শবে বরাত
পৃ্ষ্ঠা ১ থেকে ৫
পৃষ্ঠা:০১
শবেবরাত:بسم الله الرحمن الرحيمنحمده و تصلى على رسوله الكريم وعلى آله وصحبه أجمعين وعلى منتبعهم بإحسان إلى يوم الدين أما بعد :
বিদ’আত ও তার পরিণাম:বিদ’আত অর্থ ‘নতুন সৃষ্টি’। আভিধানিক অর্থে বিদ’আত হ’ল-البدعة هي كل ما أحدث على غير مثال سابق ‘ঐ সকল নতুন সৃষ্টি, যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত ছিল না’। শারঈ অর্থে-البدعة هي الطريقة الْمُخْتَرعَة في الدين تضاهي الشريعة يُقصد بها التقرب ه و لم يقم على صحتها دليل شرعي صحيح أصلا أو وصفا كما قاله إلى الله والشاطبي في الاعتصام ۳۷/۱ بيروت، دار المعرفة ‘আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে নতুন কোন প্রথা চালু করা, যা শরী’আতের কোন ছহীহ দলীলের উপরে ভিত্তিশীল নয়’। পারিভাষিক অর্থে সুন্নাতের বিপরীত বিষয়কে বিদ’আত বলা হয়। মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هذا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدُّ، متفق عليه ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী’আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের উপরে
পৃষ্ঠা:০২
পালনীয় হ’ল আমার সুন্নাত ও আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত। তোমরা উহা কঠিনভাবে আঁকড়ে ধর এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর। ধর্মের নামে নতুন সৃষ্টি হ’তে সাবধান! নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ’আত ও প্রত্যেক বিদ’আতই গোমরাহী’। নাসাঈ শরীফের অন্য ছহীহ বর্ণনায় এসেছে ‘এবং প্রত্যেক গোমরাহ ব্যক্তি জাহান্নামী’। খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত মূলতঃ রাসুলেরই সুন্নাত। কারণ তাঁরা কখনোই রাসূলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদনের বাইরে কোন কাজ করতেন না। যুগে যুগে বৈষয়িক প্রয়োজনে সৃষ্ট বিভিন্ন আবিষ্কার সমূহ যেমন সাইকেল, ঘড়ি, চশমা, মটরগাড়ী, উড়োজাহায ইত্যাদি বস্তুসমূহ আভিধানিক অর্থে বিদ’আত বা নতুন সৃষ্টি হ’লেও শারঈ পরিভাষায় কখনোই বিদ’আত নয়। তাই এগুলোকে গুনাহের বিষয় বলে গণ্য করা অন্যায়। অনেকে এগুলোকে অজুহাত করে ধর্মের নামে সৃষ্ট মীলাদ, কিয়াম, শবেবরাত, কুলখানি, চেহলাম ইত্যাদিকে শরী’আতে বৈধ কিংবা ‘বিদ’আতে হাসানাহ’ বলে থাকেন, যেটা আরো অন্যায়। বরং বিদ’আতকে দু’ভাগে ভাগ করাই আরেকটি বিদ’আত।
প্রচলিত শবেবরাত:‘আরবী শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে সাধারণভাবে ‘শবেবরাত’ বা ‘লায়লাতুল বারাআত’ )ليلة البراءة( বলা হয়। ‘শবেবরাত’ শব্দটি ফারসী। এর অর্থ হিস্সা বা নির্দেশ পাওয়ার রাত্রি। দ্বিতীয় শব্দটি আরবী। যার অর্থ বিচ্ছেদ বা মুক্তির রাত্রি। এদেশে শবেবরাত ‘সৌভাগ্য রজনী’ হিসাবেই পালিত হয়। এজন্য সরকারী ছুটি ঘোষিত হয়। লোকেরা ধারণা করেন যে, এ রাতে বান্দাহর গুনাহ মাফ হয়। আয়ু ও রুযী বৃদ্ধি করা হয়, সারা বছরের হায়াত-মউতের ও ভাগ্যের রেজিস্ট্রার লিখিত হয়। এই রাতে রূহগুলো সব আত্মীয়-স্বজনের সাথে মুলাক্কাতের জন্য পৃথিবীতে নেমে আসে। বিশেষ করে বিধবারা মনে করেন যে, তাদের স্বামীদের রূহ। ঐ রাতে ঘরে ফেরে। এজন্য ঘরের মধ্যে আলো জ্বেলে বিধবাগণ সারা রাত মৃত স্বামীর রূহের আগমনের আশায় বুক বেঁধে বসে থাকেন। বাসগৃহ ধূপ- ধুনা, আগরবাতি, মোমবাতি ইত্যাদি দিয়ে আলোকিত করা হয়।
পৃষ্ঠা:০৩
অগণিত বাল্ব জ্বালিয়ে আলোকসজ্জা করা হয়। এজন্য সরকারী পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। আত্মীয়রা সব দলে দলে গোরস্থানে ছুটে যায়। হালুয়া-রুটির হিড়িক পড়ে যায়। ছেলেরা পটকা ফাটিয়ে আতশবাজি করে হৈ-হুল্লোড়ে রাত কাটিয়ে দেয়। যারা কখনো ছালাতে অভ্যন্ত নয়, তারাও ঐ রাতে মসজিদে গিয়ে ‘ছালাতে আফিয়াহ” )الصلاة الألفية( বা ১০০ রাক’আত ছালাত আদায়ে রত হয়, যেখানে প্রতি রাক’আতে ১০ বার করে সূরায়ে ইখলাছ পড়া হয়। তারপর রাত্রির শেষ দিকে ক্লান্ত হয়ে সবাই বাড়ী ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। একসময় ফজরের আযান হয়। কিন্তু মসজিদগুলো আশানুরূপ মুছল্লী না পেয়ে মাতম করতে থাকে। ১৪ কোটি মুসলমানের এই দরিদ্র দেশে এই রাতকে উপলক্ষ্য করে কত লক্ষ কোটি টাকা যে শুধু আলোকসজ্জার নামে আগরবাতি ও মোমবাতি পুড়িয়ে শেষ করা হয়, তার হিসাব কে রাখে? রকমারি বিদ্যুৎব্যতি, হালুয়া-রুটি, মীলাদ ও অন্যান্য মেহমানদারী খরচের হিসাব না হয় বাদই দিলাম। সংক্ষেপে এই হ’ল এদেশে শবেবরাতের নামে প্রচলিত ইসলামী পর্বের বাস্তব চিত্র।
ধর্মীয় ভিত্তি:মানুষ যে এত পয়সা ও সময় ব্যয় করে, এর অন্তর্নিহিত প্রেরণা নিশ্চয়ই কিছু আছে। মোটামুটি দু’টি ধর্মীয় আক্বীদাই এর ভিত্তি হিসাবে কাজ করে থাকে। ১০ ঐ রাতে বান্দাহর গুনাহ মাফ হয়। আগামী এক বছরের জন্য ভালমন্দ তাক্বদীর নির্ধারিত হয় এবং এই রাতে কুরআন নাযিল হয়। ২-ঐ রাতে রূহগুলি ছাড়া পেয়ে মর্ত্যে নেমে আসে। মোমবাতি, আগরবাতি, পটকা ও আতশবাজি হয়তো বা আত্মাগুলিকে সাদর অভ্যর্থনা জানাবার জন্য করা হয়। হালুয়া-রুটি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, ঐদিন আল্লাহর নবী (ছাঃ)-এর দান্দান মুবারক ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল। ব্যথার জন্য তিনি নরম খাদ্য হিসাবে হালুয়া-রুটি খেয়েছিলেন বিধায় আমাদেরও সেই ব্যথায় সমবেদনা প্রকাশ করার জন্য হালুয়া-রুটি খেতে হয়। অথচ ওহোদের যুদ্ধ হয়েছিল ৩য় হিজরীর শাওয়াল মাসের ১১ তারিখ শনিবার সকাল বেলায়।
পৃষ্ঠা:০৪
আর আমরা ব্যথা অনুভব করছি তার প্রায় দু’মাস পূর্বে শা’বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রে…! এক্ষণে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলির ধর্মীয় ভিত্তি কতটুকু তা খুঁজে দেখব। প্রথমটির সপক্ষে যে সব আয়াত ও হাদীছ পেশ করা হয় তা নিম্নরূপঃ ১- সূরা দুখান-এর ৩ ও ৪ নং আয়াত- إِنَّا الزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ অর্থঃ (৩) আমরা তো ইহা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে; আমরা তো সতর্ককারী (৪) এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’। হাফেয ইবনে কাছীর (৭০১-৭৭৪ হিঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে মুবারক রজনী অর্থ লায়লাতুল কদর’। যেমন সূরায়ে কুদর ১ম আয়াতে আল্লাহ বলেন,-لا الزناة في ليلة القد ‘নিশ্চয়ই আমরা ইহা নাযিল করেছি হৃদরের রাত্রিতে’। আর সেটি হ’ল রামাযান মাসে। যেমন সূরা বাক্বারাহর ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন شهر الزل فيه القرآن অর্থ:‘এই সেই রামাযান মাস যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’। এক্ষণে ঐ রাত্রিকে মধ্য শা’বান বা শবেবরাত বলে ইকরিমা প্রমুখ হ’তে যে কথা বলা হয়ে থাকে, তা সঙ্গত কারণেই অগ্রহণযোগ্য। এই রাতে এক শা’বান হ’তে আরেক শা’বান পর্যন্ত বান্দার জয়ী, বিয়ে-শাদী, জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদি লিপিবদ্ধ হয় বলে যে হাদীছ প্রচারিত আছে, তা ‘মুরসাল’ ও যঈফ এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী হওয়ার কারণে অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, কুদর রজনীতেই লওহে মাহফুযে সংরক্ষিত ভাগ্যলিপি হ’তে পৃথক করে আগামী এক বছরের নির্দেশাবলী তথা মৃত্যু, রিযিক ও অন্যান্য ঘটনাবলী যা সংঘটিত হবে, সেগুলি লেখক ফেরেশতাগণের নিকটে প্রদান করা হয়। এরূপভাবেই বর্ণিত হয়েছে হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর, মুজাহিদ, আবু মালিক, যাহহাক প্রমুখ সালাফে ছালেহীনের নিকট হ’তে’।”
পৃষ্ঠা:০৫
অতঃপর ‘তাকুদীর’ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য হ’ল- وَكُلُّ شَيْءٍ فَعَلُوهُ فِي الزُّبُرِ وَكُلُّ صَغِيرٍ وَكَبِيرٍ مُسْتَطَر ‘অর্থঃ ‘উহাদিগের সমস্ত কার্যকলাপ আছে’ আমলনামায়, আছে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সমস্ত কিছুই লিপিবদ্ধ।” রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন- عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السماوات والأرض بخمسين ألف سنة …. অর্থঃ ‘আসমান সমূহ ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বৎসর পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা স্বীয় মাখলুকাতের তাকদীর লিখে রেখেছেন। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমার ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবে; এবিষয়ে কলম শুকিয়ে গেছে’ (পুনরায় তাক্বদীর লিখিত হবে না)। এক্ষণে শবেবরাতে প্রতিবছর ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয় বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে, তার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই। বরং ‘লায়লাতুল বারাআত’ বা ভাগ্যরজনী নামটিই সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইসলামী শরী’আতে এই নামের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বাকী রইল এই রাতে গুনাহ মাফ হওয়ার বিষয়। সেজন্য দিনে ছিয়াম পালন ও রাতে ইবাদত করতে হয়। অন্তত ১০০ রাক’আত ছালাত আদায় করতে হয়। প্রতি রাক’আতে সূরায়ে ফাতিহা ও ১০ বার করে সূরায়ে ইখলাছ তথা ‘কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ’ পড়তে হয়। এই ছালাতটি গোসল করে আদায় করলে গোসলের প্রতি ফোঁটা পানিতে ৭০০ রাক’আত নফল ছালাতের ছওয়াব পাওয়া যায় ইত্যাদি। এ সম্পর্কে প্রধান যে তিনটি দলীল দেওয়া হয়ে থাকে, তা নিম্নরূপঃ ১- হযরত আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন- إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها الخ অর্থঃ ‘অর্ধ শা’বান এলে তোমরা রাত্রিতে ইবাদত কর ও দিনে ছিয়াম
পৃ্ষ্ঠা ৬থেকে ১০
পৃষ্ঠা:০৬
পালন কর। কেননা আল্লাহ পাক ঐদিন সূর্যাস্তের পরে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন ও বলেন, আছ কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করে দেব; আছ কি কেউ রূযী প্রার্থী আমি তাকে রূযী দেব। আছ কি কোন রোগী আমি তাকে আরোগ্য দান করব’।’এই হাদীছটির সনদে ‘ইবনু আবী সারাহ’ নামে একজন রাবী আছেন, যিনি হাদীছ জালকারী। সে কারণে হাদীছটি মুহাদ্দেছীনের নিকটে ‘যঈফ’।দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী হওয়ায় অগ্রহণযোগ্য। কেননা একই মর্মে প্রসিদ্ধ ‘হাদীছে নুযূল’ ইবনু মাজাহর ৯৮ পৃষ্ঠায় মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে (হা/১৩৬৬) এবং বুখারী শরীফের (মীরাট ছাপা ১৩২৮ হিঃ) ১৫৩, ৯৩৬ ও ১১১৬ পৃষ্ঠায় এবং ‘কুতুবে সিত্তাহ’ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সর্বমোট ৩০ জন ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।” সেখানে ‘মধ্য শা’বান’ না বলে ‘প্রতি রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ’ বলা হয়েছে। অতএব ছহীহ হাদীছ সমূহের বর্ণনানুযায়ী আল্লাহপাক প্রতি রাত্রির তৃতীয় প্রহরে নিম্ন আকাশে অবতরণ করে বান্দাকে ফজরের সময় পর্যন্ত উপরোক্ত আহ্বান করে থাকেন- শুধুমাত্র নির্দিষ্টভাবে মধ্য শা’বানের একটি রাত্রিতে নয়।২- মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একলা রাত্রিতে একাকী মদীনার ‘বাজ্বী’ গোরস্থানে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এক পর্যায়ে আয়েশা (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, মধ্য শা’বানের দিবাগত রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং ‘কত্ব’ গোত্রের ছাগল সমূহের লোম সংখ্যার চাইতে অধিক সংখ্যক লোককে মাফ করে থাকেন’।” এই হাদীছটিতে ‘হাজ্জাজ বিন আরত্বাত’ নামক একজন রাবী আছেন, যার সনদ ‘মুনক্বাত্বা’ হওয়ার কারণে ইমাম বুখারী প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ হাদীছটিকে ‘যঈফ’ বলেছেন।৯. ইবনু মাজাহ (দিল্লীর ১৩৩৫ খ্রিঃ) ১ম খণ্ড, পৃঃ ১০০। এঐ (বৈরুতঃ মাকতাবা ইলুমিল্লার,ভাবি) হা/১৩৮৮। ১০, হাফেয ইবনুল কাইয়িম, মুখতাছার হাওয়াইতুল সুরসালার (রিয়াযঃ জাবি), ২য় খণ্ড, পূর ২৩০-৫০। হাদীছটি নিম্নরূপঃ-تنزل ربنا تبارك وتعالى كل ليلة إلى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول من يدعوني فاستجيب له، من يسألني فأعطيه، من يستغفرني فلانتر له رواه البخاري وفي رواية السلم عليه فلا يزال كذلك حتى يلي الفجر، صحیح مسلم ط بیروت ۷۰
পৃষ্ঠা:০৭
প্রকাশ থাকে যে, ‘নিছফে শা’বান’-এর ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে কোন ছহীহ মরফু হাদীছ নেই। তবে বিভিন্ন দুর্বল সূত্রে কয়েকটি যঈফ ও জাল হাদীছ প্রচলিত আছে। যেমন (১) তিরমিযী ও ইবনু মাজাহতে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীছটি দুইস্থানে ছিন্নসূত্র বা ‘মুনক্বাত্বা’ (২) আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত বায়হাকীর অপর একটি রেওয়ায়াত ‘মুরসাল’ (৩) আবু মূসা আশ’আরী (রাঃ) বর্ণিত ইবনু মাজার একটি রেওয়ায়াত ‘যঈফ’ (৪) ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত মুসনাদে আহমাদ-এর অন্য একটি রেওয়ায়াত দুর্বল (৩)। (৫) কাছীর বিন মুররাহ্ (রাঃ) বর্ণিত বায়হাক্বীর রেওয়ায়াতটি ‘মুরসাল’ (৬) আলী (রাঃ) বর্ণিত ইবনু মাজাহ ও তিরমিযীর ‘রাত্রিতে ইবাদত ও দিবসে ছিয়াম’-এর প্রসিদ্ধ হাদীছটি যঈফ ও মওযু।” আলবানী বলেন, )وا: جدا( ‘দারুন বাজে’। অতএব এসবের উপর ভিত্তি করে কোন ইবাদত প্রতিষ্ঠা করা চলে না।এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উক্ত রাতের জন্য পৃথক কোন ইবাদত বা ছালাত আদায় করলেন না, দিবসে ছিয়াম পালন করলেন না, কাউকে কিছু করতেও বললেন না। ছাহাবায়ে কেরামও এই রাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত, গোর যেয়ারত বা অন্য বাড়তি কিছু করেছেন বলে জানা যায় না। তবে আমরা কার সুন্নাতের অনুসরণ করছি?৩- ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) বলেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে বলেন যে, তুমি কি ‘সিরারে শা’বানের’ ছিয়াম রেখেছ? লোকটি বললেন ‘না’। আল্লাহর নবী (ছাঃ) তাকে রামাযানের পরে ছিয়াম দু’টির ক্বাযা আদায় করতে বললেন’।জমহুর বিদ্বানগণের মতে ‘সিরার’ অর্থ মাসের শেষ। উক্ত ব্যক্তি শা’বানের শেষাবধি নির্ধারিত ছিয়াম পালনে অভ্যস্ত ছিলেন অথবা ঐটা তার মানতের ছিয়াম ছিল। রামাযানের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলার নিষেধাজ্ঞা লংঘনের ভয়ে
পৃষ্ঠা:০৮
তিনি শা’বানের শেষের ছিয়াম দু’টি বাদ দেন। সেকারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ঐ ছিয়ামের কাযা আদায় করতে বলেন।* বুঝা গেল যে, এই হাদীছটির সঙ্গে প্রচলিত শবেবরাতের কোন সম্পর্ক নেই।
শবেবরাতের ছালাত:এই রাত্রির ১০০ রাক’আত ছালাত সম্পর্কে যে হাদীছ বলা হয়ে থাকে তা মওযু’ বা জাল। এই ছালাত ৪৪৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে আবিষ্কৃত হয়। যেমন মিশকাত শরীফের খ্যাতনামা আরবী ভাষ্যকার মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (মৃঃ ১০১৪ হিঃ) ১৩। কেতাবের বরাতে বলেন, ‘জুম’আ ও ঈদায়নের ছালাতের চেয়ে গুরুত্ব দিয়ে ‘ছালাতে আফিয়াহ’ নামে এই রাতে যে ছালাত আদায় করা হয় এবং এর স্বপক্ষে যেসব হাদীছ ও আছার বলা হয়, তার সবই বানোয়াট ও মওযু অথবা যঈফ। এব্যাপারে (ইমাম গাযযালীর) ‘এহইয়াউল উলুম’ ও (ইবনুল আরাবীর) ‘কুতুল কুলুব’ দেখে যেন কেউ ধোকা না খায়।… এই বিদ’আত ৪৪৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম জেরুযালেমের বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে প্রবর্তিত হয়। মসজিদের মূর্খ ইমামগণ অন্যান্য ছালাতের সঙ্গে যুক্ত করে এই ছালাত চালু করে। এর মাধ্যমে তারা জনসাধারণকে একত্রিত করার এবং মাতব্বরী করা ও পেট পুর্তি করার একটা ফন্দি এঁটেছিল মাত্র। এই বিদ’আতী ছালাতের ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে নেক্কার-পরহেযগার ব্যক্তিগণ আল্লাহর গযবে যমীন ধ্বসে যাওয়ার ভয়ে শহর ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিলেন’।” এই রাতে মসজিদে গিয়ে একাকী বা জামা’আতবদ্ধভাবে ছালাত আদায় করা, যির-আযকারে লিপ্ত হওয়া সম্পর্কে জানা যায় যে, শামের কিছু বিদ্বান এটা প্রথমে শুরু করেন। তাঁরা এই রাতে সুন্দর পোষাক পরে, আতর-সুরমা লাগিয়ে মসজিদে গিয়ে রাত্রি জাগরণ করতে থাকেন। পরে বিষয়টি লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মক্কা-মদীনার আলেমগণ এর তীব্র বিরোধিতা করেন। কিন্তু শামের
পৃষ্ঠা:০৯
বিহ্বানদের দেখাদেখি কিছু লোক এগুলো করতে শুরু করেন। এইভাবে এটি জনসাধারণ্যে ব্যপ্তি লাভ করে’।” বুঝা গেল যে, শবেবরাত উপলক্ষ্যে বিশেষ ছালাত বা ইবাদত অনুষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে নব্যসৃষ্ট বা বিদ’আত। এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের সুন্নাতের কোন সম্পর্ক নেই। তবুও লোকেরা এ কাজ করে থাকেন। তার পিছনে সম্ভবতঃ দু’টি কারণ ক্রিয়াশীল রয়েছে।-১- এই উপলক্ষ্যে ছালাত ছিয়াম ও অন্যান্য ইবাদত অনুষ্ঠান মূলতঃ বিদ’আত হ’লেও কাজগুলো তো ভাল। অতএব ‘বিদ’আতে হাসানাহ’ বা সুন্দর বিদ’আত হিসাবে করলে দোষ কি? এর জওয়াব হ’ল এই যে, ইসলামী শরী’আত কোন মানুষের তৈরী নয়। বরং সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ‘অহি’ দ্বারা প্রত্যাদিষ্ট। এর ইবাদত বিষয়ের সবটুকুই শরী’আত কর্তৃক নির্ধারিত। যেখানে সামান্যতম কমবেশী করার অধিকার কারু নেই। আর শরী’আতের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করাকেই তো বিদ’আত বলা হয়। সকল বিদ’আতই ভ্রষ্টতা। যার পরিণাম জাহান্নাম। তাই এ থেকে প্রত্যেক মুসলমানের দূরে থাকা অপরিহার্য। মাদরাসা, মকতব, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি ব্যবহারিক বিষয়গুলি শরী’আতের পরিভাষায় বিদ’আত নয়। তাই ‘বিদ’আতে হাসানাহ’ নাম দিয়ে ধর্মের নামে সৃষ্ট শবেবরাত-কে জায়েয করা চলে না।২য়- আরেকটি বিষয় হ’ল মধ্য শা’বানের বিশেষ ফযীলত সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ না থাকলেও অনেকগুলি যঈফ ও মওযূ হাদীছ যেহেতু আছে, সেহেতু ‘ফাযায়েল’ সংক্রান্ত ব্যাপারে যঈফ হাদীছের উপরে আমল করায় দোষ নেই। এর জওয়াব এই যে, যঈফ হাদীছের উপরে কোন দলীল কায়েম করা সিদ্ধ নয়। তবু বর্ণিত যুক্তিটি মেনে নিলেও তা কেবল ঐসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যেসব আমলের পিছনে কোন ছহীহ ও সুদৃঢ় দলীল মওজুদ আছে। শবেবরাতের পিছনে এই ধরনের কোন ছহীহ দলীল নেই। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বরং এর বিরোধী বক্তব্যই আমরা ইতিপূর্বে শ্রবণ করে এসেছি। তাছাড়া শবেবরাত কেবল ফাযায়েল-এর অনুষ্ঠান নয় বরং রীতিমত ইবাদত অনুষ্ঠান,
পৃষ্ঠা:১০
যার কোন ভিত্তি শরী’আতে নেই। হাফেয ইরাকী বলেন, মধ্য শা’বানের বিশেষ ছালাত সম্পর্কিত হাদীছসমূহ মওযু এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে মিথ্যারোপ মাত্র। ইমাম নবর্তী (৬৩১-৬৭৬ হিঃ) বলেন, ‘ছালাতে রাগায়েব’ নামে পরিচিত ১২ রাক’আত ছালাত, যা মাগরিব ও এশার মধ্যে পড়া হয় এবং রজব মাসের প্রথম জুম’আর রাত্রিতে ও মধ্য শা’বানের রাত্রিতে ১০০ রাক’আত ছালাত আদায় করা হয়ে থাকে, এগুলি বিদ’আত ও মুনকার।… এই ছালাতগুলি সম্পর্কে যত হাদীছ বর্ণনা করা হয়ে থাকে সবই বাতিল। কোন কোন আলেম এগুলিকে ‘মুস্তাহাব’ প্রমাণ করতে গিয়ে যে কিছু পৃষ্ঠা খরচ করেছেন, তারাও এ ব্যাপারে ভুলের মধ্যে আছেন’।*
রূহের আগমন:এই রাত্রিতে ‘বাকী’এ গারকাদ’ নামক কবরস্থানে রাতের বেলায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিঃসঙ্গ অবস্থায় যেয়ারত করতে যাওয়ার হাদীছটি (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৯) যে যঈফ ও মুনব্বাত্বা’ তা আমরা ইতিপূর্বে দেখে এসেছি। এখন প্রশ্ন হ’লঃ এই রাতে সত্যি সত্যিই রূহগুলো ইল্লীন বা সিজ্জীন হ’তে সাময়িকভাবে ছাড়া পেয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে কি-না। যাদের মাগফেরাত কামনার জন্য আমরা দলে দলে কবরস্থানের দিকে ছুটে যাই। এমনকি মেয়েদের জন্য কবর যেয়ারত অসিদ্ধ হ’লেও তাদেরকেও এ রাতে কবরস্থানে দেখা যায়। এ সম্পর্কে সাধারণতঃ সূরায়ে কুদর-এর ৪ ও ৫নং আয়াত দু’টি পেশ করা হয়ে থাকে। যেখানে বলা হয়েছে-تنزل الملائكة والروح فيها بإذن ربهم من كل أمر، سلام، هي حَتَّى مطلع الفجر অর্থঃ ‘সে রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। সকল বিষয়ে কেবল শান্তি; উষার আর্বিভাব কাল পর্যন্ত’। এখানে ‘সে রাত্রি’ বলতে লায়লাতুল কদর বা শবেকদরকে বুঝানো হয়েছে- যা এই সূরার ১ম, ২য় ও ৩য় আয়াতে বলা হয়েছে।
পৃ্ষ্ঠা ১১থেকে ১৪
পৃষ্ঠা:১১
অত্র সূরায় ‘রূহ’ অবতীর্ণ হয় কথাটি রয়েছে বিধায় হয়তবা অনেকে ধারণা করে নিয়েছেন যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহগুলি সব দুনিয়ায় নেমে আসে। অথচ এই অর্থ কোন বিশ্বান করেননি। ‘রূহ’ শব্দটি একবচন। এ সম্পর্কে হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে রূহ বলতে ফিরিশতাগণের সরদার জিবরাঈলকে বুঝানো হয়েছে। কেউ বলেন, বিশেষ ধরনের এক ফিরিশতা। তবে এর কোন ছহীহ ভিত্তি নেই’।বুঝা গেল যে, জ্বদরের রাত্রিতে জিব্রীল (আঃ) তাঁর বিশেষ ফিরিশতা দল নিয়ে দুনিয়াতে অবতরণ করেন এবং মুমিনদের ছালাত, তেলাওয়াত, বিক্র-আযকার ইত্যাদি ইবাদতের সময় রহমতের পাখা বিছিয়ে তাদেরকে ঘিরে থাকেন। এর সঙ্গে মৃত লোকদের রূহ ফিরে আসার কোন সম্পর্ক নেই। অতএব মহিমান্বিত শবেকদরে যখন মৃত রূহগুলো ফিরে আসে না, তখন শবেবরাতে এগুলো ফিরে আসার যুক্তি কোথায়? এ বিষয়ে কোন ছহীহ দলীল থাকলে তা অবশ্যই মানতে হ’ত। কিন্তু তেমন কিছুই নেই। এমতাবস্থায় ঐসব রূহের সম্মানে আগরবাতি, মোমবাতি বা রং-বেরংয়ের বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে আলোকসজ্জা করা, তাদের মাগফেরাত কামনার জন্য দলে দলে কবর যেয়ারত করা, ভাগ্যরজনী মনে করে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা এবং এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন মাহফিল ও সকল প্রকারের অনুষ্ঠানই বিদ’আত-এর পর্যায়ভুক্ত হবে। বরং অহেতুক অর্থ ও সময়ের অপচয়ের জন্য এবং বিদ’আতের সহায়তা করার জন্য আল্লাহর গযবের শিকার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী (৯৫৮-১০৫২ হিঃ)-এর মতে এই রাতে আলোকসজ্জা করা হিন্দুদের ‘দেওয়ালী’ উৎসবের অনুকরণ মাত্র’। কেউ বলেন, এগুলি খলীফা হারুনুর রশীদ (১৭০-১৯৩ হিঃ)-এর অগ্নি উপাসক নও মুসলিম বারামকী মন্ত্রীদের চালু করা বিদ’আত মাত্র’।”পরিশেষে একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেই আলোচনার ইতি টানতে চাই। কোন একটি নির্দিষ্ট রাত্রি বা দিবসকে শুভ বা অশুভ গণ্য করা ইসলামী নীতির বিরোধী। রাত্রি ও দিবসের স্রষ্টা আল্লাহ। তাই কোন একটি রাত বা দিনকে অধিক মঙ্গলময় হিসাবে গণ্য করতে গেলে সেখানে
পৃষ্ঠা:১২
আল্লাহর নির্দেশ অবশ্যই যরূরী। ‘অহি’ ব্যতীত মানুষ এ ব্যাপারে নিজে থেকে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। যেমন কুরআন ও হাদীছের মাধ্যমে আমরা লায়লাতুল কদর ও মাহে রামাযানের বিশেষ মর্যাদা এবং ঐ সময়ের ইবাদতের বিশেষ ফযীলত সম্পর্কে জানতে পেরেছি।এক্ষণে যদি শবেবরাত, শবেমে’রাজ, জুম’আতুল বিদা’ ইত্যাদির বিশেষ কোন ফযীলত এবং বিশেষ ইবাদত সম্পর্কে কিছু থাকত, তবে তা রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) অবশ্যই তাঁর ছাহাবীদেরকে জানিয়ে যেতেন। তিনি নিজে করতেন ও তাঁর ছাহাবীগণও তার উপরে আমল করতেন। শুধু নিজেরা আমল করতেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর নিকটে তা প্রচার করে যেতেন এবং তা কখনোই গোপন রাখতেন না। কারণ তাঁরাই ইসলামের প্রথম কাতারের বাস্তব রূপকার। তাঁরাই দ্বীনকে এ দুনিয়ায় সর্বাধিক ত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আল্লাহ তাঁদের উপর রহম করুন- আমীন। কিন্তু পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে এসবের কিছুই পাওয়া যায় না। বরং একথাই পাওয়া যায় যে, জুম’আর দিন রাত হ’ল সবচেয়ে সম্মানিত। অথচ জুম’আর রাতকে ইবাদতের জন্য এবং দিনকে ছিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করা নিষেধ’।” অতএব ছহীহ দলীল ব্যতীত কোন একটি রাত বা দিনকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা কিভাবে জায়েয হ’তে পারে, সুধী পাঠকমণ্ডলী তা ভেবে দেখবেন আশা করি। পরিশেষে বহুল প্রচারিত বাংলা বই ‘মকছুদুল মোমেনীন’ (১৯৮৫) পৃঃ ২৩৫-২৪২ ইবং ‘মকছুদুল মোমীন’ (১৯৮৫) ৪০২-৪০৮ পৃষ্ঠায় শবেবরাতের ফযীলত বলতে গিয়ে হাদীছের নামে যে ১৬টি বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে, তার সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
পৃষ্ঠা:১৩
শা’বান মাসের করণীয়:রামাযানের আগের মাস হিসাবে শা’বান মাসের প্রধান করণীয় হ’ল, অধিকহারে হিয়াম পালন করা। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, عن عائشة قالت… وما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم استكمل صيام شهر قط الا رمضان وما رأيته في شهر أكثر منه صياما في شعبان، وفي رواية عنها : وكان يصوم شعبان إلا قليلاً، متفق عليه অর্থঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রামাযান ব্যতীত অন্য কোন মাসে শা’বানের ন্যায় এত অধিক ছিয়াম পালন করতে দেখিনি। শেষের দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ করতেন’। যারা শা’বানের প্রথম থেকে নিয়মিত ছিয়াম পালন করেন, তাদের জন্য শেষের পনর দিন ছিয়াম পালন করা উচিত নয়। অবশ্য যদি কেউ অভ্যস্ত হন বা মানত করে থাকেন, তারা শেষের দিকেও ছিয়াম পালন করবেন। মোটকথা শা’বান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম পালন করা সুন্নাত। ছহীহ দলীল ব্যতীত কোন দিন বা রাতকে ছিয়াম ও ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা সুন্নাতের বরখেলাফ। অবশ্য যারা ‘আইয়ামে বীর্য’-এর তিন দিন নফল ছিয়ামে অভ্যস্ত, তারা ১৩, ১৪ ও ১৫ই শা’বানে উক্ত নিয়তেই ছিয়াম পালন করবেন, শবেবরাতের নিয়তে নয়। নিয়তের গোলমাল হ’লে কেবল কষ্ট করাই সার হবে। কেননা বিদ’আতী কোন আমল আল্লাহ পাক কবুল করেন না এবং সকল প্রকার বিদ’আতই ভ্রষ্টতা ও প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে নিজ নিজ আমল সমূহ পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!!
পৃষ্ঠা:১৪
রামাযানের ভূমিকা স্বরূপ শা’বানের প্রথমার্ধে অধিকহারে নফল ছিয়াম পালন করুন। যারা অন্য মাসে আইয়ামে বীয-এর নফল ছিয়াম রাখেন, তারা শা’বান মাসেও ১৩, ১৪ ও ১৫ তিনদিন উক্ত নিয়তে ছিয়াম রাখুন। ‘শবেবরাত’ কোন ইসলামী পর্ব নয়। ঐ নিয়তে ছালাত-ছিয়াম, দান-ছাদাক্বা কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। বরং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর তরীকা বিরোধী হওয়ার কারণে এবং ঐ উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিদ’আতী অনুষ্ঠানাদিতে অর্থ ও সময়ের অপচয়ের কারণে আখেরাতে গ্রেফতার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব বিদ’আত হ’তে বেঁচে থাকুন! আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন!كل أمتى يدخلون الجنة إلا من أبي، قيل من أبي؟ قال: من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبي رواه البخاري عن أبي هرير١٤٣রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, কেবলমাত্র তারাই করবে না যারা ‘অসম্মত’। জিজ্ঞেস করা হ’ল ‘অসম্মত’ কারা? তিনি বললেন, যারা আমার আনুগত্য করল, তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যারা আমার অবাধ্যতা করল, তারাই (জান্নাতে যেতে) অসম্মত’ (বুখারী, মিশকাত, আলবানী হা/১৪৩)।