আবু বকর রা. সম্পর্কে ১৫০ টি শিক্ষণীয় ঘটনা
পৃষ্ঠা ১ থেকে ১৫
পৃষ্ঠা- ০১
(১) সিদ্দীক নামকরণ:- নবীকে অধিক সত্যায়ন করার কারণে আবু বকর লাভ করেন। উম্মুল মুমিনীন আয়শা বলেন, নবী সিদ্দীক উপাধি কে যখন মসজিদে আকসায় ভ্রমণ করানো হলো অর্থাৎ যখন মেরাজ সংঘটিত হলো তখন লোকেরা এ নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা শুরু করল। এক পর্যায়ে। ঈমানদার কিছু লোক মুরতাদ হয়ে গেল। আবার কতিপয় লোক আবু বকর এর নিকট গেল এবং তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার বন্ধু মুহাম্মদ সম্পর্কে কি কোন সংবাদ আছে? তিনি নাকি মনে করেন তাকে রাত্রে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছে। আবু বকর (রা:) বললেন, নবী সত্যি কি তাই বলেছেন? তাঁরা বলল, হ্যাঁ। আবু বকর বললেন, যদি তিনি তাই বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্যই বলেছেন। লোকেরা বলল, তুমি কিভাবে সত্যায়ন করলে যে, তিনি রাত্রে বাইতুল মুকাদ্দাস গেলেন এবং ভোর হওয়ার আগে আবার ফিরে আসলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি অবশ্যই তাঁর কথায় বিশ্বাস করি এমনকি এর চেয়েও কঠিন কোন বিষয় হলেও বিশ্বাস করব। সকাল বিকাল তাঁর কাছে আকাশ থেকে খবর আসার কারণে আমি তাঁর কথা বিশ্বাস করব। এজন্যই আবু বকর -কে সিদ্দীক উপাধি দেয়া হয় জাহেলীজাহেলী। (হাকীম, ৩/৬২৬৩)
(২) জাহেলী যুগেও তিনি মদ পান করেননি:- আবু বকর জাহেলী যুগেও সবচেয়ে উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, এমনকি তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বেও মদকে হারাম করে নিয়েছিলেন। আয়েশা বলেন, আবু বকর নিজের ওপর মদকে হারাম করেছিলেন। এমনকি তিনি জাহেলী যুগেও পান করেননি এবং ইসলামী যুগেও তিনি তা পান করেন নি। এটা এজন্য যে, তিনি একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে ময়লার মধ্যে হাত দিয়ে তা মুখে দিচ্ছে। সে এর গন্ধ পায় তখন হাত সরিয়ে নেয়। তখন আবু বকর বললেন, নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি কি রুরছে তা জানে না। লোকটির এ অবস্থা দেখে তিনি নিজের উপর মদকে
পৃষ্ঠা- ০২
হারাম করে দেন। এক ব্যক্তি আবু বকর-কে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি জাহেলী যুগে মদ পান করেছেন? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কেন এটা করলেন? তিনি বললেন, আমি আমার ইজ্জত ও সম্মানকে হেফাজত করি। কেননা, যে ব্যক্তি মদ পান করে, সে তাঁর ইজ্জত ও সম্মানকে নষ্ট করে।
(তাঁরীখুল খুলাফা লিস সুহূর্তী, পৃঃ ৪৯)
(৩)আমি কখনো মূর্তিকে সিজদা করিনি:- সাহাবীদের এক মজলিসে আবু বকর প্লে বললেন, আমি কখনো মূর্তিকে সিজদা করিনি। আর তা এই কারণে যে, আমি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হলাম তখন আমার পিতা আবু কুহাফা আমার হাত ধরে একটি স্থানে নিয়ে গেলেন, যেখানে অনেক মূর্তি ছিল। তিনি আমাকে বললেন, এগুলো তোমার উপাস্য। তখন আমি একটি মূর্তির নিকটবর্তী হলাম এবং বললাম, আমি ক্ষুধার্ত আমাকে খাদ্য দাও। কিন্তু সে আমার কোন উত্তর দিল না। আমি আবার বললাম, আমি বস্ত্রহীন আমাকে কাপড় দাও। কিন্তু এতেও সে আমার কোন জবাব দিল না। তখন আমি একটি পাথর তাঁর চেহারার দিকে ছুঁড়ে মারলাম। (আল খুলাফাউর রাশূিন, মাহমুদ শাকির পূঃ ৩১)
(8)একটি আশ্চর্যজনক সংবাদ:- আবু বকর ল্ল একদিন একটি স্বপ্ন দেখলেন। তখন তিনি শামে অবস্থান করা ছিলেন। স্বপ্নটি একটি পাদ্রীর নিকট কর্ণনা করলেন। পাদ্রী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথা থেকে এসেছ। আবু বকর টু বললেন, মক্কা থেকে। আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন গোত্রের? তিনি বললেন, কোরাইশ গোত্রের। আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী কর? তিনি বললেন, আমি ব্যবসা করি। এসব শুনে পাদ্রী বললেন, যদি আল্লাহ তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন। তাহলে তিনি তোমার সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে এমন একজন নবী পাঠাবেন যার জীবদ্দশায় তুমি তাঁর সাহায্যকারী হবে এবং তাঁর মৃত্যুর পর তুমি তাঁর খলিফা নির্বাচিত হবে। এটা শুনে আবু বকর ক্রমনে মনে আনন্দিত হলেন। (আল খুলাফাটর রাশিদুন, মাহসুদ শাকির পূঃ ৩৪)
পৃষ্ঠা:০৩
(৫)তালহা আবু বকর -কে মূর্তি পূজার জন্য ডেকেছিলেন:-আবু বকর ইসলাম গ্রহণ করলে মক্কাবাসীদের নিকট এটা অত্যন্ত কষ্টকর হলো। তাঁরা পরামর্শ করল যে, তাঁর একজন দূত পাঠাবে। যে তাকে মূর্তি পূজার আহ্বান জানাবে এবং তাঁরা এজন্য তালহা ইবনে আবদুল্লাহকে নির্বাচন করল। তালহা তাঁর কাছে আসলেন এবং আবু বকর কে ডাক দিয়ে বললেন, আমার দিকে আস। আবু বকর বললেন, তুমি আমাকে কি জন্য ডাকছ? তালহা বললেন, তোমাকে লাত ও উযযার ইবাদাত করার জন্য আহ্বান করছি। আবু বকর বললেন, লাত কী জিনিস? তালহা বললেন, আল্লাহর সন্তান। আবু বকর টুদ্র বললেন, তাহলে তাঁর মা কে? তখন তালহা চুপ থাকলেন। একদম ঠোঁটও নাড়াতে পারলেন না। তখন আবু বকর তালহার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের সাথীর উত্তর দাও। কিন্তু তাঁরাও চুপ থাকল কোন উত্তর দিতে পারল না। এমতাবস্থায় তালহা তাদের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তাঁরাও চুপ থাকল। এবার তালহা দ্বিতীয় বার আবু বকর কে ডাক দিয়ে বললেন, আস। আমি মুসলমান হয়ে যাচ্ছি। তখন আবু বকর টুদ্র তালহাকে নিয়ে রাসূল-এর কাছে গেলেন। (উদ্বুদুল আখবার, ১৯৯, ২০০)
(৬)কাবার প্রান্তে একটি ঘটনা:- আবু বকর তাঁর নিজের সম্পর্কে বললেন, আমি কাবার কিনারে বসা ছিলাম। সেখানে যায়েদ ইবনে আমরও বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় ইবনে আবি সালত সেখান দিয়ে গমন করছিলেন। তখন তিনি বললেন, কিভাবে সকাল করেছ হে কল্যাণের অন্বেষণকারী! তিনি বললেন, মঙ্গলের সাথে। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কিছু পেয়েছ? বললেন, না। এবার তিনি বললেন, একনিষ্ঠ দ্বীন ছাড়া যা আছে সবই বাতিল। তুমি কি এমন কোন নবীর সংবাদ শুনেছ যার অপেক্ষা করা হচ্ছে? আবু বকর বললেন, না। অতঃপর তিনি বললেন, আমি ওয়ারাকা ইবনে নাওফেলকে
পৃষ্ঠা:০৪
খুঁজতে লাগলাম, তিনি অধিকাংশ সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। তিনি অনেক সাহসী ছিলেন। আমি তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, হে ভাতিজা! আমরা কিতাব সম্পর্কে জ্ঞান রাখি। নিশ্চয় আরবের উন্নত বংশ থেকে একজন নবী আসবেন। সেটা হচ্ছে তোমার বংশ। আমি বললাম, সেই নবী সম্পর্কে কিছু বলুন। তিনি বললেন, তিনি অত্যাচার করেন না, অত্যাচারিত হন না এবং তাঁর কাছে কেউ অত্যাচারিতও হন না। অতঃপর যখন নবী-এর আবির্ভাব হলেন, আমি তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম এবং তাঁকে সত্যায়ন করলাম।
(তাঁরীখুল খুলাফা লিস সুয়ূতী, পৃঃ ৫২)
(৭)যেমন ছিলেন আবু বকর:- আয়েশা থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি তাকে বলল, আবু বকর সম্পর্কে আমাদেরকে বলুন। তিনি বললেন, আবু বকর দ্রে ছিলেন এমন ব্যক্তি যার গায়ের রং ছিল শুভ্র। তিনি ছিলেন পরিচ্ছন্ন। হালকা পাতলা বাহু বিশিষ্ট। প্রশস্ত চেহারার অধিকারী, লজ্জাশীল চক্ষুবিশিষ্ট।
(ইবনে সা’দ, তাবকাতুল কুবরা- ৩/১৮৮)
(৮)জাহেলী যুগে আবু বকর:- ইমাম নববী বলেন, জাহেলী যুগে আবু বকর কুরাইশদের নেতা ছিলেন। তিনি তাদের পরামর্শ সদস্য ছিলেন এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ছিলেন। যখন ইসলামের আগমন হলো তখন তিনি সবকিছু বাদ দিয়ে ইসলামকে প্রাধান্য দিলেন এবং পরিপূর্ণভাবে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করলেন। ইবনে আসাকী মা’রুফ থেকে বর্ণনা করে বলেন, নিশ্চয়ই আবু বকর কুরাইশদের ঐ এগার জনের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যাদের মর্যাদা জাহেলী যুগে ও ইসলামী যুগে অত্যধিক ছিল। তাদের মধ্যে আবু বকর নেতৃত্বস্থানীয় লোক ছিলেন। তৎকালীন সময়ে কুরাইশদের
পৃষ্ঠা:০৫
রাজা-বাদশাহ ছিল না যার অধীনে প্রতিটি বিষয়ের সমাধা হত বরং প্রত্যেক গোত্রের মধ্যে একজন নেতা থাকত। তাঁরাই সব কিছু সমাধা করত। বনী হাশেম গোত্র মেহমানদারী করত এবং পানি পান করত। যখন তাঁরা কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইতো তখন দারুন নদওয়াই বৈঠক করত। (সিরত ও মানাকীব আবু বকর, পৃ: ১৯)
(৯)জাহেলী যুগে আবু বকর বিবাহ:- জাহেলী যুগে আবু বকর আবদুল উযযার মেয়ে কাতীবাহকে বিবাহ করেন। তাঁর গর্ভে আবদুল্লাহ এবং আসমা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। কাতীবাহ আসমার কাছে কিছু হাদিয়া প্রেরণ করেছিলেন, আসমা তা গ্রহণ করতে রাজি হননি। তখন আসমা নবী-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। নবী বললেন, তুমি তোমার মায়ের সাথে সমাচরণ করা। তবে এর দ্বারা এটা বুঝায় না যে, কাতীবা মুসলমান ছিলেন। (তবাকাতুল কুবরা লি ইবনে সা’দ-৩/১৬৯)
আবু বকর জাহেলী যুগে বনী কেনান গোত্রের উম্মে রুমান বিনতে আমীরকেও বিবাহ করেন। তিনি খুব তাড়াতাড়ি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদীনায় হিজরত করেন। তাঁর গর্ভে আয়েশা ও আবদুর রহমানের জন্ম হয়।
(১০)ইসলামী যুগে আবু বকরের বিবাহ:- ইসলাম গ্রহণ করার পর আবু বকর আবদুল্লাহর মা আসমা বিনতে উমায়েসকে বিবাহ করেন, তিনি ছিলেন প্রথম যুগের মুহাজিরীনদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি পূর্বে জাফর ইবনে আবু তালিবের স্ত্রী ছিলেন। যখন জাফর মারা গেলেন তখন আবু বকরের সাথে তাঁর বিবাহ হয় এবং তাঁর গর্ভে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের জন্ম হয়। এছাড়াও আবু বকর হাবীবা বিনতে খারীজাহকেও বিবাহ করেন। তাঁর গর্ভে উম্মে কুলসুমের জন্ম হয়। তবে তাঁর জন্ম হয়েছিল আবু বকর এর ইন্তেকালের পর।
(সীরাত ওয়া মানাকিবে আবু বকর সিদ্দীক, পৃঃ ৩০)
পৃষ্ঠা:০৬
(১১)আবু বকর (রা:)-এর পুত্র সন্তান:- আবদুর রহমান বিন আবু বকর। তিনি ছিলেন আবু বকরের সবচেয়ে বড় সন্তান। হুদায়বিয়ার সময় তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি নবী-এর সাথী হন। তাঁর বীরত্ব অনেক প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল। আবদুর রহমান অনেক বীর পুরুষ এবং অত্যন্ত তিরন্দাজ ছিলেন। ইয়ামামার যুদ্ধের দিন তিনি ইয়ামামার বাদশাহকে হত্যা করেছিলেন, যে মুসায়লাতুল কাযযাবের বাহিনীর প্রধান ছিল।
আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর। তিনি অনেক পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। নবীর হিজরতের ক্ষেত্রে তাঁর অনেক ভূমিকা রয়েছে। দিনের বেলায় তিনি মক্কার কাফেরদের সংবাদ সংগ্রহ করতেন এবং যেগুলো গারে হেরায় নবী ও আবু বকর ন্দ্র-এর কাছে পৌঁছিয়ে দিতেন। যখন সকাল হতো তখন তিনি তাদের কাছ হতে চলে আসতেন। তায়েফের দিন তিনি তীরের আঘাত প্রাপ্ত হন। পরে তাঁর পিতার খিলাফতের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন। (সীরাত ওয়া মানাকিবে আবু বকর সিদ্দীক, পৃঃ ২০, ২১)
(১২)আবু বকরের কন্যা সন্তান:- আবু বকর -এর তিন জন কন্যা সন্তান ছিলেন। তাঁরা হলেন- আসমা,আয়শা ও উম্মে কুলসুম। আসমাকে যাতুন নেতাকাইন বলা হতো। কেননা তিনি হিজরতের সময় তাঁর কমরের রশীকে দুভাগ করে খাদ্য বেঁধে
দিয়েছিলেন। তাকে বিবাহ করেছিল কুরাইশের জুবায়ের ইবনে আওয়াম নামক এক যুবক। তাঁর গর্ভে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের জন্ম হয়। তিনি শেষ পর্যায়ে মুসলিম জাহানের খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ তাকে হত্যা করেছিল।
আয়েশা এমন মহিলা ছিলেন, যার ব্যাপারে অপবাদের দোষারোপ খণ্ডন করা হয় আসমানে। তিনি ছিলেন নবী উল্ল-এর সঙ্গীনী। মহিলাদের মধ্যে সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী এবং ফকীহ। তাঁর মর্যাদা সকল নারীদের
পৃষ্ঠা:০৭
উপর ঠিক সে রকম যেমন মর্যাদা সরীদের (এক ধরনের খাদ্য) সকল খাদ্যের উপর। তাঁর এমন মর্যাদা রয়েছে যা বর্ণনাতীত।
– উম্মে কুলসুম, তিনি জন্মগ্রহণ করেন তাঁর পিতার মৃত্যুর পর। তাই আবু বকর টু তাকে দেখতে পাননি। হাবীবা বিনতে খাদীজার গর্ভে তাঁর জন্ম হয়। মৃত্যুর সময় আবু বকর আয়েশাকে বললেন, আমার মনে হয় খাদীজার গর্ভে কন্যা সন্তান জন্ম হবে। তোমরা তাঁর সাথে সন্ধাচরণ করবে। পরবর্তীতে দেখা গেল যে, ঠিকই কন্যা সন্তান হয়েছে। তালহা ইবনে আবদুল্লাহ তাকে বিবাহ করেন। (সীরাত ওয়া মানাকিবে আবু বকর সিদ্দীক, পৃঃ ২০)
(১৩)আল্লাহ তাঁর চুখ অন্ধ করে দিয়েছেন:- আবু বকর নবী এর সাথে বসা ছিলেন। এমন সময় আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল একখণ্ড পাথর নিয়ে তাদের নিকট আগমন করল। সে চাইছিল এটার দ্বারা তাদেরকে প্রহার করবে। সে আবু বকর উল্লকে দেখতে গেল তখন নবী আবু বকরের পাশে ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর চোখকে অন্ধ করে দেন যার ফলে রাসূল দেখতে পায় নি। সে আবু বকর (রা:)-কে জিজ্ঞেস করল, তোমার ঐ সাথী কোথায়? আমি জানতে পেরেছি সে নাকি আমাদের দুর্নাম করে। আল্লাহর কসম, যদি আমি তাকে পাই তবে এই পাথর দ্বারা তাকে আঘাত করব। রাসূলকে দেখতে না পেয়ে যখন মহিলাটি চলে যেতে লাগল তখন আবু বকর গুদ্রে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে কি আপনাকে দেখেছিল? রাসূল বললেন, না, সে আমাকে দেখতে পায়নি। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ খণ্ড, পৃ: ৩৫৫)
পৃষ্ঠা- ০৮
(১৪)আবু বকর আয়েশা (রা:)-কে নবীর কাছে বিবাহ দেন:- আয়েশা বলেন, যখন খাদীজা ইন্তেকাল করলেন তখন খাওলা বিনতে উকায়েম যিনি উসমান ইবনে মাজউনের স্ট্র ছিলেন, তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিয়ে করবেন না? তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কাকে বিয়ে করব? খাওলা বললেন, আপনি চাইলে কুমারীও বিয়ে করতে পারেন, আবার বিবাহিতও বিয়ে করতে পারেন। রাসূল বললেন, কুমারী কে? খাওলা বললেন, আপনার কাছে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তির কন্যা আয়েশা। তাঁরপর নবী জিজ্ঞেস করলেন, বিবাহিতের মধ্যে কে? খাওলা বললেন, সাওদা বিনতে যাম’আ। সে আপনার প্রতি ঈমান এনেছে এবং সে আপনার অনুসরণ করেছে। রাসূল বললেন, তুমি দু’জনের কাছে গিয়ে প্রস্তাব দাও। তখন তিনি প্রথমে আবু বকর এর বাড়িতে গেলেন এবং আয়েশা -এর মাকে বললেন, আল্লাহ তোমাদের পরিবারে কল্যাণ ও বরকত নাযিল করুন। আল্লাহর রাসূল আমাকে পাঠিয়েছেন আয়েশা সম্পর্কে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। তিনি বললেন, আমার ইচ্ছা আছে তুমি একটু আবু বকরের অপেক্ষা কর তিনি এখনি আসবেন। একটু পরে আবু বকর আসলেন। তিনি তাকে বললেন, হে আবু বকর! তোমার পরিবারে আল্লাহ কতইনা বরকত নাযিল করছেন। তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন আয়েশার ব্যাপারে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। আবু বকরা বললেন, এটা কি তাঁর জন্য ঠিক হবে? সে তো তাঁর ভাইয়ের মেয়ে। একথা শুনে আমি রাসূল তাকে বললাম। রাসূল এর কাছে চলে গেলাম এবং বিষয়টি বললেন, তুমি যাও এবং তাকে বল, আবু বকর আমার দ্বীনি ভাই। তাঁর মেয়েকে আমার জন্য বিয়ে করা ঠিক আছে। একথা শুনে আমি আবু বকরের কাছে গেলাম। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলকে ডেকে নিয়ে আস। অতঃপর তিনি গেলেন এবং বিবাহ সম্পন্ন করলেন। আয়েশা বলেন, তখন আমার বয়স ছিল ৬ বছর।
(তাবরানী-৩২/৩২)
পৃষ্ঠা:০৯
(১৫)আমার মনে আছে হে আল্লাহর রাসূল:- রাসূল ﷺ একদিন তাঁর সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন আর তাদের মধ্যে আবু বকর ও উপস্থিত ছিলেন। উকাযের বাজারে কাস ইবনে সায়িদের কথাগুলো তোমাদের মধ্যে কার মনে আছে? একথা শুনে সবাই চুপ থাকলেন। তখন আবু বকর বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ দিন আমি উকাযের বাজারে উপস্থিত ছিলাম। উনার কথা আমার মনে আছে? তিনি বলছিলেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমরা শোনো এবং ভালো করে মনে রাখ। আর যখন মনে রাখবে তখন তোমরা উপকৃত হবে। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আজ বেঁচে আছে সে অবশ্যই মারা যাবে। আর যে মারা যাবে সে ধ্বংস হবে। আর যা আগমন করার তা আসবেই। নিশ্চয়ই আকাশের মধ্যে রয়েছে সবকিছুর সংবাদ। যমীনে রয়েছে শিক্ষনীয় বিষয়। যমীনটা হচ্ছে প্রশস্ত বিছানা। আকাশটা হচ্ছে উঁচু ছাদ। তাঁরকাগুলো চলমান। নদীগুলো জমাটবাধা নয়। রাত্রি অন্ধকার। আকাশে রয়েছে অনেক কক্ষপথ। এরপর শপথ করে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য রয়েছে একটি দ্বীন। সেটা তোমাদের দ্বীন থেকে তাঁর কাছে অনেক পছন্দনীয়। আমার কী হয়েছে আমি মানুষকে দেখতে পাচ্ছি তাঁরা দূরে চলে যাচ্ছে, কিন্তু ফিরে আসছে না। তাঁরা কি চিরস্থায়ী হয়ে যাওয়াকে পছন্দ করে? আর সত্যিই কি তাঁরা চিরস্থায়ী হবে? অথবা তাদেরকে কি ছেড়ে দেয়া হবে যে, তাঁরা আজীবন ঘুমাবে? (মাওয়াকীফুস সিদ্দীক মা’আন নবী, পৃ: ৮)
(১৬)আবু বকর বিলাল প্লে-কে মুক্ত করেন:- বিলাল ছিলেন সত্যিকার ইসলাম গ্রহণকারী এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী। যখন দুপুরে সূর্য প্রচণ্ড গরম হতো, তখন উমাইয়া ইবনে খালফ তাকে রৌদ্রের মধ্যে শুইয়ে রাখত। মক্কার মরুভূমিতে রোদের তাপের মধ্যে শোয়ায়ে তাঁর উপর পাথরের বড় টুকরা রেখে দেয়া হতো। যতক্ষণ
পৃষ্ঠা:১০
পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু না হয় অথবা সে মুহাম্মদের দ্বীনকে পরিত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হতো। এত বিপদের মধ্যে থেকেও তিনি আহাদ আহাদ অর্থাৎ আল্লাহ এক আল্লাহ এক বলে ঘোষণা করতেন। ওয়ারাকা ইবনে নাওফল একদিন তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তখনও তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। আর তিনি আহাদ আহাদ বলছিলেন। তখন ওয়ারাকা বললেন, হে বিলাল! তুমি তো সত্য কথা বলছ। এরপর তিনি উমাইয়া ইবনে খালফ এবং বনী জমাহ গোত্রের আরো যারা এরকম আচরণ করছিল তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যদি তোমরা এ অবস্থায় তাকে হত্যা করতে চাও, তবে আমি তাকে তোমাদের থেকে মুক্ত করে নেব। অত:পর আবু বকর তাঁর নিকট দিয়ে গমন করলেন। তখনও তাকে শান্তি দেয়া হচ্ছিল। আর আবু বকর -এর বাড়ি বনী জমাহ গোত্রের মধ্যেই ছিল। অতঃপর আবু বকর উমাইয়া ইবনে খালফকে বললেন, তুমি কি এই মিসকীনের প্রতি দয়া করবে না? তুমি কি আল্লাহকে ভয় করবে না? তখন উমাইয়া বলল, তুমি তাকে মুক্ত কর। অতঃপর আবু বকর বললেন, আমি অবশ্যই তা করব। আমার নিকট তাঁর চেয়ে শক্তিশালী একটি গোলাম আছে। তাকে তোমাকে দিয়ে এর বদলে বিলালকে আমি মুক্ত করব। উমাইয়া বলল, আমি তাই গ্রহণ করলাম। এভাবে আবু বকর বিলাল কে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে তাকে আযাদ করে দেন।
(আর রিয়াদুন নাদয়াহ, পৃ: ৮৯)
(১৭)বনী মুয়াম্মলের এক দাসীকেও তিনি মুক্ত করেন:- মুশরিক থাকা অবস্থায় ওমর টু-এর একটি দাসী ছিল। তিনি তাকে ইসলাম ত্যাগ করার জন্য শান্তি দিচ্ছিলেন। এমনকি সে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি তাকে এভাবে শাস্তি দিতেই থাকেন। তখন ঐ দাসী বলল, আল্লাহও তোমার সাথে এই আচরণ করবে। এরপর আবু বকর এই দাসীকে মুক্ত করলেন। (আর রিয়াদুন নাদরাহ, পৃ: ৮৯)
পৃষ্ঠা:১১
(১৮)আবু বকর -এর ইসলাম গ্রহণ:- আবু বকর একদিন নবী এর উদ্দেশ্যে বের হলেন। আর তিনি জাহেলী যুগে নবী-এর বন্ধু ছিলেন। নবী-এর সাথে সাক্ষাত হওয়ার পর তিনি তাকে বললেন, হে আবুল কাসেম! আপনি তো আপনার কাওমের মজলিসে উপস্থিত থাকেন না। তাঁরা আপনার অনেক কুৎসা রটনা করছে। তখন রাসূল বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল। আমি তোমাকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করছি। রাসূল যখন তাঁর কথা শেষ করলেন তখন সাথে সাথে আবু বকর ইসলাম গ্রহণ করলেন। এরপর রাসূল তাঁর কাছ থেকে চলে যান। আবু বকর এর ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল অত্যন্ত খুশি হন। এরপর আবু বকর উসমান ইবনে আফফান, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ, যুবাইর ইবনে আওয়াম এবং সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। ফলে তাঁরাও ইসলাম কবুল করে নেন। অতঃপর পরের দিন উসমান ইবনে মাজউন, আবু উবাইদা ইবনে যাররাহ, আবদুর রহমান ইবনে আওফ, আবু সালামা ইবনে আবুল আসাদ এবং আরকাম ইবনে উবাই প্রমুখদের নিকটও দাওয়াত পেশ করেন। ফলে তাঁরাও ইসলাম গ্রহণ করেন।
(বেদায়াহ ওয়ান্নেহায়াহ ৩/২৯)
(১৯)আবু বকরের হাতে যারা মুসলমান হয়েছিলেন:- যখন আবু বকর ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিলেন। তখন তিনি ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে লাগলেন। আর আবু বকর ছিলেন একজন ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অত্যন্ত সহজ সরল। কুরাইশদের সবচেয়ে উত্তম গোত্রের এবং সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তাঁর মধ্যে নিহিত ছিল অনেক কল্যাণ এবং মঙ্গল। তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। যার ব্যবহার ছিল খুবই ভালো। তাঁর কওমের লোকেরা তাঁর নিকট আগমন করত এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করত। এ সুযোগে তিনি যাদের প্রতি আস্থা রাখতেন তাদেরকে ইসলামের প্রতি
পৃষ্ঠা:১২
আবু বকর এর সম্পর্কে দাওয়াত দিতেন। ফলে অনেকেই তাঁর হতে ইসলাম গ্রহণ করেন। যেমন- উসমান ইবনে আফফান, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ, যুবাইর ইবনে আওয়াম, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, উসমান ইবনে মাজউন, আবু উবাইদা ইবনে যাররাহ, আবদুর রহমান ইবনে আওফ, আবু সালামা ইবনে আবুল আসাদ এবং আরকাম ইবনে উবাই । এ সকল সাহাবী আবু বকর কে সাথে নিয়ে রাসূল এর নিকট যান। ফলে তিনি তাদের নিকট ইসলাম পেশ করেন এবং তাদেরকে কুরআন পাঠ করে শুনান এবং ইসলামের সত্যতা তাদের নিকট তুলে ধরেন এবং তাঁরা ঈমান আনেন। এসব সাহাবী ছিলেন ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমান। তাঁরা রাসূল কে সত্যায়ন করেন এবং তিনি যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছিলেন তা বিশ্বাস করেন। (বেদায়াহ ওয়ান্নেহায়াহ-৩/২৯)
(২০)রাসূল কি করছেন:- আয়েশা বর্ণনা করেন, যখন নবী এর সাহাবীরা একত্রিত হলেন।আর তাঁরা ছিলেন সংখায় ৩৮ জন। তখন আবু বকর প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য রাসূল-এর কাছে আবেদন পেশ করলেন। রাসূল বললেন, হে আবু বকর! আমরা এখনো সংখ্যায় তাঁরপরও এ আবেদন করতে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত মুসলমানরা মসজিদের আশে পাশে দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। আবু বকর খতীব হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেন, আর তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম খতীব যিনি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। এদিকে মুশরিকরা আবু বকর এর প্রতি রাগান্বিত হলো এবং তাকে অনেক মারধর করল। এদিকে ফাসীক উৎত্তা ইবনে রাবিয়া আসল এবং তাঁর জুতা দ্বারা আবু বকর -কে প্রহার করল।
এমনকি তাঁর চেহারায় আঘাত করল। তখন বনু তামীম আবু বকর -কে সেবা করতে আসল এবং তাঁরা একটি কাপড়ে জড়িয়ে তাকে তাঁর ঘরে পৌঁছিয়ে দিল। এরপর বনু তামীম মসজিদে গিয়ে ঘোষণা করল, যদি আবু বকর মারা যান তবে আমরা উৎঘা ইবনে রাবিয়াকে হত্যা করব। এরপর তাঁরা আবু বকর-এর কাছে গেল, তখন আবু বকর -এর পিতা এবং
পৃষ্ঠা:১৩
তার গোত্র বনু তামীম তাঁরা আবু বকর এর সাথে কথা বলছিলেন। তখন আবু বকর ট্রেবললেন, রাসূলের কী অবস্থা? তখন তাঁরা আবু বকর -এর মাকে বললেন, তুমি তাকে কিছু খেতে দাও অথবা পান করতে দাও। এমতাবস্থায় আবু বকর খৃষ্ট্র বলতে লাগলেন, রাসূল-এর কী অবস্থা? আবু বকর -এর মা বললেন, আল্লাহর কসম! এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এরপর আবু বকর বেললেন, তুমি উম্মে জামিলের কাছে যাও এবং জিজ্ঞেস কর। এরপর আমি উম্মে জামিলের কাছে গেলাম। অতঃপর বললাম, আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর অবস্থা সম্পর্কে তোমার কাছে জানতে চেয়েছেন। তিনি বললেন, আমি আবু বকরকেও চিনি না এবং মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহকেও চিনি না। আর তুমি যদি চাও তাহলে আমাকে তোমার ছেলের কাছে নিয়ে যাও।
আবু বকর-এর মা বললেন, তাহলে চলুন। এরপর তিনি আবু বকর -এর নিকটে গেলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম! এই ফাসিকের দল তোমাকে কষ্ট দিয়েছে আমি আশা করি আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ নেবেন। তখন আবু বকর টুদ্রবললেন, রাসূলের কী অবস্থা? তিনি বললেন, তিনি নিরাপদে আছেন। তাঁরপর বললেন, কোথায়? তিনি বললেন, দারে আরকামে। তাঁরপর আবু বকর বললেন, আমি আল্লাহর সাথে অঙ্গিকারাবদ্ধ হয়েছি যে, আমি রাসূলের সাক্ষাত না পাওয়া পর্যন্ত কোন কিছু খাব না এবং কোন কিছু পানও করব না।
অতঃপর যখন পরিস্থিতি শান্ত হলো তখন তাঁরা দুজন আবু বকর কে নিয়ে বের হলেন। তখন আবু বকর তাদের ওপর ভর করে রাসূলের কাছে গেলেন। রাসূলের সাথে সাক্ষাত হওয়ার পর তিনি তাকে চুম্বন করলেন এবং দুঃখ প্রকাশ করলেন। এরপর আবু বকর টুদ্র বললেন, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক হে আল্লাহর রাসূল! ঐ ফাসীক আমার চেহারায় যে আঘাত করেছিল ঐটা ছাড়া আমার আর কোন সমস্যা নেই। এই আমার মা সে তাঁর সন্তানের সাথে উত্তম আচরণ করেছে আর আপনি হলেন বরকতময়। সুতরাং আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তিনি যেন আমার মাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন। এরপর রাসুল দোয়া করলেন, ফলে আবু বকর পুত্র-এর মা ইসলাম গ্রহণ করলেন। (বেদায়াহ ওয়ান্নেহায়াহ- ৩/৩০)
পৃষ্ঠা:১৪
(২১)আবু বকর ছিলেন বীর পুরুষ:- কোন একদিন আলী ইবনে আবি তালিব খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তিনি বললেন, হে লোক সকল! সবচেয়ে উত্তম বীর পুরুষ কে? তাঁরা বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি। অতঃপর তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছিল যে, আপনারা এটাই বলবেন; কিন্তু সেই ব্যক্তি হলেন আবু বকর। আমরা একদিন রাসূল-এর নিকট ছিলাম। অতঃপর বললাম, কে সেই ব্যক্তি যে রাসূল-এর সাথে থাকবে, যাতে করে রাসূল-এর ওপর কোন মুশরিক আক্রমণ করতে না পারে। আল্লাহর কসম, তখন আমাদের কেউ তাঁর নিকটবর্তী হয়নি। কেবলমাত্র আবু বকর তাঁর তরবারি উন্মুক্ত করে রাসূল -এর মাথার কাছে গেলেন। তাই আমরা মনে করি যে, তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় বীর পুরুষ।
আমি দেখেছি যে, রাসূল-এর সাথে যেসব কুরাইশরা শত্রুতা করছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে গালি দিয়ে বলছে যে, তুমি আমাদের সকল উপাস্যদেরকে এক উপাস্যে পরিণত করেছ। (তখন আলী বলেন) আল্লাহর কসম, তখন আবু বকর ছাড়া কেউ তাঁর নিকটবর্তী হয়নি। তিনি তাঁর সাথে জিহাদ করেন এবং লোকদের গালির জবাব দেন। আর তিনি বলেন, তোমাদের ধ্বংস হোক! তোমরা কি এমন একটি লোককে হত্যা করতে যাচ্ছ? যে বলে যে, আল্লাহ আমার রব।
(বেদায়া ওয়ান নেহায়া- ৩/২৭১)
(২২)তিনি ছিলেন ফেরাউন সম্প্রদায়ের মুমিন ব্যক্তির চেয়ে উত্তম:- আলী ইবনে আবি তালিব একদিন তাঁর সাথীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ফেরাউন সম্প্রদায়ের মুমিন ব্যক্তি উত্তম, নাকি আবু বকর উত্তম। একথা শুনে কওমের লোকেরা কান্না শুরু করল।
অতঃপর আলী বললেন, আল্লাহর কসম! ফেরাউন সম্প্রদায়ের পৃথিবী ভর্তি মুমিনদের চেয়ে আবু বকর -এর একটি ঘণ্টা অনেক উত্তম।
পৃষ্ঠা:১৫
কেননা, ফেরাউন সম্প্রদায়ের মুমিন ব্যক্তি তাদের ঈমানকে গোপন রেখেছিল। অথচ আবু বকর তুল্ল তাঁর ঈমানকে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন।
(বেদায়াহ ওয়ান নেহায়াহ- ৩/২৭২)
(২৩)তুমি তাদেরকে মুক্ত কর:- আবু বকর সিদ্দীক দুর্বল কৃতদাসদেরকে আযাদ করে দিতেন এবং স্বীয় মাল ও প্রচেষ্টার দ্বারা দ্বীনের দাওয়াত দিতেন। এক সময় তিনি নাহদিয়া এবং তাঁর কন্যাকে দেখতে পেলেন। তাঁরা দু’জন ছিলেন প্রথম যুগের মুসলমান। তাঁরা দু’জন তাদের মনিবাকে খামির বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সে ছিল (তাদের মনীবা ছিল) বনী আবদুদ দার গোত্রের মহিলা। তিনি বলছিলেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনোই তোমাদেরকে আযাদ করব না। একথা শুনে আবু বকর বললেন, হে অমুকের মা! তুমি তোমার কসম ভঙ্গ কর। একথা শুনে সে বলল, তুমি কসম ভঙ্গ কর এবং তাদেরকে মুক্ত কর। আবু বকর বললেন, এর বিনিময় কত? মহিলা বলল, এত এত। আবু বকর উল্লে বললেন, আমি তাদেরকে গ্রহণ করলাম, এখন থেকে তাঁরা আযাদ। (সীরাতে নবুওয়াত লি ইবনে হিশাম- ১/৩৯৩)
(২৪)অচিরেই তুমি সন্তুষ্ট হবে:- দাস-দাসীদেরকে মুক্ত করে আবু বকর কোন প্রশংসা কামনা করতেন না। তিনি এটা করতেন কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। একদিন তাঁর বাবা তাকে বললেন, হে আমার সন্তান! আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি দুর্বল দাসদেরকে মুক্ত করে যাচ্ছ। সুতরাং তুমি যদি এমন কতককে মুক্ত করতে যারা তোমার পিছনে দাঁড়াতে পারত! তখন আবু বকর বললেন, হে আমার পিতা! আমি সেটাই চাই যা আমার আল্লাহ ইচ্ছা করেন। এরপর আবু বকর টু-এর শানে এমন আয়াত নাযিল হলো যা কিয়ামত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হচ্ছে। তা হলো:
পৃষ্ঠা ১৬ থেকে ৩০
পৃষ্ঠা:১৬
فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى (٥) وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى (1) فَسَنُيَسِرُهُ لِلْيُسْرَى (4) وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى (۸) وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى (1) فَسَنُيَسِرُهُ لِلْعُسْرَى (۱۰) وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدُّى (۱۱) إِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدًى (۱۳) وَإِنَّ لَنَا لَلْآخِرَةَ وَالْأُولى (۱۳) فَانْذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَقَّى (۱۳) لَا يَصْلَاهَا إِلَّا الْأَشْقَى (10) الَّذِي كَذَّبَ وَتَوَلَّى (١٦)
وَسَيْجَنَّبُهَا الْأَلْقَى (۱۷) الَّذِي يُؤْتِي مَا لَهُ يَتَزَكَّى (۱۸) وَمَا لِأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نِعْمَةٍ تُجْزَى (1) إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلَى (۲۰) وَلَسَوْفَ يَرْضُى (۳۱)
অনুবাদ: ৫. অতএব যে দান করে এবং খোদাভীরু হয় ৬. এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে। ৭. আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব। ৮. আর যে কৃপণতা করে ও বেপরোওয়া হয় ৯. এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে। ১০. আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্যে সহজ পথ দান করব। ১১. যখন সে অধঃপতিত হবে, তখন তাঁর সম্পদ তাঁর কোনই কাজে আসবে না। ১২. আমার দায়িত্ব পথপ্রদর্শন করা। ১৩. আর আমি মালিক ইহকালের ও পরকালের। ১৪, অতএব, আমি তোমাদেরকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। ১৫. এতে নিতান্ত হতভাগ্য ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে এবং (তাঁরা প্রবেশ করবে) ১৬. যারা মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। ১৭. আর এ থেকে দূরে রাখা হবে খোদাভীরু ব্যক্তিদেরকে। ১৮. যে আত্মশুদ্ধির জন্যে তাঁর ধন-সম্পদ দান করে ১৯. এবং তাঁর ওপর কারো কোন প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ থাকে না। ২০. তাঁর মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ ব্যতীত। ২১. সে সত্বরই সন্তুষ্টি লাভ করবে। (সূরা আল-লাইল-৫-২১/তাফসীরে আলুসী- ৩/১৫২)
(২৫)পারস্য এবং রোমের ঘটনা:- হিজরতের পূর্বে পারস্য এবং রোমের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে রোমের উপর পারস্যরা জয় লাভ করে। এতে মুশরিকরা আনন্দিত হয়। আর তাঁরা এটাই চাচ্ছিল যে, রোমের উপর পারস্যরা বিজয় লাভ করুক। কারণ তাঁরাও তদের মতো মূর্তি পূজক ছিল। কিন্তু এ বিষয়টি
পৃষ্ঠা:১৭
মুসলমানদের নিকট অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ছিল। কারণ, তাঁরা চাইছিল যে, রোমানরা পারসীয়দের উপর জয় লাভ করুক। কারণ তাঁরা ছিল আহলে কিতাব। এমতাবস্থায় মুশরিকরা নবী এর সাথে সাক্ষাত করে বলল, তোমরা আহলে কিতাব এবং নাসারারাও তো আহলে কিতাব। আর আমরা হলাম মূর্খ। অথচ আমাদের পারস্যের ভাইয়েরা তোমাদের ভাইদের উপর জয় লাভ করেছে। সুতরাং তোমরা যদি আমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হও, তাহলে আমরাও তোমাদের উপর জয় লাভ করব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিচের আয়াতগুলো নাযিল করেন-
الله (1) غُلِبَتِ الرُّوْمُ (۲) فِي أَدْنَى الْأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ (۳) فِي بِضْعِ سِنِينَ لِلَّهِ الْأَمْرُ مِنْ قَبْلُ وَمِنْ بَعْدُ وَيَوْمَئِذٍ يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُونَ (٢) بِنَصْرٍ اللَّهِ يَنْصُرُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ (٥) وَعْدَ اللَّهِ لَا يُخْلِفُ اللَّهُ وَعْدَهُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ (1) يَعْلَمُونَ ظَاهِرًا مِنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ عَنِ الْآخِرَةِ هُمْ غَافِلُونَ (4) أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا فِي أَنْفُسِهِمْ مَا خَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُّسَمًّى وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ بِلِقَاءِ
رَبِّهِمْ لَ۸)كَافِرُونَ (
অনুবাদ: ১. আলিফ-লাম-মীম। ২. রোমকরা পরাজিত হয়েছে। ৩. এক নিকটবর্তী স্থানে এবং তাঁরা তাদের এ পরাজয়ের পর শীঘ্রই জয়লাভ করবে। ৪. তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে। পূর্বের ও পরের মীমাংসা আল্লাহরই (হাতে)। আর সেদিন মু’মিনরা আনন্দিত হবে ৫. আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি প্রতাপশালী, অত্যন্ত দয়ালু। ৬. এটা আল্লাহর ওয়াদা। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা খিলাফ করেন না। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। ৭. তাঁরা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক অবস্থাটুকুই জানে আর তাঁরা পরকাল সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাফিল। ৮. তাঁরা কি নিজেদের অন্তরে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ তো আসমান, যমীন এবং এতোদুভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে তা সবই সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে
পৃষ্ঠা:১৮
ও এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কিন্তু অনেক মানুষই তাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎকে অবিশ্বাস করে।
(সূরা রূম: আয়াত-১-৮)
অত:পর আবু বকর কাফেরদের নিকট গিয়ে বললেন, তোমাদের ভাইয়েদের উপর জয় লাভ করার কারণে তোমরা কি অনন্দিত হচ্ছ? না, তোমরা আনন্দিত হয়ো না। আল্লাহ তোমাদের চক্ষুকে শীতল করবেন না। আল্লাহ কসম! আল্লাহ তায়ালা পারস্যদের উপর রোমানদেরকে বিজয় দান করবেন। আমাদের নবী এ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। একথা শুনে উবাই ইবনে খালফ আবু বকর এর দিকে উঠে দাঁড়াল এবং বলল, তুমি মিথ্যা বলেছ। একথা শুনে আবু বকর ট্রে বললেন, হে আল্লাহর দুশমন। তুই সবচেয়ে বড় মিথ্যুক। আমি তোমার কাছে দশটি শক্তিশালী উটনী বন্ধক রাখছি এবং তুমি আমার কাছে দশটি শক্তিশালী উটনী বন্ধক রাখ। যদি রোমানরা জয় লাভ করে তাহলে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি পারসিকরা জয় লাভ করে তবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। তবে এজন্য তিন বছর লাগতে পারে। একথা বলে আবু বকর নবী এর নিকট সংবাদ দিলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি যেভাবে উল্লেখ করেছ বিষয়টি সে রকম নয়। بضع শব্দটি তিন থেকে নয় পর্যন্ত সংখ্যার উপর প্রযোজ্য হয়।
সুতরাং তুমি মেয়াদ বাড়াও। অতঃপর আবু বকর টু বের হলেন এবং উবাইয়ের সাথে সাক্ষাত করলেন এবং নয় বৎসর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ালেন। পরে দেখা গেল যে, নয় বছরের আগেই রোমানরা পারসিকদের উপর জয় লাভ করেছে। এতে মুসলমানরা আনন্দিত হলো। কারণ এর দ্বারা কুরআন যেভাবে সংবাদ দিয়েছে ঠিক সেভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে, নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে এবং আহলে কিতাব রোমানদেরকে আল্লাহ তায়ালা অগ্নিপূজক পারসিকদের উপর বিজয় দান করেছেন। তবে এ ঘটনাটি কখন সংঘটিত হয়েছিল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, বদরের যুদ্ধের পর। আবার কেউ বলেছেন, হুদাইবিয়ার বছর এবং এ মতটিই অধিকতর বিশুদ্ধ (সীরাতুন নবুওয়াত ফী যু-ইল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ- ১/৩৮৯, ৩৯০)
পৃষ্ঠা:১৯
(২৬)হাবসায় আবু বকর -এর হিজরত:- ‘আয়েশা বলেন, যেদিন থেকে আমার বোধশক্তি হয়েছে সেদিন থেকেই আমি আমার পিতা-মাতাকে দ্বীন ইসলামের অনুসারী রূপে পেয়েছি (ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম পালন করতে আমি তাদেরকে কখনো দেখিনি) এবং আমাদের এমন কোন দিন যায়নি যার দুই প্রান্তে সকাল- সন্ধ্যায় রাসূলুল্লাহ আমাদের কাছে আসেননি (অর্থাৎ প্রতিদিন সকাল- সন্ধ্যায় তিনি আমাদের ঘরে আসতেন)।
মুসলিমরা যখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হলো তখন কোন একদিন আবূ বক্র হিজরতের নিয়তে আবিসিনিয়া অভিমুখে যাত্রা করলেন। তিনি বারকুল গিমাদ নামক জায়গায় পৌঁছলে ইবনেদ দাগিনাহ তাঁর সাথে দেখা করলেন। তিনি ছিলেন কারা সম্প্রদায়ের দলপতি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ বকর! কোথায় যেতে চাচ্ছেন? আবূ বক্স বললেন, আমার জাতি আমাকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি মনস্থ করেছি যে, আমি দেশে দেশে ঘুরে বেড়াব আর আমার প্রতিপালকের ইবাদাত করব। (এ কথা শুনে) ইবনে দাগিনাহ বললেন, আপনার মতো লোক (স্বেচ্ছায় দেশ থেকে) বেরিয়ে যেতে পারে না এবং আপনার মতো ব্যক্তিকে বের করাও চলে না (অর্থাৎ আপনার মতো একজন সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষে স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করা যেমন ঠিক নয় তেমনি আপনাকে দেশ থেকে বের করে দেয়াও অন্যায়)।
কেননা আপনি অসহায়কে উপার্জনক্ষম করেন, আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখেন, অক্ষমের বোঝা বহন করেন, অতিথির মেহমানদারী করেন এবং বিপদ-দুর্ভিক্ষে লোকদেরকে সাহায্য করেন। আমি আপনার আশ্রয়দাতা (অর্থাৎ আপনার আশ্রয় ও নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার উপর)। সুতরাং আপনি ফিরে যান এবং নিজ দেশে গিয়ে আপন প্রতিপালকের ইবাদাত করুন। এ কথা বলে ইবনেদ দাগিনাহ যাত্রা করলেন এবং আবু বক্ককে সঙ্গে নিয়ে (মাক্কায়) ফিরে এলেন। তিনি কুরাইশ কাফিরদের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে ঘোরাফেরা করলেন এবং বললেন: আবু বরের মতো ব্যক্তি যেমন বেরিয়ে যেতে পারে না, তেমনি তাঁর মতো ব্যক্তিকে
পৃষ্ঠা:২০
বের করে দেয়াও চলে না। আপনারা কি এমন একজন ব্যক্তিকে (দেশ থেকে) বের করতে চাচ্ছেন যিনি অসহায়কে উপার্জনক্ষম করেন, আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখেন, অপরের বোঝা বহন করেন, অতিথির মেহমানদারী করে থাকেন এবং বিপদ-দুর্ভিক্ষে সাহায্য করেন।
এ কথা শুনে (আবূ বজ্রকে) ইবনেদ দাগিনাহর আশ্রয় প্রদান কুরাইশরা মেনে নিল এবং তাঁরা আবূ বক্সকে নিরাপত্তা প্রদান করে ইবনেদ দাগিনাহকে বলল, আপনি আবু বক্ককে বলুন, তিনি যেন নিজ ঘরে তাঁর প্রতিপালকের ‘ইবাদাত করেন, সেখানেই যেন নামায পড়েন এবং তাঁর যা ইচ্ছা তা (ঘরেই যেন) পড়েন। এ বিষয়ে তিনি আমাদেরকে যেন কষ্ট না দেন এবং এসব তিনি যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা আমাদের ভয় হচ্ছে তিনি (প্রকাশ্যে ঐসব করে) আমাদের স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যেও (ধর্মের বিষয়ে) আবার কোন ঝামেলা বাঁধিয়ে দেন। ইবনেদ দাগিনাহ এসব কথা আবূ বক্স (রা:) কে বললেন। তাই তিনি নিজ ঘরে স্বীয় প্রতিপালকের ‘ইবাদাত করতে থাকেন, প্রকাশ্যভাবে নামায এবং কুরআন তিলাওয়াত করেন না।
কিছুদিন পর আবূ বরের মনে কি যেন খেয়াল চাপল। তিনি নিজ বাড়ির উঠানে একটি মাসজিদ তৈরি করলেন এবং (ঘর থেকে) বেরিয়ে সেখানে নামায পড়তে ও কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগলেন। ফলে মুশরিকদের স্ত্রী-সন্তানরা তাঁর কাছে ভিড় জমাতে লাগল। তাঁর অবস্থা দেখে তাঁরা অবাক হতো এবং একদৃষ্টিতে তাঁর প্রতি তাকিয়ে থাকত। আবূ বক্র ছিলেন বেশি আল্লাহভীরু ব্যক্তি। যখন তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না। এটা মুশরিক কুরাইশ নেতাদেরকে ভাবিয়ে তুলল। তাঁরা ইবনেদ দাগিনাহকে ডেকে পাঠাল। তিনি তাদের কাছে এলে তাঁরা বলল, আমরা তো আবু বক্ককে এ চুক্তিতে আশ্রয় দিয়েছিলাম যে, তিনি নিজ ঘরে তাঁর প্রভুর ‘ইবাদাত করবেন। কিন্তু তিনি তা ভঙ্গ করে নিজ বাড়ির উঠানে একটি মসজিদ তৈরি করেছেন এবং (তাতে) জনসম্মুখে নামায পড়ছেন ও কুরআন তিলাওয়াত করছেন। এতে আমরা ভয় করছি যে, তিনি আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিবেন। সুতরাং আপনি তাঁকে গিয়ে বলুন, যদি তিনি নিজ ঘরে (অপ্রকাশ্যে) নিজ প্রভুর ইবাদাত করে সীমাবদ্ধ থাকতে চান তবে তাই
পৃষ্ঠা:২১
করুন। আর যদি তিনি অস্বীকার করেন এবং প্রকাশ্যে ঐ সব করতে চান তাহলে আপনি তাকে বলুন, তিনি যেন আপনার জিম্মদারী ফিরিয়ে দেন। কেননা, একদিকে আমরা যেমন আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করাটা অপছন্দ করি, অন্যদিকে তেমনি আবূ বকরের প্রকাশ্য ধর্মানুষ্ঠানকেও আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।
‘আয়েশা বলেন, অতঃপর ইবনেদ দাগিনাহ আবু বরের কাছে এসে বললেন, যে চুক্তিতে আমি আপনার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম তা আপনার বেশ জানা আছে। সুতরাং হয় আপনি (বাড়াবাড়ি না করে) ঐ চুক্তির উপর সীমাবদ্ধ থাকুন, নয়ত আমার জিম্মাদারী আমাকে ফিরিয়ে দিন। কেননা কোন লোকের সাথে আমি নিরাপত্তা চুক্তি করার পর আমার সেই জিম্মাদারী বিনষ্ট করা হয়েছে এমন একটি কথা আরব জাতি শুনতে পাক এটা আমি মোটেই পছন্দ করি না। আবূ বক্স বললেন, আপনার আশ্রয় দানের প্রতিশ্রুতি আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি এবং মহান আল্লাহর আশ্রয় লাভেই আমি সন্তুষ্ট। (ফাতহুল বারী, ৭/২৭৪)
অতঃপর যখন আবু বকর গুল্লে ইবনেদ দাগিনার জিম্মাদারী থেকে বের হয়ে গেলেন, তখন কুরাইশদের এক মূর্খ ব্যক্তি তাঁর সাথে সাক্ষাত করল। তখন সে কাবার দিকে যাচ্ছিল। এমতাবস্থায় সে আবু বকর -এর মাথায় মাটি ছুঁড়ে মারল। তখন আবু বকর এর নিকট দিয়ে ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা অথবা আস ইবনে ওয়ায়িল যাচ্ছিল। আবু বকর টুল্ল তাকে বললেন, এই বোকা লোকটির আচরণ কি লক্ষ্য করেছ? সে বলল, তুমিই তো তোমাকে এই আচরণের উপযুক্ত করেছ। তখন আবু বকর ট্রেবলছিলেন, হে আমার রব! তুমি কতই না ধৈর্যশীল। হে আমার রব! তুমি কতই না ধৈর্য্যশীল, হে আমার রব! তুমি কতই না ধৈর্যশীল (আল বেদায়াহু ওয়ান নেহায়া- ৩/৯৫)
(২৭)আবু বকর আনন্দের কারণে কেঁদে ফেললেন:- যখন মুশরিকরা মুসলমানদের উপর চরম নির্যাতন শুরু করল, তখন দ্বীনকে বাঁচানোর জন্য তাদের কেউ কেউ হাবশার দিকে হিজরত করে চলে গেলেন। আবূ বক্রও হিজরতের নিয়তে প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। তখন
পৃষ্ঠা:২২
রাসূলুল্লাহ (আবু বক্ককে) বললেন, দেরী করুন। কেননা আমি নিশ্চিতভাবে আশা করছি যে, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হবে।
তখন আবূ বক্র বিরত রাখলেন। রাসূলুল্লাহ -এর সাথী হবার নিয়াতে নিজেকে আয়েশা নবী বলেন, রাসূল ও তাঁর পিতাঁর হিজরতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রতিদিন সকালে অথবা বিকালে আমাদের বাসায় আসতেন। কিন্তু যখন রাসূল কে হিজরতের অনুমতি দেয়া হলো তখন তিনি একদিন দুপুরে আমাদের বাসায় আসলেন। সাধারণত এমন সময় তিনি কখনো আসতেন না। যখন আবু বকর তোকে দেখলেন তখন বললেন, নিশ্চই বড় কোন ঘটনা ঘটেছে তাই রাসূল এমন সময় এসেছেন। আয়েশা বলেন, যখন তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন তখন আবু বকর বিছানা থেকে সরে গিয়ে রাসূলকে বসতে দিলেন। তখন আবু বকর এর নিকট আমি ও আমার বোন আসমা ছাড়া আর কেউ ছিল না। রাসূল বললেন, আমি তোমার নিকট থেকে বেরিয়ে যাব। আবু বকর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ দুই মহিলাই তো আমার মেয়ে আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। তখন রাসূল বললেন, আমাকে মক্কা ছেড়ে হিজরত করে মদিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তখন আবু বকর ট্রেবললেন, তাহলে আমরা কি সকালে বের হব? রাসূল বললেন, হ্যাঁ সকালে বের হব। আয়েশা বলেন, এদিনের পূর্বে আমি কখনো ভাবিনি যে, আনন্দের ফলে কেউ কান্না করে। কিন্তু আবু বকর কে দেখলাম যে, ঐ দিন তিনি খুশিতে কান্না করলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর নবী! নিশ্চয়ই এই দুটি সাওয়ারী আমি হিজরতের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি। এ সময় তাঁরা বনী দায়েল গোত্রের আবদুল্লাহ ইবনে আরিকাত নামের এক ব্যক্তিকে খাদিম হিসেবে সাথে নেন। সে তাদেরকে পথ দেখিয়ে দিত। (সীরাতুন নাবুওয়াত লি ইবনে কাসীর- ২/৩২)
পৃষ্ঠা:২৩
(২৮)নবী-এর সাথে আবু বকর-এর হিজরত:- আবু বক্স বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতা- মাতা কুরবান হোক! তাহলে আমার এ উট দু’টির একটা আপনি গ্রহণ করুন। রাসূলুল্লাহ বললেন, দামের বদলে।
‘আয়েশা বলেন, অতঃপর আমরা তাদের দু’জনের সফর প্রস্তুতি খুব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করলাম এবং তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করে তা চামড়ার একটা থলেতে রাখলাম। তাঁরপর আবূ বক্স এর মেয়ে আসমা নিজের কোমরবন্দ থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়ে তা দিয়ে থলেটার মুখ বেঁধে দিলেন। আর এ কারণে আসমাকে বলা হতো “যাতুন নিভাক” (বা কোমরবন্দ বিশিষ্ট)। ‘আয়েশা টু বলেন, রাসূলুল্লাহ ও আবু বক্স সাওর পর্বতের একটি গুহায় গিয়ে পৌঁছলেন। সেখানে তাঁরা তিন রাত পালিয়ে থাকলেন। রাতের বেলা আবূ বক্র তনয় ‘আবদুল্লাহ ইবনে আবূ বক্র গুহাতেই থাকতেন। তিনি একজন চতুর ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন তরুণ যুবক ছিলেন। তিনি শেষ রাতে তাঁদের কাছ থেকে রওনা হয়ে মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে সকাল বেলা এমনভাবে মিলিত হতেন যেন এখানেই তিনি রাত অতিবাহিত করেছেন। অতঃপর তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে যেসব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করা হতো তাঁর যা কিছু তিনি শুনতেন তা-ই মনে রাখতেন এবং যখন আঁধার ঘনীভূত হতো তখন ঐ সংবাদটি তাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
আবূ বকর -এর মুক্ত গোলাম ‘আমির ইবনে ফুহাইরাহ্ সন্ধ্যায় রাতের অন্ধকারে দুগ্ধবর্তী ছাগল তাঁদের কাছে নিয়ে যেতেন। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে দুধ দোহন করে তাদেরকে তা পান করাতেন। অতঃপর ভোরের অন্ধকারেই ছাগল নিয়ে ফিরে আসতেন। তিনি এ তিন রাতের প্রতি রাতেই এরূপ করতেন।
অতপর তাঁরা গর্ত থেকে বেরিয়ে পড়লেন এবং আবু বকর সামনে এবং রাসূল (সা:) পিছনে এভাবে তাঁরা মদীনার পথে রওয়ানা হলেন। আবার যখন পিছন থেকে শত্রু আসার ভয় থাকত তখন আবু বকর রাসূল
পৃষ্ঠা:২৪
আবু বকর এর সম্পর্কে (সা:) এর পিছনে চলতেন। এভাবে তাদের সফর চলছিল। আবু বকর একজন সুপরিচিত লোক ছিলেন। যখনই তাঁর সাথে কারো সাক্ষাত হতো। তখন তাকে জিজ্ঞেস করত। তোমার সাথে কে? তখন আবু বকর উত্তর দিতেন। তিনি পথ প্রদর্শক। আমাকে দ্বীনের দিকে পথ দেখান।
(তাবারানী)
(২৯)আল্লাহ হলেন দুই জনের তৃতীয় জন:- আবূ বক্র থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হিজরতের সময় গারে সওরে নবী এর সাথে ছিলাম। আমি একবার মাথা উঁচু করলে দেখতে পেলাম, কুরাইশ অনুচররা পায়চারি করছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! যদি এদের কেউ দৃষ্টি একটু নিচু করে তা হলে অবশ্যই আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তখন নবী বললেন, হে আবু বক্র! চুপ কর। আমরা যদিও দু’জন; কিন্তু আমাদের সাথে আল্লাহ তৃতীয় জন আছেন।
إِلَّا تَنْصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا فَأَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا وَاللَّهُ
عَزِيزٌ حَ
كِيمٌ
যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিরগণ তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং ছিলেন তিনি দু’জনের তৃতীয়জন, যখন তাঁরা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তাঁর সঙ্গীকে বলেছিল, ‘বিষণ্ণ হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন।’ অতঃপর আল্লাহ তাঁর উপর তাঁর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং তাকে শক্তিশালী করেন এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা যা তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফিরদের কথা হেয় করেন। আল্লাহর কথাই সর্বোপরি এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাঁরবা- ৪০)
পৃষ্ঠা:২৫
(৩০)মক্কায় প্রবেশে নবীর সাথী:- ‘উরওয়াহ্ ইবনে যুবাইর থেকে বর্ণনা করেছেন যে, পথিমধ্যে একদল মুসলিম উষ্ট্রারোহীর দলে যুবাইরের সঙ্গে নবী-এর দেখা হয়। এরা সিরিয়া থেকে ফিরে আসা ব্যবসায়ী দল ছিল। যুবাইর রাসূলুল্লাহ আবূ বক্সকে সাদা রঙের কাপড় পরিধান করার জন্য দিলেন।
এদিকে মাদীনার মুসলিমরা রাসূলুল্লাহ এর মক্কা থেকে বেরিয়ে আসার সংবাদ শুনতে পেল। তাই তাঁরা প্রতিদিন সকাল বেলা কঙ্করময় ভূমিতে গিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করত এবং দুপুরের রোদের তাপে চলে যেতে বাধ্য হতো। অতঃপর এক দিন দীর্ঘক্ষণ দেরী করার পর তাঁরা চলে গেল এবং নিজ নিজ ঘরে গিয়ে অশ্রয় নিল। এক ইয়াহুদী কোন এক উঁচু দালান থেকে কী যেন নিরীক্ষণ করছিল। এমন সময় সে রাসূলুল্লাহ তাঁর সাথীদেরকে সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় মরীচিকা ভেদ করে স্পষ্ট আসতে দেখতে পেল। তখন ইয়াহুদীরা নিজেকে সামলাতে না পেরে উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকে, হে আরব জাতি! যে সৌভাগ্যের জন্য তোমরা অপেক্ষা করছিলে এ তো সেই সৌভাগ্য। এ কথা শুনে মুসলিমরা ব্যস্ত হয়ে সকলে অস্ত্র তুলে নিল এবং মাদীনার বাইরে কঙ্করময় স্থানটির অপর প্রান্তে রাসূলুল্লাহ এর সঙ্গে দেখা করল। রাসূলুল্লাহ তাদেরকে সাথে নিয়ে ডান দিকের পথ ধরে চলতে লাগলেন এবং বনী ‘আম্র ইবনে আওফ সম্প্রদায়ে গিয়ে অবতরণ করলেন। সেদিনটা ছিল রবিউল আউয়াল মাসের কোন এক সোমবার।
তাঁরপর আবূ বক্র দুল্ল লোকদের জন্য দাঁড়ালেন এবং রাসূলুল্লাহ নীরব হয়ে বসে রইলেন। আনসারদের যারা রাসূলুল্লাহকে দেখেনি তাঁরা এসে আবূ বক্রকে সালাম করতে লাগল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ এর উপর যখন রোদের তাপ পড়ল এবং আবু বক্স টু এগিয়ে এসে নিজ চাদর দিয়ে তাঁকে ছায়া করলেন তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহকে চিনতে পারল।
পৃষ্ঠা:২৬
(৩১)হিজরতের পর আবু বকরের অসুস্থতা:- আয়েশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ মাদীনায় আগমন করলেন তখন আবু বক্র ও বিলাল জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ‘আয়েশা বলেন, আমি তাদের উভয়ের নিকট গেলাম এবং বললাম,
আব্বাজান, কেমন আছেন? হে বিলাল! তুমি কেমন আছ? ‘আয়েশা বলেন, আবু বক্সের যখন জ্বর আসত তখন তিনি বলতেন,
প্রত্যেকটি লোক নিজ নিজ পরিবারে সুপ্রভাত করছে, অথচ মৃত্যু তাঁর জুতার ফিতাঁর চাইতেও অধিকতর নিকটবর্তী।”
আর বিলালের অবস্থা ছিল এই, যখন তাঁর জ্বর ছাড়ত তখন সে গলার আওয়াজ বড় করে এ কবিতাগুলো বলতো, হায় আফসোস! আমি কি কখনো ঐ উপত্যকায় রাত যাপন করতে পারব,
যেখানে ইযখির ও জালীল ঘাস আমার চারপাশে থাকবে? আমি মাজান্না নামক জায়গায় পুনরায় কোন দিন পৌঁছতে পারব কি এবং শামা ও তাফীল পাহাড় আমার চোখে পড়বে কি?”
‘আয়েশা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ এর কাছে আসলাম এবং এ সম্পর্কে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি এ বলে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ! মাদীনাকে আমাদের কাছে প্রিয় কর যেমন প্রিয় ছিল আমাদের কাছে মক্কা; বরং তাঁর চেয়ে অধিকতর প্রিয় কর দিন এবং আমাদের জন্য একে (মাদীনাকে) স্বাস্থ্যের উপযোগী বানিয়ে দাও। আর এর সা’ ও মুদ- এ আমাদের জন্য বারাকাত দান কর এবং এখানকার জ্বরকে সরিয়ে জুহফাতে নিয়ে যাও।” (বুখারী, ৬৩৭২)
পৃষ্ঠা:২৭
জিহাদের ময়দানে আবু বকর
(৩২)আমরা একই পানির:- বদরে অবতরণের পর রাসূল! তাঁর ‘গারে ছুরের’ সাথী হযরত আবু বকরকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে বের হন। তখন তিনি দূর থেকে মক্কার সৈন্যদের তাঁবু পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এ সময় আরবের এক বৃদ্ধের দেখা পান। তিনি সে বৃদ্ধকে কুরাইশ এবং রাসূলও তাঁর সাহাবীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উভয় বাহিনী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার কারণ ছিল, তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাচ্ছিলেন না, কিন্তু বুড়ো বেঁকে বসেন। তিনি বললেন, আপনারা নিজেদের পরিচয় না দেয়া পর্যন্ত আমি কিছুই বলবো না। নবী করীম বললে, আমরা আপনার কাছে যা জানতে চেয়েছি তা বলুন, এরপর আমরা আপনাকে নিজেদের পরিচয় দেব। বৃদ্ধ বললেন, আমি জেনেছি, মোহাম্মদ এবং তাঁর সঙ্গীরা অমুক দিন বেরিয়েছে। সংবাদদাতা যদি আমাকে সত্য কথা জানিয়ে থাকে, তবে আজ তাদের অমুক জায়গায় থাকার কথা। একথা বলে বৃদ্ধ ঠিক সে জায়গার কথাই বললেন, যেখানে সে সময় মদীনার বাহিনী অবস্থান করছিল। বৃদ্ধ আরো বললেন, কুরাইশ অমুক দিন বেরিয়েছে। সংবাদবাহক যদি আমাকে সত্য জানিয়ে থাকে, তবে কুরাইশদের আজ অমুক জায়গায় থাকার কথা। এ কথা বলে বৃদ্ধ ঠিক সে জায়গার কথা বললেন, যেখানে মক্কী বাহিনী অবস্থান করছিল। বৃদ্ধ কথা শেষ করে বলল, এবার আপনাদের পরিচয় দিন। নবী করীম বললেন, আমরা একই পানি থেকে উদ্ভূত। একথা বলেই চলে গেলেন। বৃদ্ধ বিড়বিড় করতে লাগল, “কোন পানি থেকে? ইরাকের পানি থেকে?” এ ঘটনা থেকে নবী-এর সাথে আবু বকরের ঘনিষ্ঠতা জানা যায় এমনকি তিনি নবী ছিলেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম, ২/২২৮) এর ব্যক্তিগত পাহাদারও
পৃষ্ঠা:২৮
(৩৩)বদরের যুদ্ধে নবীর পাহাড়াদার:- বদরের যুদ্ধে নবী সাহাবাদের কাতারবন্দী করলেন। তাদের মধ্যে আবু বকর ঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সা’দ ইবনে মুয়ায়ের নেতৃত্বে আনসারী যুবকদের একটি দলও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা রাসূল-কে পাহাড়া দিতেন। এক সময় আলী ইবনে আবি তালিব বললেন, হে লোক সকল! সবচেয়ে উত্তম বীর পুরুষ কে? তাঁরা বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি। অতঃপর তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছিল যে, আপনারা এটাই বলবেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি হলেন আবু বকর । আমরা একদিন রাসূল এর নিকট ছিলাম। অতঃপর বললাম, কে সেই ব্যক্তি যে রাসূল এর সাথে থাকবে, যাতে করে রাসূল এর ওপর কোন মুশরিক আক্রমণ করতে না পারে। আল্লাহর কসম, তখন আমাদের কেউ তাঁর নিকটবর্তী হয়নি। কেবলমাত্র আবু বকর তাঁর তরবারি উন্মুক্ত করে রাসূল এর মাথার কাছে গেলেন। তাই আমরা মনে করি তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড় বীর পুরুষ। (বেদায়াহ ওয়ান নেহায়াহ-৩/২৭১)
(৩৪)যদি তোমাকে দেখতাম তবে আমি তোমাকে হত্যা করতাম:- আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর ছিলেন আরবের মধ্যে একজন নামকরা বীর পুরুষ। তিনি সুদক্ষ তীর নিক্ষেপকারী ছিলেন। অনেক দেরীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। যার ফলে তিনি বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের পক্ষ হয়ে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সম্মানার্থে তিনি তাঁর বাবার সাথে মুকাবালা করেন নি। পরে যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন তখন তাঁর বাবাকে বললেন, বদরের যুদ্ধে আপনি আমার সামনে পড়েছিলেন, তবে আমি আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম। যার কারণে আমি আপনাকে হত্যা করিনি। আবু বকরা তাঁকে বললেন, কিন্তু তুমি যদি আমার সামনে পড়তে তাহলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিতাম না।
পৃষ্ঠা:২৯
এ থেকে জানা যায় যে, কেমন ছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর প্রতি তাঁর ভালোবাসা। যার ফলে তিনি তাঁর সন্তানের ভালোবাসাকেও বিসর্জন দিয়েছেন। (তাঁরীখুল খুলাফা লিস সুযূর্তী- ৯৪)
(৩৫)আবু বকর ও বদরের যুদ্ধবন্দী:- মদীনায় পৌঁছার পর রাসূল সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে অবশিষ্ট যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে পরামর্শ করেন। হযরত আবু বকর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ওরা তো চাচাতো ভাই এবং আমাদের বংশ গোত্রেরই লোক। আমার মতে আপনি ওদের কাছ থেকে ফিদিয়া (মুক্তিপণ) নিয়ে ছেড়ে দিন। এতে করে যা কিছু নেয়া হবে, সেসব কাফেরদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তি হিসেবে কাজে আসবে। এরপর রাসূল হযরত ওমর ইবনে খাত্তাবের মতামত জানতে চাইলে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, আমি হযরত আবু বকরের সাথে ভিন্ন মত পোষণ করি। আমি মনে করি, আপনি আমার আত্মীয় অমুককে আমার হাতে তুলে দিন, আমি তাঁর শিরচ্ছেদ করব। একইভাবে আকীল ইবনে আবু তালেবকে হযরত আলীর হাতে তুলে দিন, আলী তাঁর শিরচ্ছেদ করবেন। একইভাবে হামযার ভাই অমুককে হাতে তুলে দিন, হামযা তাঁর শিরচ্ছেদ করবেন। এতে আল্লাহ তা’য়ালা বুঝতে পারবেন, মুশরিকদের জন্যে আমাদের মনে কোন সমবেদনা নেই। আর এ সকল যুদ্ধবন্দী হচ্ছে মুশরিকদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। এরপর রাসূল ঘরে প্রবেশ করলেন, কিন্তু কিছুই বললেন না। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসলেন। তখন সাহাবারা কেউ কেউ আবু বকর উন্দ্র -এর পক্ষ নিচ্ছিলেন। আবার কেউ কেউ ওমর-এর পক্ষ নিচ্ছিলেন। রাসূল বললেন, আল্লাহ তায়ালা কতক বান্দার অন্তরকে নরম করে দেন। এমনকি তা দুধের চেয়েও নরম থাকে। আবার কতক লোকের অন্তরকে কঠিন করে দেন, এমনকি তা পাথরের চেয়েও কঠিন থাকে। আর হে আবু বকর! তোমার তুলনা হচ্ছে ইবরাহীম এর সাথে। তিনি বলেছিলেন-
فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
পৃষ্ঠা:৩০
যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ইবরাহীম: আয়াত-৩৬)
আর তোমার তুলনা হচ্ছে ঈসার সাথে। তিনি বলেছিলেন-
إِن تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادَكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তাঁরা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(সূরা মায়েদা: আয়াত-১১৮)
হে ওমর! তোমার তুলনা হচ্ছে নুহের সাথে। তিনি বলেছিলেন-
وَقَالَ نُوحٌ رَّبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارًا
নূহ (আ) আরো বলেছিলেন” হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য হতে কোন গৃহবাসীকে ছেড়ে দিবেন না।
(সূরা নূহ: আয়াত-২৬)
আর তুলনা হচ্ছে মূসার সাথে। তিনি বলেছিলেন-
رَبَّنَا اطْمِسُ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّى يَرَوُا الْعَذَابَ
الأليم
হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের সম্পদ বিনষ্ট করো, তাদের হৃদয় কঠিন করে দাও, তাঁরা তো মর্মান্তিক শান্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে না। (সূরা ইউনুস-৮৮) (সীরাতুন নাবুওয়াত- ২/১৫৭)
(৩৬)হে আবু বকর। সুসংবাদ গ্রহণ কর:- রাসূল মুজাহিদদের কাতার সোজা করার পর নিজের অবস্থান কেন্দ্রে ফিরে এসে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্যের ওয়াদা পূরণের জন্যে আবেদন জানাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে আল্লাহ তায়ালা! তুমি
পৃষ্ঠা ৩১ থেকে ৪৫
পৃষ্ঠা:৩১
আমার সাথে যে ওয়াদা করেছ তা পূরণ করে। হে আল্লাহ তায়ালা, আমি তোমার কাছে তোমার প্রতিশ্রুত সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।
উভয় পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাসূল (সা:) আল্লাহর দরবারে এ দোয়া করলেন,’ হে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। যদি আজ মুসলমানদের এ দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, তবে দুনিয়ায় তোমার ইবাদাত করার মতো কেউ থাকবে না। হে আল্লাহ তায়ালা! তুমি কি এটা চাও, আজকের পরে কখনোই তোমার ইবাদাত করা না হোক?
রাসূল অতিশয় বিনয় নম্রতার সাথে কাতর কণ্ঠে এ মুনাজাত করছিলেন। তাঁর কাতরোক্তির এক পর্যায়ে উভয় স্কন্ধ থেকে চাদর পড়ে যায়। হযরত আবু বকর নবী করীম এর চাদর ঠিক করে দিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এবার থামুন। আপনি তো আপনার প্রতিপালকের কাছে অতিশয় কাতরতাঁর সাথে মুনাজাত করেছেন। এদিকে আল্লাহ তায়ালার ফেরেশেতাদের প্রতি ওহী পাঠান, “আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। সুতরাং তোমরা মুমিনদের অবিচলিত রাখো, অচিরেই আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করবো যারা কুফরী করে।” (সূরা আনফাল। আয়াত-১২)
এদিকে আল্লাহ তায়ালা নবী করীম এর কাছে এ মর্মে ওহী পাঠালেন,
إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ “
আমি তোমাদের সাহায্য করবো এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা, যারা একের পর এক আসবে।” (সূরা আনফাল আয়াত-৯) (সীরাতুন নাবুওয়াত- ২/১৪০, ১৪১)
(৩৭)নবীওইয়াহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতা:- রাসূল তাঁর কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে ইহুদীদের কাছে গমন করেন। তাদের সাথে বনু কেলাবের নিহত দুই ব্যক্তির রক্তপণ আদায়ে সহায়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন, যাদের হযরত আমর ইবনে উমাইয়া যামরী ভুলক্রমে হত্যা করেছিলেন। ইহুদীদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী উল্লিখিত হত্যার রক্তপণ আদায়ে মুসলমানদের সহায়তা করতে – তাঁরা বাধ্য ছিল। রাসূল তাদের এ কথা বলার পর তাঁরা বলল, হে
পৃষ্ঠা:৩২
আবু বকর এর সম্পর্কে আবুল কাসেম! আমরা তাই করব। আপনি সঙ্গীদের নিয়ে এখানে অপেক্ষা করুন, আমরা ব্যবস্থা করছি। একথার পর রাসূল ইহুদীদের এক ঘরের দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে অপেক্ষা করছিলেন। হযরত আবু বকর, হযরত ওমর, হযরত আলী এবং অন্য কয়েকজন সাহাবী সে সময় রাসূল-এর সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলইএর কাছে হযরত জিবরাঈল (আ) কে প্রেরণ করেন। তিনি দ্রুত সে জায়গা থেকে উঠে মদীনার পথে রওয়ানা হন। পরে সাহাবায়ে কেরামও তাঁকে অনুসরণ করেন। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূল! আপনি এতো দ্রুত চলে এলেন, অথচ আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। রাসূলব্লকুচক্রী ইহুদীদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সাহাবীদের অবহিত করেন। মদীনায় ফিরে আসার পর রাসূল তৎক্ষণাৎ মোহাম্মদ ইবনে মাসলামাকে বনু নাযির গোত্রের কাছে প্রেরণ করেন এবং তাদের এ নোটিশ দেন, তোমরা অবিলম্বে মদীনা থেকে বেরিয়ে যাও। এখানে তোমরা আমাদের সাথে থাকতে পারবে না। কিন্তু মুনাফিকরা ইহুদীদের খবর পাঠাল, তোমরা নিজের জায়গায় অটল থাক, বাড়িঘর ছেড়ে যেয়ো না। মুনাফিকদের প্রেরিত এ খবরে ইহুদীরা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিল, নির্বাসিত হওয়ার চেয়ে যুদ্ধ করবে। তাদের নেতা হুয়াই ইবনে আখতাব আশা করছিল, মুনাীফক নেতা তাঁর কথা রাখবে। তাই সে রাসূল-এর কাছে খবর পাঠাল, আমরা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে যাবো না। তাই রাসূল হুয়াই ইবনে আখতাবের পয়গাম পাওয়ার কথা সাহাবায়ে কেরামকে বললে তাঁরা সাথে সাথে আল্লাহু আকবার বলে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয়ে যান। রাসূল তাদের খেজুর গাছগুলো কেটে পুড়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এ প্রসংগে সূরা হাশর নাযিল হয়।
(৩৮)পতাকাবাহী আবু বকর:- রাসূল কোরাইসী কূপের কাছে উপস্থিত হন এবং বনূ মোস্তালেক গোত্র যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয়। রাসূল এবং সাহাবীরাও যুদ্ধের জন্যে সারিবদ্ধ হন। এ অভিযানের সমগ্র ইসলামী পতাকাবাহী ছিলেন হযরত আবু বকর
পৃষ্ঠা:৩৩
সিদ্দীক । বিশেষভাবে আনসারদের পতাকা হযরত সা’দ ইবনে ওবাদা -এর হাতে দেয়া হয়। তাঁরপর ওমর -কে আমির বানালেন। তিনি মানুষের নিকট ঘোষণা করলেন যে, হে লোক সকল! তোমরা লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহর ঘোষণা দাও, তাহলে তোমাদের জান ও মাল নিরাপদ থাকবে। কিন্তু তাঁরা এ স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তাঁরা তীর নিক্ষেপ করতে লাগল। এরপর রাসূল নিজে মুসলমানদের নেতৃত্ব দিলেন এবং বিজয় লাভ করলেন। এই যুদ্ধে শত্রুদের দশ জন নিহত হলো এবং তাদের সবাই বন্দী হলো। মুসলমানদের মধ্যে কেবল একজনই শাহাদাত বরণ করেছিলেন। (বেদায়া ওয়ান্নেহায়া- ৪/১৫৭)
(৩৯)নিজের কাপড়ের মধ্যে মাটি বহন করেছেন:- আবু বকর মুসলমান হওয়ার পর থেকে কোন ভালো কাজেই পিছে থাকতেন না। এমনকি খন্দকের যুদ্ধের দিন তিনি তাঁর কাপড়ে করে মাটি বহন করেছেন। সাহাবাদের সাথে খন্দক খনন করার ব্যাপারে তিনি প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাজ করেছেন। (মাওয়াকিফুস সিদ্দীক মা’আন নবী, পৃঃ ৩২)
(80)আবু বকর -এর সাথে পরামর্শ:- মদীনা মুনাওয়ারায় রাসূল-কে স্বপ্ন দেখানো হলো যে, তিনি এবং সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে হারামে প্রবেশ করেছেন। তাই ৬ষ্ঠ হিজরীর জিলহজ্জ মাসে প্রায় ১৪০০ সাহাবীকে সাথে নিয়ে মক্কার দিকে রওয়ানা হন। যুল হোলায়ফা নামক জায়গায় পৌঁছে রাসূল তাঁর হাদী (কোরবানীর পশু)-কে কেলাদা (কোরবানীর পশুর বিশেষ নিদর্শন) পরান। উটের চুট চিরে চিহ্ন দেন এবং ওমরার জন্যে এহরাম বাঁধেন। তিনি এসব এ কারণেই করেন যাতে সবাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, তিনি কেবল ওমরা পালনের জন্যেই যাচ্ছেন, যুদ্ধের কোন ইচ্ছা তাঁর নেই। কাফেলার আগে খোযায়া গোত্রের একজন গুপ্তচরকে কোরাইশদের মানোভাব জানতে প্রেরণ করা হয়। ওসমান নামক জায়গায় পৌঁছার পর গুপ্তচর এসে খবর দিল,
পৃষ্ঠা:৩৪
মক্কাবসীরা আপনার সাথে লড়াই করতে এবং মক্কায় প্রবেশরোধে প্রস্তুত হয়ে আছে। এ খবর পেয়ে রাসূল সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন।
আবু বকর সিদ্দীক বললেন, আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন, কিন্তু আমরা তো ওমরার উদ্দেশ্যে এসেছি, কারো সাথে লড়াই করতে আসিনি। তবে আমাদের এবং বায়তুল্লাহর মধ্যে যারা অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে তাদের সাথে লড়াই করব। রাসূল বললেন, ঠিক আছে, তাহলে চল। অতএব সকলে মক্কাভিমুখে এগিয়ে চললেন।
এদিকে কোরাইশরা রাসূল-এর রওয়ানা হওয়ার খবর পেয়ে পরামর্শ সভার বৈঠক অনুষ্ঠান করে এ মর্মে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, যে কোন মূল্যে মুসলমানদের বায়তুল্লাহ থেকে দূরে রাখতে হবে। ওই দিকে রাসূল তাঁর সফর অব্যাহত রাখেন এবং মক্কাবাসীদের সকল প্রতিরোধের জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলেন। (তাঁরীখুদ দাওয়াহ ইলাল ইসলাম, পৃঃ ১৩৬)
(৪১)আবু বকর উরওয়া ইবনে মাসউদের জবাব দিয়েছেন:- কুরাইশদের মধ্য থেকে বোদায়াল ইবনে ওয়ারাকা তাঁর গোত্র ও খোযায়ারা কয়েকজন লোকসহ আল্লাহর রাসূলের সাথে সাক্ষাতের জন্যে আসেন। তিনি তখন হুদায়বিয়াতে অবস্থান করছিলেন। বোদায়াল যখন নবী মুসলমানদের উদ্দেশ্য জানতে পারল তখন বলল, আপনার বক্তব্য আমি কোরাইশদের কাছে পৌঁছে দেবো। পরে তিনি কোরাইশদের কাছে ফিরে এলেন। এরপর কোরাইশরা মোকরেয ইবনে হাফসকে প্রেরণ করে। এরপর বনু কেনান গোত্রের হালিস ইবনে আলকামা নামক এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করে। এরপর উরওয়া ইবনে মাসউদকে প্রেরণ করে। তাদের সাথে আলোচনায় যোগ দেন আবু বকর খুল্ল এবং আরো কয়েকজন সাহাবী। উরওয়া বলল, হে মোহাম্মদ! বলুন তো, আপনি যদি নিজের কওমকে নির্মূল করে দেন তবে আপনি কি আপনার আগে কোন আরব সম্পর্কে এমন কথা শুনেছেন, যিনি নিজের কওমকে নির্মূল নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন? যদি ভিন্ন রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তবে খোদার কসম, আমি এমন সব চেহারা এবং এমন সব উদভ্রান্ত লোকদের দেখছি, যারা আপনাকে ছেড়ে
পৃষ্ঠা:৩৫
পালিয়ে যাবে। একথা শোনার পর হযরত আবু বকর বললেন, লাত- এর লজ্জাস্থানের ঝুলন্ত চামড়া চুষো গিয়ে। আমরা আল্লাহর রাসূলকে ছেড়ে পালিয়ে যাবো? উরওয়া বললো, এ লোকটি কে? সাহাবীরা বললেন, এ ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত আবু বকর দ্র। উরওয়া তখন হযরত আবু বকর কে সম্বোধন করে বললো, দেখো, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তুমি এক সময় আমার উপকার করেছিলে, যার কোন বদলা দেইনি। যদি তা না হতো, তবে অবশ্যই আমি তোমার এ কথার জবাব দিতাম। (আবু বকর সিদ্দীক সাখসিয়্যাতুহু, পৃঃ ৮৮)
(৪২)নবীর সাথে ঐক্যমত পোষণ:- হুদায়বিয়ার সন্ধি সংঘটিত হওয়ার পর আবু বকর মনে প্রাণে একথা বিশ্বাস করে নিলেন যে, নবী যা করেছেন তা মুসলমানদের জন্য কল্যাণকর হবে। কারণ, তিনি নিজের থেকে কিছু বলেন না। অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে ঐতিহাসিকরা বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব -ই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি হক এবং ওরা কি বাতিলের উপর নয়? রাসূল বললেন, কেন নয়? তিনি বললেন, আমাদের নিহতরা জান্নাত আর ওদের নিহতরা কি জাহান্নামের অধিবাসী নয়? আল্লাহর রাসূল বললেন, কেন নয়? তিনি বললেন, তবে আমরা কেন দ্বীনের ব্যাপারে অবদমিত হলাম? অথচ আল্লাহ তায়ালা এখনো আমাদের এবং ওদের মধ্যে ফায়সালা করেননি। আল্লাহর রাসূল বললেন, খাত্তাবের পুত্র ওমর, আমি আল্লাহর রাসূল। কাজেই আমি আল্লাহর নাফরমানী করতে পারি না। আল্লাহ তায়ালা কি আমাকে বলেননি যে, বায়তুল্লাহ শরীফে নিবেন এবং তাওয়াফ করাবেন? রাসূল বললেন, কেন নয়? কিন্তু আমি কি বলেছিলাম, আমরা এবারই সফল হব? তিনি বললেন, জ্বি না। রাসূল বললেন, তবে শোনো, তোমরা অবশ্যই বায়তুল্লাহর কাছে যাবে এবং তাঁর তাওয়াফও করবে।
পৃষ্ঠা:৩৬
এরপর হযরত ওমর রুষ্ট ক্রুব্ধ মনে হযরত আবু বকর এর কাছে গিয়ে রাসূলকে যেসব কথা বলছিলেন, তা বলেন। রাসূল ওমর -কে যেরূপ জবাব দিয়েছিলেন, হযরত আবু বকর ও সেরূপ জবাবই দেন। হযরত আবু বকর থাক আল্লাহর কসম, তিনি আরো বললেন, আল্লাহর রাসূলের আঁচল ধরে সত্যের উপর রয়েছেন।
(সীরাতুন নাবুবীয়্যাহ লি ইবনে হিশাম, ৩/৩৪৬)
(৪৩)আবু বকর ও হুদায়বিয়া সন্ধি:- হুদায়বিয়া সন্ধি সম্পর্কে আবু বকর কথা বলছিলেন। এটা ছিল ইসলামের বড় বিজয়সমূহের মধ্যে একটি বিজয়। মূলত হুদায়বিয়ার চেয়ে অন্য কোন বড় বিজয় ইসলামে আর ছিল না। কিন্তু মানুষের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে সেদিন মুহাম্মদ ও তাঁর রবের বিষয়ে তাঁরা বুঝতে পারেনি। বান্দারা তাড়াহুড়া করে কিন্তু আল্লাহ বান্দার মত তাড়াহুড়া করেন না। তিনি পর্যায়ক্রমে তাঁর উদ্দেশ্যেকে বাস্তবায়ন করেই ছাড়বেন। বিদায় হজ্জের দিন আমি সুহাইল ইবনে আমরকে মানহারের নিকট দেখতে পেলাম। সে রাসূল-এর কোরবানীর জন্তুটি এগিয়ে দিচ্ছিল। আর রাসূল নিজ হাতে তা কোরবানী করছেন। এরপর মাথা মুগুণকারী ব্যক্তিকে ডাকা হলো। অতঃপর রাসূল তাঁর মাথা মুগুণ করলেন। এদিকে আমি সুহাইলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দেখলাম যে, সে রাসূল
এর চুল গুলো কুঁড়িয়ে নিচ্ছে এবং তাঁর চোখে লাগাচ্ছে। অথচ এই সুহাইল হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ লেখতে বাধা দিয়েছিল। সুতরাং আমি আল্লাহর
প্রশংসা করলাম যে, তিনি তাকে ইসলামের দিকে হেদায়াত দিয়েছেন।
(কানযুল উম্মাল, ৩০১৩৬)
(88)তিনি ছিলেন খিলালের অধিকারী:- রা’ফে ইবনে আমর আত তাঈ বলেন, যাতুস সালাসীল এর অভিযানে রাসূল আমর ইবনে আস ন্দ্রে-কে মনোনীত করেন এবং সেই
পৃষ্ঠা:৩৭
বাহিনীতে আবু বকর, ওমর ও আরো কয়েকজন সাহাবীকে প্রেরণ করেন। অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তাঁরা এক পর্যায়ে তাঈ নামক এক পাহাড়ের নিকট অবতরণ করলেন। ওমর বললেন, এমন একজন লোককে খোঁজ যে আমাদেরকে পথ দেখিয়ে দেবে। তাঁরা বলল, রা’ফে ইবনে আমরই এ কাজ করতে পারবে। রা’ফে বলেন যখন আমরা অভিযান শেষে ফিরে আসলাম, তখন আমি আবু বকর -এর নিকটে গেলাম। তাঁর একটা আভা ছিল। যখন তিনি সফর করতেন তখন তা গুটিয়ে নিতেন। আর যখন কোথাও অবতরণ করতেন তখন তা বিছাতেন। আমি বলালম, হে আভার অধিকারী! তোমার সাথীদের মধ্যে আমি তোমাকেই নির্বাচন করেছি। আমাকে তুমি এমন কিছু জিনিস শিক্ষা দাও যা করলে আমি তোমাদের মতো হতে পারব। তবে তা যেন এত লম্বা না হয় যে, আমি তা ভুলে যাই। আবু বকর বললেন, তাহলে সে বিষয়গুলো তোমার পাঁচটি আঙ্গুলে মুখস্ত রাখতে পারবে। আমি বললাম, তাহলে বলুন। তিনি বললেন-
১. তুমি এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রাসূল।
২. তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায কয়েম করবে।
৩. তোমার মালের যাকাত দেবে।
৪. বাইতুল্লায় হজ্জ করবে।
৫. রমযানে রোযা রাখবে।
আবু বকর জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি মনে রাখতে পেরেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। এরপর বললেন, আল্লাহ যখন তাঁর নবীকে নবুওয়াত দিয়ে প্রেরণ করলেন তখন কেউ কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করল। ফলে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করলেন। আর কেউ কেউ ইসলামের প্রবেশ করাকে অপছন্দ করল। আর তাঁরা সবাই আল্লাহর দুশমন। (মাযমাউয যাওয়াঈদ- ৫/২০২)
পৃষ্ঠা:৩৮
(৪৫)আয়েশা এবং আবু বকর এর মধ্যে কথোপকোথন:- কুরাইশদের বিশ্বাসঘাতকতাঁর খবর আসার তিনদিন আগেই রাসূল আয়েশা কে তাঁর সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে বলেছিলেন। তবে বিষয়টা গোপন রাখার পরামর্শ দেন। এরপর আবু বকর আয়েশা এর কাছে আসেন। তিনি বললেন, মা, এ প্রস্তুতি কিসের? আয়েশা বললেন, আমি জানি না। আবু বকর ন্দ্রে বললেন, এটা তো রোমকদের সাথে যুদ্ধের সময় নয়। তাহলে রাসূল কোন দিকে যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন? আয়েশা বললেন, আমি জানি না। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি নাজদদের দিকে যেতে চাচ্ছেন? তাতেই আমি চুপ থাকলাম। তাঁরপর জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি কুরাইশদের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন? তাতেও আমি চুপ থাকলাম। এরপর রাসূল প্রবেশ করলেন। তখন আবু বকর তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি কোন দিকে বের হতে চাচ্ছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবু বকর বললেন, বনী আসফারের দিকে। রাসূল বললেন, তাহলে কি নাজদের দিকে রাসূল কুরাইশদের উদ্দেশ্যে? এবার রাসূল বললেন, না। তাঁরপর বললেন, না। তাহলে কি বললেন, হ্যাঁ। আবু বকর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কুরাইশ ও আপনার মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে। রাসূল বললেন, তাঁরা বনী কাহবের সাথে যে আচরণ করেছে তা কি তোমার নিকট পৌঁছায় নি? (মাগাযিল ওয়াকিত- ২/৭৯৬)
(৪৬)নবীন্দ্র-এর সাথেই তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন:- মক্কা বিজয়ের দিন যখন রাসূল মক্কায় প্রবেশ করলেন, আর তাঁর পাশে ছিলেন আবু বকর। তিনি নারীদেরকে দেখলেন যে, তাঁরা ঘোড়ার চেহারায় চপেটাঘাত করছে। তখন তিনি আবু বকরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আবু বকর! হাসসান কি বলেছেন? এরপর তিনি নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করলেন:
পৃষ্ঠা:৩৯
“আমরা আমাদের গোড়াগুলোকে হারিয়ে ফেলেছি। তাইতো তোমরা সেগুলো যুদ্ধের ময়দানে রোগ জীবাণু ছড়ানোর ন্যায় ধুলাবালি করতে দেখতে পাচ্ছ না। বস্তুত সে ঘোড়াগুলো ছিল অনুগত এবং অত্যন্ত সাহসী। ফলে সেগুলো বর্শার আঘাতের মোকাবিলা করার জন্য তাদের কাঁধে ধারালো তরবারি নিয়ে অগ্রসর হতো। কিন্তু আফসোস! সে দ্রুতগামী উৎকৃষ্ট মানের ঘোড়াগুলো এমন হয়ে গেল যে, এখন নারীরা পর্যন্ত এদের চেহারায় উড়না দিয়ে আঘাত করে।”
নবী বললেন, সে অবস্থানে ঘোড়াগুলোকে তোমরা প্রবেশ করাও হাসান যে রকমটি বলেছে। (মুস্তাদরাকে হাকীম, ৩/৭২)
(৪৭)আবু বকর তাঁর সন্তানের হত্যাকারীর সাথে:- তায়েফের দিন আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর তীরের আঘাতে জখম হন। এই জখমের প্রভাবেই তিনি রাসূল এর ইন্তেকালের চল্লিশ দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ওপর নিক্ষিপ্ত তীরটি আবু বকর-এর নিকট ছিল। এটা নিয়ে তিনি সাকিফ গোত্রের নিকট গেলেন। তাঁরপর তিনি এটাকে দেখালেন এবং বললেন, তোমাদের কেউ কি এটা চিনে? তখন সাঈদ ইবনে উবায়েদ বললেন, আমি এই তীর নিক্ষেপ করেছিলাম। তখন আবু বকর বললেন, এই তীরের আঘাতে আমার ছেলে আবদুল্লাহ মারা গেছে। সুতরাং সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি তোমার হাতে তাকে শাহাদাৎ এর মর্যাদা দান করেছেন। আর তুমি তাঁর হাতে কাফের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করনি। আল্লাহর দয়া দু’জনের প্রতিই রয়েছে।
(খুতাবু আবু বকর সিদ্দীক, পৃ: ১১৮)
পৃষ্ঠা:৪০
(৪৮)আবু বকর ও ফুল বাযাদাইনের দাফন:- আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমি রাসূল ﷺ এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে অবস্থান করছিলাম। আমি রাতের গভীরে জাগ্রত হলাম। তখন সেনাবাহিনীর নিকট দিয়ে আগুনের মতো কিছু একটা দেখতে পেলাম। অতঃপর আমি তা দেখতে লাগলাম। তখন দেখতে পেলাম যে, সেখানে আল্লাহর রাসূল, আবু বকর এবং ওমর হ-কে। আর এ সময় আবদুল্লাহ ফুল বাযাদাইন মৃত্যুবরণ করেন। সাহাবীরা তাঁর জন্য কবর খনন করলেন। রাসূল তাঁর কবরে নামলেন এবং আবু বকর ও ওমর তাকে রাসূল-এর নিকটবর্তী করে দিলেন। রাসূল তখন বলছিলেন, তোমরা তোমাদের ভাইকে আমার কাছে তুলে দাও। যখন তাকে কবরে শুয়ালেন, তখন রাসূল বললেন, হে আল্লাহ! এই সন্ধ্যায় আমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট ছিলাম, সুতরাং তুমিও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। একথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বললেন, হায় আফসোস! এ কবরের বাসিন্দা যদি আমি হতাম। আবু বকর টুল্ল যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে কবরে প্রবেশ করাতেন, তখন বলতেন, বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ ওয়াবিল ইয়াকীনি ওয়াবিল বা’আছি বা’আদাল মাউতি”। (মাওসুআতু ফিকহীস সিদ্দীক- ২২২)
(৪৯)তুমি কি এটা পছন্দ কর?:- ওমর ইবনে খাত্তাব বলেন, আমরা কঠিন গরমের সময় তাবুকের যুদ্ধে রওনা হলাম। এক পর্যায়ে আমরা একটি স্থানে অবতরণ করলাম। তখন আমাদের পিপাসা এত বেশি লেগেছিল যে, মনে হচ্ছিল আমাদের শক্তি শেষ হয়ে যাবে। তখন আবু বকর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তায়ালা তো আপনার দোয়া কবুল করেন। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। রাসূল হ্যাঁ। তাঁরপর রাসূল বললেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর? তিনি বললেন, তাঁর দু’হাত তুললেন। হাত নামানোর আগেই
পৃষ্ঠা:৪১
আকাশে মেঘ দেখা গেল। তাঁরপর বৃষ্টি হলো। সাহাবীরা তাদের সাথে যেসব পাত্র ছিল পানি দ্বারা সেসব পাত্র ভরে নিলেন (ইবনে হিব্বান-১৭০৭)
(৫০)আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি:- তাবুকের যুদ্ধের দিন নবী সাহাবাদেরকে দান করার জন্য উৎসাহ দিলেন। সাহাবীরা দানের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় লাগলেন। হযরত ওমর এ সম্পর্কে বলেন, আবু বকর এদিন দান করার জন্য আদেশ করলেন। তখন আমি চিন্তা করলাম যে, আমি আবু বকরের চেয়ে আগে থাকব। তাই আমি আমার মালের অর্ধেক নিয়ে গেলাম। রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? আমি বললাম, এ মাল পরিমাণ সম্পদ রেখে এসেছিল। এরপর আবু বকর তাঁর সমুদয় মাল নিয়ে উপস্থিত হলেন। রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? তিনি বললেন, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল-কে রেখে এসেছি। ওমর (রা) বললেন, আমি কোন ব্যাপারেই আবু বকরকে ছাড়িয়ে যেতে পারিনি।
এ রকমই ছিল আমাদের নবীর সাথীদের অবস্থা। তাঁরা কল্যাণের কাছে প্রতিযোগিতা করতেন। সুতরাং আমাদের কী অবস্থা? (সুনানে আবু দাউদ, ১৬৭৮)
(৫১)কোন প্রতিহতকারী আছে কি?:- আবু বকর প্রথম সারীর মুসলমানদের মধ্যে একজন ছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যে, তাঁর ছেলে ইসলাম গ্রহণ করতে অনেক দেরী করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি হুদায়বিয়ার সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হলেন, আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর। তিনি একজন শক্তিশালী যুবক ও বীর পুরুষ ছিলেন। একদিন তিনি মুশরিকদের সাথে বের হলেন এবং চিৎকার করে বলেন, আমার সাথে মুকাবেলা করার কেউ আছে কি? তখন আবু বকর তাঁর কথা শুনলেন এবং তাঁর কথার জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। আল্লাহ তায়ালা আবু বকর -এর মনের অবস্থা জেনে
পৃষ্ঠা:৪২
নিলেন যেভাবে তিনি নবীদের মধ্যে ইবরাহীম (আ)-এর মনের অবস্থা জেনে ছিলেন। তিনি তাঁর সন্তানকে জবাই করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষে এর বদলা অন্য কিছু আল্লাহ তাকে দান করলেন। (হাকিম- ৩/৪৭৩)
(৫২)আবু বকর এরূপই ছিলেন:- আবু বকর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাসূল-এর সাথী ছিলেন। সফরে এবং বাড়িতে তিনি কখনো বিচ্ছিন্ন হতেন না। এমনকি জিহাদ, হজ্জ ও উমরার ক্ষেত্রে তিনি সবসময় রাসূল-এর সঙ্গে থাকতেন। গারে ছুরেও তিনি রাসূল এর সাথী ছিলেন। তিনি সবখানেই রাসূল -এর সাহায্যকারী হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(সূরা তাওবা: আয়াত-৪১)
(৫৩)আবু বকর -এর নেতৃত্বে হজ্জ পালন:- নবম হিজরীর যিলকদ বা যিলহজ্জ মাসে নবী করীম সিদ্দিকে আকবর হযরত আবু বকরকে আমিরুল হজ্জ (হাজীদের নেতা) বানিয়ে মক্কায় প্রেরণ করেন।
এরপর সূরা তাওবার প্রথমাংশ নাযিল হয়। এতে মুশরিকদের সাথে কৃত চুক্তি অঙ্গীকার সমতার ভিত্তিতে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশ আসার পর নবী কারীম হযরত আলীকে এ ঘোষণা প্রকাশের জন্যে প্রেরণ করেন। রক্ত এবং ধন-সম্পদ সম্পর্কিত অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে এটাই আরবদের রীতি ছিল (চুক্তির কোন পক্ষ তা রহিত করতে চাইলে হয় সে নিজে এ রহিত করার ঘোষণা দেবে অথবা নিজের গোত্রের কাউকে দিয়ে ঘোষণা করাবে। বংশের বাইরের কোন লোককে দিয়ে ঘোষণা করানো হলে তা মানা হতো না।) হযরত আবু বকর এর সাথে আলী -এর দাজনান মতান্তরে আরজ প্রান্তরে সাক্ষাৎ হয়। আবু বকর মোলী কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আমীর নাকি আমীরের অধীন? আলী বললেন, আমীরের অধীন। এরপর উভয়ে সামনে অগ্রসর হন। আবু বকর
পৃষ্ঠা:৪৩
লোকদের হজ্জ করান। ১০ই যিলহজ্জ কুরবানীর দিন আলী জামরায় দাঁড়িয়ে নবী কারীম এর নির্দেশ অনুযায়ী সকল প্রকার চুক্তি অঙ্গীকার সমাপ্তির কথা ঘোষণা করেন। চার মাসের সময় দেয়া হয়। যাদের সাথে কোন অঙ্গীকার ছিল না তাদেরও চার মাস সময় দেয়া হয়। তবে মুসলমানদের সাথে যেসব মুশরিক অঙ্গীকার পালনে ত্রুটি করেনি এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে অন্যদের সাহায্য করেনি, তাদের চুক্তিপত্র নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়।
হযরত আবু বকর এক দল সাহাবীকে পাঠিয়ে এ সাধারণ ঘোষণা প্রচার করেন, ভবিষ্যতে কোন মুশরিক হজ্জ করতে এবং কেউ নগ্নবস্থায় কাবা ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না। (সীরাতুন নাবুওয়াত- পৃ: ৫৩৬)
(৫৪)এই মুহরিমের দিকে লক্ষ্য কর:- ইমাম আহমদ তাঁর সনদে বর্ণনা করেন যে, আসমা বিনতে আবু বকর বলেন, আমরা রাসূল এর সাথে হজ্জ করার জন্য বের হলাম। অতঃপর আরায নামক উপত্যকায় যখন পৌঁছলাম তখন রাসূল সেখানে অবতরণ করলেন। তখন আবু বকর ও বসলেন এবং তাঁর দিকে লক্ষ্য করার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। তখন তাঁর সাথে কোন সাওয়ারী ছিল না। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সওয়ারী কোথায়? তিনি বললেন, গতকাল আমি তা হারিয়ে ফেলেছি। আবু বকর তাঁর একটি সওয়ারী আপনি তা হারিয়ে ফেললেন? রাসূল বললেন, তখন মুচকি হাসছিলেন এবং বললেন, এই মুহরিমের দিকে তাকাও এবং সে কি করছে লক্ষ্য কর। (মুসনাদে আহমদ- ২/৩৪৪)
আবু বকর এর মর্যাদা
(৫৫)আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আত্মমর্যাদাবোধ:- আবু বকর একদা ইহুদীদের শিক্ষালয়ে গেলেন। সেখানে ধর্মীয় আলোচনা হচ্ছিল। ঐ বিদ্যালয়ে ‘ফানহাস’ নামক একজন বড় পণ্ডিত
পৃষ্ঠা:৪৪
ছিল। আর তাঁর সাথে ‘আইয়া’ নামক একজন বড় আলেম ছিল। আবু বকর ফানহাসকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার অমঙ্গল হোক। আল্লাহকে ভয় কর এবং ইসলাম গ্রহণ কর। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তুমি জান যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছেন। তোমরা তাওরাত এবং ইঞ্জিলে তাঁর আলোচনা পেয়েছ। ফানহাস বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আমাদের মুখাপেক্ষী, আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী নই। আমরা তাঁর এরূপ কাকুতি-মিনতি করি না যেমন তিনি আমাদের কাছে কাকুতি মিনতি করেন। আমরা তাঁর নিকট মোটেই মুখাপেক্ষী নই। কারণ আমরা ধনবান। তিনি যদি ধনী হতেন তাহলে আমাদের নিকট ঋণ চাইতেন না। যেমন আপনার নবী সুদ হতে বিরত রাখতে চাচ্ছেন অথচ আল্লাহ নিজেই সুদ দিচ্ছেন। তিনি যদি ধনীই হবেন তাহলে আমাদের সুদ দিতে চাইবেন কেন? এ কথা শুনে আবু বকর ﷺ রেগে গেলেন তাঁর গালে সজোরে চড় মারলেন এবং বললেন: হে আল্লাহর দুশমন! যদি তোমাদের মাঝে চুক্তি সম্পাদিত না হতো তাহলে তোমার মাথা উড়িয়ে দিতাম।
এরপর ফানহাস নবী নিকট গিয়ে বিচার দিয়ে বলল, দেখ তোমার সাথী আমার সাথে কী ব্যবহার করেছে। নবী ! বললেন, হে আবু বকর। এমন কী হলো যে, তুমি এরূপ করলে? আবু বকর বললেন, আল্লাহর দুশমন ভয়ানক কথা বলেছে। সে মনে করে আল্লাহ গরীব আর তাঁরা ধনী। এজন্য তাঁর চেহারায় আঘাত করেছি। ফাহনাম অস্বীকার করে বলল, না, আমি এরূপ বলিনি। তখন আল্লাহ ফাহনামকে মিথ্যুক প্রমাণ করত এবং আবু বকর -কে সত্য প্রমাণ করত এ আয়াত অবতীর্ণ করেন।
لَقَدْ سَمِعَ اللهُ قَوْلَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللهَ فَقِيرٌ وَنَحْنُ أَغْنِيَاءُ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوا
وَقَتْلَهُمُ الْأَنْبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍ وَنَقُوْلُ ذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ
নিশ্চয় আল্লাহর তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে: আল্লাহ দারিদ্র আর আমরা ধনী। শীঘ্রই আমি লিখে রাখবো তাঁরা যা বলেছে এবং নবীদেরকে
পৃষ্ঠা:৪৫
অন্যায়ভাবে হত্যার বিষয়টিও এবং আমি বলব, তোমরা উত্তপ্ত আযাব ভোগ কর। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৮১) (তাফসীরে কুরতুবী, ৪/২৯৫)
(৫৬)আমি রাসূলএর গোপনীয়তা প্রকাশ করিনি:- ওমর ইবনে খাত্তাব প্লে বলেন, যখন হাফসা খুনাইস ইবনে হুযায়ফাহ এর হাতে বিধবা হলেন। আর সে বদরে উপস্থিত হয়েছিল। তখন উসমানের সাথে সাক্ষাত হলে হাফসাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলাম। উসমান ে বললেন, অপেক্ষা করুন। এরপর আবু বকর এর সাথে দেখা হলে তাকেও হাফসাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। আমার প্রস্তাবে আবু বকর চুপ থাকলেন কোন উত্তরই দিলেন না। আমার নিকট উসমানের উত্তরের চেয়ে এটাই বেশি কষ্টকর মনে হলো। তাঁর কয়েক দিন অতিবাহিত হলে বা অপেক্ষার পর রাসূল স্বয়ং তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। তাঁর সাথে হাফসার বিবাহ দিলাম। তাঁরপর আবু বকর আমার সাথে দেখা করে বললেন, সম্ভবত বিবাহের প্রস্তাবে উত্তর না দেয়ায় তুমি কষ্ট পেয়েছ। আমি বললাম, হ্যাঁ! আবু বকর বললেন, আসলে এ ব্যাপারটা নিয়ে রাসূল নিজে ভাবছিলেন এটা আমি জানতাম তাই আমি কোন উত্তর দেইনি। আর আমি তো রাসূল গোপন বিষয় প্রকাশকারী নই। তিনি যদি বিবাহ না করতেন তাহলে অবশ্যই বিবাহ করতাম।
(৫৭)আবু বকর ও জুমার নামায:- একদা মদীনাতে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবসায়ীগণ আসতে বিলম্ব হয়েছিল। এতে এমন অবস্থা হলো যে, মানুষের খাদ্যসহ নিত্য পণ্যের সংকট দেখা দিল, তাই মানুষ বণিকদের আগমনের প্রহর গুনতে লাগল। একদিন রাসূল জুমার খুৎবা দিচ্ছিলেন এমন সময় বণিকদল আগমন করলে সাহাবীগণ রাসূল-এর খুৎবা বাদ দিয়ে কেনা-কাটার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল। মাত্র ১২ জন ছাড়া সবাই চলে গেল। তখন আল্লাহ এ আয়াত নায়িল করলেন-
পৃষ্ঠা ৪৬ থেকে ৬০
পৃষ্ঠা:৪৬
وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةٌ أَوْ لَهُوَانِ انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوْكَ قَائِمًا قُلْ مَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ وَاللَّهُ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
“আর তাঁরা যখন ব্যবসা অথবা ক্রীড়া কৌতুক দেখে তখন তারা তার দিকে ছুটে যায়, আর তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে যায়। বল, আল্লাহর কাছে যা আছে তা ক্রীড়া কৌতুক ও ব্যবসা অপেক্ষা উত্তম। আর আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। (সূরা জুম’আ। আয়াত-১১)
তবে যে কয়জন সাহাবী নবী মধ্যে আবু বকর ও ছিলেন। এর সাথে অবস্থান করছিলেন,
(৫৮)নবী আবু বকর-এর প্রতি আস্থাশীল ছিলেন:- আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেছেন, রাসূল বলেন, যে অহংকারবশত তাঁর কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। অর্থাৎ (তাকে পাপমুক্ত করবেন না) একথা শুনে আবু বকর বললেন, কখনো কখনো অজ্ঞতা আমার কাপড়ের কোণ নিচে চলে যায়। রাসূল বলেন, তুমি তো অহংকার বসত এরূপ করছ না। (বুখারী, ৩৬৬৫)
(৫৯)হে আবু বকর। তাদের উভয়কে সুযোগ দাও:- একদা ঈদের দিন আবু বকর ন্দ্র আয়েশা -এর ঘরে প্রবেশ করলেন। এমতাবস্থায় তাঁর দুই জন আনসারী মেয়ে গান গাইছিল। আবু বকর তা দেখে বললেন, রাসূল এর ঘরে শয়তানের বাদ্যযন্ত্র? তখন রাসূল তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে দেয়ালের দিকে ছিলেন। আবু বকর এর কথা শুনে নবী বললেন, হে আবু বকর! তাদের উভয়কে সুযোগ দাও, কেননা প্রত্যেক গোত্রের ঈদের দিন থাকে, আর আজকের দিন হলো মুসলমানদের ঈদের দিন। (মুসলিম, ৮৯২)
পৃষ্ঠা:৪৭
(৬০)আবু বকর সিদ্দীক -এর আত্মমর্যাদাবোধ:- বানী হাশেমের একটি দল আবু বকর এর বাড়িতে প্রবেশ করল। (তখন আবু বকর বাড়িতে ছিলেন না) তখন বাড়িতে তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইয়া ছিলেন। তিনি এটা অপছন্দ করলেন এবং ব্যাপারটি রাসূল কে জানালেন। রাসূল বললেন, তুমি যেসব ধারণা করছ তা হতে আল্লাহ তাকে মুক্ত রেখেছেন। পরে রাসূল মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, আজকের এ দিন হতে কোন ব্যক্তি অপর কারো ঘরে তাঁর অনুপস্থিতে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে তাঁর সাথে একজন বা দুইজন লোক থাকলে প্রবেশ করতে পারবে। (আর রিয়াদ্দুন নাঘরাহ লিত তাবারী, পৃঃ ২৩৭)
(৬১)মেহমানের সম্মান বা সমাদর:- আবদুর রহমান বিন আবু বকর বললেন, আহলে সুফ্ফাগণ দারিদ্রদ্র্য প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। একদিন রাসূল বললেন, তোমাদের মধ্যে যার কাছে দুজনের খাবার আছে সে যেন একজন মেহমান সাথে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চার জনের খাবার আছে সে যেন, পঞ্চম জনকে মেহমান হিসেবে নিয়ে যায়। আর আবু বকর একজন মেহমান নিয়ে বাড়িতে আগমন করেন। আর আবু বকর দ্রে আল্লাহ যতক্ষণ চান ততক্ষণ রাসূল-এর নিকট অবস্থান করেন অর্থাৎ অনেক বিলম্ব করে বাড়ি আসেন। তখন তাঁর স্ত্রী বলেন, ব্যাপার কী মেহমান রেখে এত বিলম্বে বাড়িতে আসলেন। আবু বকর বললেন, তোমরা তাদের খাবার খাওয়াওনি? আবু বকর এর স্ত্রী বলেন, আমরা দিয়েছিলাম, তিনি আপনি আসার আগে খাবেন না বলেছেন।
আবদুর রহমান বলেন, আমি বাবার বকা থেকে বাঁচার জন্য লুকিয়ে গেলাম। তিনি অনেক রাগারাগি করলেন এবং বললেন, এই নির্বোধ কোথাকার! যা বকা দেয়ার দিলেন। তাঁরপর আবু বকর টু বললেন, আপনি তৃপ্তি সহকারে আহার করুন। তখন মেহমান বলল, আল্লাহর শপথ আপনি না খেলে আমি খাব না। তখন আবু বকর নিজেও শপথ
পৃষ্ঠা:৪৮
করলেন যে, তিনি রাতে আহার করবেন না। পরক্ষণেই তিনি খাবার চাইলেন এবং বললেন পূর্বে যা ঘটল (শপথ) এগুলো শয়তানের পক্ষ থেকে, তাঁরপর তিনি নিজেও খেলেন এবং মেহমানও খেল।
আবদুর রহমান বলেন, আল্লাহর শপথ খাবারে এত বরকত হচ্ছিল যে, আমরা যখনই কোন লুকমা প্লেট হতে উঠালাম তাঁর চেয়ে বেশি তাঁর নিচে জমা হচ্ছিল। সবাই খাবার খেয়ে পরিতৃপ্ত হলো মনে হলো খাবার যা ছিল তাঁর চেয়ে বেশি রয়ে গেছে। আবু বকর তাঁর স্ত্রীকে বললেন, হে বানী ফারাসের বোন খাবারের কী হলো? তিনি বললেন, কিছুই না, চক্ষু শীতল হওয়ার মতো বিষয় খাবার যেন আগের চেয়ে আরো তিনগুণ বেশি হয়েছে। সকলেই খাওয়ার পর রাসূল এর নিকট নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে ১২ জন লোক ছিল এবং তাদের সাথে আরো অনেক লোকজনও ছিল। সবাই সেখান থেকে আহার করল। (মুসলিম, ২০৫৭)
(৬২)শপথ ভঙ্গের মধ্যে যা পাপ রয়েছে:- আয়েশা বকর বলেন, শপথের কাফফারা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে আবু কখনো শপথ ভঙ্গ করতেন না। অতএব বুঝা যায় এর অনেক পাপ রয়েছে। আবু বকর বলেন, কোন বিষয়ে শপথ করার পর যদি দেখি যে, শপথ ভঙ্গ করলেই কল্যাণ বেশি বা শপথ করা পাপের কাজ তাহলে কাফফারা দিয়ে শপথ ভঙ্গ করে ফেলি এবং যাতে বেশি কল্যাণ সেটাই করি। (মাওসুওয়াতু ফিকহী আবি বকর, পৃঃ ২৪)
(৬৩))কল্যাণের কাজে প্রতিযোগিতা:- আবু বকর উন্দ্র কল্যাণের কাজের প্রতিযোগিতায় সর্বদা অগ্রবর্তী থাকতেন। এমনিভাবে তিনি অনুসরণীয় চরিত্রের মডলে পরিণত হন। এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা-এর একটি হাদীস রয়েছে। রাসূল বললেন, তোমাদের মধ্যে কে রোযা অবস্থায় সকালে উপণিত হয়েছ? আবু বকর বললেন, আমি। নবী আবার বললেন, তোমাদের মাঝে কে
পৃষ্ঠা:৪৯
মিসকীনকে খাবার খাওয়ায়েছ? আবু বকর বললেন, আমি। রাসূল আবার বললেন, তোমাদের মাঝে কে আজ রোগীর সেবা করেছ? আবু বকর বলেন, আমি। তাঁরপর রাসূল বললেন, উল্লেখিত বিষয়গুলোর গুণ যার মাঝে পাওয়া যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(মুসলিম, ১০২৮)
(৬৪)ব্যবসায় গমন:- রাসূল ব্যবসাকে ভালোবাসতেন আর এটা নবী বলেই আবু বকর ও এটাকে ভালোবাসতেন। তাই নবী ভালোবাসতেন -এর যুগে আবু বকর শাম (সিরিয়া) দেশের বসরাতে ব্যবসার জন্য গমন করেন। যদিও আবু বকর এর অনেক সম্পদ ছিল তবুও তিনি ব্যবসা করতেন। এ থেকে শিক্ষণীয় হলো যে, প্রত্যেক মুসলিমের হালাল রুজীর ব্যবস্থা থাকা কর্তব্য। যাতে সে ভিক্ষা করা বা হারামে পতিত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে এবং আল্লাহ তায়ালা যে সব কাজে অর্থ ব্যয় করলে খুশি হন সেসব কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে।
(৬৫)সন্তান হত্যাকারীদের সাদরে গ্রহণ:- হুনাইন যুদ্ধের পর রাসূলও তাঁর সাহাবীগণ তায়েফ অবরোধ করেন। এতে মুসলমানদের কিছু হতাহতের ঘটনা শাহাদাতবরণ করেন। সেই যুদ্ধে আবু বকর অংশগ্রহণ করেছিলেন। আব্দুর রহমান তাদের ঘটে। এতে কিছু সাহাবী এর ছেলে আব্দুর রহমানও আঘাতে আহত হন। ঐ আঘাতের কারণে মদীনাতে আসলে রাসূল এর মৃত্যুর পর তিনি মারা যান। এরপর বনী তায়েফের অধিবাসীদের ইসলাম গ্রহণের জন্য আগমনের খবরে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। আব্দুর রহমানের প্রতিশোধ নেয়া হবে। কিন্তু আবু বকর সবার আগে গিয়ে তাদের আগমনে সম্ভাষন জানান। (সীরাতুন নাবুবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম, ৪/১৯৩)
পৃষ্ঠা:৫০
(৬৬)আবু বকর তাদের নেতা নির্বাচন করলেন:- তায়েফের প্রতিনিধিগণ যখন ইসলাম গ্রহণে সম্মত হলো এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো তখন রাসূল তাদের একজনকে আমীর নির্বাচন করতে চাইলে আবু বকর উসমান বিন আবুল আস ট্রে কে নেতা নির্বাচন করার জন্য ইঙ্গিত দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ রাসূল! তাদের মাঝে এই যুবকের ইসলাম বুঝার ও কুরআন শিক্ষা করার আগ্রহ বেশি। কারণ আমি দেখেছি যে, তাঁর সাথের লোকেরা যখন ঘুমাতো তখন সে রাসূল -এর নিকট ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত এবং কুরআন শিক্ষা লাভ করত। আর রাসূলকে ঘুমন্ত অবস্থা পেলে আবু বকর -এর নিকট যেত। আর উসমান বিন আবুল আস বিষয়টি তাঁর সাথী ও আল্লাহর রাসূল থেকেও গোপন করেছিল। তাই তাঁর সাথীগণ আশ্চর্য হলো।আবু বকর তাদের নেতা নির্বাচন করলেন
তায়েফের প্রতিনিধিগণ যখন ইসলাম গ্রহণে সম্মত হলো এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো তখন রাসূল তাদের একজনকে আমীর নির্বাচন করতে চাইলে আবু বকর উসমান বিন আবুল আস ট্রে কে নেতা নির্বাচন করার জন্য ইঙ্গিত দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ রাসূল! তাদের মাঝে এই যুবকের ইসলাম বুঝার ও কুরআন শিক্ষা করার আগ্রহ বেশি। কারণ আমি দেখেছি যে, তাঁর সাথের লোকেরা যখন ঘুমাতো তখন সে রাসূল -এর নিকট ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত এবং কুরআন শিক্ষা লাভ করত। আর রাসূলকে ঘুমন্ত অবস্থা পেলে আবু বকর -এর নিকট যেত। আর উসমান বিন আবুল আস বিষয়টি তাঁর সাথী ও আল্লাহর রাসূল থেকেও গোপন করেছিল। তাই তাঁর সাথীগণ আশ্চর্য হলো।
(তাঁরীখুল ইসলাম লিখ যাহাবী, ৬৭)
(৬৭)হে আবু বকরের পরিবার! এটাই তোমাদের প্রথম বরকত নয় :- আয়েশা (রাযি) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ-এর সঙ্গে কোন এক (জিহাদের) সফরে গিয়েছিলাম। আমরা বাইদা অথবা যাতুল জাইশ নামক জায়গায় পৌঁছলে আমার গলার হারটি ছিঁড়ে পড়ে গেল। হারটি তালাশ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সেখানে অবস্থান করলেন। সাথের লোকদেরও তাঁর সঙ্গে অবস্থান করতে হলো। অথচ জায়গাটি এমন ছিল যে, সেখানে পানি ছিল না এবং লোকদের কারো সাথে পানি ছিল না। তাই লোকেরা আমার পিতা আবু বরের কাছে এসে বলল, আপনি দেখছেন না, ‘আয়েশা কি কাজটা করল? রাসূলুল্লাহও সমস্ত লোকজনকে এমন এক মরুময় জায়গায় অবস্থান করতে বাধ্য করল, যেখানে পানির কোন সন্ধান নেই এবং লোকদের সাথেও পানি নেই। এ কথা শুনে আবূ বক্স (রাযি) আমার কাছে এলেন। রাসূলুল্লাহ তখন আমার রানের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। আবূ বক্স (রাযি) বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ ও সমস্ত লোকজনকে এমন একটি জায়গায় থামতে
পৃষ্ঠা:৫১
বাধ্য করলে যেখানে কোন পানি নেই, আর তাদের কারো সাথেও পানি নেই। আয়েশা বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে তিরস্কার করতে লাগলেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় অনেক বকা দিলেন। এমন কি রাগের মাথায় আমার কোমরে হাত দিয়ে খোঁচা দিতে থাকলেন। আমার রানের উপর রাসূলুল্লাহ শায়িত ছিলেন বলে আমি নড়াচড়াও করতে পারছিলাম না। রাসূলুল্লাহ তখনো নিদ্রিত। এমতাবস্থায় সকাল হয়ে গেল। (ফজরের নামাযের সময়) অথচ পানির কোন সন্ধান নেই। তখন মহান আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন।
فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا
“তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর।” (সূরা নিসা: আয়াত-৪৩)
তাঁরপরই সবাই তায়াম্মুম করল তখন উসাইদ ইবনে হুজাইর (রাযিঃ) বললেন, হে আবূ বরের পরিবার! এটা আপনাদের প্রথম বারাকাত নয়। (এর আগেও আপনাদের দ্বারা আমরা আরো বারাকাত লাভ করেছি।) ‘আয়েশা বলেন, অতঃপর আমি যে উটের উপর আরোহণ করতাম তাকে আমরা উঠালাম আর তাঁর নিচেই হারটি পেয়ে গেলাম। (বুখারী, ৩৬৭২)
(৬৮)নাতীকে নিয়ে মদীনায় ঘুরে বেড়াতেন:- আসমা বিনতে আবু বকর গুদ্র মক্কা থাকতেই আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর কে গর্ভে ধারণ করেন। তিনি বলেন, যখন আমার গর্ভের সময় পূর্ণ হলো তখন আমি মদীনায় হিজরত করলাম। আর কুবাতে পৌঁছে আমি সন্তান প্রসব করলাম। সন্তান নিয়ে রাসূল-এর নিকট তাঁর ঘরে রাখলাম। নবী খেজুর আনতে বললেন। তাঁরপর তিনি তা চিবিয়ে তাঁর মুখে দিলেন। শিশুর মুখে প্রথম যে বস্তু প্রবেশ করেছিল তা ছিল রাসূল এর লালা। তাঁর জন্ম হওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল। কারণ বলা হতো যে, ইহুদীরা মুসলমানদের যাদু করেছে তাদের ঘরে কোন সন্তান বা কোরো ছেলে সন্তান জন্ম নিবে না। তাই আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর জন্ম নেয়ার পর মুসলমানগণ তাকবীর দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করল।
পৃষ্ঠা:৫২
আর আবু বকর টুদ্রতাকে নিয়ে মদীনার অলি-গলিতে ঘুরে বেড়ালেন যাতে সবাই জানতে পারে প্রচলিত কথা ঠিক নয়।
(খিলাফাতু আমীরুল মুমিনীন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের লিস সালাবী, পূঃ ১০২৯)
(৬৯)বক্তব্য প্রদানে আবু বকর -এর সাথে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যক্তি:- আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে আবু বকর এর সাথে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। আর তিনি ছিলেন। বক্তব্যের সময় তিনি আবু বকর ও ইশারা-ইঙ্গিত করতেন। তিনি আবু বকর লোক ছিলেন।
কুরাইশদের উল্লেখযোগ্য বক্তা এর মত নাড়া চাড়া, আওয়াজ এর মতো উচ্চ আওয়াজের উসমান -এর যুগে আফ্রিকার অঞ্চল বারবার বিজয় করে সেখানে বিপুল পরিমাণ সহায় সম্পদ গনীমত হিসেবে লাভ করেন। যুদ্ধের সেনাপতি আবদুল্লাহ ইবনে আবু সারহকে আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর টু-এর সাথে বিজয়ের খবর আগেই পৌঁছানো জন্য প্রেরণ করেন। তাঁরা মদীনায় এসে উসমান টুদ্র-এর নিকট যুদ্ধে যা যা ঘটেছিল তা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। তখন উসমান বললেন, ইবনে যুবাইর আপনি যদি মিম্বারে উঠে ঘটনাগুলো বলতেন তবে আরো ভালো হতো। আর ইবনে যুবাইর মিম্বারে উঠে যা ঘটেছিল তা বর্ণনা করলেন। আবদুল্লাহ বললেন, ইবনে যুবাইর আমার ইশারা পেয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করছিল মনে হচ্ছিল যেন আমি সেখানেই অবস্থান করছি। আর ইবনে যুবাইর যখন মিম্বার থেকে নামলেন তখন আবদুল্লাহ উল্লা বলেন, হে বৎস! আল্লাহর শপথ, তোমার খুৎবা শুনে মনে হচ্ছিল আমি আবু বকরের খুৎবা শুনছি।
(খিলাফাতু আমীরুল মুমিনীন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের লিস সালাবী, পৃঃ ১৯)
(৭০)আবু বকর তাঁর জিহ্বাকে শান্তি দেন:- একদা ওমর আবু বকর -এর নিকট গিয়ে দেখলেন যে, তিনি তাঁর জিহবা মুখ থেকে বের করে টেনে ধরে আছেন। এটা দেখে ওমর
পৃষ্ঠা:৫৩
বললেন, থামুন! থামুন! আপনি যা করছেন তাঁর জন্য আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তখন আবু বকর বলেন, এটা আমাকে খারাপ কাজের নিয়ে গেছে। নিশ্চয় রাসূল বলেছেন, মানব শরীরে (তাকে পাপে লিপ্ত করার ক্ষেত্রে) জিহ্বার চেয়ে ধারালো অস্ত্র আর কিছুই নেই। (মালেক, বায়হাকী)
(৭১)আপনাদের আনন্দে আমাকে শামিল করুন:- একদিন আবু বকর নবী এ সময় দেখলেন আয়েশা এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নবী-এর সাথে রাগ করে উচ্চ আওয়াজে কথা বলছেন। এ অবস্থা দেখে আবু বকর প্লে বলেন, হে অমুকের বেটি! রাসূল এর সামনে উচ্চ আওয়াজে কথা বলছ? তখন নবী আবু বকর ও আয়েশাকে আড়াল করার জন্য উভয়ের মাঝে দাঁড়ালেন। তাঁরপর আবু বকর স্রেঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। আর নবী আয়েশার সাথে আপোষ করতে লাগলেন এবং বললেন, তুমি কি দেখনি আমি তোমার ও এ লোকের মধ্যে অন্তরায় হয়েছিলাম। তাঁরপর আবু বকর আবার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তখন আয়েশা ও আল্লাহর রাসূল এর হাসির শব্দ শুনে বললেন, আপনাদের বিবাদের মাঝে যেমন আমাকে শরীক করেছিলেন তেমনি শান্তিতেও আমাকে শরীক করে নিন। (আবু দাউদ, ৪৯৯৯)
(৭২)নিশ্চয় সে আবু বকরের মেয়ে:- আল্লাহর রাসূল আবু বকর এর মেয়ে আয়েশা কে অন্তর থেকে বেশি ভালোবাসেন কি না এটা জানার জন্য অন্যান্য স্ত্রীগণ যয়নব বিনতে জাহাসকে নবী-এর নিকট পাঠান। অত:পর যয়নব নবী এর দিকে গেলেন। তখন তিনি তাঁকে মুচকী হাসি অবস্থায় পেলেন। নবী তাকে বললেন, আরে সে তো আবু বকরের মেয়ে। (বুখারী, মুসলিম)
পৃষ্ঠা:৫৪
(৭৩)আবু বকর-এর নবী তনয়া ফাতেমাকে বিবাহের প্রস্তাব:- আলী মদীনায় আসার পর নবী তাঁর মেয়ে ফাতেমা উল্লুকে আলী -এর সাথে বিবাহ দেয়ার কথা দিয়েছিলেন। ব্যাপারটা অন্যান্য সাহাবাগণ জানতেন না। আর মুহাজিরগণ মদীনায় আসার পর মদীনাবাসী আনসারের সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দিলেন। এমতাবস্থায় আবু বকর ফাতিমাকে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করলেন। নবী আবু বকর সাথে মার্জিত আচরণ করলেন এবং বললেন, এ বিষয়ে তোমাকে জানানো পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আর আবু বকর টুল্ল ব্যাপারটাকে ওমর কে জানালেন। ওমর প্লে শুনে বললেন, আপনাকে ফেরত দিয়েছেন হে আবু বকর। তখন আবু বকর ওমর কে বললেন, তুমি নবীকে প্রস্তাব দাও। ওমর তাই করলেন। উত্তরে নবী আবু বকর কে যা বলে দিলেন ওমর ট্রেকেও তাই বললেন। তাঁরপর ওমর টু আবু বকর-কে খবর জানালে তিনি বলেন, তোমাকেও ফেরত দিয়েছেন হে উমর। (তাবাকাত লি ইবনে সা’য়াদ, ১/১১)
(৭৪)দুনিয়া ও তাঁর আগমনকে ভয় পেতেন:- যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবু বকর -এর সাথে ছিলাম। তিনি পানি চাইলেন। তাকে পানি এবং মধু দেয়া হলো। যখন তিনি সেগুলো তাঁর হাতে রাখলেন তখন কান্না করতে লাগলেন করলেন। আমরা মনে করলাম হয়তোবা তাঁর কিছু একটা ঘটেছে। তাই তাকে কিছু জিজ্ঞাসা-করলাম না। যখন তিনি কান্না থামালেন তখন তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আপনার কাঁদার কারণ কী? তিনি বললেন, আমি রাসূল-এর নিকট ছিলাম। হঠাৎ তিনি নিজের কাছ থেকে কোন কিছু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এমন কি জিনিস যা আপনার কাছ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন। অথচ আমি দেখতে পাচ্ছি না। নবী বলেন, দুনিয়া আমার জন্য দীর্ঘ হচ্ছিল।
পৃষ্ঠা:৫৫
তাই সেটাকে তাড়িয়ে দিলাম। আমি বললাম, আমার জন্যও করুন। তিনি বললেন, তুমি আমাকে পাবে না। আবু বকর ট্রে বললেন, তাঁরপর থেকে আমার নিকট স্পষ্ট হলো এবং ভয় কাজ করতে লাগল যে, রাসূল-এর কাজের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে এবং দুনিয়াতে বেশি দিন থাকতে হবে। (বাযযার)
(৭৫)আবু বকর -এর জন্য সাহাবাগণ ক্ষমা প্রার্থনা করতেন:- আয়িয ইবনে আমর হতে বর্ণিত আছে যে, আবু সুফ্যান একদল লোকের সঙ্গে সালমান ফারসী সুহায়ব ও বিলাল এর নিকট আসলেন। তখন তাঁরা বললেন, আল্লাহর তলোয়ারসমূহ আল্লাহর শত্রুদের ঘাড়ে ঠিকসময়ে তাঁর লক্ষ্যস্থলে এসে পড়েনি। রাবী বলেন, আবূ বক্স বললেন, তোমরা কি একজন বয়োবৃদ্ধ কুরাইশ নেতাকে এরূপ কথা বলছ? তাঁরপর তিনি রসূলুল্লাহ-এর নিকট এসে তাঁকে ব্যাপারটি জানালেন। তখন তিনি বললেন হে আবূ বক্স! তুমি মনে হয় তাদের অসন্তুষ্ট করেছ। তুমি যদি তাদের অসন্তুষ্ট করে থাক তবে তুমি তোমার প্রতিপালককেই অসন্তুষ্ট করলে। তাঁরপর আবূ বক্স তাঁদের নিকট এসে বললেন, হে আমার ভাইয়েরা! আমি তোমাদের অসন্তুষ্ট করেছি, তাই না? তাঁরা বললেন, না, হে আমার ভাই! আল্লাহ আপনাকে মাফ করুন।
(মুসলিম, ৬৫৬৮)
(৭৬)রাসূল সাহাবাদের নিকট জান্নাতে আবু বকরের মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন:- আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা ভুল্ল হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণের এক জামায়েতে রাসূল আসলেন এবং বললেন, আমি রাতে জান্নাতে তোমাদের স্থান প্রত্যক্ষ করেছি। তোমাদের স্থান আমার নিকটই। তাঁরপর রাসূল আবু বকরের সামনে এসে বললেন, হে আবু বকর! এক লোককে আমি চিনি না কিন্তু তাঁর নাম, পিতা ও মাতার নাম জানি সে জান্নাতের যে দরজার কাছে যাবে তাকে বলা হবে স্বাগতম স্বাগতম প্রবেশ
পৃষ্ঠা:৫৬
করুন। সালামাহ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় এটা মর্যাদার ব্যাপার, তাই না? তিনি বলেন, সে ব্যক্তি হলো আবু বকর বিন কুহাফা
(বাযযার, তাবারানী)
(৭৭)লানতকারী হয়ো না:- আয়েশা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী আবু বকর এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঐ সময় তিনি তাঁর কতিপয় গোলামকে লানত দিচ্ছিলেন। রাসূল তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, “কা’বার প্রভুর শপথ সিদ্দীক এবং লা’নতকারী এক সাথে হতে পারে না।” সেদিন আবু বকর তাঁর কতিপয় দাসকে মুক্ত করে দেন। আয়েশা বলেন, তাঁরপর তিনি রাসূল এর নিকট এসে বলেন, এরূপ আর কখনো করবো না।
(৭৮)সেদিন অবশ্যই তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে:- আবু বকর দুপুরে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে মসজিদে আসলেন। ওমর আগমনের আওয়াজ পেয়ে বললেন, হে আবু বকর! এ সময় এখানে, তাঁর কারণ কী? তিনি বললেন, অত্যন্ত ক্ষুধার কারণে এখানে এসেছি। ওমর বললেন, আল্লাহর কসম! আমিও অত্যন্ত ক্ষুধার জন্য এখানে এসেছি (যদি রাসূল এর কাছে কিছু পাওয়া যায়)। এ সময় রাসূল বের হয়ে আসলে তিনি বলেন, কী ব্যাপার এ সময় এখানে? তাঁরা দুজনেই বললেন, অত্যন্ত ক্ষুধার জন্য আমরা এখানে এসেছি। রাসূল বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্ত্বার শপথ, আমিও ক্ষুধার জন্যই এ সময় ঘর থেকে বের হয়েছি। তাঁরপর তিনি দুই সাহাবীকে নিয়ে আবু আইয়ূব আনসারী এর বাড়িতে গেলেন। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। দরজায় আওয়াজ দিলেন তাঁর স্ত্রী দরজা খুলে বললেন, আল্লাহর নবী ও তাঁর সাহাবীদের স্বাগতম। নবীতাকে বললেন, আবু আইয়ুব কোথায়? সে মহিলা বলল, সে তাঁর খেজুর বাগানে। নবী আবু বকর ও ওমর পুত্রকে নিয়ে সেখানে গেলেন। আবু আইয়ূব নবীকে দেখে বললেন, আল্লাহন নবী ও তাঁর সাথীদের স্বাগতম। আপনি তো এ সময় আগমন করেন না। নবী
পৃষ্ঠা:৫৭
বললেন, সত্য বলেছ। তাঁরপর আবু আইয়ূব বাগানে পরিপক্ক তাজা খেজুরের একটি ছড়ি কেটে আনলেন। নবী বললেন, এতো প্রয়োজন
ছিল না। আবু আইয়ুব বলেন, আমি জানি আপনি এরূপ খেজুর পছন্দ করেন। যেখান হতে পছন্দ আপনি বেছে বেছে খেতে পারেন। আর এগুলোর সাথে আরো কিছু করব। নবী বললেন, যদি তুমি যবেহ করই তবে দুগ্ধবতী যবেহ করবে না। তাঁরপর তিনি একটি ছাগল বা ভেড়া যবেহ করলেন এবং তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ভালো করে রুটি তৈরি কর। তুমি ভালোভাবেই রুটি তৈরি করতে জান। তাঁরপর সে মহিলা অর্ধেক গোশ্ত পাকালেন আর বাকি অর্ধেক ভূনা করলেন। খাবার তৈরি হলে নবী এর সামনে তা উপস্থাপন করা হলো। তাঁরা তিনজন রুটি-গোন্ত খেলেন। নবী আবু আইয়ুব -কে বললেন, এখান থেকে কিছু ফাতেমার নিকট পৌঁছাও। কেনা সে আজ পর্যন্ত এরূপ কথনো খায়নি। তাঁরপর আইয়ূব স্রে ফাতিমা এর নিকট নিয়ে গেলেন। তিনিও খেয়ে তৃপ্ত হলেন। আর নবী বলেন, রুটি গোশত, শুকনো ভিজা খেজুর এতকিছু। এরপর তাঁর দু’চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! নিশ্চয় কিয়মাতের দিন এসব নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
একথা শুনে তাঁর সাথীগণ থমকে গেলেন। তাঁরপর নবী বললেন, তোমরা যদি এরূপ নিয়ামত পাও। তাহলে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাও। আর পরিতৃপ্ত হলে বলবে
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَشْبَعَنَا وَأَنْعَمَ عَلَيْنَا
“আল-হামদুলিল্লাহিল্লাযী আশবাআনা ওয়া আনআমা আলাইনা।”
অর্থ: “ঐ আল্লাহর সকল প্রশংসা যিনি আমাদেরকে তৃপ্তি সহকারে আহার করালেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন।” তখন এ দু’আ কাফফারা হয়ে যাবে। (ইবনে হিব্বান)
পৃষ্ঠা:৫৮
তাঁর ঈমানের মাহাত্ম্য
নবী একদিন সাহাবীগণকে বললেন, তোমাদের মাঝে কেউ কি কোন স্বপ্ন দেখেছ? এক জনৈক ব্যক্তি বলল, আমি দেখেছি যে, আকাশ হতে একটি দাড়িপাল্লাওয়ালা আগমন করল বা অবতীর্ণ হলো তদ্বারা আপনাকে এবং আবু বকরকে ওজন করা হলো। আবু বকরের চেয়ে আপনার ওজন বেশি হলো। তাঁরপর আবি বকর ও ওমর ট্রেকে ওজন করা হলো। এতে আবু বকরের ওজন বেশি হলো। তাঁরপর ওমর ও উসমান কে ওজন করা হলো। এতে উমরের ওজন বেশি হলো। তাঁরপর দাড়িপাল্লাটি পুনরায় উঠিয়ে নেয়া হলো। নবী এটাকে সত্যায়ন করলেন। তাঁরপর বললেন, এটা নবুওয়াতের প্রতিনিধিত্ব। অতঃপর আল্লাহ যাকে যতটুকু ইচ্ছা রাজত্ব দান করলেন। (তিরমিযী- ২২৮৮, আবু দাউদ- ৪৬৩৪)
(৭৯)নবী আবু বকর -কে দিলেন:- আল্লাহর রাসূল আবু বকর -এর ব্যাপারে একটি স্বপ্ন দেখলেন। যার দ্বারা তাঁর প্রজ্ঞার কথা জানা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল বলেন, আমি দেখলাম একটি বড় পাত্র পূর্ণ দুধসহ আমাকে দেয়া হলো তা হতে আমি তৃপ্তি সহকারে পান করলাম। আমার কাছে মনে হলো, দুধ আমার রগ ও রক্ত-মাংসে পৌঁছে গেছে। তাঁরপরেও কিছু দুধ বেশি হলো। তা আমি আবু বকর উল্লকে পান করতে দিলাম। তাঁরা (সাহাবীগণ) বলেন, এটা হলো জ্ঞান, যা আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দান করেছেন। আপনি পরিপূর্ণ হলে অতিরিক্ত অংশ আবু বকরকে দেয়া হয়েছে। তখন নবী ক্ষুদ্র বললেন, তোমরা ঠিক বলেছ। (আল ইহসান ফী তাকরীবে ইবনে হিব্বান, ১৫/২৬৯)
পৃষ্ঠা:৫৯
(৮০)হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে দোয়া শিখিয়ে দিন:- আবু বকর-একদিন নবীকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে দোয়া শিখিয়ে দিন, যার দ্বারা নামাযে দোয়া করতে পারি। তিনি বলেন, নবী বলেছেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةٌ مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থ: হে আল্লাহ আমি আমার উপর অনেক যুলুম করেছি। তুমি ছাড়া আমার পাপ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। তাই তোমার পক্ষ থেকে আমার উপর রহমত দাও ও ক্ষমা কর। কেননা, তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (বুখারী, মুসলিম)
(৮১)প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী:- শায়বী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস খুদ্র-কে জিজ্ঞাসা করেন, কে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছে? তিনি বললেন, তুমি কি হাসান (ইসলামের প্রাথমিক কবি) এর কথা কোননি? তিনি বলেছিলেন যে, যদি তুমি আমার নিকট নির্ভরযোগ্য কোন ভাইকে স্মরণ করতে চাও তাহলে তোমার ভাই আবু বকর ইন্দ্র-কে স্মরণ কর। যে কৃতকর্মে নবী কে ছাড়া উত্তম সৃষ্টি, অধিক আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ এবং তিনি পূর্ণ করেন যা ওয়াদা করেন। এমন কোন প্রশংসনীয় কাজ নেই যেখানে তাঁর উপস্থিতি নেই? আর তিনিই প্রথম মানুষ যিনি রাসূল ভূ-কে সত্য বলেছিলেন। (মুস্তাদরাকে হাকীম, ৩/৬৭)
(৮২)আবু বকর বলেন, আপনি সত্য বলেছেন:- আবু দারদা বলেন, রাসূল বলেছেন, তোমরা কি আমার সাথী (আবু বকর)-কে আমার জন্য হলেও ছাড় দিতে পার না? আমি বলতাম, হে মানব মণ্ডলী! নিশ্চয় আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল হিসেবে প্রেরিত
পৃষ্ঠা:৬০
হয়েছি। তোমরা বলতে, আপনি মিথ্যা বলছেন, আর আবু বকর বলতো, আপনি সত্য বলেছেন। (বুখারী, ৪৬৪০)
(৮৩)প্রথমে যে জান্নাতে প্রবেশ করবে:- আবু হুরায়রা স্রে হতে বর্ণিত। নবী বলেন, জিবরাঈল (আ) একদিন আমাকে দেখালেন যে, আমার উম্মত হতে কে কে জান্নাতে প্রবেশ করবে? তখন আবু বকর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আকাঙ্ক্ষা করি আপনার সাথে থাকার যাতে তাদেরকে দেখতে পারি। রাসূল বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে তুমি তো সে ব্যক্তি, হে আবু বকর! যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ)
(৮৪)আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে একজন:- আবূ হুরাইরাথেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাগুলো থেকে আহ্বান করে বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এ দরজাটি উত্তম। যে নামাযী, তাকে নামাযের দরজা থেকে আহ্ববান করা হবে। যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। যে রোযাপালনকারী! তাকে রাইয়ান নামক দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। আর যে সাদাক্বাহ দানকারী তাকে সাদকার দরজা থেকে আহবান করা হবে। আবূ বক্স বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। যাকে বেহেশতের দরজাসমূহ থেকে আহ্বান করা হবে তাঁর তো আর কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই। তবে কি কাউকে সকল দরজা থেকে আহ্বান করা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আর আমি আশা রাখি, তুমি তাদের একজন হবে। (বুখারী, মুসলিম)
পৃষ্ঠা ৬১ থেকে ৭৫
পৃষ্ঠা:৬১
(৮৫)বয়স্ক জান্নাতীদের সরদার:- আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত। রাসূল ট্রে বলেছেন যে, আবু বকর এবং ওমর আগের এবং পরের সকল বয়স্ক জান্নাতীদের সরদার হবেন। (সীলসীলতুল সহীহা লিল আলবানী, হাঃ ৮২৪)
(৮৬)আবু বকর জান্নাতী:- আবদুর রহমান ইবনে আওফ টু থেকে বর্ণিত। নবী বকর জান্নাতী, ওমর জান্নাতী, উসমান জান্নাতী, তালহা দ্র জান্নাতী, জুবায়ের বলেন, আবু জান্নাতী, আলী জান্নাতী, আবদুর রহমান ইবনে আউফ জান্নাতী, সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস ইবনে যায়েদ জান্নাতী ও আবু উবাইদা ইবনেল যাররাহ জান্নাতী, সাঈদ জান্নাতী।
(সহীহ আল জামেস সাগীর, হাঃ ৫০)
(৮৭)আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে সকলের আগে থাকতেন:- আবু বকর মাযউনি বলেন, মুহাম্মাদ-এর সাথীগণ নামাযের ব্যাপারে অথবা রোযার ব্যাপারে আবু বকরের চেয়ে অগ্রগামী হতে পারতেন না। এমনকি যে বিষয়ে তাঁর অন্তরে থাকত সে বিষয়েও না। ইব্রাহীম বলেন, ইবনে আলীয়া থেকে আমার কাছে পৌঁছেছে যে, যে জিনিসটি তাঁর অন্তরে থাকত তা হচ্ছে আল্লাহ জন্য ভালোবাসা এবং তাঁর সৃষ্টির কল্যাণ কামনা করা। (মান ইস্তৃষ্ণুিহুমুল্লাহু লিল আযযানী, ২/৩৫২)
(৮৮)তিনি খলিফা হওয়া সত্ত্বেও লোকদের দুধ দোহন করতেন:- আনিসা বলেন, আবু বকর তিন বছর যাবত আমাদের নিকট আসতেন। হিজরতের পূর্বে দুই বছর এবং হিজরতের পরে এক বছর। তখন মহল্লার দাসীরা তাঁর নিকট তাদের ছাগল নিয়ে আসত। তিনি
পৃষ্ঠা:৬২
সেগুলো দোহন করে দিতেন। ইবনে ওমর পূষ্ট্র-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, আবু বকর মহল্লার লোকদের ছাগল দোহন করতেন। যখন তিনি খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন মহল্লার এক দাসী বলল, আবু বকর এখন আর আমাদের ছাগল দোহাবেন না। আবু বকর টু সেটা শুনতে পেলেন এবং বললেন, আমার বয়সের কসম! অবশ্যই আমি তোমাদের ছাগল দোহন করব। আমি আশা করি যে, আমি যে চরিত্রের উপরে ছিলাম বর্তমান অবস্থা আমাকে তা আরো পরিবর্তন করবে। সুতরাং তিনি এদের জন্য দুধ দোহন করে দিতেন। আর তখন তিনি রসিকতা করে বালিকাদেরকে বলতেন, তুমি কি চাও আমি তোমার সামনে গরগর আওয়াজ করি? অথবা চিৎকার করে আওয়াজ করি? তখন সে বালিকা কখনো কখনো বলত যে, আপনি গরগর শব্দ করে আওয়াজ করুন। আবার কখনো বলত যে, আপনি চিৎকার করে আওয়াজ করুন। আর সে বালিকা যা বলত তিনি তাই করতেন। (ইবনে সায়াদ ফীত তাবাকাত, ৩/১৮৬)
(৮৯)আল্লাহর কসম আমি দান বন্ধ করব না:- আয়েশা (রা) বলেন, আবূ বক্র সিদ্দীক গুদ্র আত্মীয়তার কারণে মিসতাহ ইবনে উসাসার জন্য ব্যয় করতেন। আমার পবিত্রতা সম্পর্কে আল্লাহ এসব আয়াত অবতীর্ণ করলে তিনি বলেন, আমি মিসতাহর জন্য কিছুই ব্যয় করব না। কারণ সে আয়েশার বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে। এ সময় আল্লাহ এ নির্দেশ অবতীর্ণ করেন:
وَلَا يَأْتَلِ أُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ أَنْ يُؤْتُوا أُولِي الْقُرْبَى وَالْمَسَاكِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ فِي سَبِيلِ اللهِ وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ
وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর নি’আমাত প্রাপ্ত ও স্বচ্ছলতার অধিকারী তাঁরা আল্লাহর রাস্তায় আত্মীয়-মিসকীন ও মুহাজিরদেরকে না দেয়ার জন্য যেন শপথ না করে; বরং তাদের উচিত ক্ষমা করে দেয়া ও ক্ষমাসুন্দর
পৃষ্ঠা:৬৩
দৃষ্টিতে দেখা। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান” (সূরা আন-নূর ২২)।
তখন আবূ বক্স বললেন, আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিন তাই আমি পছন্দ করি। তিনি মিসতাহকে এর আগে যা দিতেন তাই দিতে থাকলেন।
(রিজাল ওয়ান নিসা নাযালা ফীহিম কুরআন, পূঃ ২৮)
(৯০)তুমি কি আবু বকরের ব্যাপারে কিছু বলেছ:- বর্ণিত আছে যে, রাসূল হাসান উল্লুকে বললেন, তুমি কি আবু বকরের ব্যাপারে কিছু বলেছ (তুমি কি আবু বকরের ব্যাপারে কোন কবিতা রচনা করেছ?) তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি নিচের কথাগুলো আবৃত্ত করলেন:“তুমি যদি কোন বিশ্বস্ত ভাইয়ের অবদানের কথা উল্লেখ করতে চাও তাহলে স্মরণ করো তোমার ভাই আবু বকরের কথা। তিনি কতইনা মহান অবদান রেখে গেছেন। প্রকৃতপক্ষে নবীর পরে সৃষ্টির সেরা সর্বাধিক আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ এবং দায়িত্ব আদায়ে সর্বাধিক বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব। সুতরাং নবীর পর তাঁর রয়েছে প্রশংসিত অবস্থান। আর তিনিই সবার আগে রাসূল-কে সত্যায়ন করেছিলেন। আর সুউচ্চ সাওর পর্বতের গুহায় তিনিই ছিলেন (রাসূলের সাথী হিসেবে) দুজনের এক জন। আর তাঁরা সেই পাহাড় আরোহন করলে শত্রুরা তাদের পাশ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।”
অতঃপর রাসূল এতে অনেক খুশি হলেন এবং বললেন, হে হাসান! কতইনা উত্তম! (তোমার এ কবিতা)। (রিয়াযুন নাযরাহ, ১/৫৫, ৫৬)
(৯১) আবু বকরের কথা মনে পড়লে ওমর কাঁদতেন:- ওমর-এর নিকট আবু বকর এর কথা আলোচনা করা হলে তিনি কাঁন্না করতেন এবং বলতেন, যদি আবু বকরের একদিনের আমল আমার সকল দিনের আমলের সমান হতো এবং আমার সকল রাত্রির আমল যদি
পৃষ্ঠা:৬৪
আবু বকরের এক রাত্রের আমলের সমান হতো, তাহলে কতই না ভালো হতো। রাত্রি হচ্ছে সেই রাত্রি যে রাত্রে তিনি রাসূল-এর সাথে ছুর নামক গর্তে অবস্থান করছিলেন। যখন তাঁরা গর্তে পৌঁছলেন, আবু বকর বললেন, হে নবী আল্লাহর কসম। আপনার আগে আমি প্রবেশ করব। যদি তাতে কোন ক্ষতিকর কোন কিছু থাকে তবে তা আমাকেই স্পর্শ করবে। এরপর তিনি তাতে ঢুকে কিছু ছিদ্র পেলেন। অতঃপর তিনি তাঁর লুঙ্গি ছিড়ে ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিলেন এবং দু’টি গর্ত বাকি ছিল। তাতে তিনি পা রাখলেন। এরপর রাসূল-কে বললেন, প্রবেশ করুন। অতঃপর রাসূল গর্তের মধ্যে তাঁর মাথা ঢুকালেন। এরপর তিনি একটু ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু আবু বকর টুদ্র-এর পায়ে একটি পাথর পড়ে যায়। কিন্তু তিনি রাসূল এর ঘুম ভেঙ্গে যাবে এ ভয়ে তাকে জাগাননি। এরপর আবু বকর এর শরীর থেকে রাসূল ﷺ এর চেহারায় রক্ত পড়ল। তখন রাসূল জেগে গেলেন। তাঁরপর বললেন, আবু বকর তোমার কী হয়েছে? তিনি বললেন, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি দংসিত হয়েছি। এরপর রাসূল তাতে খুঁ খুঁ দিলেন। তখন তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। (আর রিয়াযুন নাযরাহ, ১/৬৮)
(৯২)আলী আবু বকর-এর পক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন:- শা’আবী হতে বর্ণিত যে, নিশ্চয় আবু বকর আলী ইবনে আবি তালিব -এর দিকে দৃষ্টি দিলেন এবং বললেন, যে সবচেয়ে সম্মনী ব্যক্তি এবং নবী -এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম ব্যক্তিকে দেখে আনন্দিত হতে চায় সে যেন আলী ﷺ এর দিকে তাকায়। তখন আলী ম্লে বললেন, আবু বকর যদি এ কথা বলে থাকেন তাহলে নিশ্চয় সবচেয়ে কোমল হৃদয়ের মানুষ এবং সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি এবং গারে ছুরের মধ্যে নবী গুদ্র-এর সাথী আবু বকর দ্রই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি। (রিয়াখুন নাষরাহ, পূঃ ৮৬)
পৃষ্ঠা:৬৫
(৯৩)আবু বকর-এর একক বৈশিষ্ট্য:- আবু মুসা ইবনে উকবা বলেন, আমি জানি না যে, এই চার ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ রাসূল-কে পেয়েছেন। অথচ তাঁরা একজন আরেক জনের সন্তান। তাঁরা হলেন, আবু কুহাফা আবু বকর আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর আবু আতিক ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর । অনুরূপভাবে আবু কুহাফা আবু বকর আসমা ইবনে যুবায়ের। (রিয়াযুন নাষরাহ, ১/১১৮) আবদুল্লাহ
(৯৪)তিনি আবু বকর ছাড়া আর কেউ নন:- আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
إِلَّا تَنْصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন। যখন কাফিরগণ তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন, যখন তাঁরা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তাঁর সঙ্গীকে বলেছিল, ‘বিষণ্ণ হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন।’
(সূরা তাওবা- ৪০)
মুফাসসিরগণের মধ্যে এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই যে, এ আয়াতের মধ্যে দুজনের একজন বলতে আবু বকর প্লে-কে বুঝানো হয়েছে। হাসান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতের মাধ্যমে আবু বকর ব্যতীত সকলকে ত্রুটিযুক্ত করেছেন। (রিয়ামুন নাঘরাহ, ১/১১৯)
পৃষ্ঠা:৬৬
(৯৫)আল্লাহর কসম আমি তাঁর সাথী:- আবু বকর বলেন, তোমাদের মধ্য থেকে কে সূরা তাওবা তেলাওয়াত করবে? তখন এক ব্যক্তি বলল, আমি পড়ব। যখন তিনি পড়তে পড়তে এ আয়াতে গিয়ে পৌঁছলেন।
إِلَّا تَنْصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا
যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না করো, তবে আল্লাহ তো তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিরগণ তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দু’জনের দ্বিতীয়জন, যখন তাঁরা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তাঁর সঙ্গীকে বলেছিল, ‘বিষণ্ণ হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা তাঁরবা- আয়াত-৪০)
তখন আবু বকর কান্না শুরু করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম! আমিই নবীর সাথী ছিলাম। (রিয়াযুন নাখরাহ, ১/১১৯)
(৯৬)আমি যা চাই সেটাই:- একদিন আবু বকর-এর বাবা তাকে বললেন, হে আমার সন্তান! আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি দুর্বল দাসদেরকে মুক্ত কর। তুমি যদি এমন ব্যক্তিদেরকে মুক্ত করতে যারা তোমার পেছনে দাঁড়াতে পারত। আবু বকর বললেন, হে আমার পিতা। আমি যেটা চাই সেটাই করি। এরপর আবু বকর -এর শানে এ আয়াত নাযিল হয়।
فَأَمَّا مَنْ أعطى واتَّقَى (٥) وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى
অতএব, যে দান করে এবং খোদাভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে। (রিয়াখুন নাঘরাহ, ১/১২০)
পৃষ্ঠা:৬৭
(৯৭)উম্মে মুয়াব্বাদের কাছ দিয়ে আবু বকর এর গমন:- বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় উম্মে মুয়াব্বাদের অনেক ছাগল ছিল। আর তা বৃদ্ধি পেতে থাকল। একদা আবু বকর গুড় তাঁর পাশ দিয়ে গমন করলেন। তখন তাঁর ছেলে আবু বকর গুদ্র-কে চিনতে পারল এবং বলল, হে আম্মার! উনি সেই ব্যক্তি যিনি সেই মুবারক ব্যক্তির সাথে ছিলেন। তখন তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর বান্দা! হিজরতের সময় তোমার সাথে কে ছিল? তিনি বললেন, তুমি তাকে চিন না? বললেন, না। তখন আবু বকর বললেন, তিনি তো আল্লাহর নবী। অতঃপর আবু বকর স্র তাকে সাথে নিয়ে রাসূল ইন্দ্র-এর কাছে গেলেন। তখন নবীন্দ্র তাকে খাবার দিলেন এবং কিছু উপঢৌকন দান করলেন। (সীরাতুন নাবুওয়াত লিস সালাবী, ১/৩৫১)
(৯৮)মক্কায় আবু বকর এর ভ্রাতৃত্ব:- রাসূল হিজরতের পূর্বে মক্কায় থাকতেই মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দেন। তাই তিনি মক্কায় থাকা অবস্থায় আবু বকর এবং ওমর -এর মধ্যেও ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দেন। (সীরাতুন নাবুওয়াত লিস সালাবী, পৃঃ ৩৮৩)
(৯৯)আবু বকর -এর বিশ্বস্ততা:- আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ-কে বলতে শুনেছি, একদিন এক রাখাল তাঁর ছাগল দলের কাছে হাজির থাকাকালে হঠাৎ এক হিংস্র বাঘ এসে থাবা মেরে দল থেকে একটি ছাগল নিয়ে যেতে লাগল। রাখাল হিংস্র বাঘের কবল থেকে বকরীটাকে বাঁচালো। নেকড়েটি তখন রাখালের দিকে তাকিয়ে বলল, আজ তো আমার থেকে ছিনিয়ে নিলে। কিন্তু হিংস্র পশুর আক্রমণের দিন এ ছাগলের রক্ষাকারী কে থাকবে, যেদিন আমি ব্যতীত এ ছাগলের কোন রাখাল থাকবে না?
পৃষ্ঠা:৬৮
অনুরূপভাবে একদিন এক লোক একটি গাভীর পিঠে চড়ে তাকে দৌড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন গাভীটি তাঁর দিকে তাকিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলল। গাভীটি বলল, আমাকে তো এ কাজের জন্য বানানো হয়নি। আমাকে বানানো হয়েছে কৃষি কাজের জন্য। লোকেরা বলে উঠল, সুবহানাল্লাহ! (নেকড়ে ও গাভী মানুষের মতো কথা বলতে পারে) নবী বললেন, আমি, আবূ বক্র ও ‘ওমর ইবনে খাত্তাব এ ঘটনা বিশ্বাস করি। (বুখারী মুসলিম)
(১০০)জান্নাতের সকল দরজা দিয়ে ডাকা হবে:- আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাগুলো থেকে আহ্বান করে বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এ দরজাটি উত্তম। যে নামাযী, তাকে নামাযের দরজা থেকে আহবান করা হবে। যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। যে রোযাপালনকারী! তাকে রাইয়ান নামক দরজা থেকে আহবান করা হবে। আর যে সাদাক্বাহ দানকারী তাকে সাদজ্বার দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। আবু বকর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। যাকে বেহেশতের দরজাসমূহ থেকে আহ্বান করা হবে তাঁর তো আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। তবে কি কাউকে সকল দরজা থেকে আহবান করা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আর আমি আশা রাখি, তুমি তাদের একজন হবে। (বুখারী, মুসলিম)
(১০১)তোমরা আমাকে হেয় করেছিলে কিন্তু সে আমাকে অনুসরণ করেছিল:- একদা আকীল বিন আবি তালেব ও আবু বকর দ্র-এর মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এতে আকীলের অপরাধ ছিল। পক্ষান্তরে আবু বকর ছিলেন সম্পূর্ণ নির্দোষ। আর মানুষের বংশধারা বর্ণনা করে মানুষকে ঘায়েল করার ক্ষমতা আবু বকর টু-এর ছিল। কিন্তু আকীল যেহেতু নবী
পৃষ্ঠা:৬৯
এর চাচাতো ভাই, সেহেতু আবু বকর তাকে কিছু না বলে নবী (সা)- এর নিকট অভিযোগ উত্থাপন করেন। ফলে নবী (সাঃ) সমস্ত মানুষের উপস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বলেন, “তোমরা কি আমার সাথীকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে না? তাঁর এবং তোমাদের প্রকৃত অবস্থা ভালো করে জেনে নাও, আল্লাহর শপথ! তোমাদের মধ্যে এমন
কেউ নেই যার বাড়ির গেট অন্ধকারাচ্ছন্ন নয়। তবে আবু বকর এর গেট ব্যতীত। কেননা, তাঁর গেটে তো নূর ঝলমল করে। আর আল্লাহর শপথ! আমি যখন তাওহীদের দাওয়াত প্রচার করি তোমরা সবাই বলেছিলে যে, আমি মিথ্যা বলছি। কিন্তু আবু বকর বলেছিল, আপনি সত্য বলছেন এবং সত্য ধর্মের প্রচার করছেন। আর তোমরা তো তোমাদের মাল-সম্পদ নিজেদের কাছে গচ্ছিত রেখে দিয়েছিলে। পক্ষান্তরে আবু বকর তাঁর সমস্ত মাল আমার তরে উৎসর্গ করেছিল। আর তোমরা আমাকে সাহায্য করা থেকে যখন বিরত ছিলে, তখন সে আমার প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে আমার অনুসারী হয়েছিল।
(তাবারানী, ৩/৩৭৮)
(১০২)নিশ্চয়ই আপনি কল্যাণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী:- আমাদের মধ্যে এমন কেউ ছিল না? যে কল্যাণের কাজে সবার আগে থাকত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমি মসজিদে নামায পড়ছিলাম। তখন রাসূল স্রে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর সাথে ছিলেন আবু বকর ও উমর। তিনি আমাকে দোয়া করা অবস্থায় পেলেন। অতপর বললেন, তুমি চাও তোমাকে দেয়া হবে। অতপর বললেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে আনন্দ লাভ করতে চায় সে যেন ইবনে উম্মে আবদ এর কিরাত অনুযায়ী পাঠ করে। এরপর আমি আমার বাড়িতে চলে গেলাম। পরে আবু বকর প্রথমে এসে আমাকে সুসংবাদ দিলেন। এরপর ওমর আসলেন। তখন তিনি আবু বকর-কে আমার নিকট থেকে বের হওয়া অবস্থায় পেলেন। তখন ওমর আপনি কল্যাণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী। (আবু ইয়ালা, ১/২৬)
পৃষ্ঠা:৭০
(১০৩)হে রাবীয়া! তোমার এবং আবু বকরের কী হলো:- রাবীয়া আসলামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার এবং আবু বকর -এর মধ্যে কিছু কথা বার্তা হলো। এক পর্যায়ে আবু বকর টু এমন একটি কথা বললেন, যা আমি অপছন্দ করলাম। এরপর তিনি লজ্জিত হয়ে আমাকে বললেন, হে রাবীয়া! তুমিও আমাকে অনুরূপ কথা বলে প্রতিশোধ নাও। আমি বললাম, আমি এটা করব না। আবু বকর টুদ্র বললেন, তুমি অবশ্যই তা বল, নতুবা আমি এ ব্যাপারে রাসূল ﷺ এর সাহায্য নেব। তখন আমি বললাম, আমি সেটা করব না। এরপর আবু বকর নবী এর নিকট চলে গেলেন। আমিও তাঁর পিছন ধরে চললাম। তখন আসলাম গোত্রের কিছু লোক আগমন করল। তাঁরা আমাকে বলল, আল্লাহ আবু বকরের উপর রহমত নাযিল করুন। কোন বিষয়ে তিনি তোমার ব্যাপারে রাসূলের সাহায্য নিতে গেলেন? আমি বললাম, তোমরা কি জান সে কে? তিনি হলেন আবু বকর সিদ্দীক। তিনি হিজরতের সময় গর্তে দু’জনের একজন ছিলেন। তিনি মুসলমানদের মুরব্বী। তোমরা খবরদার তাঁর বিরুদ্ধে আমাকে সহযোগিতা করবে না। এরপর আমি রাসূল-এর নিকট এসে ঘটনা বর্ণনা করলাম।
তিনি আমার দিকে মাথা তুলে তাকালেন এবং বললেন, হে রাবিয়া! তোমার এবং আবু বকরের কী হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ রকম এ রকম আমরা কথা বলছিলাম। এক পর্যায়ে তিনি একটি কথা বলেন, যা আমি অপছন্দ করলাম। তাঁরপর তিনি আমাকে প্রতিশোধ নিতে বললেন। কিন্তু আমি অস্বীকার করলাম। তখন রাসূল বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি প্রতিশোধ নিও না, তবে তুমি এ কথা বল যে, হে আবু বকর! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিন। পরে আমি তাই বললাম। হাসান বলেন, তখন আবু বকর চন্দ্র কান্না করতে করতে চলে গেলেন।
পৃষ্ঠা:৭১
(১০৪)হে পাখি! তোমার কতইনা সৌভাগ্য:- আবু বকর এক বাগানে প্রবেশ করলেন। তখন একটি বাদবাছি (পাখি) গাছের ছায়ায় অবস্থান করছিল। এটা দেখে আবু বকর একটি দীর্ঘশ্বাস নিলেন এবং বললেন, হে পাখি! তোমার কতই না সৌভাগ্য, তুমি গাছ থেকে খাবার সংগ্রহ করছ, গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছ এবং কোন হিসাব ছাড়াই হবে তোমার শেষ পরিণতি। হায় আফসোস! আবু বকর যদি তোমার মতো হতো। (মুস্তাদরাকে হাকীম, ১০৫)
(১০৫)হে আল্লাহর রাসূল! আমি আর আমার মাল সবই আপনার জন্য:- কোন একদিন রাসূল বললেন, আবু বকর -এর সম্পদ আমার যত উপকার করেছে অন্য কারো সম্পদ তা করেনি। একথা শুনে আবু বকর টু কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এবং আমার সম্পদ তো আপনার জন্যই। আর রাসূল তাঁর নিজের মাল যেভাবে ব্যবহার করতেন আবু বকর করতেন। (সীরাহ ওয়া মানাকীবে আবু বকর, পৃঃ ১৮৯) এর মালও সেভাবে ব্যবহার
(১০৬)ইসলাম গ্রহণের দিন আবু বকরের সম্পদ:- আবু বকর যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর বাড়িতে চল্লিশ হাজার দিরহাম ছিল। কিন্তু যখন তিনি মদীনার দিকে হিজরত করেন, তখন তাঁর সম্পদ ছিল মাত্র পাঁচ হাজার দিরহাম। তাঁর সমুদয় সম্পদ তিনি দাস মুক্তি এবং ইসলামের সাহায্যে ব্যয় করেন।
(ইবনে আসাকীর ফী তারিখে দিমাশক, ৩০/৬৮)
পৃষ্ঠা:৭২
(১০৭) আমরা তাকে সংরক্ষণ করি, তাঁর সন্তানের দেখাশুনা করার জন্য:- আবু বকর সিদ্দীক বলেন, আমি আবু কুহাফাকে সাথে নিয়ে নবী এর নিকট গেলাম। তখন নবী বললেন, তুমি তো বৃদ্ধ লোকটিকেও নিয়ে এসেছ, তাকে রেখে আসনি। তখন আবু বকর বললেন, আপনার নিকট আসার ক্ষেত্রে তিনিই বেশি হকদার। তিনি বললেন, আমরা তাঁর সংরক্ষণ করি, তাঁর সন্তানদের হেফাযতের জন্য। (বাযযার, ১/১৫৬)
(১০৮)আবু বকর (রা) যেভাবে বিচার করতেন:- আবু বকর-এর নিকট যখন কোন বিচার আসত, তখন তিনি আল্লাহর কিতাবের দিকে নযর দিতেন। যদি সেখানে ফায়সালা পেয়ে যেতেন, তবে সেভাবেই ফায়সালা দিতেন। আর যদি কুরআনে সেই ফায়সালা না পেতেন, তবে রাসূল-এর সুন্নাতের দিকে দৃষ্টি দিতেন। রাসূল এর সুন্নতে তা পাওয়া গেলে তিনি সেভাবেই সমাধা করতেন। আর যদি রাসূল-এর সুন্নাতে তা পাওয়া না যেত তবে তিনি বের হয়ে বলতেন, আমার কাছে এরকম এরকম বিচার এসেছে।
এ ব্যাপারে রাসূল কী ফায়সালা দিয়েছেন তোমার মধ্যে কারো কি জানা আছে। তখন কোন কোন সময় কিছু কিছু লোক আসত এবং রাসূল ফায়সালা শুনিয়ে দিত। তখন আবু বকর বলতেন, সকল প্রশংসা ঐ সত্ত্বার যিনি আমাদের মধ্যে এমন লোক রেখেছেন, যারা নবীর কথা স্মরণ রেখেছে। যদি এক্ষেত্রেও তিনি ব্যর্থ হতেন, তখন গণ্যমান্য লোকদেরকে নিয়ে ফায়সালা করতেন। (সীরাহ ওয়া মানাকীবে আবু বকর, ১৯৭)
পৃষ্ঠা:৭৩
(১০৯)স্বপ্নের তাবীর সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী:- আবু বকর সিদ্দীক কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম বংশের লোক ছিলেন। তাছাড়া তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে অত্যধিক জ্ঞান রাখতেন। এমনকি তিনি রাসূল-এর সময়েও স্বপ্নের তাবির করতেন। মুহাম্মদ ইবনে সীরিন যিনি ছিলেন সর্বসম্মতিক্রমে স্বপ্নের ব্যাখ্যায় অগ্রগণ্য, তিনি বলেন, নবীএর পরে এই উম্মতের সবচেয়ে অধিক স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারী হলেন আবু বকর। (ইবনে সা’য়াদ)
(১১০)আবু বকরের রাগ দমন:- আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আবু বকর টু-কে গালি দিচ্ছিল। তখন নবীও বসা ছিলেন। নবী অবাক হয়ে মুচকি হাসছিলেন। যখন লোকটি অধিক গালি দিতে লাগল তখন আবু বকর তাঁর কিছু কথার জবাব দিলেন। এ কারণে নবী রাগান্বিত হলেন এবং সে স্থান থেকে চলে গেলেন। এরপর আবু বকর ভূদ্র তাঁর সাথে সাক্ষাত করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল লোকটি আমাকে গালী দিচ্ছিল আর আপনি বসাছিলেন। যখন আমি উত্তর দিলাম তখন আপনি রাগ করে চলে আসলেন। এ কথা শুনে রাসূল বললেন, যতক্ষণ তুমি জবাব দাওনি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা তাঁর জবাব দিয়েছে, আর যখন তুমি জবাব দিতে শুরু করলে তখন শয়তান এসে গেল। আর আমি শয়তানের সাথে বসে থাকতে চাইনি।
(আহমদ, সীলসীলাতুস সহীহা লিল আলবানী, ২২৩১)
(১১১)স্বপ্নের ব্যাখ্যায় আবু বকর (রা):- ইবনে ‘আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ এর নিকট এসে বলল, আমি স্বপ্নে একটি ছাতা দেখেছি। উক্ত ছাতা থেকে ঘি ও মধু ঝরে ঝরে পড়ছিল। লোকেরা ঐগুলো তুলে নিচ্ছিল।
পৃষ্ঠা:৭৪
কেউ বেশি সংগ্রহ করছিল, কেউ বা কম। আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত ঝুলন্ত রশিও আমি স্বপ্নে দেখেছি। আমি দেখলাম, আপনি তা ধরলেন এবং উঠে গেলেন। আপনার পরে আরেকজন ধরল, সে-ও উঠে গেল। তাঁরপর আরেকজন ধরল, সে-ও উঠে গেল। তাঁরপর অন্য একজন ধরলে রশিটি ছিঁড়ে গেল। পুনরায় তা জোড়া লেগে গেল। আবু বক্ক (রা) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আমাকে এ স্বপ্নের তা’বীর করার অনুমতি দিন।
নবী বললেন, তা’বীর কর। আবূ বক্র (রা) বললেন, ছাতা হলো ইসলাম। ছাতা থেকে যে ঘি ও মধু ঝরে ঝরে পড়ছে তা হলো কুরআনের সুমিষ্টতা বা মাধুর্য। মানুষ তা থেকে কম-বেশি গ্রহণ করছে। আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত ঝুলন্ত রশি হলো, ঐ মহাসত্য যার উপর আপনি রয়েছেন। আপনি তা ধরবেন, আল্লাহ আপনাকে উচ্চে আরোহণ করাবেন। আপনার পর তা আরেকজন ধরবে ও আরোহণ করবে। তাঁরপর আরেকজন ধরবে ও আরোহণ করবে। তাঁর সাহায্যে সে আরোহণ করবে। আপনার প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, হে আল্লাহর রাসূল! বলুন, আমি কি সঠিক বলেছি না ভুল? নবী বললেন, কিছু তো ঠিক বলেছ আর কিছু ভুল বলেছ। আবু বক্র বললেন, আল্লাহ্র কসম! আপনি আমায় বলুন, আমি কোথায় ভুল করেছি, নবী বললেন, কসম করো না। (বুখারী, মুসলিম)
(১১২)আল্লাহ তোমাকে বড় সন্তুষ্টি দান করেছেন:- আবদুল কায়েস এর প্রতিনিধি দল মদীনায় আগমণ করল এবং তাঁরা নবী -এর পাশে জড়ো হলো। তখন তাদের এক ব্যক্তি দাঁড়াল এবং কথা বলল। কথার মধ্যে সে কিছু বাজে কথাও বলে ফেলল। তখন নবী আবু বকর গুদ্র-এর দিকে তাকালেন এবং অবাক হয়ে বললেন, হে আবু বকর! ঐ লোকটি কী বলছে তুমি কি শুনতে পেয়েছ? আবু বকর বললেন, হ্যাঁ! শুনতে পেয়েছি। তখন নবী বললেন, তুমি তাঁর উত্তর দাও। তখন আবু বকর ঐ লোকটির কথার সর্বোত্তম জবাব দিলেন। তখন রাসূল এর চেহারায় উজ্জ্বল ভাব ও মুচকী হাসি প্রকাশ পেল।
পৃষ্ঠা:৭৫
তিনি বললেন, হে আবু বকর। আল্লাহ তোমাকে সবচেয়ে বড় সন্তুষ্টি দান করুন।
তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ রাসূল! বড় সন্তুষ্টি কী? তখন নবী বললেন, আল্লাহ তায়ালা সাধারণভাবে তাঁর সকল বান্দাদের নিকট তাঁর জ্যোতী প্রকাশ করবেন। আর আবু বকরের জন্য বিশেষভাবে তাঁর জ্যোতী প্রকাশ করবেন। (মুস্তাদরাকে হাকীম, ৪/৭৮)
(১১৩)সম্মানী লোকেরাই সম্মানী লোকদেরকে চিনতে পারে:- আলী ইবনে আবু তালিব গুদ্র সাহাবাদের মজলিসে আগমন করলেন। তখন সাহাবীরা নবী-এর পাশে বসা ছিলেন। তিনি কোথায় বসবেন সেটা নিয়ে ভাবছিলেন। আর নবী করে দেয়? এরপর আবু বকর লক্ষ্য করছিলেন যে, কে আলীকে জায়গা দাঁড়ালেন এবং তাঁর স্থান থেকে সরলেন এবং বললেন, হে আবুল হাসান! এখানে বসুন তখন তিনি তাদের দুই জনের মাঝখানে বসলেন এবং বললেন, হে আবু বকর! সম্মানী লোকেরাই সম্মানী লোকদেরকে চিনতে পারে। (আল বেদায়াহ ওয়ান নেহায়াহ-৭/৩৫৯)
(১১৪)তুমি যদি সতর্ক করতে তবে অমনোযোগী পেতে না:- আনাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর উন্দ্র লোকদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। তিনি দু’রাকাতেই সূরা বাকারা তেলাওয়াত করলেন। অতঃপর যখন নামায শেষ করলেন তখন ওমর তাকে বললেন, হে রাসূলের খলিফা! আপনি যখন নামায শেষ করেছেন তখন আমরা দেখলাম যে, সূর্য উদিত হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, তুমি যদি আমাকে সতর্ক করতে তবে আমাদেরকে অমনোযোগী পেতে না। (রিয়াদুন নাদরাহু- ১/১২৯)
পৃষ্ঠা ৭৬ থেকে ৯০
পৃষ্ঠা:৭৬
(১১৫)তাকওয়া বজায় রাখার জন্য বমি করলেন:- আয়েশা টুদ্র থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বক্স-এর একটা গোলাম ছিল, যে তাঁকে কিছু কর প্রদান করত। আর আবূ বক্র তাঁর কর হতে খাবার গ্রহণ করতেন। একদা এ গোলাম কিছু জিনিস নিয়ে এল এবং আবূ বক্স তা থেকে কিছু আহার করলেন। তখন গোলামটি তাঁকে বলল, আপনি কি জানেন, এটা কি (যা আপনি খেলেন)? আবূ বক্র বললেন, সেটা কী ছিল? সে গোলাম বলল, জাহেলী যুগে আমি এক লোকের ভবিষ্যৎ গণনা করেছিলাম। মূলত আমি ভাগ্য গুণতে জানতাম না; বরং তাকে আমি প্রতারিত করেছিলাম মাত্র। আজ সে লোকটি আমার সঙ্গে দেখা করে আমাকে ঐ কাজের মূল্য প্রদান করল। এটাই সে বস্তু যা থেকে আপনি খেলেন। এ কথা শুনে আবূ বক্স ট্রেনিজের হাতখানা মুখে প্রবেশ করিয়ে বমি করে পেটের সবকিছু বের করে দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)
(১১৬)কারো কাছে কিছু চাওয়া থেকে বিরত থাকতেন:- আবু মুলাইকা বলেন, আবু বকর এর হাত থেকে কোন সময় উট হাঁকানো বেত পড়ে যেত। তখন তিনি নিজেই উটের উপর থেকে নেমে তা উঠাতেন। লোকজন বলত, আপনি আমাদেরকে বললে আমরা তো তা উঠিয়ে দিতে পারতাম। তখন তিনি বলতেন, নবী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন কারো কাছে কোন কিছু প্রার্থনা না করি। (আহমদ)
(১১৭)আবু বকরের মৃত্যুর পর ইবনে ওমর দুঃখ প্রকাশ করতেন:- আবদুল্লাহ ইবনে ওমর যখন সফর থেকে আগমন করতেন তখন ঘরে প্রবেশ করার আগে মসজিদে যেতেন এবং দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। তাঁরপর নবীএর কবরে গিয়ে সালাম জানাতেন। তাঁরপর যাথাক্রমে আবু বকর ও ওমর টু-এর কবরে গিয়ে সালাম জানাতেন। তিনি
পৃষ্ঠা:৭৭
যখন ওমর-এর কবরে গিয়ে সালাম জানাতেন, তখন বলতেন, আপনি যদি আমার পিতা না হতেন তবে আপনার পূবে আমি আবু বকর -কেই সালাম জানাতাম। (রিয়াদুন নাদরাহ- ১/১৪১)
(১১৮)বিষয়টি বুঝতে পেরে আবু বকর কান্না করলেন:- রাসূলুল্লাহ মৃত্যু রোগে আক্রান্ত হয়ে একদিন মিম্বারে উপবিষ্ট হয়ে খুত্বা দিতে গিয়ে বললেন, আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও আল্লাহর কাছে যেসব নি’আমাত রয়েছে এ দু’য়র মাঝে একটাকে পছন্দ করে নেয়ার অধিকার দিয়েছিলেন। সে বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তাই বেছে নিয়েছে। এ কথা শুনে আবূ বক্স টু কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, আমার বাপ-মাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। (রাবী বলেন) আবু বক্সের কথায় আমরা অবাক হলাম। লোকেরা বলল, এ বৃদ্ধ লোকটার অবস্থা দেখ তো। রাসূলুল্লাহ কোন এক বান্দায় ব্যাপারে বলছেন যে, আল্লাহ তাঁকে দুনিয়ার চাকচিক্য ও তাঁর কাছে যেসব নি’আমাত রয়েছে তাঁর মাঝে একটাকে বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছেন। আর বৃদ্ধ বলছেন, আমার বাবা-মাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। মূলত সে অধিকার প্রাপ্ত বান্দা ছিলেন রাসূলুল্লাহ।
আর আবূ বক্স ছিলেন এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ লোক। রাসূলুল্লাহ বলেছেন, সাহচর্য ও আর্থিক দিক থেকে আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছে আবূ বক্র। আমার উম্মাতের মধ্যে কাউকেও যদি আমি অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তবে অবশ্যই আবু বক্রকেই গ্রহণ করতাম। তবে ইসলামী সম্পর্কই যথেষ্ট। তাঁরপর নবী বললেন, আবু বক্সের ঘরের দিকের দরজা ছাড়া মসজিদের আর কোন দরজা খোলা থাকবে না। (বুখারী, ৩৬৫৪)
পৃষ্ঠা:৭৮
মুসলিম জাহানের খলিফা আবু বকর
(১১৯)আবু বকর মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন:- হযরত আবু বকর যখন নবী এর মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পেলেন, তখন তিনি মদীনার বাইরে সুনহ নামক স্থানে নিজ বাড়িতে ছিলেন। মৃত্যুর সংবাদ শ্রবণ করা মাত্রই তিনি মদীনায় আগমন করে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করেন। তিনি কারো সাথে কোন কথা না বলে আয়েশা -এব নিকট গমন করলেন। অতঃপর তিনি রাসূল-এর দিকে অগ্রসর হলেন। আর রাসূলকে হিবারা কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখা হয়েছিল। তিনি রাসূল-এর চেহারা থেকে কাপড় সরালেন। এরপর তাঁর দিকে কিছুটা ঝুঁকে চুমু খেয়ে কেঁদে বললেন, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ হোক। আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে দু’বার মৃত্যু দিবেন না। আর যে মৃত্যু আপনার উপর অবধারিত ছিল, তা ঘটে গেছে।
(বুখারী-৪৪৫২)
(১২০)আবু বকর নবী এর মৃত্যুবরণের ঘোষণা দেন:- আবু বকর নবী এর মৃত্যুর ব্যাপার নিশ্চিত হওয়ার পর মানুষের মাঝে ভাষণ দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন। সর্বপ্রথম তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করলেন। এরপর জোরালো কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, যে মুহাম্মাদের ইবাদাত করতো, সে যেন জেনে নেয় যে, নিশ্চয় তিনি মারা গেছেন। আর যে আল্লাহর ইবাদাত করত, সে আল্লাহ তো চিরঞ্জীব। কখনো তিনি মৃত্যুবরণ করবেন না। অতঃপর তিনি একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন।
পৃষ্ঠা:৭৯
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ
الشَّاكِرِينَ
অর্থাৎ মুহাম্মাদ একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নন। তাঁর পূর্বে অনেক রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। সুতরাং তিনি যদি মারা যান কিংবা নিহত হন, তাহলে কি তোমরা পশ্চাতে ফিরে যাবে? আর যে পশ্চাতে ফিরে যাবে, সে আল্লাহর কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আর আল্লাহ তায়ালা কৃতজ্ঞদের অচিরেই বিনিময় প্রদান করবেন।
(সূরা আলে ইমরান: আয়াত- ১৪৪)
উপরিউক্ত মর্মস্পর্শী ভাষণ শুনে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম কাঁদতে লাগলেন।
(১২১)আবু বকর নবীএর দাফনের স্থান নির্ধারণ করেন:- নবী-কে কোথায় দাফন করা হবে এ নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়লেন। ইতিমধ্যে আবু বকর সিদ্দীক হুল্লে বের হয়ে এসে বললেন, আমি নবী-কে বলতে শুনেছি যে, আমরা নবীগণ যেখানে মৃত্যুবরণ করি, সেখানেই আমাদের দাফন করতে হয়। তাই নবী কে আয়েশা এর কামরায় দাফন করা হয়। (বুখারী- ৩৬৬৮)
(১২২)বনু সায়েদা গোত্রের মিলনায়তনে সামাবেশ:- নবী-এর ইন্তেকালের পর আনসারী সাহাবীগণ বনু সায়েদা গোত্রের মিলনায়তনে সমবেত হলো। অতঃপর আবু বকর, ওমর এবং আবু উবায়দা যখন এ ব্যাপারে অবগত হলেন, তখন তাঁরা সেখানে উপস্থিত হন। আনসারী সাহাবীরা দাবি করে বসলেন যে, আমির দু’জন হবে। আমাদের থেকে একজন এবং আপনাদের থেকে একজন। হযরত ওমর বলে উঠলেন, মুসলিমদের আমীর দুই জন হতে পারে না। অতঃপর তিনি
পৃষ্ঠা:৮০
আবু বকর-এর নিকটবর্তী হয়ে হাত ধরে চিৎকার করে সবার সামনে তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন:
১. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন যে, যখন নবী তাঁর সাথীকে বললেন- সেই সাথী কে ছিল তোমরা বলতো? সমস্বরে সবাই বলে উঠল- তিনি আবু বকর ।
২. এরপর হযরত ওমর বলেন, যখন তাঁরা দু’জন বাক্যে বলে উঠল- নবী প্রশ্ন করলেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা গুহায় ছিল। সেই দু’জন কারা? সবাই এক এবং আবু বকর।
৩. অতঃপর হযরত ওমর আবার প্রশ্ন করলেন, রাসূল বলেছিলেন, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। এর দ্বারা কারা উদ্দেশ্য? উপস্থিত সবাই উত্তরে বললেন, নবী এবং আবু বকর।
এরপর হযরত ওমর টু সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন যে, আবু বকরের এমন মহৎ কৃতিত্ব ও মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও কে তাঁর আগে আমীর হতে চায়? তাঁরা বলল, আমরা এ ধরনের দাবি পেশ করা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। এরপর ওমর আবু বকর এর দিকে অগ্রসর হলেন এবং বললেন, আপনি হাত সম্প্রসারণ করুন আমি বাইয়াত গ্রহণ করব। এরপর তিনি বাইয়াত গ্রহণ করলেন এবং সকল লোকজনও বাইয়াত গ্রহণ করল। (হাকীম-৩/৬৭)
(১২৩)আবু বকর এর প্রথম খুতবা:- আবু বকর যখন খেলাফতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হলেন তখন তিনি জাতির উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ জোরালো ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি। তবে তোমাদের মাঝে আমি কোন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি নই। সুতরাং আমি যদি সঠিক করে থাকি, তাহলে তোমরা আমাকে সহযোগিতা করবে। আর যদি ভুল করে থাকি, তাহলে শুধরিয়ে দিবে। সত্যবাদিতা আমানত, মিথ্যাবাদিতা খেয়ানত। তোমাদের মধ্যে থেকে দুর্বল ব্যক্তি আমার কাছে সবল। সুতরাং আমি তাঁর হক আদায় করতে বাধ্য থাকব। পক্ষান্তরে
পৃষ্ঠা:৮১
তোমাদের সবল ব্যক্তি আমার কাছে দুর্বল। সুতরাং তাঁর থেকে যথাযথ হক আদায়ে আমি সামর্থ্য থাকব। ইনশা আল্লাহ।
যে জাতি! আল্লাহর রাহে জিহাদ করা ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন। যে জাতির মাঝে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর ব্যাপকভাবে বালা-মসিবত নাযিল করবেন। আমি যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা মেনে চলব, ততক্ষণ তোমরা আমার কথা মেনে চলবে। আর যদি আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা অমান্য করি, তাহলে তোমরা আমার কথা মনবে না এবং এ ক্ষেত্রে আমার কোন প্রকার আনুগত্য করা যাবে না। আর তোমরা যদি সালাতের ব্যাপারে সচেষ্ট থাক, তাহলে আল্লাহ তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করবেন। (বেদায়াহ ওয়ান নেহায়াহ-৬/৩০৬)
(১২৪)আবু বকর মুসলমানদের মাঝে অনুদান বিতরণ করেন:- আবু বকর স্বাধীন-দাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার মাঝে সমভাবে রাষ্ট্রীয় অনুদান বিতরণ করতেন। ফলে একদা কতিপয় মুসলমান এসে আপত্তির ছলে বলল, ওহে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আপনি তো সাধারণ মানুষ অগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী, এবং মর্যাদাশীল অন্যান্য মানুষের অনুদান সমান করে ফেলেছেন। আমরা মনে করি, যদি আপনি অগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী, অধিক মর্যাদাশীলদের এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতেন, তাহলে ভালো হতো। তখন তিনি বললেন, তোমরা যা উল্লেখ করেছ, আমি এ ব্যাপারে ভালো করে জানি। এ সকল মহাকর্মের বিনিময় আল্লাহর নিকট রয়েছে। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই এর উত্তম প্রতিদান দান করবেন। আর এই অনুদান তো জীবিকা নির্বাহের ভাতা মাত্র। সুতরাং অগ্রাধিকার দেয়ার পরিবর্তে সমান করে বণ্টন করাই শ্রেয়।
(আবু বকর লি আলী আত তানতাবী, পৃঃ ১৮৮)
পৃষ্ঠা:৮২
(১২৫)আবু বকর এর সাথে ওমরা এর বিতর্ক:- হযরত ওমর আবু বকর সিদ্দীক -এর সাথে মুসলমানদের মাঝে সমানভাবে রাষ্ট্রীয় ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, আপনি কি দু’বার হিজরতকারী ও উভয় কিবলার অভিমুখী হয়ে সালাত আদায়কারীদের মাঝে এবং মক্কা বিজয়ের বছর ইসলাম গ্রহণকারীর মাঝে ভাতার ক্ষেত্রে সমান করে ফেলবেন? এ কথা শুনে আবু বকর বললেন, তারা তো আল্লাহকে সন্তুষ্টি করনার্থে আমল করেছে। সুতরাং তাদের আমলের প্রতিদান ও পুরস্কার আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আর দুনিয়া তো আরোহীর পাথেয় স্বরূপ। তাই আমি এই ভাতা সবাইকে সমপরিমাণ প্রদান করছি। (আবু বকর সিদ্দীক লিস সালাবী, পৃঃ ১৮৫)
(১২৬)তিনি বিধবাদের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন:- হযরত আবু বকর সিদ্দীক ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে উট, ঘোড়া, অস্ত্র ইত্যাদি ক্রয় করে আল্লাহর রাহে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে প্রদান করতেন। এক বছর শীতকালে গ্রাম থেকে প্রচুর পরিমাণ কাপড় খরিদ করে মদীনার বিধবাদের মাঝে বিতরণ করেন। আর তিনি খেলাফতে থাকা অবস্থায় নিজস্ব সম্পদ থেকে জন-কল্যাণে, জিহাদে এবং অন্যান্য সৎকাজে যা ব্যয় করেছেন তা দুই লক্ষে পৌঁছে। (তারীখুদ দা’ওয়াহ ইলাল ইসলাম, পৃঃ ২৫৮)
(১২৭)আবু বকর খলিফা হয়েও ব্যবসা করতে যান:- আমরা জানি যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সকালে ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে যেতেন। অতঃপর যখন তিনি মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত হন, তখনও তিনি ব্যবসার কাপড় কাঁধে নিয়ে বাজারে যান। পথিমধ্যে ওমর এবং আবু উবায়দা উল্ল এর সাথে সাক্ষাত হলে তাঁরা উভয়ে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন, বাজারে যাচ্ছি। তাঁরা
পৃষ্ঠা:৮৩
পুণরায় জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বাজারে যাবেন? অথচ মুসলমানদের যাবতীয় দায়িত্ব আপনার উপর অর্পিত হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, তাহলে আমার পরিবারের খাদ্যের ব্যবস্থা কোথা থেকে করব? তখন তাঁরা বললেন, আপনি আমাদের সাথে চলুন। আপনার জন্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কিছু সম্পদ বরাদ্দ করে দিব। সুতরাং তিনি তাদের সাথে গেলেন। ফলে বিশিষ্ট সাহাবীগণ তাঁর জীবিকা নির্বাহের জন্যে প্রত্যেক দিন একটি ছাগলের অর্ধেক মূল্য ধার্য করে দেন। (রিয়াযুন নাবরাহ, পূঃ ১৯১)
(১২৮)বৃদ্ধার সেবায় মুসলিম বিশ্বের শাসনকর্তা:- হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব মদীনার পার্শ্ববর্তী মহল্লোর এক অন্ধ বৃদ্ধা মহিলাকে রাতের বেলায় গিয়ে দেখাশুনা করতেন। তিনি সেই বৃদ্ধার পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে দেয়ার ইচ্ছা করতেন। তিনি যখন সেই উদ্দেশ্যে আসেন, তখন দেখা যায় যে, কে জানি অতি গোপনে তাঁর পূর্বেই সেই কাজ সম্পাদন করে চলে যান। এভাবে অনেক দিন সর্বাত্মক চেষ্টা করা সত্ত্বেও সেই বৃদ্ধার সেবা করার সুযোগ তিনি পাননি। পরিশেষে হযরত ওমর ওঁৎ পেতে বসে রইলেন। সেই মহান ব্যক্তিটির পরিচয় জানার জন্যে। হঠাৎ দেখতে পান যে, তিনি হচ্ছেন গোটা মুসিলম বিশ্বের শাসনকর্তা আবু বকর সিদ্দীক । (আবু বকর লি আলী আত তানতাবী, পূঃ ২৯)
(১২৯)উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাৎ:- রাসূল এর ওফাতের পর আবু বকর সিদ্দীক ট্রে ওমরাষ্ট্রকে বললেন, চল উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাত করতে যাই। কেননা, রাসূল তাঁর সাথে সাক্ষাত করে খোঁজ-খবর নিতেন। তাঁরা উম্মে আইমান নাম্মী বৃদ্ধার কাছে পৌঁছলে তিনি কেঁদে উঠেন। তাঁরা উভয়ে শান্তনা দেয়ার উদ্দেশ্যে বললেন, আপনি কাঁদছেন কেন? রাসূল এর জন্যে আল্লাহর নিকট যা আছে তা অধিক শ্রেয়। তখন বৃদ্ধা উত্তর দিল। আমি এ কথা জানার জন্য কাঁদছি না। আমি কাঁদছি এ জন্য যে, আকাশের ওহী বন্ধ হয়ে গেছে।
পৃষ্ঠা:৮৪
উক্ত মর্মস্পর্শী কথা শুনে তাঁরাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। নিজেদেরকে কিছুতেই সংবরণ করতে পারেননি। (মুসলিম- ২৪৫৪)
(১৩০)কথা না বলার মানতকারী মহিলার প্রতি আবু বকর এর নসীহত:- হযরত আবু বকর যয়নব নাম্মী কট্টরপন্থী এক মহিলার নিকটে গিয়ে দেখলেন যে, সে কারো সাথে কথা বলছে না। আবু বকর জিজ্ঞাসা করলেন, এই মহিলা কথা বলছে না কেন? উপস্থিত লোকেরা উত্তর দিল যে, সে কারো সাথে কথা না বলার মানত করেছে। এটা শুনে আবু বকর বললেন, কথা বর্জন করা অবৈধ। এমনটা জাহেলী যুগের কাজ। উক্ত নসীহত শুনে মহিলা মানত ভঙ্গ করে কথা বলল এবং জিজ্ঞেস করল যে, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি একজন মুহাজির। মহিলা আবার প্রশ্ন করল, আপনি কোন গোত্রের মুহাজির?
তিনি বললেন, কুরাইশ গোত্রের। এরপর মহিলা আবার প্রশ্ন করে বসল, কুরাইশ গোত্রের কে আপনি? তিনি কিছুটা বিরক্তির স্বরে বললেন, তুমি তো দেখি অধিক প্রশ্ন কর? অতঃপর সেই মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আল্লাহ তায়ালা জাহেলিয়াতের পর যে সত্য ও সঠিক ধর্ম দ্বীনে ইসলাম দান করলেন, এর উপর আমরা কতদিন অটল- অবিচল থাকতে পারব? তিনি উত্তরে বললেন, যতদিন তোমাদের নেতাগণ সঠিক পথ গ্রহণ করে তা গোটা রাষ্ট্রে কায়েম রাখবে। সেই মহিলা পুরনায় প্রশ্ন করল, নেতা আবার কারা? তিনি বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের মধ্যে কি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নেই? যাদের কথা জনসাধারণ মেনে চলে? মহিলা বলল, জি আছে। তখন আবু বকর সিদ্দীক বললেন, এরাই হচ্ছেন নেতা। (বুখারী- ৩৮৩৪)
পৃষ্ঠা:৮৫
(১৩১)এত মানুষ ব্যতিরেখে কেবলমাত্র আমাকেই সালাম প্রদান করলে?:- একদা আবু বকর তাঁর সাথীদের নিয়ে বসলেন। তখন তিনি মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি এসে এককভাবে শুধুমাত্র তাঁকে (আবু বকর-কে) সালাম দিয়ে আল্লাহর রাসূল-এর খলিফা বলে সম্বোধন করে কিছু বলতে চাইল। তিনি বললেন, এত মানুষ ব্যতিরেখে কেবল আমাকে সালাম করলে? (আবু বকর সিদ্দীক লিস সালাবী, পৃঃ ১৯১)
(১৩২)পিতার সাথে আবু বকরের সদাচরণ:- আবু বকর সিদ্দীক টুদ্র ছিলেন পিতার বাধ্যগত সন্তান। তিনি তাঁর সাথে সদাচারণ করতেন। তিনি দ্বাদশ হিজরীর রজব মাসে উমরা পালনার্থে মদীনা থেকে পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশ্যে একদল যুবক অনুচর সাথে নিয়ে রওয়ানা করেন। তথায় তিনি সকালে পৌঁছেন। অতঃপর তিনি নিজেদের বাড়িতে যান। তখন তাঁর পিতা আবু কুহাফা বাড়ির দরজার সামনে উপবিষ্ট ছিলেন। তাকে লোকেরা বলল, এই তো আপনার ছেলে এসেছে। তিনি তৎক্ষণাত আনন্দের সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন। অপরদিকে আবু বকর অতি তাড়াতাড়ি তাঁর উটকে বসিয়ে নামলেন। সর্বপ্রথম তিনি পিতার সাথে দেখা করে খোঁজ খবর নিলেন। এরপর আশ পাশের লোকজন তাঁর সাথে সালাম বিনিময় করেন। আর এই লোক সমাগমের মাঝে পিতা বলে উঠলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে এদের শাসনকর্তা বানিয়েছেন। সুতরাং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো। আবু বকর বললেন, আব্বাজান! আমার উপর অত্যন্ত কঠিন দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আল্লাহর বিশেষ রহমত আর সাহায্য ব্যতীত আমার পক্ষে তা আঞ্জাম দেয়া সম্ভব নয়।
(সিফাতুস সাফওয়াহ, ১/১৫৮)
পৃষ্ঠা:৮৬
(১৩৩)আবু বকর সিদ্দীক দাদীর মিরাস সম্পর্কে প্রশ্ন করেন:- একজন দাদী আবু বকর সিদ্দীক -এর নিকট এসে তাঁর মিরাসের দাবি উত্থাপন করলে তিনি বলেন, আল্লাহর কিতাবে আপনার জন্য মিরাছের কোন অংশ নির্ধারিত নেই। তাছাড়া আমার জানা মতে, রাসূল আপনার জন্য কোন অংশ ধার্য করেননি। অতঃপর তিনি উপস্থিত জনতাকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে মুগীরা দাঁড়িয়ে বলেন, আমি দেখতে পেয়েছি যে, রাসূল তাকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ দিয়েছেন। এরপর আবু বকরা বললেন, তোমার সাথে আর কেউ ছিল কি? তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিলে আবু বকর সেই দাদীকে তাঁর প্রাপ্য অধিকার প্রদান করেন। (তাযকিরাতুল হুফ্ফায় লিষ যাহাবী- ১/২০)
(১৩৪)ফাতেমা এর মীরাসের দাবি নিয়ে আবু বকর সিদ্দীক এর নিকট আগমন:- আয়েশা (রা) বলেন, ফাতেমা ও আব্বাস আবু বকর-এর নিকট এসে রাসূল-এর পক্ষ থেকে তাদের মীরাসের দাবি উত্থাপন করেন। তখন তাঁরা তাদের ফিদাক এবং তাঁর খাইবার ভূমির অংশের দাবি পেশ করেন। আবু বকর এদেরকে বললেন, আমি রসূল-কে বলতে শুনেছি যে, আমরা নবীগণের পরিত্যাজ্য সম্পদের উত্তরাধীকার কেউ হতে পারবে না। আমরা যা রেখে যাই, তা সদকার মাল হিসেবে গণ্য হবে। আর মুহাম্মাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করবে। (বুখারী- ৬৭২৬)
(১৩৫)আবু বকর ফাতেমা-কে সন্তুষ্ট করেন:- হযরত আবু বকর ফাতেমা টুদ্র-কে দেখতে গেলে আলী তাকে বললেন, আবু বকর তোমার নিকট আগমনের অনুমতি চাচ্ছে। তখন
পৃষ্ঠা:৮৭
ফাতেমা আলী-কে বললেন, আপনি কি চান যে, আমি তাকে অনুমতি প্রদান করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সুতরাং ফাতেমা আবু বকর -কে অনুমতি দেন। ফলে তিনি তাঁর কাছে গমন করে বিভিন্নভাবে সন্তুষ্ট করাতে চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ফাতেমা সন্তুষ্ট হয়ে যান।
(আবাত্ত্বীলু ইয়াজীবু আন তামহীয়া মিনাত তারীখ, পৃঃ ১০৯)
(১৩৬)আবু বকর ফাতেমা -এর জানাযায় ইমামতি করেন:- একাদশ হিজরীর রমযান মাসের তিন তারিখ মঙ্গলবার রাতে মাগরিব ও এশার সালাতের মাঝামাঝি সময়ে ফাতেমা টু ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে আবু বকর, উমর, উসমান, যুবায়ের, আব্দুর রহমান বিন আওফ উপস্থিত হন। অতঃপর জানাযার সালাত পড়ার উদ্দেশ্যে লাশ রাখা হলে আলী বলেন, আবু বকর! আপনি ইমামতি করুন। আবু বকর বললেন, হাসানের বাবা! আপনি তো উপস্থিত আছেনই? এরপর আলী স্র পুনরায় বললেন, হ্যাঁ। তবুও আপনাকেই সামনে অগ্রসর হতে হবে। আপনি ছাড়া ফাতেমার নামাযের যানাযার ইমামতি করা সমীচীন হবে না। সুতরাং আবু বকর ট্রেকেই ইমামতি করতে হয়। নামায শেষে রাতেই তাকে দাফন করা হয়। (আবু বকর সিদ্দীক লিস সালাবী, পূঃ ২১১)
(১৩৭)রাসূল তাকে যুদ্ধের সেনাপতি বানিয়েছেন আর তুমি বলছ তাকে বরখাস্ত করতে?:- আনসারী সাহাবীগণ মুসলিম বাহিনীর সেনাপতির দায়িত্ব উসামার পরিবর্তে তাঁর চেয়ে অধিক বয়সী কাউকে দেয়ার দাবি জানিয়ে ওমর পুত্র ইবনে খাত্তাবের নিকট দূত প্রেরণ করেন এ মর্মে যে, তিনি যেন আবু বকর সিদ্দীক -এর সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন। সুতরাং ওমর আবু
পৃষ্ঠা:৮৮
বকর-এর কাছে উক্ত দাবি উত্থাপন করলেন। ফলে আবু বকর বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন। এমনকি ওমর প্লে-এর দাড়ি ধরে বললেন, উমর! তোমার এত বড় স্পর্ধা? রাসূল তাকে যুদ্ধের সেনাপতি বানিয়েছেন, আর তুমি আমাকে বলছ তাকে বরখাস্ত করতে? অতঃপর হযরত ওমর আনসারদের নিকটে গেলে তাঁরা বলল, উমর! তুমি কী করেছ? তখন ওমর ট্রেবললেন, তোমরা উসামার নেতৃত্ব মেনে নাও। আর শোনো! তোমাদের কারণে রাসূল এর খলিফা আবু বকর আমার প্রতি রাগ করেছেন।
(তারিখুত তাবারী- ৪৬১৪)
(১৩৮)উসামা বাহিনীকে আবু বকর-এর বিশেষ অসিয়ত:- তোমরা খিয়ানত করো না, গণীমতের মাল আত্মসাৎ করো না, গাদ্দারী করবে না, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকৃতি করো না, ফলদায়ক বৃক্ষ কর্তন করো না, বকরী, গরু, উট খাদ্যের উদ্দেশ্য ব্যতীত সেগুলো অন্যায়ভাবে জবেহ করো না। উপাসনারত ব্যক্তিদেরকে কোনরূপ উত্তোক্ত করো না। আর তোমরা অচিরেই এমন জাতির নিকট আগমন করবে যারা পাত্রে করে তোমাদের বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পরিবেশন করবে। সুতরাং তোমরা সে খাদ্য ভক্ষণের সময় বিসমিল্লাহ বলবে। আর তোমরা এমন জাতির সাথে মুকাবেলা করবে যাদের মাথার মধ্যভাগ মুণ্ডন কর আর বাকি অংশ ছেড়ে দেওয়া। সুতরাং তোমরা এদেরকে তরবারির আঘাতে পরাজিত করবে। আল্লাহর নাম নিয়ে এদেরকে কঠিনভাবে প্রতিহত করবে। (তারিখুত তাবারী-৪৬১৪)
(১৩৯)আবু বকর উসামার বাহিনীকে বিদায় দেন:- আবু বকর উসামার বাহিনীকে বিদায় দেয়ার উদ্দেশ্যে হেঁটে সামনে অগ্রসর হন। তখন তাকে উসামা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল এর খলিফা! আল্লাহর কসম, আপনি সওয়ারীতে আরোহন করবেন অন্যথায় আমি সওয়ারী থেকে নেমে যাব। একথা শুনে বললেন, আল্লাহর শপথ, তুমি নামিও না; আর আমি সওয়ারীতে আরোহনও করব না। আর
পৃষ্ঠা:৮৯
জিহাদের পথে আমার পদদ্বয় ধুলায় ধূসরিত করলে আমার কোন ক্ষতি হবে না। (তারিখুত তাবারী)
(১৪০)মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা:- রাসূল যখন ইন্তেকাল করলেন তখন আবু বকর খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে আরবদের কেউ করে মুরতাদ হয়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে ওমর মুসিলম জাহানের কেউ ইসলাম ত্যাগ ইবনে খাত্তাব আবু বকরকে বললে, কিভাবে আপনি মানুষের সাথে যুদ্ধ করবেন? অথচ রাসূল বলেছেন, আমি মানুষদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তাঁরা ৩ ০ ৩ বলবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সে কালেমা পাঠ করবে সে আমার থেকে তাঁর জান মালের নিরাপত্তা লাভ করবে। তবে ইসলামের হজ্বের বিষয়টি ভিন্ন। আর এর হিসাব আল্লাহর কাছে সমর্পিত। তখন আবু বকর বললেন, আল্লাহর শপথ! যে সালাত ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে আমি অবশ্যই তাঁর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করব। কেননা, যাকাত হলো মালের কর। আল্লাহর নামে কসম! যদি তাঁরা রাসূলুল্লাহ এর কাছে যে যাকাত দিত তা থেকে একটি উটের রশি দিতে অস্বীকার করে, তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব যতক্ষণ পর্যন্ত না তা পুণর্বহাল করতে পারি। ‘ওমর ট্রে বললে, আল্লাহর কসম! এটা আর কিছুই নয়, বরং আমি লক্ষ্য করলাম যে, আল্লাহ তা’আলা আবু বর- এর লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিক নির্দেশ দিয়েছেন সুতরাং আমি উপলব্ধি করলাম যে, তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
(১৪১)আবু বকর সিদ্দীক -এর সাহসিকতা:- আবু বকরকে বলা হলো যে, আপনার উপর যে কঠিন বিপদ নেমে এসেছে তা যদি পাহাড়ের উপর অবতরণ করত তবে সে পাহাড়কে ভেঙ্গে চুরমার করে দিত। আর যদি সমুদ্রের উপর অবতীর্ণ হত তবে সে সমুদ্রের সমস্ত পানি শুকিয়ে যেত। তথাপি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি যে, আপনি বিন্দুমাত্রও দুর্বল হননি। তখন আবু বকর বললেন, সাওর পর্বতের
পৃষ্ঠা:৯০
গুহায় রাত যাপনের পর থেকে কখনো আমার অন্তরে ভয়-ভীতি প্রবেশ করেনি। কেননা, সেখানে নবী আমাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখতে পেয়ে শান্তনা দেয়ার জন্য বলেছিলেন। হে আবু বকর! তোমার চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ, আল্লাহ তায়ালা পূর্ণাঙ্গভাবে হেফাযতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। ফলে এরপর আবু বকর ভীতসন্ত্রস্ত হননি।
(আবু বকর সিদ্দীক আফযালুস সাহাবা, পৃঃ ৬৯)
তিনি কুরআন সংকলন করেন
যায়েদ ইবনে সাবেত বলেন, আবু বকর আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, বহুসংখ্যক কুরআনের হাফিয ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছে; আর আমার ভয় হচ্ছে, কুরআনের বহুলাংশ নষ্ট হয়ে যায় কি না। এ জন্য আমি মনে করছি, আপনি কুরআন সংকলন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করবেন। আমি ‘উমরকে বললাম, আমি কেমন করে এমন কাজ করি যা রাসূলুল্লাহ করেননি। ‘ওমর তখন বললেন, আল্লাহর কসম! এটা তো সর্বোত্তম কাজ! অতঃপর ‘ওমর এ ব্যাপারে আমাকে বার বার বলতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ এ বিষয়ে আমার অন্তর খুলে দিলেন, যে বিষয়ে আল্লাহ ‘উমারের অন্তর খুলে দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে ‘ওমর যা (কল্যাণ) দেখতে পেয়েছেন আমিও তা-ই দেখতে পেলাম। (আবু বকর সিদ্দীক লিস সালাবী, পৃঃ ৩৪৩)
(১৪২)আবু বকরা যায়েদ ইবনে সাবেত-কে কুরআন সংকলনের দায়িত্ব দেন :- যায়েদ ইবনে সাবিত (রা) বলেন, আবু বক্ক (রা) আমাকে বললেন, “দেখ, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক, আমরা তোমাকে মিথ্যারোপ করি না (সত্য বলেই বিশ্বাস করি)। কেননা তুমি রাসূলুল্লাহ এর ওহী লেখে থাকতে। সুতরাং এ মহৎ কাজের আঞ্জাম তোমাকেই দিতে হবে। তুমি কুরআন যোগাড় করে নাও এবং তা সংকলিত ও সন্নিবেশিত কর। আল্লাহর কসম! একটি পাহাড় স্থানান্তর করতে যদি আমাকে বাধ্য করা
পৃষ্ঠা ৯১ থেকে ৯৬
পৃষ্ঠা:৯১
হতো, সেটা আমার নিকট এ কুরআন সংগ্রহের নির্দেশের তুলনায় অতি সহজ ও হালকা বলে মনে হতো। (বুখারী-৪৯৮৬)
(১৪৩)কোনো বাহিনী পরাজিত হবে না যাদের মধ্যে এমন সেনাপতি থাকবে:- ইরাকে অভিযান চালানোর জন্য খালেদ ইবনে ওয়ালিদ খলিফা আবু বকর এর কাছ থেকে সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। ফলে আবু বকর টুল্লকা’কা’ বিন আমর আত-তাইমীকে পাঠিয়ে সাহায্য করেন। তখন তাকে বলা হলো যে, আপনি কি এমন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছেন, যাকে তাঁর সেনাবাহিনী প্রত্যাখ্যান করেছেন কোন এক ব্যক্তির খারাপ আচরণের জন্য। তখন কা’কা’ বললেন, এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেননা, খালেদের মতো ব্যক্তিত্ব যে বাহিনীর মধ্যে থাকবে সে বাহিনী কখনো পরাজিত হতে পারে না। (তারিখুত তাবারী-৪/১৬৩)
(১৪৪)আবু বকর সিদ্দীক জনগণকে তাঁর বাইয়াত থেকে মুক্ত করে দেন :- ১৩ হিজরীর জমাদিউল উখরায় আবু বকর স্রেঅসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি তাঁর অসুস্থতা কঠিন আকার ধারণ করে। প্রতি নিয়ত তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেতেই থাকে। তাই তিনি চাইলেন যে, জনগণকে তাঁর নিকট একত্রিত করতে। ফলে সবাই তাঁর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি তা তোমরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছ। আমার মনে হয় আমি বেশি দিন বাঁচব না। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা আমার বাইয়াত থেকে তোমাদের মুক্ত করে দিয়েছেন। আমার দায়বদ্ধতা থেকে তোমরা সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে গেছ। এমনকি তোমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই তোমাদের পছন্দের ব্যক্তিকে তোমাদের জন্য আমীর হিসেবে নিযুক্ত করে নাও। কেননা, আমি আশা করি যে, আমার জীবদ্দশায় তোমার আমীর নিযুক্ত করলে তোমরা পরস্পর মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়বে না।
(অরিখুল ইসলামী-৯/২৫৮)
পৃষ্ঠা:৯২
(১৪৫)আবু বকর চুল্ল আবদুর রহমান বিন আওফ -এর সাথে পরামর্শ করেন:- আবু বকর আবদুর রহমান বিন আওফ-কে ডেকে বললেন, ওমর সম্পর্কে আমাকে কিছু বলতে দেখি। তখন তিনি বললেন, তাঁর ব্যাপারে আমার চেয়ে আপনিই ভালো জানেন। অতঃপর আবু বকর স্র বললেন, তাঁরপরও তোমার অভিমত জানতে চাচ্ছি। ফলে আব্দুর রহমান বললেন, এ ব্যাপারে আপনার রায়ই হবে চূড়ান্ত এবং শ্রেয়।
(১৪৬)দারিদ্র্যতা ও স্বচ্ছলতা:- আবু বকর বললেন, তুমি কি লক্ষ্য করো নি যে, আল্লাহ তায়ালা স্বচ্ছলতার আয়াতকে দরিদ্রতার আয়াতের সাথে একত্রিত করে উল্লেখ করেছেন। যাতে করে মুমিন ব্যক্তি আশান্বিত হওয়ার পাশাপাশি ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। সুতরাং সে যেন আল্লাহর কাছে অন্যায়ভাবে কোন কিছু কামনা করে না বসে এবং নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে না দেয়। (আবু শায়েখ এটি কর্ণনা করেছেন)
(১৪৭)ওমর ইবনে খাত্তাবের জন্য ওয়াসীয়ত:- হে উমর! তুমি আল্লাহকে ভয় করে চলবে। জেনে রাখ, আল্লাহর পক্ষ থেকে দিবসের কিছু আমল রয়েছে রাত্রে তিনি তা কবুল করবেন না। আর রাত্রের কিছু আমল রয়েছে যেগুলো দিবসে আদায় করলে তিনি তা কবুল করবেন না। ফরজ আমল আদায় করা ব্যতীত তিনি কোন নফল আমল কবুল করবেন না। দুনিয়াতে ভ্রান্ত মতাদর্শ অনুসরণের কারণে কিয়ামত দিবসে অনেক মানুষের মিযানের পাল্লা ভারী হওয়া সত্ত্বেও হালকা হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতীদের কথা কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছন। সুতরাং এদেরকে তুমি সৎ আমল করার উপদেশ দেবে।
পৃষ্ঠা:৯৩
পাশাপাশি মন্দ ও অসৎ কর্ম বর্জন করতে নির্দেশ দিবে। আর যখন তুমি এদেরকে উপদেশ দিবে তখন বলবে যে, নিশ্চয় আমার আশংকা হয় যে, না জানি আমি জান্নাতীদের থেকে দূরে সরে যাই। আর আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামীদের কথাও আলোচনা করেছেন। সুতরাং তুমি এদেরকে মন্দ কর্মের ব্যাপারে সতর্ক করবে এবং উত্তম কাজে উৎসাহিত করবে। আর যখন তুমি এদেরকে উপদেশ দিবে তখন বলবে, আমি আশা করি যে, আমি জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করব না। যেমন, একজন মুমিন বান্দা আল্লাহর রহমতের আশা করে এবং তাঁর গযবের ভয়ও করে। ফলে সে যেন আল্লাহর কাছে মিথ্যা কামনা-বাসনা করে না বসে এবং তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত না হয়। তুমি যদি আমার ওসীয়তকে সংরক্ষণ কর তবে মরণের ভয় ও চিন্তা তোমার অন্তরে সবচেয়ে বেশি থাকবে যে সময়কে তুমি এগিয়ে নিতে পারবে না। কেননা, মরণ একদিন না একদিন তোমাকে পেয়েই বসবে। (সিফাতুস সাফওয়াহ- ১/২৬৪)
(১৪৮)তোমার উপর রয়েছে একজন নবী,একজন সিদ্দীক ও দুই জন শহীদ:- একদা নবী উহুদ পাহাড়ে আরোহণ করছিলেন। সাথে ছিলেন আবু বকর, ওমর ও উসমান । তখন পাহাড় কাঁপতে শুরু করল। ফলে রাসূল পাহাড়কে পা দিয়ে আঘাত করলেন এবং বললেন, শান্ত হও হে উহুদ! তোমার উপর রয়েছে একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও ২জন শহীদ। (বুখারী- ৩৬৮৬)
এখানে সিদ্দীক হলেন আবু বকর টুদ্র এবং দুজন শহীদ হলেন ওমরও উসমান ।
পৃষ্ঠা:৯৪
(১৪৯)চির বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে:- আয়েশা বলেন, আবু বকর -এর অসুস্থতাঁর সূচনা ঘটে এভাবে যে, তিনি গোসল করেন প্রচণ্ড ঠাণ্ডার দিনে। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিণামে ১৫ দিন পর্যন্ত তিনি বাকরুদ্ধ অবস্থায় থাকেন। হঠাৎ তিনি নামাযে উপস্থিত হতে পারেননি। আর ওমর উল্ল তাঁকে নামাযের আদেশ দিতেন। তবুও তিনি নামাযে উপস্থিত হতে পারতেন না। তাকে দেখার জন্য সাহাবায়ে কেরাম দলে দলে আসতেন। তবে উসমান স্র তাঁর অধিক কাছাকাছি থাকতেন। এরপর অসুস্থতা যখন বেশি বেড়ে গেল তখন সাহাবীরা বললেন, আমরা কি আপনার জন্য ডাক্তার নিয়ে আসব? তখন তিনি বললেন, ডাক্তার তো আমাকে দেখেছেন এবং বলেছেন, “আমি যা চাই তাই করি”।
আয়েশা আরো বলেন, শেষ সময় আবু বকর বললেন, খেলাফতের দায়িত্বে আসীন হওয়ার পরে আমার পূর্বের সম্পত্তি থেকে যা বৃদ্ধি পেয়েছে তা আমার পরবর্তী খলিফার নিকটে পৌঁছে দিও। তখন আমরা হিসেব করে দেখলাম যে, যা কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে তা হলো তাঁর কালো গোলাম যে তাঁর শিশুকে কোলে নিত এবং একটি পাত্র যা দ্বারা তিনি বাগানে পানি দিতেন। সুতরাং আমরা এই দুটি পরবর্তী খলিফা ওমর-এর নিকট পৌছিয়ে দিলাম। ওমর টু-এর কাছে মাল ফেরত দিলে তিনি কেঁদে উঠলেন এবং বললেন, আবু বকরের উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত বর্ষণ করুক। তিনি খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করে গেছেন।
আয়েশা আরো বলেন, আবু বকর যখন মুমূর্ষ অবস্থায় উপনীত হলেন আমি তাঁর নিকটে গেলাম। তখন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার উপক্রম ছিলেন। এমতাবস্থায় আমি ভারাক্রান্ত মনে নিম্নের কবিতটি আবৃত্তি করলাম যে,
পৃষ্ঠা:৯৫
“আপনার জীবনের কসম, যে দিন আপনি এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন, সেদিন কোন যুবককে তাঁর প্রাচুর্যতা কোন ধরনের উপকার করতে পারবে না। এমনকি তাঁর হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে যাবে।
আয়েশা টু বলেন, তখন তিনি আমার দিকে কিছুটা রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে বললেন, হে মুমিনদের মাতা! বিষয়টি এমন নয় বরং আল্লাহর কথাই সত্য। তিনি মহাগ্রন্থে উল্লেখ করেন-
وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ذَلِكَ مَا كُنْتَ مِنْهُ تَحِيدُ
মৃত্যু যন্ত্রণা সত্যি আসবেই; এটা সে জিনিস যা হতে তোমরা অব্যাহতি চেয়ে আসছ। (সূরা কাফ: আয়াত-১৯)
এরপর তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমার পরিবারে তোমার চেয়ে প্রিয় আর কেউ নেই। আর এ কারণেই আমি তোমাকে একটি বাগান দিয়েছিলাম। তবে আমার মনে এ ব্যাপারে কিছু সন্দেহ ও সংশয় রয়ে গেছে। সুতরাং তুমি এ সম্পদকে মীরাসের সাথে মিলিয়ে নিও। তখন আয়েশা বললেন, তখনি আমি আমার বাগানকে মীরাসের সাথে সম্পৃক্ত করে দিলাম। আমার পিতা আরো বলেন, যখন থেকে আমি মুসলমানদের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি, আমি তাদের কোন দিনার ও দিরহাম ভক্ষণ করিনি। কেবলমাত্র আমি তাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সাধারণ খাবার খেতাম এবং সাধারণ পোশাক পরিধান করতাম। আর আমাদের নিকট এই হাবশী গোলাম, এই দুর্বল উট এবং এই জীর্ণশীর্ণ পোশাক ছাড়া মুসলমানদের কম বা বেশি আর কোন সম্পদ আমাদের কাছে নেই। যখন আমি মারা যাব তখন তুমি এগুলো নিয়ে উমরের কাছে যাবে এবং এগুলো থেকে দায় মুক্ত হবে। পরে আমি তাই করলাম। অতঃপর বাহক যখন উমরের নিকট আসলেন, তখন তিনি কান্না করলেন। এমনকি তাঁর চোখের পানি মাটিতে গিয়ে পড়ল। তখন তিনি বললেন, আবু বকরের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। তাঁর পরে আমরা কষ্টে পতিত হয়েছি, তাঁর পরে আমরা কষ্টে পতিত হয়েছি, তাঁর পরে আমরা কষ্টে পতিত হয়েছি।
(তাবাকাতে ইবনে সা’য়াদ, ৩/১৪৬, ১৪৭)
পৃষ্ঠা:৯৬
(১৫০)আবু বকর-এর গোসল ও দাফন:- আবু বকর স্রে ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস তাকে গোসল দিয়েছিলেন। কেননা আবু বকর তাঁকে গোসল দেয়ার জন্য অসীয়ত করেছিলেন। রাসূল -এর পাশেই তাকে দাফন করা হয়। রাসূল টু-এর বগলের বরাবর তাঁর মাথা রাখা হয়েছে। তাঁর জানাযা পড়েন তাঁর পরবর্তী খলিফা ওমর। তাকে কবরে নামান উমর, উসমান, তালহা এবং তাঁর ছেলে আবদুর রহমান ট্রে। আবু বকর গুদ্র-এর কবরকে রাসূল প্লে-এর কবরের সাথে একেবারে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে।