আসমা (রাঃ) সম্পর্কে ১৫০ টি শিক্ষণীয় ঘটনা (1)
পৃষ্ঠা ১ থেকে ২০
পৃষ্ঠা:০১
১.আবু বকর-এর জন্ম
আবু বকর করেন। আর নবী নবী-এর জন্মের দুই বছর এক মাস পর জন্মগ্রহণ ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।ইবনে কাসীর বলেন, খলিফা ইবনে খায়াত বর্ণনা করেন, নবীতাকে বলেন, আমি বড় নাকি তুমি? তিনি বলেন, আপনি বড় এবং আমি আপনার থেকে এক বছরের ছোট।
২.প্রতিপালন
আবু বকর মক্কায় প্রতিপালিত হন। তিনি ব্যবসার কাজ ব্যতীত মক্কা থেকে বের হতেন না। তিনি ছিলেন সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক সম্পদশালী, মর্যাদাবান, ভদ্র, দয়াশীল ও দানশীল ব্যক্তিত্ব। জাহেলী যুগে তিনি ছিলেন কুরাইশদের অন্যতম নেতা, পরামর্শদাতা, সকলের ভালোবাসার পাত্র। আবু বকর মক্কাবাসীদের মাঝে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে সমধিকা পরিচিত ছিলেন। অতঃপর যখন ইসলাম আগমন করল, তখন তিনি সব কিছু ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং তাতে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করেন।
পৃষ্ঠা:০২
৩.বিনয়ী আবু বকর
জাহেলী যুগে আবু বকর গন্দ্র ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয় বিনয়ী ব্যক্তি। আয়েশা বলেন, আল্লাহর কসম। জাহেলী যুগে এবং ইসলামী যুগে তিনি কখনো কোনো কবিতা বা গান উচ্চারণ করেননি। তাছাড়া জাহেলী যুগে আবু বকর এবং উসমান পুত্র মদ পান করতেন না।
8.দেহের গঠন
আবু বকর -এর দেহের গঠন ছিল হালকা-পাতলা এবং চেহারা ছিল। ফর্সা। চেহারার গঠন প্রকৃতি ছিল অনেক সুন্দর ও হালকা গড়নের। তিনি এতই হালকা গড়নের ছিলেন যে, যখন তিনি লুঙ্গি পরিধান করতেন তখন তা খুব কষে পরিধান করতে হতো, নতুবা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত এবং তার শরীরের সকল রগ ভেসে থাকত, এমনকি তা গোনা যেত। আর তার চোখ দুটি ছিল সদা লজ্জাবনত। ইবনে সা’দ আয়েশা আকৃতির। হতে বর্ণনা করেন, তার কপাল ছিল সাধারণ আনাস বর্ণনা বলেন, একবার রাসূল তখন তাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবু বকর মাঝখান থেকে করা ছিল না। মদিনায় আগমন করলেন। ছাড়া আর কারো মাথার সিথি
পৃষ্ঠা:০৩
৫.তার মা
তিনি মিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম ছিল উন্মুল খায়ের বিনতে সম্বর বিন আমের।
৬.তার স্ত্রী
জাহেলী যুগে প্রথমে তিনি কুতাইলা বিনতে আব্দুর ইজ্জকে বিবাহ করেন। অতঃপর তার ঘর হতে আব্দুল্লাহ এবং যাতুন নেতাকাইন আসমা -এর জন্ম হয়। দ্বিতীয়ত তিনি উম্মে রুমান বিনতে আমের টুল্ল-কে বিবাহ করেন। তার ঘর থেকে মুহাম্মদ এর জন্ম হয়। ইতোপূর্বে তিনি ছিলেন জাফর ইবনে আবু তালিব-এর স্ত্রী। সেখানে তিনি আব্দুল্লাহ নামক এক সন্তান জন্মদেন। বলা হয়ে থাকে সে সন্তানের নাম আব্দুল্লাহ নয়, বরং মুহাম্মদ ছিল। পরে তাকে আলী ইবনে আবু তালিব টু বিবাহ করেন। উল্লেখ্য যে, সেখানেও তিনি একজন সন্তান জন্ম দেন, যার নাম ছিল মুহাম্মাদ। ফলে তাকে দুই মুহাম্মদের মা বলে ডাকা হতো। এরপর আবু বকর ইসলামী যুগে হাবীবা বিনতে খারেজা বিন যায়েদ গুয়ু কে বিবাহ করেন। তার ঘর থেকে তাঁর (আবু বকর) মৃত্যুর পর উম্মে কুলসুম নামে এক সন্তান জন্মগ্রহণ করেন।
পৃষ্ঠা:০৪
৭.রাসূল কর্তৃক তাঁকে অগ্রাধিকার
আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে আবু বকর গল্প-এর সাথে পরামর্শ করতে বলেছেন। নবী বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে (পরামর্শের ক্ষেত্রে) অগ্রাধিকার দিয়েছেন। দাইলামী আলী মুল্ল হতে বর্ণনা করেন, রাসূল বলেন, আমার নিকট জিবরাঈল আসলেন। তখন আমি বললাম, আমার সাথে কে হিজরত করবে? তিনি বললেন, আবু বকর। কেননা, তিনিই হচ্ছে আপনার পরে আপনার উম্মতের প্রতিনিধি। তামাম ইবনে ওমর স্ত্র হতে বর্ণনা করেন। রাসূল বলেন, আমার নিকট জিবরাঈল আগমন করলেন। অতঃপর বললেন, হে মুহাম্মদ। নিশ্চয় আল্লাহর তায়ালা আপনাকে আবু বকরের সাথে পরামর্শ করতে বলেছেন। ইমাম তাবারানী সাঈদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে কায়েস ইবনে ঈসা হতে তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। একদা হাফসা রাসূল-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যখন আপনি কোনো সমস্যায় পড়েন, তখন (পরামর্শের ক্ষেত্রে) আবু বকরকে বেশি অগ্রাধিকার দেন কেন? রাসূল বললেন, আমি তাকে অগ্রাধিকার দেইনি; বরং আল্লাহই তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। দাইলামী, খাতীব, ইবনে আসাকীর আলী টু হতে বর্ণনা করেন। রাসূল (সা:) বলেন, হে আলী। আমি তোমাকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে তিনবার প্রার্থনা করেছিলাম। কিন্তু তিনি আলীকে ফিরিয়ে দিলেন। তবে আবু বকরকে ছাড়া আর কাউকে অগ্রাধিকার দেননি।
পৃষ্ঠা:০৫
৮.এমামতের নির্দেশ প্রাপ্ত
বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ ও মুসনাদে আহমদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থে আয়েশা, আবু মুসা, ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস, সালিম ইবনে উবাইদ স্ত্রে প্রমুখ সাহাবীদের সূত্রে বর্ণিত। রাসূল বলেন, তোমরা আবু বকরের কাছে যাও এবং তাঁকে লোকদের নামায পড়াতে বল। ইমাম হাকেম সাহল স্নে হতে বর্ণনা করেন। রাসূল আবু বকর (রা:)- কে বলেন, যদি আমি (মৃত্যুর) শেষ প্রান্তে চলে যাই তবে তুমি লোকদের নামায পড়িয়ে দিও। তাবারানী সাহল ইবনে সাদ স্রে হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা আনসারদের মধ্যে অবস্থান করছিলাম। তখন তাদের নিকট রাসূল (সা:) আগমন করলেন, যাতে করে তাদেরকে বিচার-মিমাংসা করে দেন। তারপর যখন বিচার-মিমাংসা শেষ করে ফিরে যান। তখন লোকেরা নামাযে দাড়িয়ে গিয়েছিল এবং আবু বকর লোকদের নামায পড়াচ্ছিলেন। তখন রাসূল করলেন। আবু বকর -এর পিছনে নামায আদায় ইমাম বাযযার ও ইমাম আহমদ একটি উত্তম সনদে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূল-এর কাছে গেলাম। তখন তাঁর সাথে তাঁর স্ত্রীগণ ছিলেন। অতঃপর মাইমুনা ব্যতীত সকলেই আমার থেকে পর্দা করে নিল। তখন তিনি বললেন, যারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই তাদের মধ্যে কেউ আর বাকি নেই। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা আবু বকরের কাছে যাও এবং তাঁকে লোকেদের নামায পড়াতে বল। তখন আয়েশা শব্দ করে বললেন, আবু বকর ভূদ্র অত্যন্ত নরম হৃদয়ের ব্যক্তি। সুতরাং যখন তিনি ঐ স্থানে দাঁড়াবেন, তখন কান্নায়
পৃষ্ঠা:০৬
ভেঙ্গে পড়বেন। এরপরও রাসূল বললেন, তোমরা আবু বকরের কাছে যাও, সে যেন লোকদের নামায পড়ায়। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং নামায পড়াতে শুরু করলেন। অতঃপর নবী নিজে থেকে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করলেন। অতঃপর তিনি (নামায পড়তে) আসলে আবু বকর পেছনে চলে যেতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তার পেছনে (মুক্তাদী হিসেবে) থাকাটাই পছন্দ করলেন। অতঃপর তিনি তার পাশে বসে গেলেন। তারপর তিনি কিরাত পাঠ করেন।
৯.খতিব আবু বকর
ইমাম আহমদ ইবনে আবি মুলাইকা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূল-এর মৃত্যুর এক মাস পর আবু বকর টুল্ল-এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি দাজ্জালের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। এমন সময় মানুষকে জামাআতে নামায আদায় করার জন্য আহবান করা হলো। অতঃপর লোকেরা একত্রিত হলে নামায পড়লেন এবং পরে তিনি একটি খুতবা প্রদান করলেন, যা ছিল ইসলামের প্রথম খুৎব্বা। প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করলেন এবং বললেন, হে লোক সকল। আমি মনে করি তোমরা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছ, তা হতে যদি তোমরা পুরোপুরিভাবে নবী-এর সুন্নাত গ্রহণ করতে চাও, তবে তা পালন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ঐ ব্যক্তিই এ দায়িত্ব পালন করতে পারবে, যে ব্যক্তি শয়তান থেকে নিরাপদ অথবা এ দায়িত্ব পালনের জন্য আকাশ হতে কোনো ওহি নাযিল হয়।
পৃষ্ঠা:০৭
১০.রাসূল-এর খলিফা
ইমাম আহমদ আবি মুলাইকা (রহ.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবু বকরকে বলা হলো, হে আল্লাহর খলিফা! তখন তিনি বললেন, আমি রাসূল-এর খলিফা এবং আমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আনাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূল-এর মৃতুর পূর্ববর্তী সময় অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন, তখন বিলাল ন্দ্রে নামাযের জন্য আযান দেয়ার ব্যাপারে অনুমতি নিতে গেলেন। অতঃপর দুই বার অনুমতি চাওয়ার পর তৃতীয়বার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, হে বিলাল। তুমি পৌঁছিয়ে দাও। অতঃপর যে চায় সে যেন নামায পড়ে নেয়। আর যে মুখ ফিরিয়ে নিতে চায়, সে যেন মুখ ফিরিয়ে নেয়। তোমরা আবু বকরের কাছে যাও এবং তাকে লোকদের নামায পড়াতে বল।
১১.কোমল হৃদয়ের অধিকারী
ইমাম আহমদ বুরাইদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (সা:) অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর যখন আবু বকর -কে ইমামতি করতে বলা হলো, তখন আয়েশা বলেন, হে আল্লাহ রাসূল! আবু বকর তো নরম ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। নামায পড়াতে গেলে তিনি তো কাঁদতে শুরু করবেন। তবুও রাসূল বললেন, তোমরা আবু বকরের কাছে যাও এবং তাকে লোকদের নামায পড়াতে বল। কেননা তোমরা তো ইউসুফের সাথি। অতঃপর আবু বকর টুদ্র ইমামতি করলেন, তখনও নবী করলেন। ইমামতি
পৃষ্ঠা:০৮
১২.নবী-এর প্রতিনিধি
ইমাম আহমদ এক নির্ভরযোগ্য রাবীর মাধ্যমে সালেম বিন উবাইদ খুদ্র হতে বর্ণনা করেন। আর তিনি ছিলেন আসহাবে সুফফার একজন সদস্য। যখন নবী অসুস্থতার দরুন অজ্ঞান হয়ে গেলেন। অতঃপর জ্ঞান ফিরে পেলেন, এমতাবস্থায় নামাযের সময় উপস্থিত হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, নামাযের সময় কি উপস্থিত হয়েছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তোমরা বিলালের কাছে যাও, সে যেন আযান দেয়। আর তোমরা আবু বকরের কাছে যাও, সে যেন নামাযে এমামত করে। তখন আয়েশা বলেন, আমার পিতা তো কোমল হৃদয়ের অধিকারী। সুতরাং যদি আপনি অন্য কাউকে এ দায়িত্ব দিতেন, তবে ভালো হতো। অতঃপর রাসূল পুনরায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। পরে যখন আবার জ্ঞান ফিরে ফেলেন, তখন তিনি বললেন, নামায কি আদায় করা হয়েছে? আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে দুজন লোক নিয়ে আস, যাদের ওপর আমি ভর দিতে পারব। অতঃপর বুরাইদা এবং আরো একজন লোক আসল। তখন তিনি তাদের ওপর ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন এবং মসজিদে আসলেন। এমতাবস্থায় আবু বকর দ্রে নামায পড়াচ্ছিলেন। তখন এমতবস্থায় আবু বকর পেছনে সরে যেতে লাগলেন। কিন্তু রাসূল (সা:) তাকে ইশারায় নিষেধ করলেন এবং তিনি আবু বকর গুল্লু-এর পাশে বসলেন। অতঃপর এ নামায আদায় করার পর রাসূল মৃত্যুবরণ করেন।
পৃষ্ঠা:০৯
১৩.সাহাবাদের মধ্যে আবু বকর-এর মর্যাদা
ইমাম আহমদ সহীহ সূত্রে আবি বুখতারী হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা ওমর টুদ্র আবু উবাইদাকে বললেন, তোমার হাত প্রসারিত কর, আমি তোমার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করব। কেননা আমি রাসূল থেকে শুনেছি তিনি বলেন, আপনি এই উম্মতের জন্য নিরাপদ। তখন আবু উবাইদা গুল্ল বললেন, আমি কিভাবে হাত বাড়াতে পারি, অথচ রাসূল এর বিষয়ে যিনি মৃত্যু পর্যন্ত আমার থেকেও বেশি নিরাপদ ছিলেন তিনি বর্তমান রয়েছেন। এরপর রাবী আবি বুখতার ওমর যুগ্ম-এর প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করেননি।
১৪.আবু বকরের আগে যাবে কে?
ইমাম আহমদ (রহ.) একটি উত্তম সনদে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন রাসূল ইন্তেকাল করেন তখন আনসারগণ প্রস্তাব করলেন যে, তোমাদের মধ্য হতে একজন আমীর নির্বাচন করা হোক এবং আমাদের মধ্যে একজন আমীর নির্বাচন করা হোক। তখন ওমর আসলেন এবং বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তোমরা কি জান না যে, রাসূল জীবিত থাকাবস্থায় আবু বকর গুদ্র-কে এমামতি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সুতরাং তোমরা আবু বকরের ওপরে কাকে প্রাধান্য দিতে চাও? আনসাররা বললেন, আমরা আবু বকরের ওপর অন্য কাউকে প্রধান্য দেয়া থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। তিরমিযী সূত্রে আয়েশা শু থেকে বর্ণিত, রাসূল সম্প্রদায়ের লোকের জন্য উচিত নয় যে, আবু বকর অন্য কেউ ইমামতি করা। অর্থাৎ তাঁকে অতিক্রম করা। বললেন, কোনো -কে উপস্থিত রেখে
পৃষ্ঠা:১০
১৫.সিদ্দীক উপাধির কারণ
রাসূল মিরাজ থেকে আসার পর সর্বপ্রথম আবু বকর রাসূল এর মিরাজের ঘটনাকে স্বীকার করে নেন। তাই তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সিদ্দীক বা সত্যবাদী উপাধি দেয়া হয়। ইবনে সা’দ আবি ওয়াহাব থেকে বর্ণনা করেন, যিনি ছিলেন আবু হুরায়রা এর দাস। তিনি বলেন, রাসূল বলেছেন, মিরাজের রজনীতে আমি জিবরাঈলকে বললাম, আমার সম্প্রদায় তো আমাকে বিশ্বাস করবে না। তখন তিনি বললেন, আবু বকর তোমাকে বিশ্বাস করবে। আর তিনিই হচ্ছে ‘সিদ্দীক’। উম্মে হানী দায়লামী থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল বললেন, হে আবু বকর। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাকে ‘সিদ্দীক’ নামে নামকরণ করেছেন। ইমাম বুখারী আবু দারদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আমাকে তোমাদের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তখন তোমরা মিথ্যা বলেছিলে, কিন্তু আবু বকর আমার কথাকে সত্য বলেছিল। অতঃপর সে তার মাল এবং সঙ্গ দ্বারা আমাকে সাহায্য করেছে। তোমরা কি আমার জন্য আমার এ রকম (বিশ্বস্ত) সাথিকে পরিত্যাগ করতে চাও? খতীব এবং দাইলামী আবু সাঈদ খুদরীদ্র হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা:) বলেছেন, আমার সাথিকে আমার কাছে ডেকে আন। কেননা, আমি মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছি যথেষ্টভাবে। কিন্তু তোমরা সকলেই আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছিলেন। তবে আবু বকর সিদ্দীক বলেছিল, আপনি সত্যই বলেছেন।
পৃষ্ঠা:১১
আবু নাঈম ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেন, রাসূল বলেন, ইসলামের ব্যাপারে আমি যার সাথেই কথা বলেছি সেই আমার কথাকে অস্বীকার করেছে এবং আমার সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু আবু বকর ইবনে আবু কুহাফা তা করেনি।
১৬.রাসূল-এর সাথী
ইমাম তাবারানী তার আল-কাবীর নামক গ্রন্থে ইবনে আবি ওয়াকেদ টুল্ল হতে বর্ণনা করেন। রাসূল বলেন, আবু বকর আমার সাথি এবং হিজরতকালীন সময়ে গর্তের মধ্যেও আমার সঙ্গী। সুতরাং তোমরা এর থেকে তাঁর মর্যাদা জেনে নাও। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমার কাছে সম্পদ ও সঙ্গ দানের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ ব্যক্তি হলেন আবু বকর। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমি আবু বকরের চেয়ে বেশি অন্য কারো কাছ থেকে এতটুকু নিরাপত্তা লাভ করতে পারিনি। কেননা, আমি তার মেয়েকে বিবাহ করেছি এবং তাকে সাথে নিয়েই হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। অন্য বর্ণনায় এসেছে, মানুষের মধ্যে এমন কোনো লোক নেই, সাথি হওয়ার দিক দিয়ে যার কাছে বেশি নিরাপত্তা লাভ করা যায়। তবে ইবনে আবু কুহাফার কাছ থেকে তা পেয়েছি। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যদি আমি খলিল হিসেবে কাউকে গ্রহণ করতাম তবে আবু বকরকেই করতাম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাবধান! সে তোমাদের সাথি।
পৃষ্ঠা:১২
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর হকের ব্যাপারে তোমাদের প্রত্যেকেই বাঁধা প্রদান করেছ, তবে ইবনে আবু কুহাফা ব্যতীত।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রত্যেক নবীর জন্য উম্মতের পক্ষ থেকে একজন করে খলিল থাকে। সুতরাং আমার খলিল হতো আবু বকর। কিন্তু তোমাদের সাথি (নবী খলিল। নিজেকে উদ্দেশ্য করে) তো দয়ময় (আল্লাহর) অন্য বর্ণনায় এসেছে, কিন্তু সে তো ইসলামী দিক থেকে আমার ভাই এবং আমার সাথী। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমি যদি কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে আবু বকরকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম। কিন্তু সে তো আমার ভাই এবং আমার সাথি। বিঃ দ্রঃ এখানে সাথী বলতে সাধারণ সাথিকে বুঝানো হয়েছে, যা সাধারণভাবে সকল সাথিকেই শামিল করে। পক্ষান্তরে খলিল বলতে এমন সাথিকে বুঝানো হয়েছে, যা বন্ধুদের মধ্যে হতে একজনকেই প্রাধান্য দেয়া যায়, দ্বিতীয় অন্য কাউকে সে স্থান দেয়া যায় না।
১৭.নবী-এর ভালোবাসার পাত্র
ইমাম বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী আমর ইবনে আস পুত্র থেকে, যাকে ইমাম তিরমিযী হাসান, সহীহ ও গরীবের মর্যাদা দিয়েছেন, আর ইবনে মাযাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেন। রাসূল বলেছেন, মহিলাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো আয়েশা। আর পুরুষদের মধ্যে তাঁর পিতা অর্থাৎ আবু বকর।
পৃষ্ঠা:১৩
১৮.সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী
মুসতাদরাকে হাকীমে আবু হুরায়রা গুল্লু থেকে বর্ণিত, রাসূল বলেছেন, জিবরাঈল (আ) আমার নিকট আসলেন এবং আমার হাত ধরলেন। অতঃপর আমাকে জান্নাতের এ দরজা দেখালেন, যা দিয়ে আমার উম্মত তাতে প্রবেশ করবে। তখন আবু বকর উল্লু বললেন, আমি আশা করছি যে, আমিও আপনার সাথে জান্নাতে প্রবেশ করব। এমনকি আপনাকে দেখতে পাব। তখন রাসূল বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি হলেন আবু বকর। ইবনে আসাকীর আবু দারদা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল এক ব্যক্তিকে আবু বকর দ্র-এর সামনে চলতে দেখে বললেন, তুমি কি এমন ব্যক্তির সামনে চলছ, যিনি তোমার থেকে উত্তম। জেনে রেখ, যা কিছুর ওপর সূর্য উদিত হয় এবং অস্ত যায় এর মধ্যে আবু বকর হলেন উত্তম। ‘ফাযায়িলুস সাহাব্য’ নামক গ্রন্থে আবু নাঈম বর্ণনা করেন। রাসূল (সা:) বলেছেন, তুমি কি এমন একজন ব্যক্তির সামনে দিয়ে হাঁটছ, যিনি তোমার থেকে উত্তম? তুমি কি জান যে, সূর্য এমন কারো ওপর দিয়ে উদয় বা অন্ত যায় না, যে আবু বকর থেকে উত্তম। তবে নবী ও রাসূলগণ ব্যতীত। অর্থাৎ নবী ও রাসূলদের পরেই আবু বকরের মার্যাদা।
১৯.আবু বকর মুরতাদদের তরবারীর
ইমাম দাইলামী, ইরফাজা বিন সারীহ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল (সা:) বলেছেন, আমি ইসলামের তরবারী, আর আবু বকর মুরতাদদের তরবারী।
পৃষ্ঠা:১৪
২০.কিয়ামতের দিন আবু বকর
আবু নাঈম তার হুলইয়া নামক গ্রন্থে আনাস ন্দ্রে হতে বর্ণনা করেন। নবী বলেছেন, হে আল্লাহ! কিয়ামতের দিন আবু বকরকে আমার মর্যাদা দান করিও। খতীব তার আল মাত্তাফিক ওয়াল মুতাফাররিক গ্রন্থে আয়েশা বর্ণনা করেন, রাসূল হতে বলেছেন, কিয়ামতের দিন আবু বকর ব্যতীত সমস্ত মানুষের হিসাব নেয়া হবে। বিঃ দ্রঃ উক্ত হাদীসের সনদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এতে কোনো সমস্যা নেই। ইমাম দাইলামী জাবের টুল্ল হতে বর্ণনা করেন। রাসূল। বলেছেন, ফেরেশতারা নবী ও রাসূলদের সাথে আবু বকরকে নিয়ে জান্নাতে অবতরণ করল। ইমাম আহমদ, ইবনে মাযাহ, নাসাঈ আবু হুরাইরা গুদ্র হতে, আবু ইয়ালা আয়েশা শু হতে এবং হাসান বর্ণনায় ইবনে কাসীর ও খতীব আলী (রা:) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল বলেন, কারো ধন-সম্পদ আমার এত উপকারো আসেনি, যতটুকু উপকারে এসেছে আবু বকরের ধন-সম্পদ। আবু নাঈম তার ‘হুলইয়া’ নামক গ্রন্থে আবু হুরায়রা টু হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল বলেছেন, আবু বকরের সম্পদ থেকে অন্য কারো সম্পদ আমার এত বেশি কাজে আসেনি।
পৃষ্ঠা:১৫
২১.আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্ত
ইমাম হাকেম ও ইবনে আসাকীর আয়েশা হতে বর্ণনা করেন। রাসূল (সা:) বলেছেন, হে আবু বকর! তুমি আল্লাহর পক্ষ হতে জাহান্নাম থেকে মুক্ত। ইমাম আহমদ, বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী আনাস হতে বর্ণনা করেন। তিনি আবু বকর স্র হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী-কে গুহায় থাকাবস্থায় বললাম, যদি তাদের কেউ একটু পায়ের নিচের দিকে লক্ষ্য করে তবেই তো তারা আমাদেরকে দেখতে পাবে। তখন রাসূল (সা:) বললেন, হে আবু বকর। তুমি কি ধারণা করছ যে, আমরা এখানে দুজন। জেনে রেখ, এখানে তৃতীয় জন হিসেবে আল্লাহ রয়েছেন। ইমাম তাবারানী তার ‘আল কাবীর’ নামক গ্রন্থে মুয়াবিয়া মাত্র হতে বর্ণনা করেন। রাসূল বলেছেন, হে আবু বকর! নিশ্চয় সাথির দিক থেকে এবং সাহায্যের হাত বাড়ানোর দিক থেকে মানুষদের মধ্যে আমার নিকট সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হলো ইবনে আবু কুহাফা। আবদান আল কারুযী এবং ইবনে কানে’য় কাহযায় থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল মন্ত্র বলেছেন, আবু বকর সম্পর্কে তোমরা আমার থেকে শুনে রাখ যে, আমার সাথি হওয়ার পর থেকে সে আমাকে কোনো কষ্ট দেয়নি। ইবনে মারদুবিয়্যা ও আবু নাঈম তার ‘ফাযায়েলুস’ সাহাবা নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, খতীব ও ইবনে আসাকীর ইবনে আব্বাস ত্র হতে বর্ণনা করেন। রাসূল আব্বাস ট্রে-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূলের চাচা! নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীন ও ওহির ব্যাপারে আবু বকরকে আমার স্থালাভিষিক্ত করেছেন। সুতরাং তোমরা তার কথা মেনে চল, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে এবং তোমরা তাঁর আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে।
পৃষ্ঠা:১৬
২২.তার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত
ইবনে মারদুবিয়্যা ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এ আয়াতটি قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَى وَعَلَى وَالِدَيَّ অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক। আপনি আমাকে ঐ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার সুযোগ দান করুন, যা আপনি আমাকে এবং আমার পিতা- মাতাতে দান করেছেন। (সূরা আহকাফ: আয়াত-১৫) আবু বকর টু-এর ক্ষেত্রে নাযিল হয়। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা এর জবাব দেন এবং তার সকল সন্তান-সন্তুতি, ভাই ইত্যাদি সকলের মাঝে প্রশান্তি দান করেন। তাছাড় তার সম্পর্কে কুরআনের এ আয়াতও নাযিল হয়, فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى অতঃপর যারা দান করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে। (সূরা লাইল: আয়াত-৫)
২৩.খেলাফত
ইমাম তাবারানী আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর পুত্র হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল বলেছেন, তোমরা আমার কাছে একটি খাতা এবং কালির দোয়াত নিয়ে আস। আমি তোমাদেরকে একটি পত্র লিখে দেব, যাতে করে তোমরা আমার পরে বিভ্রান্ত না হয়ে পড়। ইমাম তাবারানী এক বিশ্বস্ত রাবীর সূত্রে সালেম ইবনে উবাইদ ন্দ্রে হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রাসূল মৃত্যুবরণ করলেন তখন ওমর বলছিলেন, আমি যেন এ কথা না শুনি। তিনি বলছিলেন, যে
পৃষ্ঠা:১৭
ব্যক্তি বলবে, রাসূল মারা গেছেন, তবে আমি তাকে তলোওয়ার দিয়ে আঘাত করব। অতঃপর আবু বকর স্ট্রা আমার হাত ধরলেন এবং আমার ওপর ভর দিলেন। এভাবে তিনি হেঁটে চলতে চলতে বলছিলেন, একটু জায়গা দাও। তখন লোকেরা তাকে জায়গা দিচ্ছিল। অতঃপর তিনি আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর পাঠ করলেন এবং কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- إِنَّكَ مَيْتٌ وَإِنَّهُمْ مَّيْتُونَ অর্থাৎ নিশ্চয় আপনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং তারাও মৃত্যুবরণ করবে। (সূরা যুমার: আয়াত-৩০) অতঃপর লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূলের সাথি। আল্লাহর রাসূল কি মৃত্যুবরণ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ তবে জেনে রেখ! এটা তাঁর বাণী অনুযায়ীই সংঘটিত হয়েছে। অতঃপর লোকরো বলল, আপনি কি আল্লাহর রাসূলের ওপর জানাযা আদায় করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকেরা বলল, কিভাবে আমরা তাঁর ওপর জানাযার সালাত আদায় করব? তিনি বললেন, প্রথমে এক সম্প্রদায় প্রবেশ করবে। অতঃপর সে তাকবীর দেবে, দু’আ করবে এবং দরূদ পাঠ করবে। অতঃপর সে ফিরে আসবে। এভাবে অন্য সম্প্রদায় যাবে এবং সেভাবেই সালাত আদায় করবে, এমনভাবে সকলেই তা করে ফেলবে। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূলের সাথি! আল্লাহর রাসূল-কে কি দাফন দেয়া হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
পৃষ্ঠা:১৮
লোকেরা বলল, কোথায় দাফন দেয়া হবে? তিনি বললেন, যেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন সেখানে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র জায়গা ছাড়া তাদের জান কবজ করেন না। তোমরা জেনে রেখ যে, তিনি এমনটাই বলেছেন। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং বললেন, তোমরা তাঁকে গোসল দাও। অতঃপর তিনি বের হয়ে গেলেন এবং পরামর্শের জন্য মুহাজিরদের একত্রিত করলেন। অতঃপর তারা বলল, তোমরা এ বিষয়টি আমাদের আনসার ভাইদের কাছে ছেড়ে দাও। কেননা, এ বিষয়ে তাদেরও একটি অংশ রয়েছে। অতঃপর তারা তাদের ওপর ছেড়ে দিল। অতঃপর আনসারদের এক ব্যক্তি প্রস্তাব করল যে, আমাদের মধ্য হতে একজন এবং তোমাদের মধ্য হতে একজন আমীর নিযুক্ত করা হোক। অতঃপর ওমর আবু বকর গ্লা-এর হাত ধরলেন এবং তোমরা আমাকে সংবাদ দাও যে, আল্লাহ তায়ালার বাণীর তৃতীয় জন কোন ব্যক্তি? ثانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنُ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا অর্থা দুইজনের দ্বিতীয় জন, যখন তারা গর্তের মধ্যে ছিল। যখন সে তার সাথীকে বলেছিল, চিন্তা কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। (সূরা তাওবা: আয়া-৪০) উক্ত আয়াতে সাথি বলতে কাকে বুঝানো হয়েছে? অতঃপর আবু বকর (রা:)- এর হাত ধরলেন এবং তাঁর হাতের ওপর হাত রাখলেন। তারপর লোকদেরকে বললেন, তোমরা তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ কর। অতঃপর তারা বাইয়াত গ্রহণ করল, যা ছিল অতি উত্তম ও খুবই সুন্দরতম বাইয়াত।
পৃষ্ঠা:১৯
২৪.হারাম খাদ্য
ইবনে জাওযী তার মুনাঘিম গ্রন্থে যায়েদ ইবনে আরকাম করেন। তিনি বলেন, আবু বকর সিদ্দীক হতে বর্ণনা -এর একজন দাস ছিল, জাহেলী যুগে ঝাড়ফুঁক করত। একদিন রাত্রে আবু বকর পুল্ল খেতে গেলেন, এমনকি এক লুকমা মুখে দিয়ে দিলেন। তখন ঐ দাসটি বলল, আপনার কি হয়েছে? আপনি তো আমাকে প্রত্যেক রাত্রে খাবারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। আজ রাত্রে জিজ্ঞেস করেননি কেন? অতঃপর তিনি বললেন, আমাকে খুব ক্ষিদে পেয়ে বসেছে। হ্যাঁ, তুমি এসব কোথায় থেকে সংগ্রহ করেছ? অতঃপর সে বলল, জাহেলী যুগে আমি এক সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন আমি তাদের জন্য ঝাড়ফুঁক করেছিলাম। অতঃপর তারা আমাকে এর পারিশ্রমিক প্রদানের জন্য ওয়াদা প্রদান করল। সুতরাং আজ যখন আমি তাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন যা তারা ওয়াদা করেছিল তা আমাকে দিয়ে দিল। আর সেই খাবারই আমি আপনাকে প্রদান করেছি। তখন তিনি (আবু বকর) বললেন, তুমি তো আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছ। অতঃপর তিনি নিজ গলায় হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমি করলেন। কিন্তু তবুও পরিপূর্ণভাবে তা বের হয়নি। অতঃপর তাকে (দাসকে) বলা হলো, নিশ্চয় বাকিটুকু পানি ছাড়া বের হবে না। সুতরাং তুমি একটি পাত্র দ্বারা পানি নিয়ে আস। অতঃপর তিনি তা পান করলেন এবং আবারও বমি করলেন। এভাবে তিনি পেটে যা ছিল সবকিছুই বের করে ফেললেন। অতঃপর তাকে বলা হলো, আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন, এ লুকমার সবকিছুই তো বের হয়ে গেছে? তিনি বললেন, যদি এর সাথে আমার
পৃষ্ঠা:২০
আত্মাটাও বের হয়ে যেত, তবুও আমি তা বের করে ছাড়তাম। কেননা, আমি রাসূল কে বলতে শুনেছি যে, “প্রত্যেক যে শরীর হারাম জিনিস থেকে উদগত হয়, জাহান্নামই হবে তার স্থান। সুতরাং আমি ভয় পেয়েছি যে, এই লুকমা থেকে যাতে আমার শরীরের কোনো অংশ উৎপত্তি না হয়।
২৫.আবু বকরের-এর দয়া
আবু বকর ভুল্ল এর সহানুভূতি ও দয়ার কারণে তাকে আওয়াহ তথা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বিলাপকারী নামে নামকরণ করা হয়। একদা আবু বকর (রা:) মিম্বারে আরোহন করেন এবং বলেন, সাবধান! নিশ্চয় আবু বকর “আওয়াহ” এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারী।
২৬.আবু বকরের জিহ্বা
কাইস বলেন, আমি আবু বকর গুদ্র-কে দেখেছি যে, তিনি নিজ জিহ্ববার একাংশ ধরে আছেন এবং বলছেন, এটি আমাকে অনেক বিপদে ফেলে দিয়েছে।
২৭.আল্লাহর প্রতি আবু বকরের ভয়
আবু বকর ত্র আল্লাহকে এত বেশি ভয় করতেন যে, তিনি বলতেন, হায়! যদি আমি গাছ হতাম তাহলে আমার অনেক শাখা-প্রশাখা থাকত এবং আমাকে খেয়ে ফেলা হতো। আবু ইমরান আল যাওনী বলেন, আবু বকর মাত্র বলেছেন আমার মনে হয় আমি একজন মুমিন বান্দার একটি পশমের সমান।
পৃষ্ঠা ২১ থেকে ৪০
পৃষ্ঠা:২১
২৮.খেলাফতের খুৎবা
ইমাম তাবারানী ঈসা বিন আতিয়াহ থেকে বর্ণনা করেন। আবু বকর (রা:) বাইয়াতের জন্য দাঁড়ালেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে একটি খুৎবা প্রদান করলেন। এতে তিনি বলেন, হে উপস্থিত জনতা! আমি অল্প সংখ্যক লোকদের রায় অনুযায়ী দণ্ডায়মান হয়েছি। কিন্তু আমি তোমাদের থেকে উত্তম নই। সুতরাং তোমরা তোমাদের মধ্য হতে যে উত্তম তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ কর। অতঃপর লোকেরা দাড়িয়ে গেল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আমাদের মধ্য হতে আপনিই সবচেয়ে বেশি উত্তম। তখন তিনি বললেন, হে লোক সকল! নিশ্চয় মানুষ দলে দলে ইসলামের প্রবেশ করছে। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে, আবার কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে। তারাই আল্লাহর সাহায্যকারী এবং তারাই আল্লাহকে সত্য বলে স্বীকারকারী। সুতরাং যদি তোমরা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য নিজ দায়িত্বে কোনো পথ খুঁজে পাও, তবে তা করে ফেল। নিশ্চয় আমার সাথেও শয়তান রয়েছে। অতএব যদি তোমরা আমাকে তার (শয়তানের ওপর) অটল থাকতে দেখ, তবে তোমরা আমাকে পরিত্যাগ কর এবং আমার থেকে দূরে সরে যাও। তখন তোমরা আমার কোনো ঘোষণা কিংবা সুসংবাদই গ্রহণ কর না। হে লোক সকল! তোমরা আলেমদের সম্পদ (জ্ঞান) হারিয়ে ফেলবে। অতএব তোমাদের উচিত হবে, তোমার শরীরের কিছু অংশ জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে রাখা। সুতরাং তোমরা তোমাদের চোখ দ্বারা আমাকে পর্যবেক্ষণ কর। অতঃপর যদি আমি দ্বীনে ইসলামের ওপর অটল থাকি, তবে তোমারা আমার আনুগত্য করবে। ইমাম আহমদ কায়েস বিন আবু হাযেম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল-এর মৃত্যুর পর আমি একমাস আবু বকর চন্দ্র-এর কাছে অবস্থান করি। তখন
পৃষ্ঠা:২২
আমি দেখি যে, একদিন তিনি মানুষদেরকে ডাকলেন। সব মানুষ একত্রিত হওয়ার পর মিম্বারে উঠলেন। মিম্বারে উঠার পর এক বিশাল খুৎবা প্রদান করেন। এটাই ছিল রাসূল-এর মৃত্যুর পর ইসলামের প্রথম খুৎব্বা। খুৎব্বার ভেতর তিনি আল্লাহর প্রশংসা আপন করেন। এরপর বলেন, এই মিম্বারটি আমার জন্য সমীচিন নয়। এই মিম্বারের হক আদায় করা কারো পক্ষে সম্ভব হবে না। কেবল মাত্র ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে নিষ্পাপ। ইমাম আহমদ কায়েস বিন আবু হাযেম থেকে একটি সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি ওমর -কে একটি লাঠি হাতে নিয়ে আল্লাহর রাসূল-এর খলিফা আবু বকর গুদ্র-কে কেন্দ্র করে বলতে শুনেছি, হে লোকেরা! তোমরা শুন এবং রাসূলের খলিফার আনুগত্য কর। অতঃপর আবু বকর-এর দাস আসল এবং বলা হলো, এটি একটি কঠিন সহীফা। অতঃপর তা মানুষের নিকট পড়ে শুনাল। কায়েস বলেন, এরপর আমি ওমর গ-কে মিম্বারে উঠতে দেখলাম। ইমাম তিরমিযী হাসান ও গরীব সূত্রে ইবনে ওমর হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল বলেছেন, হে আবু বকর। বল, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও জমিনের স্রষ্টা এবং তিনি অদৃশ্য বিষয়াবলি সম্পর্কে অবহিত। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি সবকিছুর প্রতিপালক, এমনকি ফেরেশতাদেরও প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা তাঁর কাছে নিজেদের এবং শয়তানের পক্ষ হতে আগত অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা কর। আর নিজের থেকে অনিষ্টের খোলস সরিয়ে ফেল অথবা নিজেদের পুরস্কারের জন্য মুসলিম হিসেবে তৈরি কর।
পৃষ্ঠা:২৩
২৯.আবু বকর সম্পর্কে নবী-এর স্বপ্ন
ইমাম তাবারনী স্বীয় গ্রন্থ আল কাবীরের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণনা করেন। রাসূল বলেন, হে আবু বকর! আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে যে, আমি একটি কূপ থেকে পানি উত্তোলন করছি। এরপর তুমি এসেছ এবং তাঁর থেকে অল্প পানি উত্তোলন করেছ। কারণ তুমি দুর্বল হয়ে পড়েছিলে। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর ওমর আসল এবং যথেষ্ট পরিমাণ পানি উত্তোলন করলেন। এতে মানুষ ও উট সবাই পরিতৃপ্ত হলো।
৩০.বড় সন্তুষ্টি
ইবনে মারদুবিয়্যা আনাস খুঁত্র হতে এবং ইমাম হাকেম জাবের বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী হতে আবু বকর স্ত্র-কে বলেন, হে আবু বকর! আল্লাহ আমাকে বড় সন্তুষ্টি দান করেছেন। আবু বকর গুল্লু বলেন, আপনার বড় সন্তুষ্টিটা কি? নবী বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ উম্মতকে সকল সৃষ্টির জন্য উজ্জ্বলতা (স্পষ্টতা) দান করেছেন। কিন্তু তোমাকে আলাদা ভাবে উজ্জ্বলতা দান করেছেন। আবু শায়েখ ও আবু নাঈম (রহ.) আনাস ন্দ্রে হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুল বলেছেন, হে আবু বকর! তুমি কি এমন সম্প্রদায়কে ভালোবাসবে না, যে সম্প্রদায় আমার কাছে পৌঁছিয়েছে যে, তুমি আমাকে ভালোবাস এবং তারাও তোমাকে ভালোবাসে, যেহেতু তুমি তাদেরকে ভালোবাস? সুতরাং জেনে রেখ যে, আমিও তাদেরকে ভালোবাসি।
পৃষ্ঠা:২৪
৩১.অসুস্থতা
ইমাম হাকেম (রহ.) শুয়বা (রহ.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, দুনিয়াতে এমন কোন জিনিস আছে, যাতে আল্লাহর রাসূল বকর গু ফাঁক রেখে গেছেন। এবং আবু আল ওয়াকোদী এবং ইমাম হাকেম (রহ.) আয়েশা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবু বকর সর্বপ্রথম যখন অসুস্থ হতে শুরু করেন, তখন একদিন তিনি গোসল করলেন। আর তখন জমাদিউস সানী মাস শুরু হওয়ার সাত দিন বাকি ছিল। আর তখন ছিল ঠাণ্ডার দিন। অতঃপর তিনি পনের দিন জ্বরে ভুগেন। এ সময় তিনি নামাযের জন্য বের হতে পারেননি। অতঃপর ১৩ হিজরীর জমাদিউস সানী মাস শেষ হওয়ার আট দিন আগে মঙ্গলবার দিনের রাত্রে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল তেষট্টি বছর। আর তিনি ওমর টুল্ল-কে নামায পড়ার আদেশ দিয়ে যান। উল্লেখ্য যে, আরবী মাসে রাত আগে আসে। বিধায় মঙ্গলবারের দিন রাতে বলা হয়েছে। ইবনে সাদ এবং ইবনে আবি দুনিয়াআবি সফর হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা লোকেরা অসুস্থতার সময় আবু বকর -এর কাছে আসল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! আমরা কি ডাক্তার নিয়ে আসব? আবু বকর বললেন, আমাকে তো দেখে গেছেন। লোকেরা বলল, সে আপনার ব্যাপারে কি বলে গেল? তখন আবু বকর পুত্র বললেন, তিনি আমাকে বলে গেছে যে, আমি যা চাই তাই করি। বিঃ দ্রঃ ডাক্তারের উক্ত কথাটি কুরআনের আয়াত। আবু বকর টুল্ল-এর দ্বারা আল্লাহর ইচ্ছাটাকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ চাইলে বেঁচে থাকবেন, আর আল্লাহ চাইলে মৃত্যুবরণ করবেন। কাজেই দুনিয়াবী কোনো ডাক্তারের প্রয়োজন নেই।
পৃষ্ঠা:২৫
৩২.আবু বকর এর মৃত্যু
ইমাম আহমদ (রহ.) আয়েশা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন আবু বকর স্রে-এর মৃত্যু উপস্থিত হলো তখন তিনি বলেন, আজকে কি বার? লোকেরা বলল, আজকে সোমবার। তখন আবু বকর বলেন, আমি যদি আজকে রাত্রে মৃত্যুবরণ করি, তাহলে তোমরা আগামীকাল সকাল হওয়ার অপেক্ষা করবো না। কারণ আমি ভালোবাসি যে, এমন একটি দিনে আমার দাফন দেয়া হোক যেদিন রাসূল মৃত্যুবরণ করেছেন।
৩৩.পিতার মৃত্যুতে আয়েশা
আবু ইয়ালা বিশুদ্ধ রাবীর সূত্রে আয়েশা গল্প হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আবু বকর টু-এর কাছে গেলাম এবং তাকে মৃত্যু শয্যায় পেলাম। অন্য শব্দে আছে যে, আমি তাকে মূমুর্ষ অবস্থায় দেখতে পেলাম। অতঃপর আমি বললাম, সর্বনাশ! সর্বনাশ। যিনি তার (রাসূলের) সাথে সর্বদা বসে থাকতেন, আর তিনিই আজ এত সঙ্কটময় মুহূর্ত অতিবাহিত করছেন! তখন আবু বকর টুদ্র বলেন, তুমি আমার সম্পর্কে এ রকম বলো না: বরং এ বল যে- وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ذَلِكَ مَا كُنْتَ مِنْهُ تَحِيدُ অর্থাৎ মৃত্যুর যন্ত্রণা সত্য সত্যই আসবে, যা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য তুমি চেষ্টা করছিলে। (সূরা ত্বাফ। আয়াত-১৯)
পৃষ্ঠা:২৬
অতঃপর তিনি বলেন, রাসুল কোন দিন মৃত্যুবরণ করছিলেন?। আয়েশা বলেন, আমি বললাম, সোমবার দিন। তখন তিনি বললেন, আমি আশঙ্কা করছি যে, আমার ক্ষেত্রে এবং রাত্রের ক্ষেত্রে এরূপই হতে পারে। অতঃপর তিনি মঙ্গলবারের রাত্রে ইন্তেকাল করেন এবং সকাল হওয়ার পূর্বেই তাকে দাফন দেয়া হয়।
৩৪.আবু বকরের শোক
ইবনে আসাকীর (রহ.) তার তারীখ গ্রন্থের এক সনদে আল আসমাঈ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, খাফফাফ ইবনে নুদবাতুস সুলাইমী বলেন, আবু বকর এ পঙতি উচ্চারণ করে করে কান্না করছিলেন, যার অর্থ হলো, কোনো জীবনই চিরস্থায়ী হতে পারবে না, দুনিয়ার সবকিছুই ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। যত বড় রাজা বাদশাই হোক না কেন, সবকিছু ছেড়ে তাকে বিধায় নিতে হবে। যত ব্যবস্থাই থাকুক না কেন, মৃত্যুর মুখে পতিত হতে হবে।
৩৫.আয়েশা -এর প্রতি আবু বকর এর ওসিয়ত
আবু বকর যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন আয়েশা প্লে-কে বললেন, যখন থেকে আমি খেলাফাতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, তখন থেকে আমি অন্যায়ভাবে বাইতুল মাল থেকে একটা দিনার অথবা একটা দিরহামও গ্রহণ করেনি। তবে হ্যাঁ, সবার অনুমতিক্রমে যব গ্রহণ করেছি। সুতরাং তাদের খাদ্য আমাদের পেটে। আমরা পোশাকসমূহ হতে অমসৃণ কাপড়গুলো পরিধান করতাম। বর্তমানে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হতে কোনো কিছুই আমার কাছে নেই। তবে এই হাবশী দাস, এই সবল উট এবং এই চাদর
পৃষ্ঠা:২৭
বাকি রয়ে গেছে। সুতরাং আমি যখন মৃতুবরণ করব, তখন এই জিনিসগুলো ওমরের কাছে পৌঁছে দিও। আয়েশা বলেন, আমি তাই করলাম। যখন ওমর ফারুক টুল্লু-এর কাছে ঐ জিনিসগুলো পৌঁছানো হলো, তখন ওমর ত্র কাঁদতে শুরু করলেন। এমনকি তার দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়তে লাগল। অতঃপর তিনি বলতে লাগলেন, আল্লাহ আবু বকর -এর প্রতি রহম করুন। তাদের বড়ই দুর্ভাগ্য, যারা তার পরে রয়ে গেছে।
৩৬.আসমা এর ইসলাম গ্রহণ
আবু বকর কারো প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে মক্কায় দাওয়াতের ঝাণ্ডা বহন করে আসছিলেন। কিন্তু একদিন সকালে তার হৃদয় প্রশান্তি অনুভব করছিলেন। কেননা, ঐদিন তার বড় মেয়ে আসমা তার কাছে ইসলামে প্রবেশ করার আগ্রহের কথা ঘোষণা করে। ফলে তার অন্তর আনন্দে ভরে যায়। তাছাড়া সেটাই ছিল তার পরিবারের মধ্য হতে সর্বপ্রথম দাওয়াতে সাড়া দান। অতঃপর আসমা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে স্বীকার করেন এবং তাদেরকে সত্যায়িত করেন। পরে তিনি খাদিজা বিনতে খুয়াইলদ-এর সাথে মিলিত হতেন এবং উভয়ে সম্পূর্ণ মুসলিম নারীর পদাঙ্ক অনুযায়ী সকাল করতেন। তাছাড়া তিনি খাদিজা-এর কাছে গিয়ে আল্লাহর দ্বীন শিক্ষা লাভ করতেন। এভাবে তাদের উভয়ের বাড়িই একটি পরিপূর্ণ ইসলামী বাড়িতে পরিণত হয়। তারা উভয়ে নতুন দ্বীনের নতুন নতুন আইন বাস্তবায়ন করতেন। এই ইসলাম গ্রহণের পর আসমা হয়ে উঠলেন ঐ সময়ের মুসলমানদের সংখ্যার দিক থেকে পনেরতম মুসলিম।
পৃষ্ঠা:২৮
৩৭.আসমা এবং তাঁর অমুসলিম মা
ইমাম আহমদ বিনতে আবু বকর উরওয়া গুদ্র হতে বর্ণনা করেন। তিনি তার মা আসমা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন কুরাইশরা রাসূল এর সাথে চুক্তি অবস্থায় ছিল তখন আমার মা কুতাইলা বিনতে আব্দুল ইজ্জ মুশরিকা অবস্থায় আমার কাছে আসল। তখন আমি রাসূল-এর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলাম। আমি আল্লাহর রাসূল-কে বললাম, আমার মা আমার সাথে সাক্ষাত করতে এসেছে। সুতরাং আমি কি তার সাথে সৎ ব্যবহার করব? রাসূল সাথে সৎ ব্যবহার কর। বললেন, হ্যাঁ। তুমি তোমার মায়ের
৩৮.এ বিষয়ে ইমাম আহমদের অপর বর্ণনা
ইমাম আহমদ (রহ.) বর্ণনা করেন। হাশেম বলেন, আমাকে আমার পিতা তার মা আসমা বিনতে আবু বকর টুদ্র থেকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি বলেন, যখন রাসূল মক্কার কুরাইশদের সাথে এ চুক্তি করেছেন যে, কোনো লোক মুসলমান হওয়ার পর রাসূল ﷺ এর কাছে আশ্রয়ের জন্য গেলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে, ঠিক সে সময় আমার মা অমুসলিমা অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাত করার জন্য অথবা একটি প্রয়োজনে মদিনায় আগমন করে। কিন্তু আমি তার সাথে সাক্ষাত না করে রাসূল এর দরবারে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাই। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা আমার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছে, অথচ তিনি এখনও মুশরিক। আমি কি তার সাথে সদ্ব্যবহার করব? তখন রাসুল বললেন, হ্যাঁ! তুমি তোমার মার সাথে সদ্ব্যবহার কর।
পৃষ্ঠা:২৯
৩৯.ইমাম আহমদের অপর বর্ণনা
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, ইবনে নুমায়ের বলেন, হিশাম তার পিতা থেকে, তিনি আসমা টুল্ল হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন কুরাইশরা রাসূল (সা:)-এর সাথে চুক্তি অবস্থায় ছিল তখন আমার মা কুতাইলা বিনতে আব্দুল ইজ্জ মুশরিকা অবস্থায় আমার কাছে আসল। তখন আমি রাসূল-এর কাছে আসলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা আমার সাথে সাক্ষাত করতে এসেছে। সুতরাং আমি কি তার সাথে সদ্ব্যবহার করব? তখন রাসূল বললেন, হ্যাঁ। তুমি তোমার মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার কর।
80.আয়াত নাযিল হওয়া
যখন আসমা -এর মা কুতাইলা বিনতে আব্দুল ইজ্জ অমুসলিমা অবস্থায় তার সাথে কিরূপ ব্যবহার করতে হবে এ বিষয়টি নিয়ে আসমা রাসূল -এর কাছে গেলেন, তখন মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আয়াত নাযিল হয়ে যায়, لا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ أَنْ تَبَرُّوْهُمْ “যারা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে যুদ্ধ করতে বা বাঁধা দিতে আসে না তাদের সাথে সাক্ষাত করতে বা ভালো ব্যবহার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি।” (সূরা মুমতাহিনা: আয়াত-৮) এ আয়াতটি যখন নাযিল হলো তখন রাসূল আসমা বিনতে আবু বকর -কে বললেন, তুমি তোমার মায়ের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে।
পৃষ্ঠা:৩০
৪১.এ ব্যাপারে অপর একটি বর্ণনা
আমের ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আসমা বিনতে আবু বকর -এর মা কুতাইলা বিনতে আব্দুল ইজ্জ কিছু হাদিয়া নিয়ে আসমা-এর সাথে দেখা করতে আসে। হাদিয়ার মধ্যে ছিল ঘি, পনির এবং সাথে আরো কিছু মুখরোচক খাবার। কিন্তু আসমা (রাঃ) এগুলো গ্রহণ করেননি এবং তার মাকে ঘরে প্রবেশ করতেও দেননি; বরং এ বিষয়টি নিয়ে রাসূল এর কাছে চলে গেলেন। অতঃপর তিনি এ বিষয়টি সম্পর্কে রাসূল-কে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ আয়াত নাযিল করলেন যে- لا يَنْهَاكُمُ اللهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ أَنْ تَبَرُّوْهُمْ “যারা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে যুদ্ধ করতে বা বাঁধা দিতে আসে না তাদের সাথে সাক্ষাত করতে বা ভালো ব্যবহার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি।” (সূরা মুমতাহিনা: আয়াত৮) আসমা বলেন, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর আমি আমার মাকে ঘরে ঢুকতে দেই এবং তার হাদিয়া গ্রহণ করি।
৪২.আসমা এবং তার পিতার সমস্ত মাল গ্রহণ
আসমা ছিলেন খুবই বুদ্ধিমতি এবং উপস্থিত জ্ঞানসম্পন্না নারী। তার প্রমাণ হলো যে, যখন আবু বকর রাসূল-এর সাথে হিজরত করতে বের হলেন তখন তার সমস্ত মাল নিয়ে নিলেন। যার পরিমাণ ছিল, ছয় হাজার দিরহাম। আর তার পরিবারের জন্য কিছুই রেখে যাননি।
পৃষ্ঠা:৩১
যখন আবু বকর-এর পিতা আবু কুহাফা তার ছেলের হিজরতের কথা শুনতে পেল তখন আবু বকরের বাড়িতে আসল। এমতাবস্থায় সে ছিল মুশরিক। এসে আবু বকর -এর বড় মেয়ে আসমা ন্দ্রে-কে বলল, হে আসমা! আমি তো দেখতে পাচ্ছি যে, তোমাদের পিতা নিজেকে কষ্টে ফেলার পর তোমাদেরকেও মাল দ্বারা কষ্টের মধ্যে ফেলে গেছে। অতঃপর আসমা একটি খলে হাতে নিলেন এবং তাতে কিছু কঙ্কর রাখলেন। যাতে বুঝা যায় যে, তাতে মাল রয়েছে। অতঃপর তার ওপর একটি কাপড় দ্বারা বাঁধলেন এবং তা তার দাদার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আর তখন তার চোখের ‘আলো ছিল প্রায় নিভু নিভু অবস্থায়। ফলে সে চোখে কম দেখতে পেত। অতঃপর আসমা বললেন, হে আমার দাদা। দেখুন, আমাদের পিতা আমাদের জন্য কত মাল রেখে গেছেন? তখন সে তাতে হাত রাখল এবং বলল, যদি এগুলো তোমার পিতা তোমাদের জন্য রেখে গিয়ে থাকেন, তাহলে ভালো করেছে। এভাবে কৌশল অবলম্বন করে আসমাতার দাদাকে সান্ত্বনা দান করলেন। এখানে শুধুমাত্র বৃদ্ধ ব্যক্তিকে শান্ত করার জন্যই এ কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। তাছাড়া আসমা নিজেও চাননি যে, তাদের এ অসহায় অবস্থায় কোনো মুশরিক তাদের উপর হস্তক্ষেপ করুক, যদিও তার দাদা হয়।
৪৩.এ বিষয়ে ইমাম আহমদের বর্ণনা
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, ইয়াহইয়া ইবনে আব্বাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন আবু বকর টুল্ল রাসূল-এর সাথে হিজরত করতে বের হন, তখন আবু বকর টুল্ল তার সমস্ত মাল নিয়ে নেন। যার পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার অথবা ছয় হাজার দিরহাম।
পৃষ্ঠা:৩২
এমতাবস্থায় তার দাদা আবু কুহাফা আসল। তখন তার চোখের আলো চলে গিয়েছিল। অতঃপর সে বলল, আমি তো দেখতে পাচ্ছি যে, তোমাদের পিতা নিজেকে কষ্টে ফেলার পর তোমাদেরকেও মাল দ্বারা কষ্টের মধ্যে ফেলে গেছে। অতঃপর আসমা কিছু পাথর হাতে নিয়ে তা বাড়ির বারান্দায় রাখলেন এবং তার দাদা তাতে হাত দিয়ে দেখলেন। তারপর তা একটি কাপড়ের মধ্যে রাখলেন এবং হাতে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর হে আমার দাদা! দেখুন, আমাদের পিতা আমাদের জন্য কত মাল রেখে রেছেন? তখন সে বলল, যদি এগুলো তোমার পিতা তোমাদের জন্য রেখে গিয়ে থাকেন, তাহলে ভালো করেছে। আসমা বলেন, আল্লাহর কসম! তিনি (আবু বকর পুত্র) আমাদের জন্য কিছুই রেখে যাননি। আমি শুধু আমার দাদাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যই এ পন্থা অবলম্বন করেছিলাম।
88.নবী আগমনের সংবাদ বাহিকা আসমা
আসমা ছিলেন প্রথমযুগে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। আর তাই আল্লাহ তায়ালাও ইচ্ছা পোষণ করছিলেন যে, তার দ্বারা মহান হিজরতের দিন একক কোনো অবদান করিয়ে নেবেন এবং মুসলিম নারীদের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে দেবেন। যখন আল্লাহ তায়ালা হিজরত করার অনুমতি দিলেন, তখন সাহাবীগণ দলে দলে হিজরত করে মদিনায় যেতে লাগলেন। এমনকি আস্তে আস্তে মক্কা খালি হতে শুরু করল। এ পরিস্থিতি দেখে মক্কার কুরাইশ নেতারা আতংকিত হয়ে গেল এবং মুসলমানদেরকে ধমানোর জন্য মদিনায় যাওয়ার প্রধান প্রধান রাস্তায় পাহারা বসিয়ে দিল। কিন্তু তবুও মুসলমানরা তাদেরকে ফাঁকি দিয়ে যে যেভাবে সক্ষম হয়েছে সে সেভাবে মদিনার
পৃষ্ঠা:৩৩
উদ্দেশ্যে হিজরত করে চলে গেল। এতে মদিনায় এক ধরনের থমথমে ভাব নেমে এল, যা ছিল কোনো সামাজিক মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর। এভাবে মুসলমানরা হিজরত করে মদিনায় গিয়ে পূর্ববর্তী হিজরতকারীদের সাথে মিলিত হতে লাগল। ফলে আবু বকর মুত্র ও হিজরত করার ইচ্ছা পোষণ করে প্রিয় বন্ধু নবী-এর কাছে অনুমতি চাওয়ার জন্য এলেন। তখন নবী তাকে বললেন, “হে আবু বকর। তুমি হিজরতের ব্যাপারে তাড়াহুড়া কর না। সম্ভবত আল্লাহ তোমাকে আমার সাথি বানাবেন।” এ পবিত্র সংবাদ শুনে আবু বকর খুবই উদ্ভাসিত হলেন এবং মনে মনে খুবই প্রফুল্ল অনুভব করলেন। সাথে সাথে এও ভাবতে লাগলেন যে, তিনি যে মদিনায় হিজরত করার ব্যাপারে নবী -এর সাথি হতে যাচ্ছেন, এতে তার করণীয় কি? আর কখনইবা তার সাথি হিজরতে বের হওয়ার জন্য ডাক দেবেন? এসব ভেবে ভেবে তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন এবং প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে লাগলেন। অতঃপর আবু বকর টুসু এই সৌভাগ্যপূর্ণ সংবাদটি নিয়ে দুই মেয়ে আসমা ও আয়েশা -এর সাথে আলোচনা করছিলেন। আর তারাও ছিলেন সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তারা এ সংবাদ শুনে খুবই খুশি হলেন এবং এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ করতে থাকেন। দেখতে দেখতে হঠাৎ একদিন নবী আল্লাহর পক্ষ থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করার অনুমতি পেয়ে গেলেন। সুতরাং রাসূল দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বের হয়ে গেলেন এবং মুশরিকদেরকে ধোঁকা দিলেন। কেননা, তারা তাদের হিজরতের কোনো কিছুই দেখতে পেল না। অনুমতি পাওয়ার পর রাসূল তাঁর বন্ধু আবু বকর সিদ্দীক টুদ্র-এর বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন। অতঃপর আবু বকর টু-এর বড় মেয়ে আসমা রাসূল-কে আসতে দেখলেন এবং তাঁর পিতাকে বললেন, হে আমার পিতা। রাসুল এ অসময়ে আসতেছেন। কিন্তু সাধারণত
পৃষ্ঠা:৩৪
তিনি এ সময় আগমন করেন না। তখন আবু বকর দ্রে উঠে দাঁড়ালেন এবং রাসূল-কে আমন্ত্রণ জানাতে গেলেন এবং বললেন, আমার পিতা- মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আল্লাহর শপথ! আপনি তো এ সময় কোনো বিশেষ কারণ ব্যতীত আগমন করেন না। নিশ্চয় আপনার আগমনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। অতঃপর যখন তিনি ঘরের সামনে গেলেন তখন ঘরে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি চাইলেন। ফলে অনুমতি দেয়া হলে তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন এবং আবু বকর টুড়ু-কে বললেন, তোমার নিকট যারা আছে তাদের সবাইকে বের করে দাও। আর তখন তার সাথে ছিল আসমা ও আয়েশা তাই আবু বকর মাত্র বললেন, এরা তো আমার দুই কন্যা। অতঃপর রাসূল বললেন, আমি হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার অনুমতি পেয়েছি। তখন আবু বকর আনন্দে কেঁদে কেঁদে বললেন, আমি কি আপনার সাথি হতে পারব? রাসূল বললেন, হ্যাঁ। আয়েশা (রা:) বলেন, আল্লাহর কসম! আবু বকরকে কাঁদতে দেখার পূর্বে আমি জানতাম না যে, অতি আনন্দের কারণেও মানুষ কাঁদতে পারে।
৪৫.দুই ফিতাওয়ালী
যখন রাসূল আবু বকর টু-কে নিয়ে হিজরত করার বিষয়টি চূড়ান্ত করলেন, তখন আসমা ও আয়শা উভয়ে সফরের জন্য খাদ্য সামগ্রী এবং সফরের অন্যান্য জিনিস পত্র প্রস্তুত করে দিচ্ছিলেন। অতঃপর যখন সব জিনিসপত্র একটা বস্তায় ভরলেন, তখন বস্তার মুখ বাঁধার জন্য একটি রশির প্রয়োজন অনুভব করলেন। ফলে আসমা তার কোমরের ফিতা খুলে দুই টুকরা করে এক টুকরো দিয়ে বস্তার মুখ বাঁধলেন এবং আরেক
পৃষ্ঠা:৩৫
টুকরো দিয়ে কোমর বাঁধলেন। অতঃপর রাসূল আসমা-কে যাতুন নেতাকাইন অর্থাৎ, দুই ফিতাওয়ালী উপাদিতে ভূষিত করেন। এ ঘটনা সম্পর্কে আয়েশা বলেন, আমরা সফরের মালামাল প্রস্তুত করে দিচ্ছিলাম। তখন মালপত্র বাঁধার জন্য একটি রশির প্রয়োজন হয়ে পড়ছিল। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই আসমা বিনতে আবু বকর নিজ কোমরের ফিতাটি খুলে দুই টুকরো করে এক টুকরো দিয়ে মালামাল বাঁধলেন এবং এক টুকরো দিয়ে নিজের কোমর বাঁধলেন। আর এজন্যই তার নাম দেয়া হয় “যাতুন নেতাকইন” বা দুই ফিতাওয়ালী।
৪৬.এ ব্যাপারে ইবনে সাদের বর্ণনা
ইবনে সাদ তার তাবাকাত নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, আসমা তার কোমরের রশিকে মাঝখান থেকে ছিড়ে দুই টুকরা করেন। এরপর এক টুকরা দিয়ে বস্তার মুখ বাঁধলেন এক টুকরা দিয়ে কোমর বাঁধলেন। আর তাই আসমা (রা:)-কে যাতুন নেতাকাইন বা দুই রশিওয়ালী বলে নামকরণ করা হয়।
৪৭.এ ব্যাপারে ইবনে আসীরের বর্ণনা
ইবনে আসীর বলেন, আসমা পুঃ কে দুই রশিওয়ালী বলা হয়। কেননা হিজরতের সময় তিনি নবী ও তার পিতা আবু বকর-এর সফরের মালামালগুলো প্রস্তুত করে দিচ্ছিলেন। কিন্তু এগুলো বাঁধার জন্য কোনো কিছু খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন তিনি নিজের কোমরের ফিতা খুলে দুই টুকরো করেন এবং এক টুকরো দিয়ে মালামাল বাঁধেনএবং এক টুকরা দ্বারা নিজের কোমর বাঁধেন। ফলে রাসূল করেন। তাকে “যাতুন নেতাকাইন” বলে নামকরণ
পৃষ্ঠা:৩৬
৪৮.তৎকালীন ফিরাউনের সামনে আসমা
মুশরিক সৈনিকেরা রাসূল কে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত ছিল। এমতাবস্থায় রাসুল তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন। অতঃপর যখন তৎকালীন ফেরাউন তথা আবু জাহেলসহ তার সহচররা জানতে পারল যে, মুহাম্মদ আবু বকর-কে নিয়ে হিজরত করেছেন। তখন তারা মক্কার আনাচে কানাচে বনী হাশেম এবং তাদের অনুগত গোত্রগুলোর ঘরে ঘরে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেল না। অবশেষে কুরাইশদের একটি দল আবু বকর এর বাড়িতে গেল। সে দলে ছিল সবচেয়ে বড় খবীশ আবু জাহেল। প্রথমে সে আবু বকর 醬ে, এর বাড়ির দরজায় লাথি মারল। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলা হলো। তখন বাড়িতে ছিল, আসমা আয়েশা এবং আয়েশা -এর জন্মদাত্রী মা উম্মে রুমানা। অতঃপর কথা বলার জন্য আসমা বের হয়ে এলেন। ফলে আবু জাহেল আসমা প্লে-কে জিজ্ঞাস করল, হে আবু বকরের মেয়ে! তোমার পিতা কোথায়? তখন আসমা প্লে বললেন, আল্লাহর কসম। তিনি কোথায় আছেন তা আমি জানি না? তখন সাথে সাথে আবু জাহেল আসমা-কে চড় মারল এবং এতে তার গালে দাগ বসে গেল। তবুও তিনি তার পিতা ও নবী-এর অবস্থানের কথা স্বীকার করেননি।
৪৯.আসমা-এর স্বামী যুবাইর বিন আওয়াম
তার নাম ছিল আবু আব্দুল্লাহ যুবাইর বিন আওয়াম বি খুয়াইলিদ বিন আসাদ বিন আব্দুল ইজ্জ বিন কুসাই আল কুরাইশী আল আসাদী। তার মায়ের নাম ছিল, সফীয়াহ বিনতে আব্দুল মুত্তালিব। যিনি রাসূল-এর ফুফু ছিলেন এবং প্রথমযুগে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। তাছাড়া তিনি হিজরতও করেছিলেন।
পৃষ্ঠা:৩৭
যুবাইর বিন আওয়াম পনের বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হাফেজ আবু নাঈম বলেন, যুবাইর দ্রে যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তার চাচা তাকে একটা চাটাই বা ছালা জাতীয় বস্তুর সাথে বাঁধে এবং পাশে আগুন জ্বালায়। এরপর বলে, হে যুবাইর! ইসলাম ত্যাগ কর। তখন যুবাইর স্ত্র বলেছিলেন, আমি কখনোই কুফরী করতে পারব না। যুবাইর প্লে-এর গায়ের রং ছিল শ্যাম বর্ণের। শরীরে মাংস ছিল পরিমিত, দাড়ীগুলো হালকা ছিল। বলা হয়ে থাকে তিনি ছিলেন, এতই লাম্বা গড়নের যে, যখন তিনি উটের মধ্যে আরোহণ করতেন তখন তার পা নিচে নামানো প্রয়োজন হতো না।
৫০.যুবাইরের কিছু বৈশিষ্ট্য
তিনি ইসলামের প্রথম যুগে ১৫, ১৬ কিংবা ১৮ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার চাচা তাকে ইসলাম ত্যাগ করার জন্য অনেক কষ্ট দেয়, কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি দুই বার হাবসায় (আবিসিনিয়া) হিজরত করেন। তিনি মদিনাতেও হিজরত করেন। রাসুল তার মাঝে এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ -এর মাঝে বন্ধুত্ব তৈরি করে দেন।
৫১.সর্বপ্রথম আল্লাহ রাস্তায় তরবারী উত্তোলনকারী
যুবাইর ছিলেন আল্লাহর পথে প্রথম তরবারী উত্তেলনকারী ব্যক্তি। যখন তার কানে পৌঁছল যে, রাসূলকে পাকড়াও করা হয়েছে, যা ছিল শয়তানের ছড়ানো একটি গুজব। তখন যুবাইর টুল্ল তার তরবারী নিয়ে বের হয়ে গেলেন। আর রাসূল তখন মক্কার কোনো এক উঁচু স্থানে অবস্থান করছিলেন। এমতাবস্থায় যুবাইর গুদ্র-এর সাথে রাসলু-এর
পৃষ্ঠা:৩৮
সাক্ষাত হয়ে গেল। তখন রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, হে যুবাইর! তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেন, আমি খবর পেয়েছি যে, আপনাকে পাকড়াও করা হয়েছে। অতঃপর রাসূল তাকে শান্ত করলেন এবং তার জন্য ও তার তরবারী উত্তোলনের জন্য দু’আ করলেন।
৫২.যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী
রাসূল যতগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন সবগুলো যুদ্ধে যুবাইর (রা:) অংশগ্রহণ করেছেন। তাছাড়া তিনি ইয়ারমুক ও মিশর বিজয়ের যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তাই তিনি যুদ্ধের জন্য অসংখ্য মাল সদকা করতেন।
৫৩.নবী-এর শিষ্য
ইমাম আহমদ, ইমাম ইবনে কাসীর, তাবারানী তার আল কাবীর গ্রন্থে বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ম্রে বলেন, রাসূল বলেছেন, প্রতিটি নবীরই একজন করে শিষ্য থাকে। আর আমার শিষ্য হচ্ছে যুবাইর। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমার ফুফাতো ভাই যুবাইর। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তোমরা দুইজন আমার শিষ্য। এর দ্বারা তিনি যুবাইর ও তালহা -কে বুঝিয়েছেন। অন্য বর্ণনায় আছে, যুবাইর আমার ফুফাতো ভাই এবং আমার উম্মতের মধ্য হতে আমার শিষ্য।
পৃষ্ঠা:৩৯
৫৪.বিজয়ী যুবাইর
বুখারী, মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর প্লাষ্ট্র হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা যুবাইর ন্দ্রে আমাকে বলেছেন, রাসূল বলেছেন, কে বনী কুরাইযার কাছে গিয়ে আমাকে তাদের খবর এনে দিতে পারবে? যুবাইর (রা:) বলেন, আমি তাদের খবর আনার জন্য গেলাম। অতঃপর যখন ফিরে এলাম, তখন রাসূল তোমার জন্য কুরবান হোক। বললেন, হে যুবাইর! আমার পিতা-মাতা বিঃ দ্রঃ আরব দেশের লোকেরা কারো প্রতি খুশি হলে এ বাক্য উচ্চারণ করে থাকে, আর নবী ও তাই করলেন, যা তিনি জীবদ্দশায় অন্য কারো ক্ষেত্রে করেননি।
৫৫.যুবাইর-এর দানশীলতা
যুবাইর -এর এক হাজার গোলাম বা দাস ছিল। প্রত্যেকে প্রতিদিন যা উপার্জন করত সবগুলোই যুবাইর -এর হাতে তুলে দিত এবং সেসব মালের কোনটিই তার বাড়িতে প্রবেশ করত না। বর্ণিত আছে, প্রতি রাত্রেই তিনি এগুলো বণ্টন করে সদকা করে দিতেন এবং কোনো কিছুই বাকি রাখতেন না।
পৃষ্ঠা:৪০
৫৬.যুবাইরের ঋণ পরিশোধ
আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জামাল (উষ্ট্রের) যুদ্ধের দিন (আমার পিতা) যুবাইর যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকলেন। আমি গিয়ে তাঁর নিকট দাঁড়ালাম। তিনি বললেন, হে বৎস! আজকে যারা মারা যাবে, তারা হয় যালিম নয়তো মাযলুম হয়ে মারা যাবে। আমার মনে হয়, আমি মাষলুম হিসেবে মারা যাব। এ মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা আমার ঋণের জন্য। তুমি কি মনে কর আমার ঋণ পরিশোধের পর আমার সম্পদ থেকে কিছু বাকি থাকবে? তিনি আরো বললেন, হে বৎস! (আমার মৃত্যুর পর) তুমি আমার সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে তা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করে দেবে। আর আমি এক-তৃতীয়াংশ সম্পদের ব্যাপারে ওয়াসিয়ত করে যাচ্ছি। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর টুল্ল বলেন, অতঃপর তিনি ঋণ পরিশোধের পর বাকী সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ওয়াসিয়তের জন্য আদেশ করলেন। তিনি বললেন, আমার ঋণ পরিশোধ করার পর যদি কিছু সম্পদ বেশি থেকে যায় তাহলে তা তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ তোমার সন্তানদের দান করবে। হিশাম বলেন, সে সময় আব্দুল্লাহ্র কোনো কোনো ছেলে যুবাইরের সন্তানদের সমান বয়স ছিল। যেমন খুবাইব ও আব্বাদ। সেই সময় যুবাইরের নয়টি ছেলে ও নয়টি মেয়ে সন্তান ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর ব্লু বলেন, অতঃপর তিনি (যুবাইর) আমাকে বার। বার তার ঋণ সম্পর্কে আদেশ করে বলেছিলেন, হে বৎস! যদি তুমি (কোনো সময় ঋণ পরিশোধ) তোমার আয়ত্তের বাইরে মনে কর, তাহলে আমার অভিভাবকের কাছে সাহায্যপ্রার্থী হয়ো। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বলেন, আল্লাহর কসম! আমার অভিভাবক বলতে তিনি কাকে বুঝাচ্ছিলেন, তা বুঝতে না পেরে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আব্বাজান! আপনার অভিভাবক কে? তিনি বললেন, আল্লাহ!
পৃষ্ঠা ৪১ থেকে ৬০
পৃষ্ঠা:৪১
আবদুল্লাহ বলেন, আল্লাহর কসম। তাঁর ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে যখনই আমি কোনো বিপদ বা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি, তখনই আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেছি, হে যুবাইরের অভিভাবক। তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিন। অতঃপর আল্লাহ ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর উন্দ্র বলেন, (সে যুদ্ধে) যুবাইর শহীদ হলেন, তিনি ‘গাবা’ নামক স্থানে কিছু জমি, মদিনাতে এগারো খানা ঘর, বসরায় দু’টি ঘর, কুফায় একটি ঘর এবং মিসরে একটি ঘর ছাড়া (নগদ) দিনার বা দিরহাম কিছুই রেখে গেলেন না। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর গুল্লু বলেন, তার ঋণ ছিল এরূপ যে, কোনো লোক এসে তার কাছে অর্থ আমানত রাখতে চাইলে যুবাইর তাকে বলতেন, এভাবে নয়; বরং ঋণ হিসেবে রাখতে পার। কেননা, ঐভাবে তা ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আমি বেশি ভয় করি। তিনি কখনো শাসন ক্ষমতা, খিরাজ বা কর আদায় বা অনুরূপ দায়িত্বের কোনো চাকুরি গ্রহণ করেননি। শুধুমাত্র নবী আবু বক্ক, ওমর ও উসমানের সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বলেন, আমি তাঁর সমস্ত ঋণ হিসাব করে দেখলাম তা বাইশ লক্ষ দিরহামে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, একদিন হাকীম ইবনে হিযাম আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর চন্দ্র-এর সঙ্গে দেখা করে বললেন, ভাতিজা, আমার ভাইয়ের (যুবাইরের) ঋণের পরিমাণ কত? তখন আবদুল্লাহ সঠিক পরিমাণ লুকিয়ে রাখতে চেয়ে বললেন, এক লাখ দিরহাম। এ কথা শুনে হাকীম বলে উঠলেন, আমার মনে হয় না যে, তোমাদের সকল সম্পদ দিয়েও এতো ঋণ পরিশোধ করা যাবে। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ তাকে বললেন, যদি উক্ত ঋণের পরিমাণ বাইশ লক্ষ দিরহাম হয় তবে আপনি কি মনে করেন? তিনি বললেন, তাহলে আমি মনে করি, এ ভার বহন করা তোমাদের আয়ত্বের বাইরে। আর এ সম্পর্কে তোমরা যদি (সত্য সত্যই) অচল হয়ে পড়, তাহলে আমাকে বলবে।
পৃষ্ঠা:৪২
বর্ণনাকারী বলেন, যুবাইর “গাবা’র একটি জমি এক লক্ষ সত্তর হাজার দিরহামে ক্রয় করেছিলেন। আর আবদুল্লাহ তা ষোল লক্ষ দিরহামে বিক্রি করে দিলেন। অতঃপর আবদুল্লাহ তাঁর ঋণ পরিশোধ করতে শুরু করলেন এবং ঘোষণা করে দিলেন, যুবাইরের কাছে যার যার পাওনা আছে সে যেন ‘গাবা’ নামক স্থানে এসে তা গ্রহণ করে। সুতরাং আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফর আগমন করলেন। যুবাইরের কাছে আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফরের পাওনা ছিল চার লক্ষ দিরহাম। তিনি আবদুল্লাহ্র নিকট এসে বললেন, আপনারা চাইলে আমি তা মাফ করে দিতে পারি। কিন্তু আবদুল্লাহ বললেন, না, তার দরকার নেই। এরপর আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফর বললেন, আপনারা চাইলে আমার পাওনা সবার পরে পরিশোধ করতে পারেন। এবারও আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বললেন, না, তারও প্রয়োজন হবে না। তখন আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফর বললেন, তাহলে আমাকে একখণ্ড ক্ষেত দিয়ে দিন। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বললেন, আপনাকে এখান থেকে ঐ পর্যন্ত ক্ষেত দেয়া হলো। বর্ণনাকারী বলেন, (গাবার) এক খণ্ড ক্ষেত বিক্রি করে তিনি তার ঋণ সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করলেন এবং এরপরও সাড়ে চার অংশ বাকি থাকল। পরে কোনো এক সময় (আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর) মু’আবিয়া এর নিকট গমন করলেন। সেই সময় তার কাছে আমর ইবনে উসমান, মুযির ইবনে যুবাইর এবং ইবনে যাম’আহ হাজির ছিলেন। মু’আবিয়াহ তাকে (আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে) জিজ্ঞেস করলেন, ‘গাবার’ জমির দাম কত হয়েছিল? আবদুল্লাহ বললেন, এক অংশ এক লক্ষ দিরহাম। মু’আবিয়াহ্ বললেন, এখন কতটা অংশ বাকি আছে? আবদুল্লাহ উত্তর দিলেন, সাড়ে চার অংশ। মুনযির ইবনে যুবাইর বলেন, আমি এক অংশ এক লক্ষ দিরহাম দিয়ে ক্রয় করলাম। আমর ইবনে উসমান বললেন, এক অংশ আমিও এক লক্ষের বদলে ক্রয় করলাম। ইবনে যাম’আহ্ বললেন, এক লক্ষের বদলে আমিও এক অংশ কিনে নিলাম। এবার মু’আবিয়াহ্ বললেন, এখন কত অংশ অবশিষ্ট থাকল? আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর বললেন, দেড় অংশ। তিনি বললেন, দেড় লক্ষ দিয়ে আমি তা ক্রয় করে নিচ্ছি। আবদুল্লাহ ইবনে
পৃষ্ঠা:৪৩
যুবাইর বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফার তার অংশ মু’আবিয়ার নিকট ছয় লক্ষ দিরহামে বিক্রি করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর স্রে তার পিতা যুবাইর -এর সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে দিলে তার (যুবাইরের) অন্যান্য সন্তানগণ বললেন, পিতার পরিত্যক্ত সম্পদ আমাদের মধ্যে ভাগ করে দিন। তখন আবদুল্লাহ (তাদেরকে) বললেন, আল্লাহর কসম! যুবাইরের নিকট যাদের পাওনা আছে, তারা আমাদের নিকট এসে তা নিয়ে যাক, চার বছর পর্যন্ত হজ্জের দিন এ কথা ঘোষণা না করা পর্যন্ত তা আমি তোমাদেরকে ভাগ করে দেব না। বর্ণনাকারী বলেন, প্রতিবছর হজ্জের সময় তিনি ঐ ঘোষণা দিতেন। এভাবে চার বছর অতিক্রম হলে তিনি তা সকলের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, যুবাইরের চারজন স্ত্রী ছিলেন। ওয়াসীয়তের তথা এক-তৃতীয়াংশ আদায়ের পর প্রত্যেক স্ত্রী অংশমত বার লক্ষ দিরহাম করে পেলেন। আর তার সমস্ত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল বায়ান্ন লক্ষ দিরহাম। বলা হয়ে থাকে যে, তার সর্বমোট ঋণ বের হয়েছিল বাইশ লক্ষ দিরহাম। অতঃপর তার সবগুলোই আদায় করা হয়। এরপর তার বাকি সম্পদ থেকে তার ওয়াসীয়তের এক-তৃতীয়াংশ মাল বের করা হয়। অতঃপর তা বণ্টন করে দেয়া হয়। ফলে প্রত্যেক স্ত্রীই বার লক্ষ দিরহাম করে পায়। এভাবে ঋণ, ওয়াসীয়ত এবং মিরাস সব মিলে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৫ লক্ষ ৮০ হাজার দিরহামে। আর এটাই সঠিক।ইমাম বুখারী তার মুজমাউল আহবাব গ্রন্থে উল্লেখ করেন, যুবাইর এর এক হাজার গোলাম ছিল। তিনি তাদের দ্বারা ভূমি কর তুলতেন। একদা তিনি একই বৈঠকে সবগুলো গোলামকেই সদকা করে দেন এবং এর বিনিময়ে কোনো কিছুই গ্রহণ করেননি। যুবাইর ছু ছিলেন খুবই দানশীল ব্যক্তি এবং অত্যন্ত সহনশীল। এই মহৎ ব্যক্তিত্ব ৬৩ হিজরীর জমাদিউল উলা মাসে জামালের যুদ্ধে শহীদ হন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬৭ মতান্তরে ৬৪ বছর।
পৃষ্ঠা:৪৪
৫৭.যুবাইর সম্পর্কে হাসান-এর কবিতা
হাসান ইবনে সাবিত গাত্র যুবাইর ত্রে সম্পর্কে বলেন, যুবাইর তার তরবারীর মাধ্যমে রাসূল-এর ওপর থেকে অনেক বিপদ সরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে এসবের প্রতিদান দেবেন। তার মতো কেউ অতীতে ছিল না এবং ভবিষ্যতেও কেউ আসবে না। হে বনী হাশেমের সন্তান তোমার কর্ম ও প্রশংসা খুবই উত্তম।
৫৮.নবী -এর খলিফা ও প্রিয়জন হিসেবে যুবাইর
সহীহ বুখারীতে মারওয়ান বিন হাকাম টু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান বিন আফফান টু-কে যখন বয়কট করা হলো, তখন কুরাইশদের মধ্য হতে একজন লোক উসমান টু-এর কাছে এসে বলল, আপনি কাকে খলিফা হিসেবে দেখতে চান? তখন তিনি চুপ থাকলেন। আবার অন্য একজন লোক উসমান ট্রে-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কাকে খলিফা হিসেবে দেখতে চান? তখনও তিনি চুপ থাকলেন। লোকেরা এক পর্যায়ে উসমান ট্রেকে বলল, আপনি কি যুবাইর ট্রে-কে খলিফা হিসেবে দেখতে চান? তখন উসমান ম্রে বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর উসমান তুল্ল বলেন, ঐ সত্ত্বার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই যুবাইর বর্তমানে সকল লোকের চেয়ে উত্তম। নিশ্চয় যুবাইর রাসূল-এর কাছে খুব প্রিয় ছিলেন।
পৃষ্ঠা:৪৫
৫৯.বদরী সাহাবী যুবাইর
উরওয়াহ বিন যুবাইর হতে বর্ণিত, ইয়ারমুকের যুদ্ধের দিন নবীন্দ্র-এর সাহাবীরা যুবাইর-কে বললেন, হে যুবাইর! আস আমরা যুদ্ধের প্রস্তুতি স্বরূপ কিছু মারধর করি। তখন যুবাইর টুল্ল তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেন এবং তারাও ধরল। তখন তারা যুবাইর জু-এর ঘাড়ে দুবার মারে, যে রকমটি মারা হয়েছিল বদর যুদ্ধের দিন। উরওয়াহ বিন যুবাইর বলেন, আমি ঐ ক্ষত স্থানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে খেলা করতাম। আর তখন আমি ছোট ছিলাম।
৬০.আসমা-এর সন্তানাদি
আসমা-এর গর্ভে যাদের জন্ম হয় তারা হলেন। ১. আব্দুল্লাহ ২. উরওয়াহ ৩. মুনযির ৪. আসেম ৫. মুহাজির ৬. খাদিজাতুর কুবরা ৭. উম্মুল হাসান ও ৮. আয়েশা। এরা সকলেই ছিলেন রাসূল এ শিষ্য যুবাইর টুল্ল-এর সন্তান-সন্তুতি।
৬১.এ ব্যাপারে অপর বর্ণনা
কেউ কেউ বলেন, যুবাইর-এর সন্তান-সন্ততী ছিল মাত্র চারজন। তারা হলেন: ১. আব্দুল্লাহ ২. উরওয়াহ ৩. মুনজির ও ৪. মুহাজির।
পৃষ্ঠা:৪৬
৬২.আসমা প্রতি নবী-এর বরকত
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, আসমা বিনতে আবু বকর যুবাইর টুকে মক্কাতে থাকতে গর্ভধারণ করেন। আসমা আব্দুল্লাহ ইবন বলেন, আমি গর্ভবতী অবস্থায় মদিনায় হিজরত করি। যখন কুবা নামক স্থানে আসলাম তখন আমি আব্দুল্লাহকে জন্ম দিলাম। আসমা পুল্ল বলেন, এরপর আমি আমার নবজাতক সন্তানকে নিয়ে রাসুল -এর দরবারে আসি এবং তার কোলে রাখি। এরপর নবী খেজুর নিয়ে আসতে বললেন। খেজুর নিয়ে আসা হলে তিনি তা চিবালেন এবং বাচ্চার মুখে তার রস দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এটাই ছিল প্রথম শিশু যার পেটে সর্বপ্রথম রাসূলের থুথু প্রবেশ করে। এভাবে তিনি খেজুর দ্বারা তাহনীক করলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ বাচ্চা হলো এমন এক বাচ্চা যে ইসলামে সর্বপ্রথম জন্মগ্রহন করে।
৬৩,আসমা এবং তার হিজরত
যুবাইর বিন আওয়াম আসমা -এর পূর্বেই হিজরত করে মদিনা মুনাওয়ারায় আবু বকর সিদ্দীক এের কাছে চলে যান। অতঃপর উভয়েই মক্কায় লোক পাঠিয়ে তার পরিবারের লোকদেরকে মদিনায় হিজরত করার জন্য আদেশ দেন। তখন আসমা পরিবারের কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে তার বোন আয়েশার এবং সাথে মদিনায় হিজরত করেন। আর তারা সকলেই কেবলমাত্র মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হিজরতে বের হন।
পৃষ্ঠা:৪৭
৬৪.মুহাজিরদের মধ্য হতে প্রথম নবজাতক
আসমা বিনতে আবু বকর গুচ্ছে যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন। ফলে তিনি মদিনায় পৌঁছতেই একটি সন্তান জন্ম দেন। আর এই সন্তানই ছিল ইসলামে মুহাজিরদের মধ্যে প্রথম নবজাতক।
৬৫.কুবা, নবজাতক সন্তান এবং নবী এর থুথু
আবু ওমর আল কুরতুবী (রহ.) হিশাম ইবনে উরওয়াহ থেকে, তিনি আসমা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর েআমার গর্ভে ছিল, তখন আমি হিজরত করার জন্য মদিনার উদ্দেশ্যে বের হই। অতঃপর যখন মদিনায় আসি এবং কুবাতে অবতরণ করি, তখন কুবাতেই একটি সন্তান জন্ম দান করি। অতঃপর আমি রাসূল-এর কাছে আসলাম এবং তাকে রাসূল-এর কোলে রাখলাম। তারপর তিনি একটি খেজুর আনতে বললেন। অতঃপর তা চিবিয়ে তার রসটুকু তার (আবদুল্লাহর) মুখে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনিই (আব্দুল্লাহ) ছিলেন প্রথম শিশু, যার মুখে সর্বপ্রথম রাসূল-এর খুধু প্রবেশ করে। আসমা শুল্লে বলেন, এভাবে তিনি খেজুর দ্বারা তাহনীক করান এবং তার জন্য বরকতের দু’আ করেন। আর তিনি ছিলেন মুহাজিরদের মধ্যে প্রথম জন্ম গ্রহণকারী সন্তান। আসমা কে বলেন, এ সন্তান জন্মগ্রহণ করার সংবাদে সকলেই খুবই আনন্দিত হয়। কেননা, তখন মুসলমানদের উদ্দেশ্যে ইহুদীরা বলত যে, তোমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের কোনো সন্তান জন্ম লাভ করবে না।
পৃষ্ঠা:৪৮
৬৬.নবীকর্তৃক নবজাতকের নামকরণ
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর প্লে-এর জন্মে সবাই আনন্দিত হয়। রাসূল (সা:) নবজাতকের নানা আবু বকর স্ত্র-কে আদেশ করেন, যেন তিনি বাচ্চাটির কানে নামাযের আযানের মত্যে আযান দেন। ফলে আবু বকর আযান দিলেন। আর নবী ঐ বাচ্চার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ। তার ডাক নাম রাখলেন তার নানার নামানুসারে আবু বকর।
৬৭.আসমা তার ছেলেকে লালন-পালন করতে থাকেন
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর তাকওয়ার কাঠগড়ায় এবং মজবুত ঈমানের ভিত্তির ওপর জন্মগ্রহণ করেন। ফলে আসমা বিনতে আবু বকর তোর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর -কে এমনভাবে গড়তে থাকেন, যাতে করে তিনি মুসলমানদের উচ্চ আসনে আরোহণ করতে পারেন এবং তিনি যেন এমন সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত হন, যাদের দুনিয়ার জীবন সর্বদা ইসলামের জন্য উৎসর্গ।
৬৮.এ বিষয়ে আরো কিছু কথা
আসমা তার ছেলের ব্যাপারে খুব গুরুত্ব দিতেন। তিনি তার ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ল্লে-কে নিত্য নতুনভাবে গড়ে তুলতে লাগলেন। তাকে তরবারী দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন। তাকে খুৎবা শিক্ষা দিতে লাগলেন। এভাবে সার্বিক দিক দিয়ে তিনি তার ছেলেকে লালন-পালন করতে লাগলেন।
পৃষ্ঠা:৪৯
৬৯.জ্ঞানসম্পন্না আসমা এবং সদকা
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, একদা একজন লোক আসমা বিনতে আবু বকর-এর কাছে এসে বলল, হে আব্দুল্লাহর মা আসমা! আমি একজন গরিব মানুষ। আমি আপনার বাড়ির পাশে বসে কিছু বিক্রয় করার ইচ্ছা পোষণ করেছি। তখন আসমা অন্যত্র গিয়ে বিক্রি করার কথা বললেন। কিন্তু একটু পর সে লোক আবার আসলে আসমা প্লা তাকে বললেন, মদিনাতে আমার বাড়ি ছাড়া আর কারো বাড়ি দেখ না? তখন যুবাইর বললেন, হে আসমা! তোমার কি হয়েছে? তুমি লোকটিকে কেন বাঁধা প্রদান করছ? এই লোক যদি আমাদের বাড়ির পার্শ্বে বসে কিছু বিক্রি করে কিছু অর্থকড়ি অর্জন করতে পারে তাহলে সমস্যা কি? অতঃপর লোকটি বাড়ির পার্শ্বে বসেই বিক্রয় করতে থাকে। এদিকে যুবাইর প্লে গোডাউনে গেলেন এবং কিছু মালামাল এনে আসমা -এর হাতে দিলেন। অতঃপর আসমা শুক্র সেগুলো ঐ গরিব লোকটিকে সদকা করে দেন।
৭०.স্বামীর সাথে কাজ
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, হিশাম ইবনে উরওয়া বলেন, আমাকে আমার পিতা উরওয়া গুড় আসমা প্লায়া হতে সংবাদ দিয়েছে যে, তিনি বলেন, যখন আমি যুবাইর টু-কে বিবাহ করি, তখন ঘোড়া ছাড়া তার কোনো সম্পদ বা দাস কিংবা অন্য কোনো কিছুই ছিল না। অতঃপর আমি তার ঘোড়াকে পানি, ঘাস, ভূসি ইত্যাদি খাওয়াতাম। যাতে করে ঘোড়াটি মোটাতাজা ও স্বাস্থ্যবান হতে পারে এবং এর দ্বারা বড় বড় কাজ সম্পাদন করা যেতে পারে।
পৃষ্ঠা:৫০
৭১.স্বামীর মাল হতে সদকা
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, আসমা রাসুল -কে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমার স্বামী যুবাইর একজন কঠিন লোক। আমার কাছে মিসকিন আসে। আমি কি আমার স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার বাড়ি থেকে কোনো কিছু সদকা করতে পারব? নবী বললেন, সদকা কর। কিন্তু নিজের জন্য কিছু গ্রহণ করিও না। নতুবা আল্লাহ তোমাকে পাকড়াও করবেন।
৭২.যুবাইর-এর কঠোরতা
ইবনে ওয়াহাব মালেক থেকে বর্ণনা করেন, আসমা বিনতে আবু বকরের ব্যাপারে তার স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু দোষ-ত্রুটি তুলে ধরা হয়, যা আসমা প্লা-এর বিদূষী চরিত্রে আঘাত হানে। একদিন এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্বামী যুবাইর ন্দ্রে এক হাতে আসমা পু-এর চুল ধরে অপর হাত দ্বারা খুবই মারধর করেন। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, অধিক মারার কারণে আসমা আর মারধরকে ভয় পেতেন না। অতঃপর এক সময় আসমা বিষয়টি তার পিতা আবু বকরকে জানান। তখন আবু বকর মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, হে আমার মেয়ে! ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয় যুবাইর সৎ ব্যক্তি। হয়তবা জান্নাতেও সে তোমার স্বামী হবে।
পৃষ্ঠা:৫১
৭৩.এ ব্যাপারে অপর বর্ণনা
আসমা এত কঠোরতা সহ্য করতে না পেরে তার পিতাকে বিষয়টি জানালে তার পিতা তাকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন এবং বলেন, হে আমার মেয়ে! ধৈর্য্য ধারণ কর। কেননা, যখন কারো সৎ স্বামী থাকে এবং সে যদি তার স্ত্রী রেখে মারা যায়। আর ঐ স্ত্রী যদি অন্য কোনো স্বামীর সাথে পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়, তাহলে মহান আল্লাহ জান্নাতেও তাদেরকে একত্রিত করবেন।
৭৪.আসমা এর শাশুড়ী সাফীয়াহ আনহা
সাফীয়াহ যিনি ছিলেন, নবী-এর ফুফী, যুবাইর পুল্ল-এর মাতা এবং আসমা উল্ল-এর শাশুড়ী। তিনি খুব রাগী মানুষ ছিলেন। তিনি নতুন নতুন মহিলা সাহাবীদের জন্য কবিতা রচনা করতেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন স্পষ্টভাষী। উরওয়াহ বিন যুবাইর প্লে বলেন, একদা আমার দাদী সাফিয়াহ এবং আমার পিতা যুবাইর টু এর মধ্যে আসমা এর সম্পর্কে কিছু দোষত্রুটি নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছিল, যা আমার বোন খাদিজা বিনতে যুবাইর শুনে ফেলে। কারণ সে ছোট ছিল, বিধায় আমার দাদীর সাথে থাকত। সে কথাগুলো শুনে আমার মা আসমা-কে বলে দেয়। তখন আসমা তার শাশুরী সাফিয়াহ কে বললেন, হে আমার শাশুরী। আপনারা আমার এসব কি অভিযোগ তুলছেন? আমি কিন্তু আমার পিতার কাছে বলে দেব। অতঃপর সাফিয়াহ না আসমা এর ওপর খুবই রেগে যান এবং বিষয়টি তার পুত্রের কাছে বলেন। এ কথা শুনে যুবাইর টুল্ল তার স্ত্রীকে অনেক ধমকায় এবং মারধর করেন। পরে জানতে পারলেন যে, খাদিজা বিনতে যুবাইর এ খবর মাকে দিয়েছে, তখন থেকে খাদিজাকে সফীয়াহ তার ঘরে প্রবেশ করতে দেয়া বন্ধ করে দিল।
পৃষ্ঠা:৫২
৭৫.আসমা-এর তালাক
বৃদ্ধ বয়সে আসমা এবং যুবাইর -এর মধ্যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। তখন তাদের বড় ছেলে আব্দুল্লাহ তাদের মধ্যে সমাধা করতে আসলে যুবাইর দ্রে বলেন, হে আব্দুল্লাহ! তুমি যদি এখানে আস, তাহলে তোমার মা তালাক হয়ে যাবে। তবুও আব্দুল্লাহ ফলে আসমা উল্লা যুবাইর থেকে আলাদা হয়ে যান। চলে আসেন।
৭৬.অপর বর্ণনা
দামেস্কের ইতিহাস গ্রন্থের লেখক উরওয়াহ থেকে বর্ণনা করেন, একদা যুবাইর ল্লে তার স্ত্রী আসমা কে খুব মারধর করল। তখন আসমা আব্দুল্লাহ তার বড় ছেলে আব্দুল্লাহর নাম ধরে চিৎকার করে উঠল। তখন দৌড়ে আসলে তার পিতা যুবাইর তাকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! তুমি যদি এখানে আস তাহলে তোমর মা তালাক হয়ে যাবে। কিন্তু আব্দুল্লাহ তার পিতার কোনো বাঁধা না শুনে এগিয়ে আসে। তখন আসমা আলাদা হয়ে যায়।
৭৭.ওমর ফারুক-এর হাদিয়া
দামেস্কের ইতিহাস কিতাবের লেখক মুসয়াব বিন যুবাইর পুত্র থেকে বর্ণনা করেন। ওমর ইবনে খাত্তাব গুচ্ছ আসমা -এর জন্য এক হাজার দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) হাদিয়া নির্ধারণ করলেন।
পৃষ্ঠা:৫৩
৭৮.অপর বর্ণনা
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ফারুক মুহাজিরা (মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারিণী) মহিলাদের জন্য এক হাজার দিরহাম করে হাদিয়া নির্ধারণ করলেন। আর ঐ মুহাজির মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন উম্মে আবদ আসমা
৭৯.আসমা এর দাদা আবু কুহাফার ইসলাম গ্রহণ
ইমাম আহমদ যখন রাসূল আসমা হতে বর্ণনা করেন। আসমা বলেন, যুত্বয়া নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন তখন আবু কুহাফা তার ছোট একটি মেয়েকে বললেন, দেখতো সামনে কি দেখা যায়? আবু কুহাফা তখন অন্ধ ছিলেন। তাই তার মেয়েকে সামনে দেখতে বললেন। তখন মেয়ে উত্তর দিল, ঘোড়াতে করে কিছু লোক আসতেছে। আর ঐ দলেই ছিলেন রাসূল। রাসূল যখন সবাইকে নিয়ে মক্কার এক মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন আবু বকর তার পিতা আবু কুহাফা-কে রাসূল-এর কাছে নিয়ে আসলেন। নিয়ে আসার পর রাসূল বললেন, হে আবু বকর! এই বৃদ্ধ লোকটিকে কেন নিয়ে এসেছ? আমাকে বললেই তো আমি তার বাড়ি গিয়ে তার সাথে দেখা করতাম। আবু বকর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার যাওয়ার চাইতে তার আসাটা বেশি উপযুক্ত ও যুক্তিসঙ্গত। এরপর আবু কুহাফাকে রাসূল-এর সামনে বসানো হলো। অতঃপর রাসূলতার বুকে হাত রাখলেন এবং বললেন, ইসলাম কবুল কর। তখন আবু কুহাফা তথা আসমা এর দাদা ইসলাম কবুল করেন।
পৃষ্ঠা:৫৪
৮০.হাদীসের ব্যাপারে আসমা -এর জ্ঞান
মহিলা সাহাবীদের মধ্যে যারা হাদীস বর্ণনা করেছেন আসমা প্লে তাদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। আর এক্ষেত্রে প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছেন আয়েশা। আসমা সর্বমোট আটান্নটি হাদীস বর্ণনা করেন। যা তার স্বামী যুবাইর স্রে হতেও বেশি। তার স্বামী যুবাইর টু বর্ণনা করেন আটত্রিশটি হাদীস।
৮১.আসমা হতে বর্ণনাকারীগণ
পুরুষদের মধ্য হতে যারা আসমা হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন তারা হলেন, তার দুই ছেলে আব্দুল্লাহ ও উরওয়াহ ছুঁয়ে এবং তার নাতি আব্দুল্লাহ বিন উরওয়াহ ও তার দাস আব্দুল্লাহ বিন কায়াসান, মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির ও ওহাব বিন কায়াসান।আর মহিলাদের মধ্য হতে যারা তার থেকে হাদীস বর্ণনা করে তারা হলেন, ফাতেমা বিনতে মুনজির বিন যুবাইর, সাফিয়াহ বিনতে শাইবাহ, উম্মে কুলসুম যিনি হাজিবার দাসী ছিলেন। এছাড়াও আরো অনেকেই।
৮২.আসমা-এর বর্ণিত হাদীসসমূহ
আসমা পার হতে বর্ণিত হাদীসগুলো রয়েছে সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনান গ্রন্থ ও মুসনাদের গ্রন্থগুলোতে। ইমাম বুখারী ও মুসলিম ঐকমতভাবে আসমা কুল্লা হতে চৌদ্দটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী এককভাবে আসমা করেন। হতে চারটি হাদীস এবং মুসলিম এককভাবে চারটি হাদীস বর্ণনা
পৃষ্ঠা:৫৫
৮৩.নবী-এর সাহচর্যে আসমা
আহমদ (রহ.) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আসমা বিনতে আবু বকর ষ্ট্রে বলেন, আমরা হজ্জ করার জন্য রাসূল এর সাথে বের হই। যখন আমরা আরজ নামক স্থানে এসে পৌঁছি, তখন আমরা বিশ্রামের জন্য বিরতী গ্রহণ করি। আয়েশা নবী এর পাশে বসেন, আর আমি আমার পিতা আবু বকর গুল্লু-এর পাশে বসি। আর নবী এবং আবু বকর টু-এর উট বহনকারী লোকটি পিছনে ধীরে ধীরে আসতেছিল। সে যখন আসল তখন আবু বকর ফেলেছি। আবু বকর তাকে বললেন, উট কোথায়? সে বলল, উট হারিয়ে বললেন, একটা না হারিয়েছ তো আরেকটা কোথায়? কারণ তোমার সাথে তো দুটি উট ছিল। এ কথা বলেই আবু বকর উল্ল তাকে প্রহার করার জন্য অগ্রসর হলেন। তখন রাসূল মুচকি হাসতে থাকেন এবং বললেন, দেখ এই হজ্জ পালনকারীকে সে কি করছে। এ কথা বলে রাসূল আবু বকরকে বুঝালেন যে, হজ্জ পালন করা অবস্থায় মারামারি করা যাবে না।
পৃষ্ঠা:৫৬
৮৪.আসমা-এর আঘাত
আসমা বলেন, একবার আমি আমার ঘাড়ে আঘাত পেয়েছিলাম, তখন আমি আয়েশাকে বলি। অতঃপর সে এ বিষয়ে নবীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, হে আয়েশা! তুমি ঐ আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় হাত রেখে তিনবার এ দু’আটি পড়বে। بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اذْهِبْ عَلَى شَرَّ مَا أَجِدُ وَفُحْشَهُ بِدَعْوَةِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِ الْمَكِينِ عِنْدَكَ অর্থাৎ আল্লাহর নামে শুরু করছি যে, হে আল্লাহ! পবিত্র এবং তোমার নিকট সম্মানপ্রাপ্ত নবীর দু’আর বরকতের আমি যে কষ্ট অনুভব করছি তা দূর করে দাও। আসমা সুস্থ হয়ে যাই। বলেন, এরপর আমি এ পদ্ধতি অবলম্বন করে
৮৫.আসমা-এর জ্বরের চিকিৎসা
আসমা-এর নাতনি ফাতেমা বিনতে মুনযির বিন যুবাইর তিনি বলেন, যখন কোনো লোকের জ্বর আসত তখন আসমা হতে বর্ণিত। পানি নিয়ে আসতে বলতেন এবং ঐ পানি অসুস্থ ব্যক্তির গায়ে ঢালতেন এবং বলতেন, নবী আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যে, জ্বর হলে তোমরা পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর।
পৃষ্ঠা:৫৭
৮৬.আসমা-এর মাথা ব্যাথা
আসমা-এর যখন মাথা ব্যাথা হতো তখন তিনি তার হাতকে মাথায় রেখে বলতেন, হায়! কত পাপ করেছি। আর মহান আল্লাহর ক্ষমা তো এর চেয়েও অনেক অনেক বেশি।
৮৭.রিযিকের বরকত
ইমাম আহমদ (রহ.) বর্ণনা করেন, ওহাব বিন কাইসান বলেন, আমি আসমা বিনতে আবু বকর টুল্ল থেকে শুনেছি যে, আসমা বিনতে আবু বকর বলেছেন, একদা রাসূল আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আমি কিছু জিনিস গণনা করছিলাম এবং পরিমাপ ছিলাম। তখন রাসূল আমাকে বললেন, হে আসমা। এত গণনা কর না। তাহলে আল্লাহও তোমাকে গুনে গুনে নিয়ামত প্রদান করবেন। আসমা বলেন, রাসূল-এর এ কথার পর থেকে আমি আর কোনো কিছু বার বার গুনতাম না। এতে করে দেখতাম আমার রিযিক কমত না; বরং বরকত হতো।
৮৮.জনৈক মহিলার পর চুল ব্যবহার
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, আসমা বলেন, একজন মহিলা রাসূল (সা:)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বিবাহিতা একটি মেয়ে আছে। কোনো কারণে আমার মেয়ের চুলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমার মেয়ে বাহির থেকে খোলা চুল এনে মাথায় লাগায়, এটা কি ঠিক পরচুলা লাগিয়ে আছে? তখন রাসূল বললেন, আল্লাহ অভিশাপ করেছেন ঐ মহিলাদের প্রতি যারা সৌন্দর্য প্রকাশ করে।
পৃষ্ঠা:৫৮
৮৯.চিকিৎসিকা হিসেবে আসমা
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, আসমা যখন কোনো অসুস্থ মহিলাকে দেখতে যেতেন তখন কিছু পানি নিয়ে অসুস্থ মহিলার বুক বরাবর ছিটিয়ে দিতেন এবং বলতেন, নিশ্চয়ই রাসূল আমাদেরকে আদেশ দিতেন এই অসুখকে (জুরকে) পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করতে। রাসূল নিশ্চয় জ্বরের গরম জাহান্নামের গরমের অন্তর্ভুক্ত। বলেছেন,
৯০.মেঘলা দিনের রোযা
ইমাম আহমদ (র) তার মুসনাদে আহমদ বর্ণনা করেছেন, আসমা প্লে বলেন, রমযান মাসে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে সূর্য ডুবে গেছে মনে করে রাসূল-এর যুগে আমরা কোনো একদিন রোযা ভেঙ্গে ইফতার করে ফেলি। কিন্তু পরবর্তীতে সূর্য উঠতে দেখা যায়। অতঃপর রাসূল সময় থেকেই রোযা পূর্ণ করতে বলেন। কিন্তু কাযা করার কথা কিছু বলেনি।
৯১.এক মহিলা ও তার সতীন
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন, আসমা বলেন, একজন মহিলা নবী কে বলল, হে আল্লাহ রাসূল। আমার একটি সতীন আছে। আমি যদি আমার স্বামীর থেকে এমন কিছু গ্রহণ করি যা আমাকে দেয়া হয়নি। তাহলে আমার গুনাহ হবে কি? তখন রাসূল উত্তর দিলেন, যা কারো অংশ নয় এমন বিষয়ের মাধ্যমে উপকার গ্রহণকারী অন্যের কাপড় পরিধানকারীর মতো।
পৃষ্ঠা:৫৯
৯২.সদকাতুল ফিতর
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, আসমা বলেন, আমরা রাসূল যুগে দুই মুদ সদকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতাম। -এর
৯৩.সূর্য গ্রহণের নামায
ইমাম আহমাদ আসমা এর যুগে সূর্যগ্রহণ লাগলে নবী হতে বর্ণনা করে, আসমা বলেন, নবী দীর্ঘ সালাত আদায় করতেন। আসমা (রা:) বলেন, আমি দেখতাম আমার চাইতেও বয়সে অনেক বৃদ্ধ মহিলাকে এই সূদীর্ঘ সালাতে অংশগ্রহণ করতে। আবার আমার চাইতে অনেক দুর্বল মহিলাও এই সালাতে শরীক হয়। তখন আমি বললাম, আমি এই সুদীর্ঘ সালাতে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বেশি হকদার ঐ দুই মহিলার চাইতে।
৯৪.নবী-এর জুব্বা
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন, আসমা -এর দাস বলেন, একদা আসমা একটি জুব্বা বের করেন, যে জুব্বার হাতে রেশমের কাপড় ছিল। অতঃপর বলেন, এটা হলো রাসূল ﷺ এর জুব্বা, যা তিনি পড়তেন। রাসূল-এর মৃত্যুর পর এটা আয়েশা -এর কাছে ছিল। আয়েশা এরপর এটা আমার কাছে আসে। আমরা এই জুব্বার মাধ্যমে অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করব।’
পৃষ্ঠা:৬০
৯৫.হজ্জের বিষয়ে জ্ঞান
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন, মুসলিম আল-কুররী বলেন, আমি ইবনে আব্বাস মুতয়া হজ্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ হজ্জ পালন করার জন্য বলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ট্রে বললেন, এ হজ্জ পালন করা যাবে না। তখন ইবনে আব্বাস বললেন, তোমরা এ বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের মা আসমা -এর কাছে যাও। অতঃপর আসমা -এর কাছে গেলে তিনি উত্তর দিলেন, রাসূল হজ্জ পালন করার জন্য অনুমতি দিয়েছেন।
৯৬.পাথর নিক্ষেপ
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, আসমা -এর দাস আব্দুল্লাহ বলেন, আসমা হজ্জ করতে গিয়ে হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করেন। এরপর জামরাতে পাথর নিক্ষেপ করেন। এরপর বাড়িতে এসে ফজরের সালাত আদায় করেন।
৯৭.হজ্জে ইফরাদ
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর বলেন, হে লোকেরা। তোমরা হজ্জে ইফরাদ কর এবং হচ্ছে তামাকু ছেড়ে দাও। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, হে লোকেরা। হজ্জে তামান্ডুর ব্যাপারে তোমরা আব্দুল্লাহর মা আসমান-এর কাছে জিজ্ঞেস কর। অতঃপর লোকেরা আসমা প্লে-কে জিজ্ঞেস করলে আসমা রাসুল আমাদেরকে হজ্জে তামাকু করার অনুমতি দিয়েছেন। বলেন,
পৃষ্ঠা ৬১ থেকে ৮০
পৃষ্ঠা:৬১
৯৮.আসমা -এর ফুফীর হজ্জ
একদা রাসূল যাবায়াহ বিনতে যুবাইর বিন আব্দুল মুত্তালিব-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, কিসে তোমাকে হজ্জ করতে বাঁধা প্রদান করছে? মহিলাটি বলল, হে আল্লাহ রাসূল! নিশ্চয় আমি একজন দুর্বল মহিলা এবং আমি বাঁধাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা পোষণ করি। তখন রাসূল বলেন, আপনি হজ্জের ইহরাম বাঁধেন এবং যখন বাঁধাপ্রাপ্ত হবেন তখন হজ্জের ইহরাম খুলে ফেলবেন।
৯৯হজ্জ বা উমরার ইহরাম
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন, লোকেরা আসমা প্লে-কে হজ্জের ইহরাম বাঁধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তখন আসমা হুলায়ফা নামক স্থানে আসলাম তখন রাসূল বলেন, আমরা যখন যুল আমাদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে যার হজ্জের ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা সে যেন হজ্জের ইহরাম বেঁধে নেয়। আর যার উমরার ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা সে যেন উমরার ইহরাম বেঁধে নেয়। আসমা বলেন, আমি, আয়েশা, মিকদাদ, যুবাইর ছু উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলাম।
১০০.আসমা এবং কুরবানি
ইমাম আহমদ আসমা হতে বর্ণনা করেন।’ ।তিনি বলেন, আমরা রাসূল -এর সাথে হজ্জ করতে বের হলাম। রাসূল বললেন, যার সাথে কুরবানির জন্তু আছে সে যেন তার ইহরামের ওপর অটল থাকে এবং যার সাথে কুরবানির জন্তু নেই সে যেন হালাল হয়ে যায়।
পৃষ্ঠা:৬২
১০১.ইহরাম থেকে হালাল হওয়া
আসমা বলেন, যখন রাসূল বললেন, যার কুরবানির জন্তু আছে সে ইহরামের ওপর অটল থাক। আর যার কুরবানির জন্তু নেই সে হালাল হয়ে যাও। তখন আমার কুরবানির জন্তু না থাকার কারণে আমি হালাল হয়ে যাই। কিন্তু আমার স্বামী যুবাইর গ্রাষ্ট্র জন্তু থাকার কারণে সে ইহরামের ওপর অটল থাকে।
১০২.চন্দ্র গ্রহণের সালাতের দাস মুক্তি
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন। আসমা বলেন, যখন চন্দ্রগ্রহণের সালাত আদায় করা হতো তখন আমাদেরকে দাস মুক্তি করার আদেশ দেয়া হতো।
১০৩.সদকা করা
আসমা প্লে তাঁর মেয়েদেরকে বলতেন, সদকা কর এবং বেশি বেশি জমা করার অপেক্ষা কর না।
১০৪.অপর বর্ণনা
আসমা তাঁর মেয়েদেরকে এবং তাঁর পরিবারের লোকেদেরকে বলতেন, খরচ কর এবং সদকা কর। যখন মাল থাকবে না তখন আর সদকা করার সুযোগ পাবে না।
পৃষ্ঠা:৬৩
১০৫.আসমা-এর সূর্যগ্রহণের সালাত
ইমাম আহমদ আসমা হতে বর্ণনা করেন। আসমা -এর যুগে সূর্যগ্রহণ লাগল। তখন আমি আয়েশা বলেন, রাসূল -এর কাছে এসে বললাম, হে আয়েশা! মানুষের কি হলো যে, তারা নামায পড়া শুরু করে দিয়েছে? তখন আয়েশা আকাশের দিকে ইশারা করলেন। অর্থাৎ বুঝাতে চাইলেন যে, সূর্যগ্রহণের কারণে মানুষ নামায আদায় করছে। রাসূল (সা:) দীর্ঘক্ষণ যাবত এ সালাত আদায় করতেন।
১০৬.ঈমানদার মহিলার পোশাক
আসমা প্লাট-এর ছেলে মুনযির ইরাকে গিয়ে সেখান থেকে তার মার জন্য খুব সুন্দর এবং আরামদায়ক একটি কাপড় পাঠালেন। তখন তিনি অন্ধ ছিলেন। অতঃপর আসমা তা স্পষ্ট করে দেখলেন যে, কাপড়টি অতি পাতলা। তাই তিনি বললেন, আফসোস! এই কাপড়টি ফিরিয়ে দাও। ফিরিয়ে দেয়াতে মুনযির কষ্ট পেলেন। পরবর্তীতে মুনযির আরেকটি কাপড় পাঠালেন, যা তার জন্য মানানসই ছিল। এটা পেয়ে আসমাকে বললেন, তুমি আমাকে এরকম কাপড়ই পরাবে।
১০৭.নবী-এর হাউসে কাউসার
আসমা বিনতে আবু বকর নবী এর হাউজে কাউসার সম্পর্কে বলেন, রাসূল বলেছেন, নিশ্চয় আমি হাউজে কাউসারের পার্শ্বে থাকব। কিছু লোক হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করতে এলে তাদের মাঝে এবং আমার মাঝে পর্দা দিয়ে দেয়া হবে। নবী বলেন, আমি বলব, কেন পর্দা দেয়া হলো, এরা তো আমার উম্মত। তখন উত্তর
পৃষ্ঠা:৬৪
আসবে, হে নবী! আপনি জানেন না আপনার মৃত্যুর পর শরীয়তের মধ্যে এরা কত নতুন নতুন জিনিস শরীয়ত বলে মানুষের মধ্যে চালিয়ে দিয়েছে। তখন নবী বলবেন, দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও। আমার মৃত্যুর পর আমার শরীয়তে যারা নতুন নতুন বস্তু তৈরি করে শরীয়তের নামে চালিয়ে দিয়েছ, তাদের হাউজে কাউসার হতে পান করার কোনো অধিকার নেই। বিঃ দ্রঃ এরা হলো এমন আলেম যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য মিনিটে নতুন ফতওয়া তৈরি করে।
১০৮.পাতলা কাপড়
আয়েশা হতে বর্ণিত । একদা আসমা অত্যন্ত পাতলা একটা কাপড় পড়ে নবী-এর কাছে আসেন। তখন নবী তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং বলেন, হে আসমা! নিশ্চয় একজন মহিলা যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায়, তখন তার জন্য এ ধরনের কাপড় পরিধান করা উচিত নয়।
১০৯,বিবাহের ক্ষেত্রে বাণী
আসমা বলতেন, বিবাহ হচ্ছে মুক্ত হওয়া। অতএব প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত তার শ্রেষ্ঠত্বকে কোথায় ছেড়ে দিচ্ছে?
১১০.দাস মুক্তকরণ
ইবনে সাদ তার তাবাকাত নামক কিতাবে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন, একদা আসমা বিনতে আবু বকর টু অসুস্থ মহিলাদের দেখতে যান এবং তার সমস্ত দাসকে মুক্ত করে দেন।
পৃষ্ঠা:৬৫
১১১স্বপ্নের ব্যাখ্যা
ইমাম ইবনে সাদ তার তাবাকাত গ্রন্থে ওয়াকীদী থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাঈদ বিন মুসায়্যিব টুল্ল স্বপ্নের ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারতেন। তিনি এ জ্ঞান অর্জন করেন- আসমা পিতা আবু বকর -এর কাছ থেকে। আর আসমা তাঁর -এর কাছে শিখেন।
১১২.কবরের আযাব
মানুষ মরার পর তার সর্বপ্রথম জায়গা হলো কবর। যেখান থেকে শান্তির সূচনা হয়। অর্থাৎ বদ আমল মানুষের জন্য কবরের শাস্তি অনিবার্য। আবু বকর এর বড় মেয়ে আসমা বলেন। নবী বলেছেন, একটা মানুষ মরার পর তাকে করে রাখা হলে সে যদি ভালো লোক হয় তার আমল তাকে কবরের আযাব থেকে বাঁচাবে। পক্ষান্তরে সে যদি খারাপ লোক হয় তাহলে তার কবরের আযাব শুরু হয়ে যায়।
১১৩.ধার্মিক ও বিনয়ী মহিলা
আসমা-এর স্বামী যুবাইর ধার্মিক ও বিনয়ী মহিলা। যুবাইর কাছে গেলাম এবং দেখলাম, আসমা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছে। গেলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আসমা করতেই আছে। যখন আসমা বলেন। আসমা ছিলেন একজন আরো বলেন, আমি একদা আসমার কুরআনের একটি আয়াত পড়ে এর মাঝে আমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা তার দোয়াকে অনেক লম্বা করছিল তখন আমি বাজারে চলে গেলাম। বাজার থেকে এসে দেখি আসমা কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেই আছে এবং কাঁদতেছে। আল্লাহর
পৃষ্ঠা:৬৬
১১৪.সাহাবীদের কুরআন তিলাওয়াত
হুসাইন বিন আব্দুর রহমান আস সুলামী বলেন, আমি আসমা বিনতে আবু বকর গুল্লু-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কুরআন তিলাওয়াতের সময় রাসূল এর সাহাবীদের অবস্থা কেমন হতা? তিনি বলেন, তাদের চক্ষু দিয়ে অশ্রু ঝড়ত এবং চামড়াগুলো ভয়ে কাঁপত।
১১৫.প্রিয়জনদের বিদায়
আসমা -এর সবচেয়ে বেশি প্রিয়জন নবী
-এর মৃত্যুতে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েন। প্রিয়জনদের মধ্যে আরো যারা আসমা জীবিত থাকবস্থায় মারা যান তারা হলেন- তার পিতা আবু বকর, ওমর, উসমান এবং তার স্বামী যুবাইর গুদ্র। আসমা শুন্না এসবগুলো মৃত্যুকে ধৈর্যের সাথে গ্রহণ করেন।
১১৬.আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর
আসমা এর বড় ছেলে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আসমা না তার বড় ছেলে আব্দুল্লাহকে ছোটকাল থেকেই ভালোভাবে গড়ে তুলেছিলেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ট্রে তার মায়ের দোয়ায় ন্যায়ের ওপর থেকে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।
পৃষ্ঠা:৬৭
১১৭.মায়ের পরামর্শ
আব্দুল্লাহ ত্রে খেলাফতে থাকাকালে হাজ্জাজ বিন ইফসুফের সাথে একবার তার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বের হওয়ার পূর্বে আব্দুল্লাহ টুল্ল তার মা আসমা এর সাথে পরামর্শ করতে যান। তথন আসমা বলেন, হে আব্দুল্লাহ! এ বিষয়ে তুমিই তো আমার চাইতে ভালো জান। তবে শুনে রাখ! তুমি যদি হকের ওপর থেকে যুদ্ধ করতে চাও তাহলে যুদ্ধে যাও। আর যদি দুনিয়ার উদ্দেশ্যে যুদ্ধে যাও তাহলে তুমি তো তোমার নিজেকে এবং তোমার সাথিদেরকে ধ্বংস করবে। অতএব তুমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধে যাও। পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর ﷺ এই যুদ্ধে জয় লাভ করেন।
১১৮.আব্দুল্লাহ ও তার মা
হস্যোজ্জ্বল চেহারায় আব্দুল্লাহ তার মাকে বললেন, তুমি কতইনা কল্যাণকর মা। তোমার মর্যাদা বরকতময় হোক। আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে অপমান করতে চাই না। আমি দুনিয়ার সৌন্দর্য্য ও ভালোবাসাতেও জড়াতে চাই না। এ ব্যাপারে আল্লাহই সাক্ষী রয়েছেন। এরপর তিনি মাকে বললেন, হে মা। আমি যখন নিহত হব, তখন আপনি চিন্তা করবেন না। মা বললেন, তুমি যদি কোনো অন্যায় পথে নিহত হও তবে আমি চিন্তা করব। তখন আব্দুল্লাহ বললেন, তুমি আমার প্রতি এ আস্থা রাখতে পার যে, তোমার সন্তান কখনো কোনো খারাপ কাজে জড়ায়নি, কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করেনি, কোনো আমানতের খেয়ানত করেনি এবং কোনো মুসলমানের ওপর যুলুম করেনি। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়ে মূল্যবান কোনো জিনিস আমার কাছে নেই।
পৃষ্ঠা:৬৮
এসব কথা আমি আত্মপ্রশংসার জন্য বলছি না। আল্লাহ তায়ালা আমার সম্পর্কে আমার চেয়ে বেশি জানেন। আমি এ কথাগুলো কেবল এজন্যই বলেছি, যাতে তোমার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। অতঃপর মা বললেন, ঐ আল্লাহর প্রশংসা করছি যিনি তোমাকে এমন কাজে নিযুক্ত করেছেন যা তিনি পছন্দ করেন এবং আমি পছন্দ করি। হে সন্তান! তুমি আমার নিকটবর্তী হও। আমি তোমার শরীর স্পর্শ করব। অতঃপর আব্দুল্লাহ মার কাছে গেলেন। তখন মা তাকে তার মাথা, চেহারা ও ঘাড়ে হাত বুলালেন এবং তাকে চুম্বন করলেন।
১১৯.এ ব্যাপারে অপর বর্ণনা
ইবনে সাদ তার তাবাকাত নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, আসমা তার ছেলে আব্দুল্লাহকে পরামর্শস্বরূপ বলেন, হে বৎস! সম্মানের সাথে বাঁচ এবং সম্মানের সাথে মর। দেখ, শত্রুদের ফাঁদে পড়ে যেও না।
১২০.আসমা-এর দোয়া
আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর যুদ্ধে বের হওয়ার আগে তার মায়ের কাছে দু’আ নিতে গেলেন। তখন তার মা আসমা তার দুই হাত আকাশের দিকে উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে যুদ্ধে অটল রেখ। কঠিন পরিস্থিতিতেও তাকে টিকিয়ে রেখ। হে আল্লাহ! আমার ছেলে রোযা থাকাবস্থায় তার ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে যেন ধরে রাখতে পারে তাকে সেই তাওফীক দান কর। হে আল্লাহ! তার পিতা মাতার সৎ আমলের মাধ্যমে তাকে রহম কর। এভাবে অনেক দোয়া করলেন।
পৃষ্ঠা:৬৯
১২১.শাহাদতের পোশাক
যুদ্ধে বের হওয়ার পূর্বে আসমা তার ছেলের গায়ের পোশাক দেখে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! তুমি এটা কি ধরনের পোশাক পড়লে? আব্দুল্লাহ (রা:) বললেন, কেন, এটা তো আমার বর্ম। আসমা বললেন, যে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হতে চায় তার পোশাক এমন কেন? আব্দুল্লাহ বলেন, আমি তোমার অন্তর সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য পরিধান করেছি। অতঃপর আসমা ঐ পোশাক খুলে ফেলতে বললেন এবং অন্য আরেকটি পোশাক পরিধান করতে বললেন। ফলে আব্দুল্লাহ টুদ্র তার মায়ের বলা পোশাকটি পরিধান করলেন।
১২২.সৎ সন্তান
ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, একদা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর-এর মৃত্যুর পর আসমা বিন আবু বকর গুদ্র-এর কাছে গিয়ে বলেন, হে আসমা! নিশ্চয় তোমার ছেলেকে আল্লাহ কবরে খুব কষ্ট দিচ্ছে। তখন আসমা বললেন, হে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, তুমি মিথ্যা বলছ। এমন হতে পারে না। কারণ আমার ছেলে ছিল সৎ ও সঠিক পথের ওপর অটল।
পৃষ্ঠা:৭০
১২৩.জান্নাতী বৃদ্ধা
উরওয়াহ বিন যুবাইর ইন্দ্র আব্দুল্লাহ মালেক বিন মারওয়ানের সাথে এই বলে গর্ব করতেন যে, আমি হচ্ছি জান্নাতী বৃদ্ধাদের ছেলে। অর্থাৎ তিনি বৃদ্ধাদের বলতে বুঝিয়েছেন নিম্নবর্ণিত মহিলাদেরকে। ১. সাফিয়া বিন আব্দুল মুত্তালিব, যিনি ছিলেন রাসূল-এর ফুফি এবং যুবাইরের মা। ২. খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, যিনি ছিলেন বিশ্বের সকল মহিলাদের নেত্রী এবং যুবাইর-এর মামী। ৩. আয়েশা বিনতে আবু বকর গুল্লু, যিনি ছিলেন আব্দুল্লাহর খালা। ৪ আসমা বিনতে আবু বকর টুল্ল, যার উপাধি ছিল যাতুন নেতাকাইন এবং যিনি ছিলেন আব্দুল্লাহর মা।
১২৪.আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের হত্যা
যখন আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর গুল্লু-কে হত্যা করা হলো তখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এবং শামবাসী তাকবীর দিয়ে উঠল। তখন আব্দুল্লাহ বিন আমর বললেন, এটা কি ধরনের পরিবেশ? লোকেরা বলল, আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর এর হত্যার কারণে শামবাসী তাকবীর দিয়েছে। অতঃপর আব্দুল্লাহ বিন আমর বলেন, আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের জন্মের সময় যারা তাকবীর দিয়েছে তারা তাদের থেকে উত্তম, যারা তার মৃত্যুর পর তাকবীর দিয়েছে।
পৃষ্ঠা:৭১
১২৫.শূলে চড়ানো
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর যখন আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরকে শূলিতে চড়ানো অবস্থায় দেখলেন তখন বললেন, নিশ্চয় আপনি হকের ওপর ছিলেন।
১২৬.ধৈর্যশীলা আসমা
আসমা তার বড় ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর-এর মৃত্যুতে অনেক দুঃখ ও কষ্ট পান এবং হাজ্জাজ বিন ইউসুফের প্রতি খুবই মনোক্ষুন্ন হন। ছেলেকে হত্যার পর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার ছেলে সম্পর্কে বিভিন্ন বেহুদা কথাবার্তা বলে। কিন্তু আসমা সবকিছু তার সামনে চাক্ষুষভাবে দেখেও ধৈর্য ধারণ করে যান।
১২৭.তার ছেলের গোসল
আব্দুল্লাহ -এর মৃত্যুর পর তার মা আসমা তাকে যমযমের পানি দিয়ে গোসল করান। সুগন্ধি লাগান এবং কাফনের কাপড় পড়ান। আর এটা ছিল ৭৩ হিজরীতে।
১২৮.আব্দুল্লাহ বিন ওমরের সান্ত্বনা
যখন আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর কে শূলিতে চড়িয়ে হত্যা করা হলো, তখন আব্দুল্লাহ বিন ওমর ট্রে আসলেন। এসে আসমা-কে মসজিদের পার্শ্বে পেয়ে বললেন, নিশ্চয় এই শরীর কিছুই না। আর রূহগুলো তো আল্লাহর কাছেই রয়েছে। অতএব, হে আব্দুল্লাহর মা আসমা! আপনি আল্লাহকে ভয় করুন এবং ধৈর্য ধারণ করুন। এ বলে, আব্দুল্লাহ বিন ওমর টু আসমা -কে সান্ত্বনা দিলেন।
পৃষ্ঠা:৭২
১২৯.আসমা-এর দানশীলতা
আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর প্লে বলেন, আমি আয়েশা এবং আসমা-এর চাইতে অধিক দানশীলা মহিলা আর কাউকে দেখিনি। আয়েশা এ রকম ছিলেন যে, তিনি কিছু জমা করে রাখতেন এবং যখনই কেউ আসত তিনি তা দিয়ে দিতেন। আর আসমা হাতে আসার আগেই দান করে দিতেন।
১৩০.আসমা এ ব্যাথায় তার ছেলে উরওয়াহ
উরওয়া টু বলেন, আমি এবং আমার বড় ভাই আমাদের মা আসমা এর ঘরে প্রবেশ করি। আর এটা ছিল আমার বড় ভাই আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পূর্বের ঘটনা। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আমার মা! আপনার কাছে কেমন লাগছে? মা বললেন, খুব ব্যাথা অনুভব করছি। তখন আমি বললাম, নিশ্চয়ই মৃত্যুর মধ্যে প্রশান্তি রয়েছে। তখন মা বললেন, মনে হচ্ছে তুমি আমার ব্যাথা অনুভব করছ যার কারণে মৃত্যুর আশা করছ।
১৩১.আসমা এবং হাজ্জাজ
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আসমা প্লা-কে ডেকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। কিন্তু আসমা আসমা আসতে অস্বীকৃতি জানালেন। হাজ্জাজ আবার লোক পাঠালে ছেলের শোকের কারণে হাজ্জাজের ডাকে সাড়া দেননি। কারণ তিনি হাজ্জাজের প্রতি খুবই মনোক্ষুন্ন হয়েছিলেন।
পৃষ্ঠা:৭৩
১৩২.আশা-আকাঙ্ক্ষা
একদা চারজন লোক একটা মজলিসে বসে তাদের জীবনের আশা- আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করছিলেন। তারা হলেন, আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর, মুসয়াব বিন যুবাইর, উরওয়াহ বিন যুবাইর এবং আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান। প্রথমে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর গল্প বলেন, আমার আশা হচ্ছে, আমি হিজাজ দখল করে সেখানে খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে চাই। মুসয়াব বিন যুবাইর ভুাত্র বলেন, আমি ইরাক দখল করে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে চাই। আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান বলেন, আমি মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর সমস্ত কিছুর দায়িত্ব নিতে চাই। আসমা-এর ছোট ছেলে উরওয়াহ বিন যুবাইর টুল্ল সবার কথা চুপ করে শুনলেন। কিন্তু কিছুই বললেন না। তখন অপর তিনজন বলল, হে উরওয়াহ! তোমার আশা কি? তখন উরওয়াহ বিন যুবাইর মা বলেন, তোমরা যে যা আশা করেছ আল্লাহ প্রত্যেকের আশা পূর্ণ করুক। আমার আশা হচ্ছে, আমি একজন আমলধারী আলেম হতে চাই। লোকেরা আমার কাছে শরীয়তের জ্ঞান শিক্ষা লাভ করে আমল করবে। আর এর বিনিময়ে আমি জান্নাতে যেতে চাই।
১৩৩.উরওয়াহ-এর আশা
চারজনের বৈঠকে উরওয়াহ বিন যুবাইর উপরিউক্ত আশাকে সামনে রেখেই কঠোর পরিশ্রম করে যান। তিনি সর্বদা ইলম চর্চায় লিপ্ত থাকেন। তিনি অনেক বড় বড় সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। ইতিহাসে এমনও পাওয়া যায়, তিনি এমন আমলধারী ছিলেন যে, একবার তার চিকিৎসার জন্য মদ খেয়ে তাকে বেহুশ হতে বলা হলো। কারণ আগের
পৃষ্ঠা:৭৪
দিনে কোনো অপারেশন করতে হলে মদ খেয়ে বেহুশ হতে হতো। কিন্তু উরওয়াহ বিন যুবাইর ভুত্র বললেন, সুস্থ অবস্থাতেই আমার অপারেশন কর। কিন্তু শুনে রাখ যে, যেই মুখে আমি ইলমের কালিমা উচ্চারণ করেছি সেই মুখে আমি মদের বাটা তুলতে পারব না।
১৩৪.উরওয়াহ বিন যুবাইর এর দোয়া
ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ যখন মদিনায় গভর্ণর হলেন তখন তিনি মদিনার দশজন বিজ্ঞ লোকদের ডাকলেন। যাদের প্রধান ছিলেন উরওয়াহ বিন যুবাইর। অতঃপর ওমর বিন আব্দুল আজীজ বললেন, আপনারা এখানকার বিজ্ঞ লোক। আপনারা আমাকে রাজ্য পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সহযোগিতা করবেন। আমি কোনো ভুল করলে আমাকে সংশোধন করে দেবেন। উরওয়া বিন যুবাইর এ কথা শুনে ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের জন্য দোয়া করলেন।
১৩৫,ধার্মিক আলেম উরওয়াহ
আসমা শু-এর ছোট ছেলে উরওয়াহ বিন যুবাইর পুত্র যেমনি ছিলেন আলেম, তেমনি ছিলেন ধার্মিক ও আমলধরী লোক। তিনি প্রতিদিন নিম্নে কুরআনের চার ভাগের এক ভাগ তিলাওয়াত করতেন এবং রাত্রীতে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, উরওয়াহ খুদ্র-এর প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোনো দিন তাহাজ্জুদ নামায ছুটে যায়নি। শুধুমাত্র ঐ দিন ব্যতীত, যেদিন তার অসুস্থতার কারণে তার অপারেশন করা হয়। কারণ সেদিন তার পা কেটে ফেলা হয়। যার কারণে তিনি সিজদা করতে পারেননি।
পৃষ্ঠা:৭৫
১৩৬.কী প্রার্থনা
উরওয়াহ একদা এক লোককে দেখলেন যে, সে খুব তাড়াতাড়ি নামায আদায় করছে। যখন লোকটি নামায শেষ করল উরওয়াহ ত্রে লোকটিকে বললেন, এত তাড়াতাড়ি নামায আদায় করছ কেন? তোমার কি কোনো কিছু চাওয়ার নেই? শোন, আমি উরওয়াহ আমার সালাতে আমার প্রভুর কাছে সব কিছু চাই, এমনকি লবণও।
১৩৭.আল্লাহর পথে উরওয়ার দান
আসমা বিনতে আবু বকর টু-এর ছেলে উরওয়াহ ন্দ্রে ছিলেন একজন দানশীল ব্যক্তি। তার দুটি বাগান ছিল। দুটি বাগানে তিনি ফলমূল উৎপাদন করতেন। যখন বাগান দুটি ফলমূলে ভরে যেত এবং ফলগুলো পেকে যেত, তখন তিনি তার এলাকার সকল লোকদেরকে খবর দিতন। লোকজন তাদের ইচ্ছা মতো ফলমূল গ্রহণ করত এবং খেত। এমনকি বাড়িতেও নিয়ে যেত। যখনই উরওয়াহ ত্রে তার বাগানে প্রবেশ করতেন তখনই বলতেন, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। এমনই উদার দানশীল ছিলেন উরওয়াহ।
১৩৮.ছেলের মাধ্যমে পরীক্ষা
একদা উরওয়ার বড় ছেলের কঠিন বিপদ হয়। তার ছেলে উটের পিঠ থেকে পড়ে অনেক ব্যাথা পায়। যে ব্যাথা তার ছেলেকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছিয়ে দেয়। উরওয়ার ছেলের এই বিপদকে পরীক্ষা মনে করে ধৈর্য ধারণ করেন।
পৃষ্ঠা:৭৬
১৩৯.মায়ের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের সাক্ষ্য
উরওয়াহ-এর ছেলের মৃত্যুর পর তিনি তার ছেলের কবরের কাছে বসে থাকতেন। এক পর্যায়ে এমন অবস্থা হয় যে, তার একটি পা নষ্ট হয়ে গেল। তিনি সব ডাক্তারদেরকে খবর দিতে বললেন। ডাক্তাররা আসলে তিনি বললেন, যে কোন উপায়ে হোক তার পা ভালো করে দিতে হবে। কারণ তার পা ভালো না হলে তিনি আল্লাহর ইবাদত করতে পারবেন না। অতঃপর ডাক্তাররা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিল যে, তার পা কেটে ফেলতে হবে। ফলে তার পা কেটে ফেলা হয়। শুধুমাত্র পা কাটার রাত্রেই তার তাহাজ্জুদ সালাত ছুটে যায়।
১৪০.মদ পান করব না
ডাক্তাররা উরওয়াহ এর চিকিৎসার জন্য তার পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। ডাক্তাররা বলল, আপনি মদ পান করে বেঁহুশ হয়ে যান। কারণ আপনার জ্ঞান থাকাবস্থায় আপনার পা কাটলে আপনি অনেক কষ্ট পাবেন। উরওয়াহ বলেন, যেই মুখে কালিমা লা ইলাহা ইল্লাহ পাঠ করেছি সেই মুখে মদের পেয়ালা আমি গ্রহণ করতে পারব না। তোমরা আমার জ্ঞান থাকাবস্থায়ই পা কেটে নাও। এতে কোনো আফসোস নেই। আমি মনে করি তোমরা আমার পা কাটার সময় যে ব্যাথা অনুভব করব মহান আল্লাহ আমাকে সে ব্যাথার বিনিময়ে নেকী দান করবেন।
পৃষ্ঠা:৭৭
১৪১.আল্লাহর যিকিরই সর্বোচ্চ সাহায্যকারী
যখন উরওয়ার পা কাটার জন্য ডাক্তাররা প্রস্তুত হলো, ঠিক ঐ মুহূর্তে উরওয়াহ কিছু লোককে তার সমানে দেখতে পেল। তিনি বললেন, এরা কারা? ডাক্তাররা বলল, এদেরকে আনা হয়েছে এ জন্য যে, আপনার পা কাটার সময় আপনি যখন অস্থির হয়ে যাবেন, তখন এরা আপনাকে শক্ত করে ধরে রাখবে এবং সঠিক সহযোগিতা করবে। তখন উরওয়াহ বললেন, এদেরকে ফিরিয়ে দাও। এদের দরকার নেই। আল্লাহর যিকিরই সর্বোচ্চ সাহায্যকারী। এরপর ডাক্তাররা যখন করাত দিয়ে পা কাটতে থাকে তখন উরওয়াহ লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়তে থাকেন। অতঃপর যখন পা কেটে ফেলা হলো, তখন পা থেকে রক্ত পড়তে লাগল। যার কারণে রক্ত বন্ধ করার জন্য ডাক্তাররা গরম তেলের মধ্যে পা-কে ভেজাল। এরপর রক্ত পড়া বন্ধ হলো।
১৪২.কর্তিত পা
উরওয়াহ সুস্থ হওয়ার পর তার পায়ের যে অংশটুকু কেটে ফেলা হয় তা নিয়ে আসার জন্য বলেন। যখন নিয়ে আসা হয়, তখন উরওয়াহ ঐ কাটা অংশটুকু হাতে নিয়ে বললেন, হে পা! তোমাকে কাটার ফলে আমার এক রাত্রের তাহাজ্জুদ ছুটে গেছে বটে কিন্তু আমি মদের মতো হারাম বস্তুকে আমার মুখে তুলে দেইনি।
পৃষ্ঠা:৭৮
১৪৩,অন্যের বিপদ দেখে নিজের সান্ত্বনা
একদা উরওয়ার দরবারে এক অন্ধ লোককে হাজির করা হয় এবং তার অন্ধ হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হয়। লোকটি বলল, আমি কোনো এক সময় আমার একটি ছোট বাচ্চাকে উটের ওপর রেখে চলতে থাকি। হঠাৎ করে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি একটি নেকড়ে বাঘ আমার বাচ্চাকে ধরে নিয়েছে। আমি বাচ্চাটিকে উদ্ধার করতে গেলে উটটি এমন জোরে লাথি মারল যে, আমার চোখ অন্ধ হয়ে গেল। এ কথা বলে লোকটি দুঃখ প্রকাশ করল। লোকেরা বলল, যার কাছে তোমার ঘটনা বলছ সে তোমার চেয়েও বেশি দুঃখের ধারক বাহক। তখন লোকেরা উরওয়ার জীবনের দুঃখের কথা শোনাল। এ জন্য অন্যের বিপদের দিকে তাকালে নিজের বিপদ খুব তুচ্ছ মনে হয় এবং মনে সান্ত্বনা পাওয়া যায়।
১৪৪.মদিনাবাসী এবং ঈমানী শিক্ষা
উরওয়া মদিনায় আসার পর মদিনাবাসীরা তাকে স্বাগত জানাল। এরপর উরওয়াহ বললেন, হে মদিনাবাসী শোন, আল্লাহ আমাকে চারটি সন্তান দিয়ে একটি নিয়ে গেছেন। আমার পা কাটা হয়েছে। এরপরও আমি প্রশংসা ঐ আল্লাহর করি, যিনি চারটি সন্তানের মধ্যে তিনটিই রেখে দিয়েছেন এবং যিনি আমার পা কেটে ফেলার পরও আবার সুস্থ করেছেন। উরওয়াহ এ ধরনের বক্তব্যে মদিনাবাসীদের ঈমানী শক্তি বেড়ে গেল। তখন তাদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠে, হে উরওয়াহ! আপনি সুসংবাদ নিন, নিশ্চয় আপনার একটি সন্তান এবং আপনার একটি অঙ্গ জান্নাতে অগ্রগামী হয়ে গেছে।
পৃষ্ঠা:৭৯
১৪৫.ছেলেদের প্রতি উপদেশ
উরওয়াহ বিন যুবাইর তার ছেলেদেরকে ডেকে বলেন, হে আমার ছেলেরা! জ্ঞানার্জন কর এবং এই জ্ঞানের হক আদায় কর। যদিও তোমরা সম্প্রদায়ের মধ্যে বয়সে ছোট কিন্তু আল্লাহ তোমাদের জ্ঞানের দিক দিয়ে বড় করুন। এরপর বলেন, হে ছেলেরা! তার চেয়ে অধিক নির্বোধ আর কে আছে যে, বৃদ্ধ হয়েছে অথচ মূর্খ? অতএব তোমরা জ্ঞানার্জন কর। এভাবে তিনি তার ছেলেদেরকে উপদেশের মাধ্যমে হাদিয়া দেয়ার কথা বলতেন, মানুষদের সম্মান করার কথা বলতেন এবং নানা সময় আরো প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন।
১৪৬.মানুষের সাথে চলা ফেরা
উরওয়াহ বিন যুবাইর তার ছেলেদেরকে বলেন, হে ছেলেরা। যখন তোমরা কোনো লোকের মধ্যে কিছু দেখবে তখন তার সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করবে। যদিও সে লোক মানুষের চোখে খারাপ হয়। পক্ষান্তরে যখন কোনো লোকের মধ্যে খারাপ কিছু দেখবে তখন তার থেকে সাবধান থাকবে। যদিও সে লোক মানুষের চোখে ভালো হয়।
১৪৭.কোমল হওয়ার ওসিয়ত
উরওয়াহ তার ছেলেদের ওসিয়ত করতেন যে, হে ছেলেরা। তোমরা কোমল ও বিনয়ী হও, সুন্দরভাবে কথা বল এবং হাস্যোজ্জ্বল থাক।
পৃষ্ঠা:৮০
১৪৮.বিলাসিতা পরিহার করার ওসিয়াত
লোকেরা যখন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় বিলাসিতায় নিমজ্জিত ঠিক ঐ সময়ের কথা। মুহাম্মাদ বিন মুনকাদির বলেন, আমি উরওয়াহ বিন যুবাইরের সাথে সাক্ষাত করি। তখন উরওয়া আমাকে বলেন, হে মুহাম্মদ বিন মুনকাদির! আমি উরওয়াহ একদা আয়েশা -এর কাছে গিয়েছিলাম। তখন আয়েশা (রা:) আমাকে বলেন, হে উরওয়াহ! আমরা এমনও সময় অতিক্রম করেছি যে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত নবী-এর চুলায় আগুন জ্বলেনি। উরওয়াহ বলেন, আমি আয়েশা শু-কে বললাম, তাহলে আপনারা কিভাবে জীবন যাপন করতেন? আয়েশা বলেন, খেজুর আর পানি খেয়ে।
১৪৯.রোযা অবস্থায় উরওয়ার মৃত্যু
উরওয়াহ সর্বমোট একাত্তর বছর বেঁচেছিলেন। তিনি যখন মৃতুবরণ করেন তখন তিনি রোযাদার অবস্থায় ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে তার পরিবারের লোকেরা তাকে রোযা ভাঙ্গার কথা বললে, তিনি বলেন, উরওয়াহ হাউজে কাউসারের পানি দিয়ে রোযা ভাঙ্গবে। (এ আশা করতেন)
১৫০.আসমা -এর মৃত্যু
আসমা তার বড় ছেলে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর মৃত্যুবরণ করেন। যা ছিল ৭৩ হিজরীতে। বলা হয়, হিজরতকারী নারী পুরুষদের মধ্যে তিনিই সর্বশেষে মৃত্যুবরণ করেন।