবং শৃঙ্খলা ‘মার্ক’কে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ও বিক্রয়ের উপর একটি বই লেখার ব্যক্তিগত ও পেশাগত লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে। ‘মার্ক’-এর প্রাত্যহিক শরীরচর্চা, বইটি লিখে শেষ করার জন্য তার মস্তিষ্ককে প্রস্তুত হতে সহায়তা করবে। এগিয়ে চলুন মার্ক। আপনার বইটি বাজারে আসার সাথে সাথে আমাদের জানাবেন।মাসে ৫,০০০ বার বুকডন একটু হয়তো বাড়াবাড়ি কারণ এটা আক্ষরিক অর্থে আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। অসুবিধা নেই। একটি শারীরিক সক্ষমতার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আপনার কি মত? ‘আনুক’-কে দেখুন, এটি তার তৃতীয় সপ্তাহ। তিনি আমাদের স্বাস্থ্য ও শরীরচর্চা সম্পর্কে সহজ সত্যটি জানাচ্ছেন “আমি সত্যি সত্যি এটা অনুভব করতে পারিনি কিন্তু যে করেই হোক কাজটি আমি করেছি। বুম বুম বুম”। ‘আনুক’ আপনাকেও বুম! আপনি বোধ করেননি অথচ তারপরও কাজটি করতে নিজেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। অসাধারণ!আপনি যদি এটি বাস্তবে কল্পনা করে বিহ্বল বোধ করেন তাহলে ‘এলিস’- এর সাথে দেখা করতে পারেন। ‘এলিস’ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ১৯ বৎসরবয়সী একজন নারী, যিনি আমাকে লিখেছিলেন কারণ তিনি সত্যিই একটি খারাপ অবস্থায় ছিলেন। এখানে তিনি সেটি বর্ণনা করেছেন:”আমার উদ্বেগ ও উন্মুক্ত স্থান ভীতি ছিল, যারা সত্যিই আমার উপর ছড়ি ঘোরাত। আমার প্রায় ৩০ পাউন্ড ওজন বেড়ে গিয়েছিল যা আমাকে আরো দুর্দশাগ্রস্ত করে তুলেছিল এবং আমি আরো অধিক পরিমাণে ঘরকুণো হয়ে পড়ছিলাম। উপরন্তু আমার বাবা-মা চাচ্ছিলেন যে একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যলয় থেকে আমি যেন একটি নির্দিষ্ট ডিগ্রি অর্জন করি যা আমার উপর চাপ সৃষ্টি করছিল এবং তাদের খুশি করতে এ ব্যাপারে নিজেকে আমি রাজি করিয়েছিলাম। আমিআপনার ভিডিও দেখেছি এবং এটি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে- সত্যিই কি আমি এটা চাই? আমি কি আমার আকৃতি নিয়ে সন্তুষ্ট? আমি যা চাই তার জন্য আমি কি যোগ্য? মিথ্যে বলব না, আমার কিছুটা সময় লেগেছিল কিন্তু প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার বক্তৃতা আমি শুনেছি, অতঃপর উদ্বুদ্ধ হয়েছি।” তার প্রবৃত্তি ছিল নিজের সঙ্গে বাস্তববাদী হওয়ার। নিজেকে প্রমাণ করার এবং নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার আকুতি ছিল তার। পরিবর্তীত হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার এবং তিনি তা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি বাবা- মা’র সঙ্গে কথা বলেছিলেন কিন্তু নিজের বড় ধরনের রূপান্তর করতেও সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন:”আমার পছন্দের বিশ্ববিদ্যলয় ও কোর্স গ্রহণ করেছি এবং এই অক্টোবরে তা শুরু হওয়ার কথা। আমার ওজনের বিষয়টি গত ডিসেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত আমি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে ২৮ পাউন্ড ওজন কমিয়েছি, একটি ভালো শরীরচর্চা সূচি অনুসরণ করছি, আর এই সবকিছুর কৃতিত্ব আপনার ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির।আশা করি আপনার বেশি সময় নিচ্ছি না কিন্তু আমি আপনাকে সত্যিই বলতে চাইছি আপনার বক্তৃতা আমাকে কতটা প্রভাবিত করেছে। এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া বাকি কিন্তু যখনই আমি নিজেকে হতাশ মনে করি, আপনার বক্তৃতা শুনি।”
পৃষ্ঠা:৪৮
বিষয়টি এরকমই। ‘এলিস’ যা করেছিলেন তা করতে মনোবল লাগে। আপনি যা করতে চান তার জন্য নিজের সঙ্গে সৎ হতে প্রয়োজন হবে মনোবল। নিজেকে মূল্যায়ন করে কোনো কিছু শুরু করতে হলে ঢাই মনোবল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম পদক্ষেপটি সবচেয়ে কঠিন। আপনি যদি বগি থেকে পড়ে যান বা পিছলে পড়েন, আপনার সুযোগ আছে ফিরে আসার। তবে এমন দিনও আছে যখন আপনি কিছু অনুভব করবেন না। মনে রাখবেন, আপনি আবারো সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারেন, পাঁচ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে। ‘ক্রিস্টিন’কে জিজ্ঞেস করে দেখুন। তিনি তার ইনস্টাগ্রাম পোস্ট’-এ সত্যিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন “প্রথম পদক্ষেপ বিছানা ছেড়ে বের হয়ে আসা কঠিনতম, কিন্তু মূল্যবান। আপনি কতবার অনুশীলন করেছেন তা কোনো বিষয় নয়। প্রতিটি দিন শুরু করাই হলো কঠিনতম অংশ”।মনে আছে আমি বলেছিলাম যে, আমি চাই আপনি রুল’টি উঠে পড়ার ‘চ্যালেঞ্জ’টির মাধ্যমে পরীক্ষা করুন? এভাবেই আপনি ‘সক্রিয়করণ শক্তি’র অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। এটা হলো কিছু শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যা ‘ক্রিস্টিন’ উল্লেখ করেছেন। এবং তিনি একদম ঠিক। সত্যি বলতে কি, আপনার অজুহাতগুলোকে পার হয়ে নিজেকে ধাক্কা দিতে শেখার চাইতে মূল্যবান আর কিছু নেই এবং এর মাধ্যমে জীবন, শরীর অথবা আপনার স্বপ্ন দেখা ভবিষ্যতের একধাপ কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব।আপনার স্বাস্থ্য হয়তো ‘জিম’-এ যাওয়ার ‘চ্যালেঞ্জ’ নেওয়ার মতো নয়। এটা হয়তো আরো ভয়ঙ্কর কিছু, যেমন কোনো অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। আপনি একা নন। প্রতিনিয়তঃ আপনার রোগমুক্তির জন্য, বাঁচার জন্য ও শক্ত থাকার জন্য প্রয়োজন মনোবল। অনেকেই আমাকে তাদের ক্যান্সারের সাথে সংগ্রাম ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে লিখেছেন এবং জানতে চেয়েছেন কেমন করে তারা তাদের যুদ্ধ করার শক্তি ও মনোবল ফিরে পাবেন। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি এমন একটি হাতিয়ার যা আপনি আপনার ভেতরের শক্তি খুঁজে বের করে গুরুতর অসুস্থতার মুখোমুখি হওয়ার মতো কাজে ব্যবহার করতে পারেন।’গ্রেগ’ একজন অনুসরণ করার মতো বিশাল ব্যক্তিত্ব। তৃতীয় স্তরের ক্যান্সার। আর তিনি কি করলেন? ক্যান্সার নির্ণয়ের পর ১০টি ‘ম্যারাথন’ দৌড়ে অংশগ্রহণ। কি অবিশ্বাস্য!এটি হয়তো ‘ম্যারাথন’ দৌড়ে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু নয়। আপনার জন্য স্বাস্থ্য মানে হয়তো বাৎসরিক ‘ম্যামোগ্রাম’ (বিশেষ করে টিউমার শনাক্তকরণের জন্য তোলা বুকের এক্স-রে ছবি) সম্পন্ন করার মতো সাহসী হওয়া। ‘এমি রোবাচ’, ‘গুডমর্নিং আমেরিকা’র উপস্থাপক’কে যখন বলা হয়েছিল স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাসে তার ‘ম্যামোগ্রাম’ প্রক্রিয়াটি প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য, তার প্রাথমিক মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া ছিল- “কোনো উপায় নেই, কি করে সম্ভব?” রোগটির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না আর তিনি এটাও চাননি যে সবাই ভাবুক তিনি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। ‘এমি’ পরামর্শের আশায় তার সহকর্মী উপস্থাপক ‘রবিন রবার্টস’ ও একজন স্তন ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির দিকে ঘুরে তাকালেন। ‘এমি’ কখনোই ‘ম্যামোগ্রাম’ করেননি কথাটি বলার পর ‘মি. রবিন’ উত্তর দিলেন:””এমি’, এটিই মূল বিষয়। শুনুন, চিকিৎসা বিষয়ক কোনো প্রক্রিয়ায় আপনাকে মানুষের দেখতে পাওয়াটা কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে তা আমার চাইতে ভালো কেউ বুঝবে না। কিন্তু, একটি জীবন রক্ষা করতে পারাও অসাধারণ ব্যাপার। আপনাকে কখনোই অনুশোচনা করতে হবে না। আর আমি আপনাকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যে অন্তত একটি জীবন হলেও রক্ষা পাবে। আপনার ‘ম্যামোগ্রাম’ প্রক্রিয়া শুরু করা এবং এর ফলাফল সবাইকে জানানোর মাধ্যমে কেউ না কেউ জানতে পারবে যে তিনিও ক্যান্সার আক্রান্ত যা তার জানা ছিল না। ‘এমি’, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ৮০% নারীর এ সংক্রান্ত কোনো পারিবারিক ইতিহাস নেই।”‘এমি’ তাৎক্ষণিকভাবে মি. রবিন’-এর প্রসাধন কক্ষে বসে মনস্থির করলেন যে তিনি ‘ম্যামোগ্রাম’ করাবেন। তিনি প্রক্রিয়াটি সরাসরি সম্প্রচার করলেন এবং এক সপ্তাহ পর যা তিনি টেলিভিশনে সম্প্রচার করেছিলেন, তা তার জীবন বাচিয়ে দিল। কারণ ‘ম্যামোগ্রাম’-এ তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ল। তারপর ‘এমি’ দুটি ‘সার্জিকাল অপারেশন’ ও আট রাউন্ড ‘কেমোথেরাপি’ সম্পন্ন করেছিলেন এবং আজ তিনি ক্যান্সারযুক্ত।’এমি’ তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করেননি। তিনি একটি জটিল সময়ে ‘মি. রবিন’-এর কাছ থেকে ধাক্কা খেয়েছিলেন এবং পাঁচ সেকেন্ড সময়ের একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ধন্যবাদ
পৃষ্ঠা:৪৯
যে তিনি তা করেছিলেন। আপনি ‘এমি’র মতো সহকর্মী পাওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট ভাগ্যবান নাও হতে পারেন কিন্তু সবসময় নিজেকে এই ধাক্কাটি দিতে পারেন, ৫-৪-৩-২-১ এগিয়ে যাও।নিজের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্পূর্ণই কাজের উপর নির্ভরশীল। আপনি হয়তো ‘চার্লি’র মতো এতটা ওজন কমাতে পারবেন না অথবা ‘গ্রেগ’-এর মতো ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিতে পারবেন না, কিন্তু ডেন্টিস্টের কাছে যেতে, শরীরচর্চা করতে অথবা ‘ম্যামোগ্রাম’ বা ‘প্রোস্টেট’ পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে আপনি নিজেকে ধাক্কা দিতে পারেন। যেসব মানুষের কথা এখানে জানলেন, তাদের মতো যদি আপনি নিজেকে ধাক্কা দিতে পারেন, আপনার বদলে দেয়া জীবন আপনার নিজের হবে।আমরা যেরকম পছন্দ করি, জীবন তাই। এই বইয়ে আমি বারবার উল্লেখ করেছি যে, আপনি যা করতে চান তা নির্বাচন করতে পারেন। আপনি যদি স্বাস্থ্যবান হতে চান তাহলে আপনাকে সোজাসুজি কিছু কাজ করতে হবে। অনুসরণ করার জন্য একটি পরিকল্পনা হাতে নিন, যে কোনো পরিকল্পনা, অতঃপর ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং এগিয়ে যান। পরবর্তীতে একমাত্র যে জিনিসটি আপনাকে নির্বাচন করতে হবে তা হলো প্রতিদিন কাজটি করে যাওয়া এমনকি, ‘আনুক’ যেমনটি বলেছেন “আপনি যদি সত্যি সত্যি তা অনুভব না-ও করে থাকেন”।আমি বলেছি, আপনাকে যা করতে হবে তা খুবই সাধারণ কাজ। কিন্তু বলিনি যে এটা হবে সহজ। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এর মূল্য আছে। শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্য একটি সাধারণ নিয়মের অধীন আপনাকে এটি অনুভব করতে হবে না, আপনাকে শুধু কাজটি করতে হবে।
(১০) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি “আপনি কিছু করার আগে কোনোকিছুই কাজ করবে না।” – মায়া এজেলো
একটি শব্দে উৎপাদনশীলতাকে বর্ণনা করা যেতে পারে ফোকাস / কেন্দ্রবিন্দু। উৎপাদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দু’ধরনের ‘ফোকাস’ রয়েছে: (১) বিভ্রান্তি নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা যাতে করে আপনি হাতে থাকা কাজের উপর প্রতি মুহূর্তে ‘ফোকাস’ করতে পারেন এবং (২) বড় মাপে আপনার কাছে সত্যি কি গুরুত্বপূর্ণ, তার উপর ‘ফোকাস’ করার দক্ষতা যাতে অর্থহীন কাজের পেছনে আপনার সময় নষ্ট না হয়। আমরা দু’ধরনের ‘ফোকাস’ই বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি। বিষয়টির উপর সর্বশেষ গবেষণার দিকে তাকাব এবং প্রয়োজনের সময় আপনার কাছে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার উপর ‘ফোকাস’ করা ও বিভ্রান্তি নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা অর্জন করার জন্য ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি কেমন করে ব্যবহার করতে হবে তা শিখব।
বিভ্রান্তি/বিচ্যুতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঐকান্তিক হওয়া প্রয়োজন
বিভ্রান্তি নিয়ন্ত্রণ/ব্যবস্থাপনা অনেকটা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য অনুসরণ করার মতো। আপনি এটা কখনোই অনুভব করতে পারবেন না। আপনার শুধু কাজটি করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। আপনি ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে আপনার ফোনের প্রতি আসক্তি, মুঠোফোনে বার্তা পাঠানো, কিংবা ‘ই-মেইল’-এর উত্তর দেওয়া এক ধরনের বিভ্রান্তি…. এবং একে থামানো আপনার কাছে অসম্ভব মনে হয়। যদিও আপনি জানেন এসব বন্ধ করা উচিত। আপনার ফোন’টিকে নীরব করুন এবং প্রতি ৫ মিনিট অন্তর ‘ই-মেইল’ চেক করা বন্ধ করুন। এসব জ্ঞান আপনার আচরণ পরিবর্তন করবে না। এটা কতটা খারাপ সেই সংক্রান্ত গবেষণার দ্বারা আমি আপনাকে কবর দিয়ে দিতে পারি কিন্তু তাতে করে
পৃষ্ঠা:৫০
আপনার আচরণ পরিবর্তীত হবে না। এখানেই ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি চলে আসে। আপনাকে এটা চাইতে হবে না, আপনাকে শুধু এটা করার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিতে হবে।প্রথমত, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে বিভ্রান্তি কোনো ভালো জিনিস নয়। যে কোনো ধরনের বাধা আপনার উৎপাদনশীলতার জন্য মৃত্যুচুম্বন স্বরূপ। গবেষণায় দেখা গেছে অফিসের খোলা স্থানসমূহ ‘ফোকাস’ করার জন্য সহায়ক নয়। ‘ই-মেইল’ চেক করা একটি আসক্তিতে পরিণত হতে পারেকারণ আচরণগত গবেষকরা একে ‘এলোমেলো প্রতিদান’ নাম দিয়েছেন। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনার লক্ষ্যসমূহ প্রজ্ঞাপণ দিয়ে নাড়াচাড়া করার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে।অতঃপর আপনি তাদের মুছে ফেলুন। আমি দাবি করছি না যে এটাই একমাত্র উপায়। আমি আপনাকে এটাও বলব না যে এটি করা খুব সহজ। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনি যদি ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করেন, কাজটি আপনি সত্যি করতে পারবেন। আপনি যখন বিভ্রান্তিসমূহ মুছে ফেলতে শুরু করবেন এবং আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর প্রতিমুহূর্তে ‘ফোকাস’ করতে সক্ষম হবেন, আপনার কোনো ধারণা নেই এটা আপনাকে কি পরিমাণ সাহায্য করবে। ‘কারেন’ আমাকে যেমন লিখেছিলেন।”আপনি জানেন না, প্রতিটি দিন আপনি আমাকে কি পরিমাণ সাহায্য করেছেন। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ।সম্প্রতি আমি আমার হাইস্কুল বয়সী কন্যা ‘কেন্ডাল’-এর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলছিলাম। সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পছন্দ করে তবে মুঠোফোন নিয়ে এত বেশি সময় কাটায় যে এতে করে তার পড়াশোনায় গুরুতর বিচ্যুতি ঘটছে। তাছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া নামকরা ব্যক্তি ও সুপারমডেল’দের ‘পোস্ট’-এর সাথে সবসময় নিজেকে তুলনা করতে গিয়ে অনিরাপদ বোধ করে।আপনার আমার মতো সেও জানত যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তার উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে বিশেষ করে যখন হোমওয়ার্কের উপর তার অনেক বেশি ‘ফোকাস’ করা দরকার। ‘কেন্ডাল’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সামাজিক মাধ্যমগুলোর বিভ্রান্তি নিয়ন্ত্রণ করার সর্বোত্তম উপায় হলো এর প্রলোভন থেকেনিজেকে মুক্ত রাখা আর তাই সে তার ফোন থেকে ‘ইনস্টাগ্রাম’-এর ‘ফটো শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন’-এর মতো জিনিসগুলো মুছে ফেলেছিল। তার ভাষায়:”এগুলো মুছে ফেলার পর পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে আমার জীবনে এসব কতটা গুরুত্বহীন ব্যাপার ছিল। এই ‘অ্যাপ’গুলো যতক্ষণ আমার ফোনে ছিল, ততক্ষণ একধরনের অনিচ্ছাকৃত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এগুলোর উপর ক্লিক করা এবং তাকিয়ে থাকা। এখন যখন ‘অ্যাপ’গুলো আর নেই, এগুলোর দিকে তাকানোর আগ্রহও আমার আর নেই।”বিভ্রান্তি শুধুমাত্র প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই হয় না। ‘সারাহ’ দেখতে পেলেন বিশৃঙ্খলা তার জীবনে একটি অন্যতম প্রধান বিচ্যুতি এবং তিনি এ ব্যাপারে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি গোপনে জমে থাকা আবেগগুলোকে পরাস্ত করার জন্য ‘ফাইভ সেকেন্ড কল’-টি ব্যবহার করেছিলেন এবং প্রচুর অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দান, পুনর্ব্যবহার, বিক্রনা এমনকি ঋধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তার মতে “অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ভেতর ডুবে যাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার অনুভূতি অসাধারণ”।সুতরাং আপনি যদি ‘কেন্ডাল’-এর মতো সামাজিক মাধ্যম দ্বারা কিংবা ‘সারাহ’র মতো অপ্রয়োজনীয় জিনিস দ্বারা বিভ্রান্তির ভেতর নিজেকে খুঁজে পান, তবে সেটি হবে একটি বিশাল মুহূর্ত। জেগে উঠুন এবং এটাই সময়, আপনার পরিবেশটিকে ৫-৪-৩-২-১ একটি ঝাঁকুনি দিন। বিভ্রান্তি দূর করুন। এটা সত্যি খুব সহজ কাজ এবং এর পুরস্কারগুলো শক্তিশালী।দ্বিতীয় ধরনের ‘ফোকাস টিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরো কঠিন ও শক্তিশালী কাজ করতে হবে বড় মাপের ‘ফোকাস’। এখানে একটি জিনিস আছে, যা আমি ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছি এবং এটি আমার বড় মাপের ‘ফোকাস ‘টিকে অন্য যে কোনো কিছুর চাইতে প্রসারিত করেছে, আর তা হলো আমার সকালগুলোর নিয়ন্ত্রক হওয়া।
আপনার সকালগুলোর মালিক হোন আপনি
আপনার সকালগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ উৎপাদনশীলতার জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আমি যেভাবেকরেছিলাম তা হলো।
পৃষ্ঠা ৫১ থেকে ৬০
পৃষ্ঠা:৫১
সকালের জন্য একটি কার্যসূচি তৈরি করা। ‘এলিসা’ তার সকালের কার্যসূচি বাস্তবায়ন করার পর খেয়াল করলেন যে, তিনি তার দিনটিকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছেন। ‘এলিসা’ ঠিক যেমনটি বলেছেন “আপনিযখন সকালের জন্য একটি কার্যসূচি তৈরি করেন এবং তা অনুসরণ করেন, আপনি আসলে আপনার উদ্দেশ্যগুলোকে ছকে সাজান।”আমার সকালের কার্যসূচির জন্য আমি ‘ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়’-এর অধ্যাপক ‘ড্যান অ্যারেন্সির’র কাছে ঋণী। তার মতে সম্পূর্ণ জেগে ওঠার পর দিনের প্রথম ২/৩ ঘণ্টা আপনার মস্তিষ্কের শ্রেষ্ঠ সময়। সুতরাং, আপনি যদি ভোর ৬টায় বিছানা থেকে উঠে পড়েন তাহলে আপনার ব্যস্ত চিন্তা ও উৎপাদনশীল সময় হলো সকাল ৬:৩০মি, থেকে সকাল ৯:০০টা পর্যন্ত।আপনার ঘরের জিনিসপত্র যদি আমাদেরগুলোর মতো হয়, তাহলে বেশির ভাগ সকালেই তা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। কুকুরকে খাওয়ানো, নাশতা তৈরি করা আর তিনটি বাচ্চাকে তৈরি করে স্কুলে পাঠাতে পাঠাতে আমার সকালের সবচেয়ে উৎপাদনশীল একটি ঘণ্টা চলে যায়। আর তাই সকালগুলোর ব্যাপারে আমাকে আরো সতর্ক হতে হবে যদি আমি আমার দিনটির মালিক হওয়ার পরিকল্পনা করে থাকি। আর এটা শুরু করতে হবে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ার মাধ্যমে যাতে করে দিনটি আমাকে অপহরণ করে নেওয়ার আগে বড় মাপের উদ্দেশ্যগুলোর উপর ‘ফোকাস’ করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় হাতে পাওয়া যায়। আমি কিভাবে নিয়ন্ত্রক হয়ে আমার অগ্রাধিকারগুলোর উপর ‘ফোকাস’ করার জন্য নিজের কার্যসূচি পরিবর্তন করেছিলাম, এখানে তা উল্লেখ করা হলো:আপনি নিশ্চয় জানেন উৎপাদনশীলতার জন্য একটি ভালো ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি, আপনি জানেন না যে কিভাবে জেগে উঠবেন যা আপনার ঘুমের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, আপনি যখন ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতামটি চাপেন, এর একটি নেতিবাচক প্রভাব আপনার মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও উৎপাদনশীলতার উপর পড়ে যা ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আপনাকে যা জানতে হবে:আমরা একটি চক্রের মধ্যে ঘুমাই যা সম্পূর্ণ হতে সময় নেয় ৯০ থেকে ১১০ মিনিট পর্যন্ত। আপনি জেগে ওঠার প্রায় ২ ঘন্টা আগে এই ঘুমচক্র সমান্ত হয় এবং আপনার শরীর ধীরে ধীরে উঠে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। আপনার ঘড়ির অ্যালার্ম যখন বেজে ওঠে, আপনার শরীর তখন উঠে পড়ার জন্য প্রস্তুত। এখন আপনি যদি ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতামটি চেপে দিয়ে আবার শুয়ে পড়েন, তাহলে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে নতুন একটি ঘুমচক্রে প্রবেশ করতে বাধ্য করছেন যা ৯০ থেকে ১১০ মিনিট দীর্ঘ।১৫ মিনিট পর যখন ‘ঘুমি পড়’ অ্যালার্মটি বন্ধ হয়ে যায় তখন আপনার মস্তিষ্কের ‘কটিক্যাল’ অংশ যা সিদ্ধান্ত, মনোযোগ, সতর্কতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী, সেটি তখনো ঘুমচক্রে অবস্থান করছে। এটি সহসাই উঠে পড়তে পারবে না ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতামটি যা শুরু করেছিল তা শেষ করতে এর আরো ৭৫ মিনিট সময় লাগবে।
আমার প্রাত্যহিক কার্যসূচি:(১) অ্যালার্ম বেজে ওঠার সাথে সাথে আামি উঠে পড়ি
আমরা এর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছি যখন আপনি উঠে পড়ার ‘চ্যালেঞ্জ’টির ব্যাপারে শিখছিলেন। অ্যালার্ম বাজা, উঠে পড়া, এবং শেষ। ব্যস্ত উৎপাদনশীলতার জন্য কখনোই ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতামটি চাপবেন না। এর একটি স্নায়ুতাত্ত্বিক কারণ রয়েছে যা আমি এই বইটির জন্য গবেষণা করার সময় শিখেছি।নিদ্রাহীনতা অবস্থাটি ঝেড়ে ফেলতে এবং আপনার জ্ঞান-নির্ভর কার্যক্রম তাদের পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পেতে চার ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর তাই ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতামটি টিপে দেওয়ার পর আপনি যখন উঠে দাঁড়ান তখন কিঞ্চিৎ মাতাল বা টলটলায়মান বোধ করেন। এর কারণ এই নয় যে আপনার পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি। এর কারণ আপনি ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতামটি টিপে একটি নতুন ঘুমচক্র শুরু করার পর তা আবার বিঘ্নিত করেছেন। যেদিন আপনি এই কাজটি করবেন, কোনোভাবেই আপনি সেদিন আপনার সেরা অবস্থায় থাকবেন না।সুতরাং, এই ব্যাপারে আমি খুবই সিরিয়াস যখনই অ্যালার্মটি বন্ধ হবে, আর ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতাম নয়। উঠে পড়ুন। কোনো সংকোচ ছাড়াই। এখানে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই।
পৃষ্ঠা:৫২
(২) আমি বাথরুমের দিকে হাঁটতে শুরু করি এবং অ্যালানটি বন্ধ করে দিই
আমার এবং আমার স্বামীর ফোন কিংবা অ্যালার্ম ঘড়ি আমাদের শোবার ঘরে কিংবা কোনো স্ট্যান্ডের উপর থাকে না। থাকে বাথরুমে। খুব কাছেই, তাই কেউ ফোন করলে কিংবা ভোরে অ্যালার্ম বাজলে আমরা শুনতে পাই। কিন্তু যথেষ্ট দূরে, তাই এর প্রলোভনে পড়ি না। আমার ফোনটি যদি বিছানার পাশে স্ট্যান্ডের উপর থাকে, তাহলে হয়তো কোনো রকম চিন্তা ছাড়াই আমি সেটি হাতে তুলে নিতে পারি এবং বিছানায় বসে ই-মেইলগুলো পড়া শুরু করতে পারি। আপনি জানেন আপনিও একই কারণে দোষী। এটি নাগালের মধ্যে থাকলে কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই হাতে তুলে নেয়া সহজ। একটি বিশাল সংখ্যক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিছানা থেকে উঠে পড়ার আগে ব্যক্তিগত ই- মেইল’ পড়ে থাকেন এবং ‘ডেলয়েট রিপোর্টস’-এর এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অর্ধেকই মাঝরাতে জেগে ওঠে এবং তাদের ফোনগুলো পরীক্ষা করে থাকে। আমার ফোন বা অ্যালার্ম ঘড়িটি বাথরুমে রেখে আসার মাধ্যমে এর কাছে পৌঁছানোর অভ্যাসে নিমজ্জিত হওয়াকে আমি কঠিন করে দিয়েছি এবং রাতে একটি ভালো ঘুম দেওয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছি।
(৩) আমি দাঁত ব্রাশ করি এবং সামনের দিনটির উপর ফোকাস করি
আমি মুখ ধোয়া এবং দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস’ করার জন্য ৩ থেকে ৫ মিনিট সময় ব্যয় করি, অতঃপর নিজের জন্য সত্যি আমি কি চাই ও তার জন্য কি করতে হবে এবং বড় মাপের লক্ষ্যগুলোর ব্যাপারে আমার চিন্তা-ভাবনার উপর ‘ফোকাস’ করি। এটা কার্যতালিকা নয়। এটা হলো অবশ্য করণীয় তালিকা। এটা সেই মুহূর্ত যখন আমি সচেতনভাবে আমার চিন্তা-ভাবনাগুলো জড়ো করি, এক বা দু’টি বিষয় নিয়ে ভাবি যা করার ব্যাপারে আমি হয়তো কিছু বোধ করি না কিন্তু যা আজই আমাকে করতে হবে আমার লক্ষ্য, স্বপ্ন এবং ব্যবসায়িক উন্নতির জন্য। গবেষকরা যাকে বুদ্ধিদীপ্ত/স্মার্ট লক্ষ্য নামে ডাকেন (নির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, বাস্তব এবং সময়োপযোগী)। আমি শুধু বলতে পারি, যা কিছু আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাপারে এগুলো আগামী অগ্রগতির নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। সাধারণতঃ এটা অনেকটা ‘জঘন্য’ কিছু যা আমি করারব্যাপারে অনুভব করি না, ‘মরফিন’ যেমনটি বর্ণনা করেছেন:”আপনার “টেড টক’ দেখেছি। আজকে ১ ঘন্টা আগেই উঠে পড়েছি এবং শেষ পর্যন্ত করার ব্যাপারে অনুভব করি না এমন কিছু ‘জঘন্য’ কাজ করতে নিজের উপর জোর খাটাতে পেরেছি, যা খুব মূল্যবান। ধন্যবাদ মেল।”
(৪) আমি কাপড় পড়ি, বিছানা ওববি, রান্নাঘয়ে যাই এবং এককাপ কফি চালি
আপনি কি খেয়াল করেছেন যে আমার এখনো শেষ হয়নি? আমি আমার ফোনটির দিকে তাকাইনি অথবা ‘ই-মেইল’ পরীক্ষা করার জন্য অন্তর্জালে প্রবেশ করিনি। কারণ আমি জানি, যে মুহূর্তে এটি করব, আমি আমার ‘ফোকাস’ হারাব। যে মুহূর্তে আপনি ই-মেইল’ পরীক্ষা করতে যাবেন, সংবাদপত্র পাঠ কিংবা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বেন আপনার সামনে অন্য কারো অগ্রাধিকারসমূহ লাফ দিয়ে পড়বে। আপনার কি মনে হয় ‘বিল গেটস্’ কিংবা ‘অপরাহ উইনফ্রে’ বিছানায় শুয়ে শুয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোর ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ান? না, এবং আপনারও করা উচিত নয়। আপনার নিজেকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সারাদিনের পরিকল্পনা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত ‘ই-মেইল’ চেক করা বন্ধ রাখুন।
(৫) ১ থেকে ৩ পর্বত কাজগুলো বা অবশ্য করণীয় এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ তা লিখে ফেলি
১ থেকে ৩ পর্যন্ত কাজগুলো যা আজ আমাকে অবশ্যই করতে হবে বলে অনুভব করি সেগুলো অফিস স্টোর থেকে কেনা সম্ভা ‘ডেইলি প্ল্যানার’-এ আমি নিজের জন্য লিখে ফেলি। এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তার দুটি কারণ রয়েছে: (১) আমি একজন চাক্ষুষ ব্যক্তিত্ব এবং (২) ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘ডমিনিকান বিশ্ববিদ্যলয়’-এর মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রফেসর ‘ড. গেইল ম্যাথিউস’-এর গবেষণা অনুযায়ী আপনার লক্ষ্যগুলো লিখে রাখার কারণে ৪২% অধিক সম্ভাবনা থাকে সেগুলো অর্জন করার।আমার ‘ডেইলি প্ল্যানার’-এ এগুলো লিখে রাখার অর্থ হলো দিনভর আমি তাদের দেখব এবং কাজ করার জন্য নিজেকে মনে করিয়ে দেব। ‘কেন গুরুত্বপূর্ণ লেখা থাকার কারণে এটি আমাকে একটি অতিরিক্ত ধাক্কা দেবে।
পৃষ্ঠা:৫৩
আমি যদি এগুলো যান্ত্রিক ক্যালেন্ডারে লিপিবদ্ধ রাখি, তবে হয়তো ভুলে যেতে পারি। একটি ঘরে প্রবেশ করে হয়তো মনে করতে পারব না যে কেন এই ঘরে এসেছি সুতরাং আমি আমার অবশ্য করণীয় তালিকা সাথে করে। সদর্পে হেঁটে যেতে পছন্দ করি। আপনি এটি কোনো ছোট নোটবই কিংবা ক্যালেন্ডার, যে কোনো জায়গায় লিখতে পারেন শুধু লিখে রাখুন এবং তা আপনার সাথেই রাখুন। ‘শ্যারন’ যেমনটি করেছে “আমার কাজের তালিকা এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। ধন্যবাদ ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল”।
(৬) আমি সকাল ৭টা ৩০ মিনিটের আগে ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করি দিনের পরিকল্পণা করায় অন্য
আমার ফোন বা ‘ই-মেইল’ চেক করে দেখার আগেই আমি আমার অবশ্য করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনা করি এবং প্রায়শঃই তা কার্যকর করে থাকি। এটা করার জন্য আমি একটি হাতিয়ার ব্যবহার করি যাকে আমি ‘৭টা ৩০ মিনিট- এর আগে ৩০ মিনিট’ নামে ডাকি।আমি সকাল ৭টা ৩০ মিনিট এর আগে ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করি দিনের পরিকল্পনা করার জন্য। এই সময়ের মধ্যে, আমি দিনের পরবর্তী সময়ের জন্য অবশ্য করণীয় হিসেবে নির্ধারিত দু’তিনটি কাজ শুরু করে দেই। আমি বাড়িতে থাকলে সকাল ৭টায় এই পরিকল্পনার কাজটি শুরু করি যখন আমাদের শেষ বাচ্চাটি তার স্কুল বাস ধরতে বেড়িয়ে যায়। এই ৩০ মিনিট সময় আমার সফলতার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।দিনের পরিকল্পনা নির্ধারণ করার মাধ্যমে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। যে, আপনি ঠিক জিনিসগুলোর উপর ‘ফোকাস’ করেছেন। ‘জেরেমি’ যেমন করে থাকে। অনেক বেশি উৎপাদনশীল ও দিনের লক্ষ্য পূরণে সফল হওয়ার জন্য আপনার নিজেকে প্রাধান্য দিতে হবে।একবার আপনি যদি অফিসে ঢুকে পড়েন, তাহলে আর ‘৭টা ৩০ মিনিট এর আগে ৩০ মিনিট’ ধারণাটি সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এটা অবশ্যই আপনাকে ঘরে অথবা প্রিয় কোনো ‘কফি সপ’-এ অথব্য ‘ট্রেন’ বা ‘পার্কিং’ এলাকায় আপনার গাড়িতে বসে করতে হবে। আমি মজা করছি না। যে মুহূর্তেআপনি অফিসে ঢুকে প্রথম ‘ই-মেইল টির জবাব দেবেন অথবা প্রথম ‘ফোন কল’টি গ্রহণ করবেন, ধরে নিতে হবে আপনার দিনটি চলে গেছে।প্রফেসর ‘সান ক্লারসন’ গবেষণা করে দেখেছেন কি করে সি.ই.ও’রা এত বেশি পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের গোপন রহস্য কি? তারা বাড়িতে ৯০ মিনিটের মতো কাজ করে থাকেন কারণ সেখানে মনযোগী হওয়ার কিছু সুযোগ থাকে। কর্মস্থলে তারা প্রতি ২০ মিনিট অন্তর একবার বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। আর ‘বাধা’ সম্পর্কে আমি কি বলেছিলাম নিশ্চয় মনে আছে? এটা উৎপাদনশীলতার জন্য মৃত্যুচুম্বনস্বরূপ।কেন পরিকল্পনা এবং সবচেয়ে দরকারি কাজগুলো প্রথমে করা এত গুরুত্বপূর্ণ? মনে রাখবেন, ‘ড. অ্যারিলে’ যেমনটি বলেছিলেন “দিনের প্রথম ২/৩ ঘণ্টা সময় আপনার কাজ বা লক্ষ্য অর্জনের উপর ‘ফোকাস’ করার শ্রেষ্ঠ সময় যা আপনার ব্যক্তিগত বা পেশাদারী লক্ষ্য পূরণে অগ্রগতি নিয়ে আসে। সেই সময়টি অপ্রয়োজনীয় কাজ করে অপচয় করা চরম বোকামি”।ই-মেইল’-এর জবাব দেওয়া, ‘ফোন কল’ গ্রহণ করা অথবা কর্মিসভায় উপস্থিতি আপনার পরিকল্পিত সময়সূচি দখল করে নেয় এবং আপনার জীবনের বড় কোনো উন্নতির পথে খুব কমই নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। দিনের প্রথম কয়েকটি। ঘণ্টা আপনার নিজের সুখ ও কাজের ওপর গভীর ‘ফোকাস’ করার জন্য প্রয়োজনীয় সময়কে সুরক্ষা করতে ধরে রাখা উচিত। এর জন্য দরকার হলে যুদ্ধ করুন।আপনি যদি দুটি বিষয়ের উপর কাজ করে থাকেন যেগুলো আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন, তাহলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহে অগ্রগতি হচ্ছে বলে আমি মনে করি এবং আপনি লম্বা খেলায় জিতে চলেছেন। তাড়াতাড়ি উঠে পড়া এবং দিনের পরিকল্পনা করার বিশাল সুবিধা রয়েছে। ‘মারি’কে জিজ্ঞেস করে দেখুন।আপনার “টেড টক’ আমার পছন্দ হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে আমি ‘ব্লগ’-এ লিখেছি এবং একটি বই লিখতে শুরু করেছি। সপ্তাহ দু’এক ধরে আমি ভোর ৫টায় উঠে পড়ছি এবং বিপুলভাবে এর সুবিধা ভোগ করছি। আমি আমার প্রাত্যহিক কার্যকলাপের ‘চেকলিস্ট’ হিসেবে একটি
পৃষ্ঠা:৫৪
সাময়িকী লিখছি। এই বইটি আমি যে পথ অনুসরণ করার মাধ্যমে বছরব্যাপী যা কিছু অর্জন করেছি, তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করবে।”আমি কয়েক সপ্তাহ পর ‘মারি’কে জিজ্ঞেস করেছিলাম তার সকালের কার্যক্রম কেমন চলছে। জবাব ছিল:”আজ আমার ভোর ৫টা বা তার আগে উঠে পড়া এবং সকালের কার্যক্রম অনুসরণ করার ৫৪তম দিন। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আমাকে শীতের সকালে বিছানা থেকে উঠে পড়া ও দিনের প্রথম কাজগুলো শেষ করার ব্যাপারে প্রচুর সহায়তা করছে।”এটা সত্যি অসাধারণ ‘মারি’, ৫৪দিন একজন বসের মতো। টনি’ ঠিক এটাই করেছিল এবং প্রতিদিন ভোর ৫টায় ‘জিমনেসিয়াম’-এ ফিরে যেতে পেরেছিল।আমি জানি এত সকালে উঠে পড়া এবং সরাসরি শরীরচর্চা শুরু করতে পারা একটি কঠিন কাজ। কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি যখন সেই প্রতিবন্ধক অনুভূতিগুলোকে পরাস্ত করার ‘সক্রিয়তা শক্তি’ খুঁজে পাবেন, তখন তা আপনাকে আপনার দিনটির নিয়ন্ত্রক হতেই শুধু সাহায্য করবে না, বরং আপনার শ্রেষ্ঠ সংস্করণটিকে সক্রিয় করে তুলবে।
(৭) আমি আমার অব্যাহতির সমর পরিকল্পনা করি
গবেষণা থেকে আমি এখানে আরো কিছু শিখেছি। দিনের পরিকল্পনা করা ছাড়াও আমি পরিকল্পনা করি কখন আমার কাজ শেষ করতে হবে। এটা ঠিক, প্রত্যহ আমি যখন দিনটি শুরু করি, আমি এটাও নির্ধারণ করি যে ঠিক কখন আমি কাজ শেষ করব এবং পরিবারের সাথে সময় কাটাব। শেষ করা বা নতুন। শুরু করার নির্ধারিত সময়সূচি আমার জন্য দু’টি কাজ করে থাকে, আর তা হলো- এটি আমাকে সময়ের ব্যাপারে আন্তরিক এবং অধিক উৎপাদনশীল করে তোলে।’পারকিনসন্স আইন’ নামে একটি নীতি রয়েছে এটি হলো, যত সময় দেয়া হবে তা প্রসারিত হবে। আপনার কার্যদিবসকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমাদিন। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা আপনাকে ‘ফোকাস’ করতে ও কাজ থেকে বিরতি নেওয়ার ব্যাপারে বাধ্য করতে জোর খাটাবে। এটা একটি বিরতি যা আমাদের পরিবারের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন এবং আমাদের মস্তিষ্ককে এটি বিশ্রাম নিতে, পুনঃশক্তি অর্জন করতে ও পুনঃস্থির হতে প্রয়োজনীয় সময় দিয়ে থাকে। মিথ্যে বলছি না, দিনের কাজ শেষ করার জন্য প্রায়ঃশই আমার কম্পিউটার টি বন্ধ করতে ও নিজের উপর জোর খাটাতে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আমি ব্যবহার করেছি।এই দৈনন্দিন কর্মপদ্ধতি কতভাবেই না আমাকে সাহায্য করেছে। এর মাধ্যমেই আমি আমার অগ্রাধিকার সমূহকে দিনের কার্যসূচিতে প্রাধান্য দিতে পেরেছি। আমি অনেক নিয়ন্ত্রিত বোধ করেছি কারণ অ্যালার্ম বাজার মুহূর্ত থেকে আমি আমার কৃতকর্মের মালিকানা হাতে পেয়েছি। আমি অনেক বেশি স্বচ্ছতা পেয়েছি (যা সুযোগ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে থাকে), এবং বড় মাপে আমি ২/৩টি অবশ্য করণীয় সংজ্ঞায়িত করতে পেরেছি যা আমার লক্ষ্য সমূহকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।আমি যদি নিজেকে আমার রুটিন ছেড়ে অন্য পথে চলতে অথবা বিভ্রান্ত হতে দেখি, যেটি একটি শক্তিশালী মুহূর্ত, সঠিক পথে ফিরে আসতে আমি তখন রুল’টি ব্যবহার করি। আপনি অবশ্যই কার্যকর যে কোনো রুটিন তৈরি করতে পারেন তবে আপনি যদি শুরু করার উপায় খুঁজে থাকেন, তবে আমারটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। অনেক মানুষ তাদের সকালের কর্মসূচিতে ব্যায়াম, ধ্যান ও কৃতজ্ঞতাবোধ তালিকা যোগ করার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য খুঁজে। পেয়েছেন। আপনার জন্য কোনটি ভালো কাজ করবে তা সবগুলো পরীক্ষা করে বের করুন।আপনাকে যা বলছি তা খুব সাধারণ, অবশ্যম্ভাবী ও কার্যকর। একে নিজের মতো সাজিয়ে নিন যাতে আপনার জন্য কাজ করে, কিন্তু যে কোনো উপায়ে তা করতে ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন। আপনি যখন আপনার দিনটির নিয়ন্ত্রক হওয়ার জন্য কাজ করবেন, ‘ক্রিস্টি’ যেমনটি বলেছেন- “এটি খেলার ধরনই বদলে দেবে”। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদবিটি। অর্জন করেছিলেন এবং খুব ভালো আছেন। এবার আপনার পালা।
পৃষ্ঠা:৫৫
প্রস্তুত হওয়ার আগেই শুরু করে দিন। তৈরি হতে হবে না, এগিয়ে যান। (১১) দীর্ঘসূত্রতার সমাপ্তি“আরম্ভ করতে হলে, শুরু করুন।” – উইলিয়াম ওয়র্ডসওয়ার্থ
‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’ হলো দীর্ঘসূত্রতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি অসাধারণ অস্ত্র। কিভাবে এটা ব্যবহার করতে হবে তা বিস্তারিত জানার আগে প্রথমে দীর্ঘসূত্রতা কি তা সংজ্ঞায়িত করা দরকার। এটা কি অথবা কি নয়। এই বইয়ের গবেষণায় আমি যখন দীর্ঘসূত্রতার কারণ সম্পর্কে জেনেছি, আমাকে তা বিস্মিত করেছে। আমার জানা সবকিছু ভুল ছিল।আমি এটা জেনে আরো বিস্মিত হয়েছি যে দু’ধরনের দীর্ঘসূত্রতা বিদ্যমান রয়েছে- (১) ধাংসাত্মক দীর্ঘসূত্রতা: আপনি যখন কোনো কাজ এড়িয়ে চলেন যা শেষ করা দরকার ছিল এবং (২) উৎপাদনশীল দীর্ঘসূত্রতা: যা কোনো সৃজনশীল প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আসুন, ভালোটি দিয়ে শুরু করি।
উৎপাদনশীল দীর্ঘসূত্রতা
আপনি যদি কোনো সৃজনশীল বা উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে কাজ করে থাকেন, তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘসূত্রতা এক্ষেত্রে ভালোই শুধু নয়, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনশীল প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সুতরাং আপনি যখন একটি প্রকল্প কিছুদিন বা কয়েক সপ্তাহের জন্য নির্ধারণ করবেন, আপনার মস্তিষ্ক প্রকল্পটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় পাবে। একটু বেশি সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে আপনি অনেক বেশি সৃজনশীল ও ভিন্ন প্রকৃতির ধারণা তৈরি করতে পারবেন যা আপনার প্রকল্পটিকে আরো উন্নত করবে।উৎপাদনশীল দীর্ঘসূত্রতা ছিল আমার জন্য শেখার বিষয় যা বিপুলভাবেধারণার স্বাধীনতা প্রদান করে, বিশেষ করে আমি যখন এই বইটি লেখার জন্যসংগ্রাম করছিলাম। উৎপাদনশীল দীর্ঘসূত্রতা সম্পর্কে জানার আগে আমি
পৃষ্ঠা:৫৬
আমার নিজের উপর প্রায়ই রেগে যেতাম কারণ প্রতিনিয়ত: আমি ব্যর্থতা ও ‘রাইটার্স ব্লক’ অনুভব করতাম এবং নিজেকে আমার খারাপ, অলস বা অক্ষম লেখক বলে মনে হতো। সত্যি কথা হলো, এই মাত্রার একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া একটু সময় নেয়।চিন্তা-ভাবনা করার জন্য আমার মস্তিষ্কের সময় ও বিরতি দরকার ছিল। এটি শেষ করতে আমি যা ভেবেছিলাম তার চাইতে ৭ মাস বেশি সময় লেগেছিল এবং এই কারণে বইটি ১০০ গুণ বেশি ভালো হয়েছে। আপনি যদি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে ব্যর্থ হন তাহলে প্রকল্পটির জন্য কিছু সময় ব্যয়। করুন, অন্য কোথাও আপনার শক্তিকে ‘ফোকাস’ করুন এবং তারপর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিরে আসুন। সুতরাং, আপনি যদি কোনো সৃজনশীল প্রকল্পে যুক্ত থাকেন এবং আপনার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা না থেকে থাকে, তাহলে এটা দীর্ঘসূত্রতা নয়। যদি আপনি আপনার প্রকল্প কিছুদিনের জন্য স্থগিত রেখে মস্তিষ্ককে চিন্তা করার সুযোগ করে দেন, তবে এটাই সৃজনশীল প্রক্রিয়া। দীর্ঘসূত্রতার ফলে আপনি যে নতুন ধারণাগুলো পাবেন তা আপনার কাজটিকে আরো অধিক দক্ষ করে তুলবে।
ধ্বংসাত্মক দীর্ঘসূত্রতা
ধ্বংসাত্মক দীর্ঘসূত্রতা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রাণী। এটি দেখা যায় যখন আমরা কোনো কাজ এড়িয়ে চলি অথচ তা শেষ করা দরকার এবং আমরা জানি যে কাজটি না করলে নেতিবাচক ফলাফল ভোগ করতে হবে। এই অভ্যাসটিই আবার দিনের শেষে আপনাকে কামড়াতে আসবে।আমাদের সবার কাছেই এমন সব কিছু রয়েছে যা আমরা করে উঠতে পারি না। যেমন ছবির অ্যালবামটি হালনাগাদ করা, একটি তথ্য তালিকা বিশ্লেষণ করা, একটি প্রস্তাব পেশ করা, বাড়িঘর পরিষ্কার করা অথবা একটি কার্যতালিকার ভেতর দিয়ে যাওয়া যা আপনার ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করবে। এগুলো এমন কিছু যা সত্যিই শেষ করা দরকার অথচ আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে তা এড়িয়ে চলি।’এভেলিন’ নিজেকে দীর্ঘসূত্রতার মাঝে খুঁজে পান এবং শান্তি দিতে থাকেন। তার ভাষায় “বছরব্যাপী আমি নিজেকে সবকিছুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি।” তিনি রুল’টি কাজে লাগিয়েছিলেন এবং এটা ছিল অসাধারণ। ‘এভেলিন’ প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে কাজগুলো শেষ করতে নিজেকে ধাক্কা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন যা এমনকি তাকেও বিস্মিত করেছিল।তিনি সম্ভবতঃ জানতেন না কেন সব কাজে তার বিলম্ব হচ্ছিল। আমাদের অধিকাংশ যেমন জানেন না। দীর্ঘদিন যাবত মানুষ বিশ্বাস করেছে যে দীর্ঘসূত্রতার অর্থ হলো দুর্বল সময় ব্যবস্থাপনা, ইচ্ছাশক্তির অভাব, অথবা শৃঙ্খলার অভাব। হায়! আমাদেরই ভুল। দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবেই অলসতার একটি ধরন নয়। এটা চাপ বা ধকল সামলানোর একটি প্রতিনয়া।
দীর্ঘসূত্রতা ও ধকলের মধ্যে সংযোগ
‘কার্লটন বিশ্ববিদ্যলয়’-এর মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক টিমোথি পাইচিল’ ১৯ বৎসরের বেশি সময় ধরে দীর্ঘসূত্রতার উপর পড়াশোনা করছেন। ‘ড. পাইচিল’ দেখতে পান, প্রধান যে কারণে দীর্ঘসূত্রতার উদ্ভব হয় তা কেবল মাত্র কাজ এড়ানো নয়, বরং ধকল এড়ানো। দীর্ঘসূত্রতা হলো ঠিক এই মুহূর্তে ভালো অনুভব করার অবচেতন মনের একটি ইচ্ছা যাতে করে আপনি চাপমুক্ত বোধ করতে পারেন।আমরা সবাই একটি সাধারণ ভুল চিন্তা করে থাকি যে, দীর্ঘসূত্রতা মানুষের ইচ্ছাকৃত পছন্দের ফসল। আসলে, বেশির ভাগ মানুষ যারা দীর্ঘসূত্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন, তারা গবেষকদের কাছে বলেছেন যে, তাদের ধারণা, এর উপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এবং তারা সঠিক, কারণ তারা কেউই বুঝতে পারেননি যে সবকিছুতে কেন তাদের বিলম্ব হচ্ছে।আমরা বিলম্ব করি কারণ আমরা চাপ অনুভব করি। বিষয়টি হলো- কাজের ব্যাপারে আপনি চাপ অনুভব করেন না, এটি ঘটে আরো বড় কোনো কারণে যেমন টাকা-পয়সা, সম্পর্কজনিত সমস্যা অথবা সাধারণ অর্থে ‘জীবন’ সম্পর্কিত বিষয়ে। আপনি যখন কাজ বন্ধ রাখেন, অথবা ১৫ মিনিট ‘অনলাইন’ কেনাকাটা বিষয়ে গবেষণা করেন অথবা গতরাতের কোনো খেলার
পৃষ্ঠা:৫৭
উল্লেখযোগ্য অংশ টেলিভিশনে দেখেন, আপনি তখন সামগ্রিক ভাবে একটি বড় চাপ বোধ থেকে একটি ছোট চাপ-বিরতি গ্রহণ করেন।এটা মনের জন্য মানসিক খাদ্যস্বরূপ। আপনি যখন কঠিন কোনো কাজ এড়িয়ে চলেন, আপনার তখন এক ধরনের হালকা বোধ হয়। সাথে সাথে আপনি যখন কোনো কাজ উপভোগ করেন, যেমন ফেসবুকে ঘুরে বেড়ানো বা কোনো ‘ভাইরাল ভিডিও’ দেখে মজা করা, আপনি তখন একটি স্বল্পমেয়াদি মাদকতা লাভ করেন। আপনি যত বেশি বিলম্ব করবেন ততবেশি এই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সমস্যাটি হলো একটি বিড়ালের ‘ভিডিও’ দেখে আপনি যখন সাময়িক হালকাবোধ করবেন, এই কাজটির পুনরাবৃত্তি আপনার জন্য এড়িয়ে চলা কাজের পাহাড় তৈরি করে দেবে যা আপনার জীবনে আরো অধিক চাপ সৃষ্টি করবে।‘স্কট’ এ ব্যাপারে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি আমাকে লিখেছিলেন কারণ তার নিজের মাথা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সাহায্যের দরকার ছিল। তিনি যাদেরকে তার সমস্যার কথা বলেছিলেন তারা সবাই তাকে উত্তর দিয়েছিল তিনি নিজেই তার নিজেকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছেন। এবং তারা ঠিকই বলেছেন।’স্কট’ একজন পি-এইচ-ডি ছাত্র এবং শরীরবিদ্যা গবেষণাগারে কাজ করছিলেন। তিনি বিবাহিত এবং তিনি ও তার স্ত্রী তাদের প্রথম পুত্রসন্তানের গর্বিত পিতা-মাতা হয়েছিলেন। তিনি তার জীবনকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন:প্রচুর অর্থনৈতিক চাপা যা আমার পড়াশোনার কারণে স্বাভাবিক ধরে নেয়া সল্লেও বাড়িতে সবকিছুই ছিল অসাধারণ। আমার প্রাত্যহিক জীবনে সমস্যা ছিল এবং গবেষণাগারে কাজ করার কারণে আমি আমার সব দায়- দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছিলাম না। মূলতঃ আমি ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন কাজ করা বন্ধ রাখতাম যতক্ষণ না এটি একটি পর্যায়ে এসে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম করছে অথবা কাউকে বিপর্যস্ত করছে।নিজের জন্য আমার অনেক উচ্চাশা ছিল এবং আক্ষরিক অর্থে প্রতিরাতে ঘুমাতে যাবার আগে আমি আমার নিজেকে বলেছি যে, আগামীকাল নতুনভাবে শুরু করব এবং প্রচুর পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করে সবকিছুই আমি মোকাবেলা করব। কিন্তু তারপর আবার দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে থাকি এবং ফিরে পাওয়াআত্মবিশ্বাস বিবর্ণ হতে শুরু করে। মূলতঃ আমি আমার পূর্ণ সম্ভাবনার কাছাকাছি কোথাও বসবাস করছি বলে কখনো মনে হয়নি, যা ছিল হতাশাজনক।”‘স্কউ’-এর নোট পড়লে আপনি দেখতে পাবেন তিনি নিজের উপর হতাশাবোধের একটি দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে গিয়েছিলেন। আমি তার সাথে সম্পূর্ণভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারছি কারণ একটা সময় আমি যখন বিছানা ছেড়ে উঠে আসার ব্যাপারে সংগ্রাম করছিলাম তখন একই রকম বোধ হয়েছিল। ‘ভট’ জানতেন তাকে কি করতে হবে (কাজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া এবং তা শেষ করা), কিন্তু তার নিজের কাছে মনে হচ্ছিল না যে এটা তিনি করতে পারবেন।’স্কট’-এর নোট আমাকে সুযোগ দিয়েছে এটা ব্যাখ্যা করার যখন কেউ দীর্ঘসূত্রতার ভেতর দিয়ে যায় তখন আসলে কি ঘটে? তিনি আমাদের জানিয়েছিলেন যে তিনি এবং তার স্ত্রী প্রচুর আর্থিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। এই চাপ বোধটি কখনো ভালো নয়। এটা আরো ব্যাখ্যা করে কেন তিনি অর্থনৈতিক চাপমুক্তির জন্য সবকিছুতে বিলম্ব করছেন। মনে রাখবেন, আমরা যখন কোনো কঠিন কাজের পরিবর্তে সহজ কিছু প্রতিস্থাপন করি, তখন এক ধরনের উৎসাহ ও নিয়ন্ত্রণ বোধ করে থাকি। এটা স্বজ্ঞানবিরোধি, কিন্তু ‘স্কট’- এর যেসব কাজ ল্যাব-এ শেষ করার দরকার ছিল, তা না করার কারণ তিনি তার জীবনের অর্থনৈতিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। তাহলে, কিভাবে তিনি এটাকে থামাবেন? সৌভাগ্যক্রমে, এখানে তিনটি সহজ ও গবেষণা সমর্থিত ধাপ রয়েছে এবং ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি সেগুলো করতে আপনাকে সহায়তা করবে। আপনি ‘স্কট’-এর মতো কাজ এড়িয়ে চলা, ‘এভেলিন’-এর মতো পরিষ্কার করা কিংবা ‘জে. লোসো’র মতো অনুশীলন করা, যাই করে থাকুন না কেন, প্রতিবার দীর্ঘসূত্রতাকে পরাজিত করার জন্য আপনি রুল’টি ব্যবহার করতে পারেন।
নিজেকে ক্ষমা করুন
গবেষণা প্রথম যে কথাটি আমাদেরকে বলছে দীর্ঘসূত্রতার জন্য নিজেকে আপনার ক্ষমা করতে হবে। এটা রূপকথা নয়, বিজ্ঞান।
পৃষ্ঠা:৫৮
‘কার্লটন বিশ্ববিদালয়’ থেকে আমাদের বিশেষজ্ঞকে মনে আছে? ড. পাইচিল’ একটি নিবন্ধের সহ লেখক হিসেবে লিখেছিলেন “দীর্ঘসূত্রতার জন্য যে সকল শিক্ষার্থী নিজেদেরকে ক্ষমা করেছিল তারা পরবর্তী পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত কম বিলম্ব করেছে।” অদ্ভুত শোনাচ্ছে? কিন্তু সমস্যার একটি অংশ যা মনোবিজ্ঞানীরা উম্মোচন করেছিলেন তা হলো বিলম্বকারীরা নিজেদেরকে ক্ষমা করার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর হয়ে থাকে।’ত্রাশকি’ দেখতে পেয়েছিলেন নিজেকে ক্ষমা করতে সক্ষম হবার পর তার জীবন বদলে গিয়েছে। নিজেকে শাস্তি দেওয়ার বদলে তিনি দীর্ঘসূত্রতার সমাপ্তি টেনেছিলেন। অসাধারণ।আপনি ‘রায়ান’-এর সাথেও সংযোগ স্থাপন করতে পারেন যিনি একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়ে আমাকে লিখেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে যতই তিনি চাইতেন তার প্রকল্পটি কাজ করুক, এর পেছনে সময় ব্যয় করা তার কাছে ততই কঠিন মনে হতো। এটা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন এবং এরআসল কারণ ছিল ব্যর্থতার ভয়।আমার ভালো লেগেছে যা তিনি সবশেষে বলেছিলেন “জয় হোক কিংবা পরাজয়, অন্তত আমি কিছু একটা তো করেছি।” নিজের সঙ্গে সৎ হতে এবং যা করা প্রয়োজন তার উপর ‘ফোকাস’ করাটা কতটা কঠিন তা স্বীকার করতে প্রচুর পরিমাণ সাহস লাগে।আরেকটি নিখুঁত উদাহরণ হলো ‘স্কট’, আমাদের পি-এইচ-ডি ছাত্র। মনে আছে তিনি কি লিখেছিলেন? “নিজের জন্য আমার অনেক উচ্চাশা রয়েছে।” প্রতিবার যখনি তিনি বিলম্ব করেন, তার লজ্জা ও অপরাধবোধ হয়। ঐ নেতিবাচক অনুভূতিগুলো পরবর্তীতে ‘স্কট’-এর জন্য আরো বেশি চাপ তৈরি করে যেমনটি তিনি বলেছিলেন “আমার দ্বারাই আত্মবিশ্বাসগুলো পরবর্তীতে বিবর্ণ হতে শুরু করে। আর এই কারণে তিনি আরো অধিক চাপ অনুভব করেন এবং এমনকি আরো অধিক দীর্ঘসূত্রতার উদ্ভব হয়।সুতরাং, ‘স্কট’-এর প্রতি এই পরামর্শ প্রয়োগ করা যাক, প্রথম ধাপ- নিজেকে ক্ষমা করার মাধ্যমে চক্রটি বন্ধ করুন। পাঁচ সেকেন্ড সময় নিন ৫-৪-৩-২-১, মানুষকে বিপর্যস্ত করা, পিছিয়ে পড়া এবং নিজের পূর্ণ সম্ভাবনা অনুযায়ী কাজ না করার জন্য নিজেকে ক্ষমা করুন। আপনি যদি বুঝে গিয়ে থাকেন যে, ল্যাব-এ আপনার দীর্ঘসূত্রতার কারণ হলো অর্থ সংক্রান্ত চাপ, তাহলে আপনার জন্য এটি একটি সুযোগ নিজেকে প্রমাণ করার ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার। প্রসঙ্গক্রমে, আপনি নিয়ন্ত্রণ নিতে চান যাতে করে আপনার লক্ষ্য পূরণ হয় এবং আপনি যা হতে চান তা হতে আপনাকে সাহায্য করে।এটা আমাদেরকে দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছে দেবে।
ভবিষ্যতে আপনি কি করতে চান?
আমাকে ব্যাখ্যা করতে দিন। ‘ড. পাইচিল’-এর গবেষক দল আমাদের বর্তমান সত্তা ও ভবিষ্যৎ সত্তা নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, গবেষণা প্রমাণ করে যে আপনি যখন আপনার ‘ভবিষ্যতের আপনাকে’ আঁকতে সক্ষম হবেন, এটা বর্তমানের আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যবস্তু স্থির করে দেবে। গবেষকরা যখন মানুষকে তাদের ভবিষ্যতের ছবি প্রযুক্তির মাধ্যমে এঁকে দেখিয়েছেন, দেখা গেছে ভবিষ্যতের জন্য তারা আরো বেশি করে সঞ্চয় করছেন। আমার ধারণা ‘দৃষ্টি সংস্থা কাজ করার এটি একটি ব্যাখ্যা। তারা আপনার ভবিষ্যতের ছবি এঁকে দিতে সাহায্য করবে যা বর্তমান আপনার জন্য চাপ মানিয়ে নেয়ার একটি পদ্ধতি হিসেবে কাজ করবে। সুতরাং, মি. স্কট”, একটি ‘দৃষ্টি সংস্থা’ তৈরি করুন অথবা একটি মানসিক প্রতিচ্ছবি যা আপনার বর্তমান ছাত্র জীবনের চাপকে পেছনে ফেলে ভবিষ্যতের ‘প্রফেসর স্কট’কে প্রদর্শন করবে। যে মুহূর্তে আপনার নিজেকে আপনি দীর্ঘসূত্রতার ভেতর আবিষ্কার করবেন, জিজ্ঞেস করুন ‘প্রফেসর স্কট এক্ষেত্রে কি করবেন?’এটা আমাদেরকে তৃতীয় ধাপে পৌঁছে দেবে।
ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি দিয়ে শুরু করুন
অবশেষে একবার আপনি যখন বুঝতে পারবেন দীর্ঘসূত্রতার উৎস কি, ‘ড. পাইছিল’-এর প্রিয় উপদেশ হলো “শুরু করে দিন”। শুরু করার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনিই একমাত্র কথা বলছেন না, গবেষকদের মতে নতুন অভ্যাস তৈরি করার শক্তিশালী উপায় হলো “একটি প্রারম্ভিক আনুষ্ঠানিকতা। সৃষ্টি।
পৃষ্ঠা:৫৯
করা”। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির চাইতে ভালো প্রারম্ভিক আনুষ্ঠানিকতা আর কিছু হতে পারে না। এখন আমিও এইসব বিজ্ঞান বুঝতে পারছি। আমি ব্যাখ্যা করতে পারব কেন “শুরু করে দিন” ধারণাটি কাজ করে থাকে।দীর্ঘসূত্রতা যদি একটি অভ্যাস হয়ে থাকে, আপনাকে তাহলে খারাপ (পরিহার) আচরণের ধরনটিকে ইতিবাচক আচরণ (শুরু করা) দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে।→ যে মুহূর্তে আপনি দ্বিধাবোধ করেন, আপনি সহজ কাজগুলো করেন অথবা কঠিন কাজগুলো এড়িয়েচলেন। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা করা আপনার জন্য অতি প্রয়োজন, তা করতে নিজেকে ধাক্কা দিন।→ শুরু করা আমাদের প্রকৌশলকে ‘সিসকো’ ও ‘লোকাস অব কন্ট্রোল’- এ ফিরিয়ে নিয়ে যায়। দীর্ঘসূত্রতার কারণে আপনার মনে হবে নিজের উপর আপনার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যখনি আপনি নিজেকে যাচাই করবেন এবং শুরু করে দেবেন, আপনি সেই মুহূর্তটি ও আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবেন।’ডানিয়েলা’ তার অনুশীলনে রুল’টিকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ‘ক্ষমতাবান’ ও ‘সক্ষম’ বোধ করেছিলেন যা আমাদেরকে দেখিয়েছে- দীর্ঘসূত্রতাকে পরাস্ত করার সুবিধা কাজের চাইতে বেশি কিছু এবং নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্কোন্নয়নের আরো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিস্তৃত।যেমনটি আমি পুরো বইটি জুড়ে ব্যাখ্যা করেছি, ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার প্রচেষ্টা আপনার মস্তিষ্কের গিয়ারগুলোকে সক্রিয় করে এবং কাজ শুরু করার জন্য আপনার ‘প্রিফ্রন্টাল করটেক্স’কে অনুমতি দেয়। প্রত্যেকবার আপনি যখন রুল’টি ব্যবহার করবেন, দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করা সহজ থেকে সহজতর হয়ে যাবে এবং আপনি শুরু করে দিতে পারবেন। ‘সাই’ যেমনটি দেখতে পেয়েছিলেন- “কল’টি করার জন্য, ই-মেইল’টির উত্তর দেওয়ার জন্য, অর্থহীন কাজটি শেষ করার জন্য নিজেকে বলা এবং শুরু করাই হলো গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ শেষ করার গোপন সূত্র।”যদিও এটি করা তার পছন্দ ছিল না, তবুও তিনি যেভাবেই হোক কাজ শুরু করার অভ্যাসটি গড়ে তুলেছিলেন এবং এই মানসিকতার দ্বারা একটি বিশাল প্রকল্প শেষ করতে পেরেছিলেন।’স্কট’ ল্যাবরেটরিতে ফিরে ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত কাজে ফিরে যেতে পারেন। তিনি এখন বুঝতে পারছেন তার দীর্ঘসূত্রতার (আর্থিক চাপ) উৎস কি এবং তিনি নিজেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ) এবং একবার যখন তিনি ভবিষ্যতের ‘প্রফেসর স্কট’কে আঁকবেন, নিয়ন্ত্রণ যাচাই, টেবিলে ফিরে যাওয়া এবং কাজ শুরু করার জন্য তিনি ক্ষণ গণনা শুরু করতে পারবেন। ভবিষ্যতে তিনি যদি নিজেকে বিচ্যুত হতে দেখেন তাহলে আবার তিনি ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করতে পারেন। রুল’টি এগিয়ে যাওয়াকে সহজ করে তোলে যা কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে ‘ভট’কে সহায়তা করবে এবং সামনের অন্যান্য আর্থিক চাপগুলো মোকাবেলা করার জন্য অনেক বেশি প্রস্তুত করে তুলবে।’আন্দ্রে’ দীর্ঘসূত্রতা পার হয়ে লক্ষ্যের উপর কাজ করতে রুলটি ব্যবহার করেছিলেন। ‘আন্দ্রে’র বয়স ১৬ কিন্তু তিনি ইতিমধ্যে শিখে গেছেন কি করে দীর্ঘসূত্রতাকে পরাস্ত করতে হয় এবং একটি বই লিখতে শুরু করেছেন। তিনি লিখেছেন- তার সবসময় ‘প্রস্তুত নই’, ‘যথেষ্ট করিতকর্মা নই’ জাতীয় অজুহাত তৈরি থাকত। রুল’টি তাকে ঐ অজুহাতগুলোকে পেছনে ফেলতে সাহায্য করেছিল এবং এখন তিনি তার বই লেখায় মনোযোগী হতে পেরেছেন।’আন্দ্রে’ আমাদের দেখিয়েছেন, যে কোনো বয়সে বা লক্ষ্যের পথে নিজেকে অর্জন করা, ভেতরে তাকানো, একটি পদক্ষেপ নেওয়া, কোনো চেষ্টা করা বা জীবন পরিবর্তন করার মতো শক্তি আমাদের রয়েছে। শুরু করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ আপনিও হয়তো এর মাঝে আটকে যেতে পারেন, গবেষকরা যাকে বলেন ‘অগ্রগতি নীতি’, যা ক্ষুদ্র বিজয়, মনকে উজ্জীবিত করা এবং সুখ ও উৎপাদনশীলতার মাত্রা বৃদ্ধি করা সহ যে কোনো অগ্রসরমানতাকে বিবৃত করে থাকে।সবকিছুর ওপর, একবার আপনি যখন একটি প্রকল্প শুরু করবেন, আপনার মস্তিষ্ক একে কার্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির একটি প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে। পূর্বে আমি যেমনটি উল্লেখ করেছিলাম, আমাদের মস্তিষ্ক সমাপ্ত কাজের
পৃষ্ঠা:৬০
চাইতে অসমাপ্ত কাজগুলোকে বেশি মনে রাখে। একবার আপনি যখন কাজ শুরু করবেন, আপনার মস্তিষ্ক তা শেষ করতে আপনাকে ক্রমাগত খোঁচা দিতে থাকবে।আমি আরো বলেছিলাম যে ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতাম অভ্যাসটি ছিল এক প্রকার দীর্ঘসূত্রতা। এখন বুঝতে পারছি কেন। এটা আমার জীবনের বড় চাপগুলো থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছে। একারণেই আমি শুরু করতে পেরেছি। যখন ফিরে তাকাই, দেখতে পাই যে আমি একটি ‘শুরুর আনুষ্ঠানিকতা’ চালু করেছি যার নাম ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’। আমার ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতাম অভ্যাসটি একটি নতুন অভ্যাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। ৫-৪- ৩-২-১ ক্ষণ গণনা করা, তারপর উঠে পড়া এবং দিনটি শুরু করা। সাত বৎসর পর, প্রতিদিন ভোরে এখনো আমি নিজেকে বিছানা থেকে টেনে তুলতে উল্টো ক্ষণ গণনা করি।
সংক্ষেপে, দীর্ঘসূত্রতাকে পরান্ত করতে কিভাবে আপনি ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’- টি ব্যবহার করবেন:
শুরু করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে এটি ব্যবহার করুন। ছোট করে শুরু করুন। ১৫ মিনিট সময় ধরে আপনি যা কিছু এড়িয়ে চলেন তাকে আক্রমণ করুন। তারপর একটি বিরতি নিন এবং কিছু ‘ক্যাট ভিডিও’ দেখুন। মনে রাখবেন আপনি শুধুই একজন মানুষ।এগুলো সাধারণ জ্ঞানের বিষয়। আপনি ঘরের ভেতর এক কামড়ে একটি হাতি খেয়ে ফেলতে পারেন। এই বইটিতে আমরা বারবার যা শিখেছি তা হলো যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি আপনার খারাপ অভ্যাস বোধগুলোকে পরাস্ত করতে পারবেন এবং শুরু করার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিতে পারবেন, আপনি কখনোই বদলাবেন না।
আপনাকে হয় কোনো একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে, না হয় একটি অজুহাত।আপনার জানা সুখী মানুষ হওয়ার উপায়
পরবর্তী তিনটি অধ্যায়ে আপনি ধাপে ধাপে জানতে পারবেন কি করে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণাভিত্তিক কৌশলের সঙ্গে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে ভয়কে পরাস্ত, দুশ্চিন্তামুক্ত, উদ্বেগ ব্যবস্থাপনা বা নিরাময় এবং আপনার চিন্তা-ভাবনার পথ পরিবর্তন করা যায়।আপনি যদি আমাকে সি-এন-এন এর একজন টেলিভিশন ধারাভাষ্যকার হিসেবে দেখে থাকেন, অথবা ‘সাকসেস ম্যাগাজিন’-এ আমার কলাম পড়ে থাকেন, এটা অনুমান করা সহজ হবে যে আমি একজন যোদ্ধার আত্মবিশ্বাস নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলাম। সেই অনুমান আরো শক্তিশালী হবে যখন আপনি আমার ‘ইউটিউব ভিডিও’ এবং ‘টেডএক্স টক’ দেখবেন অথবা মঞ্চে আমার সরাসরি সম্প্রচারের অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। হ্যাঁ, আমি এখন আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু আসলে আমি এইভাবে জন্মগ্রহণ করিনি। আমার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমি ছিলাম উচ্চকিত বহির্মুখী যে কিনা গভীর নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত। বছরের পর বছর ধরে প্রাত্যহিক মনোবল অনুশীলন করার মাধ্যমে আমি এই আস্থা নির্মাণ করেছি।মানুষ আমার সম্পর্কে যা জানে না তা হলো ২৫ বৎসরের অধিক সময় ধরে আমি উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় ভুগেছি। আমার প্রসব-পরবর্তী দুর্বলতাজনিত বিষন্নতা ছিল এবং প্রথম কন্যা ‘সয়্যার’ জন্মগ্রহণ করার পর দুই মাস আমি তার সাথে একা থাকতে পারিনি। প্রায় দুই দশক ধরে ‘অতেম্ভ আক্রমণ’ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাকে ঔষধ সেবন করতে হয়েছে। চিন্তাধারা নিয়ে আমার সংগ্রাম হিল বাস্তব এবং মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর।
পৃষ্ঠা ৬১ থেকে ৭০
পৃষ্ঠা:৬১
প্রথম যখন রুলটি আমি আবিষ্কার করেছিলাম, আমার আচরণ পরিবর্তনের জন্য এটিকে আমি ব্যবহার করতাম। রুল’টি বিস্ময়করভাবে কাজ করেছিল এবং প্রাত্যহিক মনোবলের সাথে এটি দ্বিতীয় প্রকৃতি হিসেবে দেখা দিয়েছিল। আমার আত্মবিশ্বাস শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। যাই হোক, উদ্বেগ কখনো ছেড়ে চলে যায়নি। এটা উপরিপৃষ্ঠের তলদেশে ফুটছিল। আমি একে সাথে নিয়ে বাস করতে শেখার উপর ‘ফোকাস’ করেছিলাম, একে ‘ম্যানেজ’ করা ও নিশ্চিত করা যাতে করে এটি পরিপূর্ণ আতঙ্কের ভেতর সেদ্ধ হয়ে না যায়।প্রায় চার বৎসর আগে আমি ভাবতে গুরু করেছিলাম যে ‘ফাইভ সেকেন্ড। রুল’-টি ব্যবহার করে আমার শারীরিক আচরণের চাইতে বেশি কোনো পরিবর্তন আনতে পারি কিনা। আমি ভাবছিলাম, যদি আমার চিন্তার পরিবর্তন করা যায়। অন্যান্য অভ্যাসগুলোর উপর এর প্রভাব আমি দেখতে পেয়েছিলাম। সুতরাং উদ্বেগ, আতঙ্ক ও ভয়ের অভ্যাসগুলো ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা কেন নয়? এগুলো হলো আমাদের সেই মানসিক ধরনসমূহ যা আমরা পুনরাবৃত্তি করে থাকি। এগুলো শুধুই অভ্যাস। আমার মস্তিষ্কের কাজের ধরন পরিবর্তন করার জন্য আমি রুল ‘টি ব্যবহার করতে শুরু করি। রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আমি দুশ্চিন্তার অভ্যাস। ভাঙতে শুরু করেছিলাম। যেহেতু আমি এই দক্ষতাটি আয়ত্ত করেছিলাম, আমি আমার উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ ও উড়ে যাওয়ার ভয়কে পরাস্ত করতে রুল’টি ব্যবহার করেছি। এবং এটা কাজ করেছে।আমি যখন এই বাক্যটি লিখছি, তখন আমি আপনাকে বলতে পারি- আমার উদ্বেগ সারিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। বেশ কয়েক বছর ধরে আমি আর ঔষধ গ্রহণ করছি না এবং এখন আমি আতঙ্কযুক্ত। দুশ্চিন্তার অভ্যাসটি এখন আর নেই। এবং উড়ে যাওয়ার ভয়? চলে গেছে। জীবনমান উন্নয়নের জন্য যে সকল একক শ্রেষ্ঠ কাজগুলো আমি করেছিলাম তা হলো নিজের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা, চিন্তা-ভাবনাগুলোকে দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং ভয়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা। আমি প্রায় কখনোই আর দুশ্চিন্তা বোধ করি না। রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আমি আমার মস্তিষ্ককে রূপান্তর করেছি এবং এখন আমি যে কোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি সুখী ও আশাবাদী। আমার মস্তিষ্ক এখন আর আমার বিরুদ্ধে নয় বরং স্বপক্ষে কাজ করছে।এবার আপনার পালা।প্রথমত আপনি এখানে শিখবেন কিভাবে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করে দুশ্চিন্তা ও নেতিবাচক আত্মকথন আসক্তিকে ভাঙতে হয়। আপনি শিখবেন অভ্যাস বিজ্ঞান এবং কৃতজ্ঞতাবোধের শক্তি।বিভীন্নত- আপনি উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিষয়ে ডুবে যাবেন। আপনি শিখবেন এটা কি এবং কি নয়। এবং আমি আপনাকে আপনার জীবন থেকে হস্তক্ষেপ, পুনর্গঠন এবং উদ্বেগ দূরীকরণ পদ্ধতি ধাপে ধাপে শেখাব। আপনি ভয়কে পরাস্ত করার একটি প্রমাণিত কৌশল শিখবেন। আমার উড়ে যাবার ভয়কে একটি উদাহরণ হিসেবে নিয়ে কিভাবে ‘উপস্থাপকের চিন্তা’র সাথে রুল’টি ব্যবহার করে মনের উপর ভয়ের প্রভাব প্রতিরোধ করতে হয়, তা শিখবেন। আপনি যা শিখতে চলেছেন তা এতটা সহজ ও শক্তিশালী যে এটা এমনকি আপনি আপনার বাচ্চাদের শেখাতে পারেন।জীবন বিস্ময়করএবং তারপর এটা ভয়ানক এবং তারপর এটা আবার আশ্চর্যজনক এবং বিস্ময়কর ও ভয়াবহতার মাঝামাঝি এটা সাধারণ এবং পার্থিব এবং দৈনন্দিন আশ্চর্যের মাঝে নিঃশ্বাস নিন, ধরে রাখুন ভয়াবহ এবং শিথিল এবং বাষ্পীভূত স্বাভাবিক সময়ে, এটা শুধু বেঁচে থাকা হৃদয়গ্রাহী, আত্মা নিরাময়কারী, বিস্ময়কর ভয়াবহ, সাধারণ জীবন এবং এটা হৃদয়গ্রাহী সুন্দরএল. আয়, যোস্ট
পৃষ্ঠা:৬২
(১২) দুশ্চিন্তামুক্তি“আপনার আশপাশে এখনো ছড়িয়ে থাকা অবশিষ্ট সৌন্দর্যের কথা ভাবুন এবং সুখী হোন।” – এ্যানা ফ্রাঙ্ক
অন্য যে কোনো পরিবর্তনের চাইতে উদ্বেগের অভ্যাস পরিবর্তন আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় একক ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। বিশ্বাস করুন বা না করুন, আপনাকে শেখানো হবে কি করে দুশ্চিন্তা করতে হয়। ছোট বয়সে আপনি আপনার অভিভাবককে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করতে দেখেছেন “সাবধান, মাথায় টুপি পর, না হয় ঠান্ডা লাগবে” অথবা “টেলিভিশনের খুব কাছাকাছি বসো না”। প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আমরা সেইসব বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে গিয়ে অনেক বেশি সময় ও শক্তি ব্যয় করি যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন অথবা অসম্ভব। আপনি আপনার জীবনের শেষ প্রান্তের যত কাছাকাছি পৌছুবেন, আশা করবেন তার মুখোমুখি না হতে।’ড. কার্ল পিলেমার’, ‘কর্নেল বিশ্ববিদ্যলয়’-এর মানব উন্নয়ন বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং ‘উত্তরাধিকার প্রকল্প’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি “জীবনের অর্থ কি?” বিষয়ের উপর আলোচনা করার জন্য ১,২০০ জন জ্যেষ্ঠ নাগরিকের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি এটা জেনে ধাক্কা খেয়েছিলেন যে, বেশির ভাগ মানুষেরই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একই ধরনের দুঃখ থেকে যায় যেমন- জীবনের সিংহভাগ সময় আমি যদি দুশ্চিন্তা করে না কাটাতাম। তাদের কথা ছিল “দুশ্চিন্তা আপনার মূল্যবান ও সীমিত জীবৎকালের এক বিপুল অপচয়।”আপনি দুশ্চিন্তা বন্ধ করুন। কেমন করে, তা আপনাকে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি শেখাবে। আপনি মনোযোগ প্রদানে ব্যর্থ হলে আপনার মস্তিষ্কে দুশ্চিন্তা একটি অক্ষম বিন্যাস হিসেবে স্থান গেড়ে বসবে। এ থেকে উত্তরণের উপায় হল আপনি যখন দুশ্চিন্তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হবেন, নিজেকে খামান এবং তারপর রুল’টি ব্যবহার করে মানসিক নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করুন। একটি উদাহরণ দেয়া যাক:সম্প্রতি আমার স্বামী ‘ক্রিস’ তার মোটরসাইকেল নিবন্ধন পেয়েছে এবং একটি ছোট ও ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কিনেছে। পরদিন, আমি যখন ঘরের ভেতর বসেছিলাম, খেয়াল করলাম সে ‘ড্রাইভওয়ে’ দিয়ে মোটরসাইকেল’টি বের করছে। যখনি সে রাস্তায় নেমে পড়ল, আমি দেখলাম যে আমার মাথায় দুশ্চিন্তার একটি স্রোত বয়ে যেতে শুরু করেছে।আমি দুশ্চিন্তা করতে শুরু করেছিলাম সে হয়তোবা একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা খেতে পারে অথবা পুলিশ আমাকে তার দুর্ঘটনার খবর জানিয়ে ফোন করতে পারে। পাঁচ সেকেন্ড সময়ের মধ্যেই এই দুশ্চিন্তা আমাকে গ্রাস করে নিল। এতটাই দ্রুত। এবং আপনি জানেন, আমার দুশ্চিন্তা কখনোই তাকে নিরাপত্তা দেবে না কিংবা কোনো দুর্ঘটনাও রোধ করতে পারবে না। ৮৩ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি তার গবেষণায় বলেছিলেন “আমার দুশ্চিন্তা কোনোকিছুর সমাধান করবে না। এটা শুধু সর্বক্ষণ আমাকে খাদের কিনারায় টেনে নিয়ে যাবে”। ক্রিস’ রাস্তায় মোটর সাইকেল চালাচ্ছে এই চিন্তা আমাকে বর্তমান মুহূর্তটিকে উপভোগ করা থেকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।যখনই বুঝতে পারি আমি দুশ্চিন্তা করছি, আমি রুল’টি ৫-৪-৩-২-১ ব্যবহার করি এবং আরো ইতিবাচক কিছু চিন্তা করতে শুরু করি যেমন রাস্তায় মোটর সাইকেল চালানো অবস্থায় ‘ক্রিস’-এর হাস্যোজ্জ্বল মুখ।মজার ব্যাপার হলো ‘ক্রিস’ একজন ভালো বাইকার। সে ট্রায়ঘলন” প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল এবং নিজেই সবসময় ৪০/৫০ মাইল গাড়ি চালনা প্রশিক্ষণে রাস্তায় নেমেছে। এ ব্যাপারে আমার কখনো দুশ্চিন্তা হয়নি। কিন্তু এখানে সে যে মোটরসাইকেলটি নিয়ে ঘণ্টায় ১০ মাইল বেগে চলেছে, তা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কিছু কি ভুল হতে পারে? অবশ্যই পারে। তবে সাধারণতঃ হয় না।আপনি যখন দুশ্চিন্তার সমাপ্তি টানতে রুল’টি ব্যবহার করবেন, এটা দেখে বিস্মিত হবেন যে কতটা ঘনঘন আপনার মন নেতিবাচক কিছুর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমার ক্ষেত্রে এটা প্রতিদিনই ঘটেছে। এটা সত্যিই অস্বস্তিকর। প্রতিদিন আমি এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। কখনো কখনো দিনে ১২ বা তার চাইতে বেশি বার নিজের ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাকে
পৃষ্ঠা:৬৩
রুল’টি ব্যবহার করতে হয়েছে। পরের দিন আবার আমি নিজেকে ক্রমাগত দুশ্চিন্তার মধ্যে ডুবে যেতে দেখেছি।আমাদের কন্যা পেশাগত সফর শেষে পেরু থেকে ফিরছিল এবং দিনভর আমার মন যেসব দুশ্চিন্তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল তা ছিল বিমান দুর্ঘটনা, ‘ফ্লাইট মিস’, ‘আন্দেজ’ পর্বতে বিমানটির পতন, বাস দুর্ঘটনা, ব্যাগ হারানো এবং বিমান বন্দরে আটকে পড়া। রুল’টির সাহায্য ব্যতীত আমি হয়তো দিনটিকে শেষ করে দিতাম। প্রতিবার যখন আমি আমার মনকে খারাপ চিন্তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখি, নিজেকে বলি “না, তুমি না…” এবং এমন একটি দিকে আমার চিন্তাকে প্রবাহিত করি যা আমাকে আনন্দ দেয়।
প্রেমের অনুভূতি প্রায়শঃই দুশ্চিন্তা ঘটার
দুশ্চিন্তা সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় আমাকে অবাক করেছিল আর তা হলো – এটা কতটা সূক্ষ্ম এবং কত দ্রুত আপনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। আমি দেখে বিস্মিত হয়েছি, যে মুহূর্তে আমি সুখ বা ভালোবাসা অনুভব করি তখন কতটা ঘনঘন আমি দুশ্চিন্তা বোধ করি।এই বসন্তে, এটা আমার সাথে ঘটেছিল যখন আমি আমার ১৭ বছর বয়সী কন্যার মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম। আমি একটি অসাধারণ মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছিলাম যখন হঠাৎ করেই আমার হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এবং তারপর, কোনোরকম সতর্কতা ছাড়াই, দুশ্চিন্তায় আমার মন ডুবে গিয়েছিল এবং মুহূর্তটি চুরি হয়ে গিয়েছিল। আমি যা অনুভব করেছিলাম তাহলো ভয়।আমরা একটি ‘শপিং মল’-এ গিয়েছিলাম। ‘সয়্যার’ তার ‘হাইস্কুল’ নাচের পোশাক খুঁজছিল। এটি ছিল একটি দীর্ঘ বিকেল যখন আমরা তৃতীয় দোকানটিতে প্রবেশ করি। ‘সয়্যার’ খুব সহজেই ৪০টিরও বেশি পোশাক। ‘ট্রায়াল’ দিতে পারে আর সর্বশেষ পোশাকটিও সে অপছন্দ করে। কোনো পোশাকে তাকে খুব সুন্দর মানিয়েছে বলাটা তার মেজাজকে শুধুই খারাপ। করে।আমি তার সঙ্গে “ড্রেসিং রুম’-এ ছিলাম। বাতিল হওয়া পোশাকগুলো আমি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে দিচ্ছিলাম আর পরবর্তী পোশাকটি তার দিকে এগিয়ে দিচ্ছিলাম ট্রায়াল’ দেওয়ার জন্য। আমি এই ভেবে আতঙ্কিত বোধ করা শুরু করি যে তার পছন্দের পোশাকটি হয়তো কোনোদিনই খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি তার হাতে আরেকটি পোশাক তুলে দিতে দিতে বলি “পরবর্তী তিনটি পোশাক চেষ্টা করে দেখ এবং তারপর এখান থেকে বের হই চলো।” আমি তাকে কিছুটা জায়গা করে দেয়ার জন্য বাইরে আসি এবং ‘ক্রিস’কে ডাকি।হঠাৎ করে সে আমাকে ডাকে “মা, তুমি কি এখানে একটু আসবে?”আমি তার কন্ঠ পড়তে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না যে সে কি কাঁদছে, হতাশ, আটকে যাওয়া ‘জিপার’-এর ব্যাপারে সাহায্য দরকার অথবা অন্য কিছু। আমি হুড়মুড় করে দরজা খুলি। সে একটি মেঝের দৈর্ঘ্য পর্যন্ত লম্বা গাউন পরে আছে এবং আয়নায় আমি তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছিলাম যা ছিল এক কথায় অসাধারণ। পোশাকটি ছিল ‘পীচ’ রঙের এবং পাশের দিকটি ছিল গোলাপি রঙের সুন্দর ঢেউ খেলানো। এটা ছিল তাই য্য সে চেয়েছিল কোনো ঝকমক নেই, কোনো লেইস নেই, পেছন দিকটি খোলা আর রঙটি উজ্জ্বল। আমার চোখ আয়নায় আটকে গিয়েছিল।”কি চিন্তা করছ মা?”বুঝতে পারছিলাম আমার চোখে পানি আসছে। যখন সে ছোট্টটি ছিল, মনে পড়ে একই রকম আবেগে ভেসে গিয়েছি কতবার, যা আপনি কাউকে খুব ভালোবাসলে পরে অনুভব করবেন। মাঝরাতে আমি যখন তাকে পরীক্ষা করতে উঠতাম, সে তখন পিঠে ভর করে মাথার উপর একটি হাত তুলে ঘুমুচ্ছে, এই দৃশ্য দেখে আমি কতবার ভালোবাসার আবেগী জোয়ারে ভেসেছি এবং কোনোকিছুকে ভালোবাসার এমন সক্ষমতা দেখে শুধুই বিস্মিত হয়েছি। এটা ছিল হৃদয় বিস্ফোরিত হওয়ার মতো একটি অনুভূতি।’ড্রেসিং রুম’-এর বাইরে দাঁড়িয়ে আমি ঠিক এমনটিই অনুভব করছিলাম। ভালোবাসার অনুভূতি। আর তারপরই দুশ্চিন্তা এসে ভর করল এবং মুহূর্তটিকে চুরি করে নিয়ে গেল। সতর্কতা ছাড়াই। আমি চিন্তা করছিলাম সে কলেজে যাচ্ছে, তার বিয়ে হচ্ছে, নতুন মা হচ্ছে, আমার কাছ থেকে অনেক দূরে সরে
পৃষ্ঠা:৬৪
যাচ্ছে, সময় বয়ে যাচ্ছে, বয়স বাড়ছে এবং আমার জীবন শেষ হয়ে আসছে। গোটা জীবন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। সময় দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছিল এবং এক মুহূর্তের জন্য অনুভব করেছিলাম আমি যেন তাকে হারিয়ে ফেলছি। আমি অভিভূত ও বিষ্ণা বোধ করছিলাম এবং আমার চোখ জলে ভেসে যাচ্ছিল।’সয়্যার’ আমার আবেগ দেখতে পেল এবং ভাবল এটা তার পোশাকটির কারণে। “মা, কন্নাকাটি কোরো না। তুমি তো আমাকেও কাঁদাবে।” কিন্তু আমি ভয় পেয়ে কাঁদছিলাম তাকে বড় হতে দেখে। আমি কাঁদছিলাম এটা দেখে যে জীবন কত দ্রুতই না শেষ হয়ে যায় এবং আমি চাইছি জীবন যেন একটু আস্তে চলে। দুশ্চিন্তা আমার ঐ মুহূর্তটির সব আনন্দ লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। এটা আমাকে ‘সয়্যার’-এর কাছ থেকে মস্তিষ্কের একটি অন্ধকার কোণে নিয়ে যাচ্ছিল। আমার সুন্দর আদুরে মেয়েটির উপস্থিতির পরিবর্তে আমি ভীতি বোধ করছিলাম।এভাবেই দুশ্চিন্তা আপনার মনকে অপহরণ করে এবং জীবনের জাদু ও বিস্ময়কে লুট করে নিয়ে যায়। ‘ব্রেনে ব্রাউন’ তার সর্বাধিক বিক্রিত বই ‘ডেয়ারিং গ্রেটলি’তে ঠিক এই ঘটনাটিই পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি দেখতে পেয়েছিলেন আনন্দের মুহূর্তগুলোতে খারাপ দৃশ্যকল্প চিন্তা করাও একটি সাধারণ বিস্ময়কর ঘটনা (যেমন, আপনার সন্তানের খারাপ কিছু সম্পর্কে উদ্বেগ ব্যতীত তাকে আলিঙ্গন করা আপনি উপভোগ করেন না)। এবং কেন আনন্দের মুহূর্তে নরম হওয়া আমাদের জন্য এতটা কঠিন? কারণ, ‘ড. ব্রাউন’ যেমনটি বলেছেন “আমরা প্রচণ্ড আঘাতের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করি”।আপনার মন যখন আপনাকে এমন কোথাও নিয়ে যায় যা দুঃখভারাক্রান্ত, অন্ধকার, সন্দেহজনক বা নেতিবাচক, আপনার সেখানে যাবার দরকার নেই। ‘হাইন’ আমাকে যা লিখেছিলেন তা আমার পছন্দ হয়েছিল। তার মতে “শতকরা ৯৯.৯৯৯ ক্ষেত্রে আমি আমার মস্তিষ্কে সর্বদা একটি মিথ্যে বাস্তবতা তৈরি করে থাকি”।আপনি যখন ‘হাইন’ বা আমার মতো দেখতে পাবেন যে নিজের ভেতরকার কন্ঠস্বর আপনার শত্রু হয়েউঠছে, ৫ সেকেন্দ্রের ভেতর ঐ দুশ্চিন্তা বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি যাতে করে আপনি নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে পারেন।আমি চুপি চুপি ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করি এবং শরীরের ভেতরে ভ্যা কমে যাওয়া অনুভব করি। ক্ষণ গণনা ঝাঁকুনি দিয়ে আমাকে মাথা থেকে বের করে বর্তমান মুহূর্তটিতে দাঁড় করিয়ে দেয়। এটা নিজেকে দুশ্চিন্তা থেকে ‘ফোকাস’-এ স্থানান্তর করার চাবি। আমি আমার মস্তিষ্ককে কন্যার সাথে আমার এই অভিজ্ঞতা লুট করে নিয়ে যেতে দিতে রাজি ছিলাম না। দুশ্চিন্তার অভ্যাসকে আমি বর্তমান সময়ে আমার উপস্থিতি ও একটি মানসিক ছবি গ্রহণ। করা থেকে বিচ্যুত করতে অনুমতি দেব না।আমি নিজেকে দুটি সাধারণ প্রশ্ন করলাম “আমি কি এই মুহূর্তে কৃতজ্ঞ?” এবং “আমি কি মনে রাখতে চাই?” আপনি যখন এরকম সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন, এটি আপনার মস্তিষ্কের জৈব স্তরে প্রভাব ফেলবে। উত্তর দেওয়ার জন্য তাকে আপনার জীবন, সম্পর্ক ও কাজের ভাগ নিতে হবে এবং একটি জবাব অনুসন্ধান করতে হবে।এটি আপনাকে জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর উপর ‘ফোকাস’ করতে বাধ্য করবে। আপনি যখন চিন্তাকরবেন কিসের জন্য আপনি কৃতজ্ঞ, আপনি দুশ্চিন্তার পরিবর্তে কৃতজ্ঞতা বোধ করতে শুরু করবেন। প্রশ্নের উত্তরটি আমার কাছে এখন পরিষ্কার। এমন একটি অসাধারণ তরুণীকে আমার কন্যা হিসেবে পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। এবং তিন ঘন্টার নাটক শেষে সে তার পছন্দের পোশাকটি খুঁজে পাওয়ার জন্যও আমি কৃতজ্ঞ।’কেটি’ তার কৃতজ্ঞতার কার্যকরণের উপর প্রতিফলন ও দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করছেন। জীবনে কোনো কিছুই নিখুঁত নয়। একেবারেই নয়। কিন্তু মানসিক কিচিরমিচির বন্ধ করতে এবং ছোট মুহূর্তগুলোকে (যেমন নিজের কন্যার জন্য কৃতজ্ঞতা বোধ করা) প্রশংসা করা শিখতে আপনিও রুল’টি ৫-৪-৩-২-১ ব্যবহার করতে পারেন।কৃতজ্ঞতাবোধ শুধু ভালো বোধ করা নয়। স্নায়ুবিজ্ঞানী ‘এলেক্স কোব’-এর মতে “এটি মস্তিষ্কের ডালপালা সক্রিয় করার মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্কের রসায়ন পরিবর্তন করে থাকে যা ‘ডোপামিন’ সৃষ্টি করে”। আমার দুশ্চিন্তা চলে যাওয়ার কারণ, একটি লম্বা শ্বাস টেনে কন্যা সয়্যারের কাছাকাছি হতে আমি ‘ড্রেসিং রুম’-এ প্রবেশ করি এবং তার কাঁধে হাত রাখি। আয়নায় আমাদের। চোখাচোখি হয়।
পৃষ্ঠা:৬৫
‘সয়্যার’ জিজ্ঞেস করে “মা, তুমি কি ভাবছ?”আমি বলি- “তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে”।
ভয় পাওয়া খারাপ না। এর মানে আপনি সত্যি সত্যি কোনো সাহসী কাজ করতে যাচ্ছেন। (১৩) উদ্বেগের অবসান “আপনার মনকে শাসন করুন, না হয় এটি আপনাকে শাসন করবে।” – হোরেচ
আপনার দুশ্চিন্তার অভ্যাস যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। জীবনভর উদ্বেগ সহ্য করার কারণে আমি জানি এটা কেমন করে আপনাকে আঁকড়ে ধরবে এবং এর অনুভূতি কতটা ভয়ঙ্কর। এই অনুভূতির জবাব হলো ‘পুনঃকাঠামোকরণ’ নামক একটি কৌশলের সঙ্গে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির ব্যবহার।উদ্বেগকে পরাস্ত করতে হলে একে বুঝতে হবে। আপনি যদি শুরু হওয়া এবং পুনঃকাঠামো ধারণ করার সময় একে ধরতে পারেন, আপনার মন পুরোপুরি আতঙ্কিত হওয়ার আগেই আপনি একে স্থিতিশীল করতে পারবেন। সময়ের সাথে সাথে আপনি যত বেশি করে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টিকে ব্যবহার করবেন, আপনার উদ্বেগ দুর্বল হতে হতে দুশ্চিন্তায় ফিরে যাবে, যেখান থেকে এটি শুরু হয়েছিল। এইমাত্র আপনি যা শিখলেন দুশ্চিন্তার অভ্যাস ভেঙে ফেলা সহজ।আমার মনে হয় আমি উদ্বিগ্ন হয়েই জন্মেছিলাম। আমার বাবা-মা’র কাছ। থেকে শুনেছি ছোট বয়সে আমার স্নায়বিক পাকস্থলী ছিল এবং সব বিষয়েই আমি দুশ্চিন্তা করতাম। আমি বাচ্চাদের তাঁবুতে সেইরকম একজন ছিলাম যে কিনা ঘরকাতর এবং দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছুক।যখন কলেজ ছাত্র ছিলাম, যে কোনো ডাকে আমার মুখ টমেটোর মতো লাল হয়ে যেত। পার্টিতে কোনো সুদর্শন যুবকের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমাকে তরল সাহসের উপর নির্ভর করতে হতো, কেননা অ্যালকোহল ছাড়া আমি আমার ঘাড়ে ছাপ অনুভব করতাম।
পৃষ্ঠা:৬৬
সদ্য ২০-এ আমি যখন আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করি, আমার আতঙ্ক আক্রমণ শুরু হয়। প্রতিটি আতঙ্ক আক্রমণ এক একটি ‘হার্ট অ্যাটাক’-এর মতো অনুভূত হয় এবং দু’টি কারণে এটি ঘটে থাকে: (১) আপনাকে ভীতিকর কিছু করতে হবে যেমন জনসম্মুখে বক্তৃতা করা, কোনো ‘প্রাক্তন’-এর মুখোমুখি হওয়া অথবা বিমানে আরোহণ এবং (২) কোনো কারণ ছাড়াই।আপনার যদি কখনোই আতঙ্ক আক্রমণ না হয়ে থাকে, তবে তা বর্ণনা করার সেরা উপায় হলো এটা ছিল তালিকার বাইরে থাকা আপনার শরীর ও মনের প্রায় কাছাকাছি হওয়ার ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা। আমাকে একটি সহজ উপমা ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করার অনুমতি দিন।
সাধারণ আতঙ্ক বনাম আতঙ্ক আক্রমণ
আপনার জীবনে হাজারবার আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা ঘটবে এবং এটাই স্বাভাবিক। মনে করুন আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন এবং মহাসড়কে ‘লেন” পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে, অনেকটা আকাশ থেকে একটি গাড়ি এসে আপনার সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করল, আপনার গতিপথ পরিবর্তন করে দিল এবং একটুর জন্য আপনাকে ‘মিস’ করল। মহাসড়কে যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, আপনি আপনার শরীরে ‘এড্রেনালিন’-এর একটি স্রোত অনুভব করবেন। আপনার হৃৎপিন্ড দৌড়াবে। আপনার নিঃশ্বাস দ্রুততর হবে। হরমোন প্রবাহিত হবে। আপনার শরীর একটি উচ্চ সতর্কতা অবস্থানে পৌছুবে যাতে করে আপনি গাড়িটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনি হয়তো কিছুটা থেমেও যাবেন।আপনার শরীর যত দ্রুত অস্বাভাবিক অবস্থায় যাবে, আপনার মন তত দ্রুত একটি কারণ খুঁজে পেতে চাইবে কেন আপনার শরীর এতটা উত্তেজিত। মহাসড়কের এই উদাহরণটিতে আপনার মস্তিষ্ক জানে আপনি “প্রায়” একটি দুর্ঘটনায় পড়তে যাচ্ছিলেন এবং সেজন্যই আপনার শরীর অস্বাভাবিক অবস্থায় চলে গেছে।আপনার মস্তিষ্ক আপনার শরীরের অস্বাভাবিক অবস্থায় চলে যাওয়ার ব্যাখ্যা যখন খুঁজে পাবে, তখন আর উদ্বিগ্ন হওয়ার পথে হাঁটবে না। আপনার মস্তিষ্ক আপনার শরীরকে শান্ত হওয়ার অনুমতি দেবে কারণ সে জানে বিপদ কেটে গেছে। আপনার জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে ‘লেন” পরিবর্তন করার সময় আপনি আরো একটু বেশি সতর্ক হবেন।আপনার যখন আতঙ্ক আক্রমণ হয়, আপনার শরীর ও মনে কোনোরকম পূর্ব সতর্কতা বা ঘটনা ছাড়াই সেই “কাছাকাছি ব্যর্থ” সংবেদনশীলতা এসে ভর করে। রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে এককাপ কফি ঢালার সময় হঠাৎ করেই আপনার শরীরে ‘এড্রেনালিন’-এর একটি স্রোত বয়ে যেতে পারে যেমনটি ঘটেছিল মহাসড়কে ‘লেন’ পরিবর্তন করতে গিয়ে একটি গাড়ির অল্পের জন্য আপনাকে ‘মিস’ করার সময়।আপনার হৃৎপিণ্ড দৌড়াচ্ছিল। আপনার নিঃশ্বাস দ্রুততর হচ্ছিল। আপনি হয়তো একটু থেমে যাচ্ছিলেন। আপনার হরমোন প্রবাহিত হচ্ছিল। আপনার শরীর একটি উচ্চ সতর্কতা অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। এ সময় আপনার শরীর যখন একটি উদ্দীপিত অবস্থায় ছিল, আপনার মস্তিষ্ক বুঝতে চেষ্টা করছিল কেন এটা ঘটছে। যদি কোনো বৈধ কারণ না পেয়ে থাকে, আপনার মস্তিষ্ক চিন্তা করবে আপনি তাহলে সত্যিকারের বিপদে পড়েছেন। এ পর্যায়ে আপনার মস্তিষ্ক আপনার প্রাগৈতিহাসিক ব্যবচ্ছেদ করে ভয়কে আরো বাড়িয়ে দেবে এই ভেবে যে, বিপদ অত্যাসান্ন।আপনার হৃৎপিণ্ড যখন দৌড়াতে শুরু করে, আপনার মন একটি ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে চায় এটা বোঝার জন্য যে আপনার শরীরে কি ঘটছে, যাতে করে সে আপনাকে রক্ষা করার উপায় বের করতে পারে। আপনার হয়তো একটি ‘হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছে, আপনি হয়তো আগামী মাসে বিয়ে করতে চাচ্ছেন না, আপনি হয়তো অবশেষে ঢাকরিটি হারাচ্ছেন অথবা আপনি হয়তো মারা যাচ্ছেন।আপনার মস্তিষ্ক যদি একটি উপযুক্ত ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়, আপনার উদ্বেগ তাহলে আরো খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে এবং আপনি পরিস্থিতি এড়াতে শারীরিকভাবে পালাতে চাইবেন এবং ঘর ছেড়ে বের হয়ে যাবেন। আপনি যদি কাউকে কখনো আতঙ্ক আক্রান্ত হতে দেখে থাকেন, তাহলে দেখবেন তারা অস্বাভাবিক হয়ে যায়, চারপাশে ফলা ছুড়তে থাকে, চিন্তা-ভাবনা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, গাড়ির ‘হেডলাইট’-এর সামনে হরিণ দেখতে পায় এবং হঠাৎ করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এটি একটি দুষ্টচক্র এবং অনেক বৎসর ধরে আমি এর ভেতরে আটকে ছিলাম।
পৃষ্ঠা:৬৭
করেছিলাম। আমরা তাদের ভয়ের মুখোমুখি হতে সাহায্য করার জন্য পুরস্কারসহ কিছু খেলার আয়োজন করেছিলাম। এটা শুধু অবস্থার অবনতি ঘটাল।দীর্ঘ সময় ধরে আমি বুঝতে পারিনি সাধারণ আতঙ্ক ও আতঙ্ক আক্রমণের মধ্যে কি পার্থক্য অথবা আমার ভূমিকাই বা কি যা উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। আমি মনোবিজ্ঞানীর স্মরণাপন্ন হয়েছিলাম এবং আতঙ্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সকল প্রকার জ্ঞানীয় কৌশল ব্যবহার করেছিলাম। আমার অবস্থা এতটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে আতঙ্ক আক্রমণের ভয়ে আমি ভীতু হয়ে গিয়েছিলাম এবং যার কারণে আমার উপর আতঙ্ক আক্রমণ আরো বেড়েছে বই কমেনি। অবশেষে, আমি ‘জোলফট্’ নামক একটি ঔষধ সেবন করি যাকে ‘অলৌকিক ঔষধ’ নামে ডাকা হয়। ‘জোলফট’ আমার জন্য অসাধারণ কাজ করেছিল প্রায় দুই দশক ধরে। আপনি যদি এমন কোনো গর্তে পড়ে গিয়ে থাকেন যা থেকে বের হওয়ার উপায় নেই, তাহলে পেশাদার কোনো সাহায্য নিন। থেরাপির কোনো বিকল্প পাওয়া না গেলে ঔষধ গ্রহণ করতে পারেন যা আপনার জীবন বদলে দিতে পারে।আমি ভেবেছিলাম জীবনের বাকি দিনগুলো আমাকে ঔষধ সেবন করেই কাটাতে হবে। এবং তারপর আমাদের বাচ্চারা এলো আর তাদের তিনজনই নিজেদের উদ্বেগ নিয়ে সংগ্রাম করা শুরু করল। এটা ছিল উদ্বেগের চাইতেও বেশি কিছু। উদ্বেগ তাদের জীবনে প্রভাব বিস্তার করল তাদের বাইরে ঘুম হতো না, আমাদের শোবার ঘরের মেঝেতে তারা ঘুমাতে শুরু করল এবং সব বিষয়ে চিন্তা করত। ‘ওকলে’ তার আতঙ্ক অবস্থার নাম দিয়েছিল ‘অলিভার’ এবং কন্যা ‘সয়্যার’ তার উদ্বেগ অবস্থাকে বলত ‘কি হবে চক্র’। একদিন সে আমাকে বলছিল:”আমার মাথার মধ্যে একটি ‘কি হবে চক্র’ আছে এবং একবার যখন আমি কি হবে’ নিয়ে চিন্তা করা শুরু করি, এর ভেতরে আটকা পড়ে যাই। কারণ ‘কি হবে’ নামক ব্যাপারটি মাথার ভেতর সবসময়ই থেকে যায়।”আমি জানতাম এটা কতটা ভীতিকর এবং আমার বাচ্চাদের সংগ্রাম করতে ও ভয় পেতে দেখা ছিল আমার জন্য হৃদয়বিদারক। তাদের উদ্বেগ মোকাবেলা করতে সাহায্য করাটা ছিল আমার জন্য চোখ খুলে দেওয়ার মতো এবং একই সাথে হতাশাজনক কারণ কোনো কিছুই কাজ করছিল না। আমরা বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হয়েছিলাম এবং সব ধরনের কৌশল প্রয়োগআমি ‘জোলফট্’ সেবন বন্ধ করেছিলাম, তাই ঔষধের সাহায্য ছাড়াই আমি এখন উদ্বেগের মুখোমুখি হতে সক্ষম। আমি বুঝতে চেয়েছিলাম কেমন করে একে পরাস্ত করা যায় যাতে করে আমি আমার বাচ্চাদের সাহায্য করতে পারি। আমি শিখেছিলাম:
শান্ত হওয়ার চেষ্টা সাহায্য করে না
আমি থেরাপিস্টদের সঙ্গে প্রচুর সময় ব্যয় করেছি যারা আমাকে ও বাচ্চাদেরকে বলেছিল “শুধু ‘চ্যানেল’টি বদলাও এবং অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা কর”। আপনি নিছক চিন্তিত থাকলে এটা কাজ করবে, কিন্তু পুরোপুরি উদ্বিগ্ন অবস্থায় এই কৌশল কাজ করবে না। এর একটি কারণ রয়েছে। আপনি যখন উদ্বিগ্ন বোধ করেন, শারীরিক অস্থিরতার একটি পর্যায়ে আপনি চলে যান। আপনি যখন কাউকে শান্ত হতে বলেন, আপনি আসলে তাকে ঘণ্টায় যাট মাইল থেকে শূন্য মাইলে নেমে আসতে বলছেন। এটা অনেকটা মালবাহী একটি রেলগাড়িকে থামানোর চেষ্টা হিসেবে সামনে পাথর ফেলে দেওয়ার মত্যে অবস্থা। এতে করে রেলগাড়ির ট্রাক’টি লাফ দিয়ে উঠবে।বিহেভিয়ার রিসার্চ অ্যান্ড থেরাপি’ পত্রিকার এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা স্বাভাবিকভাবে তাদের অবাঞ্চিত চিন্তাধারা দমন করার চেষ্টা করে তারা আরো বিব্রত হওয়ার মাধ্যমে তা শেষ করে। এটা ঠিক, আপনি যখন নিজেকে শুধু শান্ত হতে বলবেন, আপনার উদ্বেগ আরো খারাপ অবস্থার দিকে যাবে কারণ আপনি এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন। আপনি যখন বুঝতে পারবেন আতঙ্ক কি করে কাজ করে, এটা কি এবং একে আরো খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আপনার মস্তিষ্কের ভূমিকা কি, আপনি একে পরাস্ত করতে পারবেন।এক্ষেত্রে দু’টি কৌশল রয়েছে যা একত্রে অবিশ্বাস্য ভালো কাজ করে। মনের উপর নিয়ন্ত্রণ পরিমাপ করার জন্য ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির ব্যবহার এবং তারপর উদ্বেগকে পুনঃকাঠামো প্রদান করার (যাতে করে আপনার মস্তিষ্ক
পৃষ্ঠা:৬৮
একে বাড়াতে না পারে) মাধ্যমে আপনার শরীরকে শান্ত করা। আপনি কিভাবে এটি করবেন।
উত্তেজনা এবং উদ্বেগ আপনার শরীরে একই রকম বোধ হয়
জনসম্মুখে বক্তৃতা করতে গিয়ে সর্বপ্রথম আমি ‘পুনঃকাঠামো কৌশল’-টি ব্যবহার করি। নাগরিক বক্তৃতা বিষয়ে আমি প্রচুর প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি বিশেষ করে ভয় ও স্নায়ুকে আমি কি করে নিয়ন্ত্রণ করেছি সেই বিষয়ে। আমার উত্তর মানুষকে সবসময় বিস্মিত করেছে আমি কখনোই আমার ভয় ও স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করিনি। আমি শুধু আমার সুবিধামতো তাদের ব্যবহার করেছি।আমি পেশা হিসেবে বক্তৃতা করি। অনেক। ২০১৬ সালে আমাকে আমেরিকার সবচাইতে বেশি বায়নাকৃত মহিলা বক্তা হিসেবে নামকরণ করা হয়েছিল। এক বৎসরে ৯৮টি ‘কী নোটস’! অসাধারণ! আমি কি স্নায়ুচাপে। ভূগেছিলাম? অবশ্যই। প্রতিটি একক সময়ে।কিন্তু এখানে একটি কৌশল রয়েছে। আমি একে স্নায়ুচাপ বলি না। বলি উত্তেজনা, কারণ শরীরবৃত্তীয় ভাবে উদ্বেগ ও উত্তেজনা একই জিনিস। উদ্বেগ ও উত্তেজনার মধ্যকার একমাত্র পার্থক্য হলো আপনার মস্তিষ্ক একে কি নামে ডাকছে। যেমন, প্রায় ‘মিস’ হওয়ার উদাহরণটি। আপনার শরীর অস্বাভাবিক অবস্থায় চলে যাওয়ার একটি ভালো ব্যাখ্যা যদি আপনার মস্তিষ্কের কাছে থেকে থাকে, এটি তাহলে বিষয়টিকে বাড়তে দেবে না।প্রথমবার আমি যে আনুষ্ঠানিক বক্তৃতাটি দিয়েছিলাম তা ছিল ‘সান ফ্রান্সিসকো’তে ‘টেডএক্স টক’। আমার মনে আছে মঞ্চের পেছনে দাঁড়িয়ে আমি একের পর এক পি-এইচ-ডি ধারীদের বক্তব্য শুনছিলাম এবং নিজের ব্যাপারে চিন্তা করছিলাম। এটা ছিল আমার নিজেকে সবচাইতে বাজে অবস্থার মধ্যে দেখতে পাওয়া। এই সকল করিতকর্মা লোকদের তুলনায় নিজেকে আমার মহামূর্খ মনে হয়েছিল।আমার হাতের তালু ঘামছিল। হৃৎপিণ্ড দৌড়াচ্ছিল। মুখ তেতে উঠছিল। আমার শরীর ‘অ্যাকশন’ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এটা ছিল কিছু একটা করার প্রস্তুতি। কিন্তু নিজেকে আমি বলেছিলাম যে, আমি স্নায়ুচাপে ভুগছি।আমি এইসব সংবেদনশীলতাকে দেখেছিলাম খারাপ কিছু সংঘটনের পূর্বচিহ্ন হিসেবে এবং আমার স্নায়ু আরো নাজুক অবস্থায় চলে যাচ্ছিল।রূঢ় কিছু জানতে চান? হয় বৎসর এবং শত শত বক্তৃতার পর মঞ্চের পেছনে দাঁড়িয়ে আজো আমার শরীরে একই রকম অনুভূতি হয়। হাতের তালু থেমে ওঠে। হৃৎপিণ্ড দৌড়ায়। মুখ তেতে ওঠে। আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি। আমি যখন ‘অ্যাকশন’ নিতে চলেছি এবং আমার শরীর যখন প্রস্তুত হচ্ছে, সেই একই জিনিস অনুভব করি ভয়। আমি একে শুধু একটি ইতিবাচক দিকে পরিচালনা করি।আমি যত বেশি বক্তৃতা দিয়েছি, আমার বক্তব্যের ব্যাপারে আমি ততটাই স্বস্তিকর ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি। কিন্তু আমার সক্ষমতার উপর আত্মবিশ্বাস অর্জন করার পরও খেয়াল করলাম যে শরীরের অনুভূতিগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়নি। তখনি আমার মনে হলো যে, এটা হয়তো আমার শরীরের অসাধারণ কিছু করার বিশেষ একটি উপায়। সুতরাং, নিজেকে আমি বলতে শুরু করি যে স্নায়বিক চাপের পরিবর্তে আমি উত্তেজনা বোধ করছি।
বলুন- আপনি উত্তেজিত
আমি জানতাম না যে আমার কৌশলের পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ছিল। একে বলা হয় উদ্বেগ পুনর্মূল্যায়ন। উদ্বেগকে উত্তেজনা হিসেবে পুনঃকাঠামো প্রদান সত্যিই কাজ করে। এটা যতটা সহজ ততটাই শক্তিশালী। ‘হার্ভার্ড বিজসেন স্কুল’-এর অধ্যাপক ‘এলিস উড ব্রুকস’ গবেষণার পর গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন প্রমাণ করার জন্য যে, এটা শুধু উদ্বেগই কমায় না বরং আপনাকে গণিত পরীক্ষা, কথা বলা এবং আরো অনেক ব্যাপারে ভালো করতে সাহায্য করে থাকে।সংক্ষেপে, যেহেতু উদ্বেগ একটি অস্বাভাবিক অবস্থা, নিজেকে শান্ত করার চেষ্টার বদলে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে এই বলে সন্তুষ্ট করতে পারেন যে, এইসব স্নায়বিক অনুভূতিসমূহ আসলে শুধুই উত্তেজনা। এই কৌশলটি ব্যবহার করার সময় ‘কারাওকি’ গান গাওয়া থেকে শুরু করে ক্যামেরার সামনে বক্তৃতা করা বা গণিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণসহ সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যে সকল অংশগ্রহণকারী বলেছিল “আমি উত্তেজিত”, তারা প্রতিটি একক
পৃষ্ঠা:৬৯
চ্যালেঞ্জে ভালো করেছিল তাদের চাইতে, যারা বলেছিল “আমি উদ্বিগ্ন”। স্নায়ুকে উত্তেজনায় পুনঃকাঠামো প্রদান করা কাজ করে থাকে। ‘সুজি’ যেমনটি করেছিলেন। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করে এইসব অনুভূতি যা তাকে থামিয়ে দিচ্ছিল, পাকস্থলীর ভেতর পুরে রেখে দিয়েছিলেন। তার স্বামী অবসর নেওয়ার পর তারা পূর্ব উপকূলের দিকে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা ভাবছিলেন, কিন্তু প্রতিবার তার পাকস্থলীতে যে অনুভূতি হচ্ছিল তা ছিল ভয়। পরিবর্তনের”আমি উত্তেজিত” নিজেকে একথা বলার বিষয়টি হলো এটা আপনার শরীরে বয়ে যাওয়া অনুভূতিগুলোকে হ্রাস করবে না বরং আপনার মস্তিষ্ককে এমন একটি ব্যাখ্যা দেবে যা আপনাকে শক্তি জোগাবে। এই প্রক্রিনয়ায় স্নায়বিক বোধগুলো আর বাড়বে না। আপনি নিয়ন্ত্রণের ভেতর থাকবেন এবং যখন ‘মুক্ত’ করবেন, আপনার শরীরে থাকা উত্তেজনা শান্ত হতে শুরু করবে।পরবর্তী সময়ে আপনি যখন কফি তৈরি, উত্তেজনাকর মঞ্চ অভিজ্ঞতা, খেলা-পূর্ব ভয়, পরীক্ষার দুশ্চিন্তা অথবা চাকরির সাক্ষাৎকারের মতো আতঙ্ক আক্রমণের শিকার হবেন, আপনার উদ্বেগকে পরাস্ত করতে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির সাথে এই নতুন গবেষণাটি ব্যবহার করতে পারেন। যখনি আপনি অনুভব করবেন উদ্বেগণ আপনার শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে, রুল’টি ৫- ৪-৩-২-১ ব্যবহার করে আপনার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিন। নিজেকে বলুন – “আমি খুবই উত্তেজিত” এবং নিজেকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দিন।শারীরিক প্রভাব (ধাক্কা) খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং গণনা দ্বারা এর শুধু। নিজেকে প্রয়োগ করার মাধ্যমে এটি আপনার ‘প্রিফ্রন্টাল করটেক্স’কে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার অনুমতি দেয় এবং একটি ইতিবাচক ব্যাখ্যার উপর আপনাকে ‘ফোকাস’ করে। প্রথম যখন আপনি এই কৌশলটি ব্যবহার করা শুরু করবেন, আপনাকে হয়তো ঘণ্টায় ২৭ বার এটি পুনরাবৃত্তি করতে হবে। আমার ১১ বছর বয়সী সন্ধান প্রথমবার তার বন্ধুর বাড়িতে ঘুমাতে যাবার সময় উদ্বেগ দূর করতে রুলটি ব্যবহার করেছিল। তার ভাষায় “আমি উত্তেজিত ছিলাম এবং পুরো ৬ মাইল যাত্রাপথে বারবার ঘুমিয়ে পড়ছিলাম”। তার ছোট্ট হৃদয়ের প্রতি আশীর্বাদ।আমি যখন ‘কুইনস ড্রাইভওয়ে’তে গাড়িটি ‘পার্ক’ করে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম “তুমি কি ঠিক আছ?” সে জবাব দিয়েছিল “আমার হৃৎপিণ্ড এখনো দৌড়াচ্ছে এবং পাকস্থলীতে অদ্ভুত অনুভব করছি, কিন্তু আমি খুবই উত্তেজিত”। সেটা ছিল ৬ মাস আগের ঘটনা। তার উদ্বেগ এখন আর নেই, সে এখন প্রকৃতই উত্তেজিত। আর এটাই হলো এই হাতিয়ারটির শক্তি, এটা সত্যিই কাজ করে। “আপনি যতটা বিশ্বাস করেন তার চাইতে বেশি সাহসী, যতটা মনে হয় তার চাইতে বেশি শক্তিশালী এবং যতটা মনে করেন তার চাইতে বেশি করিতকর্মা।”- এ. এ. মিলনে
পৃষ্ঠা:৭০
(১৪) ভয়কে জয়“মানোবল, শিয় হৃদয়।”- সি. এস. লিউইস
ভয় আমাদেরকে কঠিন কাজ করতে সাহায্য করে। আমার জীবনের একটি বড় ভয় হলো উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় অগ্নিকাণ্ডের ভেতর মৃত্যুবরণ করা। বিমানে আরোহণ করার সময় আমি পুরোপুরি উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়তাম। আকাশ ভ্রমণের ব্যাপারে আমার সবধরনের কুসংস্কার ছিল। প্রথমেই আমি ‘বোর্ডিং” এলাকায় খুঁটিয়ে দেখতাম ছোট বাচ্চা কোলে মহিলা, ‘ইউনিফর্ম পরিহিত নারী-পুরুষ, পুরোহিত, নান, ‘হুইলচেয়ার’ যাত্রী, কাজ শেষে কোনো ‘পাইলট’- এর বাড়ির পথে গাড়ি ধরা কিংবা সাধারণ অদ্র চেহারার মানুষজন। অতঃপর নিজেকে বলতাম ঈশ্বর নিশ্চয় এইসব চমৎকার মানুষ নিয়ে বিমানটিকে নিচে পড়তে দেবে না। এটা বিমানে আরোহণের পূর্ব পর্যন্ত আমাকে শান্ত রাখত। তারপর, ‘রানওয়ে’র পথে প্রতিটি ওঠানামা বা শব্দ আমার হৃৎপিণ্ডকে উত্তেজিত ও শরীরকে শক্ত করে দিত।মাটি ছাড়ার মুহূর্তটি হতো সবচেয়ে খারাপ। সমতল ছেড়ে বিমানের ঢাকা। যখন আকাশে, আমি তখন পুরোপুরি আতঙ্কিত অবস্থায়। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলতাম এবং কল্পনা করতাম একটি বিস্ফোরণ, সন্ত্রাসী হামলা, আমার আসন সারিটি বিমানের ভেতর আটকে পড়া কিংবা আকাশ থেকে বিমানটির পতন। আমি হাতল আঁকড়ে ধরতাম এবং খুব কষ্ট করে নিঃশ্বাস নিতাম। ‘পাইলট’ যখন ‘লাউডস্পিকার’-এ আমাদের সঙ্গে কথা বলত, আমার ভয় তখন অর্ধেকে নেমে আসত। ‘সিটবেল্ট লাইট’ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি আরাম করে বসতে পারতাম না। এটা ছিল একটি নিদর্শন যে ‘পাইলট’ বিশ্বাস করছেন বিমানের ভেতর এখন নড়াচড়া করাটা নিরাপদ। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবনা আপাতত নেই।’দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ এবং একটি বিশেষ উদ্বেগ পুনর্মূল্যায়ন পদ্ধতি, যাকে আমি বলি ‘উপস্থাপক ভাবনা’ ব্যবহার করে আমি আমার আকাশেগুড়ার ভীতি নিরাময় করেছিলাম। আপনিও একই ধরনের যে কোনো ভয়ের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
একটি “উপস্থাপক ভাবনা” তৈরি করুন
যখনি আমি কোনো কারণে স্নায়ুচাপ চিহ্নিত করি, সেটা হোক না কোনো বিপজ্জনক শব্দ, বিমানের ওঠানামা, লম্বা সময় ধরে ওপরে ওঠা, ভীতিকর আবহাওয়া কিংবা পাশের কোনো যাত্রীর খারাপ পরিস্থিতি, আমার ভয় খুব সহজেই ডালপালা মেলে দেয় কারণ আমার চিন্তা করার ধরনটি মজ্জাগত। এটা যখন ঘটে, মাথা থেকে ভয় দূর করতে, আমার ‘প্রিফ্রন্টাল করটেক্স’কে সক্রিয় করতে এবং বর্তমান মুহূর্তটিতে নিজেকে টেনে দাঁড় করাতে আমি ক্ষণ গণনা ৫-৪-৩-২-১ শুরু করি।অতঃপর, আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানকার নির্দিষ্ট দৃশ্যকল্পের উপর নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য নিজের ওপর জোর খাটাই এবং চিন্তা করি- মায়ের সাথে সৈকতে ভ্রমণ, ‘শিকাগো’তে কোনো ‘ক্লায়েন্ট’-এর সাথে নৈশভোজ অথবা বন্ধুদের সঙ্গে উত্তাল সময় উপভোগ করার ব্যাপারে আমি কতটা উত্তেজিত।এই উপস্থাপনার ছবিগুলো কিছু সহজ সত্যের শক্তিশালী স্মৃতিচিহ্ন। আমি যদি আজ রাতে শিকাগো’তে কোনো ‘ক্লায়েন্ট’-এর সাথে রেস্তোরাঁয় বসে নৈশভোজ করি, অথবা আগামীকাল ভোরে ‘মিশিগান’-এ মায়ের সাথে সৈকত ভ্রমণ করি, অথবা সঠিক সময়ে বাড়ি ফিরে মেয়েদের সাথে ‘লাক্রসি’ খেলায় অংশগ্রহণ করি, তাহলে অবশ্যই আমার বিমানটি ভেঙে পড়েনি এবং এ নিয়ে আর চিন্তা করার কিছু নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমি আমার মস্তিষ্ককে এমন কিছু দেখাচ্ছি যা সে দেখতে চাইছে, যাতে করে ভয় কমে যায়। আমি যখন’উপস্থাপক ভাবনা’ নিয়ে চিন্তা করি, আমার শরীর শান্ত হতে থাকে।এই কৌশলটি ক্রমাগত ব্যবহার করার মাধ্যমে আমি আমার আকাশ ভ্রমণের ভীতি নিরাময় করেছি। এটা বারবার ব্যবহার করতে করতে একসময় সহজ হয়ে যায় হঠাৎ আপনি আর কোনোরকম ভয় না পাওয়া পর্যন্ত। আপনি
পৃষ্ঠা ৭১ থেকে ৮০
পৃষ্ঠা:৭১
আপনার মস্তিষ্ককে ইতিবাচক হতে প্রশিক্ষণ দেবেন। ভয় পাওয়ার পরিবর্তে আপনি যা চান উত্তেজিত হতে।’ফ্রান’, একটি সম্মেলন থেকে এই কৌশলটি শেখার পর বিমানে উঠে তৎক্ষণাৎ এর ব্যবহার করেছিলেন এবং এটি তার জন্য একটি ‘পৃথক পৃথিবী’ সৃষ্টি করেছিল। তার শেষ কথাটি আমার ভালো লেগেছে “আমি বিশ্বাস করতে পারিনি ভয় পাওয়ার কারণে আমি কি হারাচ্ছিলাম”। তিনি সঠিক বলেছেন এবং এটা সত্যিই হতাশাজনক। আমিও ঠিক একই জিনিস উপলব্ধি করেছিলাম ভয়ের সাথে বসবাস করার কারণে প্রতিটি দিন আমি আমার আনন্দ, সুযোগ এবং জাদু লুট করছিলাম। এটি এরকম হওয়ার কথা ছিল না। সমান্তরাল ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আপনি নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারেন এবং ভয়কে পরাস্ত করতে পারেন।এখন, বিমান ভ্রমণ করার সময় আমি আর কখনোই ভয় পাই না। কখনো যদি বিরক্তিকর ওঠানামার মধ্যে পড়ে যাই, আমি রুল’টি ব্যবহার করি যাতে করে পাশে বসা যাত্রীর হাতে আমার নখের আঁচড় কাটতে না হয়।যাইহোক, অন্যান্য ভয়ের ক্ষেত্রেও আমি এই কৌশলটি ব্যবহার করি। একটি আপসরফা কিংবা কঠিন আলোচনার পূর্বে, উদাহরণস্বরূপ, যখন আমি আলোচনার উপস্থাপক ভাবনা’টি তৈরি করছি অথবা আপসরফাটি খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে বিশেষত, যখন আমি কল্পনা করছি কারো আলিঙ্গন অথবা প্রিয় কোনো অগুঁড়িখানায় বসে আমার ব্যবসায়িক অংশীদারের সাথে আলোচনা বা ব্যবসায়িক লেনদেন উদ্যাপন উপলক্ষ্যে নিজেকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।এই ভাবনাগুলো আমাকে মাটিতে রাখে এবং শক্তিশালী করে। আপনি যখন ভয়কে নিয়ন্ত্রণের আলোচনায় প্রবেশ করবেন, আপনি আপনার শ্রেষ্ঠ অবস্থানে থাকবেন না কারণ বাস্তব মুহূর্তে আপনার মস্তিষ্কের অংশবিশেষ ঐ ভয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে ব্যস্ত থাকবে। আপনার যখন একটি ‘উপস্থাপক। ভাবনা’ থাকবে, এটি আপনাকে ভয় মুছে ফেলার অনুমতি দেবে, যখনি এটি উপলব্ধি করবে যে আপনার মন ভয়ের স্রোতে ঝুঁকে পড়েছে।মনে রাখবেন, যদিও আপনার ভয় এবং অভ্যাস আপনাকে ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারে, আপনি ঠিক ঐ সময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারেন এবং চিরতরে এটি করে যেতে পারেন।আপনার মনকে নিরন্ত্রণ করতে পারলে সবকিছুই সম্ভব।
পৃষ্ঠা:৭২
একজন পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব হওয়ার উপায়
আমরা বইটির শেষ পর্যায়ে আছি। আপনি ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির গল্প শুনেছেন, প্রাত্যহিক মনোবলের ধারণাটি বুঝেছেন এবং আচরণ ও মনোজগতে পরিবর্তন আনতে রুল’-টির আরো অধিক কৌশলগত ব্যবহার শিখেছেন। আপনি এখন গভীর ও প্রাণবন্ত বিষয়গুলোতে প্রবেশ করতে প্রস্তুত যা আপনার আত্মসংযোগের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।এখষত- আপনি আত্মবিশ্বাস অন্বেষণ করবেন এবং কিভাবে প্রাত্যহিকমনোবলের কাজগুলোকে ব্যবহার করে একে নির্মাণ করা যায় তা শিখবেন। আপনি আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বের মধ্যকার বিস্ময়কর সংযোগ সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনি সেইসব মানুষদের সাক্ষাৎ পাবেন যারা তাদের আত্মবিশ্বাস বিনির্মাণের মাধ্যমে বিশাল সফলতা অর্জন করেছেন। এবং কিভাবে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটির (আপনি নিজে) সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপন করা যায় সেই সংক্রান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অত্যন্ত সৎ কিছু ‘পোস্ট’ সম্পর্কে জানতে পারবেন।দ্বিতীয়ত আপনি শিখবেন কি করে প্রাত্যহিক মনোবল আপনার আবেগগুলোকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। আপনি সেইসব নারী- পুরুষদের সাক্ষাৎ পাবেন যারা তাদের ভয়কে পরাজিত করতে এবং বুকের ভেতরে থাকা ভালোলাগাকে অনুসরণ করতে রুল’টি ব্যবহার করেছেন। তাদের উদাহরণ আপনাকে একই কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।তৃতীয়ত আপনি আবিষ্কার করবেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে কে বা কারা গভীর ও অর্থপূর্ণ সংযোগ সৃষ্টি করেএবং মনোবল কেন তাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই অংশের আশ্চর্যজনক গল্পগুলো আপনাকে আপনারভালোব্যসার মানুষের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটাতে এবং আপনার সম্পর্কগুলোকে গভীরতর করতে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সহজ কাজগুলো করার উৎসাহ জোগাবে। এটি আমার এই বইয়ের সবচেয়ে প্রিয় অংশ। আপনি যদি আপনার আত্মবিশ্বাস, আবেগ এবং মানুষের সঙ্গে সংযোগ সমৃদ্ধ করতে পারেন, আপনার জীবন এমনভাবে রূপান্তরিত হবে যা আপনি শুধু স্বপ্ন দেখেছেন। আপনার মূল্য বুঝতে না পারার মতো কেউ না কেউ সবসময়ই থাকবে। আপনি এটা হতে দেবেন না।
পৃষ্ঠা:৭৩
(১৫) সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি“আপনার কাঙ্ক্ষিত গুপ্তধন পেতে হলে ভয়কে গর্তে ঢুকিয়ে দিল।”জোসেফ ক্যাম্পবেল
মানুষ এই ভেবে একটি বড় ভুল করে যে, আত্মবিশ্বাস হলো ব্যক্তিত্ব সংক্রান্ত একটি বিষয়। ঠিক নয়। আত্মবিশ্বাস মানে আপনার নিজের উপর, আপনার ধারণার উপর, এবং আপনার সক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখা। যে কেউ আরো অধিক আত্মবিশ্বাসী হওয়া শিখতে পারেন। এটি কোন ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য নয়। এটি একটি দক্ষতা।আপনার হয়তো একটি বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব রয়েছে এবং আপনি অনেক কথা বলেন কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি আত্মবিশ্বাসী। ঘরের ভেতর বেশি কথা বলা ব্যক্তিটি হয়তো আসলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অথবা কথা বলছে এই ভেবে যে তাকে হয়তো ভালো দেখাচ্ছে। আমার মতোই। দীর্ঘ সময় ধরে আমি উচ্চকণ্ঠ ও কর্তৃত্বপরায়ণ ছিলাম। কিন্তু আমি আসলে নিজের উপর, আমার ধারণা ও সক্ষমতার উপর নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেছি।আপনি যাদের সবচেয়ে চুপচাপ জানেন তারাই হয়তো সবচেয়ে আত্মবিশ্বাসী। আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু যে একজন অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ, হয়তো তিনি তার ধারণাগুলোর উপর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বঃ কিন্তু কথা বলার ব্যাপারে ভীত কারণ কথা বলতে গেলে তার মুখ রক্তিম হয়ে ওঠে। তার ধারণাগুলোর উপর আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি নেই, শুধুমাত্র গোলাপি বিবেচিত হওয়ার ভয়ের ভেতর দিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিতে তার হয়তো একটু মনোবল দরকার।আমার একটি অভিজ্ঞতা হয়েছিল যা আত্মবিশ্বাস, মনোবল ও ব্যক্তিত্বের মধ্যকার সংযোগকে ব্যাখ্যা করবে। এটা আপনাকে আরো দেখাবে যে, আরামদায়ক এলাকার বাইরে নিজেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার সময় আপনি প্রকৃত গর্ব অনুভব করেন। সম্প্রতি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি ও সেবা সংস্থা ‘সিসকো’র সাথে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। কয়েক মাস পরআলোচনার জন্য আমি পুনরায় সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। এবারে একটি জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী দলের সঙ্গে।আমি যখন সেই দ্বিতীয় আলোচনার জন্য পৌঁছলাম, ‘অডিওভিজ্যুয়াল’ দলের সঙ্গে কাজ করার সময়একজন লোক আমার কাছে এলো। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে উত্তেজিত ছিলেন এবং পুরনো বন্ধুর মতো আমাকে আলিঙ্গন করে অভিবাদন জানালেন। মধ্য-পশ্চিম অঞ্চল থেকে আসার কারণে আমি উষ্ণ আলিঙ্গনের চাইতে আর কিছু বেশি ভালোবাসি না। তিনি তার উত্তেজনা সংবরণ করতে পারছিলেন না আমাকে বলার জন্য যে, রুলটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তার বলার আছে।কয়েক মাস আগে তিনি আমাকে ‘সিসকো’তে কথা বলতে দেখেছেন। সেই সময়, যেমনটি আমি প্রায়ই করে থাকি, শ্রোতাদেরকে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করার একটি ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ দিয়েছিলাম।ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করে তিনজন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করুন।তারপর, কিভাবে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’টি করতে হবে তা ব্যাখ্যা করেছিলাম:আপনার অনুভূতি এবং যে মুহূর্তটিতে আপনি কারো প্রতি টান অনুভব করবেন, তার প্রতি মনোযোগী হোন। এটাই ধাক্কা দেবার সময়। একে কড়ায়ত্ত করুন। ক্ষণ গণনা শুরু করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ঐ ব্যক্তিটির দিকে হাঁটা শুরু করুন, আপনার মন আপনাকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার আগেই।তারপর আমি শ্রোতাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলাম, এই সহজ ‘অ্যাসাইনমেন্ট’টি করবার সময় তারা কি আশা করতে পারেন। যেই মুহূর্তে তারা কারো সঙ্গে পরিচিত হতে চাইবেন, তাদের মন লক্ষ লক্ষ অজুহাতে ভরে উঠবে এই যুক্তিতে যে, কেন তাদের নিজেকে পরিচিত করানো উচিত নয়।”ওহ্… দাঁড়াও। তারা অন্য লোকদের সঙ্গে কথা বলছে আর আমি অভদ্র হতে চাই না: তাকে ব্যস্ত মনে হচ্ছে সুতরাং পরে দেখা যাবে। তিনি তার
পৃষ্ঠা:৭৪
ফোনটির দিকে তাকিয়ে আছেন সুতরাং আমি ব্যাঘাত ঘটাতে চাই না। হাতে খুব একটা সময় নেই তাই আমি এটা পরবর্তী বিরতিতে করব।”আর এই সবকিছু যা আপনি চিন্তা করছেন সত্যি নয়। আসলে আপনার মন আপনাকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করছে।এরপর আমার নতুন প্রকৌশলী বন্ধুটি আমার ‘অ্যাসাইনমেন্ট’টির সারসংক্ষেপ দেওয়ার পর বর্ণনা করলেন তার সঙ্গে কি ঘটেছিল। ‘সিসকো লাইভ’-এ আমার বক্তৃতার পর ‘হলরুম’ থেকে বাইরে যাবার পথে তার একটি ‘ধাক্কা দেওয়ার মুহূর্ত’ এসেছিল। ‘সিসকো’র প্রধান নির্বাহী ‘জন চ্যাম্বার্স’ জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের একটি দলের সঙ্গে হেঁটে আসছিলেন। এখন, আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, ‘সিসকো’তে জন চ্যাম্বার্স একজন কিংবদন্তি এবং সর্ববিবেচনায় তিনি এক মহান ব্যক্তিত্ব। ‘জন চ্যাম্বাস’ প্রধান নির্বাহী হিসেবে ২৫ বৎসর কাজ করেছেন এবং এর পরদিনই ঘোষণা করা হচ্ছে যে তিনি পদত্যাগ করছেন, ‘চাক রবিন্স’ তার স্থলাভিষিক্ত হবেন।সুতরাং, ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি নতুন করে শেখা আমার প্রকৌশলী বন্ধুটি ‘হলওয়ে’তে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ‘চ্যাম্বার্স’ ও তার প্রবৃত্তিকে জ্বলে উঠতে দেখলেন। নিজেকে পরিচিত করানোর তাৎক্ষণিক একটি ব্যাকুলতা তিনি দেখতে পেলেন এবং ‘জন চ্যাম্বার্সীকে ধন্যবাদ জানাতে চাইলেন, সাথে সাথে এটাও তাকে জানাতে চাইলেন যে ‘সিসকো’র একজন প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতটা গর্ববোধ করেন। তিনি আমাকে বললেন, তিনি জানতেন তার এটা করা উচিত এবং নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টাও তিনি করেছিলেন কিন্তু বাস্তবে তিনি জমে গিয়েছিলেন।তার বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি একজন অন্তর্মুখী ধরনের মানুষ আর এ ধরনের জিনিস তার স্বাভাবিকভাবে আসে না। মুহূর্তটি চলে যায়। তার নায়ক চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং বাকি দিনটি তিনি নিজেকে গালমন্দ করে কাটান ঠিক সময়ে নিজেকে পরিচিত না করানোর জন্য। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এটাই তার গল্পের শেষ নয়।পরদিন ভোরে, আমার নতুন বন্ধুটি ‘সান দিয়েগো’ শহর কেন্দ্রের ‘এমবারকাদেরো পার্ক’-এ জগিং করছিলেন। এই সুন্দর বাইসাইকেলচালানোর পথটি দৌড়বিদ, সাইকেল চালক ও পথচারীতে পরিপূর্ণ ছিল (স্বাভাবিকভাবেই)। তিনি ‘ইয়ারফোন’ কানে দিয়ে গান শুনছিলেন এবং হঠাৎ করেই, ভাবতে পারেন কে ঐ পথে তার সামনে এসে পড়ল? ঠিক বলেছেন, ‘জন চ্যাম্বার্স’।’চ্যাম্বার্স’ একা ছিলেন, তার ‘ইয়ারফোন’ কানে ছিল এবং তিনিও জগিং করছিলেন। আমার বন্ধুটি ভাবলেন, এটাই সময়। এখনই, না হয় কখনোই নয়। তিনি বলেন “আমি তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম তার ব্যক্তিগত সময়ে ব্যাঘাত সৃষ্টি করব এবং এটা হবে খুবই অভদ্রতা। কিন্তু যখন দেখতে পেলাম আমি দ্বিধাগ্রস্ত, আমি ক্ষণ গণনা শুরু করলাম ৫-৪-৩-২-১।”তিনি ‘চ্যাম্বাস’-এর দিকে এগিয়ে গেলেন, বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইলেন এবং ব্যাখ্যা করলেন ‘সিসকো’তে তার বিস্ময়কর পেশাজীবনের জন্য কেমন করে সবসময় ব্যক্তিগতভাবে তিনি ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছেন। তারা দু’জনই জগিং থামিয়ে দিয়ে একসাথে ‘এমবারকাদেরো’র পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলেন।আমার বন্ধুর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘চ্যাম্বার্স ছিলেন খোশমেজাজি ও আকর্ষণীয়। তারা সবধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন কাজ, জীবন, এমনকি আমার বন্ধু যে প্রকল্পে কাজ করছিলেন সেই সম্পর্কিত একটি ধারণা বিষয়েও। আলাপের শেষ পর্যায়ে ‘চ্যাম্বার্স তার সঙ্গে হাত মেলালেন, পরিচিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানালেন এবং ‘সিসকো’তে নতুনত্ব প্রবর্তন বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার নাম বললেন যাতে করে তিনি ‘চ্যাম্বার্স’-এর নাম করে তার ধারণাটি শেয়ার করতে পারেন।আমার নতুন বন্ধুটি আমাকে এই গল্পটি শোনানোর সময় যে ঘরে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম সেটিকে উজ্জ্বল করে তোলার মতো জ্বলজ্বল করছিলেন “এটা ছিল আমার পেশাজীবনের উজ্জ্বল মুহূর্ত। মেল, ‘ফাইভ সেকেন্ড ল’-টি ছাড়া এটা কখনোই সম্ভব হত না। জানিনা কি করে আপনাকে ধন্যবাদ জানাব।”এবং তারপর যোগ করলেন “ওহ্ গড়, বলতে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি এখন চাকরির জন্য এক ব্যক্তির নিকট সাক্ষাৎকার দিচ্ছি যাকে ‘চ্যাম্বার্স’ আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।”
পৃষ্ঠা:৭৫
তিনি কি চাকরিটি পেয়েছেন?
সত্যিই আমার কোনো ধারণা নেই। ঢাকরিটি এই গল্পের মূল বিষয় নয়। এটি হলো প্রাত্যহিক মনোবল এবং কিভাবে তা আত্মবিশ্বাস তৈরি করে সেই সংক্রান্ত গল্প। এই একক অভিজ্ঞতাটির মধ্যে একটি ঢাকরির চাইতে অনেক বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তিনি তার প্রবৃত্তির কথা শুনতে এবং অনুসরণ করতে রুল’টি ক্রমাগতভাবে ব্যবহার করেন, এটি তার জীবনের জন্য সম্ভাব্য একটি ভালো অভিগমন পরিবর্তন হতে পারে।প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে সাক্ষাতের উচ্ছ্বাস তার ভেতরে ছিল না, যদিও এটা ছিল অসাধারণ। কিন্তু আরো অনেক বেশি ছিল নিজের ইচ্ছাকে সম্মান প্রদর্শন, সেই মুহূর্তের ভালোলাগা এবং জীবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের অনুভূতি সংক্রান্ত বিষয়।মনে রাখবেন, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় প্রাত্যহিক মনোবল দ্বারা। তিনি এই অভিজ্ঞতাই অর্জন করছিলেন নিজের উপর নির্ভরতাকে জানার দীপ্তি। আমার প্রকৌশলী বন্ধুটি যতবেশি এই প্রাত্যহিক মনোবল কর্মটি অনুশীলন করবেন, ততবেশি নিজের উপর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।মনে রাখতে হবে, প্রতিটি একক দিনে আপনি যে ছোট ছোট কাজগুলো করেন, তার মাধ্যমেই নিজের উপর বিশ্বাস তৈরি হয়।’বিল’ নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে আমি একটি বার্তা পেয়েছিলাম যা এই পর্যায়ে নিজের উপর বিশ্বাস করতে শেখার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করবে। ‘বিল’ তার একটি সংগ্রামের বর্ণনা দিয়েছেন যা আমরা অনেকেই সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করে থাকি এবং যা খুবই প্রেরণাদায়ক।
“সত্যিকারের আমি হয়ে ওঠায় ব্যাপারে আমার একটি সমস্যা আছে”
বাইরে থেকে ‘বিল’-এর জীবন দেখতে ছিল অসাধারণ। তিনি বিবাহিত, চার সন্তানের বাবা, একটি সফল কর্মজীবন এবং একটি পেশাদারী সংস্থার সভাপতি। চমৎকার জীবন, কি বলেন? তাইতো মনে হচ্ছে। কিন্তু এখানে কিছু একটা অনুপস্থিত আছে, এবং তার সঙ্গে এর একটি অর্থপূর্ণ সংযোগ রয়েছে।’বিল’ এটা স্বীকার করার মতো যথেষ্ট সাহসী যে, তিনি যথেষ্ট দৃঢ়তার সঙ্গে বসবাস করছেন না। আর এটা (আমাদের অনেকের মতো) দ্বিধা, অতি- চিন্তা, যা করা বা বলা উচিত তা কখনোই না করা বা বলার একটি অভ্যাস গড়ে তুলেছে। ‘বিল’ অনুভব করছেন মানুষের সঙ্গে বাস্তব সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন।তিনি ভুলে যাচ্ছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন তিনি হারিয়ে ফেলেছেন সে হলো তিনি নিজে। আপনি যখন প্রকৃত আপনার সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলবেন, আপনার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যাবে এবং আপনার জীবন থেকে পরিপূর্ণতার স্বাদ চলে যাবে।’ফাইন্ড সেকেন্ড রুল’-টির সাহায্যে আপনি এটি ফিরে পাবেন। ‘বিল’ তার নিজের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করার জন্য রুল’টির ব্যবহার শুরু করেন। সম্পর্কের গভীর যেতে একটু একটু করে হাজারো ধাপ পেরোনোর যাত্রাপথে হাঁটা শুরু করেন। ছোট ছোট কাজগুলো করতে নিজেকে ধাক্কা দিতে থাকেন যা নীরবে নিজেকে বিশ্বাস করতে শেখায়। একটি সুন্দর জীবন ছোট ছোট পদক্ষেপ দ্বারা তৈরী হয় কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ‘না’ বলতে সক্ষম হওয়া, এমনকি বিছানা ছেড়ে উঠে পোষা কুকুরগুলোকে বাইরে নিয়ে যাওয়া। এগুলো হয়তো নিজেকে বিশ্বাসকরতে শেখার ছোট পদক্ষেপ মাত্র, কিন্তু খুবই আনন্দদায়ক যা আপনার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সাহায্য করবে।’ট্রেসি’, একজন ৪৮ বৎসর বয়সী গৃহিণী মা। যার মনে হয়েছিল তিনি একটি কঠিন অভ্যাসের মধ্যে আটকে পড়েছেন এবং যখন ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি তিনি আবিষ্কার করলেন, একটি আলো যেন তার জন্য জ্বলে উঠল। তিনি এমন কিছু করার জন্য রুল’টি ব্যবহার করলেন যা বড় একটি প্রকল্পের ছোট কোনো অংশ কিন্তু এর অনুভূতি এবং উত্থান খুবই ব্যাপক যেমন গির্জায় বক্তৃতা দেওয়া কিংবা অনলাইনে নিজের ছবি ‘পোস্ট’ করা।আমরা ‘বিল’-এর কাছ থেকে যা শিখেছি তা হলো ছোট ব্যাপারগুলো মোটেই ছোট নয়। তারাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এবং তারা যোগ করে থাকে।
পৃষ্ঠা:৭৬
ছোট বিষয়গুলোতে আপনার নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে বড় কিছু করার আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
বড় পরিকল্পনায় বেশির ভাগ প্রয়োগ হয় ছোট কিন্তু এর অনুভূতি এবং উত্থান হয় ব্যাপক।
‘ট্রেসি’র লেখা চিঠি:”এখানে একটি তালিকা দেওয়া হলো যা আমি ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির সাহায্যে সম্পন্ন করেছি, অন্যথায় যা করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না-আমি উঠে দাঁড়িয়েছিলাম এবং একটি গানের অনুষ্ঠানে নেচেছিলাম, আমি আমার পছন্দের একজন লেখকের সাথে ছবি তুলে অন্তর্জালে ‘পোস্ট’ করেছিলাম (যদিও আমি আমার নিজের ছবি তোলা পছন্দ করি না), গির্জার ধর্মসভায় আমি বক্তৃতা করেছিলাম, আমি আমার স্বামীর সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম যা আমাকে বিরক্ত করছিল, নিজেকে আমি এমন সব মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম যাদের সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলাম, এবং আমি আমার বাড়িতে আরো অনেক কিছুই করেছি (জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া নয়)।এগুলো হয়তো পৃথিবীকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা নয় কিন্তু ‘মেল’, ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির শক্তি পেছনে থাকায় আমি এসব করতে পেরেছি।আমি এখন এই হাতিয়ারটি আমার বিবেচনায় আরো বড় এক যুদ্ধে ব্যবহার করতে চলেছি, যেমন ২৫ বৎসর যাবত আমি যে অতিরিক্ত শারীরিক ওজন বয়ে চলেছি তা কমানো এবং আমার হাইস্কুলের ৩০তম পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণ করার মনোবল অর্জন। আমি এমনকি আমার গল্প লিখতে এবং উপস্থাপন করতে রুল’টি ব্যবহার করেছি। আমি ‘ফাইফ সেকেন্ড রুল’ সংক্রান্ত বার্তাটি অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেছি এবং কিছু মানুষকে তাদের নিজেদের জন্য এটির অনুশীলন করতে শুনেছি ও দেখেছি। আমি জানি, আমি এই ক্ষমতায়নের ব্যবহার চালিয়ে যাব যা এখন পর্যন্ত জীবন বদলে দেয়ার একটি সহজ সূত্র।দীর্ঘসময় পর প্রথমবারের মতো মনে হচ্ছে আমি অচলায়তন ভাঙতে এবং কঠিন অভ্যাস ছেড়ে উঠতে শুরু করেছি। এরপর কি ঘটে তা দেখার জন্য আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।ধন্যবাদ মেল,ট্রেসি।”আপনি যখন নিজস্ব ধারণা নিশ্চিত করার কাজগুলো করেন, তখন আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। বিশেষতঃ এমন কিছু যা হয়তো আপনি সাধারণত করেন না, যেমন সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, ধর্মীয় বক্তৃতা করা অথবা সাইকেল চালানোর পথে “সিসকো”র প্রধান নির্বাহীর পিছু নেওয়া। এগুলো প্রাত্যহিক মনোবল সংক্রান্ত কাজ এবং এরাই আত্মবিশ্বাস তৈরি করে।ক্রিস্টাল’, প্রকৌশলী হিসেবে ২০০৫ সালে ‘সিসকো’র সরাসরি (লাইভ) অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং ফাইভ সেকেন্ড রুলটি সম্পর্কে আমাকে লিখেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন গত ৮ বৎসর যাবত প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি দ্বিতীয় ধারণাটি গ্রহণ করেছেন।”আমার মনে হয়েছে কেউ না কেউ আকর্ষণীয় ছিল কিন্তু এক মুহূর্ত বাদে আমার মস্তিষ্ক তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা না করার দশ লক্ষ কারণ আমাকে দেখিয়েছে।”তিনি পাশে বসা মানুষদের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ রুল’টির প্রয়োগ শুরু করেছিলেন। পরদিন যখন প্রশিক্ষক সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন কারো কোনো প্রশ্ন আছে কিনা, তিনি ভাবলেন তার প্রশ্ন আছে কিন্তু জিজ্ঞেস করতে বিব্রতবোধ করছিলেন। তারপর ভাবলেন এটা নিয়েচিন্তা করা বন্ধ করলেই তিনি দাঁড়াতে পারেন।’ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করে তিনি উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তার প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি আরো দু’জন ভদ্রমহিলাকেও পুরুষ প্রকৌশলী দ্বারা পরিপূর্ণ ঘরটিতে উঠে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। পরবর্তীতে, তিনি ক্ষণ গণনা ৫-৪-৩-২-১ করে একটি বাস্কেটবল খেলা
পৃষ্ঠা:৭৭
দেখতে গিয়েছিলেন যখন এর জন্য তিনি অনুভব করছিলেন না এবং একটি ‘বিজনেস কার্ড’-এর জন্য জিজ্ঞেস করার মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন। প্রাত্যহিক মনোবল সংক্রান্ত এই কাজগুলো করার কারণে তার মনোবল বেড়েছিল এবং তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল একটি নতুন চাকরি, একটি নতুন পদবি এবং একটি নতুন বাড়ি।’নবুও’, নির্বাহী পরিচালকের একটি ভূমিকা থেকে অব্যাহতি লাভ করার পর ‘ফাইন্ড সেকেন্ড রুল’-টির ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তিনি তার প্রেরণা হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং নিজেকে অসমর্থ মনে করছিলেন। রুল’টি ব্যবহার করে প্রাত্যহিক মনোবল প্রক্রিয়াটি অল্প অল্প অনুশীলন করার মাধ্যমে ‘নবুও’ ‘ক্রিস্টাল’ এর মতোই খুঁজে পেয়েছিলেন, তার ভাষায় “আমার হৃদয়, মন ও শরীরে শক্তি ও উদ্যম ফিরে এসেছে”। এটা ফিরে আসার কারণ তিনি নিজের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন জীবনে পরিবর্তনের জন্য কিছু করার শক্তি তার মধ্যে রয়েছে।ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে আর একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে চাই। মনে আছে প্রকৌশলী ভদ্রলোক কি বলেছিলেন যখন তিনি প্রথমবার মি. ‘চ্যাম্বার্সী’কে হলওয়ে ধরে হেঁটে আসতে দেখে অসাড় হয়ে গিয়েছিলেন? তিনি তার ধরন সম্পর্কে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন “আমি একজন অন্তর্মুখী ধরনের মানুষ এবং এই ধরনের ব্যাপারগুলো আমার খুব স্বাভাবিকভাবে আসে না।”কি হবে যদি আমি বলি আপনার জীবন অথবা ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত কোনোকিছুই স্থায়ী নয় বা স্বাভাবিকভাবে আসে না? আপনি অনুশীলন না করা পর্যন্ত কোনোকিছুই স্বাভাবিকভাবে আসবে না। আর তাই আমি সবসময় বলি – আপনাকে অবশ্যই প্রাত্যহিক মনোবল অনুশীলন করতে হবে।আপনার জীবনের প্রতিটি একক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত, পরিবর্তন অথবা সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা আপনার রয়েছে কাজের মাধ্যমে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যলয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ‘ব্রায়ান লিটল’ একটি অসাধারণ ‘টেড টক’ উপস্থাপন করেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল ‘সত্যিই আপনি কে? ব্যক্তিত্বের ধাঁধা’। এতে তিনি অন্তমুখিতা ও বহির্মুখিতা নিয়ে কথা বলেন এবং যে বিষয়গুলো আমাদের আত্মপরিচয় তৈরি করে তা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রফেসর’লিটল’-এর মতে “এটা আমাদের কাজ, এটা ব্যক্তিগত প্রকল্প”। তিনি বর্ণনা করেন কিভাবে আমাদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য স্থায়ী ও স্বয়ংক্রিয় কিন্তু বেশীর ভাগই ‘মুক্ত’ যা আমরা আমাদের জীবনের মৌলিক প্রকল্পটিকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সমন্বয় করতে পারি।’লিটল’ ব্যাখ্যা করেছেন ‘সিসকো’র প্রকৌশলীদের মতো তিনিও অন্তর্মুখী স্বভাবের। যাই হোক, তার মৌলিক ব্যক্তিগত প্রকল্প হলো অধ্যাপনা করা। তিনি শেখাতে ভালোবাসেন। সুতরাং, এমনকি অন্তর্মুখী হিসেবে তিনি যখন ক্লাসে ছাত্রদের সামনে সংযোগ স্থাপন করার জন্য দাঁড়ান, তাকে তার চরিত্রের বাইরে অভিনয় করতে হয়। এটা তিনি কেমন করে করেন? ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যমূলক কাজের মাধ্যমে। এটা করতে তার নিজেকে ধাক্কা দিতে হয়।আমার প্রকৌশলী বন্ধুর ব্যক্তিগত প্রকল্প ছিল ‘জন চ্যাম্বার্স’-এর কাছে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এ কারণে তার প্রবৃত্তি ছিল চরিত্রের বাইরে কাজ করা। এটা করতে কিভাবে তিনি নিজেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন? ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির সাহায্যে। উভয় ক্ষেত্রেই দুটি জিনিস উপস্থিত ছিল (১) অর্থপূর্ণ কিছু করার ইচ্ছা (ছাত্র বা প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন) এবং (২) হাচ্ছাকৃত কাজ (চরিত্রের বাইরে কাজ করার জন্য একটি ধাক্কা)।এটা কি একজন অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের জন্য প্রধান নির্বাহীর দিকে হেঁটে যাওয়া, ধর্মীয় বক্তৃতা দেওয়া অথবা ক্লাসে শিক্ষাদান করার মতো কাজ করার ক্ষেত্রে একজন বহির্মুখী স্বভাবের মানুষের চাইতে বেশী কঠিন বোধ হয়? হয়তো। হয়তো নয়। নির্ভর করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিটি কতটা আত্মবিশ্বাসী তার উপর। এবং আপনিজানেন, আত্মবিশ্বাস ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়।প্রফেসর লিটল’ যেমনটি বলতে পছন্দ করেন “আপনি অন্যদের মতো এবং কারো মতোই না”। আমি যা জানি তা হলো, প্রথমবার আপনি যখন কোনো কিছু করতে যাবেন, এটা একটু কঠিন মনে হতে পারে এবং হয়তো কিছুটা ভীতিকর। আপনার একটু সাহসের প্রয়োজন হবে। আমরা সকলেই চরিত্রের বাইরে কাজ করতে সক্ষম, যখন তা বিশেষ একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উদ্দেশ্যটি আমি চিন্তা করতে পারি তা হলো
পৃষ্ঠা:৭৮
আপনার জীবনকে এমনভাবে সমৃদ্ধ করা যা আপনাকে প্রাণবন্ত, সুখী ও পরিপূর্ণ করবে।এই কাজটি করতে কিভাবে আপনি আপনার চরিত্রের বাইরে কাজ করবেন? মনে করুন আপনি নিজেকে মূল্যায়ন করে ৫ সেকেন্ড রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রাত্যহিক মনোবল অনুশীলন করেছেন। এটা হয়তো পৃথিবী ভেঙে পড়ার মতো কোনো ঘটনা নয়, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটাই আপনার আত্মসন্দেহ দূর করে দেবে।আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মহত। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আমাদের নিজের বিশালত্ব দেখতে সাহায্য করে। ‘অ্যামবার’ নিজের ব্যাপারে যেমনটি আবিষ্কার করেছিলেন।এটি আমাদেরকে প্রারম্ভিক বিন্দুতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আপনি প্রাত্যহিক মনোবল যতবেশি করে অনুশীলন করবেন ততবেশি বিশ্বাস করবেন যে, আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই আছে এবং ফলাফলস্বরূপ আপনি আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। এমনকি আপনি যখন মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে পড়বেন, রুল’টি আপনাকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। মিশেল’ তার বিষাক্ত ও উদ্বেগ জর্জরিত কাজটি ছেড়ে দেওয়ার মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন যদিও তার ‘অজানার ভীতি’ ছিল। ঐ একটি প্রাত্যহিক মনোবলের কাজই তাকে আরো আত্মবিশ্বাসী ও সক্ষম করে তুলেছিল।’মিশেল’ আবিষ্কার করেছিলেন, যা করতে আপনি ভয় পান তা করার মাধ্যমে আপনি আরো আত্মবিশ্বাসীহয়ে উঠবেন। আপনার যদি পদক্ষেপ গ্রহণ করার সাহস থেকে থাকে, আত্মবিশ্বাস তাকে অনুসরণ করবে। প্রতিবার আপনি যখন স্নায়বিক অবস্থায় কথা বলতে, ভীত অবস্থায় কাজ করতে অথবা অনিচ্ছাসত্ত্বেও ‘জিমনেসিয়াম’-এ যেতে নিজেকে ধাক্কা দেবেন, আপনি অনুধাবন করবেন যে, কোনো কিছু সম্পন্ন করার ব্যাপারে নিজের উপর আপনি নির্ভর করতে পারেন। নিজের সক্ষমতার উপর এই বিশ্বাস থেকে প্রবাহিত হয় আত্মবিশ্বাস।’জয়’, টরেন্টোর’ একটি ‘পারফর্মিং আর্টস হাইস্কুল’-এ ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি কিছু করার জন্য বাইরে যেতে সবসময় স্নায়ুচাপে ভূগতেন। ‘ফাইভসেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করে তিনি অনেকগুলো চরিত্রের জন্য ‘অডিশন’ দিয়েছিলেন, অনেক দায়িত্ব পেয়েছিলেন এবং প্রচুর আত্মবিশ্বাসও অর্জন করেছিলেন।আপনি যত বেশি করে রুল’টি ব্যবহার করবেন, আপনার আত্মবিশ্বাস তত দ্রুত বাড়বে। ‘স্টেসি’ প্রায় প্রতিদিন মনোবলের সহিত রুল’টি ব্যবহার। করেন, মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলেন, ব্যবসার জন্য বাড়ি বাড়ি যান এবং ভয়ের কারণে কখনোই আর লুকিয়ে থাকেন না। প্রাত্যহিক মনোবলের সহিত রুল’টির ব্যবহার তাকে এমনভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে যা আমি কখনোই সম্ভব বলে মনে করিনি। তিনি আত্মবিশ্বাস বপন করেছিলেন যেমনটি তিনি সবসময় চেয়েছিলেন। এর অনুভূতি অসাধারণ।এই বইটি জুড়ে আপনি সেইসব মানুষের গল্প শুনেছেন যারা আপাতঃদৃষ্টিতে ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন এবং তাদের জীবনের বহির্ভাগ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। এই গল্পগুলো আলোচনা করা ছিল খুবই চিত্তাকর্ষক কারণ এটা অভাবনীয় যে প্রতিদিন ভোরে ঠিক সময়ে উঠে পড়ার মাধ্যমে আপনি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেন যা আপনার আত্মবিশ্বাসকে প্রভাবিত করে। যাই হোক, এটা এভাবেই করতে হয়। বড় জিনিসের উপর ‘ফোকাস’ করা বন্ধ করুন। ছোট জিনিসগুলোর উপর গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং দেখতে পাবেন, এই মুহূর্তগুলো আসলে মোটেই ছোট নয়।’বিল’ যেমনটি বলেছিলেন, বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ার প্রাত্যহিক মনোবল, কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, না বলতে সক্ষম হওয়া, প্রান্ত প্রতিটি সুযোগের সদ্ব্যবহার এবং অগ্রাধিকারগুলোর উপর মনোযোগ প্রদান একটি তরঙ্গ প্রভাব সৃষ্টি করে যা আপনার জীবনকে বদলে দেবে। এগুলো ছোট ছোট পদক্ষেপ কিন্তু এর প্রতিদানগুলো হলো তাই যা আপনি খুঁজছেন আত্মবিশ্বাস, নিয়ন্ত্রণ এবং গর্বের একটি অসাধারণ অনুভূতি। বলর দিয়ে কথা বলুন, আপনার কন্ঠস্বর বলি কাঁপে ভবুও।
পৃষ্ঠা:৭৯
(১৬) প্রবল ভালোলাগার পেছনে ছোটা“কিছু স্বর আছে শব্দহীন, শোনো।”- আলালআদ্দিন মোহাম্মাদ রুমী
বছরব্যাপী আমি মানুষের কাছ থেকে ভালোলাগা ও উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার উপায় সংক্রান্ত প্রচুর প্রশ্ন পেয়েছি। একবারও কাউকে তাদের প্রবল ভালোলাগা বা আবেগ সম্পর্কে চিন্তা করার ব্যাপারে সাহায্যের জন্য আমাকে জিজ্ঞেস করতে দেখিনি। কারণ ভালোলাগা খুঁজে পাওয়া একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া আর আপনি দেখতে পাবেন ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি সুযোগের দরজা খুলে দেওয়ার একটি অবিশ্বাস্য হাতিয়ার। নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে পদক্ষেপ গ্রহণ করার অপারগতা মানুষকে তাদের ভালোলাগা খুঁজে পাওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আপনি যখন সুযোগের সন্ধান ও তার উপর নির্ভর করা শুরু করতে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করে নিজেকে ধাক্কা দেবেন, আপনি দেখে বিস্মিত হবেন এটা আপনাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
আবেগ শুরু করুন
কিভাবে অন্বেষণ করবেন? সম্ভাব্য সেরা উপদেষ্টা ভাড়া করুন। আপনার কৌতূহলের বিষয় হবে- কিভাবে আপনার প্রবৃত্তি আপনাকে মনোযোগী করে তোলে যে ব্যাপারে আপনার হৃদয় সত্যিই যত্নবান, তা খোঁজা।আপনি যদি কোনো ব্যাপারে চিন্তা করা বন্ধ করতে না পারেন তাহলে নতুন কোনো শাখা তৈরি করুন। ঈর্ষার প্রতিও মনোযোগী হোন। আপনি যদি কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে থাকেন, তবে সেই অনুভূতিটি অন্বেষণ করুন। তাদের জীবনের কোন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনি ঈর্ষান্বিত? এটা হয়তো নিজের জন্য আপনি যা চান সেই ব্যাপারে আপনাকে কোনো সূত্র দিতে পারে।তারপর, সেই বিষয়টি অন্বেষণ করার সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নিজেকে ধাক্কা দিন, এ সম্পর্কে পড়াশোনা করুন, ভিডিও টিউটোরিয়াল’দেখুন, মানুষের সাথে কথা বলুন, একটি ক্লাসে অংশ নিন এবং একটি পরিকল্পনা খসড়া করুন। পরবর্তীতে যা ঘটবে, দেখে আপনি বিস্মিত হবেন।আপনার ভালোলাগা হতে পারে আলোকচিত্রবিদ্যা। চার বৎসর আগে ‘ক্রিস অডিটর’ প্রথম যখন ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি একটি ব্যাংকের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন (এখনও আছেন) এবং তিনি সবসময় আলোকচিত্রবিদ্য ভালোবাসতেন। তিনি তার ভালোলাগা অন্বেষণ করতে নিজের উপর জোর খাটানোর কাজে রুল’টি ব্যবহার করেছিলেন। ফলাফলস্বরূপ দুটি ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ, একাধিক পুরস্কার এবং এখন তিনি একজন পেশাদার আলোকচিত্র শিল্পী।আপনি হয়তো একটি ভালো মানের খাদ্য ব্যবসা চালু করতে হাল্লুক। এটা কোনো ব্যাপার না, আপনার যদি পূর্ব অভিজ্ঞত নাও থেকে থাকে। আজকের পৃথিবীতে সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করার জন্য আপনার হাতের কাছেই আছে প্রচুর সম্পদ। উদাহরণ হিসেবে ‘এরিক’কে নিতে পারেন। তিনি কম্বোডিয়ায় বসবাস করেন এবং একটি রপ্তানি ব্যবসা চালু করার পরিকল্পনা করছেন। ‘ইউটিউব’ দেখে এবং বই পড়ে যা কিছু শেখা সম্ভব তা করতে তিনি এখন নিজেকে ধাক্কা দিচ্ছেন। আর এভাবে আপনিও আপনার ভালোলাগা আবিষ্কার করতে পারেন। ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং ঝাঁকুনি খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খুঁজে দেখুন।
গতিবেগ তৈরি করুন
এটি একটি প্রবৃত্তি হিসেবে শুরু হবে। যেমন সবসময় হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম আপনি একটি ‘ক্লাস’-এ অংশ নিন। একটি ‘ক্লাস’ আপনাকে একটি সনদের দিকে নিয়ে যাবে। একটি সনদ আপনাকে কথোপকথনের দিকে নিয়ে যাবে। কথোপকথন আপনাকে সুযোগের দিকে নিয়ে যাবে। ছোট ছোট সুযোগ আপনাকে বড়গুলোর দিকে নিয়ে যাবে। আপনি হয়তো কর্মক্ষেত্রে মানুষের সাথে কাজ করতে গিয়ে যা শিখছেন তা ভাগ করে নিতে চান, আর তা করতে নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য আপনি রুল’টি ব্যবহার করে থাকেন। এটাই সেই সময় যখন গতিবেগ তৈরি হয়।
পৃষ্ঠা:৮০
আপনি হয়তো আমাকে অভিশাপ দেবেন যখন আসলেই ঘটনা ঘটতে শুরু করবে, কিন্তু আপনি আপনার হৃদয়কে বিশ্বাস করার মনোবল খুঁজে পাওয়ার জন্য নিজেকে ধন্যবাদ জানাবেন এবং যা দেখতে পাবেন তা খুবই চিত্তাকর্ষক। ‘জো’, ‘লন্ডন’ শহরের একজন ব্যাংকার। কিভাবে ক্ষুদ্র কোনো কিছু যেমন একটি ক্লাস নেওয়া সম্পূর্ণ নতুন একটি কর্মজীবন সৃষ্টি করতে পারে, ‘জো’ তার একটি চমৎকার উদাহরণ। গল্পটি তার মুখ থেকে শোনা যাক:”আমি ৮ জনের একটি ক্ষুদ্র দলকে সীমিত বিশ্বাস নিয়ে ‘পৃথিবীর মানচিত্র’ বিষয়ের উপর পরিচিতিমূলক একটি উপস্থাপনা করেছিলাম। যদিও আমি স্নায়বিক ছিলাম, কিন্তু উপস্থাপনার শেষে আমার বোধ হেঁটে এসে আমাকে বলেছিল এই কাজটিই তোমার করা উচিত, এটাকেই তুমি পেশা বানাতে পার। (সম্প্রতি আমি ব্যাংকার হিসেবে কাজ করছি। আমি সাহসের সাথে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিলাম এবং বৃটেনের একটি বৃহৎ মহিলা সংস্থাকে (লয়েডস্ ব্যাংকিং গ্রুপ পরিচালিত, যা আমার ব্যাংক) আমার সেবা পেশ করলাম। লম্বা গল্প, ছোট করে বলছি। তারা আমাকে তাদের ‘স্কটল্যান্ড ডিভিশন’-এ একটি উপস্থাপনা প্রদান করতে অনুরোধ করল। এটি এত ভালো হয়েছিল যে তারা আমাকে দ্বিতীয় উপস্থাপনার জন্য আমন্ত্রণ জানাল। এর সব কিছুই ঘটেছিল ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ এবং একটি ই-মেইল’-এর কারণে।জোব্যাংকার এবং কোচ (আমি মনে করি)।” আপনার অন্বেষণটি যখন গতি পাবে, আপনি পরবর্তী ধাপে ঢলে যাবেন। আসলে প্রবল ভালোলাগার পেছনে আপনি পূর্ণকালীন ছুটবেন। একসময়, আপনার খণ্ডকালীন ব্যবসা ‘আলোকচিত্রবিদ্যা’ আসল ব্যবসা হয়ে দাঁড়াবে। ‘ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড’-এ আপনার উপস্থাপনা একটি পূর্ণউদ্যম বক্তৃতা পেশায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
প্রতিজ্ঞা করার মনোবল
ঘোড়া টেনে ভালোলাগার কোনো প্রকল্পকে ভালোলাগা-চালিত পেশায় রূপান্তর করা অথবা জীবনের বড় কোনো পরিবর্তনের জাদুকরি সূত্র বলে কিছু নেই। এর জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা এবং কিছু ধীরস্থির ও সুগভীর চিন্তা-ভাবনা। আপনি যদি আমাদের বাকি সকলের মতো হয়ে থাকেন, আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনে দু’পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত আপনি নিজের উপর নির্যাতন করতে থাকবেন।মিশাল’-এর প্রধান ভালোলাগার প্রকল্প ছিল একটি ‘কোম্পানি’ চালু করা, যার জন্য তিনি বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন কিন্তু প্রকল্পটি তিনি আটকে রেখেছিলেন। নিজেকে ধাক্কা দিতে এবং নতুন ব্যবসার ‘শুরু’ ঘোষণা করতে তিনি ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করেছিলেন। এখন, ‘ঘুমিয়ে পড় বোতামটি আর কখনোই না টেপার একটি কারণ তার কাছে রয়েছে।আমরা সবাই উঠে দাঁড়ানোর জন্য উপযুক্ত এবং ‘ঘুমিয়ে পড়’ বোতামটি আর কখনো চিপতে চাই না। ‘মিশাল’-এর মতোই। আপনি যদি তার মাতো পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে থাকেন, নিশ্চিত করুন কি করে নিজেকে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আপনি আগ্রহী হবেন।আপনার নিজেকে প্রথমে আন্তরিক প্রশ্ন করতে হবে “আমি কি এই ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ?” প্রথম প্রশ্নটি অনুভব করার পরিবর্তে যদি প্রশ্ন করেন – “আমি কি এই ব্যাপারে অঙ্গীকার করার জন্য প্রস্তুত?” আপনি কখনোই প্রস্তুত বোধ করবেন না। যে মুহূর্তে আপনি “আমি কি এই ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলবেন, নিজেকে চূড়ান্ত ধাক্কাটি দিতে আপনাকে ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করতে হবে।এমনকি আপনি যখন প্রস্তুত, তারপরও কাজটি করার সময় আপনি হয়তো ভালোবোধ করবেন না। ‘অস্ট্রেলিয়া’ থেকে ‘উড’কে জিজ্ঞেস করে দেখুন। দীর্ঘ সময় ধরে ‘টড’ জানেন ঠিক কোন ব্যাপারে তিনি প্রচণ্ড আগ্রহী শারীরিক শিক্ষা। তিনি এটি শেখানোর ব্যাপারে সবসময় স্বপ্ন দেখেছেন এবং তার নিজের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ ব্যবসাও রয়েছে। ‘হাইস্কুল’ উত্তীর্ণ হিসেবে ‘টড’ জানতেন যে তিনি একটি শারীরিক শিক্ষা সনদ অর্জন করতে চান কিন্তু তার বাবা-মা তাকে বলেছিল “ওহ… না, তুমি এটা করতে পারবে না…” পরিবর্তে তারা তাকে একটি পেশাদার ডিগ্রি অর্জন করতে চাপ দিয়েছিল।চার বৎসর পর ‘টড’ আইন ও বাণিজ্যবিষয়ক একটি দ্বৈত কার্যক্রমের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হয়েছিলেন। তার মন কখনোই এর মধ্যে ছিল না। উড’ একটি
পৃষ্ঠা ৮১ থেকে ৯০
পৃষ্ঠা:৮১
‘ই-মেইল’-এ যেমনটি বর্ণনা করেছিলেন “ছোট কণ্ঠস্বরটি নীরবে আমার মাথার পেছনে অনুরণিত হচ্ছিল”। তবে কেন তিনি সেই মূলে অবস্থান করেছেন? সহজ উত্তর তার অনুভূতি। তার বাবা-মা’কে হতাশ করার ভাবনা তাকে আচ্ছন্ন করেছিল। প্রতিটি দিন তিনি তার ‘কোর্স’ প্রত্যাহার করে ভিন্ন কোন কলেজে ‘শারীরিক শিক্ষা’ অধ্যয়ন করার কথা ভেবেছেন, কিন্তু তারপরই তিনি অসাড় বোধ করেছেন। রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় ফরম পূরণ করা সহজ, কিন্তু বাবা-মা’য়ের হতাশার মুখোমুখি হওয়া হৃদয়বিদারক।প্রায় চার বৎসর ধরে টড’ তার ‘কোর্স’ প্রত্যাহার করতে চেয়েছেন, কিন্তু তিনি জানতেন না কি করে ভয় বা অভিভাবকদের মুখোমুখি হবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির সাহায্যে তা করেছিলেন। ‘টড’ একটি ‘অ্যাডভান্সড্ ট্যাক্সেশন ল’ ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন যখন প্রথমবার তিনি অনুভব। করেছিলেন যে তিনি প্রস্তুত। ‘টড’-এর ভাষ্য অনুযায়ী।”আমি আপনাকে প্রমাণ দিতে পারি যে এমন একটি ‘প্রোগ্রাম’ আমার অপছন্দ ছিল। শুরু থেকেই আমি এটি প্রত্যাহার করতে চেয়েছি। কিন্তু এটা সম্ভবত এই বাস্তবতায় সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার ছিল যে, আমি শেষ পর্যন্ত আক্ষরিক অর্থে নিজেকে এই কোর্সে অধ্যয়ন করার অনুমতি দিয়েছিলাম যে পর্যন্ত নিজের জীবনকে পরিপূর্ণরূপে আমি ঘৃণা না করছি।”‘টড’ ভবিষ্যৎ দেখতে পান।”আমি জানি আমার বাবা-মা আমাকে স্নাতকোত্তর করতে পাঠাবেন এবং আমিও যাব, জীবন-যাপন করতে… সবার জন্য… নিজে ছাড়া।”তিনি কাজ করার প্রবৃত্তি এবং ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্তটি বর্ণনা করেছেন যা এটি সম্ভব করেছিল।”শুরু করা যাক। আমাকে প্রত্যাহার করতে হবে। আমি বইগুলো জড়ো করলাম এবং ক্লাসের মাঝখানে উঠে দাঁড়ালাম এবং বেরিয়ে গেলাম।” এসময় তার শরীর কাঁপছিল, কিন্তু তিনি এগিয়ে গেলেন, সরাসরি রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে, যেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নিতেপারেন। তারপর তিনি গাড়িতে চড়ে বসলেন এবং ‘ব্রিসবেন’ শহরের দক্ষিণে ‘কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’র দিকে দুই ঘণ্টা গাড়ি চালালেন যেখানে তিনি তার স্বপ্নের ‘ডিগ্রি’টির জন্য আবেদন করেছেন।ভাগ্যবান সেই মঙ্গলবার সকালটি ছিল দুই বৎসর আগের। ‘টড’ এখন ২৪ বছর বয়স্ক এবং তার শিক্ষাবিষয়ক ‘ডিগ্রিটির মাঝামাঝি অবস্থান করছেন। আর তার জীবন এমন আনন্দময় কখনোই ছিল না। তার ভাষ্যমতে “পরের বৎসর সম্মান শিক্ষা ‘প্রোগ্রামে’ আমি গৃহীত হয়েছিলাম”।”আমি আমার উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছি আসলে এটাই আমার সবসময় করা উচিত ছিল।”তার বাবা-মা? হ্যাঁ, তিনি যখন প্রথম তাদের বলেছিলেন যে আইনজীবী হতে চান না, তারা হতাশ হয়েছিল। কিন্তু তারা এটা জেনে আরো বেশি হতাশ হয়েছিল যে ‘টড’ দীর্ঘ সময় ধরে তাদেরকে এই কথা বলতে ভয় পেয়েছে এবং নিজেকে অসুখী করেছে।
বিশ্বাস রাখুন
আমি বিশ্বাস করি আপনি যে কোনো কিছুই করতে সক্ষম যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আপনার হৃদয়ের কথা শুনবেন, কাজটি করবেন এবং আপনার ‘টাইমলাইন’ ছেড়ে দেবেন। ‘দ্য আলকেমিস্ট’ আমার প্রিয় একটি বই। এটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ, বহুল বিক্রিত এবং ৮০টি ভাষায় অনূদিত একটি বই। এক দশকের অধিক সময় ধরে আমি এই বইটি মানুষকে সুপারিশ করেছি। ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’ বইটি লেখার সময় আমি এর একটি নতুন সংখ্যা কিনে এনেছিলাম নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখতে এবং স্মরণ করিয়ে দিতে যে “আপনার হৃদয়কে অনুসরণ করার সময় সমগ্র পৃথিবী আপনাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে।”‘দ্য আলকেমিস্ট’ সম্পর্কিত ‘পাওলো কোয়েলহো’র গল্প:”২৫ বৎসর আগে প্রথম যখন আমার আদিভূমি ব্রাজিলে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, কেউ তখন তা লক্ষ্য করেনি। দেশের উত্তর-পূর্ব
পৃষ্ঠা:৮২
কোণের একজন বই বিক্রেতা আমাকে জানিয়েছিলেন, প্রকাশনার প্রথম সপ্তাহে মাত্র একটি বই বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় বইটি বিক্রি করতে তার আরো ৬ মাস সময় লেগেছিল আর এটি কিনেছিল সেই প্রথম ব্যক্তিটি যিনি জানতেন তৃতীয় বইটি বিক্রি হতে কতটা সময় লাগবে।বছরের শেষ নাগাদ সবাই বুঝে গিয়েছিল যে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ চলছে না। আমার মূল প্রকাশক আমাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং আমাদের চুক্তিটি বাতিল করল। তারা প্রকল্পটি থেকে হাত ধুয়ে ফেলেছিল এবং আমাকে বইটি নিয়ে যেতে দিল। আমি ৪১ বছর বয়স্ক এবং নাছোড়বান্দা ছিলাম।কিন্তু বইটির উপর আমি কখনোই বিশ্বাস হারাইনি অথবা দৃষ্টি সরাইনি। কেন? কারণ যেখানে আমি ছিলাম, সম্পূর্ণ আমি, আমার হৃদয় এবং আত্মা। আমি আমার নিজস্বতায় বাস করছিলাম। একজন মানুষ যে তার যাত্রা শুরু করেছে, একটি সুন্দর বা জাদুকরি স্থানের স্বপ্ন দেখছে, কিছু অজানা সম্পদ লাভের চেষ্টা করছে। যাত্রার শেষ পর্যায়ে সে বুঝতে পারল সম্পদটি পুরোটা সময় জুড়ে তার সঙ্গেই ছিল।”৪১ এবং নাছোড়াবান্দা? লাইনটি পড়ে আমার চমৎকার লেগেছিল। ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি আবিষ্কার করার সময় এটা ছিল আমার বয়স এবং ঠিক এমনটিই আমি অনুভব করেছিলাম। আমি যা বুঝতে পেরেছিলাম তা হলো নিজের শক্তি আবিষ্কার এবং প্রকাশ করার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ‘কোয়েলহো’ যেমনটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন নিজের উপর বিশ্বাস দিয়ে এর শুরু এবং এই বিশ্বাস নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মনোবলের মধ্যে নিহিত।”আমি আমার ব্যক্তিগত আখ্যান অনুসরণ করছিলাম আর আমার সম্পদ বলতে ছিল আমার লেখনির ক্ষমতা। এবং আমি এই সম্পদ পৃথিবীর সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছিলাম। আমি অন্যান্য প্রকাশকদের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করলাম। একটি দরজা খুলল। নতুন প্রকাশক আমি এবং আমার বইটির উপর বিশ্বাস রাখলেন এবং ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিকে একটি দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানালেন। ধীরে ধীরে, মানুষের মুখের কথার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত এটি বিক্রি হতে শুরু করল তিন হাজার, ছয় হাজার, দশ হাজার, বইয়ের পর বই, পর্যায়ক্রমে সারা বৎসর ধরে।”বইটি একটি জৈব বিস্ময় হয়ে উঠেছিল এবং বাকিটা শুধুই ইতিহাস। এটি বিংশ শতাব্দীর দশটি শ্রেষ্ঠ বইয়ের মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত। সাক্ষাৎকার গ্রহীতারা যখন ‘কোয়েলহো’কে জিজ্ঞেস করল সফল হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে তিনি জানতেন কিনা, তার উত্তর ছিল।””না”। আমার কোনো ধারণা ছিল না। কেমন করে হবে? আমি যখন ‘দ্য আলকেমিস্ট’ লিখতে বসেছিলাম, শুধু জানতাম যে আমি আমার আত্মা সম্পর্কে লিখতে চাই। আমি আমার সম্পদ খুঁজে বের করার অনুসন্ধান সম্পর্কে লিখতে চাই।”উত্তরগুলো আপনার ভেতরেই রয়েছে, যদি তা শোনার মনোবল আপনার থেকে থাকে। আপনি অন্যদের মতোই এবং কারো মতোই না। পৃথিবীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো আপনার কাছে অসাধারণ কিছু রয়েছে। এর শুরু আপনার নিজের ভেতরের কথা শোনার মাধ্যমে এবং শেষ হবে যেখানে এটি আপনাকে নিয়ে যায় সেখানে যাওয়ার মনোবল দ্বারা।একে অনুসরণ করুন। মানুষকে আপনার স্বপ্নের কথা বলবেন না। তাদেরকে দেখান।
পৃষ্ঠা:৮৩
(১৭) সম্পর্কোন্নয়ন “একটি সাহসী কাজ সবসময়ই একটি ভালোবাসার কাজ।” – পাওলো কোয়েলহো
যে কোনো সম্পর্কোন্নয়নের জন্য আপনার প্রয়োজন শুধুমাত্র দুটি শব্দের একটি উপদেশ।
কথা বলুন
আমি ‘ফ্লোরিডা’র একটি খুচরো দালালি প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা করার পর ‘ডন’ নামে এক ব্যক্তি আমার কাছে আসেন। তিনি ৫০এর শেষ দিককার বয়সী, দাড়ি ছিল এবং মাদ্রাজ শার্টের উপর একটি ‘স্পোর্ট কোট’ পরেছিলেন। তিনি আমাকে জানান, ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি সম্পর্কে তিনি কিছু একটা শেয়ার করতে চান।তার কাছে রুলটির একটি নিজস্ব সংস্করণ রয়েছে যা তার জীবন বদলে দিয়েছিল। তিনি কয়েক বছর আগে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যার সারমর্ম হলো- “কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।”তিনি নিজের প্রবৃত্তির উপর নির্ভর করে তার কন্যার সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে কিভাবে নিজের উপর জোর খাটিয়েছিলেন, সেই সম্পর্কিত একটি গল্প বললেন যা তাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছিল। কয়েক বছর ধরে তার কন্যা ‘অ্যাম্বার’ ও তার স্বামীকে পরিবারের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল যারা খুব কঠিন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। তারাও প্রতি সপ্তাহান্তে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকহিসেবে কাজ করেছে এবং ইতিমধ্যে বেশ কিছু সেবা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।’ডন’ তাদেরকে জানিয়েছিলেন যে তিনি তাদের প্রশংসা করছেন। তিনিপ্রশংসা করছেন কারণ যেভাবে তারা জীবন-যাপন করেছে এবং পৃথিবীর জন্যউদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা ছিল অনন্য। তিনি আরো যোগ করলেন যে, কন্যা’অ্যাম্বার’-এর পরিণত হয়ে ওঠায় তিনি ছিলেন গর্বিত। আর তারপর তিনি আমাকে বলেছিলেন- “এটা বলার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আমি খুব ভয়ে ছিলাম। চিন্তা করুন, আমি কিছু বলতে ভয় পেয়েছিলাম। কারণটি ছিল, আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছিলাম।”তিনি বলেন, ঐ কথোপকথনের পর তার কন্যার সঙ্গে সম্পর্ক আর কখনোই আগের মতো ছিল না। তারা এখন অনেক কাছাকাছি যা তিনি কখনো কল্পনা করেননি, আর এই অভিজ্ঞতা তাকে এই নিয়ম মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করেছে যে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।ঘনিষ্ঠতার জন্যেও মনোবল প্রয়োজন। আবেগপ্রবণ হওয়ার ঝুঁকি অথবা কাউকে বিপর্যন্ত করা যাতে করে আপনি নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন। এটা ভীতিকর কিন্তু এর ফলাফল জাদুকরী। গত শরতে আমার বাবার সাথে একটি সহজ আলাপচারিতার সময় আমি ঠিক একই ধরনের জাদুকরী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমি ‘মিয়ামি’তে একটি বক্তৃতা শেষ করে বিমানবন্দরের পথে ছিলাম এবং আমার ফোনে এসময় বাবার একটি ক্ষুদে বার্তা দেখতে পেলাম “যতদ্রুত সম্ভব আমাকে ফোন কর”।আমি ভাবলাম, অদ্ভুত তো। আমি বাড়িতে ফোন করলাম এবং মা ফোনটি তুলল।”হ্যালো মা, আমি এইমাত্র বাবার কাছ থেকে ফোন করার জন্য একটি বার্তা পেয়েছি, সব ঠিক আছে তো?””তোমার তার সাথে কথা বলা উচিত, দাঁড়াও তাকে দিচ্ছি।”মা ফোনটি নামিয়ে রাখল যখনতাকে বলতে চাচ্ছিলাম “মা, শোনো, কি হচ্ছে ওখানে?”আমি রান্নাঘরের দরজা খোলার শব্দ পেলাম কারণ মা দরজা খুলে বাবাকে চিৎকার করে বললেন “বব, মেল ফোন করেছে।”
পৃষ্ঠা:৮৪
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হতে চলেছে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম বিপদে পড়েছি। ক্যাবের পেছনের সিটে বসে আমার মনে হতে লাগল, আমি যেন ১০ বছরের এক বালিকা যে প্রায় বিধ্বস্ত হওয়ার পথে। এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, কিছু একটা সমস্যা হলে আপনার মস্তিষ্ক কত দ্রুতই না আপনাকে খরগোশের গর্তে ঢুকিয়ে দিতে পারে। অনিশ্চয়তা আমার উদ্বিগ্ন হওয়ার অভ্যাসকে জাগিয়ে তুলল এবং এই মুহূর্তে আমি ‘কি-যদি চক্র’তে অবস্থান করছি। দাদিমা কি মারা গেছেন? আমি কি কিছু ভুল করেছি? বাবা কি কোন আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন? এটা নিশ্চয় আমি, আমি কি করেছি?আপনি কি ধরতে পেরেছেন কি ঘটছে? অনিশ্চয়তা আমার উদ্বিগ্ন হওয়ার অভ্যাসকে জাগিয়ে দিয়েছে। পাঁচ সেকেন্ডেরও কম সময়ে আমি আমার নিজেকে বোঝালাম যে দাদিমা মারা গেছেন, আমি গুরুতর কিছু ভুল করেছি, বাবা আমার উপর গভীর হতাশ অথবা আমি বড় কোনো বিপদে পড়তে যাচ্ছি।আমি শুনতে পেলাম পেছনের দরজা খুলে গেল এবং বাবা রান্নাঘরের দিকে হেঁটে আসছেন। তিনি ফোনটি তুলে নিলেন এবং নির্বিকার ভাবে বললেন – “মেল, ফোন করার জন্য ধন্যবাদ, ঠিক এই মুহূর্তে তুমি কোথায় আছো?”আমি ফোনের অন্য প্রান্তে অস্থির হয়ে আছি। “আমি বিমানবন্দরের পথে। ‘মিয়ামি’তে আছি বাবা, তোমার ক্ষুদে বার্তা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। আমি কি কিছু ভুল করেছি?”তিনি হালকা হেসে বললেন “না, এটা তোমার ব্যাপার নয় ‘মেল’, এটা আমার ব্যাপার। আমি আসলে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে এবং তোমার ভাইকে বলতে চাইনি”।আমার হাত থেকে ফোনটি প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। “তুমি কি মারা যাচ্ছে? ওহ্ গড, তোমার কি ক্যান্সার ধরা পড়েছে?”তিনি আমাকে বাধা দিয়ে বললেন “তুমি কি আমাকে কথা বলতে দেবে? আমার ক্যান্সার হয়নি। আমার ‘এনু্যুরিজম’ (ধমনির দুর্বলতাজনিত কোনো কারণে এর একটি অংশ ফুলে ওঠা) আছে এবং এটা আমাকে মেরে ফেলার আগেই এটিকে অপসারণ করার জন্য একটি ‘ওপেন ব্রেইন সার্জারি’ করতে হবে”। তিনি পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন। তার মাথা ঘোরানো রোগ ছিল এবং গলফ খেলার সময় একদিন তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে একটি এম-আর-আই করতে হলো। সেখান থেকেই এই ‘এন্ড্যুরিজম’ ধরা পড়ল। আর তারা এটি ভুলক্রমে পেয়ে গিয়েছিল। সপ্তাহান্তে তিনি ‘মিশিগান’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সার্জারিটি’ করাবেন বলে ঠিক করেছেন।ফোনের অন্য প্রান্তে আমি জমে গিয়েছিলাম। আমার শ্বশুর খাদ্যনালির ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। বাবার গল্পটি শোনার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি আমার শ্বশুরের অস্ত্রোপচার করার দিনটির কথা মনে করেছিলাম। এটি ছিল একটি মুহূর্তের বিষয়। ‘ম্যানহাটন’-এর ‘মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং’- এ নার্স যখন অস্ত্রোপচার করার জন্য তাকে ‘ট্রলি’ করে নিয়ে যাচ্ছিল, জোড়া দরজা ঠেলে ভেতরে যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তিনি আমাদের দিকে ফিরেতাকালেন। তিনি হাসলেন এবং মৃদু হাত নাড়লেন। আমরা সবাই প্রতি উত্তরে হেসে তার দিকে হাত নাড়ালাম। এবং আমার মনে আছে আমি তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নীরবে জানিয়েছিলাম যে সব ঠিক হয়ে যাবে। মনে আছে ঐ মুহূর্তে ভয়ের একটি আকস্মিক যন্ত্রণা আমি অনুভব করেছিলাম। অতঃপর তিনি দোল খাওয়া দরজার ভেতর দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে তার অস্ত্রোপচার এতটা খারাপ হতে যাচ্ছে এবং এর জটিলতাগুলো শেষ পর্যন্ত তাকে মেরে ফেলবে।আমি বর্তমানে ফিরে এসে ‘ক্যাব’-এর পেছনের সিটে বসে বাবার কথা শুনেছিলাম। আমি কল্পনা করতে পারি বাবা হাসপাতালের বারান্দাপথে বিদায়সূচক হাত নাড়ছেন আর আমি ভীত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। জানিনা কেন, কিন্তু আমি জানতে চেয়েছিলাম বাবাও ভয় পেয়েছেন কিনা।
পৃষ্ঠা:৮৫
তাকে একথা জিজ্ঞেস করার একটি প্রবৃত্তি আমার ভেতরে ছিল কিন্তু অবিলম্বে আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। নিজেকে বলতে শুরু করেছিলাম-“এটা জিজ্ঞেস করো না, এটা তাকে অস্থির করে তুলবে। সে অবশ্যই ভীত, তুমি বুঝতে পারছো না? বিষয়টি হালকা ও ইতিবাচক রাখ। তাকে চাপ দিও না,’এন্যুরিজম’টি বিস্ফোরিত হতে পারে।”এটাই ছিল বাক্কা দেবার মুহূর্ত। কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।৫-৪-৩-২-১”বাবা তুমি কি ভীত?”অন্য প্রান্তে নীরবতা। আমি প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করার জন্য অনুতাপ বোধ করা শুরু করলাম। তার পরের কথাটি শুনব বলে আশা করিনি।”আমি ভীত নই। আমি কিছুটা স্নায়বিক উত্তেজিত কিন্তু চিকিৎসকদের উপর আমার সত্যিই আস্থা রয়েছে। জানো ‘মেল’, আমি আসলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।””ভাগ্যবান?””হ্যাঁ, আমাকে মেরে ফেলার আগেই এটাকে ঠিক করার একটি সুযোগ আমি পেয়েছি। এবং দিনের শেষে যদি কিছু হয়েই যায়, আমার কোনো দুঃখ নেই। আমার বাবার স্ট্রোক করার পর মাকে তার যে যত্ন নিতে দেখেছি তা ছিল ভয়ঙ্কর। আমার কাছে জীবনের গুণগত মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার জীবনমান যা আমি আশা করেছিলাম তার চাইতেও বেশি। ছোট বয়সে আমি সবসময় ডাক্তার হতে চেয়েছি এবং আমি হয়েছি। তোমার মা এবং আমি একসাথে একটি চমৎকার জীবন কাটিয়েছি। তুমি এবং তোমার ভাই বড় হয়েছ। আমি মূলতঃ আমার জীবনের সঙ্গে যা করতে চেয়েছিলাম তাই করেছি। আর এটাই হলো যা তুমি চাইতে পার, জীবনকে উপভোগ করার জন্য আরো কিছুটা সময়।”এটা ছিল বাবার সাথে শেয়ার করা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত, আর ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির সাহায্য ছাড়া আমি হয়তো ঐ প্রশ্নটি করার মনোবল খুঁজে পেতাম না। তারপর তিনি যোগ করলেন।”আসলে আমি আরো একটি জিনিস করতে চাই। আমি আফ্রিকা দেখতে চাই এবং যদি ৯০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি তাহলে প্লেন থেকে লাফিয়ে পড়তে চাই, ‘জর্জ এইচ বুশ’ তার ৯০তম জন্মদিনেযেমনটি করেছেন।”আমি হেসে বলি “বাবা তুমি করবে, তুমি করবে”।বাবার সাথে আমার সেই কথোপকথন আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করিয়ে দিয়েছিল। সম্পর্কের বাস্তবতা পেতে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা একটি বোকাদের বার্তা। কথোপকথনের কোনো সঠিক সময় নেই, কঠিন প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করে ফেলুন, বলুন “আমি তোমাকে ভালোবাসি” অথবা সত্যি শোনার জন্য সময় নিন।কখনো কখনো এটি শুধুমাত্র একটি কঠিন প্রশ্ন নয় যা আপনি জিজ্ঞেস করতে চান। এটা আসলে দু’জনের মাকে বিরাজমান যে নীরবতা, তার সমাপ্তি টানা। অনেক বছর হল ‘কোর্টনি’ তার বাবার সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টেনেছেন, কিন্তু তিনি তা সংশোধন করতে চান। তিনি এটা ছেড়ে দেননি কিংবা এটা নিয়ে অতি-চিন্তাও করেননি, যেমনটি তিনি আগে করতেন। তার পরিবর্তে তিনি ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করে নিজের প্রবৃত্তির উপর বিশ্বাস রেখে ফোনটি হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং বাবাকে ফোন করেছিলেন। তিনি শুধু ৫- ৪-৩-২-১ গণনা করে ‘কল’ বাটন’টি চেপে দিয়েছিলেন। লক্ষ্য করুন, আপনার জীবন বদলে দিতে শুধুমাত্র ৫ সেকেন্ড সময় দরকার।’মাইক’ তার নিজের বিয়েতে হওয়া ঘটনা লুকিয়ে রেখেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিজের সঙ্গে সৎ হওয়ার মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন।”আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে আবারো সেইসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি যা আমি উপেক্ষা করেছিলাম (এই জন্য না যে আমার মাথা বলিতে গুঁজে থাকার কারণে সেগুলো আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল), আর আমি নিজের সঙ্গে আরো অধিক সৎ হয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সেটা আমার ভালো
পৃষ্ঠা:৮৬
লেগেছে। আমি হয়তো নিখুঁত হতে পারব না, কিন্তু আমি যোগ্য। আমি আশ্চর্য হচ্ছি এটা দেখে যে, যোগ্য হওয়ার জন্য এই অনুভূতি কতটাই না অসাধারণ।মাইক।”‘মাইক’ এইমাত্র তার একটি শক্তিশালী গোপনীয়তা ভাগাভাগি করল। যোগ্য অনুভব করতে হলে প্রথমে আপনার মনোযোগ ও প্রচেষ্টার সাথে আপনার নিজের প্রবৃত্তিকে যোগ করতে হবে। ‘এন্থনি’ এটা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন যে, খুব সাধারণ কিছুর মধ্যে রয়েছে স্বভাবতঃ তিনি যে সব ব্যাপারে নির্ভর করতে কুষ্ঠিতবোধ করতেন সেই মনোবল যা তার বিবাহের ক্ষেত্রে ‘বিশাল পরিবর্তন’ সৃষ্টি করতে, তার স্ত্রীর কাছাকাছি হতে এবং তার চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে।”ঐ সহজ কিছুই বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। সেটা দেখা ছিল বিস্ময়কর। আমি আশা করতাম মানুষ আমার চাহিদা সম্পর্কে জানবে। যখন সেটা পূরণ হতো না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর সঙ্গে, তখন আমি অসন্তুষ্ট হতাম। আমি ভেবেছিলাম সব স্ত্রী’রাই মন বুঝতে পারে, বিস্ময়বোধ করতে পারে।যেসব ব্যাপারে নির্ভর করতে সাধারণতঃ আমি কুণ্ঠাবোধ করে থাকি, রুল’টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আমি আমার জীবনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেইসব ব্যাপারে বিশাল অগ্রগতি সাধন করেছি। এটা যখন আমি লিখছি, সে সময় হাসছিলাম। আমি আমার স্ত্রীর কাছাকাছি হতে পেরেছি এবং আমার চাহিদাগুলো পূরণ হতে শুরু করেছে। আমার কোনো ধারণা ছিল না যে, নীরবতাই ছিল আমার প্রধান সমস্যা।জমা হতে থাকে এবং একটা সময় এগুলো আপনার সম্পর্কের মাঝে ভাঙন ধরায়।‘এস্টেলা’র ক্ষেত্রে ঠিক এটাই ঘটেছিল, যাকে তিনি বর্ণনা করেছেন- ‘একটি সাধারণ মুহূর্ত’ হিসেবে। তার স্বামীর সঙ্গে একটি আপাতঃ অর্থহীন যুক্তিতর্ক এবং ফলশ্রুতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে চূড়ান্ত বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য বলা। ঘটনাটি তিনি যেভাবে বর্ণনা করেছেন:”আমার মস্তিষ্ক হঠাৎ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল এবং এটা বলার জন্য আমি ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি ব্যবহার করেছিলাম। এটা ছিল কাজটি করার ব্যাপারে আমার পছন্দ অথবা জরুরি ‘ব্রেক’ টানার ব্যাপারে আমার মস্তিষ্ককে অনুমতি দান। ঐ মুহূর্তটিতে আমি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য বলেছিলাম। অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাই ঐ সিদ্ধান্তটি আমার জীবনকে সেই পথে ছুঁড়ে দিয়েছিল, আমি যেইদিকে যেতে চেয়েছি, কিন্তু নিজেকে আমি সবসময় ধরে রেখেছিলাম।এটা সহজ ছিল বলা যাবে না। এটা একেবারেই সহজ ছিল না, কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমার এক মুহূর্তের জন্যও সন্দেহ হয়নি। কাজটি করার ঐ খাঁটি মুহূর্তটিতে, যা সঠিক বলে আমি জানতাম এবং যা সত্যিকারের আমি, নিজেকে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম। এখানে কিছু অন্ধকার ও নিঃসঙ্গ মুহূর্ত ছিল, কিন্তু যা আমাকে বিস্মিত করেছিল তা হলো ঐ মুহূর্তগুলোতে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আমার কখনোই আফসোস হয়নি।- এন্থনি।”‘এস্থনি’ যেমনটি বলেছেন “আমার কোনো ধারণা ছিল না যে নীরবতাই ছিল আমার বড় সমস্যা।” নীরবতা সবসময়ই একটি সমস্যা। আপনি নিজে যা অনুভব করেন তা না বলার সিদ্ধান্ত দ্বারা তৈরি হয়, গবেষকরা যাকে বলেন- ‘জ্ঞানীয় অসঙ্গতি’, আপনি হৃদয় থেকে যা সত্যি বিশ্বাস করেন এবং যা আসলে এই মুহূর্তে আপনি করছেন এই দুইয়ের মধ্যকার পার্থক্য। এই সমস্যাগুলোকাজ অথবা পছন্দ করার দিনটি জুড়ে আমাদের সকলেরই ‘মুহূর্ত রয়েছে। কখনো কখনো আমরা নিজেদেরকে পেছনে টেনে ধরে রাখি। আমরা সাবধানী হতে পছন্দ করি এবং ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং ঐ মুহূর্তগুলোতে আমি সবচেয়ে প্রাণবন্ত অনুভব করি, নিজের আদর্শ জীবন খুঁজে পাই এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যিকারের নিজেকে খুঁজে পাই।- এস্টেলা।”
পৃষ্ঠা:৮৭
শুরু থেকেই আমি বলে আসছি যে রুল’টি খুব সহজ। কিন্তু কখনোই। বলিনি যে ‘এটা বলা’ খুব সহজ। ‘সত্য’ হলো দু’টি মানুষের মধ্যকার সংক্ষিপ্ততম দূরত্ব এবং এটা খুব ভালোভাবে আপনার সম্পর্ককে রক্ষা করে। নীরবতা দূরত্ব সৃষ্টি করে, ‘সত্য’ বাস্তব সংযোগ তৈরি করে। ‘নাতাশা’ যেমনটি আবিষ্কার করেছিলেন।হঠাৎ করে মা মারা যাওয়ার পর ‘নাতাশা’ তার জীবন নিয়ে খুব বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। তার আশাবাদ উবে গিয়েছিল এবং নিকট ভবিষ্যতে তিনি আরো নেতিবাচকতা দেখতে পাচ্ছিলেন। তিনি তার প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং নিজের অনুভূতি সম্পর্কে ‘হৃদয় থেকে কথা বলা’র জন্য রুল’টি ৫-৪-৩-২-১ ব্যবহার করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তাদের সম্পর্ক ছিল নড়বড়ে। তিনি তার সত্যিকারের অনুভূতি নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং এর ফলাফল ছিল আশ্চর্যজনক। তাদের সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার পরিবর্তে ‘সত্য’ তাদেরকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল। তারা এখন গভীর সম্পর্কে জড়িত।সময়ের সাথে সাথে আমরা আমাদের সম্পর্কের ক্ষুদ্রতম মুহূর্তগুলোর অন্তর্গত গভীর শক্তির প্রশংসা করতে প্রায়শঃই ব্যর্থ হই। সম্প্রতি আমার সাথে এমন কিছু একটা ঘটেছিল যা মনে করিয়ে দিয়েছে মন্থর হয়ে পড়া, উপস্থিত থাকা এবং হৃদয় যখন সাড়া দেয় তখন তার সঙ্গে সুর মেলানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ।আমার একটি বক্তৃতা শোনার পর এক ব্যক্তি ‘ফেসবুক’-এ আমাকে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেছিল ‘জশ উডরাফ’ নামক তার এক পারিবারিক বন্ধুর স্মারক পৃষ্ঠাটি দেখার জন্য। তার মতে ‘জশ’ ছিলেন এমন এক ব্যক্তির উদাহরণ যিনি তার জীবনকে পুরোপুরি যাপন করেছিলেন এবং ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টির সঙ্গেও সম্পর্কিত ছিলেন।আমার প্রবৃত্তিকে অনুসরণ করে স্মারক পৃষ্ঠার ‘লিয়’টির উপর আমি ক্লিক করলাম। প্রথম যে জিনিসটি আমি দেখতে পেলাম তা হলো ‘মেরী’ নামক একজন মহিলার একটি ‘পোস্ট’। এটি ছিল ঘনিষ্ঠতা ও সম্পর্কযুক্ততা, যা আমরা আমাদের সকলের জীবনে চাই এবং কেমন করে অযৌক্তিক কারণে। আমরা তা থেকে নিজেদেরকে টেনে ধরে রাখি তার উপর চমৎকার একটি’পোস্ট’। ‘নিউ অর্লিন্স’-এ একটি গাড়ির ধাক্কায় মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পূর্বে ‘মেরা’ একটি মুদি দোকানে তাকে দেখেছিলেন কিন্তু এগিয়ে গিয়ে কোনো কথা বলেননি। আসুন, তার কাছে থেকে গল্পটি শুনি।”২য় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে ‘জশ’ এবং আমার ছেলে ‘জার্ড’ ভালো বন্ধু। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে আমি ‘জশ’কে মুদির দোকানে দু’বার দেখেছিলাম। প্রথমবার যখন তাকে আমি দেখি, সে ছিল অনেকটা দূরে আর আমি ভেবেছিলাম সে নিশ্চয়ই বড়দিন উপলক্ষে বাড়ি এসেছে। আমি তার সাথে কথা বলিনি কারণ সেখানে চিৎকার করে তাকে আমি ডাকতে চাইনি। ঐ একই সপ্তাহে তাকে আমি আবারো দেখেছিলাম, উলের টুপি মাথায় কারো সঙ্গে কথা বলা অবস্থায়। এবারে সে আরো কাছাকাছি ছিল কিন্তু তারপরও আমি তার সাথে কথা বলিনি কারণ আমি ব্যস্ত ছিলাম, ‘মেকাপ’ ছাড়া, উদ্ভট কাপড় পরিহিত এবং আশা করছিলাম জানাশোনা কারো সঙ্গে যেন দেখা না হয়। একই সপ্তাহে দু’বার তাকে দেখতে পাওয়াটা আমার কাছে অদ্ভূত মনে হয়েছিল, সুতরাং আমি তার পরিবার ও তাদের বড়দিনের ছুটির জন্য মনে মনে প্রার্থনা করলাম।আমি যখন তার মৃত্যু সংবাদ গুনলাম, তার সঙ্গে কথা না বলার জন্য খুব খারাপ লাগল। আমি জানতাম না যে সেটাই হবে তাকে আমার শেষবারের মতো দেখা। গত সপ্তাহে আমি ‘টার্গেট’ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম যেখানে ‘জেনী’ নামের আমার এক বন্ধুকে অনেকটা দূরে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই। আমি দরজার বাইরের দিকে হাঁটা শুরু করেছিলাম যখন আমার ‘জশ’-এর কথা মনে পড়েছিল। আমার তাড়া ছিল এবং থেমে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে কথা বলার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি, তারপর আবারো আমার ‘জশ’-এর কথা মনে পড়ল। আমি ঘুরে আইল পথ ধরে তীব্র চিৎকার করে ডাকলাম “হেই জেনী’‘মেরী’র এই ‘পোস্ট’টি ছিল আমাদের সকলের জন্য একটি অসাধারণ অনুস্মারক। কখনো কখনো পরবর্তী সময় বলে কিছু থাকে না। আপনার হৃদয় যখন কথা বলবে, সুর মেলান। আমি ‘জশ’-এর মা ‘কারেন’-এর সঙ্গে দেখা করেছিলাম এবং তিনি আমার সঙ্গে ‘জশ’কে নিয়ে একটি গল্প শেয়ার করেছেন:
পৃষ্ঠা:৮৮
“জশ’ অন্য কারো আবেগের ব্যাপারে কখনো ভীত ছিল না। সে যখন কিশোর, আমার মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ল। আমি জানতাম তাকে আমা হারাতে চলেছি। একদিন, একা একা চিন্তা করতে এবং কাঁদতে, আমি আমার নিজের ঘরে বসে ছিলাম। ‘জশ’ ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে এবং তারপর আমার চোখে চোখ রাখল। সে চোখ ঘুরিয়ে নিল না কিংবা অস্থিরতা দেখাল না। সে শুধু বসে বসে আমার কথা শুনল। ঐ দিন থেকে আমরা মা- ছেলে’র সম্পর্ক থেকে বন্ধু-বন্ধু’র সম্পর্ক শুরু করেছিলাম কারণ সে একজন মানুষহিসেবে আমার কথা সময় নিয়ে শুনত।”আমি দুঃখিত যে ‘প্রশ’-এর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ আমি কখনো পাইনি। মনে হয় সে খুব অসাধারণ ছিল। ‘কারেন’ তাকে যেমনটি বর্ণনা করেছেন:”জশ” ছিল কোনো কাজের উদাহরণস্বরূপ। সে তার ইচ্ছাশক্তি সাথে নিয়ে কাজ করত। তার মৃত্যুর পরআমরা বলেছি যে, সে কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই জীবন-যাপন করেছে।”তিনি আমার কাছে তার ‘ই-মেইল’টি শেষ করেছেন ‘জশ’-এর একটি বার্তা সংযুক্ত করার মাধ্যমে যা মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ‘জশ’ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকে এবং তার স্বামীকে পাঠিয়েছিল। ‘কারেন’ যেমনটি বলেছেন “সে এটা ভেবেছিল এবং সে এটা পাঠিয়েছিল। আমরা এটা আমাদের বাকি জীবনের জন্য সম্পদ হিসেবে রেখে দেব”।”রাত শুরু হওয়ার আগে আমি শুধু বলতে চাই শুভ নববর্ষ, আর আমি তোমার জন্য অসম্ভব কৃতজ্ঞা২০১৬-তে আমাদের জন্য কি আছে দেখার জন্য খুবই উদ্গ্রীব! জশ।””শুভ নববর্ষ!! আমরা তোমার জন্য এবং যে জীবন তুমি আমাদেরকে ও আমাদের পরিবারকে উপহার দিয়েছ, তার জন্য ভীষণ কৃতজ্ঞ। আজ রাতে নিরাপদে থেকো। (আমি বলতে চাই যে, আমি তোমার মা!!)”কোন কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।৫-৪-৩-২-১ এগিয়ে যান এবং বলে ফেলুন।”আমাদের সব স্বপ্নই সত্যি হতে পারে যদি তাদের পেছনে তাড়া করায় মনোবল আমাদের থেকে থাকে।”ওয়াল্ট ডিজনি
পৃষ্ঠা:৮৯
আত্মশক্তি“তোমার শক্তি সবসময়ই ছিল মাই ডিয়ার, শুধু তোমার নিজের জন্য তা জানার প্রয়োজন ছিল।”- গ্লিন্দা, দ্য উইজার্ড অব অল আজ, অবিশ্বাস্য কিছু হতে চলেছে।
একজন ভদ্রমহিলা তার চাকরি ছেড়ে দেবেন কারণ তিনি সত্যিই তা ঘৃণা করেন। তিনি ভয় পাচ্ছেন কিন্তু কাজটি তিনি অবশ্যই করবেন। একজন ভদ্রলোক, মানুষ তাকে ঘৃণা করবে জানা সত্ত্বেও তার বিয়ে ভেঙে দিতে চান। ৫৬ বছর বয়সী একজন পশু-চিকিৎসক তার প্রথম ব্যবসা শুরু করবেন, একজন ‘অ্যাপ ডেভেলপার’ তার প্রথম পণ্যটি প্রকাশ করবেন এবং একজন ১৫ বছর বয়সী তার প্রথম রান্নার বইটি লিখতে শুরু করবেন।একজন ব্যাংকার নির্বাহী পদের জন্য আবেদন করবেন যা তিনি সবসময় চেয়েছেন। তিনি ১০০ ভাগ যোগ্য বোধ করছেন না বটে তবে তা তাকে থামাতে পারবে না। এবং উড়িখানায় একজন লোক তার বন্ধুদের কথা ভুলে একজন আকর্ষণীয় মহিলার দিকে হাঁটা শুরু করবেন। প্রাথমিকভাবে, তার মনে হবে ভেতরে ভেতরে মারা যাচ্ছেন, কিন্তু এটা তার প্রত্যাশার চাইতে অনেক ভালো কিছুর দিকে মোড় নিতে পারে।তারা সবাই জানেন যে তারা ব্যর্থ হতে পারেন অথবা তাদের মুখ ভোঁতা হয়ে যেতে পারে, কিন্তু যেভাবেই হোক তারা সেটা করবেন। তারা নিজেদের সামনে ঠেলে দিয়েছেন ভেতরের ‘না’ বোধগুলো চিৎকার করা সত্ত্বেও। তারা ভয় পাচ্ছেন কিন্তু তা সত্ত্বেও এগিয়ে চলেছেন।প্রশ্ন হলো, কেন? উত্তরটি খুব সহজ। তারা মহত্ত্বের গোপনীয়তা জানেন। তারা জানেন বিকল্প কি এবং কতটা ভ্যান্তর। যখন আপনার হৃদয় কথা বলে, তাকে সম্মান করুন, ৫-৪-৩-২-১ গণনা করুন এবং সামনে এগিয়ে যান।এই সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার মানে দাঁড়াবে স্বয়ংক্রিয় চালকের ভরসায় থাকা এবং সকল যাদু, সুযোগ ও আনন্দ যা আপনার জীবন আপনার কাছে পেশ করেছে তা সাঁতরে পার হয়ে চলে যাওয়া। এবং সবচেয়ে বড় ঝুঁকি? নিজেকে বাঁচার জন্য এগিয়ে দেওয়ার আগেই মারা যাওয়া।’ক্যালিফোর্নিয়া’য় বসবাস করা ‘জ্যান’ এটা হতে দেবেন না। তিনি মাত্রই ‘ফাইন্যান্স’-এর গ্রীষ্মকালীন ক্লাস করার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। ৪৪ বছর বয়সী একজন প্রবীণ মানুষের ভীতিপ্রদর্শন করার কথা, কিন্তু যে কোনোভাবেই হোক তিনি এটা করবেন, কারণ মহৎ হওয়ার মানে হল ‘কখনোই বুড়িয়ে না যাওয়া।’হনলুলু’তে ‘শার্লি’ তার স্বামীকে হারানোর পর আবারও জীবন শুরু করতে নিজের উপর চাপ দিচ্ছেন। গত ৪ বৎসরে তিনি অনেক বেশি বার পাঁচ সেকেন্ডের জানালাটিকে অপচয় হতে দিয়েছেন। এখন তিনি প্রাত্যহিক মনোবল অনুশীলন করছেন। তিনি ছোট করে শুরু করেছেন নতুন করে আবারও হাঁটা শুরু করতে। ঐ একটি পরিবর্তন বছরব্যাপী বন্ধ হয়ে থাকা অনেকগুলো দরজা তার জন্য খুলে দিয়েছে।’ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘সান্তামনিকা’তে ‘জুলি’ তার নিজেকে ধাক্কা দিয়ে কিছু ‘ফোন কল’ করেছিলেন যা তাকে স্নায়বিক করে তুলেছিল, তবে তিনি দু’টি জিনিস অর্জন করেছিলেন: প্রচুর আত্মবিশ্বাস আর ক্ষতিকারক ক্যান্সার নিরাময়ের সাহায্যস্বরূপ ৫,০০০ ডলার।ভারতে, নতুন দিল্লির ‘পুলকিত’ ফাইভ সেকেন্ড রুল’টি ব্যবহার করে অনেকগুলো ঝুঁকি নিয়েছেন যা আশ্চর্যজনক উপায়ে তার উন্নতিতে সাহায্য করছে। সে এখন তার সব কাজে তার সেরাটি দিচ্ছেন। ধন্যবাদ ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল’। আমাদের ৪৪ বছর বয়সী ব্যক্তি ‘ড্যান’ এর জন্য একটি উপদেশ হলো ধাক্কা দিতে থাকুন। ‘পুলকিত’ জানে তার সদ্য স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার কারণ হলো প্রাত্যহিক মনোবল শক্তি।কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত একটি সপ্তাহ পার করার পর ‘ক্যাথলিন’ চেয়েছিলেন ঘরে ফিরে গিয়ে একটি কাঙ্ক্ষিত পানীয় নিয়ে বসতে কিন্তু তা না করে তিনি পরিচিত গাড়িগুলোকে পেছনে ফেলে গুঁড়িখানায় পৌঁছেছিলেন। এটি ছিল তার
পৃষ্ঠা:৯০
বাড়ি না ফেরার রাগের কারণে দেখানো উত্তেজনা, কিন্তু ঐ মুহূর্তে তিনি জিতে গিয়েছিলেন। ‘ক্যাথলিন’ যেমনটি বলেছেন “ড্রাইভ’টি যতই ছোট হোক না কেন, এটি ছিল একটি বিজয় অনুভূতির মতো”। এবং এটা সত্যি তাই হিল।’মিন্নেসোটা’তে ‘কেলী’ অনেক বছর ধরে স্বপ্ন দেখার পর হৃদয় থেকে একটি পাঁচ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি ‘ফ্রান্স’ চলে যাচ্ছেন। এখন তার সিদ্ধান্ত হলো, ‘রোসা পার্কস’ যেমনটি বলেছিলেন তার ভয় চলে গিয়েছে এবং নিজেকে পেছনে টেনে ধরে রাখার অনুমতি দেওয়ার পরিবর্তে বিস্তারিত খুঁটিয়ে দেখার কাজে তিনি তার মস্তিষ্ক ব্যবহার করবেন।”মেল,ফাইভ সেকেন্ড রুলটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আমি এখন ‘ফ্রান্স’ চলে যাচ্ছি।কেলী।”‘ইংল্যান্ড’-এর ‘লন্ডন’ শহরে ‘স্টিভ’ দুর্ঘটনা পরবর্তী বৈকল্য রোগে ভূগছিলেন এবং একটি ফেরি পারাপারের সময় নিজের জীবন নিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। তার প্রবৃত্তি তাকে বলছিল কারো সাহায্য নেওয়া উচিত আর এসময় ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’-টি দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়। তিনি রেলিং থেকে দূরে সরে আসেন এবং ফেরির একজন যাত্রীসেবা কর্মচারীর দিকে হাঁটতে শুরু করেন। তিনি কতটা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন তা বোঝার জন্য এটা ছিল তার জীবনের সর্বনিম্ন মুহূর্ত, কিন্তু পাঁচ সেকেন্ডেরও কম সময়ে তিনি জীবন বাঁচানোর মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন।এবং সবশেষে, ‘জেমস…’স্টিভ’-এর গল্পটি ‘জেমস’কে ছুঁয়ে গেছে। তার ভাষায় ‘এটা ছিল আমার হৃদয়ের কাছাকাছি’। মাত্র এক বৎসর আগে ‘জেমস’ আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া তার ছোট ভাইকে হারিয়েছেন। ‘জেমস’ আমাকে যেমনটি লিখেছিলেন- “আমার ভাইটি যদি ৫ সেকেন্ড সময় নিত। আমি কখনোই সেটা বদলাতে পারব না, কিন্তু আমি নিজেকে বদলাতে পারি”। ‘ফাইভ সেকেন্ডরুল’-টি ব্যবহার করে তিনি জেগে ওঠা এবং আবারো জীবন শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় মনোবল খুঁজে পেয়েছেন। “এটা আমার তীব্র আবেগের কাছে ফিরে যাবার সময়, আমার দৌড়ানোর কাছে ফেরা। ‘জেমস’ একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি তার ছোট ভাই ‘প্যাট্রিক’-এর ‘স্মৃতির উদ্দেশ্যে ১০০ মাইলের একটি দৌড় শুরু করেছেন। ৫-৪-৩-২-১।হ্যাঁ, আপনি পাহাড়ও নাড়াতে সক্ষম। এই মুহূর্তে যা কিছু ঘটছে, তাই সব। এটাই আপনার জীবন। আর এটা নতুন করে আবার শুরু হবে না। আপনি অতীত বদলাতে পারবেন না, কিন্তু পাঁচ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারেন।এটাই হলো প্রাত্যহিক মনোবল শক্তি। আপনার হৃদয় যখন কথা বলে, তাকে সম্মান করুন, ৫-৪-৩-২-১ গণনা করুন এবং এগিয়ে যান। এক মুহূর্তের মনোবল আপনার দিনটি বদলে দিতে পারে।আর আপনার জীবন বদলে দিতে পারে গোটা পৃথিবী।আপনার ভেতরে আছে মহত্ত্ব। এটা প্রকাশ করার এখনই মোক্ষম সময়।৫-৪-৩-২-১, এগিয়ে চলুন।